বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

বেলা ফুরাবার আগে

"ইসলামিক" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান গেস্ট ইউজার(guest) (০ পয়েন্ট)

X লেখকঃ আরিফ আজাদ বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম ৫. জীবনের ইঁদুর-দৌড় কাহিনি। আমাদের জীবন যেন প্রতিযােগিতাময়। ধনসম্পদের প্রতিযােগিতা, টাকাপয়সার প্রতিযােগিতা, বাড়ি-গাড়ির প্রতিযােগিতা। আমরা প্রতিযােগিতা করি একে-অন্যকে ছাপিয়ে যাওয়ার, একে-অন্যের চেয়ে বড় হওয়ার, একে-অন্যের চেয়ে উঁচুতে যাওয়ার। অমুকের ছেলে পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে, আমার ছেলে কেন হতে পারল —এই নিয়ে আমাদের ভাবনার শেষ নেই। অমুকের মেয়ে সংগীত প্রতিযােগিতায় সেরা পুরস্কার জিতেছে, আমার মেয়ে কেন বাছাই পর্ব থেকেই ছিটকে পড়ল— সেটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে আমাদের রাতের ঘুম হারাম করে ফেলি। মােদ্দাকথা, আমরা একটা 'Rat Race'-এর মধ্যে জীবন অতিবাহিত করি। Rat Race-এর আক্ষরিক অর্থ ইদুর-দৌড়। কিন্তু প্রায়ােগিক অর্থে Rat Race বলতে বােঝায় বেশি বেশি সম্পদ এবং ক্ষমতা লাভের প্রতিযােগিতা। নিজেদের জীবনের দিকে তাকালে আমরা অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করব যে, আমাদের জীবনটা কোনাে-না- কোনােভাবে এই Rat Race-এর আওতায় পড়ে গেছে। আমাদের টাকা চাই, অনেক টাকা। সেই টাকার পেছনে আমরা অবিরাম ছুটে চলি। আমাদের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যই হলাে এই টাকা। আমি বিসিএস ক্যাডার কেন হব? কারণ, আমার একটি সরকারি চাকরি চাই। সরকারি চাকরি হলেই আমি ধরে নিতে পারি যে, আমার জীবনের নিরাপত্তা অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেছে। ভালাে স্কেলের স্যালারি, ভালো সুযােগ-সুবিধা পাওয়া যাবে। অফিসের গাড়ি পাওয়া যাবে। নসিবে থাকলে একটা জুটেও যেতে পারে। পড়াশােনা নিয়ে আমি বেশ তৎপর। কারণ আমাকে বিসিএস ক্যাডার হতে হবে। আমার কাছে বিসিএস ক্যাডার মানেই জীবন। জীবন মানেই বিসিএস ক্যাডার হওয়া। জীবনের এই যে প্রবণতা, এটা হলাে এক ধরনের Rat Race. আবার, চাকরি হয়ে গেলে আমার পেরেশানি থাকে প্রমােশান নিয়ে। আমার সাথে কাজ করা সেলিম সাহেব আমার চোখের সামনে দিয়েই তরতর করে প্রমােশান পেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আমি যেখানে ছিলাম ওখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে আছি ব্যাপারটা আমি ঠিক মেনে নিতে পারি না। আমাকেও প্রমােশন পেতে হবে। সেলিম সাহেবের মতাে আমাকেও তরতর করে ওপরে উঠতে হবে। এই ওপরে ওঠার জন্য যত ধরনের কাজ করা লাগে তা করতে আমি প্রস্তুত। বসের যত ধরনের তােষামুদি, মােসাহেবি করা লাগে করব। ঘুস দিতে হয় দেবাে। তার বিনিময়ে আমার শুধু প্রমােশান চাই। একবার যদি প্রমােশন পেয়ে যাই, তাহলে এতদিন ধরে আমাকে টিটকিরি করা অধস্তন লােকগুলােকে একবার দেখেই ছাড়ব। এই যে ক্ষমতা পাওয়ার জন্য একটা অসুস্থ প্রতিযােগিতা—এটাও এক ধরনের Rat Race, অমুকের ছেলে প্রথম হয়েছে, কিন্তু আমার সন্তান মেরিট লিস্টেই থাকতে পারছে । আমার ছেলেকে আমি সেরা পজিশানে দেখতে চাই-ই চাই। তাহলে এখন কী করতে হবে? তিন-তিনজন টিচার দিয়ে ছেলেকে পড়াচ্ছি। ছেলের জীবনটাকে আমি কুল, পড়ার টেবিল আর খাটের মধ্যে বেঁধে ফেলেছি। চুলােয় যাক তার মানসিক বিকাশ। আমি ওকে সেরাদের কাতারে দেখতে চাই, ব্যস। নাহলে ক্লাবে আমার মান-সম্মানই থাকছে না। সন্তানসন্ততি নিয়ে আমাদের এই যে প্রতিযােগিতা, এটাও এক ধরনের Rat Race. সবখানে আমাদের শুধু চাই আর চাই'। মজার ব্যাপার হলাে, কুরআনে এই 'Rat Race' শিরােনামের একটা পূর্ণাঙ্গ সুরা আছে। ওখানেও এই ব্যাপারগুলাে খুব সুন্দরভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তুলে ধরেছেন আমাদের জন্য। আমরা যে অসুস্থ প্রতিযােগিতায় লিপ্ত হয়ে আমাদের জীবনের আসল উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছি, সেই ব্যাপারটা কুরআন খুব সুন্দর করে তুলে ধরেছে এই সুরায়। সুরাটির নাম হলাে ‘আত-তাকাসুর। তাকাসুর মানে প্রাচুর্যের প্রতিযােগিতা। এই প্রাচুর্য টাকাপয়সা হতে পারে, ধনসম্পদ হতে পারে, সন্তানসন্ততি হতে পারে। এমনকি চাকরি, ক্যারিয়ার, স্ত্রী এবং অজ্ঞানও এই প্রাচুর্যের অন্তর্ভুক্ত। সুরাটা নিম্নরূপ- প্রাচুর্যের প্রতিযােগিতা তােমাদের ভুলিয়ে রেখেছে حلى زر المقابر যতক্ষণ না তোমরা কবরে যাও لا سوف تعلمون 2 মােটেই ঠিক নয়! শীঘ্রই তােমরা জানবে ثم لا سوف تعلمون ؟ আবার বলি, মােটেই ঠিক নয়! তােমরা তাে শীঘ্রই জানতে পারে لا لونغتشون علم اليقين ؟ কখনােই নয়! যদি তােমরা নিশিচত জানতে পারতে الترزن احبه তােমরা অবশ্যই অবশ্যই জাহান্নাম প্রত্যক্ষ করকে ثم لترونها عين اليقين আবার বলি, তােমরা অবশ্যই দিব্যদৃষ্টিতে জাহান্নাম প্রত্যক্ষ করবে شه کشتائن يوميذ عن النعيم তারপর সেদিন অবশ্যই তােমরা আমার প্রদত্ত নিআমত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে শুরুতেই খেয়াল করি, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলছেন, প্রাচুর্যের প্রতিযােগিতা তােমাদের ভুলিয়ে রেখেছে। প্রাচুর্য মানে কী? ধনসম্পদ, টাকাপয়সা, স্ত্রী-সন্তানসন্ততি, ক্ষমতা ইত্যাদি। এগুলাে আমাদের ভুলিয়ে রেখেছে। গাফিল করে রেখেছে। কী থেকে? আখিরাত থেকে। আমাদের অনন্ত ঠিকানা। আমাদের জন্য অন্য একটা জগৎ অপেক্ষা করছে এবং সেখানে জবাবদিহিতার একটি মঞ্চ অপেক্ষা করে আছে—এই বােধ থেকে প্রাচুর্য আমাদের দূরে সরিয়ে রেখেছে। ভুলিয়ে রেখেছে। এই আয়াতের শুরুতেই ‘আলহাকুম’ শব্দ আছে। মুফাসসিরগণ এই আলহাকুম শব্দের অর্থ করেছেন এমন নগণ্য জিনিস নিয়ে পড়ে থাকা যা দামি কোনাে জিনিসের ব্যাপারে ভুলিয়ে রাখে। অর্থাৎ আলহাকুম হলাে দামি জিনিস ফেলে রেখে নগণ্য, তুচ্ছ জিনিসের পেছনে ছুটে বেড়ানাে।১] আমাদের জন্য আখিরাতই হলাে দামি জিনিস। দামি জায়গা। জান্নাত হলাে আমাদের পরম আরাধ্য স্বপ্ন। সেই পরম আরাধ্য স্বপ্নকে ভুলে আমরা দুনিয়ার পেছনে দুর্নিবার ছুটে চলি। দুনিয়ার পেছনে ছুটতে ছুটতে আখিরাতকে আমরা বেমালুম ভুলে যাই। প্রাচুর্য আমাদের এমন অন্ধ আর বধির বানিয়ে রাখে যে, আমরা দামি জিনিসটিকে অন্তর্চক্ষু দিয়ে দেখতে পাই না। পরের আয়াতেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলছেন, যতক্ষণ না তােমরা কবরে যাও। খুবই সাংঘাতিক অথচ নিরেট বাস্তব একটি কথা। দুনিয়ার পেছনে নিরন্তর ছুটতে ছুটতে একদিন আমাদের সাথে সাক্ষাৎ হয় মৃত্যুর। মালাকুল মাউত এসে আমাদের রুহটাকে দেহপিঞ্জর থেকে বের করে নিয়ে যায়। সাথে সাথে দুনিয়ার সঙ্গে আমাদের সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে পড়ে। আমরা হয়ে পড়ি অন্য জগতের বাসিন্দা। আমরা তখন অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করি—সেই ভিন্ন জগতে দুনিয়ার কোনাে ক্ষমতা কাজ করে না। সেই জগতে আমার কোনাে প্রভাব, কোনাে ক্ষমতা খাটানাের সুযােগ নেই। দুনিয়ায় যে ব্যাংক-ব্যালেন্স, সম্পদের পাহাড় আমি গড়ে গিয়েছি, সেসবের কোনাে মূল্যই ওখানে নেই। প্রাচুর্য লাভের নেশা যে আমাকে মৃত্যু অবধি নেশাগ্রস্ত করে রাখে, সেই বাস্তবতার কথা তুলে ধরেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেছেন, কবরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এই প্রাচুর্যের নেশা থেকে আমি বের হতে পারি না। তৃতীয় আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেছেন, ‘মােটেই ঠিক নয়! শীঘ্রই তােমরা জানবে। আল্লাহ আমাদের জানাচ্ছেন, আমরা যে দুনিয়ার পেছনে ছুটতে ছুটতে হয়রান হয়ে যাচ্ছি, ক্লান্ত হয়ে পড়ছি, সেটা একটা মরীচিকা মাত্র। এই দুনিয়ার মােহ আর মায়ার পেছনে অবিরাম ছুটে চলা যে আমাদের কোনাে কাজেই আসবে না তা আমরা খুব শীঘ্রই টের পাব। চতুর্থ আয়াতে বলছেন, আবার বলি, মােটেই ঠিক নয়! শীঘ্রই তােমরা তা জানতে পারবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এই আয়াতে আগের আয়াতের কথাগুলােই পুনরাবৃত্তি করেছেন। যখন দেশে বড় ধরনের কোনাে দুর্যোগ দেখা দেয়, যখন আবহাওয়া মারাত্মক রকমের বৈরী হয়ে ওঠে, তখন টিভিতে সংবাদ-উপস্থাপক বলেন, সারাদেশে সাত নম্বর বিপদ সংকেত, আমি আবারও বলছি, সাত নম্বর বিপদ সংকেত দেখানাে হচ্ছে। সাত নম্বর বিপদ সংকেত কথাটা দুই-দুইবার উচ্চারণ করে উপস্থাপক আমাদের আসন্ন বিপদের মাত্রা উপলদ্ধি করানাের চেষ্টা করেন। এই আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলাও ঠিক কঠিন এক বিপদ সম্পর্কে আমাদের সতর্ক করার জন্য একই কথা দুইবার উচ্চারণ করে বিপদের মাত্রা বুঝিয়েছেন। আয়াতটি আমাদের বলছে, আবার বলি! তােমরা যা করে বেড়াচ্ছ তা কিন্তু মােটেই ঠিক নয়। শীঘ্রই বুঝতে পারবে তােমরা কীসের পেছনে ছুটে চলেছ। পঞ্চম আয়াতে আল্লাহ বলছেন, কখনােই নয়! যদি তােমরা নিশ্চিত জানতে। অর্থাৎ, যদি তােমরা দেখতে পেতে, তােমাদের প্রাধান্য দেওয়া বিষয়গুলাে কতটা মূল্যহীন, কতটা তুচ্ছ, তাহলে এতটা উদাসীনভাবে দিন কাটাতে পারতে না। মৃত্যুর পরে তােমাদের ধনসম্পদ, তােমাদের ক্ষমতা, তােমাদের স্ত্রী-সন্তানসন্ততি যে কোনাে কাজেই আসবে না, সেটা যদি উপলব্ধি করতে পারতে, তাহলে এইসব মিথ্যে মােহের পেছনে জীবনের মূল্যবান সময়গুলাে এভাবে অপব্যয় করতে না। ষষ্ঠ আয়াতে আল্লাহ বলছেন, তােমরা অবশ্যই জাহান্নাম প্রত্যক্ষ করবে। খুব কঠিন একটা আয়াত। আল্লাহ বুঝিয়েছেন—এই যে দুনিয়ার কাছে নিজেকে আমরা সঁপে দিয়েছি, দুনিয়াকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে আগাগােড়া, বেমালুম আখিরাতের কথা ভুলে গিয়েছি, দুনিয়াকে আমাদের সবকিছু মনে করে আল্লাহর অবাধ্য হয়েছি, আজ এটাই হলাে আমাদের কর্মফল, পরিণাম—আগুনের লেলিহান শিখা। সপ্তম আয়াতে তিনি আবার বলেছেন, আবার বলি, তােমরা অবশ্যই দিব্যদৃষ্টিতে জাহান্নাম প্রত্যক্ষ করবে। আগের মতাে এখানেও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা পূর্বের আয়াতের কথাগুলাের ওপর জোর দিয়েছেন। আল্লাহ যখন কোনাে কিছুর ওপর বারবার জোর দিয়ে কথা বলেন, তখন বুঝতে হবে ব্যাপারটার গুরুত্ব কতখানি। তিনি আমাদের জানাচ্ছেন, যে বাস্তবতাকে তােমরা অস্বীকার করতে, যে বাস্তবতার ব্যাপারে তােমরা বিস্মৃত হয়ে দুনিয়ার ফাঁদে পড়েছিলে, এই দেখাে আজ! আজ দেখাে সেই বাস্তবতা কতটা ভয়ংকর! অষ্টম আয়াতে তিনি বলেন, তারপর, সেদিন অবশ্যই তােমরা আমার প্রদত্ত নিআমত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। নিআমত হিশেবে আমাদের জীবন দান করা হয়েছিল। এই জীবনে বাঁচার জন্য হায়াত হিশেবে কিছু সময় বেঁধে দেওয়া হয় আমাদের। সেই সময়গুলাে আমরা কোন কাজে ব্যবহার করেছি? নিআমত হিশেবে আমাকে স্বাস্থ্য দান করা হয়েছিল। সেই স্বাস্থ্য, সেই সুঠাম দেহ নিয়ে আমি কত ওয়াক্ত সালাত আদায় করেছি? কত রাত আমি তাহাজ্জুদে দাঁড়িয়েছি? নিআমত হিশেবে আমাকে ধনসম্পদ দান করা হয়েছিল। সেই ধনসম্পদ কোন পথে আমি ব্যয় করেছি? কতটুকু দান-সাদাকা করেছি? নিআমত হিশেবে আমাকে সন্তানসন্ততি দান করা হয়েছিল। তাদের কি সঠিক শিক্ষা দিয়ে মানুষ করেছিলাম? আমার মৃত্যুর পরে তারা যেন আমার জন্য সাদাকায়ে জারিয়া[1]-র ওয়াসিলা হতে পারে, এমন সন্তান কি আমি দুনিয়ার বুকে রেখে আসতে পেরেছি?—জিজ্ঞাসা করা হবে। এটাই হচ্ছে Rat Race তথা জীবনের ইদুর-দৌড় কাহিনি। আমাদের জীবনের বাস্তবতার সাথে কতই-না মিল! কতটাই-না গাফিল আমরা আসল উদ্দেশ্য থেকে। আজকে খ্যাতির লােভ, সম্পদের লােভ আর ক্ষমতার লােভ আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। বড় হওয়ার নেশা, অন্যকে ছাপিয়ে যাওয়ার তাড়না আজ আমাদের এতই মাতােয়ারা করে রেখেছে যে, আমরা আমাদের পরম নিয়তি মৃত্যুর কথা ভুলে বসে আছি। একদিন হুট করে মৃত্যু সামনে চলে আসবে। আমাকে অপ্রস্তুত দেখে মালাকুল মাউত কখনােই ফিরে যাবে না। আমাকে আরেকটাবার শুধরে নেওয়ার সুযোেগও দেওয়া হবে না। পরকালের পাথেয় সংগ্রহ ছাড়াই যখন জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে, তখন কেমন অবস্থা হবে আমার? আমি আফসােস করব। আমার সামনে দিয়ে কত লােক হেঁটে হেঁটে জান্নাতে চলে। যাচ্ছে। এরা তাে তারাই, দুনিয়ায় যাদের সবসময় আখিরাত নিয়ে ভাবতে দেখেছিলাম। জীবনে এরা ছিল সৎ, সত্যবাদী, আমলদার। মসজিদের সাথে তাদের ছিল আত্মার বন্ধন। রামাদান মাসগুলােতে তারা হয়ে উঠত অন্য মানুষ। তারা কখনাে কাউকে কষ্ট দিয়ে কথা বলত না, উচ্চৈঃস্বরে কথা বলত না। বিনয়ের সর্বোচ্চ মাত্রা দেখা যেত তাদের আচরণে। তারাই আজ মহা-পুরস্কারপ্রাপ্ত! আর আমি? আমি ছিলাম উদ্ধত আর বেখেয়াল। আখিরাত নিয়ে আমি না কখনাে ভাবতাম, না আখিরাতের জন্য কোনাে আমল করতাম। রামাদান মাসগুলাে কতই-না হেলাফেলায় কাটিয়েছি আমি। আমার সহকর্মী, আমার সহপাঠী, আমার প্রতিবেশী আজ আমার সামনে দিয়ে জান্নাতে চলে যাচ্ছে, আর আমার ভাগ্যে জুটল জাহান্নাম। এমন পরিস্থিতির মুখােমুখি হয়ে আমি বলব— يا ليتني قدمت لحياتي হায়! আমি যদি পরকালের জন্য কিছু করতাম![1] আমলনামা হাতে পাওয়ার পরে আমি তাতে চোখ বুলালাম। কোথাও কোনাে ভালাে আমল দেখতে পাচ্ছি না। সবখানে কেবল আমার পাপ আর পাপ। অশ্লীল ভিডিও আর অশ্লীল জিনিস দেখতে দেখতে যত রাত পার করেছি, তার সব হিশেবই দেখছি এখানে সবিস্তারে লেখা আছে। ক্যাম্পাসের যে-কয়টা মেয়ের দিকে কু-নজরে তাকাতাম, তার হিশেবও দেখছি উঠে এসেছে এখানে। ইয়া আল্লাহ! অপবাদ দিয়ে প্রতিবেশী যে মেয়েটার বিয়ে আটকে দিয়েছিলাম, সে হিশেবটাও দেখছি বাদ পড়েনি! আমি তখন আফসােসের সুরে বলব— يا ليتني لم أوت كتابية হায়! আজ আমাকে যদি আমার আমলনামা না দেওয়া হতাে![২] দুনিয়ায় যাদের ফাঁদে পড়ে আখিরাত সম্পর্কে বিস্মৃত হয়েছিলাম, তাদের নামগুলােও সেদিন আমার সামনে উপস্থাপন করা হবে। যে বন্ধুটার প্রলােভনে পড়ে ইন্টারনেটের নিষিদ্ধ সাইটে ঢু মেরেছিলাম, যার প্ররােচনায় অমুক-তমুককে উত্যক্ত করেছিলাম, যাদের সাথে সিনেমা, কনসার্ট দেখতে গিয়েছিলাম, তাদের সকলের নাম সেদিন আমাকে দেখানাে হবে। আমি অবাক হব আর বলব— يا ويلی ليتني لم أتخذ فلانا خليلا হায়! আমি যদি তাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম![1] জীবনের এই ইঁদুর-দৌড় খেলায় আমি মত্ত হয়ে আছি। সেই খেলায় জিতে যাওয়ার জন্য জীবন আমাকে যেভাবেই নাচাক, আমি সেভাবেই নাচতে প্রস্তুত। আমি জানি না আগামীকাল সকালে ঘুম থেকে জাগতে পারব কি না। তবুও আমার চৈতন্য ফেরে না। একদণ্ড ভাবার ফুরসত পাই না, যদি এক্ষুনি আমার মৃত্যু হয়? যদি এখনই ঢলে পড়ি রাস্তায়? যদি প্রাণবায়ু এক্ষুনি বেরিয়ে যায় আমার শরীর থেকে? আমাকে কী অসহায় হয়ে, আপসােস করে বলতে হবে—‘হায়! আমি যদি পরকালের জন্য কিছু করতাম!


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৩৯২ জন


এ জাতীয় গল্প

→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • Mehedi Hasan Prova
    User ৩ বছর, ১০ মাস পুর্বে
    অসাধারণ। gj আর কিছু বলব না।gjgjgj

  • M.H.H.RONI
    Golpobuzz ৩ বছর, ১০ মাস পুর্বে
    কিছুই বলার নেই জাস্ট অসাধারনgj