বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

বেলা ফুরাবার আগে

"ইসলামিক" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান ????(guest) (০ পয়েন্ট)

X লেখকঃ আরিফ আজাদ বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম ᕙ ১২. সালাতে আমার মন বসে না ᕗ [ক] যে মানুষটা নিজের কাজে খুব ধীরস্থির, খুব ভেবেচিন্তে, গুছিয়ে কাজ করতে ভালােবাসে, মসজিদে এলে সেই মানুষটাও কেমন যেন তাড়াহুড়াে শুরু করে। দুনিয়ার কাজকর্মে যিনি ‘মান ধরে রাখতে খুবই তৎপর, মসজিদে এলে তাকেও খুব অগােছালাে পাওয়া যায়। খুব অদ্ভুত আমাদের আচরণ! আমরা আমাদের ব্যবসায়ে বারাকাহ চাই, আমাদের হায়াত বৃদ্ধি হােক চাই, আমাদের বিপদ দূর হােক চাই, আমরা চাই যে, আমাদের ধনসম্পদ উত্তরােত্তর বৃদ্ধি পাক। কিন্তু, এই যে ব্যবসায়ে বারাকাহ, হায়াত বৃদ্ধি, বিপদ দূরীকরণ কিংবা ধনসম্পদের উপর্যুপরি বৃদ্ধি পাওয়া—এসবকিছুই যার হাতে, যার নিয়ন্ত্রণে এবং যার অধীন—সেই মহান রবের সান্নিধ্য পাবার সবচেয়ে কার্যকরী মূহূর্ত হচ্ছে সালাত। অথচ, সেই সালাতেই আমাদের রাজ্যের উদাসীনতা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, সালাত জিনিসটা যেন আমাদের ওপর খুব জোর করে চাপিয়ে দেওয়া কোনাে বস্তু। কোনাে রকমে দুটো সিজদা দিয়ে কাজ সারতে পারলেই যেন আমরা দিব্যি বেঁচে যাই। দুনিয়ায় খ্যাতি লাভ করেছে এমন কিছু মানুষের সান্নিধ্যে যাওয়ার অল্প কিছু সুযােগ আমার হয়েছে। দেখেছি, তারা যখন কথা বলেন তখন তাদের আশপাশে থাকা মানুষগুলাে গভীর মনােযােগ আর স্থিরতা নিয়েই তাদের কথা শুনতে থাকে। কোনাে অক্ষর, কোনাে শব্দ, কোনাে বাক্য তারা বাদ দিতে চায় না। হৃদয়-মননে যেন। সবটুকু গেঁথে নিতে পারলেই ভক্তকুল ধন্য হয়। দুনিয়ার সেলিব্রিটিদের সান্নিধ্য আর তাদের কথা শােনার জন্য আমাদের ব্যাকুলতার কমতি নেই। অথচ, যিনি রাল। অনীহা, অনিচ্ছা, অনাগ্রহ। সালাতে দাঁড়ালেই আমাদের মন উথালপাথাল করে। ওঠে। অফিসে রেখে আসা আমার অর্ধসমাপ্ত হিশেব, মিস করে যাওয়া বিকেলের । অ্যাপয়েন্টমেন্ট, রাতের খােশগল্পের আড়া—সবকিছুই আমাদের হৃদয়পটে ভেসে। উঠতে থাকে। বিক্ষিপ্ত মন নিয়ে আমরা তখন যন্ত্রের মতন উঠবস করি মাত্র। এই অনীহা, অনাগ্রহের কারণ হলাে, আমরা সালাতকে কেবল আনুষ্ঠানিক “ইবাদত মনে করি। চাপিয়ে দেওয়া কোনাে বােঝা মনে করি বলেই সালাতে আমাদের মন বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। যখনই আমরা সালাতকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার সাথে যােগাযােগের মাধ্যম মনে করতে পারব, যখনই আমরা বুঝতে পারব যে, সালাতই আল্লাহর নৈকট্য লাভের সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম। যখন মনের মধ্যে আল্লাহর জন্য অপরিসীম ভালােবাসা জমা করতে পারব, তখনই আমাদের সালাতগুলাে মধুময় হয়ে উঠবে। সালাত হচ্ছে সেই মুহূর্ত, যে মূহূর্তে বান্দা তার রবের সবচেয়ে নিকটে চলে যায়। সালাত হচ্ছে সেই মূহূর্ত, যে মুহূর্তে বান্দার সাথে তার রবের কথােপকথন হয়। সালাত হচ্ছে সেই সময়, যে সময় বান্দা তার রবের কাছে সকল সমস্যার ঝুলি, বিপদের বিবরণ, চাওয়া-পাওয়ার বাসনা নিয়ে উপস্থিত হয়। এই সালাত হতে হয় মধুর। বান্দা তার সমস্ত প্রেম, সমস্ত ধ্যান এই সালাতেই ঢেলে দেবে। [খ] যুগের বিবর্তনের ফলে আমাদের সমস্যা সমাধানে নতুন নতুন মাত্রা যােগ হচ্ছে। ডিপ্রেশানে ভুগলে আমরা এখন কানে হেডফোন গুঁজে দিয়ে গান শুনি। প্রিয় কবির লেখা বিরহের কবিতা আওড়াই। যারা এসবের ধারেকাছে ঘেঁষে না, তারা সিগারেট ফুঁকে কিংবা নেশা করে। অথচ আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সালাতে আমার চোখের প্রশান্তি রাখা হয়েছে।[১] চোখ আর মনের প্রশান্তি আসার কথা ছিল সালাতে। কিন্তু আমরা প্রশান্তি খুঁজে বেড়াচ্ছি গান-কবিতা, সিগারেট আর নেশাদ্রব্যে। মূলত সালাতের মধ্যে কীভাবে ডুব দিতে হবে, কীভাবে সালাত আদায় করলে চোখের আর মনের প্রশান্তি লাভ করা যাবে, সেসব বিষয়ে আমাদের কোনাে ধারণা না থাকায় আমরা আজ সালাতের আসল উদ্দেশ্য, কার্যকারিতা থেকে বিচ্ছিন্ন, বিক্ষিপ্ত। সালাতকে আমরা বন্দি করে ফেলেছি। কতিপয় শারীরিক ব্যায়ামের মধ্যে। সালাত আমরা কেন পড়ছি, কী উদ্দেশ্যে পড়ছি, সালাতে আমরা কী বলছি বা কী বলা উচিত—এ সকল ব্যাপারে উদাসীন থাকার। দরুন আজ আমাদের সালাতগুলাের এমন করুণ অবস্থা। [গ] সালাতে মনােযােগ ধরে রাখার কিছু কার্যকরী উপায় রয়েছে। এই উপায়গুলাে নিয়ে আমাদের সালাফগণ কথা বলেছেন। আমরা যদি আমাদের সালাতে সেই উপায়গুলােকে বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে আশা করা যায়, আমাদের সালাতগুলাে প্রাণ ফিরে পাবে, ইন শা আল্লাহ। সালাতে মনােযােগ স্থাপনের একেবারে শুরুর উপায় হলাে নিয়ত। না, আমি আসলে মুখে উচ্চারিত সালাতের নিয়তের কথা বলছি না। নিয়ত বলতে আমি মূলত সালাত আদায় করার জন্য আপনি যে মনস্থির করলেন, সেটাকেই বােঝাতে চাইছি। কোনাে কাজ করার জন্য আমরা যখন মনস্থির করি, তখন সেটাকেই নিয়ত বলা হয়। ইসলামে নিয়তের রয়েছে ব্যাপক গুরুত্ব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সকল কাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।[১] মানে, যে উদ্দেশ্য নিয়ে আপনি কাজটা শুরু করবেন, তার ফলাফল দিনশেষে তা-ই হবে। একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা আরও পরিষ্কার হবে। ধরুন, রাতে ঘুমানাের আগে আপনি নিয়ত করলেন যে ফজরের সালাত আপনি অবশ্যই জামাআতে আদায় করবেন। আপনি জামাআতে আদায় করতে চাচ্ছেন কেন? কারণ, জামাআতে আদায় করলে একাকী আদায়ের চাইতে ২৭ গুণ বেশি সাওয়াব।২] এ ছাড়াও জামাআতে সালাত আদায়ের আরও বিভিন্ন ফজিলত আছে। সেই ফজিলতগুলাে লাভের জন্যই আপনি জামাআতে সালাত আদায় করার নিয়ত করলেন। তাহলে, আপনার নিয়ত এখানে শুদ্ধ। [1] সহিহ বুখারি : ১ [২] সহিহ বুখারি : ৬৪৫; সহিহ মুসলিম : ৬৫০। সহিহ বুখারির অন্য আরেকটি হাদিসে (৬৪৬) এসেছে, জামাআতে সালাত আদায় করলে একাকী আদায়ের চাইতে পচিশগুণ বেশি সাওয়াব। এ দু-হাদিসের মাঝে সমন্বয় হচ্ছে, সালাত আদয়কারীর সালাতে একাগ্রতা, মনােযােগ, সঠিক পদ্ধতিতে সালাত আদায়ও নিয়তের ওপর ভিত্তি করে নেকি কমবেশি হবে। ইমাম ইবনু হাজার আসকালানি রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “সাতাশগুণ সওয়াব সরবে কিরাআত বিশিষ্ট সালাতে আর পচিশগুণ সাওয়াব নীরবে কিরাআত বিশিষ্ট সালাতে। আবার ধরা যাক, আপনি গভীর রাত অবধি ফেইসবুকিং করেন। ফেইসবুকিং ঘুমােতে ঘুমােতে আপনার রাত অর্ধেকের বেশি শেষ হয়ে যায় প্রায়। দেরিতে ঘুমােনাের ফলে আপনি সচরাচর ফজরের সালাত জামাআতে আদায় করতে পারেন । আপনার যখন ঘুম ভাঙে তখন জামাআত শেষ। ঘড়িতে সময় দেখে আপনি চমকে যান। সূর্যোদয়ের আর মাত্র পাঁচ মিনিট বাকি! এই পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আপনাকে ফজরের সালাত পড়ে নিতে হবে। না হয় সালাতটা কাযা হয়ে গেল বলে! ব্যস, আপনি একলাফে উঠে, ধুড়ুমধাডুম করে ওযু করে সালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন। কেবল ফরযটুকু পড়ার সময় হাতে আছে আপনার। সালাত শেষ করে দেখলেন সূর্যোদয়ের আরও এক মিনিট বাকি! মানে—ঘুম থেকে ওঠা, ওযু করা আর সালাত পড়া নিয়ে আপনার খরচ হয়েছে মাত্র চার মিনিট! এটাই হলাে গিয়ে আপনার নিত্যদিনকার রুটিন! আরও ধরা যাক, আপনার বাসায় একদিন আপনার কোনাে বন্ধু অতিথি হয়ে এলাে। আপনার বন্ধু খুব আল্লাহওয়ালা মানুষ। ফেইসবুকে আপনার দাওয়া প্রচার, বিভিন্ন দাওয়াতি লেখাজোখা দেখে তার ধারণা জন্মেছে যে, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আপনি অবশ্যই অবশ্যই জামাআতে আদায় করে থাকেন। এখন, আপনার আল্লাহওয়ালা বন্ধুটি যদি দেখে আপনি ফজরের সালাত সূর্যোদয়ের ঠিক পাঁচ মিনিট আগে আদায় করছেন, তাও আবার বাসায়—ব্যাপারটা কেমন দেখাবে? আপনি ভাবলেন যে, ব্যাপারটা আপনার এবং আপনার সােশ্যাল ইমেজের জন্য লজ্জাজনক! এহেন লজ্জার মুখে নিজেকে আপনি কোনােভাবেই ফেলতে পারেন না। তাই, ফজরের আযানের সাথে সাথে জাগার জন্য যত রকমের উপায় অবলম্বন করা যায়, তার সবকটির বন্দোবস্তই সেদিন রাতে আপনি করে রাখলেন। দু-দুটো ফোনে এলার্ম সেট করে রাখলেন। স্ত্রীকে বলে রাখলেন, তুমি জাগতে পারলে আমাকে জাগিয়ে দেবে কিন্তু। এই যে ফজরের সালাত জামাআতে আদায়ের জন্য এত বন্দোবস্ত, এত আয়ােজন আপনি করলেন, এগুলাে কিন্তু ফজিলতলাভের আশায় নয়, বন্ধুর কাছে আপনার ইমেইজ বাঁচানাের তাগিদে। পাছে আপনার বন্ধু আপনার সম্বন্ধে কোনাে নেগেটিভ ধারণা নিয়ে যাক, সেটা আপনি চান না। এখানে আপনার নিয়ত আল্লাহকে খুশি করে তার প্রিয় হওয়া নয়, বরং বন্ধুকে খুশি করে তার কাছে নিজেকে আরও বেশি দ্বীনদার প্রমাণ করা। আপনার এই নিয়ত শুদ্ধ নয়। যেহেতু আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক কাজের ফল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল, তাই আপনার অশুদ্ধ নিয়তের ফলও আপনি পাবেন। আপনার বন্ধুর চোখে আপনি ঠিকই আল্লাহওয়ালা, বুজুর্গ প্রমাণিত হবেন, য আপনি চেয়েছেন। কিন্তু, এ রকম নিয়তের জন্য আখিরাতে আপনার লাভের খাতা শূন্য এটাই হলাে নিয়তের ব্যাপার। তাই, আমরা যদি আমাদের সালাতগুলােকে সত্যিকার। চোখ আর মনের প্রশান্তি লাভের মাধ্যম হিশেবে পেতে চাই, আমাদের উচিত সবার। আগে আমাদের নিয়তকে বিশুদ্ধ করা। আমাদের ঠিক করতে হবে, কেন আমি। সালাত আদায় করছি। আল্লাহকে রাজি-খুশি করা, তাঁর প্রিয়ভাজন হওয়া, তাঁর। নৈকট্য অর্জনই কি আমার সালাত আদায়ের উদ্দেশ্য? নাকি মানুষের কাছে নিজেকে ভালাে প্রমাণ করা, পরহেজগার সাজাই উদ্দেশ্য? শুরুতেই একটি বিশুদ্ধ নিয়ত নিয়ে আপনি সালাতে দাঁড়াবেন। আল্লাহু আকবার বলে সালাতের শুরুতে নিজেকে এক গভীর ভাবনার জগতে তলিয়ে দেবেন। আল্লাহু আকবার মানে কী? ‘আল্লাহু আকবার অর্থ হলাে ‘আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ।' কথাটার নিগূঢ় যে অর্থ, সেটা উপলদ্ধি করার চেষ্টা করুন। আল্লাহু আকবার' বলে আপনি এমন এক সত্তার সামনে দাঁড়াচ্ছেন যিনি হচ্ছেন আসমান-জমিনের মধ্যে থাকা সবকিছুর উর্ধ্বে। তিনিই রাজাধিরাজ, অধিপতি। তার ওপরে আর কেউ নেই। আর কিছু নেই। ‘আল্লাহু আকবার' বলার সাথে সাথে আপনি এই মর্মে ঘােষণা দিচ্ছেন যে, আল্লাহ হলেন আপনার জ্ঞাত-অজ্ঞাত সকল সত্তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সত্তা। তাই, ‘আল্লাহু আকবার বলার সাথে সাথে একটি ব্যাপার মাথায় নিয়ে আসুন যে, আপনি এমন এক সত্তার সামনে দাঁড়িয়ে গেছেন, যার ক্ষমতার ওপরে দুনিয়ার আর কারও ক্ষমতা নেই। যার দয়ার ওপরে দুনিয়ার আর কারও দয়া নেই। আবার, যার শাস্তির ওপরে দুনিয়ার আর কারও শাস্তি নেই। আরও ভাবুন, নিজের অগণিত পাপের কথা, অবাধ্যতার কথা। আপনি ঠিক সে রকম অবস্থায় আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়েছেন, যে রকম অবস্থায় একজন অবাধ্য দাস তার মনিবের সামনে দাঁড়ায়। একজন দাস বা চাকর যেমন অন্যায় করার পরে খুব বিনীত ভঙ্গিতে, ভয়ার্ত চেহারায়, কাঁপা কাঁপা শরীর নিয়ে তার মনিবের সামনে ক্ষমাপ্রার্থনার আশা নিয়ে দাঁড়ায়, আপনিও সে রকম একজন। আল্লাহর ক্ষমালাভের আশায় আপনি শুরুতেই তাঁর মহিমা ঘােষণা করে দাঁড়িয়ে গেছেন। এরপর যখন আপনি সুরা ফাতিহা তিলাওয়াত করবেন। মনে রাখতে হবে, সুরা ফাতিহা কেবল একটি সুরা নয়। এটা উম্মুল কুরআন। কুরআনের মা। এই সুরার সমতুল্য আর কোনাে সুরা নেই। এটি সুরা তাে অবশ্যই, পাশাপাশি এটি একটি চমৎকার দুআও। অথচ দেখুন, সুরা ফাতিহা যে একটা চমৎকার দুআ, এটা আমরা বুঝতে পারি না। কেন বুঝতে পারি না? কারণ, সুরা ফাতিহা কী বলতে চায় কিংবা সুরা ফাতিহায় আমরা আসলে কী পড়ি, সেটা আমরা কোনােদিন জানার চেষ্টা করিনি। এজন্যেই আমরা জানতে পারিনি কী অসাধারণত্ব বহন করছে সাত আয়াতের এই সুরাটি। সাধারণত, সালাতে আমরা এত দ্রুত আর এত তাড়াহুড়াের সাথে সুরা ফাতিহা। তিলাওয়াত করে থাকি যে, আমরা কী বলছি আর কী পড়ছি তা বুঝতেও পারি না। উস্তায আলি হাম্মুদা হাফিযাহুল্লাহ একবার একটি কথা বলেছিলেন, “সালাতে আপনি। যেভাবে আর যে গতিতে সুরা ফাতিহা তিলাওয়াত করেন, ঠিক সেই গতিতে আপনার। প্রিয় কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কোনাে ব্যক্তির সাথে কথা বলে দেখুন তাে তাদের প্রতিক্রিয়াটা কী। হয়? ব্যাপারটা আসলে তা-ই। আমরা যত দ্রুত সালাতে সুরা ফাতিহা পড়ি, ঠিক একই গতিতে কি আমাদের অফিসের বসের সামনে আমরা কথা বলতে পারব? চাকরির বেহাল দশা হবে না? অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা হলেন সম্মানিতদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম। গুরুত্বপূর্ণদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর সামনে দাঁড়ালে ঠিক কতটা ধীরস্থির, কতটা বিনয় আর নম্রতার সাথে সুরা ফাতিহা পড়া উচিত আমাদের? সুরা ফাতিহা পাঠে আমাদের দ্রুততা কিংবা তাতে অমনােযােগিতার প্রধান কারণ হলাে সুরা ফাতিহায় আমরা কী পড়ি সেটা অনুধাবনে আমাদের ব্যর্থতা। আমরা সুরা ফাতিহায় পড়ি— الحمد لله رب العالمين সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক الرحمن الرجيم পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু। مالك يوم الدين বিচার দিনের মালিক إياك نعبد وإياك نستعين আমরা কেবল তােমারই ইবাদত করি এবং কেবল তােমার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি। اهدنا الصراط المستقيم আমাদের সরলপথে পরিচালিত করুন। صراط الذين أنعمت عليهم তাদের পথে যাদের আপনি করুণা করেছেন। غير المغضوب عليهم ولا الضالين তাদের পথে নয় যারা অভিশপ্ত হয়েছে। সালাতে সুরা ফাতিহা তিলাওয়াতের ব্যাপারে খুব সুন্দর একটি হাদিস আছে। ওই হাদিস থেকে জানতে পারি, সুরা ফাতিহা তিলাওয়াতের সময় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের কথাগুলাের জবাব দেন— বান্দা যখন বলে, ‘আল-হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন’, তখন আল্লাহ বলেন, | আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। বান্দা যখন বলে, আর রাহমানির রাহিম’, তখন আল্লাহ বলেন, | আমার বান্দা আমার গুণ বর্ণনা করছে। বান্দা যখন বলে, ‘মালিকি ইয়াওমিদদ্বীন, আল্লাহ তখন বলেন, | আমার বান্দা আমার বড়ত্ব ঘােষণা করছে। বান্দা ‘ইয়্যাকা নাবুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্তাঈন’ বললে আল্লাহ বলেন, এ অংশ আমার ও আমার বান্দার জন্য। আমার বান্দা যা চাইবে আমি তাকে তা-ই দেবাে। মানে হলাে বান্দা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইবে। আর আল্লাহ তাঁর বান্দাকে সাহায্য করবেন। বান্দার ‘ইহদিনাস সিরাত্বাল মুস্তাকীম। সিরাত্বাল লাযীনা আন-আমতা আলাইহিম। গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদদ্ব-ল্লীন’ বলার জবাবে আল্লাহ বলেন, | আমার বান্দা আমার কাছে যা চেয়েছে সে তা-ই পাবে।[১] কী চমৎকার, তাই না? আমরা আল্লাহকে ডাকছি আর আল্লাহ আমাদের তাকে দিচ্ছেন। কেবল ওই মুহূর্তটার কথা চিন্তা করুন তাে! এটা কিন্তু কথার খাতিরে ব হাদিস। নবিজির বলা কথা কি কখনাে মিথ্যে হতে পারে? আমরা যখন বুয়া অনুধাবন করে, হৃদয়ের সমস্ত আবেগ ঢেলে সুরা ফাতিহা তিলাওয়াত করব, অল্প সুরা ফাতিহা পড়া নয়। আজ থেকে আমরা এক ভিন্নভাবে, ভিন্ন প্রেরণা, ভিন্ন ভবন, নিয়ে সুরা ফাতিহা পড়ব। এমনভাবে পড়ব যেন আল্লাহ আমাদের কথাগুলাে শুনছেন। আর জবাব দিচ্ছেন। আমরা তাঁর দেওয়া জবাবগুলাে শুনতে পাব না। কিন্তু তাতে কী আমরা বিশ্বাস করব যে, তিনি আমাদের তিলাওয়াত শুনছেন এবং জবাব দিচ্ছেন সুরা ফাতিহা পড়া শেষ হলে কুরআনের যে অংশ আমার জন্য সহজ, সেই অংশ থেকে তিলাওয়াত করব। সেটা হতে পারে সুরা ইখলাস, নাস, ফালাক, লাহাব, কাফিরুন, সুরা আসর কিংবা অন্য যেকোনাে ছােট বা বড় সুরা। সম্ভব হলে এই সুরাগুলাের অর্থ শিখে নেব। তাহলে পড়ার সময় বুঝতে পারব আমরা আসলে আরবিতে কী বলছি। যদি বুঝতে পারি, তাহলে সালাতে মনােযােগ ধরে রাখা খুব সহজ হয়ে যায়। মনােযােগ বিচ্ছিন্ন হয় না। তিলাওয়াত শেষ করার পরে আমরা আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে চলে যাব। “আল্লাহু আকবার' বলার সময় মনের ভাবনায় কোন দৃশ্যপট আঁকতে হবে তা তাে আগেই বলেছি। এবার রুকু এবং সিজদা নিয়ে চমৎকার আরেকটি হাদিস উদ্ধৃত করি। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, বান্দা যখন সালাতে দাঁড়ায়, তখন তার গুনাহগুলাে তার শরীর থেকে তার কাঁধ এবং মাথায় চলে আসে। এরপর, সে যখন মাথা নিচু করে রুকুতে যায়, তখন সেই গুনাহগুলাে তার কবি এবং মাথা থেকে ঝরে নিচে পড়ে যায়। [1] কী চমৎকার একটি সুযােগ! কতই-না সুন্দর একটি দৃশ্য! আমরা যখন একাগ্রচিত্তে। সালাতে দাঁড়াই, অমনি আমাদের সকল গুনাহ পুরাে শরীর থেকে কাঁধ এবং মাথায় । চলে আসে। তিলাওয়াত শেষ করে যখন আমরা রুকুতে যাই, তখন আমাদের। গুনাহগুলাে ঝরে পড়ে যায়! এই কথাটা পৃথিবীর কোনাে সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ কিংবা অর্থশাস্ত্রবিদের নয়। এই কথা যিনি বলেছেন তিনি হলেন সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ—রাহমাতুল্লিল আলামিন। তাহলে এই কথায় কি কোনাে খাদ থাকতে পারে? এই কথা নিয়ে আমাদের কারও মনে কোনাে সন্দেহ থাকতে পারে? অবশ্যই নয়। তিনি যখন বলেছেন, রুকুতে গেলে বান্দার গুনাহ ঝরে পড়ে, তখন সেটা অবশ্যই অবশ্যই সত্য। বিশ্বাস করুন, এই হাদিসটির ওপর অন্তর থেকে আমল করে আমরা যদি খাঁটি নিয়ত আর বিশুদ্ধ ইখলাস নিয়ে সালাত পড়ি, আমাদের মনই চাইবে না রুকু থেকে মাথা ওঠাতে। মন চাইবে, থাকি না আরও কিছুক্ষণ। গুনাহগুলাে সব ধুয়েমুছে ঝরে যাক। আমাদের মনে এই ব্যাপারটি বদ্ধমূল হয়ে গেলে রুকুতে আমরা অন্য রকম একটা মজা পেয়ে যাব। রুকুতে আমরা আরও কিছু ব্যাপার মাথায় রাখতে পারি। যেমন—আমি এমন এক সত্তার কাছে মাথা নুইয়ে দিয়েছি যিনি এই সুবিশাল সৃষ্টিজগতের অধিপতি। মালিক। যার কাছে আমি নিতান্ত তুচ্ছ। আমি হলাম দাস আর তিনি মালিক। আমি মাথা নুইয়ে তাঁকে বলছি, ‘মালিক, আপনি মহান। মালিক, আপনি মহান। এরপর গভীর মনােযােগের সাথে রুকুর তাসবিহ পাঠ শেষে ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ' বলে মাথা ওঠাব। এই ‘সামিআল্লাহু লিমান হামীদাহ' অর্থ কী? এর অর্থ হলাে আমার রব সেই ব্যক্তির প্রশংসা শােনেন, যে তাঁর প্রশংসা করে। কী দুর্দান্ত একটি কথা! আমি যখন আমার রবের প্রশংসা করি, আমার রব তখন সেই প্রশংসা শােনেন। একটু ভাবুন তাে—আমরা যখন ফুটবলার মেসির প্রশংসা করি, মেসি কি আমাদের সেই প্রশংসা শােনে? আমরা যখন কোনাে অভিনেত্রী, কোনাে গায়ক, কোনাে শিল্পী বা পৃথিবী বিখ্যাত কোনাে সেলিব্রিটির প্রশংসায় গদগদ হই, তাদের কেউ কি আমাদের সেই প্রশংসাবাক্য শােনে? আমাদের স্তুতিবাক্য, প্রশংসা আর গুণকীর্তনের ফুলঝুরির বাক্যগুলাে তাদের কান পর্যন্ত পৌঁছায়? অথচ এই আসমান- জমিন, এই মহাজগৎ, বিশ্বজাহানের যিনি মালিক, যার কাছে দুনিয়ার সেলিব্রিটিদের বালুকণা পরিমাণও মূল্য নেই, সেই সুমহান সত্তা আমার প্রশংসা শােনেন, যখন আমি তাঁর প্রশংসা করি। তিনি আমার স্তুতি শােনেন, যখন আমি তাঁর স্তুতি গাই। আমি যখন ঠোঁট নেড়ে বলি, আল-হামদু লিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর), তখন আমার সেই শব্দ, সেই স্তুতিবাক্য সাত আসমানের পর্দা ভেদ করে সােজা আরশে আযিমে পৌঁছে যায়। তাতে কোনাে বিমান দরকার হয় না, দরকার হয় না কোনাে। সুপার পাওয়ারের রকেট। তাতে দরকার হয় না কোনাে মাধ্যম, কোনাে ওয়াসিলা। দরকার হয় কেবল আমার একাগ্রতা, বিনয় আর ইখলাস। ব্যস, আর কিছু না। এই যে, রাজাধিরাজ আল্লাহ আমার প্রশংসা শুনছেন—এই ব্যাপারটাই তাে অন্য রকম! রুকু শেষ করে আমরা সিজদায় যাই। সিজদা হলাে আল্লাহ এবং বান্দার মধ্যকার। সম্পর্কের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠতম মুহূর্ত। বান্দা সিজদায় আল্লাহর সবচাইতে নিকটবর্তী। হয়ে যায়। আমরা যখন সিজদায় যাব, তখন আমরা আরও কিছু ব্যাপার মানসপটে। এঁকে নেব। আগের মতাে এবারও আমরা স্মরণ করব নিজেদের পাপের কথা, অবাধ্যতার কথা। মনিবের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে একজন দাস কী করে হাউমাউ করে কেঁদেকুটে মনিবের পা জড়িয়ে ধরে বলে, ‘মাফ করে দেন হুজুর। আমি অন্যায় করেছি। আমি জানি আমি ঠিক করিনি। আমি আপনার কাছে বিনীতভাবে ক্ষমা চাচ্ছি। আপনি আমায় ক্ষমা করে দিন। আপনি মাফ না করলে কে আমাকে মাফ করবে, বলুন? আপনি ছাড়া আমার আর কে আছে? হ্যাঁ, সত্যিই আল্লাহ ব্যতীত আমাদের আসলে আর কেউই নেই। আল্লাহর চাইতে উত্তম অভিভাবক আমাদের জন্য আর কেউ হতেই পারে না। সিজদায় আমরা সেই সত্তার কাছে লুটিয়ে পড়ব, যিনি আমাদের লালনপালন করেছেন আমাদের মায়ের পেটে, যিনি আমাকে দুনিয়ার আলাে-বাতাস দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আমি পাপী, গুনাহগার। নিজের আত্মার সাথে নিত্য যুলুম করে চলা এক জালিম আমি। আমাকে ক্ষমা করতে পারে শুধু আল্লাহ। সেই আল্লাহর কাছেই সিজদায় আমি লুটিয়ে পড়েছি। আমার এখন কাজ কী? আমার কাজ হচ্ছে যেভাবেই হােক ক্ষমা আদায় করে নেওয়া। বাচ্চা যেভাবে মায়ের কাছ থেকে বুকের দুধ আদায় করে নেয়। ক্ষুধা পেলে সে যেমন হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দেয়, ঠিক সেভাবে গুনাহের ভারে নুইয়ে পড়া এই আত্মাকে জাহান্নামের লেলিহান আগুনের শিখা হতে বাঁচাতে আমাকেও কাঁদতে হবে। হুহু করে কান্না! চোখের জল ফেলতে হবে। বলতে হবে, ‘আল্লাহ, পাপ করতে করতে নিজেকে পাপের অতল সাগরে ডুবিয়ে ফেলেছি। নিঃশ্বাসজুড়ে কেবল পা আর পাপ। শিরা-উপশিরায় প্রবাহিত হচ্ছে পাপের অবাধ প্রবাহ। আমার পাপের। তূপের কাছে হিমালয় পর্বতও নস্যি। কিন্তু আপনি তাে রাহমানুর রাহিম, দয়ালু।। আপনি ক্ষমা না করলে কে এমন আছে যে আমাকে ক্ষমা করবে? রাস্তা দেখাবে? কেউ নেই। আমায় ক্ষমা করে দিন। আমাকে সরল-সহজ পথে পরিচালিত করুন। সিজদায় আন্তরিক হতে হবে। মনপ্রাণ এক করে আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। যা। কিছু চাওয়ার, যা কিছু পাওয়ার সব সবিস্তারে আল্লাহর কাছে খুলে বলতে হবে। আল্লাহর বড়ত্বের কাছে নিজের তুচ্ছতা অন্তরে এনে আল্লাহকে মন থেকে ডাকতে। হবে। যদি সালাতের সাথে আমাদের মন জুড়ে যায়, যদি আমাদের সালাতগুলাে প্রাণ ফিরে পায় নতুন করে, তবে নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, সালাতের জন্য আমাদের মন সর্বদা ব্যাকুল হয়ে থাকবে। প্রিয়জনের দর্শনলাভের জন্য যেমন করে ব্যাকুল, অস্থির হয়ে থাকে মন, ঠিক সেভাবে সালাতের জন্য, সালাতে আল্লাহর কাছে নিজেকে সঁপে দেওয়ার জন্যও আমরা ব্যাকুল হয়ে পড়ব। الذين هم في صلاتهم خاشعون ( قد أفلح المؤمنون ؟ সে সকল মুমিন সফলকাম হয়ে গেছে, যারা তাদের সালাতে বিনয়ী।[১] চলবে ইনশাআল্লাহ


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৪০২ জন


এ জাতীয় গল্প

→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • Shariful Islam
    User ৩ বছর, ৯ মাস পুর্বে
    আসসালামু আলাইকুম।জাযাকাল্লাহু খইরান।

  • Mehedi Hasan Prova
    User ৩ বছর, ১০ মাস পুর্বে
    বরাবরের মতোই কিছু বলার নেই। যেটা আছে সেটা হল❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️