রাগী রাবণ এবং বোকা রাজকন্যা
X
রাগী রাবণ এবং বোকা রাজকণ্যা
কাগজপত্রগুলো ফাইলে গুছিয়ে নিয়ে রিনিতা ড্রয়িং রুমে গেল।পরিবারের সবাই একসাথে বসে আছে।রিনিতা হেসে বলল, “তোমরা মুখ এত গোমড়া করে বসে আছো কেন? আমি যুদ্ধক্ষেত্রে যাচ্ছিনা তো।দেখি সবার হাসিমুখ দেখি,নাকি পেটব্যথা?”
বাসার সবাই একসাথে হেসে উঠলেন।
দরজায় খুঁট করে শব্দ হল।জিসান বিরক্ত মুখে দরজার দিকে তাকালো।খুবই জরুরী একটা কাজ করছে সে।একটু পরেই একটা মিটিং আছে তার।
“কাম ইন।”
রিনিতা দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে,দরজায় লেখা-“PULL”!মুহূর্তের জন্য রিনিতা অস্থিরবোধ করল।এই ব্যাপারটা সে প্রায়ই গুলিয়ে ফেলে।সামনে টেনে ধরতে হবে নাকি পেছনে ঠেলতে হবে?
আল্লাহ-আল্লাহ করে দরজাটা সামনে টেনে ধরে ভেতরে ঢুকে পড়ল ও।জিসান সপ্রশ্ন মুখে তাকালো।চোখে বিরক্তি।
“আজ আমার জয়েনিং...
জিসানের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।এই মেয়েটা গাধা নাকি?চেয়ারম্যানের ঘরে ঢুকে বলছে জয়েন করতে এসেছে।তাও বিশ মিনিট লেট।ম্যানেজমেন্ট আজকাল এইরকম নিয়োগ দিচ্ছে!
জিসান ঠান্ডা গলায় বলল, “রিসিপশনে যান...আর শুনুন,ঘড়ি দেখতে জানেন?”
রিনিতা মাথা ঝাঁকাল।
জিসান ফাইলের দিকে চোখ নামাল,এর অর্থ হল আপনি যেতে পারেন!
চেয়ারম্যানের রুম থেকে বের হয়ে লম্বা একটা নিঃশ্বাস নিল রিনিতা।বাপরে,কি ভয়ংকর মানুষ!ইনি নাকি আবার চেয়ারম্যান!রিনিতার ধারনা ছিল বুড়ো দেখতে লোকজন চেয়ারম্যান হয়।এই লোক তো নায়কের মতো দেখতে!সিনেমায় অভিনয় করলেই হত।রাগী রাবণ হয়ে অফিসে বসে আছে!রিনিতা এমনিতেই সবকিছু এলোমেলো করে ফেলে,এই রাগী রাবণকে এখন থেকে প্রতিদিন দেখতে হবে আর রিনিতার সব কিছু এলোমেলো হয়ে যাবে।
কয়েকদিনের মধ্যেই রিনিতা নিজেকে বেশ মানিয়ে নিল অফিসে।তার প্রচন্ড হাসিখুশি স্বভাব আর অদ্ভুত রঙয়ের পোশাকে সবাই তাকে আপন করে নিল।প্রায়ই দেখা যায় রিনিতা নিজের কাজ রেখে অন্যের কাজে সাহায্য করছে।এই বিষয়গুলো জিসানের নজর এড়ালো না।সে লক্ষ্য করেছে রিনিতা নামের অদ্ভুত মেয়েটি সারাক্ষণ হাসছে,তার বোকামীগুলোই অফিসের সবাইকে মাতিয়ে রাখে।সবাই উৎসাহ নিয়ে কাজ করছে।শুধু জিসান সামনে এলেই হাসি বন্ধ হয়ে যায় রিনিতার।
“এই রিনি,এই ফাইলটা চেয়ারম্যান স্যারের কাছ থেকে সাইন করিয়ে নিয়ে এসো প্লিজ!” সারাহ অনুরোধ করল রিনিতাকে।
“আমি?ঢোক গিলল রিনিতা।
“প্লিজ!”
“স্যার,আসব?”
“কাম ইন...ওহ মিস...?কি ব্যাপার?”
“খন্দকার,স্যার!”
“তো মিস খন্দকার,কি ব্যাপার?”
“ইয়ে স্যার,একটা কাজে...মানে একটা ফাইল ছিল!”
“ফাইল?দিন...চেক করেছেন ঠিক করে?”
রিনিতা ফাইল টেবিলে নামিয়ে রাখল,তার হাত থরথর করে কাঁপছে।নিজেকে ধমক দিল মনে মনে।আরে রিনি এত ভয় পাওয়ার আছেটা কি?রাগী রাবণ তোকে খেয়ে ফেলবেনা।
“মিস খন্দকার,ফাইল তো ভুলে ভর্তি!যান ঠিক করে নিয়ে আসুন”।
“জ্বি,স্যার”!
রিনিতা তাড়াহুড়া করে বের হয়ে গিয়ে দরজায় ধাক্কা লাগিয়ে কপাল ফুলিয়ে ফেলল!
জিসান শব্দ করে হেসে উঠল।অনেকদিন পর সে মন খুলে হাসল।
বাসায় একটা জরুরী কাজ পরে গেছে।হাতের কাজগুলো তাড়াতাড়ি শেষ করে চম্পট দেওয়ার ইচ্ছা রিনিতার।মনে মনে খুশি সে,রাগী রাবণ আজ অন্য অফিসে ব্যস্ত!এই ফাঁকে সে বাড়ি ফিরতে পারবে আগে।কলিগ সারাহকে কাগজপত্র বুঝিয়ে দিয়ে বের হয়ে গেল ও।
জিসান মেইন অফিসে এসেই মিটিং ডেকেছে।পাঁচ মিনিটের মাথায় সবাইকে কনফারেন্স রুমে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।সবাই উপস্থিত হল,রিনিতা বাদে।এবং সেটা জিসানের নজর এড়ালো না।
“সন্ধ্যায় নাজমুল গ্রুপের পার্টি,ঠিক ছ’টায়।সবাইকে ফর্মাল পোশাকে দেখতে চাই।সবাইকে,আই রিপিট সবাইকে।
সারাহ চিন্তায় পরে গেল,এসবের কিচ্ছু তো রিনি জানেনা!ওকে একটা ম্যাসেজ করা দরকার।
ছুটতে ছুটতে রিনিতা যখন পার্টিতে পৌছুলো,তখন ঘড়ির কাটা সাড়ে ছ’য়ের ঘরে।রিনিতা হাঁপাতে হাঁপাতে সারাহকে খুঁজে বের করল।সে সারাহ’র ম্যাসেজ দেখেছে একঘন্টা আগে।বাস মিস করে,সি এন জি ওয়ালার সাথে তর্ক করে শেষে একটা ক্যাব ধরে এসেছে।সবার দিকে তাকিয়ে রিনিতা আরো হতাশ হল।সে একাই অন্য পোশাক পড়ে এসেছে!রাগী রাবণটাও নিশ্চিত এখানে আছে।আজ রিনিতার কপালে কি আছে কে জানে!
পার্টির বেশিরভাগ সময় রিনিতা সারাহ’র পিছনে থাকার চেষ্টা করল।কিন্তু পার্টির জমকালো,ঝকঝকে আলোতে লুকোনো কঠিন।
“প্লিজ,কাম অন স্টেজ।লেটস হ্যাভ এ গুড নাইট ড্যান্স!”
বাতি ডিম হয়ে গেল।রিনিতা হাঁফ ছেড়ে বাঁচল,এবার আর তাকে দেখা যাবেনা।সারাহ নাচতে চলে গেছে।রিনিতা নাচ পারেনা,সে হাতে একটা ফলের জুসের গ্লাস নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকল।
পড়বি তো পড় মালীর ঘাড়ে,জিসান রিনিতার সামনে এসে দাঁড়ালো,রিনিতা প্রচন্ড চমকে উঠল।জিসান তার দিকে ডান হাত বাড়িয়ে দিয়েছে!
কাঁপতে কাঁপতে রিনিতা হাত ধরল জিসানের।
জিসান তাকে ফ্লোরের মাঝখানে নিয়ে এল।রিনিতার হাত শক্ত করে ধরে আছে সে।
রিনিতা ফিসফিস করে বলল, “আমি নাচতে জানিনা,স্যার!”জিসান হাসল।
“মিস খন্দকার,আমি তো জানি।আপনাকে শিখিয়ে দিচ্ছি!”
“ইয়ে স্যার...”রিনিতা এই প্রথম হিল জুতো পরেছে।তার পা টলমল করছে।জিসান তাকে এক পাঁক ঘুরিয়ে হাত ছেড়ে দিল।রিনিতা সোজা ফ্লোরে।সবাই হেসে উঠল!
জিসান রিনিতার দিকে ঝুঁকে এসে আস্তে করে বলল, “আমার অফিসে অনিয়ম চলবেনা,এই রংচঙে পোশাক আজ এলাউড ছিলনা।এটা তার শাস্তি”।
রিনিতা কেঁদে ফেলতে বাকী রাখল।রাগী রাবণটা আসলেই শয়তান!
সারাহ এসে হাত ধরে টেনে তুলল।
রিনিতা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।রাগী রাবণটার মুখোমুখি হবে।পেয়েছে কি সে!অফিসের বেশিরভাগ কাজ তাকে দিয়ে করাচ্ছে,লেট নাইট করাচ্ছে!আজও সবাই চলে গেছে,আর রিনিতাকে একগাদা ফাইল দিয়ে বসিয়ে রেখেছে।
বেলের শব্দ।রিনিতার বুক কেঁপে উঠল।উফ রাবণটা ডাকছে কেন।নিজেও যায়নি,তাকেও যেতে দিচ্ছেনা।
দরজায় টোকা দিল রিনিতা।
“প্লিজ কাম ইন মিস খন্দকার!”
“নীল শাড়িটাতে ভাল মানিয়েছে তোমাকে,মিস খন্দকার!”জিসান হাসল।
“আর ফুলগুলো?”
রিনিতা বাক্যহারা।গত সাতদিনে সে শাড়ি পেয়েছে সাতটা,সাদা অর্কিড পেয়েছে,চকলেটের সাতটা বাক্স পেয়েছে।কিন্ত তা এই রাগী রাবণ জানল কিভাবে?রিনিতা এই উপহার পাওয়া মানুষটাকে খুঁজছে প্রচন্ড ভাবে!
“তোমার পছন্দ জানিনা,তাই আমার প্রিয় জিনিসগুলোই পাঠালাম মিস খন্দকার!এতে যদি তোমার কমলা,টিয়া সবুজ রুচির উন্নতি হয়!”
রিনিতা বাক্যহারা হয়ে গেল!এই রাগী রাবণ পাঠিয়েছে জানলে সে কিছুতেই শাড়ি পরে আসত না!
জিসান রিনিতার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে!
“তুমি আমাকে এত ভয় পাও কেন রিনিতা!”
রাগী রাবণের মুখে রিনিতা নামটা কি সুন্দর শোনা যাচ্ছে।রিনিতা কিছু বলার চেষ্টা করল।
জিসান কাছে এসে ওর হাত ধরে ফেলল, “এ-কি এত কাঁপছ কেন?আমি কিন্তু রাগী রাবণ নই!”
রিনিতা চমকে গেল।এটা সারাহ’র কাজ।
“কি মেয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে আমার জন্য প্রতিদিন কফি বানাও,নিজে তো কফি খাওনা।তবুও...কেবিন পরিষ্কার কেন কর?”জিসান হাসছে।
রিনিতাও হাসল, বাতি জ্বালানো যাবে প্লিজ?”
“নিশ্চয়ই যাবে...তোমার প্রিয় লাল-নীল বাতি...আর মেয়ে শোনো,নাচবে আমার সাথে?”
রিনিতা লাল হয়ে বলল, “রাগী রাবণ একটা,নাচব না আপনার সাথে!”
“আপনি?”
“হুম,আপনি...”
“তুমি বল!”
রিনিতা ফিসফিস করে বলল, “তুমি একটা রাগী রাবণ!”
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
Mehedi Hasan Prova
User ৩ বছর, ১০ মাস পুর্বেMH2 (Mysterious Some one)
GJ Writer ৩ বছর, ১০ মাস পুর্বেSHUVO SUTRADHAR
Golpobuzz ৩ বছর, ১০ মাস পুর্বেমেহেরাজ হাসনাইন
Golpobuzz ৩ বছর, ১০ মাস পুর্বে