বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

শেয়ালসা পীরের দরগা

"মজার গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান বাপ্পী (০ পয়েন্ট)

X জসীমউদদীন রহিম এক ঝাঁক সুপারি লইয়া হাটে যাইতেছিল। মাঠের মধ্যে যেখানে তিনপথ একত্র হইয়াছে সেখানে শেয়ালে পায়খানা করিয়া রাখিয়াছে। এইখানে আসিয়া সে হঠাৎ আছাড় খাইয়া পড়িল। তাহার ঝাঁকার সুপারিগুলি কতকগুলি এধারে পড়িয়া গেল। আর কতেক সেই শেয়ালের বিষ্ঠার উপর পড়িল। রহিম তখন এধার ওধার হইতে সুপারিগুলি তুলিয়া লইল। শেয়ালের বিষ্ঠার উপর যেগুলি পড়িয়াছিল সেগুলি আর তুলিল না; তারপর তাড়াতাড়ি হাটে চলিয়া গেল। ইহার পর সেই পথ দিয়া যাইতেছিলো এক পানের ব্যাপারি। সে পথের মধ্যে কতকগুলি সুপারি পড়িয়া থাকিতে দেখিয়া ভাবিল, নিশ্চয় জায়গাটিতে কোন পীর আওলিয়া আছেন। কেহ হয়তো জানিতে পারিয়া এই সুপারিগুলি সেই পীরকে দিয়া গিয়াছে। তখন সে মাথার ঝাঁকা হইতে কতকগুলি পান সেই সুপারির পাশে রাখিয়া অতি ভক্তি সহকারে সালাম করিয়া চলিয়া গেল। ইহার পরে পিঁয়াজের ব্যাপারি, রসুনের ব্যাপারি, মরিচের ব্যাপারি যে-ই এই পথ দিয়া যায় প্রত্যেকেই কিছু না কিছু সেই সুপারি-পানের উপর রাখিয়া যায়। হাট হইতে ফিরিবার পথে রহিম দেখে কি, পানে, পিঁয়াজে, রসুনে, মরিচে, তরি-তরকারিতে সেই স্থানটি এক হাত উঁচু হইয়া উঠিয়াছে! সে তাড়াতাড়ি পান, মরিচ, পেঁয়াজ, তরি তরকারী যাহা পারিল ঝাঁকায় ভরিয়া লইয়া বাড়ি চলিল। বাড়িতে গেলে রহিমের বউ আশ্চর্য হইয়া জিজ্ঞাসা করে, “ গেলে তো কয়েক পন সুপারি লইয়া। তাহার দাম দিয়া এত জিনিস আনিলে কেমন করিয়া?” রহিম কহিল, “ অসব কথা পরে হইবে! শীগগির তোমার শাড়িখানা দাও। আমাদের কপাল ফিরিতেছে।“ সে তাড়াতাড়ি বউএর শাড়ি আর নৌকার পাল লইয়া সেই তিন পথের কাছে আসিয়া উপস্থিত হইলো। দেখিয়া আশ্চর্য হইল, ব্যাপারিরা যে যে আজিকার হাটে লাভ করিয়াছে, প্রত্যেকে দু আনা এক আনা করিয়া এই পথের উপরে রাখিয়া গিয়াছে! রহিম তাড়াতাড়ি পয়সাগুলি গাঁটে বাঁধিয়া সেই জায়গাটিত্র চারিধারে বউ এর শাড়ি দিয়া ঘিরিয়া ফেলিল। উপরের চাঁদোয়ার মতো করিয়া নৌকার পালটি টানাইয়া দিল। পরদিন গ্রামের লোকে অবাক হইয়া দেখিল, মাঠের মধ্যে পীরের আস্তানা। মাথায় কিস্তি টুপী পরিয়া, গলায় ফটিকের তসবি দোলাইয়া রহিম শেখ সেই আস্তানার সামনে চক্ষু মুদিয়া বসিয়া আছে। যখন সেখানে বহু লোক জড়ো হয়, রহিম চক্ষু মেলিয়া বলে, “আহা! শেয়ালসা পীরের কী কুদরৎ। যে এখানে এক আনার মানত করিবে সে একশ আনার বরকত পাইবে। আজ রাতে শেয়ালসা পীর আমাকে স্বপনে দেখাইয়াছে, এখাঙ্কার ধূলি লইয়া গায়ে মাখিলে সকল অসুখ দূর হইবে। যার ছেলেপুলে হয় না তার কোনে সোনার যাদু হাসিবে।“ গ্রামের লোক কেহ বিশ্বাস করিল, কেহ করিল না। কিন্তু কেহই ইহার আসল ইতিহাস খুঁজিয়া দেখিল না। বিশ্বাস করিয়া যাহারা এখানে রোগ-আপদের জন্য মানত করিল, কাহারও ফল হইল, কাহারও হইলো না। যাহাদের ফল হইল তাহারা আরো বাড়াইয়া শেয়ালসা পীরের তেলেসমাতির কথা লোকের কাছে বলিল। রোগ হইলে আপনা হইতে তো কত লোক সারিয়া ওঠে। আপদে বিপদেও আপনা হইতে তো কত লোক উদ্ধার পায়। তাহারা ভাবে শেয়ালসা পীরের দোয়াতেই তাদের রোগ সারিতেছে- তাহাদের আপদ বিপদ চইয়া যাইতেছে। দিনে রপর দিন পীরের নাম যেমন দেশ বিদেশে ছড়াইয়া পড়িল, মানত ও হাজতের টাকা পাইয়া রহিম শেখের অবস্থা ততই বাড়িতে থাকে। একবার একজন বড়লোক এখানে মানত করিয়া মামলায় জিতিল। সে বহু টাকা খরচ করিয়া শেয়ালসা পীরের দরগা পাকা করিয়া গেল। রহিম শেখ এই দরগার খাদেম। সে চক্ষু বুঁজিয়া মনে মনে ভাবে, “দেশের লোকগুলি কি বোকা! শেয়ালের বিষ্ঠার উপর এই দরগা। এখানে আসিয়া কত আলেম মৌলভী, পীর ফকির মাথা কুটিয়া সেজদা করে!”


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ১৪২৩ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন