বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

জ্বিন কফিল—পর্ব ৫

"উপন্যাস" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়েন সরকার (০ পয়েন্ট)

X জ্বিন কফিল পর্ব ৫ রচনা- হুমায়ুন আহমেদ (ইমাম সাহেবের গল্প ) । ------------------------------ ---------------------------------- (ইমাম সাহেবের গল্প) নেত্রকোনা শহরের বিশিষ্ট মোক্তার মমতাজউদ্দিন সাহেবের বাড়িতে তখন আমি থাকি । উনার সংগে আমার কোনো আত্মীয়তা সম্পর্ক নেই ।লোকমুখে শুনেছিলাম-বিশিষ্ট ভদ্রলোক ।কেউ কোনো বিপদে পড়ে তার কাছে গেলে তিনি যথাসাধ্য করেন ।আমার তখন মহাবিপদ । একবেলা খাইতো এক বেলা উপোস দেই । সাহসে ভর করে তার কাছে গেলাম চাকরির জন্য । তিনি বললেন,চাকরি যে দিবো পড়াশোনা কি জানো ? আমি বললাম,উলা পাশ করেছি । উনি বিরক্ত হয়ে বললেন,মাদ্রাসা পাশ করা লোক তোমারে আমি কি চাকরি দিব ।আই এ ,বি এ পাশ থকলে একটা কথা ছিল ।চেষ্টা চরিত্র করে দেখতাম ।চেষ্টা করার ও তো কিছু নাই । আমি চুপ করে রইলাম ।মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল । বড় আশা ছিল কিছু হবে ।একটা পয়সা সঙ্গে নাই । উপোস দিচ্ছি ।রাত্রে নেত্রকোনা স্টেশনে ঘুমাই । মমতাজ সাহেব বললেন, তোমাকে চাকরি দেওয়া সম্ভব না ।নেও এই বিশটা টাকা রাখো ।অন্য কারো কাছে যাই ।মসজিদে খোজ টোজ নাও ।ইমামতি পাও কিনা দেখো । আমি টাকাটা নিলাম । তারপরে বললাম,ভিক্ষা নেওয়া আমার পখে সম্ভবনা ।যদি ঘরের কোনো কাজকর্ম থাকে,বলেন,করে দেই । তিনি অবাক হয়ে বললেন,কি কাজ করতে চাও ? ‘যা বলবেন করবো ।বাগানের ঘাসগুলো তুলে দেই?’ ‘আচ্ছা দাও’ আমি বাগান পরিষ্কার করে দিলাম ।গাছগুলোতে পানি দিলাম ।দু’এক জায়গায় মাটি কুপিয়ে দিলাম ।সন্ধ্যাবেলা কাজ শেষ করে বললাম,জনাব যাই ।আপনার অনেক মেহেরবানী ।আল্লাহ পাকের দরবারে আমি আপনার জন্য দোয়া করি । মমতাজ সাহেব বললেন, এখন কোথায় যাবে? ‘ইষ্টিশনে ।রাত্রে নেত্রকোনা ইষ্টিশনে আমি ঘুমাই’ ‘এক কাজ করো ।রাতটা এইখানে থাকো ।তারপর দেখি’ আমি থেকে গেলাম । একদিন দুইদিন চলে গেলো ।উনি কিছু বলেননা । আমিও কিছু বলিনা ।বাংলা ঘরের এক কোনায় থাকি । বাগান দেখাশোনা করি ।চাকরির সন্ধান করি ।ছোট শহর,আমার কোনো চিনা পরিচয়ও নাই ।কে দিবে চাকরি ?ঘুরা ঘুরি সার হয় ।মোক্তার সাহেবের সাথে মাঝে মধ্যে দেখাও হয় ।আমি বড়ই শরমিন্দা বোধ করি ।উনিও এমন ভাব করেন যেন আমাকে চেনেন না । মাসখানেক এভাবেই চলে গেলো ।আমি মোটামুটি তাদের পরিবারের একজন হয়ে গেলাম । মোক্তার সাহেবের স্ত্রীকে মা ডাকি ।ভেতরের বাড়িতে খেতে যাই । তাদের কোনো একটা উপকার করার সুযোগ পেলে প্রানপনে করার চেষ্টা কোরই ।বাজার করে দেই ।কল থেকে পানি তুলে দেই । মোক্তার সাহেবের ৩ মেয়ে । বড় মেয়ে বিধবা হয়ে বাবার সঙ্গে আছে ।তার ২ বাচ্চাকে আমি আমপারা পড়াই।বাজার সদাই করে দেই ।টিপ কল থেকে রোজ ৬-৭ বালতি পানি তুলে দেই । মোক্তার সাহেবের কাছে যখন মক্কেলরা আসে তখন তিনি ঘন ঘন তামাক খান ।সেই তামাকও আমি সেজে দেই ।চাকর বাকরের কাজ । আমি আনন্দের সঙ্গেই করি ।মাঝে মাঝে মনটা খুবই খারাপ হয় ।দরজা বন্ধ করে একমনে কোরান শরীফ পড়ি ।আল্লাহপাকরে ডেকে বলি-হে আল্লাহ আমার একটা উপায় করে দাও ।কতদিন আর মানুষের বাড়িতে অন্নদাস হয়ে থাকবো ? আল্লাহপাক মুখ তুলে তাকালেন ।সিদ্দিকুর রহমান সাহেব বলে এক ব্যবসায়ী বলতে গেলে সেধে আমাকে চাকরি দিয়ে দিলেন ।চালের আড়তে হিসাবপত্র রাখা ।মাসিক বেতন ৫০০ টাকা । মোক্তার সাহেবকে সালাম করে খবরটা দিলাম ।উনি খুবই খুশি হলেন ।তোমাকে অনেকদিন ধরে দেখতেছি । তুমি সৎ স্বভাবের মানুষ ।ঠিকমতো কাজ করো-তোমার আয় উন্নতি হবে ।আর রাতে তুমি আমার বাড়িতেই থেকো ।তোমার কোন অসুবিধা নাই ।খাওয়া দাওয়াও এইখানেই করবা । তোমাকে আমি ঘরের ছেলের মতই দেখি । আনন্দে মনটা ভরে গেল ।চোখে পানি এসে গেল ।আমি মোক্তার সাহেবের কথামত তার বারিতেই থাকতে লাগলাম ।ইচ্ছা করলে চালের আড়তে থাকতে পারতাম ।মন টানলোনা ।তাছাড়া মোক্তার সাহেবের বাগানটা নিজের হাতে তৈরি করেছি ।দিনের মধ্যে কিছু সময় বাগানে না থাকলে খুব অস্থির অস্থির লাগে । একমাস চাকরির পর প্রথম বেতন পেলাম .৫০০ টাকার বদলে সিদ্দিকুর সাহেব ৬০০ টাকা দিয়ে বললেন,তোমার কাজ-কর্ম ভাল ।এইভাবে কাজ কর্ম করলে বেতন আর বাড়িয়ে দেব । আমার মনে বড় আনন্দ হল ।আমি তখন একটা কাজ করলাম ।পাগলামিও বলতে পারেন ।বেতনের সব টাকা খরচ করে মোক্তার সাহেবের স্ত্রী এবং তার ৩ মেয়ের জন্য ৩ টা শাড়ি কিনলাম ।টাঙ্গাইলের সুতী শাড়ি ।মোক্তার সাহেবের জন্য একটা খদ্দরের চাদর । মোক্তার সাহেবের স্ত্রী বললেন,তোমার কি মাথাটা খারাপ?এইটা তুমি কি করলা ?বেতনের প্রথম টাকা –তুমি তোমার আত্মীয় স্বজনের জন্য জিনিস কিনবা,বাড়িতে টাকা পাঠাইবা । আমি বললাম,মা আমার আত্মিয় স্বজন কেউ নাই । আপনারাই আমার আত্মীয় স্বজন । তিনি খুবই অবাক হয়ে বললেন।কই কোনোদিন তো কিছু বলো নাই । ‘আপনি জিজ্ঞেস করেন নাই –এইজন্য বলি নাই । আমার বাবা-মা খুব ছোটবেলায় মারা গেছেন ।আমাই মানুষ হয়েছি এতিম খানায় ।এতিমখানা থেকেই উলা পাশ করেছি’ উনি আমার কথায় খুবই কষ্ট পেলেন ।উনার মনটা ছিল পানির মত ।সব সময় টলমল করে । উনি বললেন। মনে কিছু নিয়ো না ।আমার আগেই জিজ্ঞেস করা উচিত ছিলো ।তুমি আমারে মা ডাকো আর আমি তোমার সম্পর্কে কিছুই জানিনা ।এইটা খুবই অন্যায় কথা ।আমার খুব অন্যায় হইছে । তিনি তার ৩ মেয়েরে ডেকে বললেন,তোমরা এরে আইজ থিইক্যা নিজের ভাই এর মত দেখবা । মনে করবা তোমরা এক ভাই ।তার সামনে পর্দা করার দরকার নেই । এরমধ্যে একটা বিশেষ জরুরী কথা বলতে ভুলে গেছি –মোক্তার সাহেবের ছোট মেয়ে লতিফার কথা ।এই মেয়েতা পরীর মত সুন্দর ।একটু পাগল ধরনের ।নিজের মনে কথা বলে ।নিজের মনে হাসে ।যখন তখন বাংলা ঘরে চলে আসে । আমার সঙ্গে দুই একটা টুকটাক কথাও বলে ।অদ্ভূত সব কথা ।একদিন এসে বললো এই যে মৌলানা সাব,একটা কথা জিজ্ঞেস করতে এসেছি ।আচ্ছা বলেন তো শয়তান পুরুষ না মেয়েছেলে ? আমি বললাম, শয়তান পুরুষ । লতিফা বললো,আল্লা মেয়ে শয়তান তৈরি করেন নাই কেন ? আমি বললাম,তা তো জানিনা ।আল্লাহ পাকের ইচ্ছার খবর কেমনে জানবো ?আমি অতি তুচ্ছ মানুষ । ‘কিন্তু শয়তান যে পুরুষ তা আপনি জানেন’ ‘জানি’ ‘আপনি ভুল জানেন ।শয়তান পুরুষ ও না স্ত্রী ও না ।শয়তান আলাদা এক জাত ’ আমি মেয়েটার বুদ্ধি দেখে খুবই অবাক হই ।এই রকম সে প্রায়ই করে ।একদিনের কথা ।ছুটির দিন । দুপুরবেলা। বাংলা ঘরে আমি ঘুমাচ্ছি । হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।অবাক হয়ে দেখি লতিফা আমার ঘরে ।আমি ধড়মড় করে উঠে বসলাম। লতিফা বললো,----- (শেষ প্রর্ব আগামী কাল)


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৪৮১ জন


এ জাতীয় গল্প

→ জ্বিন কফিল—পর্ব ৬ (শেষ)
→ জ্বিন কফিল—পর্ব ২— (রচনা হূমায়ূন আহমেদ)
→ জ্বিন কফিল—পর্ব ১—(রচনা-হুমায়ুন আহমেদ)

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now