বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
প্রিয় স্নেহা, কাল তোমার জন্মদিন। তোমাকে কতটা ভালোবাসি তা ইনিয়ে বিনিয়ে লিখা আমার দ্বারা সম্ভব না।
X
স্নেহা কাঁদছে।
যাকে বলে অঝরে কাঁদতে থাকা। কিন্তু তাতে কারো
কিছু আসে যায় না। রুমটি বাহির থেকে বন্ধ। ১৬ তে পা
দিবে দিবে মেয়েটির ব্যাগে যদি তার মা লাভ লেটার
পায় তাহলে এটা করাটাই তো স্বাভাবিক।
কিন্তু টিন এইজের একটা মেয়ের মাথায় এই যুক্তিই বা
কেন কাজ করবে?
পরনে এখনো স্কুল ড্রেস। কেঁদে বালিশ ভিজিয়ে
ফেলেছে। আর কিছুক্ষণ পর তার জন্মদিন। সে ঠিক
করেছিলো কাল স্কুল পালিয়ে সারাদিন নিলয়ের সাথে
ঘুরবে। প্রথম ভালবাসার হাত ছুঁবে।
আশাটা অপুর্ণই থাকলো।
খট খট খট খট খট...
স্নেহা আধবোজা নয়নে তাকালো জানালায়, নিলয়।
জানালার ওপাশের খোলা বারান্দার, গ্রীল ধরে
দাড়িয়ে আছে। অজানা এক ভয়ে দৌড়ে এলো বারান্দায়।
তিনতলায় উঠলে কেমনে? এত রাতে কেন এসেছো? জানো
বাসায় চিঠিটা পেয়ে গেছে?
সুসস...
স্নেহা চুপ হয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো............
এত প্রশ্ন করছো কেন? এসেছি এটাই তো বড় কথা।
জানতো আজ তোমার জন্মদিন?
বিস্ময় তার চোখে মুখে , এত দুঃখে সে সবই ভুলে গেছে।
আলতো করে হাত ছুঁলো স্নেহার। আবেগে আপ্লুত হয়ে
চোখ বুজে ফেলল সে। স্রষ্টাকে শত কোটি ধন্যবাদ একটা
মানুষ আর একটা মানুষের মনের ভাষা বুঝতে পারে না
বলে। না হলে নিলয়ের সামনে সে লজ্জায় সে মরেই
যেত।
চোখ বুজে আছে সে, অনুভব করলো তার শুকিয়ে আসা অশ্রু
গুলো এক হাতে মুছে দিচ্ছে নিলয়। হাতটা তার ঠোঁটের
উপর এসে থামনো। স্নেহা চোখ খুলবার সাহস করলো না।
বুক থরথর কাঁপছে।
মেয়ে চোখ খুলো, আমাকে দেখো।
না ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকালো স্নেহা। নিলয় হাসলো।
চোখ বুজে থাকলেও স্নেহা বুঝতে পারছে নিলয়ের
মাথাটি আস্তে আস্তে তার দিকে ঝুকে পড়ছে।
কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো সে। এবার স্নেহা চোখ খুলল। এক
জোড়া মায়াময় চোখ তারদিকে তাকিয়ে আছে।
তোমার জন্য কবিতা একটা লিখেছি , শুনবে?
হাসলো সে, মাথা ঝাকালো শুনবে। ছোট একটা পৃষ্টা
বেরুলো নিলয়ের পকেট হতে।
.
.
.
.
তোমার চোখে আছে এক মায়া,
যেন কালো কাজলে রাঙিয়েছে এক সুন্দরীতমা।
চশমা পড়া , সিল্কি চুল,
হাসিতে বেলুনছড়া হয়েছে সুমধুর।
প্রান্ত থেকে প্রান্ত ভরে গেছে ফুলে,
তারই এক বিন্দুতে আছো পাপড়ির আড়ালে।
মেয়ে তুমি শুনছো?
তুমি বাগানের মধ্যে সদ্য প্রস্ফুটিত তাজা গোলাপ
দেখার অনুভূতি।
তুমি আলোকিত চাঁদ,
একটি নিটোল স্বপ্নের নীলভ ভাজ।
কখনো মনে হয়
তুমি সজীব কবিতা ,
চির ঝংকৃত সুরের কিছু ছন্দের দ্যোতনা।
শিল্পীর আঁকা একটি জীবন্ত ছবি,
তোমার চোখে লিখা আছে আমারই নাম
"নিলয়"।
এতসব ভাবনার মাঝে ভাবনা সাজাই,
কাব্যের পন্ক্তিতে ভেলা ভাসাই।
সবই এসেছে এক বিশেষ দিনে,
তুমি জানো?
এ ছিলো তোমারই জন্মদিনে।
.
.
.
.
নিলয় খেয়াল করেনি, যখন সে কবিতা পড়ছিল স্নেহার
চোখ বেয়ে আবার শ্রাবণের ধারার মত অশ্রু ঝরছিলো।
এবারেরটা উৎস ছিল এক অপ্রকাশিত সুখ।
নিলয় কবিতা পড়া শেষ করে তাকালো তার দিকে।
মেয়েটা ছুটে এসে তার ঠোঁটজোড়া চিপসে দিলো তার
ঠোঁট দুটো।
নিলয় তার চোখে মুখে অশ্রুর সিক্ততা অনুভব করছে।
মেয়েটাকে ভালবাসে সে, কখনো তাকে ছাড়বে না।
না ছড়বে না।
যেন নিজের কাছেই প্রতিজ্ঞা করছে ।
.
.
.
.
.
২০ বছর পর
স্নেহা তার মেয়ের ব্যাগ থেকে চিঠিটা পেল। নিধি থর
থর কাঁপছে। যা ভাবলো তাই মেয়েটা লাভ লেটার
পেয়েছে।
নিধি অবাক হয়ে দেখলো মায়ের মুখটি অস্বাভাবিক
শান্ত রূপ ধারণ করেছে।
"রুমে যাও " গলাটা কেঁপে উঠলো।
নিধি ভুল দেখলো কি না বলতে পারছে না। মায়ের
চোখে ছলছল করছিলো।
স্নেহা অনেকদিন পর তার পুরানো এলবামটা খুলল। ছবির
নীচ থেকে কাগজ দুটো বেরুলো।
প্রিয় স্নেহা,
কাল তোমার জন্মদিন।
তোমাকে কতটা ভালোবাসি তা ইনিয়ে বিনিয়ে লিখা
আমার দ্বারা সম্ভব না। তাই লিখছি না। তবে একটা
কবিতা লিখেছি।
কাল তোমাকে শোনাবো। তুমি শুনবে তো?????
তোমার নিলয়।
.
.
.
নিলয় আজ বেঁচে নেই, সেই রাতে তিনতলা থেকে নামতে
গিয়ে পা ফসকে যায়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত
ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করে। সে মরে গেলেও তার
স্মৃতির পৃষ্টাগুলো আজো তার মনে সাড়া ফেলে।
আজ সে তার মেয়ের মাঝে সে ২০ পুরানো স্নেহাকেই
যেন দেখছে।
নিধির চিঠিটা টেবিলে রেখে এসেছে। বাহিরে অনেক
বৃষ্টি। আজ কেন যেন সেই বূষ্টিতে ভিজতে খুব ইচ্ছা
করছে। হয়তো চোখের পানিটা লুকানো যাবে বলে।
বিড়বিড় করছে স্নেহা।
তুমি সজীব কবিতা ,
চির ঝংকৃত সুরের কিছু ছন্দের দ্যোতনা।
শিল্পীর আঁকা একটি জীবন্ত ছবি,
তোমার চোখে লিখা আছে আমারই নাম
"নিলয়"।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
Rafil
Guest ৭ বছর, ৪ মাস পুর্বে