বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

ভালবাসি তোমায়, ভালবেসে যাব

"রোম্যান্টিক" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান MD.Belal Hosan (০ পয়েন্ট)

X রাস্তার একমাথা থেকে আরেক মাথা হাঁটছি।বাসায় ঢুকার সাহস হচ্ছে না।সোহানা আজ বলে দিয়েছিল ঠিক চারটার সময় অফিস ছুটি নিয়ে বাসায় আসতে।কিন্তু আজ অফিসে বেজায় কাজ থাকায় ওর কথাটা ভুলেই গিয়েছিলাম।যখন মনে পড়েছে তখন খুব দেরী হয়ে গিয়েছে, সন্ধ্যা ছয়টা বেজে গিয়েছে।এখন বাসায় ঢুকলে কপালে শুধু শনি না রবি মঙ্গল বৃহস্পতি ইউরেনাস নেপচুন সবই আছে।ছোটবেলায় মায়ের বকুনির ভয়ে বাসায় ঢুকতে পারতাম না আর এখন বউ এর ভয়ে পারি না।ধূর কপাল টাই খারাপ। হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম বাসার কাছের চায়ের দোকান টার কাছে।সেখান থেকে ১ টা সিগারেট নিয়ে ধরতে গিয়ে মনে পড়ল গতবার সিগারেট খেয়ে বাসায় যাওয়ার পর সোহানা একটা ফুলদানি ছুড়ে মেরেছিল আর সেইটা লেগেছিল ড্রেসিং টেবিলের আয়নায়।আয়নাটা ক্রিকেট স্ট্যাম্প এর মতই ভেঙে পড়েছিল।সত্যি মেয়েটার হাতের টিপের কোন তুলনা নেই।আজ ও সিগারেট খেয়ে বাসায় ফিরলে সরাসরি আমাকেই বোল্ড আউট হতে হবে।থু করে সিগারেটা টা ফেলে দিতেই দেখলাম চায়ের দোকানি আর কাস্টমার গুলো তাকিয়ে আছে আমার দিকে।পাগল ভাবছে হয়ত।তা ভাবুক আমার বউ এর অত্যাচার তো আর এদের সহ্য করতে হবে না।আমারটা আমাকেই করতে হবে।আচ্ছা নারী নির্যাতন সংস্থা আছে পুরুষ নির্যাতন সংস্থা নেই? যদি এমনটা থাকত তাহলে প্রতিদিনই হাজার হাজার নির্যাতিত পুরুষ সেইখানে ধরনা দিত। সন্ধ্যা প্রায় হয়ে আসছে।বাসায় যাওয়া দরকার।আর বেশীক্ষন দেরী হলে হয়ত সোহানা বাসায়ই ঢুকতে দিবে না।রাতটা কাটাতে হবে সিঁড়িতে।রাস্তার মোড়ের ফুলের দোকান থেকে এক তোড়া লাল গোলাপ নিয়ে নিলাম। গোলাপ দিলে ঝগড়া ঝাটি কিংবা চিল্লাচিল্লির পরিমান টা হয়ত কমবে না কিন্তু মনে মনে রাগটা কমে গেলেও যেতে পারে।আর তখনি জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে ভালবাসি বললেই সব রাগ কমে পানি হয়ে যেতে বাধ্য। বাহ নিজের মাথার বুদ্ধিতে নিজেই আশ্চর্য হলাম। চেস্টা করতে ক্ষতি কি?কাজ হলেও হতে পারে। বাসার গেটের সামনে এক ফকির কে ১০ টাকা দিলাম। ফকির আমায় বলল, "বাবা তোমার সব পেরেশানি আল্লাহ দুর করে দিক আমিন।"মনে মনে বললাম," আমিও তো তাই চাই বাবা এখন আমাকে এই পেরেশানি থেকে দূর করতে পারে স্বয়ং আল্লাহ। যা ভয় করছিলাম তাই হল, সোহানা দরজা খুলছে না। বুঝলাম আজ সিঁড়িতেই করতে হবে আমার বিছানা।হঠাৎ মনে পড়ল আমার কাছে বাসার ডুপ্লিকেট চাবি রয়েছে। ভাবলামএকবার শেষ চেস্টা করে দেখি ঘরে ঢুকতে পারি কিনা। খুট করে দরজা খুলে গেল।বাসা এত অন্ধকার কেন বুঝলাম না।পুরো বাসার বাতি জালিয়ে দিলাম।বেড রুমের বাতি জ্বালাতেই দেখলাম মেঝেতে উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছে সোহানা।বুকের ভিতরটা কেমন জানি ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।মাথা ঘুরে পড়ে যেতে যেতে নিজেকে সামলে নিলাম।ছুটে চলে এলাম আমার বউটার কাছে।মাটি থেকে তুলে বিছানায় শুয়ে দিলাম।কপাল কেটে রক্ত পড়ছে আমার বউটার।এম্বুলেন্স ডেকে হাস্পাতাল নিলাম সোহানাকে।ডাক্তার আমাকে রুম থেকে বাহিরে বের করে দিয়ে চেকাপ করতে লাগল।আমি রুম এর বাহির থেকে দেখতে লাগলাম আমার বউটাকে।কখন যে চোখে পানি চলে এসেছে বুঝতে পারিনি।কিছু পুরোনো স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে।আমাদের প্রথম দেখা হওয়ার স্মৃতি,কাছে আসার স্মৃতি,বিয়ের স্মৃতি।একটু আগে আল্লাহর কাছে পেরেশানি দূর করে দেওয়ার জন্য দোয়া করছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমার এই ভালবাসার মানুষটার আমার উপর রাগ,অভিমান,ঝগড়া আরেকবার শোনার জন্য আমি জীবনটাও দিয়ে দিতে পারি।শাটের হাতা দিয়ে চোখের পানি মুছলাম।এই সময় রুম থেকে বের হয়ে এল ডাক্তার।আমি তাকে ধরে বল্লাম, —আমার বউয়ের কি হয়েছে ডাক্তার? —তেমন কিছু না।মাথা ঘুরে পরে গিয়েছিলেন বোধহয়। এই সময় মাথা ঘোরা স্বাভাবিক। —আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না ডাক্তার।এই সময় মানে? —কেন আপনি যে বাবা হতে যাচ্ছেন জানেন না?আপনার স্ত্রী তো জানে।যাই হোক এখন যখন জানলেন তখন ভালমত বউ এর যত্ন নেবেন। আমার ডাক্তারের কথা কিছুই মাথায় ঢুকছে না। হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসলাম।আবারো এক তোড়া লাল গোলাপ কিনে বউ এর কেবিনের দিকে রওনা দিলাম। চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে আমার বউটা।আমি আস্তে করে তার বিছানার পাশে এসে বসলাম।হাতটা ধরতেই আমার সাদা পরীটা চোখ মেলে চাইল।আমাকে দেখে তার ঠোঁটে একটুখানি হাসি ফুটে উঠতেই মিলিয়ে গেল। অভিমানি গলায় বলল, "আসলে কেন? অফিসেই থাকতা।আমার মত অত্যাচারী বউ এর কাছে না আসাই ভাল।তাই না?আমি তো খুব খারাপ।” আমি এবার তার নরম হাতটা শক্ত করে ধরে বললাম,"বউ তুমি যান,তোমার এই রাগ অভিমান শোনার জন্য সারাদিন অপেক্ষা করে বসে থাকি।অফিসে যতক্ষন থাকি শুধু মনে মনে বলি কখন বাসায় যাব? আমার বউটার রাগারাগি দেখব।সে রাগ করে থাকবে আমি কোন কথা না বলে তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকব।রাগারাগির পরে তাকে বুকে জড়িয়ে নিব।কপালে চুমু দিব।আর মন খুলে ভালবাসি বলব।” —হুম বুঝছি থাক আর বলতে হবে না। —বউ দেখ না তোমার জন্য কি এনেছি। সোহানা তাকাল।তাকে লাল গোলাপের তোড়াটা দিতেই অভিমান মুছে সেখানে একরাশ ভালবাসা দেখলাম।তার এই আনন্দ টা আরেকটু বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য কানে কানে বললাম,"তাড়াতাড়ি বাসায় চলো আমাদের বাবুটার জন্য অনেক কেনাকাটা করতে হবে।"অবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল সোহানা।এবার চোখে ভর করেছে লজ্জা। মিস্টি লাজুক একটা হাসি দিয়ে চোখ নামিয়ে ফেলল আমার বউটা।আর আমার মাথায় ঘুরতে লাগল একটি গানের দুইটা লাইন, "ভালবাসি তোমায়,ভালবেসে যাব জনম জনমের সাথী হবো।"


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৮৪১ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now