বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
কোনো কিছু সন্ধান পাওয়া গেল না
ননীর কাছে। তবুও আমার সন্দেহ
সম্পূর্ণরূপে গেল না। ননী হয় সম্পূর্ণ
নির্দ্দোষ, নয়তো সে অত্যন্ত ধূর্ত্ত। মিঃ
সোম একটা কথা সব-সময়ে বলেন, “বাইরের
চেহারা বা কথাবার্ত্তা দ্বারা কখনো
মানুষের আসল রূপ জানবার চেষ্টা কোরো
না—করলেই ঠকতে হবে। ভীষণ চেহারার
লোকের মধ্যে অনেক সময় সাধুপুরুষ বাস
করে—আবার অত্যন্ত সুশ্রী ভদ্রবেশী
লোকের মধ্যে সমাজের কণ্টকস্বরূপ দানব-
প্রকৃতির বদমাইশ বাস করে। এ আমি যে
কতবার দেখেচি।”
ননীর বাড়ী থেকে ফিরে এসে
গাঙ্গুলিমশায়ের বাড়ীর পেছনটা একবার
ভালো ক’রে দেখবার জন্যে গেলাম।
গাঙ্গুলিমশায়ের বাড়ীতে একখানা
মাত্র খড়ের ঘর। তার সঙ্গে লাগাও ছোট্ট
রান্নাঘর। রান্নাঘরের দরজা দিয়ে
ঘরের মধ্যে যাওয়া যায়। এসব আমি
গাঙ্গুলিমশায়ের ছেলের সঙ্গে ঘুরে-ঘুরে
দেখলাম।
তাকে বল্লাম—আপনার পিতার
হত্যাকারীকে যদি খুঁজে বার করতে
পারি, আপনি খুব খুশী হবেন?
সে প্রায় কেঁদে ফেলে বল্লে—খুশী
কি, আপনাকে পাঁচশো টাকা দেবো।
—টাকা দিতে হবে না। আমায়
সাহায্য করুন। আর-কাউকে বিশ্বাস করতে
পারিনে।
—নিশ্চয় করবো। বলুন কি করতে হবে?
—আমার সঙ্গে সঙ্গে আসুন
আপাততঃ। তারপর বলবো যখন যা করতে
হবে। আচ্ছা, চলুন তো বাড়ীর পিছন
দিকটা একবার দেখি?
—বড্ড জঙ্গল, যাবেন ওদিকে?
—জঙ্গল দেখলে তো আমাদের চলবে
না—চলুন দেখি।
সত্যই ঘন আগাছার জঙ্গল আর বড়-বড়
বনগাছের ভিড় বাড়ীর পেছনেই।
পাড়াগাঁয়ে যেমন হয়ে থাকে—বিশেষ
ক’রে এই শ্যামপুরে জঙ্গল একটু বেশি। বড়-
বড় ভিটে লোকশূন্য ও জঙ্গলাবৃত হয়ে পড়ে
আছে বহুকাল থেকে। ম্যালেরিয়ার
উৎপাতে দেশ উৎসন্ন গিয়েছিল বিশ-
ত্রিশ বছর আগে। এখন পাড়ায়-পাড়ায়
নলকূপ হয়েচে জেলাবোর্ডের অনুগ্রহে,
ম্যালেরিয়াও অনেক কমেচে—কিন্তু
লোক আর ফিরে আসেনি।
জঙ্গলের মধ্যে বর্ষার দিনে মশার
কামড় খেয়ে হাত-পা ফুলে উঠলো। আমি
প্রত্যেক স্থান তন্নতন্ন ক’রে দেখলাম।
সাত-আটদিনের পূর্ব্বের ঘটনা, পায়ের
চিহ্ন যদি কোথাও থাকতে পারে—তবে
এখানেই তা থাকা সম্ভব।
কিন্তু জায়গাটা দেখে হতাশ
হোতে হোলো।
জমিটা মুথো-ঘাসে ঢাকা—বর্ষায়
সে ঘাস বেড়ে হাতখানেক লম্বা হয়েছে।
তার ওপর পায়ের দাগ থাকা সম্ভবপর নয়।
আমার মনে হোলো, খুনী রাত্রে
এসেছিল ঠিক এই পথে। সামনের পথ
লোকালয়ের মধ্যে দিয়ে—কখনই সে-পথে
আসতে সাহস করে নি।
অনেকক্ষণ তন্নতন্ন ক’রে খুঁজে
দেখেও সন্দেহজনক কোনো জিনিস
চোখে পড়লো না—কেবল এক জায়গায়
একটা সেওড়াগাছের ডাল ভাঙা অবস্থায়
দেখে আমি গাঙ্গুলিমশায়ের ছেলেকে
বললাম—এই ডালটা ভেঙে কে দাঁতন
করেছিল, আপনি?
গাঙ্গুলিমশায়ের ছেলে আশ্চর্য হয়ে
বল্লে—না, আমি এ-জঙ্গলে দাঁতন-কাঠি
ভাঙতে আসবো কেন?
—তাই জিগ্যেস করচি।
—আপনি কি ক’রে জানলেন, ডাল
ভেঙে কেউ দাঁতন করেচে?
—ভালো করে চেয়ে দেখুন। একরকম
ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মুচ্ড়ে ভেঙেচে ডালটা—
তাছাড়া এতগুলো সেওড়া-ডালের মধ্যে
একটিমাত্র ডাল ভাঙা। মানুষের হাতে
ভাঙা বেশ বোঝা যাচ্চে। দাঁতনকাঠি
সংগ্রহ ছাড়া অন্য কি উদ্দেশ্যে এভাবে
একটা ডাল কেউ ভাঙতে পারে?
—আপনার দেখবার চোখ তো অদ্ভুত!
আমার তো মশাই ও চোখেই পড়তো না!
—আচ্ছা, দেখে বলুন তো, কত দিন
আগে এ-ডালটা ভাঙা হয়েচে?
—অনেক দিন আগে।
—খুব বেশি দিন আগে না।
মোচ্ড়ানো-অংশের গোড়াটা দেখে মনে
হয়, ছ’সাতদিন আগে। এর চেয়েও
নিখুঁতভাবে বলা যায়। ঐ অংশের
সেলুলোজ্ অণুবীক্ষণ দিয়ে পরীক্ষা
করলে ধরা পড়বে। আমি এই গাছের ভাঙা-
ডালটা কেটে নিয়ে যাবো, একটা দা’
আনুন তো দয়া ক’রে?
গাঙ্গুলিমশায়ের ছেলের মুখ দেখে
বুঝলাম সে বেশ একটু অবাক হয়েচে।
ভাঙা-দাঁতনকাঠি নিয়ে আমার এত
মাথাব্যথার কারণ কি বুঝতে পারচে না।
সে পিছন ফিরে দা’ আনতে যেতে
উদ্যত হোলো—কিন্তু দু’চার পা গিয়েই
থমকে দাঁড়িয়ে ঘাসের মধ্যে থেকে কি
একটা জিনিস হাতে তুলে নিয়ে বল্লে—
এটা কি?
আমি তার হাত থেকে জিনিসটা
নিয়ে দেখলাম, সেটা একটা কাঠের
ছোট্ট গোলাকৃতি পাত। ভালো করে
আলোয় নিয়ে এসে পরীক্ষা ক’রে
দেখলাম, পাতের গায়ে একটা খোদাই
কাজ। একটা ফুল, ফুলটার নীচে একটা
শেয়ালের মত জানোয়ার।
শ্রীগোপাল বল্লে—এটা কি বলুন
তো?
আমি বুঝতে পারলাম না, কি
জিনিস এটা হতে পারে তাও আন্দাজ
করতে পারলাম না।
জিনিসটা হাতে নিয়ে সেখান
থেকে চলে এলাম। যাবার আগে
সেওড়াগাছের ভাঙা ডালের গোড়াটা
কেটে নিয়ে এলাম।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now