বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
সময়টা সন্ধ্যা ৭ঃ২৬।। অফিস থেকে বের হয়ে গুলশান-১ অভিজাত এলাকার ছোট একটা ঢুকলাম হালকা একটু নাস্তা করতে।। খাওয়ার অর্ডার দিয়ে বসে আছি।। হঠাৎ মেয়েলী কন্ঠে আমার নাম ধরে ডাকতে শুনতে পেলাম।।
.
- মেয়েঃ আরে অন্তু না??
আমিঃ কন্ঠ-টা খুবই পরিচিত মনে হচ্ছে।। আমি পিছনে তাকিয়ে পুরাই অবাক হয়ে গেলাম।।
- মেয়েঃ চিনতে পারতেছ??
আমিঃ আজিব! তোমারে না চিনার কি হইল? কেমন আস পারিসা?
- পারিসাঃ এইতো ভালো।। তুমি কেমন আস?
আমিঃ এইতো ভালো।।
- পারিসাঃ আচ্ছা! পরিচয় করিয়ে দি।। ওহ আয়ান, আমার হাসবেন্ড।। আর আয়ান ওহ অন্তু আমার ফ্রেন্ড।।
.
কিছুক্ষন আড্ডা-আলাপের পর বাসায় ফিরলাম।। বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষন টিভি দেখার পর রুমে একা বসে ছিলাম, তখন অনিচ্ছা সত্ত্বেও পুরানা স্মৃতি গুলো ভেসে আসলো।।
.
#সাল_২০০৯ঃ
এইচ এস সি পরিক্ষা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।। আর যেহেতু ভর্তির প্রস্তুতি ছাড়া অন্য কাজ নাই, তাই দায়িত্ব হচ্ছে ছোট ভাই-কে স্কুলে আনা-নেয়া করা।।
.
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নেয়ার পাশাপাশি ভাই-কে স্কুলে আনা-নেয়া দায়িত্ব পালন করতে লাগলাম...।।
.
একদিন ছোট ভাই-কে স্কুল থেকে নিয়ে আসার জন্য স্কুল ছুটি হওয়ার একটু আগেই পৌঁছে গেলাম।। স্কুল ছুটি হওয়ার পর হঠাৎ চোখ আঁটকে গেল একটা মেয়ের দিকে।। অপলক দৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে ছিলাম।। ছোট ভাই-কে বাসায় নিয়ে আসার সময় আরও কয়েকবার মেয়েটিকে তাকিয়ে দেখে নিলাম।।
.
এইভাবে স্কুল ছুটির পর প্রায় প্রতিদিন-ই তাকে একটু দেখার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতাম।। কিন্তু কিছু বলতে পারতাম না।। প্রতিদিন দেখতে কেমন জানি তার প্রতি টান অনুভব করলাম।। প্রায় একমাস পর তার নাম জানতে পারি।। যখন ওর বান্ধবী ওর না ধরে ডাক দে।। হ্যাঁ, ভালো লাগা মেয়েটির নাম ধরে ডাকলো পারিসা।।
.
এইভাবে আরও এক মাস তারে দেখে যেতেই থাকি।। কিন্তু ভালো লাগার কথা বলা-তো দূরের কথা, তার সাথে কথা-ই বলতে পারি নাই।। একদিন তাকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একটু সাহস করে তার সাথে কথা বলতে দেলাম।।
আমিঃ হ্যাঁলো!
- পারিসাঃ হ্যাঁলো!! কিছু বলবেন??
আমিঃ নাহ! এমনি।।
- পারিসাঃ আচ্ছা বাই।।
আমিঃ আসতে আসতে বলি... এই সুযোগও মিস করলাম! আমারে দিয়ে আসলে এইসব হবে না!!
- পারিসাঃ কিছু বললেন?
আমিঃ কই!!! কিছু না-তো।।
- পারিসাঃ বাই।।
আমিঃ হুম, বাই।।
.
পরদিন থেকে তার সাথে একটু একটু চোখা-চোখি হত।। মাঝে মাঝে সুযোগ ফেলে কথাও হতো।। কথা বলার মাঝে একদিন জানতে পারি যে দশম শ্রেণিতে পড়ে।। এইভাবে কেটে যায় আরও একমাস।। একদিন সাহস করে তার মোবাইল নাম্বার চেয়ে বসি।। প্রথমে একটু অবাক হলেও পরে দে।।
.
অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্বের পর রাতে তাকে কল দি।। প্রথমে না চিনতে পারলেও পরে চিনেছে।। একটু কথা বলে ঐ দিন বিদায় নিয়েছিলাম।।
এরপর থেকে যতই দিন যাচ্ছিল ততই মোবাইলে কথার পরিমান বেড়ে যাচ্ছে।। আমি সব সময় তাকে অনুভব করতে থাকি।। এই বুঝি ভালো লাগা থেকে ভালোবাসার দিগে যাচ্ছি।। কিন্তু তাকে কিভাবে যানাবো বুঝতেছিলাম না।। একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম তাকে জানাবো।। যেই ভাবা সেই কাজ।। তাকে সাথে সাথেই কল দিলাম।।
আমিঃ হ্যালো পারিসা! কেমন আস??
- পারিসাঃ এইতো ভালো।। তুমি কেমন আস??
আমিঃ এইতো ভালো।। কি করো??
- পারিসাঃ কিছু না।। বসে আছি।। তুমি কি করো??
আমিঃ কিছু না।। আচ্ছা তোমারে একটা কথা বলার জন্য ফোন দিয়েছি।।
- পারিসাঃ কি কথা??
আমিঃ কিভাবে বলবো বুঝতে পারতাছি না।।
- পারিসাঃ আরে এত্ত চিন্তা করার কি আছে! বলে ফেল।।
আমিঃ আচ্ছা কাল দেখা করতে পারবা।। তখন না হয় বলবো।।
- পারিসাঃ কালকে!! আচ্ছা ঠিক আছে দেখা করবো।।
আমিঃ ওকে।। টাইম আর প্লেসটা মেসেজ করে পাঠাচ্ছি।।
- পারিসাঃ আচ্ছা... বাই।।
আমিঃ হুম...বাই।।
.
পরের দিন নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় ত্রিশ মিনিট আগেই আমি পৌঁছে গেলাম।। হাতে আছে পাঁচটি গোলাপ। আমার মধ্যে উৎসাহ এবং ভয় দুই-টাই কাজ করতেছিল।। একটু পরে দেখি পারিসা আসতেছে।। তখন নিজেকে একটু সামলিয়ে নিলাম।। পারিসা এসেই...
- পারিসাঃ কি বলবে বল??
আমিঃ বস।। তারপর বলি।।
- পারিসাঃ আরে, আমার যাওয়া লাগবে... তারাতারি বল।।
আমিঃ মাত্র-ই তো আসলা।।
- পারিসাঃ আরে কাজ আছে... তারাতারি বল।।
আমিঃ আচ্ছা বলতেছি।। দেখো! আমি বণিতা করতে পারি না।। আর কোন উপমা দিয়েও কিছু বলতে পারবো না।। তাই সরাসারি বলতেছি "আমি তোমাকে ভালোবাসি।। অনেক ভালোবাসি"।। হঠাৎ করে ভালোবাসার কথা শুনে পারিসা একটু চমকিয়ে গেল।। তখন তাকে বললাম... এখন উত্তর দিতে হবে না।। সময় নাও, তারপর উত্তর দিও... বলছি না যে আমায় ভালোবাসতে হবে।। তোমার ব্যক্তিগত পছন্দ থাকতেই পারে।।
- পারিসাঃ আচ্ছা, বাই।।
আমিঃ উত্তরের অপেক্ষায় থাকবো।।
-পারিসাঃ ওকে।।
.
রাতে মোবাইলে মেসের শব্দ শুনার পর মেসেজে দেখি "অ্যাঁই লাভ ইউ ঠু"।। আমার আনন্দ আর ধরে রাখে কে!!! কয়েক বার একটু জোরে বলে উঠলাম "ইয়েস, ইয়েস, ইয়েস...।।"
.
কয়েক বছর আড্ডা, ঘুরাঘুরি, ঝগড়া-এর মধ্যে দিয়ে চলতে থাকে আমাদের ভালোবাসার খুনসুটি।।
.
চার বছর সম্পর্কের পর আমাদের মুখামুখি হতে হয় কঠিন মূহুর্তে।। যখন একের পর এক পারিসার জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে।। হঠাৎ পারিসার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়।। আমরা দুইজন কি করবো কিছু বুঝতে পারি না।। এমন অবস্থা যে তার ফ্যামেলিতে কিছু জানাইতেও পারতাছি না।। কারণ আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি তখনো শেষ করতে পারি নাই।। এই সম্পর্ক আমাদের দুই ফ্যামিলির কেউ-ই মেনে নিবে না।। সীদ্ধান্ত নিলাম কাওকে না জানিয়ে বিয়ে করবো।। কিন্তু পরক্ষনে চিন্তা করলাম বিয়ে করে খাওয়াবো কি!! এখনতো বেকার তার উপর ছাত্র।।
.
একে অপরের সাথে নিজেদের সমস্যা, দুই ফ্যামিলির সমস্যা, চারিপাশের সমস্যা... সব কিছু শেয়ার করলাম।। অনেক কষ্ট হলেও সব দিক চিন্তা করে আমরা সীদ্ধান্ত নি... পারিসা তার ফ্যামিলি থেকে ঠিক করা ছেলিটিকে বিয়ে করে নিবে।।
.
আম্মুর ডাকে স্মৃতি থেকে বাস্তবে ফিরে আসলাম।।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now