বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

♦কদম ফুলের দিন♦

"শিক্ষণীয় গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান মফিজুল (০ পয়েন্ট)

X ভাই আমার জন্য কদম ফুল এনে দিতে পারবি"?? বাইরে বের হওয়ার সময় বড় আপুর কথা শুনে থমকে দাড়িয়ে পড়লাম, বললাম "তুমি যে কি আপু, সারাদিন এত কদম ফুল দিয়ে কি যে করো, ঠিক আছে নিয়ে আসবোনে"বলেই বেড়িয়ে পড়ছি। আপুর কি জন্য ফুল লাগবে বুঝতে পারছি, ছোটবেলা থেকেই দেখছি আপুর এই ফুলটা খুব পছন্দের, আজকে ছেলে পক্ষ দেখতে আসবে আপুকে, ঢাকা থেকে বাবা আমাকে এই জন্যই ডেকে পাঠিয়েছে। পরপর দুটো ছেলেকে দেখছি দুজনেই বেশ ভালো চাকরী করে, বয়সটা একটু বেশি এই যা। তবে আমার আপত্তি বয়সে নয় আমার আপত্তি ছিলো তাদের চাহিদাটা নিয়ে। একজনকেও ভালো লাগেনি আমার। একজনের কথা ছিলো বিয়েতে তাকে খালি একটা গাড়ি কিনে দিতে হবে। সে সরকারী চাকরী করে,একটা গাড়ি না হলে কি হয়। আরেকজন দেখতে শুনতে বেশ ভালই ছিলো কিন্তু তার ব্যাপারে খোজ খবর নিয়ে জানলাম লোকটা নেশাখোর, বাবাকে বললে বাবা বললেন এগুলো কোন ব্যাপার না ছেলে মানুষ এগুলো করবেই, কিন্তু আপুর মত একদমই না থাকায় বাবা বাধ্য হয়ে ক্যানসেল করে দেয়। আজকে তৃতীয় ছেলেপক্ষ আসবে মধ্যবয়সী একজন, আগেও একটা বিয়ে ছিলো তার, কিন্তু কি একটা কারনে মেয়েটা ডিভোর্স দিয়ে চলে যায়। ব্যাবসায়ী অনেক ধনী পরিবারের সন্তান লোকটা, পাশের এলাকায় বাড়ি। বাবা খুব খুশি কিন্তু আমিও এই বিয়ে মানতে পারছিনা। লোকটার আগের বউটা কেন চলে গেছে এটা জানতে পেরেছি। কিন্তু বাবাকে বললে সেটা বাবা বিশ্বাস করবেনা। হাটতে হাটতে ভাবছিলাম এগুলোই, রাস্তায় রুপক ভাইয়ের সাথে দেখা, একটা দোকানে চা খাচ্ছেন ঢাকা থেকে কবে ফিরছেন কে জানে, রপক ভাইয়ের সাথে আপুর একটা সম্পর্ক ছিলো। ঠিক সম্পর্ক বললে ভুল হবে তারা মনে হয় একে অপরকে পছন্দও করতেন। রুপক ভাইয়ের মেট্রিক পরিক্ষার পর তাবলীগে চলে যান,চল্লিশ দিন পড় যখন ফিরে আসলেন তখন তাকে চিনতেই পারলাম না। এসেই আপুর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করলেন, একটা চিঠি লিখে দিয়েছিলেন আপুকে, খুব ছোট চিঠি সেটা চুরি করে পড়ছিলাম লেখা ছিলো "তিথী,যদি কোনদিন পারি তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো বিয়ে করে। বিয়ের আগে আর কোনদিন আমার সাথে যোগাযোগ রেখোনা। রুপক ভাই এরপর পরিবর্তন হয়ে যান কেমন যেনো, চেহারায় একটা হুজুর হুজুর ভাব চলে আসে মুখে দাড়ি, আমাকে মাঝে মাঝে ডেকে জানতে চান আপুর কথা, কিন্তু আপুর সাথে আর কথা বলতে চান নি। একটা ইন্জিনিয়ারিং ভার্সিটিতে পড়েন তিনি, ফাইনাল সেমিষ্টারের ছাত্র, রুপক ভাইকে দেখেই জানতে চাইলাম কবে আসছেন কি করছেন। কথায় কথায় জানতে চাইলেন আপু কেমন আছে। বললাম বিয়ের কথা চলছে আপুর আজকে তৃতীয় আরেকটা ঘর থেকে দেখতে আসবে। আমার কথা শুনে রুপক ভাই খুব একটা চমকালেন বলে মনে হলো না। চুপচাপ আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন আমার খুব ইচ্ছা আপুর সাথে রুপক ভাইয়ের বিয়েটা হয়ে যাক। আপুর সাথে খুব ভালো মানাবে রুপক ভাইকে। কিন্তু রুপক ভাই এখনো আপুকে পছন্দ করেন কিনা বুঝা মুশকিল। কদম ফুলটা কিনে আনছি আপুর জন্য, মাগরিবের পর পরই ছেলেপক্ষ চলে আসছে। ছেলেকে দেখে খারাপ লাগলো না তবে অহেতুক অনেক প্রশ্ন করলেন তারা। যেগুলো ভালো লাগলো না। রাতে খাবার টেবিলে বললাম বাবা বিয়েটা দিচ্ছো ছেলেটার পুরাতন খবর জেনে বিয়েটা দিও, বাবা কি বুঝলেন কে জানে আমাকে ধমক দিলেন, আমি বললাম বাবা ছেলেটা আগের বউকে পিটাইতো তাই চলে গিয়েছে ডিভোর্স দিয়ে, সহ্য করতে না পেড়ে। আপুকে বললাম" আপু তুই এই বিয়ে করিস না আমি চাইনা তুই কষ্ট পাস"। বাবা একটা থাপ্পর দিলেন বললেন যেদিন মেয়ের বাবা হবে সেদিন বুঝবে মেয়েকে বড় করে বিয়ে দেওয়া কতটা কষ্টের কাজ। আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম চড়টা খেয়ে। মনটা খারাপ করে ভাবলাম হয়তো বাবাই ঠিক। সকালে রুপক ভাই আসলেন খুব ভোরে ফজরের পর পরই। বাবার সাথে কি যেন বললেন। বাবা হেসে উঠে বললেন তুমি আমার মেয়েকে বিয়ে করতে চাও তোমার তো চাকরি নেই, তুমি খাওয়াবেটা কি ইত্যাদী ইত্যাদী। রুপক ভাই বুঝালেন বাবাকে যে, উনার পড়াশুনা প্রায় শেষের পথে তো উনি যেমন করেই হোক চাকরী নিবেন একটা। হয়তো দুইবছর একটু কষ্ট হবে, এরপর সব ঠিক হয়ে যাবে। সাদাসিধা রুপক ভাইকে সেদিন অনেক কথা শুনিয়ে বের করে দিছিলেন বাবা। আপু দরজার আড়ালে সব শুনে চুপচাপ নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকে থাকলেন। এর পড়ের সপ্তাহেই আপুর বিয়ে হয়ে যায়। রুপক ভাইকে বলছিলাম কথাটি। রুপক ভাই কিছুই বলেন নি কথাটি শুনে। আপুর বিয়ের তিনদিনের মাথায় ঢাকা চলে যাই। নিজের পড়াশুনা নিয়েই ব্যাস্ত হয়ে পড়ি। আপুর সাথে ফোনে মাঝে মাঝে কথা হতো, প্রায়ই বলতো ওর শশুর বাড়ির কথা, ও যে খুব সুখে আছে এটা বলতো। আমার কেন জানি মনে হতো আপুর এই কথা গুলো মেকি মেকি। আমি চিনি আমার বোনকে খুব ভালো আর ধার্মিক, সে খুব খারাপ থাকবে এটাও মানতে মন চাইলোনা। এরপর হঠাৎ একদিন মা ফোন দিয়ে বললেন আপুর বাসায় যেতে, তাকে কে যেন ফোন দিয়ে বলছে আপুকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে আর নির্যাতন করে তার হ্যাজবেন্ড। আমি সেদিন মায়ের কথা মত যেয়ে যা দেখলাম তা আর সহ্য করতে পারিনি। আপুকে বেত দিয়ে পিটাচ্ছে সেই লোকটি আর তার মা, আপু বারবার মাফ চাচ্ছে আর বলছে সে নাকি ফোন দিয়ে কিছুই বলেনি আমার মাকে। আমি যেয়ে সেদিন এক ধাক্কা দিয়ে লোকটাকে ফেলে দেই। বলছিলাম "আপনারা কি মানুষ একটা অবলা মেয়েকে এভাবে মারে কেউ"। লোকটা বলে উঠলো "ওই বেটা আমার বউরে আমি যা খুশি তা করমু তাতে তোর কি? আমার বউ আমার গোলাম, ওরে আমি মারমু কাটমু যা খুশি করতে পারমু" আমি অবাক হয়ে গেলাম তার কথা শুনে, সেদিন অপদস্ত হয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় আপুকে বললাম দিনের পর দিন অত্যাচারীত নির্যাতীত হয়েও অভিনয় করে কাকে সুখে রাখছো, আমাদেরকে? নাকি তোমার জামাইকে"? বাসায় এসে বাবাকে সব কিছু খুলে বললাম। বাবা চুপচাপ শুনে গেলেন। এই ঘটনার চার মাসের মাথায় আপু পালিয়ে চলে আসলেন, আপু প্রেগন্যান্ট তখন, রাতের খাবার দেওয়ার সময় শরীরটা খারাপ লাগলে একটু শুয়ে ছিলেন, তখন খাবার দিতে দেরি হওয়ায় আপুকে প্রচুর কথা শুনায় শাশুরী আর তার মেয়ে, রাতে এসে সেগুলো শুনতে পেয়ে আপুকে প্রচন্ড মারধর করে তার হ্যাজবেন্ড। টিকতে না পেরে পালিয়ে চলে আসছেন তিনি। ভালো করে দেখছি আপুকে, মুখের সেই লাবন্যতা আর নেই। সেখানে আছে হিংস্রতার আর নির্যাতনের কালশিটে দাগ। বিয়ের সময় মামার দেওয়া কানের দুলটা ছিরে সেখান থেকে রক্ত ঝরছে। আপু পালিয়ে চলে আসছেন শুনে আমার দাদি ভিষন রাগ করলেন, বললেন স্বামীর ঘর ছাইরা কোন মেয়ে মানুষ পালাইলে সে নাকি পোড়ামুখো হয় ইত্যাদী ইত্যাদী। মা চুপচাপ । তার পড়ের দিন আপুর শশুর বাড়ি থেকে আপুর শাশুরী এসে বললো বউ পালিয়ে গেছে এই জন্য ছেলে বউকে তালাক দিতে চাচ্ছে, যদি মেয়ে থাকতে চায় তাইলে যেন তারাতারি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেদিন বাবার সাথে প্রচন্ড ঝগড়া হয় মায়ের। বাবা জোর করে চাইছিলেন যেন আপু সংসার টা করুক, স্বামীর সংসার ভেঙে ফিরে আসলে সেই মেয়েকে আবার বিবাহ কি করে দিবেন সেই চিন্তায় এই কথাটি বলছিলেন। এছারাও আপু ছিলেন প্রেগন্যান্ট। মা চুপচাপ শুনে গেলেন, আমি শুধু বলছিলাম বাবা পৃথিবীতে আমাদের মত কাপুরুষ জাতি আর হয়তো কোনদিন হবে না, তার পরের দিন সবাইকে বলে আপু চলে যায় তার শশুর বাড়িতে, যাওয়ার সময় দাদিকে আর বাবাকে বলে যায় "আমি আমার স্বামিকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসবো তার জন্য সব কিছু করবো তার প্রতি আমার কোন আফসুস নেই, শুধ আফসুস থাকবে আমার পরিবারের প্রতি যারা আমাকে সব কিছু জেনে শুনেও এমন একজনের সাথে বিয়ে দিয়ে দিলো, আবার এমন একজনের সাথে ঘর সংসার করার জন্য আমাকে জোর করে আবার পাঠিয়ে দিচ্ছে"। এই বলেই আপু চলে যান আর ইচ্ছে করে নি থাকতে বাসায়। সরাসরি ঢাকায় চলে আসলাম, আসলেই জীবনটাকে আমরা যতটা সহজ ভাবে ভাবি জীবন এতটা সহজ নয় আবার বিপরীত ভাবে ভাবলে এতটা কঠিন ও নয়, বাবা যদি সেদিন আপুকে রুপক ভাইয়ের হাতে তুলে দিতেন আমি এটা বিশ্বাস করি রুপক ভাই মারা তো দুরে থাক কোনদিন কোন বকাও দিতেন না। যেই মানুষটা আল্লাহ আর তার রাসূলকে ভালোবাসে বা ভয় করে নিজকে মুসলিম হিসাবে পরিচয় দেয় সে আর যাই হোক কোন মেয়েকে নির্যাতন করতে পারেনা, জানিনা হয়তো আমাদের মত গরীব আর মধ্যবিত্ত পরিবার এর জন্য টাকা আর সামাজিক অবস্থান পাওয়াটা বেশি জরুরী ভালো থাকার চেয়ে। তিনমাস দশদিন পর হঠাৎ একদিন মা ফোন দেয়। ভাসা ভাসা কান্না আর অস্পষ্ট কথায় কি বললো বুঝলাম না শুধু মনে হলো আমাকে বাড়িতে যেতে হবে, কি এক ছন্দময় ব্যাাস্ততায় ব্যাগ গুলো গুছিয়ে রওহনা দিয়েছি, একটাই চিত্র ভেসে উঠছে চোখের সামনে, একটা অসহায় মুখ, মানসিক থেকে শারীরিক নির্যাতন আর একটা অসহায় পরিবারের শেষ কান্না। পরিশিষ্ট :- শেষ বিকালে বাড়িতে যখন পৌছালাম সূর্য তখন হেলে পড়ছে, আপুর মৃতদেহটা রাখা আছে উঠানে, বাবা নিশ্চুপ হয়ে আছেন। যেন তার মুখটা বোবা হয়ে গেছে। চিরকাল মেয়েকে ভালোবেসে যাওয়া বাবা হয়তো বুঝতেই পারেন নি তার মেয়েটি আর নেই। মা বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন। বুঝাই যাচ্ছে আপুকে প্রচুর নির্যাতন করে মারা হয়েছে, শশুর বাড়ির পক্ষ থেকে বলা হলো আপু আত্মহত্যা করছে। জানাজা নামাজ পড়ানো প্রয়োজন কিন্তু কেউ নামাজ পড়াতে চাচ্ছেনা প্রচুর গন্ধ আসছে লাশের শরীর থেকে। রুপক ভাই ছুটে আসছেন মাথায় টুপি আর পান্জাবী পড়া। উনিই জানাজা নামাজ পড়াবেন। বললেন মুসা তুই একটু গোলাপ ফুল আনতো তিথীর লাশের পাশে দিতে হবে তাইলে গন্ধটা চলে যাবে। আমি ছুটে চলছি গোলাপ ফুলের খোজে, চোখটা ভিজে আসছে, কে যেনো আমাকে ফিসফিস করে বলছে "কাদছো কেন তুমি", আমি যেনো তাকে বলছি "কদম ফুলের মিষ্টি সকালে শুরু হওয়া একটা বোনের জীবন যখন সন্ধার গোলাপে এসে শেষ হয়ে যায়, তার ভাইয়ের জন্য এই অশ্রুটাই হয়ে যায় শেষ সম্বল"। লেখা :-যুবায়ের মাহমুদ মুসা গল্প :-কদম ফুলের দিন


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৪৬১ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • PiNk fAirY {sHiKhA}
    User ৩ বছর, ৯ মাস পুর্বে
    স্বাগতম মফি।কাঁদছো কেনো?gj।কেঁদোনা

  • মোহাম্মদ মফিজুল হোসেন
    Golpobuzz ৩ বছর, ৯ মাস পুর্বে
    ধন্যবাদ আপুweep gj

  • PiNk fAirY {sHiKhA}
    User ৩ বছর, ৯ মাস পুর্বে
    weepweepweepweepweepweepweep

  • মোহাম্মদ মফিজুল হোসেন
    Golpobuzz ৩ বছর, ৯ মাস পুর্বে
    আচ্ছা gj

  • Farhan
    User ৩ বছর, ৯ মাস পুর্বে
    আচ্ছা পড়বো পরে!gj

  • মোহাম্মদ মফিজুল হোসেন
    Golpobuzz ৩ বছর, ৯ মাস পুর্বে
    ধন্যবাদ gj আর বড় হলে মূল কথাগুলো পড় ফারহান ভাই gj

  • Farhan
    User ৩ বছর, ৯ মাস পুর্বে
    গল্পটা খুব বড়!gj

  • SHUVO SUTRADHAR
    Golpobuzz ৩ বছর, ৯ মাস পুর্বে
    ভাল লাগল।