বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

হঠাৎ ফিরে পাওয়া তারপর.............

"রোম্যান্টিক" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান সাফায়েত হোসেন (০ পয়েন্ট)

X পড়ন্ত বিকেলে পার্কের একটি কাঠের বেঞ্চিতে বসে আছি।প্রতি শুক্রবার বিকেলে আমি এখানে বসে থাকি।একা একা বসে থেকে প্রকৃতির সুন্দর রূপ দেখি।অন্যদিন সময় পাই না কাজের চাপে।প্রকৃতি দেখার মাঝে কখনো নিজের অতীত নিয়েও ভাবি।মায়াভরা সেই দিনগুলোর কথা এই জায়গায় আসলে যেন বেশি করে মনে পড়ে।আমি সিহাব।একলা একজন মানুষ আপনজন বলতে একটা ছোট বোন আছে শুধু।তারও বিয়ে হয়ে গেছে।বাবা মা দুজনেই কয়েক বছর আগেই মারা গেছেন।যাই হোক প্রতি সপ্তাহের মত শুক্রবারের দিন বিকেলে আজও এসে বসে আছি পার্কের কাঠের একটি বেঞ্চিতে। হঠাৎ কোথায় থেকে একটা ছোট মেয়ে এসে বললো আংকেল আপনি এখানে একা বসে আছেন।আমি আপনার পাশে একটু বসি?আমাক একটু বসিয়ে দিন না। মেয়েটির বয়স দেখে মনে হচ্ছে চার কি পাঁচ বছরের হবে।কিন্তু কি সুন্দর বড় মানুষের মত করে কথা কয়।আর কি সুন্দর দেখতে যেন একটা পরী। আমি:-মেয়েটিকে কাছে নিয়ে এসে আদর করে আমার কোলে বসালাম।তারপর বললাম।তোমার নাম কি মামুনি?আর একা এই পার্কে তুমি কি করো? তোমার আব্বু আম্মু কোথায়? মেয়েটি বললো আমার নাম ইরা।আমি আমার আম্মুর সাথে আসছি।আম্মু আমাকে বসতে বলে চকলেট আনতে গেছে আমার জন্য আর আমি তখন একটা ফড়িং দেখে তার পিছু পিছু আসতে আসতে এখানে চলে আসছি। আমি:-ইরা মামুনি এভাবে একা আম্মুকে না বলে চলে আসা তো ভালো মেয়ের কাজ না।তুমি তো ভালো মেয়ে তাই না।তাই আম্মুর কথা শুনতে হবে তোমাকে।এখন তোমার আম্মু তোমাকে না দেখলে চিন্তা করবে তো।চলো তোমার আম্মুকে খুজি। হঠাৎ পিছন থেকে ইরা ডাক শুনতে পেলাম।ডাক টা শুনে মনের মধ্যে খচ খচ করে উঠলো।সেই চেনা কণ্ঠ সেই মিষ্টি কথা যাহ শুনি না কত বছর হয়ে গেলো।তারপর আমি পিছনে ঘুরে দেখলাম অধরা দাঁড়িয়ে আছে।অধরা কে দেখে সত্যি অনেক অবাক হলাম।সেই চোঁখ সেই মিষ্টি চেহারা।চেহারায় বয়সের একটু ছাপ পড়লেও এখনো তাকে সেই আগের মতই লাগছে।এই তো আমার অধরা যাকে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল আমার মনে।অধরাকে এত বছর পর আমার দুই চোঁখ দিয়ে আবার দেখতে পাবো সেটা কখনো কল্পনাও করি নি। অধরাও আমায় দেখে অনেক অবাক হলো মনে হলো। অধরা কে দেখে ইরা আম্মু বলে দৌড় দিল। তার মানে ইরা অধরার মেয়ে।অধরা ইরা কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল আর বলতে লাগলো ইরা সোনা তুমি এখানে আমি তোমাক খুজে পাচ্ছিলাম না।চকলেট নিয়ে এসে দেখি তুমি নাই।তারপর কত খুজছি তোমায়।তোমার কিছু হলে আমি তো মরেই যাবো সোনা।প্রমিজ করো আম্মুকে এভাবে না বলে কোথাও চলে যাবে না।তারপর ইরা অধরার চোঁখের পানি মুছে দিয়ে বললো আম্মু প্রমিজ করছি আর আমি তোমাকে না বলে কোথাও যাবো না। সত্যি মা মেয়ের ভালোবাসা থেকে অনেক ভালো লাগলো আমার।অনেক বছর পর অধরা কে দেখার খুশির থেকে ওর সাথে ওর মেয়ের ভালোবাসা দেখে চোঁখের কোণে আমারও একফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগলো।মনে পড়ে গেল আমাদের সেই সোনালী অতিত এর কথা।আজ থেকে প্রায় ৭ বছর আগে আমি আর অধরা ভার্সিটিতে ক্লাসমেট ছিলাম।অধরা কে প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে যায় আমার।সে খুব সুন্দর ছিল।যেন আস্ত একটা পরী।ওর সাথে ধীরে ধীরে একটা সুন্দর বন্ধুত্ত্ব গড়ে তুলি আমি।সবসময় আমরা একসাথে ভার্সিটিতে ঘুরতাম।আড্ডা দিতাম।কিছুদিন যাওয়ার পর মনে হলো অধরাও আমাকে পছন্দ করতে শুরু করেছে।তারপর ঠিক করলাম ওকে আমার মনের কথা জানিয়ে দিব।তারপর ওকে একদিন আমার মনের কথা জানালাম ওহ রাজি হয়ে গেলো।আমার ও স্বপ্ন যেন সত্যি হলো।আমার ভালোবাসার মানুষ ও আমাকে আপন করে নিয়েছে।জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন ছিল আমার কাছে ওইদিন।তারপর আমাদের সবকিছু যেন স্বপ্নের মত চলছিল।সারারাত জেগে ফোনে কথা বলা,ঘুরে বেড়ানো এভাবে অনেক ভালভাবে চলছিল আমাদের দিন।আমি একজন মধ্যবত্তি ঘরের সন্তান ছিলাম।আমার বাবা গ্রামের একজন সাধারন কৃষক।আমি মেসে থেকে পড়াশুনা করতাম।আর অধরা অনেক ধনী ছিল।কিন্তু তাও অধরার মধ্যে কোনো অহংকার ছিল না। সে আমাকে অনেক ভালবাসতো।কিন্তু হঠাৎ করে যেন আমাদের রৌদ্র ঝলমল ভালবাসার মধ্যে অন্ধকারের কালো থাবা আঘাত করে বসলো। একদিন রাতে অধরা আমায় ফোন করে বললো সিহাব বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।বাবা কোনোভাবে তোমাকে আর আমাকে একসাথে দেখে ফেলেছে।তুমি কিছু করো সিহাব।আমি তোমাকে ছাড়া বাচবো না।অন্য কাউকে আমি বিয়ে করতে পারবো না।তুমি আমার বাবার সাথে দেখা করো সিহাব। আমি:-এসব কিহ বলছো তুমি।আর আমি তো বেকার।তুমি জানই তো আমার বাবা গ্রামের একজন সাধারণ কৃষক।আমি টিউশানি করে কোনোরকম আমার পড়াশুনার খরচ চালাই।বাসাতেও খরচ দিতে হয় কিছু।ছোট বোনের পড়াশুনার খরচও আমাক দিতে হয়।আর অন্যদিকে তোমরা কত ধনি।এই অবস্থায় তোমার বাবার কাছে গেলে তিনি কি আমায় মেনে নিবেন? অধরা:-আমি কিছু জানি না।তুমি কালই আমাদের বাসায় এসে বাবার সাথে কথা বলবে।নইলে আমি নিজেকে শেষ করে ফেলবো। আমি:-এসব তুমি কি বলছো অধরা।এসব কথা ভুলেও আর মুখে আনবে না কোনদিন।ঠিক আছে আমি কালই তোমার বাবার সাথে দেখা করতে যাবো। শেষমেষ অধরার জোড়াজুড়িতে পরের দিন ওর বাবার সাথে দেখা করতে যাই।কিন্তু উনি আমায় মেনেতো তো নেন ই নি আর উল্টে অধরার সামনেই আমায় ছোটলোক গেয়ো বলে অনেক অপমান করেন।পড়ে আমি মনে অনেক কষ্ট পেয়ে অধরার বাসা থেকে চলে আসি।মেসে আসার পর অধরা আমায় অনেক ফোন করে কিন্তু আমি ধরি না।অধরার বাবার কথায় আমি অনেক কষ্ট পাই।আমরা মধ্যবিত্ত বলে কি আমরা মানুষ না।তিনদিন আমি অধরার সাথে কোনো যোগাযোগ করি নি।আমি ভাবছিলাম নিজেই চলতে পারি না অধরাকে বিয়ে করে ওরেহ আমি কিভাবে রাখবো।তাই সিদ্ধান্ত নিলাম ওকে আমার শেষ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিব।আমি সব সম্পর্ক নষ্ট করে দিব সিদ্ধান্ত নিলাম।এর মধ্যে আমার এক এক বন্ধুর থেকে জানতে পারছি অধরার বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে গেছে।অধরার বিয়ের একদিন আগে আমি নিজেই অধরাকে ফোন দিয়ে ভার্সিটিতে আসতে বলি।তারপর ভার্সিটির মাঠে গিয়ে আমি অধরার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।তারপর অধরা আসলো।এসেই আমায় জড়িয়ে ধরে বললো..... সিহাব তুমি এই কয়দিন আমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারলে।এই তিন দিন আমার কাছে তিন বছর লেগেছে।আমি কত বার তোমায় ফোন দিছিলাম।কিন্তু তুমি কেটে দিয়েছো।কেন তুমি আমার সাথে এমন করলে।আমায় কষ্ট দিতে তোমার খুব ভাল লাগে তাই না?আর আমি তোমার কাছে মাফ চাচ্ছি আমার বাবার হয়ে।বাবা এমন ভাবে তোমায় অপমান করবে আমি ভাবি নি।বাবার হয়ে আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।আর আমারও দোষ আছে আমিতো তোমাকে জোর করে বাবার সাথে দেখা করতে বলেছিলাম।তাই আমায় ক্ষমা করে দাও সিহাব। আমি:-অধরা তোমার ক্ষমা চাইতে হবে না।আর তোমার বাবা যা করেছে তাহ তো ঠিকই করেছে।কোন বাবা চাইবে তার মেয়েকে কোনো বেকার ছেলের কাছে বিয়ে দিতে।তাই আমি চাই তুমি তোমার বাবার পছন্দ করা ছেলের সাথেই বিয়ে করো।এতে তুমি সুখি থাকবে। অধরা:-তুমি এসব কি বলছো সিহাব।তুমি কি পাগল হলে।তুমি এই কথা বলতে পারলে কি করে।তুমি না আমায় অনেক ভালোবাসো।সিহাব এভাবে বলো না চলো না আমরা দূরে কোথাও পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করি।যেখানে কেউ আমাদের চিনবে না।আমরা অনেক সুখে শান্তিতে সংসার করবো। আমি:-অধরা নিজের বিবেক দিয়ে বোঝার চেষ্টা করো।জীবন অনেক কঠিন।আমি তোমাকে নিয়ে এভাবে পালিয়ে যেতে পারি না।আমি আমার বাড়ির বড় সন্তান।আমাকেই আমার বাবা মাকে দেখতে হবে।আমার ছোট বোন আছে তার পড়াশুনার খরচ তার বিয়ে দেওয়া এগুলো দায়িত্ব আমাকেই পালন করতে হবে।তাই আমি তোমাকে নিয়ে পালাতে পারবো না। অধরা:-তাইলে আমাকে তোমার গ্রামে নিয়ে চলো সেখানে আমরা অনেক ভালো থাকবো। আমি:-তুমি একজন ধনি পরিবারের সন্তান।তোমার বাবা তোমাকে অনেক বিলাসিতায় মানুষ করেছে।অভাব কি তুমি তা কখনো টের পাও নি।তাই তুমি পারবে না আমার সাথে থাকতে।আমাদের ভাল ঘরবাড়ি ও নাই।কোনোমতে সংসার চলে আমাদের।আর অভাব এর সাথেই আমাদের বসবাস। অধরা:-আমি তোমাকে ভালোবাসি।আমি পারবো তোমার সাথে থাকতে।দেইখো ঠিক আমি মানিয়ে নিব। আমি:-ধরো তোমাক গ্রামে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করলাম।দুইদিন তিনদিন তারপর তোমার আর ভালো লাগবে না।যখন অভাব চোঁখে পড়বে তুমি আর আমার সাথে থাকতে চাইবে না।তুমি ফিরে যাবে।তাই বলছি তুমি চলে যাও।কাল তোমার বিয়ে।তাই আমায় ভুলে যাও।তোমার বাবার পছন্দ করা ছেলেকেই বিয়ে করে নাও। অধরা:-তাইলে এটাই তোমার শেষ সিদ্ধান্ত? আমি:-হ্যা। অধরা আবার আমাকে জরিয়ে ধরে বলতে লাগলো....... অধরা:-সিহাব তুমি প্লিজ এটা আমার সাথে করতে পারো না।আমাকে কত স্বপ্ন দেখিয়েছো তুমি।বলছিলে আমাকে বিয়ে করবে।আর আজ তুমি আমাদের সব সম্পর্ক শেষ করে দিচ্ছ এভাবে। অধরা কে আমার গা থেকে সড়িয়ে দিয়ে..... আমি:-ধরো সব আমার আবেগ ছিল এখন আবেগ কেটে গেছে তাই তোমায় ছেড়ে দিচ্ছি।এখন আর তোমাক ভাল লাগছে না। অধরা আমার শার্টের কলার চেপে ধেরে..... অধরা:-ছিহ ছিহ!আমার আজ ভাবতেই ঘেন্না লাগছে আমি এক কাপুরুষকে নিজের চাইতেও বেশি ভালবেসেছিলাম।নিজের সমস্যার জন্য আমাকে ছেড়ে দিচ্ছো তো।আমার সাথে সব সম্পর্ক নষ্ট করে দিচ্ছো।আমি চাইলাম তুমি যেভাবে আছো আমি সেভাবেই তোমার সাথে থাকতে চাই তাও তুমি আমার কথা রাখলে না।ওকে তোমার কথাই সত্যি হোক তাইলে।আমি আমার বাবার পছন্দ করা ছেলেকেই বিয়ে করবো।আর তুমি আমাকে কষ্ট দিয়ে কখনো সুখি হতে পারবে না।তোমাকেও এর ফল সারাজীবন ভোগ করতে হবে।তারপর অধরা কান্না করতে করতে চলে গেল।অধরার চলে যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম।চোঁখ দিয়ে আমার অধোর ধারায় পানি পড়ছে।কিন্তু আমি কান্না করছি কেনো।আমাকে শক্ত হতেই হবে।আমি তো এটাই চাইছিলাম যে অধরা আমাকে ঘেন্না করুক এবং এতটাই ঘেন্না করুক যে সে অন্য ছেলের সাথে বিয়ে করতে পারে।তারপর আমিও আমার গ্রামে চলে আসি।অধরার ও বিয়ে হয়ে যায়।আমার ভালোবাসার মানুষটা আজ অন্য কারো বউ।এটা ভেবে অন্তর টা যেন আমার ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।কিন্তু বাবা মা বোনের দিকে তাকিয়ে নিজেকে শক্ত করি আমি।কারণ তাদেরকে তো আমাকেই দেখতে হবে।তারপর হঠাৎ করে তিনমাসের মধ্যে বাবা মা দুজনেই হার্ট এ্যাটাক করে মারা যায়।অধরাকে হারানোর কষ্টের মধ্যে বাবা মাকে হারিয়ে আরো একা হয়ে পরি আমি।তারপর বোনকে নিয়ে আবার শহরে চলে আসি।বোনকে পড়ালেখা করাই।আমি নিজেও নিজের পড়াশুনা চালিয়ে যাই।দুই ভাইবোন অনেক কষ্ট করে পড়াশুনা চালিয়ে যাই।তারপর আমি পড়াশুনা শেষ করে একটা ভালো চাকরি পাই।বোনকেও একটা ভাল ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দেই।তারাও অনেক সুখে সংসার করছে এখন।কিন্তু আমার আজ সবকিছু থাকলেও আজও আমি একা।অধরার স্মৃতি আকড়ে ধরে নতুন করে আর কাউকে জরাই নি আমার জীবনে।বন্ধুরা তারপর নিজের বোন অনেকবার বললেও এখনো বিয়ে করি নি আমি।হঠাৎ অধরার ডাকে বাস্তবে ফিরলাম।অধরা ইরা কে চকলেট খেতে দিয়ে আমার পাশে বসলো। অধরা:-কেমন আছো সিহাব?কতবছর পর দেখা হলো তোমার সাথে।চেহারার কি দশা করেছো।চুল দাড়ি কাটো না কেন। আমি:-এইতো আছি।আর নিজের আর কি খেয়াল রাখবো। সাত বছর চলে গেছে বয়সের ছাপ পড়েছে দেহে।আর এই একলা জীবনে কেউ বলার নাই দেখার নাই।তাই চুল দাড়ি বাড়ুক তার মত করে আমি সেদিকে খেয়াল করি না। অধরা:-কেনো তোমার বউ নাই।বিয়ে করো নি এখনো? আমি:-নাহ এখনো বিয়ে করি নি। অধরা:-কেনো বিয়ে করো নি?আর তুমি এখন কি করছো কোনো চাকরি করো নাকি?আর তোমার বাবা মা আর তোমার ছোট বোন ওদের কি খবর।ওরা ভালো আছে তো? আমি:-আমি এখন একটা ভালো চাকরি করি।আগের থেকে এখন অনেক ভাল আছি।নতুন বাড়িও করেছি।আর বোন এর একটা ভাল জায়গায় বিয়ে দিয়েছি।আর বাবা মা তো সাত বছর আগে তোমার বিয়ে হওয়ার তিন মাস এর মধ্যেই মারা গেছে দুজনে। অধরা:-কিহ বলছো।ওনারা কেউ বেচে নাই আর।সত্যি খারাপ লাগলো শুনে।তাহলে তুমিতো অনেক একা হয়ে গেছো সিহাব। আমি:-কই একা হয়ে গেছি।আমার বোন মাঝেমধ্যেই আমার সাথে এসে দেখা করে যায়।আর সাত বছর আগে তুমি বলেছিলা না আমায় কষ্ট দিয়ে তুমি ভাল থাকবে না এর ফল তোমাকে ভোগ করতে হবে।ধরো সেই ফলই ভোগ করছি এখন(মুখে মুচকি হাসি রেখে কথাগুলো বলে গেলাম অধরাকে)। অধরা:-আমি তোহ কথাটা রাগের মাথায় বলেছিলাম।কিন্তু বিশ্বাস করো সিহাব আমি সত্যি চাই তুমি সুখে থাকো ভালো থাকো।তাই তুমি এভাবে একা একা থাকার চেয়ে একটা ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করে নাও সিহাব। আমি:-আচ্ছা বাদ দাও তো।আমি তো মজা করেই বললাম কথাটা।তোমার কোনো দোষ নাই।আমার সাথে যা হয়েছে সেটা আমার ভাগ্যই ছিল ধরো।যাই হোক এবার তোমার কথা বলো।শুধু দেখি আমার কথাই জিজ্ঞেশ করছো আর শুনছো।এবার তোমার ব্যাপারে কিছু বলো।আমি একটু ইরার দিকে তাকালাম।ওহ তখন আমাদের সামনেই ফাকা জায়গায় বসে খেলছে আর চকলেট খাচ্ছে।ইরার দিকে তাকিয়ে........ আমি অধরাকে বললাম তোমার মেয়ে একদম তোমার মতোই সুন্দরী হয়েছে।ওর বয়স কতো? অধরা:-ইরার বয়স এখন পাঁচ বছর।ইরাই এখন আমার জীবন। আমি:-আর তোমার স্বামি কোথায়।সে কেমন।তোমায় বুঝি অনেক ভালোবাসে।আর তাকে তো দেখতে পাচ্ছি না।কোথায় তোমার স্বামি। অধরা:-ওর ও আমার আর ইরার সাথে আসার কথা ছিল পার্কে।কিন্তু একটা কাজ পড়ে গেল ওর তাই আসতে পারে নি।এই তো সন্ধ্যার দিকে ওহ চলে আসবে আমাদের নিতে।আর আমার স্বামি আমাকে অনেকে ভালোবাসে।আমার অনেক খেয়াল রাখে।আমিও আমার স্বামিকে অনেক ভালোবাসি।আমার স্বামি আর সন্তানই আমার সব।ওরাই আমার প্রাণ আমার জীবন। আমি:-ওহ আচ্ছা শুনে ভালো লাগলো।যাই হোক তুমি সুখে আছো ভালো লাগলো শুনে।আর সারাজীবন ভালো থেকো। অধরা:-তুমিও বিয়ে করে নিও।আমার এই কথাটা রাখো।আমি তোমাকে ভূলে গেছি এটা ভেবো না এখনো তোমার কথা আমার মনে পড়ে।তুমি আমার প্রথম ভালোবাসা ছিলে যেটা কখনো ভোলার নয়।সাত বছর আগে তুমি আমায় ফিরিয়ে না দিলে হয়তো বা ইরা তোমারই সন্তান হতো।মজার ব্যাপার দেখেছো আজ ইরার জন্যই কিন্তু কত বছর পর আবার আমাদের দেখা হলো।আর আমার মনে হয় তুমি এখনো আমায় ভালবাসো তাই সেই কারণেই এখনো বিয়ে করো নি।কিন্তু এভাবে আর কতদিন সিহাব।এবার বিয়ে করে নাও প্লিজ। আমি:-আচ্ছা আমি ভেবে দেখবো নি।আর এই পাঁচশ টাকাটা রাখো।আমার কাছে পাঁচশ টাকাই আছে এখন।ইরাকে এই টাকা দিয়ে কিছু কিনে দিও।আমার কাছে ইরাকে দেওয়ার মতো এখন কাছে কিছুই নাই।আর তো কোনোদিন দেখা হবে না।আধরা নিতে চাচ্ছিলো না তাও জোর করেই ওর হাতে টাকাটা দিলাম। অধরা:-তোমার নাম্বার দেওয়া যাবে কি?তাইলে অন্ততো যোগাযোগ টা থাকতো।আমার স্বামি অনেক ভাল মানুষ সে যদি তোমার বিষয়ে জানেও তাও কিছু মনে করবে না। আমি:-না এটা হয় না। আমি আর মায়া বাড়াতে চাই না।সাত বছর আগেই সব শেষ হয়ে গেছে।আমি নিজের হাতে সব শেষ করে দিয়েছি।তাই নতুন করে আর যোগাযোগ রাখতে চাই না। হঠাৎ অধরার ফোনে ফোন আসলো।মনে হয় ওর স্বামি আসছে ওদের নিতে তাই ফোন দিছে।ফোনে কথা বলা শেষ করে...... অধরা:-সিহাব সন্ধ্যা হয়ে আসছে।আমার স্বামি ফোন করছে।ওহ আমাদের নিতে আসছে।পার্কে প্রবেশের গেটে সে অপেক্ষা করছে আমার আর ইরার জন্য।তাই আজ যাই শিহাব।ভালো থেকো নিজের খেয়াল রেখো।আর হ্যা প্লিজ বিয়ে করে নিও।এই বলে অধরা ইরাকে কোলে নিয়ে চলে গেল। সূর্য পশ্চিম দিগন্তে হেলে যাচ্ছে।অধরা তার মেয়েকে নিয়ে চলে যাচ্ছে।আমি তাকিয়ে আছি তাদের চলে যাওয়ার দিকে।সাত বছর আগে একবার ইরার চলে যাওয়ার দিকে এভাবে তাকিয়ে ছিলাম আজ আবার সাত বছর পরে তাকিয়ে আছি ওর চলে যাওয়ার দিকে।দীর্ঘ সাতটি বছর পর দেখা আমার ভালোবাসার মানুষটির সাথে।কিন্তু আজ সে আর আমার নেই।সে আজ অন্য কারো বউ কারো মা সে।তার তো এখন অনেক দায়িত্ব তার স্বামি,সন্তানের প্রতি।আর আমি নিজেই তো আমাদের ভালোবাসা কে নিজ হাতে শেষ করে দিয়েছি।সাত বছর আগে অধরার সেই কান্না মাখা মুখ দেখেও আমার কঠোর হৃদয় গলে নি।পরিবারের কথা ভেবে সব শেষ করে দিয়েছি।কিন্তু আজ কেন কষ্ট পাচ্ছি আমি।কেনো আবার আমি ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে চোঁখের পানি ফেলছি।নাহ আমাকে কষ্ট পেলে হবে না।চোঁখের পানি মুছে ফেললাম তারপর যতদূর দেখা যায় অধরার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।আর হয়তো কোনদিন দেখা হবে না অধরার সাথে।আমিও এবার আমার বাড়ির দিকে যাওয়ার জন্য রওনা দিলাম।যেতে যেতে একটা কথাই মাথায় আসছে......... "অধরা তুমি আমার কাছে অধরাই থেকে গেলে, এতে তোমার কোনো দোষ নেই, জীবন নামক বাস্তবতার কাছে পরাজিতে হয়ে, তোমাকে আমি নিজেই যে ধরে রাখতে পারি নি, তাই তো আমার কাছে সারাজীবন অধরাই থেকে গেলে তুমি"।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ১১১১ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • safaet hossen
    User ৩ বছর, ১০ মাস পুর্বে
    জি ভাই gj

  • MH2 (Mysterious Some one)
    GJ Writer ৩ বছর, ১০ মাস পুর্বে
    কাওকে কষ্ট দিয়ে কেউ কখনও সুখি হয় না,এটা একদম সত্য কথা।