বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
ভৈরবের প্রতিশোধ
বাস থেকে নেমে প্রায় মাইল তিনেক হেঁটে
এসে কুরুকুল্লা গ্রামে পৌঁছলেন মন্টু মাস্টার।
শীতকাল বলেই এতটা হাঁটা সম্ভব হয়েছিল,
বর্ষাকাল হলে যে কি হতো তা মন্টু মাস্টারের
কল্পনার অতীত। ভালই নিজ মফস্বলে একটা
স্কুলে শিক্ষকতা করছিলেন, কিন্তু হঠাৎ আরেক
শিক্ষকের সাথে ঝামেলায় জড়িয়ে যান, ঐ অপর
শিক্ষক আবার ক্ষমতাসীন দলের বিশেষ কারো
প্রিয়পাত্র, কাজেই ষড়যন্ত্রে পড়ে এই
আদিবাসী অধ্যুষিত অজ পাড়াগাঁয়ে এসে পড়তে
হলো। যদিও আশ্বাস পেয়েছেন যে মাস
দুয়েকের মধ্যেই ভালো কোথাও যেতে
পারবেন। বাসস্টপে দেখা হলো কুরুকুল্লা হাই
স্কুলের দপ্তরি দয়ালহরির সাথে। সেই তার
ব্যাগপত্র বয়ে নিয়ে এলো।
স্কুলটা হয়েছে মাত্র বছর দুই হলো। দয়ালহরি
মন্টুকে নিজ ঘরে রাখার প্রস্তাব দিল, কিন্তু মন্টু
চাইলেন স্কুলের একটা রুমেই তার থাকার ব্যবস্থা
হোক। দয়াল একটু ইতস্তত করছিল, কিন্তু মন্টু তা
পাত্তাই দিলেন না। অনশেষে দক্ষিণের
কামরাতেই তার থাকার ব্যবস্থা করা হল। সন্ধ্যা হতেই
দয়াল বিদায় নিল। আর মন্টু লেগে গেলেন ঘর
গোছাতে। প্যান্ট ঝারতেই বেরিয়ে এলো
একটা পুরানো ফটো। মন্টু আর তার তিন বন্ধু,
রাজন, সুভাষ আর হামিদ। মন্টুবাদে সবাই মৃত। একটা
সড়ক দুর্ঘটনা প্রাণ নিয়ে নেয় এ তিন জনের,
একই গাড়িতে মন্টু ও ছিলেন। কিন্তু অল্প চোট
পেয়ে বেঁচে যান তিনি। তাদের কথা মনে করে
বুকটা হুহু করে উঠল মন্টুর।
রাতের খাবারটা দয়ালই রেখে গিয়েছিল। খেয়ে
দেয়ে ক্লান্তির কারণে বিছানায় গেলেন তিনি।
প্রায় মধ্যরাতে এসে ঘুম ভেঙ্গে গেল তার।
একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস এর শব্দ শোনা গেল। একটু
সজাগ হয়ে শুনতে চেষ্টা করলেন। না কিছু
শুনলেন না। বুঝলেন যে তার নিজেরই শ্বাসের
শব্দ।
পরদিন সন্ধ্যাবেলাও দয়াল খাবার রেখে চলে
গেল। মন্টু বসে বই পড়ছিলেন। হঠাৎ একটা শব্দ
পেলেন, শুনে মনে হলো কেউ যেন
খুড়িয়ে হাঁটছে। ভালো করে দেখলেন যে
কেউ নেই। মনের ভুল মানলেন। আবার খেয়ে
দেয়ে শোয়ার আয়োজন করলেন।
আবার মধ্যরাতে স্পষ্ট শুনলেন আর্তনাদ মিশ্রিত
কান্নার রোল। এবার খুবই ভয় পেলেন মন্টু। পা
টিপে টিপে খাট থেকে নেমে দরজাটা
খুললেন। দেখলেন দুয়ারে হাঁটু মুড়ে বসে
কেউ কাঁদছে, মুখ হাটুর মাঝে লুকানো। ভয়ার্ত
কন্ঠে এবার মন্টু জানতে চাইলেন," কে, কে
কাঁদে?" হঠাৎ কান্না থেমে যায়। বদলে শোনা
গেল প্রাণ হিম করা খিলখিল হাসি। মুখ তুলে তাকাল
সেই মূর্তিটি। কালো গায়ের গড়ন, শুধু
চোখজোড়া জ্বলছিল অন্ধকারে। তীব্র
কর্কশ কন্ঠে বলে ওঠে," মরবি, মরবি তুই,
তোর সময় শেষ"। মাঘের তীব্র শীতে ও
ঘামতে থাকেন মন্টু। মুহূর্তেই হাওয়া হয়ে যায়
সে মূর্তি। মন্টু দ্রুত রুমে ঢুকে খাটের পাশে
রাখা জগ থেকে জল ঢেলে খেয়ে নিলেন।
নিজেকে বুঝালেন এটা হ্যালুসিনেশন। হয়ত
কোন দুঃস্বপ্ন ছিল। অতিকষ্টে ঘুমোতে
চেষ্টা করতে লাগলেন, কিন্তু ঘুম আর আসে না।
কিছুক্ষণ পর পাখির ডাক শুনতে পেলেন।
বুঝলেন ভোর হয়েছে। তড়িঘড়ি করে ঘর
থেকে বেরিয়ে গেলেন এ শীতেও।
সারা দিনটা মন্টুবাবুর কাটল ভীষণ দুশ্চিন্তায়। কখনো
তার এমনটা হয় নি। এমন ভয় কখনো পান নি।
বোধহয় দয়ালের বাড়িতে থাকলেই ভালো
হতো। তবে আরেকটি রাত দেখা যাক।
মধ্যরাত্রি। ঘুমানোর চেষ্টা করে চলেছেন
মন্টু মাস্টার। হঠাৎ ই আবার একটা অদ্ভুত শব্দ। মনে
হলো কোন চারপেয়ে জন্তু তার দিকে
এগিয়ে আসছে। মুখ তুলে তাকাতেই দেখলেন
সত্যই কালো ছায়ার মত একটা চতুষ্পদ কিছু তার
শিয়রে দাঁড়ানো। কিছু বুঝার আগেই ঐ ছায়াটা
লাফিয়ে উঠলো মন্টুর গায়ে।
গভীর রাত্রি। দপ্তরি দয়ালহরি তার ঘরে ঘুমন্ত।
হঠাতই তার খোয়াড়ের গরুঘর থেকে গরুর
আর্তস্বর কানে এল দয়ালের। তাড়াতাড়ি হারিকেন
ধরিয়ে গোয়ালে ছুঁটল দয়াল। যা দেখল তা
অবিশ্বাস্য। গরুর ঘাঁড়ে দাঁত বসিয়ে একটানা রক্ত
টেনে চলেছেন মন্টু মাস্টার। তবে দুপায়ে
দাঁড়িয়ে নয়, দুই হাঁটু আর দুই হাতের পাতায় ভর করে
চারপেয়ে জন্তুর মত দাঁড়িয়ে। দয়ালের চিৎকারে
মুহূর্তেই জড়ো হলো আশেপাশের
লোকজন। ততক্ষণে মন্টু বেহুঁশ।
সকলে বলাবলি করতে লাগল এ মানুষবেশী
রাক্ষস, পিশাচ ইত্যাদি ইত্যাদি। কাজেই ওঝার কাছে
নেয়ার কথা ঠিক হলো। দড়ি বেঁধে নিয়ে যাওয়া
হলো ওঝার কাছে।
ওঝা জল ছিটিয়ে জ্ঞান ফিরালো মন্টুর। মন্টু
জেগে ওঠে তার মুখে রক্ত বুঝে হতভম্ব
হয়ে যায়। ওকে জেগে উঠতে দেখে
সকলেই ওর দিকে তেড়ে যায়। ওঝা বাঁধা দেয়।
সকলকে আদেশ দেয় বাইরে যেতে। সকলে
বাইরে গেলে মন্টুর বাঁধন মুক্ত করে দেয়।
মন্টু এবার গদগদ হয়ে বলেন," এরা কি বলছে
আমি জানিনা, কোথাথেকে এই রক্ত এলো,......"
- আমি জানি তুমি এসব করনি।
- তবে কে করেছে?
- ভৈরব।
- কে এই ভৈরব?
- এ গ্রামেরই এক বাসিন্দ ছিল সে। জন্মের দিনই
ওর বাবা মারা যায়। তার ওপর জন্ম থেকে খোঁড়া
ছিল বলে সকলেই ওকে অপয়া বলতো। মা ছাড়া
কেউ ছিলো না ওর। কিন্তু তার বয়স আঠারো
হতেই ওর মা ও মারা যায়। কেউ ওকে দেখতে
পারতো না। বরং ওকে একঘরে করে রাখে,
কারণ সবার মনে বিশ্বাস ছিল ও একজন অশুভ
লোক। মনের দুখে সে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়।
গাঁয়ের লোক খুশি হয়। কিন্তু বছর পাঁচেক পর ও
আবার ফিরে আসে। এতদিন আসলে ও গিয়েছিল
কালোযাদু শিখতে। ফিরেই সে হয়ে যায়
আতঙ্ক, কেউ তাকে উপহাস করলেই তার হয়ে
যেত মহা সর্বনাশ। একারণে সবাই তাকে এড়িয়ে
চলত। সে পিশাচসিদ্ধ হওয়ার আশায় জনৈক পিশাচের
পুজো করতো। একদিন এক মাঘের অমাবস্যায়
সে বলি দেবার সঙ্কল্প করে। সেদিন ছিল
শনিবার, আর গোধুলী লগ্নে ছিল সূর্যগ্রহণ।
কিন্তু তার বলি দেয়া বানচাল হয়ে যায়। ফলে ঐ
পিশাচের হাতে সে বেঘোরে মারা পড়ে।
- কিন্তু এতে আমার কি সম্পর্ক?
- আছে। তুমিই বানচাল করেছিলে সে বলি।
- কি? একিকরে সম্ভব?
- মনে পড়ছেনা? আমার হাতে হাতটা রাখো। আর
চোখ বন্ধ করো। দেখতো কিছু দেখতে
পাও কিনা।
চোখ বন্ধ অবস্থায় দেখা গেল মন্টুর বারো
বছর আগেকার অবয়ব। তখন তিনি ভার্সিটি ছাত্র।
এসেছেন অদূরে এক জঙ্গলে সাথে তিন বন্ধু
সুভাষ, রাজন আর হামিদের সাথে। সেখানে
শুনলেন আদিবাসী পল্লী কুরুকুল্লার কথা।
আরো জানলেন সূর্যগ্রহণে কেউ ঘর
থেকে বেরোয় না সেখানে। তাই অসীম
সাহসী মন্টু নিজেই বেরিয়ে পড়েন। পথে
একজায়গায় এক জোড়া মোরগ মুরগী আর দুই
বোতল মদ দেখতে পান। সেগুলো নিয়ে
ফেরত আসেন জঙ্গলের রেস্ট হাউজে, আর
মদ মাংস খেলেন চারজনে মিলে।
মন্টু তো হতবাক। এই ঘটনা এতোদিন তিনি ভুলেই
ছিলেন। ওঝা বলল," বুঝলে তো, ওগুলোই ছিল
বলি। কাল শনিবার, অমাবস্যা। কাল গোধুলীবেলায়
সূর্য গ্রহণ হবে। বারো বছর পর আবার সেই
সময় উপস্থিত। কালকেই ভৈরব তার প্রতিশোধ
নেবে। আর ঐ পিশাচের ও রক্ত তেষ্টা মিটবে।
- আমায় মেরে ভৈরব কি পিশাচসিদ্ধ হবে না?
- না। পিশাচ কেবল রক্ত খেয়ে যে মাংস রাখবে
তা কাঁচা খেলেই সে পিশাচসিদ্ধ হতো, কিন্তু এখন
ও অশরীরি, কাজেই ও ভোজনে অসমর্থ।
তবে তোমার মত্যুতো ওর মুক্তি হবে। ঐ পিশাচ
কেবল ঐ নির্দিষ্ট তিথিক্ষণেই নিজে রক্ত
খেতে পারে, নচেৎ তার মাধ্যম দরকার। তাই ও
তোমার মাধ্যামেই........
- বুঝলাম। আমাকে বাঁচানোর একটা উপায় বলুন।
- যদি তোমার ভাগ্যে মরণ না থাকে তবে
আগামীকাল গ্রহণ শুরু হলে শ্মশানে গিয়ে
একজোড়া কালো মোরগ মুরগী আর দু
বোতল মদ রেখে আসবে।
পরদিন গোধুলীবেলা। মন্টু চললেন একহাতে
মোরগ মুরগী আর অন্য হাতে মদ নিয়ে।
শ্মশানের কাছে যেতেই হাত থেকে ছিটকে
গেল মুরগী আর বোতল। মন্টুর নড়নশক্তি ও
চলে গেল। সামনে দেখা গেল সেই
চারেপেয়ে ছায়াটাকে, এগিয়ে আসতে।
একপাশে ভৈরব বাচ্চাদের মত হততালি দিয়ে খিলখিল
হাসছে। আর একটু দূরে মন্টুর মৃত তিন বন্ধু তাকে
ডাকছে নির্বিকারভাবে।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
প্রিন্স
Guest ৭ বছর, ৫ মাস পুর্বেjakir hosan
Guest ৭ বছর, ৫ মাস পুর্বেওয়াহিদ শাহরিয়ার
Guest ৭ বছর, ৫ মাস পুর্বে