বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

আমরা কেউ বাসায় নেই পৃষ্টা ১

"উপন্যাস" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান Ruhul Amin Raj (০ পয়েন্ট)

X ১. আমাদের বাসায় একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। আরও খোলাসা করে বললে বলতে হয় দুর্ঘটনা ঘটেছে বাসার শোবার ঘরের লাগোয়া টয়লেটে। কী দুর্ঘটনা বা আসলেই কিছু ঘটেছে কি না তাও পরিষ্কার না। গত ৩৫ মিনিট ধরে বাবা টয়লেটে। সেখান থেকে কোনো সাড়াশব্দ আসছে না। মা কিছুক্ষণ পরপর দরজা ধাক্কাচ্ছেন এবং চিকন গলায় ডাকছেন, এই টগরের বাবা! এই! মা হচ্ছেন অস্থির রাশির জাতক। তিনি অতি তুচ্ছ কারণে অস্থির হন। একবার আমাদের বারান্দায় একটা দাঁড়কাক এসে বসল, তার ঠোঁটে মানুষের চোখের মতো চোখ। মা চিৎকার শুরু করলেন। মা মনে করলেন দাঁড়কাকটা জীবন্ত কোনো মানুষের চোখ ঠোকর দিয়ে তুলে নিয়ে চলে এসেছে। একপর্যায়ে ধপাস অর্থাৎ জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে পতন। বাবা ৩৫ মিনিট ধরে শব্দ করছেন না। এটা মার কাছে ভয়ংকর অস্থির হওয়ার মতো ঘটনা। মা এখনো মূর্ছা যাননি এটা একটা আশার কথা। মা এখন আমাদের ঘরে। আমি এবং টগর ভাইয়া এই ঘরে থাকি। মার মনে হয় শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তিনি বাজার থেকে কেনা জীবিত বোয়াল মাছের মতো হাঁ করছেন আর মুখ বন্ধ করছেন। টগর ভাইয়া বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে আছে। তার বুকের ওপর একটা বই ধরা। বইটার নাম Other world, বইটা উল্টা করে ধরা। টগর ভাইয়া প্রায়ই উল্টা করে বই পড়তে পছন্দ করেন। মা বললেন, টগর এখন কী করি বল তো! দরজা ভাঙব? ভাইয়া হাই তুলতে তুলতে বলল, ভাঙো। কবি নজরুল হয়ে যাও। কবি নজরুল হব মানে? ভাইয়া বুকের ওপর থেকে বই বিছানায় রেখে উঠে বসতে বসতে বলল, ‘লাথি মারো ভাঙরে তালা যতসব বন্দিশালা!’ মা তুমি একটা চায়নিজ কুড়াল জোগাড় করো। আমি দরজা কেটে বাবাকে উদ্ধার করছি। ঘরে কি চায়নিজ কুড়াল আছে? মা ক্ষীণ গলায় বললেন, না তো! ভাইয়া বললেন, চায়নিজ কুড়াল অতি প্রয়োজনীয় জিনিস। সব বাড়িতেই দুটা করে থাকা দরকার। একটা সাধারণ ব্যবহারের জন্যে। অন্যটা হলো স্পেয়ার কপি। লুকানো থাকবে। আসলটা না পাওয়া গেলে তার খোঁজ পড়বে। মা কাঁদো-কাঁদো গলায় বললেন, উল্টাপাল্টা কথা না বলে একটা ব্যবস্থা কর। বাথরুমের দরজা পলকা। লাথি দিলেই ভাঙবে। ভাইয়া বলল, লাথি দিয়ে দরজা ভাঙলাম, দেখা গেল বাবা নেংটো হয়ে কমোডে বসে আছেন। ঘটনাটা বাবার জন্যে যথেষ্ট অস্বস্তিকর হবে। এই বিষয়টা ভেবেছ? টগর আয় তো বাবা, আয়। ভাইয়া বিছানা থেকে নামল। সেনাপতির পেছনে সৈন্যসামন্তের মতো আমি এবং মা ভাইয়ার পেছনে। শোবার ঘরে ঢুকে দেখি বাবা বিছানায় বসে আছেন। তার কাঁধে টাওয়েল। তিনি মার দিকে তাকিয়ে বললেন, এক কাপ লেবু চা দাও তো! কড়া হয় না যেন। টি-ব্যাগ এক মিনিট রেখে উঠিয়ে ফেলবে। মা বিদ্যুৎবেগে রান্নাঘরের দিকে ছুটলেন। আমরাও মার পেছনে পেছনে গেলাম। টয়লেট-দুর্ঘটনা নাটকের এখানেই সমাপ্তি। এখন আমাদের পরিচয় দেওয়া যাক। বাবা বয়স ৬৩। একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য পড়ান। সপ্তাহে দুদিন একটা টিউটোরিয়াল হোমে ইংরেজি শেখান। বাবা অত্যন্ত সুপুরুষ। তার পরও কোনো এক বিচিত্র কারণে ছাত্রমহলে তাঁর নাম মুরগি স্যার। ইউনিভার্সিটি থেকে টিউটোরিয়াল হোমেও বাবার এই নাম চালু হয়ে গেছে। বাবা বাসায় মা ছাড়া কারও সঙ্গে কোনো কথা বলেন না। মার সঙ্গে তাঁর কথাবার্তাও অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। এসএমএস ধরনের। উদাহরণ ‘টেবিলে খাবার দাও। খেতে বসব।’ এই বাক্য দুটির জন্যে বাবা শুধু বলবেন, ‘Food!’ একজন সাহিত্যের অধ্যাপকের বাসায় বেশ কিছু বইপত্র থাকার কথা। তাঁর বইপত্রের মধ্যে আছে দুটা ইংরেজি ডিকশনারি। একটা জোকসের বই, নাম Party Jokes. আমি পুরো বই পড়ে দেখেছি কোনো হাসি আসে না। সেই বই থেকে একটা জোকের নমুনা: A physician told me about one of his favourite patients. The doctor once asked the fellow it he had lived in the same place all his life. The man replied, ‘No, I was born in the bedroom next to the one where I sleep now.’ বাবাকে ডিকশনারি প্রায়ই পড়তে দেখা যায়। তখন তাঁর মুখ থাকে হাসি-হাসি। এই সময় যে কেউ তাঁকে দেখলে মনে করবে তিনি রোমান্টিক কোনো উপন্যাস পড়ছেন। তিনি টেলিভিশন দেখেন না, মাঝেমধ্যে ইংরেজি খবর পাঠ দেখেন। খবর পাঠ শেষ হওয়া মাত্র বিরক্ত মুখে বলেন, ভুল উচ্চারণ। থাবড়ানো দরকার। ‘থাবড়ানো দরকার’ তাঁর প্রিয় বাক্য। সবাইকে তিনি থাবড়াতে চান। রিকশাওয়ালা দুই টাকা বেশি নিলে তিনি বিড়বিড় করে বলবেন, থাবড়ানো দরকার। বাবা স্বাস্থ্যের প্রতি অত্যন্ত যত্নশীল। প্রতিদিন ভোরবেলা তাঁকে উঠানে ঘড়ি ধরে ২০ মিনিট হাঁটতে দেখা যায়। ২০ মিনিট পার হলে ১০ মিনিট ফ্রিহ্যান্ড এক্সারসাইজ করেন। হণ্ঠন এবং এক্সারসাইজের সময়ের হিসাব রাখেন মা। তিনি বারান্দার মাঝখানে হাতঘড়ি নিয়ে বসে থাকেন। ২০ মিনিট পার হওয়ার পর বলেন, Time out. ১০ মিনিট ফ্রিহ্যান্ড এক্সারসাইজের পর আবার বলেন Time out. বাবা চান মা তাঁর সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলেন। মা Time out ছাড়া আর কোনো ইংরেজি বলেন না। খাবার-দাবার বিষয়ে বাবাকে উদাসীন মনে হয়, তবে কিছু বিশেষ খাবার তাঁর অত্যন্ত পছন্দ। এই খাবারগুলোর রন্ধনপ্রক্রিয়া যথেষ্ট জটিল। শুধু একটি উল্লেখ করি। কলার মোচার বড়া। কলার মোচা প্রথমে ভাপে সেদ্ধ করতে হয়। তারপর ডিম মেশানো বেসনে মেখে অল্প আঁঁচে ভাজতে হয়। বাবার বিনোদনের ব্যাপারটা বলি। মাঝেমধ্যে তাঁকে মোবাইল ফোনে একটি গেম খেলতে দেখা যায়। এই খেলায় সাপকে আপেল, আঙুর খাওয়াতে হয়। এসব সুখাদ্য খেয়ে সাপ মোটা হয়। সাপ ঠিকমতো খাদ্য গ্রহণ না করলে বাবা চাপা গলায় বলেন থাবড়ানো দরকার। মা ক্লাস টেনে পড়ার সময় বাবার সঙ্গে মার বিয়ে হয়। ইচ্ছাকৃতভাবে হোক বা অনিচ্ছাকৃতভাবে হোক বিয়ের রাতে বাবা তিনটা বিড়াল মেরে ফেলেন। স্ত্রীর ইংরেজি জ্ঞান পরীক্ষার জন্যে তিনটি প্রশ্ন করেন। কোনোটার উত্তরই মা দিতে পারেননি। প্রশ্নগুলো— বাবা: ‘Hornet শব্দের মানে কী?’ মা: (ভীত গলায়) জানি না। বাবা: Wood Apple কী? মা: (আরও ভীত) জানি না। বাবা: Daily life মানে কী? মা: (ফোঁফাতে ফোঁফাতে) জানি না। মা পরে আমাকে বলেছেন Daily life মানে তিনি জানতেন। ভয়ে মাথা আউলিয়ে গিয়েছিল। বাবা: তুমি তো কিছুই জানো না, ফাজিল মেয়ে। তোমাকে থাবড়ানো দরকার। বিয়ের রাতে মা যে ভয় পেয়েছিলেন সেই ভয় এখনো ধরে রেখেছেন। বাবাকে তিনি একজন মহাজ্ঞানী রাজপুত্র হিসেবে জানেন। তাঁর সামনে সব সময় নতজানু হয়ে থাকতে হবে, এটি তিনি বিধির বিধান হিসেবেই নিয়েছেন। মা বাবাকে ভয় পান এবং প্রচণ্ড ভালোবাসেন। ভয় এবং ভালোবাসার মতো সম্পূর্ণ বিপরীত আবেগ একসঙ্গে ধরা কঠিন কিন্তু মা ধরেছেন। বাবার প্রতি মার ভালোবাসার একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৪৬৩ জন


এ জাতীয় গল্প

→ আমরা কেউ বাসায় নেই পৃষ্টা ৯
→ আমরা কেউ বাসায় নেই পৃষ্টা ৮
→ আমরা কেউ বাসায় নেই পৃষ্টা ৭
→ আমরা কেউ বাসায় নেই পৃষ্টা ৬
→ আমরা কেউ বাসায় নেই পৃষ্টা ৫
→ আমরা কেউ বাসায় নেই পৃষ্টা ৪
→ আমরা কেউ বাসায় নেই পৃষ্টা ২

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now