বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

অবনীল(পর্ব-৭)

"সাইন্স ফিকশন" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান S O F I Y A (০ পয়েন্ট)

X রিরা ঘুম থেকে উঠে কুশানকে খোঁজ করতে গিয়ে আবিষ্কার করল, সে এখনো কমিউনিকেশান কক্ষে বসে আছে। রিরা অবাক হয়ে বলল, সে কী! তুমি ঘুমাতে যাও নি? যাব। কী করছ এখানে একা একা বসে? রিসিভারটার সার্কিট আবার পরীক্ষা করে দেখছিলাম। পরীক্ষা করে কী দেখলে? মনে আছে, রিসিভারটি ঠিক করে কাজ করছিল না? এক ধরনের পজিটিভ ফিডব্যাক হয়ে একটু পরে পরে বিপ বিপ শব্দ করছিল? হ্যাঁ, মনে আছে। আমি তাই সার্কিটটা পরীক্ষা করে দেখলাম। সার্কিটটা ঠিকই আছে। রিসিভারটা আসলে ঠিকভাবেই কাজ করছে। রিরা ভুরু কুঁচকে বলল, বিপ বিপ শব্দ বন্ধ হয়েছে? কুশান রিরার দিকে তাকিয়ে একটু হাসল। বলল, না, বন্ধ হয় নি। তা হলে? এই বিপ বিপ শব্দটা আসলে সত্যিকার সিগন্যাল। এটা এই গ্রহ থেকেই আসছে। কী বলছ তুমি? হ্যাঁ, আমি পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছি। এখান থেকে প্রায় ষাট কিলোমিটার দূর থেকে আসছে। কে পাঠাচ্ছে এই সিগন্যাল? কেউ পাঠাচ্ছে না। কুশান মাথা নেড়ে বলল, আগে এই গ্রহে মানুষেরা থাকত, এটা সম্ভবত তাদের ট্রান্সমিটার। নিজে থেকে কাজ করছে। ব্যাটারি দুর্বল, তাই সিগন্যালটাও খুব দুর্বল। রিরা চোখ বড় বড় করে তাকাল, সত্যি বলছ তুমি? আমার তা-ই ধারণা। তার মানে ইচ্ছে করলে আমরা সেই ট্রান্সমিটারটা ব্যবহার করতে পারব? হ্যাঁ, আমরা যদি এই গ্রহে ষাট কিলোমিটার ভ্রমণ করে ট্রান্সমিটারে নতুন ব্যাটারি লগিয়ে আসি তা হলে আমরা নিশ্চয়ই ব্যবহার করতে পারব। আমরা তা হলে আমাদের অবস্থান জানিয়ে সিগন্যাল পাঠাতে পারব? উদ্ধারকারী কোনো মহাকাশযান এলে আমাদেরকে উদ্ধার করবে? কুশান নরম গলায় বলল, এটি এখন প্রায় নিশ্চিত একটি সত্যিকারের সম্ভাবনা। রিরা আনন্দে চিৎকার রে কুশানকে জড়িয়ে ধরল, কুশান একটু বিব্রত হয়ে বলল, আমি মানুষের মতো আনন্দ প্রকাশ হতে পারি না। একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরলে কী করতে হয়? রিরা কুশানকে জড়িয়ে ধরে রেখে বলল, যদি সেটা তুমি না জান, তা হলে তোমাকে এখন আর শেখানো সম্ভব নয়। তবু আমি জানতে চাই… তোমার জানার প্রয়োজন নেই কশান। তোমরা নীলমানবের আনন্দ-ভালবাসা। এইসব ব্যাপার প্রকাশ করতে চাও না। আমরা মানুষেরা দরকার না থাকলেও প্রকাশ করে ফেলি। আমি সেটা লক্ষ করেছি। কাজেই যখন আনন্দ এবং ভালবাসা প্রকাশ করার প্রয়োজন হবে, আমি এখন থেকে দ্বিগুণ প্রকাশ করব। আমার এবং তোমার দুজনেরটা একসাথে মিলিয়ে। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ রিরা। রিরা কুশানকে ছেড়ে দিয়ে বলল, এবারে তুমি ওঠো। গিয়ে টানা একটা লম্বা ঘুম দাও। আমি জানি মানুষ কিংবা নীলমানব কেউই ঘুম ছাড়া ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। কুশান উঠে দাঁড়াল, রিরার দিকে তাকিয়ে বলল, আমি আমার নিজের ভেতরে একটা বিচিত্র জিনিস লক্ষ করছি। কী লক্ষ করছ কুশান? আমার নিজের খুশি হওয়া এবং আনন্দ হওয়া নির্ভর করে তোমার ওপরে। তোমাকে খুশি হতে দেখলে আমিও খুশি হয়ে যাই। তোমার মন খারাপ হলে আমারও মন খারাপ হয়ে যায়। রিরা একটু অবাক হয়ে কুশানের দিকে তাকাল। দুর্ধর্ষ এবং একরোখা এই নীলমানব প্রজাতির একজনের মুখে এরকম সহজ-সরল স্বীকারোক্তি রিরা কখনো আশা করে নি। সে একটু চেষ্টা করে মুখে সহজ একটা ভঙ্গি ফুটিয়ে বলল, এখন তা হলে আমার ওপর দায়িত্ব বেড়ে গেল! তোমাকে হাসিখুশি রাখার জন্য আমাকেও হাসিখুশি থাকতে হবে! কুশান তার ঝকঝকে সাদা দাঁত বের করে হেসে বলল, তুমি মোটামুটিভাবে নিখুঁত শুধু যদি তোমার গায়ের রঙটা পচা আঙুরের মতো বাদামি না হত, তা হলে তোমাকে নিখুঁত বলা যেত! রিরা শব্দ করে হেসে বলল, ঠিক আছে কুশান, আমি এটা একটা প্রশংসা হিসেবে নিচ্ছি! আমি প্রশংসা হিসেবেই বলেছি। কুশান অপরাধীর মতো বলল, আমরা কিছু কিছু বিষয় ঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারি না। কুশান ঘুমাতে চলে যাবার পর রিরা কমিউনিকেশান কক্ষে রিসিভারটির সামনে গিয়ে বসে। মূল প্রসেসরের সাথে কথা বলে তার দেখতে হবে—এখানে মানুষের আগের বসতিটি কোথায় ছিল, কেমন ছিল সেগুলো জানে কি না। এক-দুদিনের মাঝেই তাদের সেই বসতিতে যেতে হবে ট্রান্সমিটারের ব্যাটারিটি বদলে দিয়ে চালু করে দেবার জন্য। রিসিভারের সুইচে হাত দিয়ে হঠাৎ করে রিরা একটু আনমনা হয়ে যায়, কী জন্য সে ঠিক বুঝতে পারে না। চাপা একটা গর্জন করে মাটি থেকে মিটাবখানেক উপর দিয়ে বাইভার্বালটা উড়ে যাচ্ছে। বাইভার্বালের সামনে রেলিঙে হাত রেখে রিরা আর কুশান পাশাপাশি দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। গরম বাতাসের হলকায় তাদের চুল উড়ছে, গ্রহের সাদা বালিতে দুজনের চেহারাই ধূলি ধূসরিত। রিরা বলল, পুরো ব্যাপারটা একটা জুয়াখেলার মতো। তার মুখে অক্সিজেনের ছোট মাস্ক থাকার কারণে এবং বাতাসের শব্দে ভালো করে কথা শোনা যাচ্ছে না বলে প্রায় চিৎকার করে কথা বলতে হল। কুশান প্রত্যুত্তরে প্রায় চিৎকার করে বলল, কেন? এটাকে তুমি জুয়াখেলা কেন বলছ? যদি হঠাৎ করে গ্রহটা অন্ধকার না হয়ে যায়, তা হলে পুরো কাজটা পানির মতো সহজ! আমরা বাইভার্বালে করে যাব, ট্রান্সমিটারে নতুন ব্যাটারি লাগাব, ট্রান্সমিটারে প্রোগ্রাম লোড করব এবং ফিরে আসব। কিন্তু যদি এর মাঝে গ্রহটা আবার অন্ধকার হয়ে যায়, তখন আমাদের কী অবস্থা হবে কল্পনা করতে পার? কিন্তু আমরা তো তার প্রস্তুতি নিয়েছি। বেশ অনেকগুলো ফ্লেয়ার নিয়েছি, সার্চলাইট নিয়েছি, অস্ত্র নিয়েছি। কিন্তু তুমি খুব ভালো করে জান এগুলো সত্যিকারের নিরাপত্তা না! আমরা যদি এই খোলা গ্রহে কয়েক লক্ষ বীভৎস প্রাণীর মুখোমুখি হয়ে যাই, তা হলে কোনোভাবে বের হয়ে আসতে পারব? কুশান বলল, পারব, নিশ্চয়ই পারব। কুশানের কথা শুনে বিারা কোনো উত্তর না দিয়ে মুখ টিপে হাসল। কুশান জিজ্ঞেস করল, তুমি হাসছ কেন? তুমি আমার উপদেশ মেনে মিছিমিছি আশা দিতে শুরু করে দেখে। কুশান বলল, যেখানে ঠিক উত্তর জানা নেই, সেখানে মিছিমিছি আশা করে থাকা খারাপ নয়। রিরা বাইভার্বালটাকে একটা বিপজ্জনক বড় পাথরের পাশ কাটিয়ে নিয়ে বলল, মানুষের বসতিটা আর কতদূর হবে বলে মনে হয়? আমরা নিশ্চয়ই খুব কাছাকাছি চলে আসছি। আমার পাওয়ার মিটারে হাই ফ্রিকোয়েন্সির সিগন্যালটা বেশ জোরালো হয়ে গেছে। রিরা বাইভার্বালটাকে কয়েক মিটার উপরে নিয়ে বলল, কুশান, তোমার দৃষ্টিশক্তি ঈগল পাখির মতো তুমি খুঁজে দেখ, দেখা যায় কি না। কুশান সামনে তাকিয়ে বলল, আমার মনে হয় দেখতে পেয়েছি। সোজা সামনের দিকে যাও। একটা বিধ্বস্ত দালানের মতো দেখছি উপরে একটা এন্টেনা দেখা যাচ্ছে। আলোতে চকচক করছে। রিরা দেখার চেষ্টা করে বলল, আমি কিছু দেখছি না। আরেকটু কাছে গেলেই দেখবে। সত্যি সত্যি কয়েক মিনিট পরেই রিরা মানুষের বসতিটা দেখতে পেল। ধুলায় ঢাকা পড়ে আছে কিন্তু দেখে বোঝা যায় একসময় এটি নিশ্চয়ই বেশ বড় একটা আবাসস্থল ছিল। একপাশে বড় বড় ডোম, দূরে পাওয়ার স্টেশন, মানুষের থাকার আবাসস্থল, পানির ট্যাংক–সবকিছুই ধুলার নিচে আড়াল হয়ে যেতে শুরু করেছে। রিরা বাইভার্বালটি নিয়ে পুরো এলাকাটা একবার ঘুরে এসে বলল, আর কিছুদিন পার হলে তো পুরোটাই বালুর নিচে ড়ুবে যেত, আর খুঁজেই পেতাম না। কুশান বলল, খালিচোখে খুঁজে বের করা কষ্ট হত—ঠিক যন্ত্রপাতি থাকলে বের করা কঠিন কোনো ব্যাপার নয়। রিরা বাইভার্বালটি মূল কেন্দ্রের কাছাকাছি থামিয়ে বলল, হ্যাঁ, সেটা ঠিকই বলেছ। আমাদের মহাকাশযানটা বিধ্বস্ত হয়ে আমরা মোটামুটিভাবে অনাথ হয়ে গেছি। দুজন বাইভার্বাল থেকে নেমে কেন্দ্রটির দিকে তাকাল—সবকিছু ভেঙেচুরে বিধ্বস্ত হয়ে আছে। এই গ্রহের প্রাণীগুলো নিশ্চয়ই অসংখ্যবার এই কেন্দ্রটিতে এসে হানা দিয়েছে। রিরা। স্পষ্ট দেখতে পায়—মানুষের জ্বালানি শেষ হয়ে গেছে আর আলো জ্বালাতে পারছে না, অন্ধকার রাতে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মহাজাগতিক প্রাণী হিংস্র দাঁত নিয়ে ছুটে আসছে, মানুষকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলছে! কী ভয়ংকর একটি পরিণতি। রিরা একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, চলো কুশান, ভেতরে যাই। চলো। ভাঙা দেয়াল পার হয়ে তারা ভেতরে ঢুকল। ভেতরে আরো বেশি বিধ্বস্ত অবস্থা। ভাঙা যন্ত্রপাতি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে—নোংরা দেয়ালে পোড়া দাগ, ধসে যাওয়া ছাদ, দুমড়ে-মুচড়ে থাকা ধাতব টিউব—সব মিলিয়ে একটা ভয়ংকর পরিবেশ। রিরা নিচু গলায় বলল, এরকম একটা পরিবেশে ট্রান্সমিটারটা টিকে আছে কেমন করে? প্রাণীগুলো ট্রান্সমিটারটাকে নষ্ট করে নি কেন? আমার মনে হয় কন্ট্রোল প্যানেলটি আলোকিত ছিল, আলো দেখে ভয় পেয়ে আসে নি! হ্যাঁ। তা-ই হবে নিশ্চয়ই। এখন এই জঞ্জালের ভেতরে খুঁজে পেলে হয়। কুশান বলল, ভয় পেয়ো না। আমি খুঁজে বের করে ফেলব। হ্যাঁ, কুশান। তুমি আর তোমার নীলমানবের দৃষ্টি এখন আমাদের একমাত্র ভরসা! দুজনে মিলে খুঁজতে শুরু করে। বন্ধ ঘরের দরজা খুলে রিরা চিৎকার করে পেছনে। সরে আসে। ভেতরে একজন মানুষের মৃতদেহ পড়ে আছে কিছু কিছু অংশ ক্ষয়ে গেলেও চোখে-মুখে এখনো এক ধরনের অবর্ণনীয় আতঙ্ক। রিরা নিশ্বাস আটকে রেখে বলল, আমাদের যদি কেউ উদ্ধার করতে না আসে, তা হলে আমাদের এই অবস্থা হবে। কুশান রিরাকে টেনে সরিয়ে নিয়ে এসে বলল, সেটা নিয়ে পরে দুশ্চিন্তা করা যাবে এখন যেটা করতে এসেছি, সেটা করা যাক। ট্রান্সমিটারের কন্ট্রোল প্যানেলটা খুঁজতে গিয়ে তারা আরো কয়েকজন মানুষের মৃতদেহ এবং অনেকগুলো মৃতদেহের অংশবিশেষ খুঁজে পেল। এই গ্রহের প্রাণীগুলো এই মানুষগুলোকে তাদের ধারালো দাঁত দিয়ে ছিন্নভিন্ন করে ফেলেছে। দেখে মনে হচ্ছে কেউ আত্মরক্ষার কোনো সুযোগ পায় নি। ট্রান্সমিটারের কন্ট্রোল প্যানেলটি ছিল তিনতলার একটি ঘরে। কুশানের ধারণা সত্যি, প্যানেলটি আলোকিত বলে প্রাণীগুলো এটাকে কখনো স্পর্শ করে নি। দুজনে খুঁজে পুরোনো ব্যাটারিগুলো বের করে সেগুলো খুলে নতুন ব্যাটারি লাগিয়ে দিল। নতুন করে সুইচ অন করার সাথে সাথে কন্ট্রোল প্যানেলটি উজ্জ্বল আলোতে জ্বলে উঠল। রিরা হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলল, চমৎকার! এখন এটাকে যদি উদ্ধার করার জন্য প্রোগ্রাম করতে পারি, তা হলেই আমাদের কাজ শেষ। কুশান জিজ্ঞেস করল, তুমি পারবে? পারার কথা, মহাকাশ একাডেমিতে আমাদের শিখিয়েছে। এটা কিন্তু অনেক পুরোনো সিস্টেম। তা হলেও ক্ষতি নেই। জরুরি অবস্থার কোড কখনো পরিবর্তন করা হয় না। আমাদেরকে সেটাই শিখিয়েছে। কিছুক্ষণের মাঝেই রিরা আবিষ্কার করল তাদেরকে ভুল জিনিস শেখানো হয় নি। জরুরি অবস্থার কোড ব্যবহার করে সে সত্যি সত্যি কিছুক্ষণের মাঝে ট্রান্সমিটারটা প্রোগ্রাম করে ফেলল। প্রতি সেকেন্ডে একবার করে ট্রান্সমিটারটা মহাকাশে সবাইকে জানিয়ে দিতে লাগল—বিধ্বস্ত মহাকাশযানের মহাকাশচারী এই গ্রহে আটকা পড়ে আছে, তাদেরকে উদ্ধার করার জন্য এস। এই তথ্যটি কাছাকাছি সব মহাকাশযান থেকে রিলে করা হবে—এক-দুই দিনের ভেতরে মূল মহাকাশ কেন্দ্রে তথ্যটি পৌঁছে যাবে। তখন কেউ না কেউ তাকে উদ্ধার করতে আসবে। এটি এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। রিরা কন্ট্রোল প্যানেলে সিগন্যালের তীব্রতা নিশ্চিত করে ঘুরে কুশানের দিকে তাকিয়ে বলল, কাজ শেষ। পুরোপুরি শেষ হয় নি। আমরা মহাকাশযানে ফিরে যাবার পর বলব, কাজ শেষ। হ্যাঁ। রিরা মাথা নাড়ল, বলল, মহাকাশযানে গিয়ে আমরা আজকে সত্যিকারের তিতির পাখির মাংস আর যবের রুটি দিয়ে একটা ভোজ দেব। তার সাথে থাকবে আঙুরের রস। খাবার পর থাকবে বুনো স্ট্রবেরি দিয়ে তৈরি ফলের কাস্টার্ড। হ্যাঁ, ফলের কাস্টার্ড। রিরা মাথা নেড়ে বলল, তারপর কিহিতার সপ্তদশ সিম্ফনি শুনতে শুনতে আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকব। কুশান একটু হেসে বলল, আমার মনে হয় সেজন্য আমাদের সবচেয়ে প্রথম মহাকাশযানে ফিরে যেতে হবে। যত তাড়াতাড়ি ফিরে যেতে পারব, তত তাড়াতাড়ি এই আনন্দোৎসব শুরু করা সম্ভব হবে। তুমি ঠিকই বলেছ কুশান, আর দেরি করে লাভ নেই। চলো যাই। দূজনে বাইভার্বালে এসে ওঠে। শক্ত হাতে হ্যান্ডেল ধরে পা দিয়ে চাপ দিয়ে ইঞ্জিন চালু করে দিতেই বাইভার্বালটা একটা চাপা গর্জন করে মাটির উপরে ভেসে উঠল। রিয়া হ্যান্ডেলটা টেনে ধরতেই সেটা একটা ঝাকুনি দিয়ে ছুটে যেতে থাকে। রির দিগন্তে ঝুলে থাকা অতিকায় উপগ্রহটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অন্যমনস্কভাবে বলল, মহাকাশে পৌঁছানোর আগে হঠাৎ যদি গ্রহটা অন্ধকার হয়ে যায়, তা হলে কী হবে কুশান? কিছুই হবে না রিরা, আমরা তার জন্য প্রস্তুত হয়ে এসেছি। আমাদের মহাকাশ একাডেমিতে কী শিখিয়েছিল জান? কী? একজন মানুষ কখনোই একটা বিপদের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হতে পারে না। সেটার জন্য প্রস্তুত হওয়া সম্ভব কখন, জান? কুশান রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, কখন? সেই বিপদটিতে পড়ে তার থেকে একবার উদ্ধার পেলে। কুশান কোনো কথা না বলে দূরে উপগ্রহটির দিকে তাকিয়ে রইল। রিরা বলল, কী। হল কুশান, তুমি চুপ করে আছ কেন? কুশান রিরার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলল, মহাকাশযানে পৌঁছতে আমাদের আর কতক্ষণ লাগবে রিরা? এখনো কমপক্ষে আধাঘণ্টা। কেন? আমার মনে হয় গ্রহটায় অন্ধকার নেমে আসতে শুরু করেছে। রিরা ভয় পাওয়া গলায় বলল, তুমি কী বলছ কুশান? হ্যাঁ। তাকিয়ে দেখ। রিরা তাকিয়ে দেখল গাঢ় একটি অন্ধকার ছায়া উপগ্রহটি ঢেকে ফেলতে শুরু করেছে। অশুভ একটি অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে পুরো গ্রহটি। কোথা থেকে শীতল একটি বাতাস ভেসে এল, শিউরে উঠল রিরা, শীতে এবং আতঙ্কে। কিছু বোঝার আগেই গাঢ় অন্ধকারে চারদিক ঢেকে গেল। বাইভার্বালটি থামিয়ে রিরা বলল, আমি কিছু দেখতে পাচ্ছি না কুশান। তুমি দেখতে পাচ্ছ? হ্যাঁ, দেখতে পাচ্ছি। চমৎকার। এই নাও-বাইভার্বালটা তুমি চালিয়ে নিয়ে যাও। রিরা, আমি কখনো তোমাদের এই ভাসমান যান চালাই নি। কেমন করে চালাতে হয় আমি জানি না। ঘুটঘুটে অন্ধকারে রিরা কুশানের দিকে তাকানোর চেষ্টা করল, সে কখনো কল্পনা করে নি যে, একজন বলতে পারে যে সে বাইভার্বাল কীভাবে চালাতে হয় জানে না। মানুষ যেভাবে হাঁটতে শেখে, সেভাবে বাইভার্বাল চালাতে শেখে। রিরা ভুলে গিয়েছিল কুশান মানুষ নয়, কুশান নীলমানব। সে একটু অধৈর্য গলায় বলল, বাইভার্বাল চালানো খুব সোজা কুশান। হ্যান্ডেলটা টেনে ধরলেই চলে…। জানি। তুমি চালিয়েছিলে, আমি লক্ষ করেছি। কিন্তু সবকিছুরই এক ধরনের ব্যালেন্স দরকার। আমি যদি চালাতে গিয়ে কোনো পাথরে ধাক্কা লাগিয়ে ফেলি খুব বড় বিপদ হয়ে যাবে। তা হলে? একটা ফেয়ার জ্বালানো যাক। ফেয়ারের আলোতে তুমি চালিয়ে নাও। ঠিক আছে। রিরা বাইভার্বালের জমাটবাধা অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে রইল এবং তার মাঝে বুঝতে পারল কুশান একটা ফ্লেয়ার এনে সুইচ টিপে ছেড়ে দিয়েছে। জ্বলন্ত আগুনের হলকা ছড়িয়ে ফ্লেয়ারটা আকাশে উঠে গেল। কয়েক মুহূর্ত পর পুরো এলাকাটা তীব্র সাদা আলোতে ভরে গেল। অন্ধকারে এতক্ষণ থাকার পর হঠাৎ করে এই তীব্র আলোতে রিরার চোখ ধাধিয়ে যায়, সে দুই হাতে চোখ ঢেকে আলোতে অভ্যস্ত হবার চেষ্টা করতে করতে হঠাৎ ঝড়ো বাতাসের মতো এক ধরনের শব্দ শুনতে পেল। ভয় পাওয়া গলায় বলল, ওটা কিসের শব্দ কুশান? আমার মনে হয় মহাকাশের প্রাণী বের হয়ে আসছে। ভয়ংকর এক ধরনের আতঙ্কে হঠাৎ রিরার বুক কেঁপে ওঠে। সে কাঁপা হাতে বাইভার্বালের হ্যান্ডেলটা ধরে নিজের দিকে টেনে আনে, একটা ছোট ঝাকুনি দিয়ে বাইভার্বালটা উড়ে যেতে শুরু করে। রিরা তীব্র আলোতে চোখ দুটোকে অভ্যস্ত হতে দিয়ে বাইভার্বালটাকে নিয়ন্ত্রণের মাঝে রাখার চেষ্টা করে। ফ্লেয়ারের কৃত্রিম আলোতে পুরো এলাকাটা এখন অপরিচিত একটা জগতের মতো দেখাচ্ছে, রিরার হঠাৎ করে দিক বিভ্রম হতে শুরু করল। কোনদিকে যাবে সেটা নিয়ে হঠাৎ তার ভেতরে একটা বিভ্রান্তির জন্ম হয়ে গেল। ভয় পাওয়া গলায় বলল, কুশান! কী হল? আমি কোনদিকে যাব বুঝতে পারছি না। তুমি ঠিক দিকেই যাচ্ছ রিরা। একটু বাম দিকে ঘুরিয়ে নাও-দশ ডিগ্রির মতো। ফ্লেয়ারের আলোতে সবকিছু অন্যরকম লাগছে—আলোটা উপর থেকে আসছে, কোনো ছায়া নেই, তাই কোনো কিছুর গভীরতা বুঝতে পারছি না। আমি বুঝতে পারছি রিরা। তুমি মাথা ঠাণ্ডা রাখ ঘাবড়ে যাবার কিছু নেই। পাথরগুলো কত উঁচুতে বুঝতে পারছি না—মনে হচ্ছে কোথাও ধাক্কা লাগিয়ে দেব। না রিরা। কুশান শান্ত গলায় বলল, তুমি ধাক্কা লাগাবে না। ফ্লেয়ারটা ধীরে ধীরে নেমে আসছে। এটা যত নিচে নামছে আলোর তীব্রতা তত বাড়ছে—শুধু যে আলোর তীব্রতা বাড়ছে তা নয়, ফ্লেয়ারটি নামছে সামনের দিকে, তাই রিরার চোখ ধাধিয়ে যাচ্ছে। পুরো এলাকাটি হঠাৎ মনে হতে থাকে একটা বিশাল সাদা পরদার মতো। রিরা দাতে দাঁত চেপে বলল, আর পারছি না, চোখ ধাধিয়ে যাচ্ছে। কুশান কোনো কথা বলল না। রিরা জিজ্ঞেস করল, প্রাণীগুলো কোথায় আছে কুশান? আমাদের ঘিরে রেখেছে। ফ্লেয়ারটা নিভে গেলেই ছুটে আসবে আমাদের দিকে। সর্বনাশ! হ্যাঁ রিরা, কাজেই যেভাবে হোক আমাদের মহাকাশযানে পৌঁছাতে হবে। বুঝেছ? বুঝেছি। রিরা সমস্ত মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে বাইভার্বালটা চালিয়ে নিয়ে যেতে থাকে, কয়েকবার বিপজ্জনকভাবে দুটি পাথরের সাথে ধাক্কা লাগতে লাগতে শেষমুহূর্তে নিজেদের বাঁচিয়ে নেয়। কুশান শান্ত গলায় বলল, মহাকাশযানটিকে দেখতে পাচ্ছি রিরা। আর মাত্র কিছুক্ষণ। ঠিক আছে। মাথা ঠাণ্ডা রাখ রিরা— রিরা মাথা ঠাণ্ডা রাখল। আজ ভাগ্য আমাদের পক্ষে, আজ আমাদের কোনো বিপদ হতে পারে না। রিরা বিশ্বাস করতে চাইল আজ ভাগ্য তাদের পক্ষে। আজ সত্যিই বিপদ হবে না। কিন্তু শেষমুহূর্তে ভাগ্য তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করল। ফ্লেয়ারটি যখন খুব নিচে নেমে এসেছে, তীব্র আলোতে যখন কিছু দেখা যাচ্ছে না, তখন রিরা বাইভার্বালটিকে একটা বড় পাথরের পাশ দিয়ে ঘুরিয়ে নিতে গিয়ে অনুমানে ভুল করে ফেলল, বাইভার্বালটিসহ রিরা আর কুশান আছড়ে পড়ল শক্ত মাটিতে। বাইভার্বালের যন্ত্রপাতি, ফ্লেয়ার, অস্ত্র, সার্চলাইট, ব্যাটারি সবকিছু ছিটকে পড়ল চারদিকে, ঢালু পাথরে গড়িয়ে যেতে থাকল সিলিন্ডারের মতো ফ্লেয়ারগুলো। চাপা গলায় একটা গালি দিয়ে রিরা উঠে দাঁড়ায়, পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা লেগেছে, সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছিল না সে। কুশান কাত হয়ে থাকা বাইভার্বালটা ধরে কোনোমতে উঠে দাঁড়াল, এক ধরনের হতচকিত দৃষ্টি দিয়ে চারদিকে তাকাল সে। রিরা কয়েক মুহূর্ত বেটার দিকে তাকিয়ে থাকে, তার ঔজ্জ্বল্য কমতে শুরু করেছে, বার কয়েক আলোটা কেঁপে কেঁপে উঠল, এটা নিভে যাবার সময় হয়েছে। রিরা ফিসফিস করে বলল, আমাদের ভাগ্যটুকু আমরা শেষ করে ফেলেছি কুশান।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৩৭২ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • মটু,সমচা খাও আর শুরু করে দাও
    User ৩ বছর, ৯ মাস পুর্বে
    আগেই পড়ে ফেলেছি।gj

  • SHUVO SUTRADHAR
    Golpobuzz ৩ বছর, ১০ মাস পুর্বে
    Nice. next part please.