বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

বেলা ফুরাবার আগে

"ইসলামিক" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান গেস্ট ইউজার(guest) (০ পয়েন্ট)

X লেখকঃ আরিফ আজাদ বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম ৭. আমরা তাে স্রেফ বন্ধু কেবল। যুবকদের দ্বীনে ফেরার পথে সবচেয়ে বড় যে প্রতিবন্ধকতা, সেটা হলাে হারাম রিলেশানশিপ। এমন অনেকেই আছে যারা হয়তাে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পড়ে, রামাদানে সিয়াম রাখে, দ্বীনের ব্যাপারেও খুব আগ্রহী। কিন্তু, একটা জায়গায় এসে আটকে গেছে—হারাম রিলেশনশিপ। তাদের ধারণা, নন-মাহরাম[1] একটি মেয়ের সাথে চলাফেরা করা, একসাথে ঘুরতে যাওয়া, ফুচকা খাওয়া, সেলফি তােলা, সেই সেলফিগুলাে ফেইসবুকে আপলােড দেওয়া এবং হাত ধরাধরি করে পার্কে হেঁটে বেড়ানােতে আসলে কোনাে সমস্যা নেই। হারাম রিলেশানশিপের সূচনাটা মােটাদাগে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে শুরু হয়ে থাকে। একটা ছেলে বা মেয়ে যখন নতুন নতুন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, তখন তার মনে যৌবনের উত্তাল হাওয়া বইতে থাকে। সে আশা করে কলেজের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রটা তার বন্ধু হােক। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে স্মার্ট ছেলেটা তার সাথে একই রিকশায় ঘুরে বেড়ানােতে সে অন্য রকম একটা আনন্দ পেয়ে থাকে। ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে সুন্দরী বান্ধবীটা ক্যান্টিনে তার সাথে বসে ফুচকা খাচ্ছে—ব্যাপারটাই তার কাছে অন্য রকম! কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন আমাদের জীবনে এ রকম অনেকগুলাে বন্ধু-বান্ধবী এসে ভিড় করে, যাদের আমরা মিষ্টি ভাষায় ‘জাস্ট ফ্রেন্ড’ বলে থাকি। কোনাে একটা ছেলে যখন নন-মাহরাম কোনাে মেয়েকে নিয়ে ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দেয় কিংবা একটা মেয়ে যখন ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র কোনাে এক নন-মাহরাম বড় ভাইয়ের সাথে একই রিকশায় করে ঘুরে বেড়ায়—এই ঘটনাগুলােকে আমরা নেহাতই ‘বন্ধুত্ব বলে চালিয়ে দিই। কিন্তু এই তথাকথিত বন্ধুত্ব’ ‘জাস্ট ফ্রেন্ড’-এর নেপথ্যের ঘটনা আমরা তেমন জানতে পারি না। এ রকম ‘জাস্ট ফ্রেন্ড রিলেশানশিপে আক্রান্ত কোনাে ভাই কিংবা বােনকে যখনই আপনি বলতে যাবেন যে, তারা যা করছে বা যেভাবে চলছে তা আদৌ ইসলাম সমর্থন করে না, তখনই তারা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠবে। আর বলবে, আরে ভাই! আমরা প্রেম করছি নাকি? আমরা তাে কেবল বন্ধু। আপনি আর আমি যেমন বন্ধু, এই মেয়েটা আর আমার মধ্যেও সে রকম বন্ধুত্ব। এর বাইরে আর কিছু না। তাদের প্রতি হৃদয়ের গভীর থেকে ভালােবাসা এবং শ্রদ্ধা রেখেই বলতে হয়—তারা যে বন্ধুত্বের কথা বলছেন, সেই বন্ধুত্ব করতে ইসলাম কখনােই অনুমতি দেয় না। তারা যদি ইসলামকে অন্য পাঁচ-দশটা ধর্মের মতাে কেবল আনুষ্ঠানিক ইবাদত- কেন্দ্রিক ধর্ম মনে করে থাকে, তাহলে তারা খুব বড় ভুলের মধ্যে আছে। ইসলাম ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে ঘুমুতে যাওয়া পর্যন্ত আমাদের জীবনের সকল দিক নিয়েই কথা বলে। আদতে ইসলাম কোনাে ধর্ম নয়। এটা হলাে দ্বীন। একটা পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। এই ইসলাম নির্ধারণ করে দেয়—আমি কার সাথে মিশব, কার সাথে মিশব না। কী খাব আর কী খাব না। কী পরব আর কী পরব না। কীভাবে চলব আর কীভাবে চলব না। পরীক্ষায় পাশ করার জন্য কিংবা ভালাে রেজাল্ট করার জন্য আমরা যেমন ক্লাসের সিলেবাস ফলাে করি, ঠিক সেভাবে কুরআন ও হাদিস হলাে আমাদের জীবনের সিলেবাস। এই সিলেবাস অনুসরণ করা ব্যতীত আখিরাতে ভালাে রেজাল্ট করা আমাদের পক্ষে কখনােই সম্ভব নয়। কেবল ‘জাস্ট ফ্রেন্ড’ বলে যার সাথে আমি মিশছি, ঘুরছি, একসাথে খাচ্ছি, তার সাথে মেশার, ঘােরার কিংবা খাওয়ার অনুমতি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাকে দেননি। আমার জন্য তিনি কুরআনুল কারীমে স্পষ্ট করেই বলেছেন— قل للمؤمنين يغضوا من أبصارهم ويحفظوا فروجهم (হে রাসুল) আপনি মুমিন ব্যক্তিদের বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হিফাযত করে।[1] আয়াতটির দিকে আরেকবার খেয়াল করা যাক। এখানে মুমিন ব্যক্তিদের উদ্দেশ্য করেই বলা হচ্ছে। মুমিন ব্যক্তি কারা? যারা আল্লাহতে বিশ্বাস করে। রাসুল, পরকাল, জান্নাত, জাহান্নাম, ফেরেশতা ইত্যাদিতে বিশ্বাস করে তারাই হলাে মুমিন। একবার চিন্তা করি, আমি কি আল্লাহতে বিশ্বাস করি? নবি-রাসুলে বিশ্বাস করি? পরকাল, জান্নাত-জাহান্নাম-ফেরেশতায় বিশ্বাস করি? উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে এই আয়াতটি আমার জন্য। হ্যাঁ, আমাকে উদ্দেশ্য করেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা দৃষ্টি সংযত এবং লজ্জাস্থান হিফাযত করে চলতে বলেছেন। ‘দৃষ্টি সংযত বলতে আসলে কী বােঝায়? তাহলে কি আমরা চোখ বন্ধ করে হাটব? না, ব্যাপারটা আসলে তা নয়। নবিজির হাদিস থেকে জানা যায়, তিনি বলেছেন, 'যখনই কোনাে পরনারীর দিকে চোখ পড়ে যাবে, সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিতে হবে। দ্বিতীয়বার চোখ তুলে তার দিকে তাকানাে যাবে না।[২] আমাদের জন্য শরিয়তের সীমানা হলাে—চলার পথে যদি কোনাে নন-মাহরাম তথা বেগানা নারীর দিকে আমাদের দৃষ্টি চলে যায়, তাহলে সাথে সাথে সেই দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে হবে। দ্বিতীয় বার তাকানাে যাবে না। শরিয়তের সীমারেখা যখন এমন, তখন আমরা কীভাবে বন্ধুত্বের নাম করে একজন বেগানা নারীর হাত ধরে হাঁটাহাঁটি, ঘােরাঘুরি, আনন্দ-মাস্তি-ফুর্তি করে বেড়ানােকে জায়েয মনে করতে পারি? ইসলাম যা আমাদের জন্য অনুমােদন করেনি, আমরা কীভাবে সেটাকে নিজেদের জন্য জায়েয ভাবতে পারি? কেউ বলতে পারে, আমি তাে তাকে কেবল বন্ধুই ভাবছি। তার ব্যাপারে কোনাে খারাপ ধারণা আমার ভেতরে নেই। কখনাে আসবেও না।” এমন ভাবনা-পােষণকারীদের একটা গল্প শােনাতে চাই। এই গল্প এমন এক সালিহ তথা নেককার ব্যক্তির যার সারাটা দিন কেটে যেত আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার ইবাদতে। যিনি ছিলেন আগাগােড়া একজন ধার্মিক, পরহেযগার ব্যক্তি। আল্লাহর এমন এক খালিস বান্দা কীভাবে শয়তানের ধোঁকায় পড়ে বিভ্রান্ত হয়েছিলেন সেটাই ঘটনার মূল প্রতিপাদ্য। ঘটনাটি বারসিসা নামের বনি ইসরাইল সম্প্রদায়ের একজন নেককার ব্যক্তির। জানা যায়, বনি ইসরাইলের লােকেরা যখন পাপের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছিল, যখন তাদের আগাগােড়া পাপ আর পঙ্কিলতায় ছেয়ে গিয়েছিল, তখন বিশাল একটি জনপদে কেবল বারসিসাই ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি সর্বদা আল্লাহর ইবাদতে মশগুল ছিলেন। আরও জানা যায়, তিনি তার প্রার্থনাগৃহে একটানা ৭০ বছর আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন ছিলেন। একবার বনি ইসরাইলের তিনজন যুবক একটি কাজে শহরের বাইরে যাওয়ার জন্য মনস্থির করল। তাদের ছিল যুবতী এক বােন। পাপ-পঙ্কিলতার এই সময়ে তাদের বােনকে কে দেখে রাখবে—সেই চিন্তায় তারা অস্থির হয়ে উঠল। তখন বনি ইসরাইলের অন্য লােকেরা তাদের পরামর্শ দিয়ে বলল, “পাপাচারের এই অস্থির সময়ে তােমাদের বােনকে দেখে রাখার মতাে, হিফাযতে রাখার মতাে বনি ইসরাইল সমাজে আর কেউ অবশিষ্ট নেই। তবে বারসিসার কাছে তােমরা তােমাদের বােনকে রেখে যেতে পারাে। আমরা তাকে পাপ থেকে মুক্ত, অন্যায় থেকে দূরে এবং আমাদের মধ্যে সর্বোচ্চ তাকওয়াবান ও পরহেযগার হিশেবে জানি। তিন ভাই এ রকম একজন আল্লাহওয়ালা লােকের সন্ধান পেয়ে খুব খুশি এবং চিন্তামুক্ত হলাে। বারসিসার কাছে এসে বােনের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য অনুরােধ করল তারা। একজন বেগানা মহিলার দায়িত্ব নেওয়ার কথা শুনেই ভয়ে কেঁপে উঠল বারসিসার অন্তর। তিনি বললেন, ‘চুপ করাে! আমি কখনােই এই দায়িত্ব নিতে পারব না। আল্লাহর দোহাই লাগে, তােমরা এখান থেকে চলে যাও। বারসিসার এমন কথা শুনে তিন ভাই মনঃক্ষুন্ন হয়ে চলে যাচ্ছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে শয়তান তার কুমন্ত্রণা নিয়ে হাজির হলাে। সে বারসিসার মনে এমন আবেগ আর দরদি যুক্তি ঢেলে দিল যাতে করে তার হৃদয় সহজেই গলে যায়। বারসিসার মনে কুমন্ত্রণা দিয়ে শয়তান বলল, বারসিসা, তুমি কী করলে এটা! এই সরল, মহৎ ভাইগুলাের এমন নিষ্পাপ আবদারকে তুমি প্রত্যাখ্যান করলে? তুমি কি মনে করেছ, তারা কাজের জন্য শহরের বাইরে চলে গেলে তাদের ছােট বােনটা নিরাপদে থাকবে? কেউ তার সন্ত্রমহানি করবে না? তুমি কি মনে করাে না যে, সে তােমার কাছেই সর্বোচ্চ নিরাপদে থাকত?’ শয়তানের পক্ষ থেকে মনে উদয় হওয়া এই প্রশ্নগুলােকে বারসিসা খুব পছন্দ করে ফেলে। তার কাছে এই কথাগুলােকে খুব যুক্তিযুক্ত এবং বাস্তবিক বলে মনে হলাে। সে ভাবল, ঠিকই তাে! সময় তাে খুব বেশি ভালাে না। তাদের বােন একা থাকলে যে-কারও দ্বারা নির্যাতিতা হতে পারে। তারচেয়ে ভালাে হয়, যদি আমিই এই মেয়েটার দায়িত্ব নিয়ে রাখি। এতে করে সে হয়তাে অন্যদের লালসার শিকার হওয়া থেকে বেঁচে যাবে। বারসিসা ফিরে যাওয়া তিন ভাইকে ডাক দিল। বলল, “ঠিক আছে। আমি তােমাদের বােনের দায়িত্ব নিতে পারি। তবে শর্ত হলাে, সে আমার সাথে আমার প্রার্থনাগৃহে থাকতে পারবে না। দূরে আমার একটি কুঁড়েঘর আছে। সেখানেই তাকে থাকতে হবে। বারসিসা তাদের বােনের যিম্মাদার হতে রাজি হয়েছে দেখে তিন ভাই-ই খুব খুশি। তারা বারসিসার শর্ত মেনে নিয়ে বােনকে তার কাছে রেখে শহরের বাইরে চলে গেল। বারসিসা রােজ তার প্রার্থনাগৃহের সামনে মেয়েটির জন্য খাবার রেখে দরজা বন্ধ করে দিত। খাবারের পাত্র বারসিসার ঘরের সামনে থেকে নিয়ে আসত মেয়েটি। এভাবেই পার হচ্ছিল দিন। কিন্তু শয়তানের চক্রান্ত আরও গভীরে। সে আবার বারসিসার মনে কুমন্ত্রণা দিল। শয়তানের কুমন্ত্রণাগুলাে ছিল আপাতদৃষ্টিতে যৌক্তিক ও বাস্তবিক। সে বারসিসার মনে এই ভাবনার উদয় ঘটাল যে, 'বারসিসা! তুমি সবসময় মেয়েটির জন্য ঘরের বাইরে খাবার রাখাে। সে নিজের ঘর থেকে বের হয়ে তােমার ঘর অবধি হেঁটে এসে সেই খাবারগুলাে নিয়ে যায়। আচ্ছা বারসিসা, একটা ব্যাপার কি খেয়াল করেছ? তােমার ঘর অবধি যখন মেয়েটা হেঁটে আসে, সে সময় না-জানি কত পরপুরুষ তাকে দেখে ফেলে। এটা কি ঠিক, বলাে? তুমি তাে চাইলে তার ঘরের দোরগােড়া পর্যন্ত খাবারগুলাে রেখে আসতে পারাে। বারসিসার মনে এই ভাবনা দাগ কাটল। সে ভাবল, সত্যিই তাে। আমার ঘর পর্যন্ত আসতে তাকে তাে অনেক পরপুরুষ দেখে ফেলে। বারসিসা পরের দিন থেকে আর নিজের ঘরের কাছে খাবারপাত্র না রেখে মেয়েটার ঘরের দোরগােড়ায় রেখে আসতে লাগল। এভাবে চলল আরও কিছু দিন। শয়তান তার কূটবুদ্ধি নিয়ে আবার হাজির হলাে। এবার বলল, বারসিসা! ভারি আজব লোেক তাে তুমি! তার ঘরের দোরগােড়া পর্যন্ত যেতে পারাে, ভেতরে গিয়ে তার সাথে দু-চারটে কথা তাে বলতে পারাে, তাই না? বেচারি ভাইদের অনুপস্থিতিতে কতই-না একাকী জীবন পার করছে! এই ভাবনাও বারসিসার মনঃপুত হলাে। সে ভাবল, সত্যিই তাে! এতদূর পর্যন্ত যখন আসি, তার সাথে দু-চারটে কথা তাে বলে যেতে পারি। ভাইদের অনুপস্থিতিতে সে নিশ্চয় খুব একাকীবােধ করে। পরের দিন থেকে বারসিসা খাবার নিয়ে সােজা মেয়েটার ঘরের ভেতরে ঢুকতে শুরু করে। দুজনের হালকা কিছু গল্প-আলাপও হয়। সেই আলাপগুলাে আস্তে আস্তে দীর্ঘ আলাপে পরিণত হয় এবং একসময় বারসিসা মেয়েটার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। সেই আসক্তি একটা পর্যায়ে শারীরিক সম্পর্ক পর্যন্ত গড়ায়।১] বারসিসার গল্পের এখানেই ইতি টেনে দিই। আমরা যারা ‘জাস্ট ফ্রেন্ড’ বলে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশাকে জায়েয মনে করি এবং এতে ক্ষতির কিছু দেখি বলে থাকি—আমাদের জন্য এই গল্পে ভালাে রকমের শিক্ষা রয়েছে। শয়তান বনি ইসরাইল যুগের সবচেয়ে সেরা দ্বীনদার, তাকওয়াবান, আমলদার আর নেককার বান্দা বারসিসাকে যেভাবে ফাঁদে ফেলেছে, আমাদের যুবসমাজকেও ঠিক একইভাবে শয়তান ফাঁদে ফেলে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি, ‘দুজন নারী-পুরুষ যখন একান্তে আসে, সেখানে তৃতীয়জন হয় শয়তান।[২] আমরা যখন নন-মাহরাম কাউকে নিয়ে একান্তে আলাপে মত্ত হই কিংবা একই রিকশায় চেপে যাওয়া-আসা করি, তখন মাঝখানে শয়তান এসে আমাদের বিভ্রান্ত করতে থাকে। আমাদের মনে হতে পারে, আরে! আমার মনে তাে আমার বান্ধবী সম্পর্কে কখনাে খারাপ ধারণা আসে না। আমি তাে কখনাে ওর দিকে খারাপ নজরে তাকাই-ই না। আমরা যারা এমন চিন্তাভাবনা মনে লালন করি, আমাদের উচিত বারসিসার ঘটনাটি আরেকবার মনােযােগ সহকারে পড়া। শয়তান কিন্তু একটিবারের জন্যও বারসিসাকে বলেনি ওই মেয়েটার সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে বরং শয়তান বারসিসাকে যা যা বলেছিল তা আপনার দৃষ্টিতে বাস্তবিক, মানবিক ও যৌক্তিক মনে হতে পারে। শয়তান একবারের জন্যও মেয়েটাকে ফুসলাতে কিংবা তার দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকাতে বারসিসাকে উদ্বুদ্ধ করেনি। বরং, শয়তান খুব ভালাে ভালাে কথা বলে বারসিসাকে মেয়েটার কাছাকাছি নিয়ে আসে। এই যে আজকে আমরা বলি, ‘আমি তাে ওর দিকে খারাপ নজরে তাকাই-ই না', 'ওর প্রতি আমার তাে দুর্বলতা নেই' কিংবা ‘আমি তাে ওকে বন্ধু হিশেবেই দেখি কেবল'—এগুলাে সবকিছুই শয়তানের পাতানাে জাল। ফাঁদ। শয়তান আমাদের মনে এই ভাবনার উদয় করে দেয় যে, একজন নন-মাহরামের সাথে বন্ধুত্ব করা, তার সাথে বসে আড্ডা দেওয়া, ঘুরে বেড়ানাে, রিকশায় চেপে আসা-যাওয়া করা, এতে আসলে কোনাে সমস্যা নেই। এগুলাে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। দুজন ছেলে-মেয়ের তাে বন্ধুত্ব হতেই পারে। ভুল। আপনার মাহরাম নয় এমন কারও সাথে বসে আপনি আড্ডা দিতে পারেন না, চ্যাট করতে পারেন না। ফোনে কথা বলতে পারেন না। যার সামনে আপনার জন্য পর্দা ফরয, তার সাথে কীভাবে আপনি হাত ধরাধরি করে হাঁটতে পারেন? যাকে দেখামাত্র আপনার জন্য দৃষ্টি সরিয়ে নেওয়া ফরয, তার সাথে কীভাবে আপনি বন্ধুত্ব পাতাতে পারেন? ক্যাম্পাসে আড্ডা দিতে পারেন? রাতে ঘন্টার পর ঘন্টা চ্যাট করতে পারেন? ফোনে কথা বলতে পারেন? কুরআনের আরেকটি আয়াতের দিকে লক্ষ করা যাক— يا نساء التي تن كأحد من النساء إن الفيثن فلا تخضعن بالقول فيطمع الذي في قلبه مرض وقلن قولا معروفا (হে নবি-পত্নীগণ!) তােমরা অন্য নারীদের মতাে নও। যদি তােমরা তাকওয়া অবলম্বন করাে, তবে (পরপুরুষদের সাথে) কোমল কণ্ঠে কথা বলাে না। এতে করে (যদি তােমরা কোমল কণ্ঠে কথা বলাে) যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, সে প্রলুব্ধ হয় আর তােমরা ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে । এই আয়াতে যদিও নবিজির স্ত্রীগণকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে, তথাপি তাফসিরকারকগণ বলেছেন, এটা সকল মুমিন নারীর জন্যও সমানভাবে প্রযােজ্য। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা নারীদের উদ্দেশ্য করে বলছেন, তােমরা পরপুরুষদের সাথে কোমল কণ্ঠে কথা বলাে না। এটাই হচ্ছে ইসলামের সীমারেখা। আপনি যখন নিজেকে একজন মুমিন নারী হিশেবে দাবি করবেন, তখন আপনি কখনােই আপনার ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র ভাইটাকে মিষ্টি সুরে ‘ভাইয়া' বলে সম্বােধন করবেন না। আপনি কখনােই নন-মাহরাম কারও সাথে মিষ্টি গলায় কথা বলবেন না, আড্ডা দেবেন না। এতে করে তারা আপনার গলার, আপনার মিষ্টি সুরে প্রলুব্ধ হবে এবং আপনার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়বে। ফলে, আপনাকে নিয়ে, আপনাকে ঘিরে তারা কুৎসিত চিন্তায় মত্ত হবে। তাদের একান্ত মুহূর্তগুলােতে কল্পনায় আপনাকে নিয়ে তারা কত ধরনের বাজে চিন্তা যে করবে তা ভাবতেই আপনার গা গুলিয়ে উঠবে। ‘জাস্ট ফ্রেন্ড’-এর কোনাে ধারণা ইসলামে নেই এবং এই ধারণা ইসলামের মৌলিক, বুনিয়াদি শিক্ষার সাথে পুরােপুরি সাংঘর্ষিক। নিজেকে মুমিন-মুসলিম দাবি করা কোনাে ছেলে অবশ্যই বেগানা কোনাে নারীর হাত ধরাধরি করে হাঁটতে পারে । একজন মুমিন নারী কখনােই বেগানা কোনাে পুরুষের সাথে রিকশায় চেপে চলাচল করতে পারে না, পার্কে পাশাপাশি বসে আড্ডা দিতে পারে না। এসবগুলােই তার জন্য হারাম। চলুন, আমরা নিজেদের কেবল তার জন্যই সংরক্ষণ করি যাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের জন্য নির্ধারণ করে রেখেছেন। যে আমার স্ত্রী হবে তার জন্যই যৌবনকে হিফাযত করি। তার সাথেই রাতে জোছনা দেখার জন্য, সমুদ্রের পারে তার হাত ধরে হাঁটার জন্য, গােলাপ হাতে তাকে ভালােবাসি' বলার জন্য, বর্ষার রিমঝিম বৃষ্টিতে তাকে নিয়ে ভেজার জন্য অপেক্ষা করি। এই স্থান, এই অধিকার, এই মুহূর্তগুলাে অন্য কাউকে যেন দিয়ে না বসি। আমার ওপর আমার স্ত্রীর একেবারে প্রথম অধিকার হলাে এই—আমি আমার জীবন, যৌবনকে তার জন্য হিফাযত করে চলব। আপনার ভবিষ্যৎ স্বামীর জন্য আপনার রূপ-লাবণ্যকে হিফাযত করুন। কেবল তার জন্যই না হয় সাজলেন। তার হাত ধরাধরি করে বৃষ্টিবিলাস উপভােগ করলেন। বিশ্বাস করুন, আল্লাহর অবাধ্যতার মধ্যে কখনােই সুখ নেই, শান্তি নেই। আল্লাহর বিধান মেনে নিজেকে একটিবার পরিবর্তন করেই দেখুন না! যে নন-মাহরাম ছেলেটার হাত ধরে আছেন, সেই হাত আজকেই ছেড়ে দিন। এই মুহূর্ত থেকে। তাকে সাফ জানিয়ে দিন তার আর আল্লাহর মাঝে আপনি সবসময় আল্লাহকেই বেছে নিবেন। তাকে আরও জানিয়ে দিন, কেবল আল্লাহর জন্যই আপনি আজ থেকে তার সাথে সমস্ত সম্পর্কের ইতি টেনে দিলেন। দেখবেন, আপনার জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সবকিছু কত সহজ করে দিবেন। যে মেয়েটাকে ক্যাম্পাসে না দেখলে আপনার হৃৎস্পন্দন থেমে যাওয়ার উপক্রম হয়, তাকে আজকেই জানিয়ে দিন আপনার পরিবর্তনের কথা। তাকে বলে দিন আজ থেকে আপনি আর তাকে নিয়ে ভাবছেন না। কাউকে নিয়েই আপনি আর ভাবেন না; আল্লাহ ছাড়া। তাকে আরও বলুন, আল্লাহর জন্যই আপনি তাকে ত্যাগ করলেন। তার সাথে কাটানাে সকল স্মৃতি, সকল মুহূর্তকে আল্লাহর জন্যই মন থেকে মুছে দিলেন। আল্লাহর দিকে এক বিঘত আগান, তিনি আপনার দিকে এক বাহু অগ্রসর হবেন।[1] রিলেশনশিপ মানে আমরা কেবল ‘প্রেম’ করাকেই বুঝি। অথচ রিলেশানশিপের মধ্যে আমাদের তথাকথিত ‘জাস্ট ফ্রেন্ড’ ‘বন্ধু’-সহ যাবতীয় সম্পর্কই অন্তর্ভুক্ত। যার সামনে পর্দাবিহীন যাওয়ার, যার সাথে অহেতুক কথা বলার, সময় কাটানাের কিংবা ঘুরে বেড়ানাের অনুমতি আমার নেই, তার সাথে আমি যে নামে কিংবা যে অভিধায় সম্পর্ক রাখিই না কেন—এ সমস্তকিছুই হারাম রিলেশানশিপের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এটা আমার জন্য হারাম করেছেন। এই হারাম রিলেশানশিপের দৌড় কতটুকু সেটা ভুক্তভােগী না হলে টের পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। হারাম রিলেশানশিপের পাপকে বৈধতা দিতে শয়তান সবসময় তার বাহারি যুক্তি নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়। ঠিক এজন্যেই এর সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে আমরা ভাবতে পারি না। আসলে শয়তান চায় না আমরা এতদূর ভাবি। সে আমাদের চোখের সামনে ঝুলিয়ে রেখেছে একটা রঙিন পর্দা। সেই পর্দা হলাে—‘আপনি ভালাে তাে জগৎ ভালাে! খুব সম্প্রতি তিনটে ঘটনা সম্পর্কে জানতে পেরেছি। খুব সম্প্রতি বলছি এজন্যেই, কারণ, এই লেখাটা যখন লিখতে বসেছি, তার ঠিক মাস দুয়েকের মাঝেই এই ঘটনাগুলাে ঘটে। প্রথম ঘটনা দেশের প্রথিতযশা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের। খবরে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাস্টবিন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে কতগুলাে মৃত নবজাতকের লাশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাস্টবিন! নবজাতকের লাশ! চোখের সামনে কোন দৃশ্যটা ভেসে উঠছে বলুন তাে? কিছু কপােত-কপােতি। একত্র হয়েছিল যৌবনের উন্মত্ত উন্মাদনায়। একেবারে শুরুর দিকে তারা ছিল কেবলই ‘জাস্ট ফ্রেন্ড। আর কিছু না। তাদের মাঝে বন্ধুত্ব ছাড়া আর কোনাে সম্পর্কই ছিল না। একে অন্যের জন্য নােট তৈরি করত। ক্যাম্পাসে একজন অন্যজনের জন্য অপেক্ষা করত। বিনীত বিকেলগুলাে তারা পার করত বাহারি রঙের আর বাহারি পদের আড্ডা দিয়ে। একটা সময় সেই ‘জাস্ট ফ্রেন্ড’ সম্পর্ককে শয়তান টেনে নিয়ে গেছে একটি অবৈধ, অনৈতিক সম্পর্ক পর্যন্ত। এরপর কী হলাে? যখন চোখের সামনে থেকে উন্মাদনার পর্দাটা সরে গেল, যখন কেটে গেল যৌবনের তাড়নামিশ্রিত সকল মােহ, যখন রঙিন দুনিয়ার ডিঙি নৌকা থেকে তারা বাস্তবের দুনিয়ায় এসে নােঙর করল, তখন অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করল যে, তাদের কৃতকর্মের ফল দুজনের কেউই আর বয়ে বেড়াতে চায় না। তাদের এই সম্পর্কের জেরে জ্বণ হয়ে বেড়ে ওঠা আরেকটা নিস্পাপ শরীরকে জন্মের আগেই মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। যে শরীরটির থাকার কথা ছিল বাবা-মার আদরমাখা কোল আর দোলুনির দোলনায়, সেই শরীরের স্থান হয়েছে পচা ডাস্টবিনের আস্তাকুঁড়ে! জাহিলিয়াতের চরম অধঃপতনের যুগেও এ রকম দৃশ্যের দেখা মেলা ভার। দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকার মিরপুর এলাকায়। এক কাক ডাকা ভােরে, অভিজাত মিরপুর এলাকায় দেখা গেল ভয়ানক একটি দৃশ্য। রাস্তার ধারে পড়ে থাকতে দেখা গেল একটি নবজাতকের লাশ। দেখে মনে হলাে এইমাত্রই ভূমিষ্ঠ হওয়া। এমনকি মায়ের পেটে যে অমরার (প্লাসেন্টা) মাধ্যমে সে খাদ্যগ্রহণ করত, সেই অমরাটিও দড়ির মতাে বাচ্চাটির গায়ে আষ্টেপৃষ্ঠে ছিল। কী ভয়ংকর দৃশ্য ভাবুন! দুজন মানুষের নিষিদ্ধ আবেগ আর কামনার বলি হতে হলাে একটি নিস্পাপ প্রাণকে। তার কি কোনাে অপরাধ ছিল? সে কি বলেছে যে তােমরা আমাকে যেনতেনভাবে জন্ম দিয়ে পৃথিবীর আলাে দেখাও? তৃতীয় ঘটনাটা ঢাকার এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের। আমরা বাড়িতে বিয়ে হতে দেখেছি। বিয়ে হতে দেখেছি মসজিদ আর কাজী অফিসেও। কিন্তু হাসপাতালের বেডে বিয়ে হয়েছে—এমন ঘটনা শুনেছেন কখনাে? ঠিক এমন ঘটনাই ঘটেছে ঢাকার এনাম মেডিকেল কলেজে। একটা মেয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি। ডেলিভারি কেইস। কিন্তু মেয়েটার বিয়ে হয়নি। বিয়েই যদি না হবে, তাহলে বাচ্চার প্রশ্ন আসে কীভাবে? যৌবনের উন্মত্ততায় ডুবে কোনাে এক ‘জাস্ট ফ্রেন্ড এর সাথে মেয়েটা সম্পর্ক জুড়িয়ে বসেছিল। আর ফলাফল যা হবার তা-ই হলাে। ছেলেটা সম্পর্ক অস্বীকার করতে পারে এই ভয়ে মেয়েটা ভূণ নষ্ট করেনি। ব্যস, হাসপাতালের বেডে, দুই পক্ষের লােকজন মিলে ছেলে-মেয়ে দুটোকে বিয়ে দিয়ে দিল। হারাম রিলেশনশিপ দুজন মানুষকে পাপের সাগরে কীভাবে ডুবিয়ে দিতে পারে, ওপরের ঘটনা তিনটি তার জলজ্যান্ত উদাহরণ! প্রথম দেখাতেই ভালাে লাগা। এরপর বন্ধু হওয়া। ক্যাম্পাসে আড্ডা দেওয়া। ফোনে-চ্যাটে দিনরাত সময় পার করা, ঘুরতে যাওয়া, একসাথে খাওয়া ইত্যাদির পরে একদিন তারা জড়িয়ে পড়ে একটি অবৈধ সম্পর্কে। ডুব দেয় নিষিদ্ধ আবেগের অতল গহ্বরে। সেই ডুবের ফলাফল হয় ভূণহত্যা, আত্মহত্যা কিংবা হাসপাতালের বেডে বিয়ে! যেই সম্পর্কে আল্লাহর আদেশ লঙ্ঘিত হয়, যে সম্পর্কে আল্লাহর অসন্তুষ্টি, সেই সম্পর্কের সূচনা থেকে সমাপ্তি—কোথাও কোনাে শান্তি আছে কি? ‘হারাম রিলেশানশিপ' শব্দদ্বয় শুনলে আমাদের চোখের সামনে একটি দৃশ্য ভেসে ওঠে। আমরা মনে করি, হারাম রিলেশনশিপ মানে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া দুটো ছেলেমেয়ে একসাথে খাচ্ছে-দাচ্ছে, ঘুরছে, প্রেম করছে, অনৈতিক সম্পর্কে ডুব দিচ্ছে। এটুকুই। অথচ বিয়ের পরেও যদি কোনাে পুরুষ ঘরে স্ত্রী রেখে অন্য মহিলার সাথে অনৈতিক, অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে, তবে সেটাও হারাম রিলেশনশিপ। স্বামীর অগােচরে স্ত্রী যদি কোনাে পরপুরুষের সাথে সম্পর্ক করে, হাসে-মাতে, বিভিন্ন অনৈতিক, অশ্লীল, অবৈধ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে, এটাও হারাম রিলেশনশিপ। এক কথায়, এ ধরনের সম্পর্কগুলােকে পরকীয়া বলা হয়। এই রােগ আমাদের সমাজে বর্তমানে মহামারির আকার ধারণ করেছে। শিক্ষিত-অশিক্ষিত সকল সমাজে বিদ্যমান এই পাপের কারণেই প্রতিদিন অসংখ্য পরিবারে ভাঙন ধরে। উত্তর আধুনিক সমাজে ডিভাের্সের যে মহামারি অবস্থা আমরা অবলােকন করি, তার অন্যতম প্রধান কারণই হলাে এই পরকীয়া। একবার এক লােক একজন শাইখকে বললেন, “শাইখ, আমার স্ত্রীকে আমার কাছে। আর ভালাে লাগে না। কী করা যায় বলুন তাে?' শাইখ জানতে চাইলেন, কেন? তােমার স্ত্রীর পূর্বের রূপ-লাবণ্য কি লােপ পেয়েছে? লােকটা বলল, জি না, শাইখ। সে আগের মতােই আছে। তাহলে তার কি কোনাে অঙ্গহানি হয়েছে যার কারণে তুমি তাকে আর পছন্দ করতে পারছ না?” ‘না, শাইখ। তার কোনাে রকম অঙ্গহানি হয়নি। সে কি তােমার প্রতি উদাসীন? ‘একেবারেই না শাইখ। সে আগের মতােই আমাকে ভালােবাসে। দেখাশােনা করে। যত্ন করে। এরপর শাইখ বললেন, ঠিক আছে। এবার তাহলে তােমার কথা বলাে। তুমি কি আজকাল পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়েছ? তুমি কি বেগানা নারীদের কাছ থেকে নিজের দৃষ্টিকে হিফাযত করে চলতে পারাে? তুমি কি অন্য কারও সাথে কোনাে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছ?' লােকটি মাথা নিচু করে বলল, ‘জি, শাইখ! আমি আজকাল পর্নোগ্রাফিতে খুব মারাত্মকভাবে আসক্ত হয়ে পড়েছি। আমি আমার দৃষ্টিকে হিফাযত করে চলতে পারি না। আর ইতােমধ্যে একটা অনৈতিক সম্পর্কেও জড়িয়ে পড়েছি। শাইখ তখন বললেন, তুমি যখন হারামে ডুব দেবে, হারাম জিনিসকে পছন্দ করা শুরু করবে, তখন হালাল জিনিসকে তােমার কাছে ভালাে লাগবে না। বিরক্তিকর লাগবে। এটাই স্বাভাবিক। ব্যাপারটা আসলেই তা-ই! আমরা যখন মিউজিক, গান-বাদ্য-বাজনা পছন্দ করা শুরু করি, তাতে আসক্ত হয়ে পড়ি, তখন কুরআনের সুর আমাদের কানে পানসে ঠেকে। আমরা যখন স্বামী-স্ত্রীর মতাে হালাল সম্পর্ক বাদ দিয়ে অন্যায়, অবৈধ, অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি, আমাদের কাছে তখন হালাল সম্পর্কগুলােকেই বিরক্তিকর মনে হয়। মনে হয়, এই সম্পর্কের মায়াজাল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারলেই যেন আমাদের মুক্তি! এই অনীহা, অনিচ্ছা, ভালাে না লাগা একসময় রূপ নেয় ডিভাের্সের মতন সিদ্ধান্তে। ফলে আমাদের পরিবারগুলাে ভেঙে খানখান হয়ে যায়। একটা অনৈতিক সম্পর্ক মাঝখানে নষ্ট করে দেয় অনেকগুলাে মানুষের জীবন আর স্বপ্ন। লন্ডভন্ড করে দেয় তিলে তিলে গড়ে তােলা কারও নিজস্ব জগৎ। এই পর্যায়ে কেউ কেউ যুক্তি তুলে ধরতে পারেন। বলতে পারেন, ভাই! ব্যাপারটাকে। আপনি যতটা সরলীকরণ করেছেন, সেটা আসলে অতটা সরল নয়। ক্যাম্পাসের। কোনাে এক বান্ধবীর সাথে বসে আড্ডা দিলে কিংবা অফিসের কোনাে মেয়ে কলিগের সাথে অবসরে বসে কফি খেলে সেটা তাে আর অনৈতিক সম্পর্কে গড়ায় এটা জাস্ট ফ্রেন্ডলি ব্যাপার! শাইখ আলি তানতাবি রাহিমাহুল্লাহর একটা কথা আমার খুব পছন্দের। তিনি বলেছেন, কিছু যুবক বলে থাকে তারা মেয়েদের চরিত্র ও ভদ্রতা ছাড়া আর নাকি কিছুই দেখে না। মেয়েদের সাথে তারা নাকি বন্ধুর মতােই কথা বলে এবং মেয়েদের বন্ধুর মতােই ভালােবাসে। মিথ্যে কথা! আল্লাহর শপথ, এসব মিথ্যে কথা! যুবকেরা তাদের আড্ডায় তােমাকে নিয়ে যে ধরনের কথা বলে তা যদি শুনতে পেতে, তাহলে তুমি ভয়ে চমকে উঠতে। শাইখ তানতাবির কথাগুলাের নিরেট বাস্তবতা আছে। দুজন বন্ধুর একাকী আলাপের মাঝে তাদের সুন্দরী বান্ধবীটা সম্পর্কে কী ধরনের কথাবার্তা উঠে আসে তা না শুনলে বিশ্বাস করাটাই দুরূহ! সেই রগরগে আলােচনাগুলাে যদি সেই বান্ধবী শুনতে পেত, তাহলে সে কোনােদিনও আর তাদের মুখ দেখত না। আপনি বলতে পারেন, কেবল কথা বললেই কিংবা তাকালেই কি পাপ হয়ে যায়? জি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, চোখের যিনা হলাে চোখ দিয়ে দেখা। জিহ্বার যিনা হলাে সেই জিহ্বা দিয়ে (অশ্লীল, রগরগে) কথা বলা। হাতের যিনা হলাে পরনারীকে (খারাপ উদ্দেশ্যে) স্পর্শ করা। পায়ের যিনা হলাে ব্যভিচারের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হওয়া এবং মনের যিনা হলাে (ব্যভিচারের) ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা করা। আর এ সবকিছুকে কাজে রূপান্তর করে মানুষের গুপ্তাঙ্গ।[১] হাদিসের ভাষ্য এখানে খুবই স্পষ্ট। চোখ দিয়ে আপনি ক্যাম্পাসের যে বান্ধবীটার রূপলাবণ্য উপভােগ করছেন, আপনি আসলে সেখানে যিনা করছেন। চোখের যিনা। তার হাতে ফুল গুঁজে দেওয়ার নাম করে অথবা বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে তার হাত স্পর্শ করার যে কায়দা আপনি করে থাকেন, তা আসলে যিনা। হাতের যিনা। বন্ধুদের সাথে একান্ত আড্ডায়, চ্যাটে কিংবা মােবাইল ফোনে বান্ধবীদের নিয়ে যে অশ্লীল, কুৎসিত আলাপে আপনি মেতে ওঠেন, তাও একপ্রকার যিনা। জিহ্বার যিনা। বান্ধবী কিংবা কলিগের হাত ধরার জন্য, তার পাশে বসার জন্য, তার কথা শােনার জন্য আপনার মন যখন আকুপাকু করে, তখনাে আপনি আসলে যিনা করেন। মনের যিনা। এই একান্ত কামনাগুলাে মেটানাের উদ্দেশ্যে আপনি যখন ঘর থেকে বের হন, তখনাে আপনি যিনার মধ্যেই থাকেন। পায়ের যিনা। সুতরাং একটু কথা বললে সমস্যা কী?' একটু হাত ধরলে আপত্তি কীসের? ‘আমরা তাে আর প্রেম করছি না, বন্ধুই তাে’–এ সমস্ত কথা আসলে ঠুনকো অজুহাত মাত্র। শয়তানের একটা চোরা ফাঁদ। একটা রঙিন চশমা যা পরলে দুনিয়াটাকেই রঙিন রঙিন মনে হয়। হারাম রিলেশানশিপের প্রতি পদেই ওঁৎ পেতে আছে বিপদ। এমন সম্পর্কে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাপের ছড়াছড়ি ছাড়া প্রাপ্তির খাতায় আর কোনাে কিছু ওঠার সম্ভাবনা নেই। অপরদিকে হালাল রিলেশানশিপের দিকে তাকান। কত সুন্দর আর মধুর এই সম্পর্ক! স্ত্রীর দিকে আপনি যখন মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকান, যখন আপনি স্ত্রীর মুখে ভালােবেসে খাবার তুলে দেন, আপনি যখন স্ত্রীর জন্য উপহার নিয়ে আসেন, তাকে নিয়ে ঘুরতে যান, তার পাশে বসে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তার গল্প শােনেন—এ সবকিছুতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আপনার জন্য সাওয়াব বরাদ্দ রেখেছেন। ফেরেশতারা তখন আপনার জন্য সাদাকার সাওয়াব লিখে ফেলে। অন্যদিকে হারাম রিলেশানশিপে আপনি বেগানা নারীর দিকে তাকালে, তাকে স্পর্শ করলে, তার সাথে কথা বললে, তার কথা চিন্তা করলে আপনার আমলনামায় গুনাহ যুক্ত হয়ে যায়। হারাম রিলেশানশিপের অপর নাম দেওয়া যায় যিনা। আর যিনার শাস্তি খুবই ভয়াবহ। দুনিয়াতেও, আখিরাতেও। হারাম রিলেশনশিপ থেকে বেরিয়ে আসাটা খুব সহজ নয়। সহজ নয় তাদের জন্য যারা দ্বীনটাকে মন থেকে মেনে নিতে পারে না। যারা নিজেদের আত্মাকে আল্লাহর বদলে শয়তানের কাছে জমা দিয়ে রেখেছে, তাদের জন্য পতনের এই চোরাবালি থেকে মুক্তিলাভ দুঃসাধ্য। তবে যারা আল্লাহর হয়ে যেতে চায়, যাদের জীবনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য সবকিছুই আল্লাহর ভালােবাসা, অনুগ্রহ আর দয়াকে ঘিরে আবর্তিত হয়, তাদের জন্য এটা মােটেও কঠিন নয়। আল্লাহর দিকে। যারা মন থেকে ফিরে আসতে চায়, আল্লাহ তাদের জন্য সকল প্রতিবন্ধকতাকে সহজ করে দেন। তাদের হৃদয়ে ঢেলে দেন প্রশান্তির সুনির্মল সুবাস। সেই সুবাসে বান্দা রাঙিয়ে নেয় তার যাপিত জীবন। আল্লাহর দিকে ফিরে আসার জন্য খুব জমকালাে আয়ােজনের দরকার হয় না। কেবল আন্তরিক তাওবা আর চোখের পানিই তাে! চলবে ইনশাআল্লাহ °এ পর্বে কয়েকটি ঘটনা আছে।খন্ড খন্ড করে দেওয়া হয়েছে গল্পেরঝুড়িতে এটা দেখেছি। তারপরেও দিলাম। কারণ এটা না দিলে একটা বইয়ের এক অধ্যায় বা পর্ব অসম্পূর্ণ থেকে যায়। আর আমি চাইছি বইটা পুরোটাই দিতে। **তারপরেও এ অধ্যায় বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি আমি।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ১৫৮৮ জন


এ জাতীয় গল্প

→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • M.H.H.RONI
    Golpobuzz ৩ বছর, ১০ মাস পুর্বে
    হুম ঠিক ভালো লাগল।আমাদের সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের কারন এটাই। ভালো লাগলgj

  • Mehedi Hasan Prova
    User ৩ বছর, ১০ মাস পুর্বে
    অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।☺️☺️☺️ আরিফ আজাদ স্যার সমাজের একদম বাস্তব অবস্থাটাই তুলে ধরেছেন। এটা খুব কষ্টের আর লজ্জার যে আমাদের দিন দিন আরো অধপতন হচ্ছে।gjgj