বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

অবনীল(পর্ব-২)

"সাইন্স ফিকশন" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান S O F I Y A (০ পয়েন্ট)

X কাপ্টেন বৰ্কেন কোনো কথা না বলে একটু হাসলেন। রিরা একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে বলল, আমার ধারণা নীলমানবদের ব্যাপারে আপনি যে আশঙ্কাটুকুর কথা বলেছেন, সেটা সত্যি প্রমাণিত হবে। তোমার তাই ধারণা? আমার নিজের কোনো ধারণা নেই মহামান্য ক্যাপ্টেন, আমার এই বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতাও নেই। কিন্তু আপনার সম্পর্কে আমি যেটুকু জানি, সেটা থেকে আমার ধারণা আপনার আশঙ্কা সত্যি প্রমাণিত হবে। নীলমানবেরা মহাকাশযান দখল করার চেষ্টা করবে। আমি আপনার কাছাকাছি থেকে পুরো ব্যাপারটি দেখতে চাই মহামান্য ক্যাপ্টেন। আপনি কীভাবে পুরো বিষয়টির অবসান ঘটান, আমি সেটা নিজের চোখে দেখতে চাই মহামান্য ক্যাপ্টেন। ক্যাপ্টেন বৰ্কেন একটু হাসার চেষ্টা করে বললেন, গ্রিন গ্রহপুঞ্জে আমার ভবিষ্যদ্বাণী যেভাবে কাজে লেগেছে, সেরকম অনেক জায়গায় আমার ভবিষ্যদ্বাণীর ভুল বের হয়েছে। আমি খুব আন্তরিকভাবে চাই, এবারে আমার আশঙ্কা ভুল প্রমাণিত হোক। তা না হলে— তা না হলে? এখানে যে ভয়ংকর রক্তারক্তি হবে, সেটি কোনো মহাকাশযানের ইতিহাসে আগে কখনো ঘটে নি। ক্যাপ্টেন বৰ্কেন সোজা হয়ে তার চেয়ারে বসে মনিটরটি উজ্জ্বল করতে করতে বললেন, এবং সেই রক্তের রঙ হবে লাল ও নীল। রিরা কোনো কথা বলল না, কিন্তু নিজের অজান্তেই সে কেমন জানি শিউরে ওঠে। নিথিলিয়াম গ্যাস সিলিন্ডারের ভাল্বটি খোলার সাথে সাথে নীলমানবদের একজন উপরের দিকে তাকাল। ক্যাপ্টেন দাতে দাঁত ঘষে বললেন, বুঝতে পেরেছে। রিরা একটু অবাক হয়ে বললেন, কেমন করে বুঝতে পেরেছে? নিথিলিয়াম বর্ণহীন এবং গন্ধহীন গ্যাস। নিথিলিয়াম আমাদের কাছে বর্ণহীন এবং গন্ধহীন গ্যাস। নীলমানরদের ইন্দ্রিয় আমাদের থেকে অনেক বেশি তীক্ষ। তাদের ইন্দ্রিয়ের সংখ্যাও আমাদের থেকে বেশি। রিরা নিশ্বাস আটকে রেখে বলল, এখন কী হবে মহামান্য ক্যাপ্টেন? কিছুই হবে না। আগে হোক পরে হোক ওরা বুঝতে পারত, আমরা নিথিলিয়াম বা অন্য কোনো গ্যাস দিয়ে তাদের অচেতন করে ফেলব। রিরা রুদ্ধশ্বাসে মনিটরের দিকে তাকিয়ে রইল। যে নীলমানবটি উপরের দিকে তাকিয়েছিল সে উঠে দাঁড়াল এবং রিরা বুঝতে পারল সে একজন নারী। ক্যাপ্টেন বৰ্কেন বললেন, এই মেয়েটি সম্ভবত অন্তঃসত্ত্বা—অন্তঃসত্ত্বা মেয়েদের ঘ্রাণশক্তি খুব প্রবল হয়। মেয়েটি অনিশ্চিত ভঙ্গিতে দুই পা হেঁটে হঠাৎ করে ঘুরে দাঁড়িয়ে কিছু একটা বলল এবং তখন একসাথে সবাই উপরের দিকে তাকাল। তারা বুঝতে পারছে এই ঘরের ভেতর নিখিলিয়াম গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। তাদের মুখে কোনো ধরনের অনুভূতির চিহ্ন ফুটে উঠল না, স্থির হয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে রইল। ক্যাপ্টেন বৰ্কেন ফিসফিস করে বললেন, বাতাসে এক পিপিএম নিথিলিয়াম থাকলেই মানুষ অচেতন হয়ে যায়। এদের দেখ দশ পিপিএম দিয়েও কিছু হচ্ছে না। ক্যাপ্টেন বকেনের কথা শেষ হবার আগেই দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে থাকা একজন নীলমান কাত হয়ে পড়ে গেল। রিরা বলল, অচেতন হতে শুরু করেছে। হ্যাঁ। কিছুক্ষণের মাঝেই আরো দু-একজন কাত হয়ে মেঝেতে পড়ে গেল। দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিও একসময় হাঁটু ভেঙে নিচে পড়ে গেল। ক্যাপ্টেন বৰ্কেন নিচু গলায় বললেন, চমৎকার। নিথিলিয়াম কাজ করতে রু করেছে। কিন্তু– কিন্তু কী মহামান্য ক্যাপ্টেন? কিছু একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার আছে এখানে। রিরা একটু অবাক হয়ে বলল, কী অস্বাভাবিক ব্যাপার? আমি বুঝতে পারছি না—কিন্তু কিন্তু ক্যাপ্টেন বৰ্কেনের ভুরু কুঁচকে উঠল, তিনি অবাক হয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ঘরের মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে থাকা নীলমানবদের দিকে তাকিয়ে রইলেন। এই দৃশ্যে কিছু একটা অস্বাভাবিকতা আছে, ব্যাপারটি তিনি ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করতে পারছেন, কিছু বুঝতে পারছেন না। কন্ট্রোলরুমের বড় মনিটরে হঠাৎ করে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান ক্রশের ছবি ভেসে উঠল। ক্রুশ মাথা তুলে ক্যাপ্টেন বর্কেনের কাছে ভেতরে ঢোকার অনুমতি চাইলেন। বললেন, আমার দলটি প্রস্তুত মহামান্য বর্কেন। আমরা কি ভেতরে যেতে পারি? একটু দাঁড়াও ক্রুশ। কেন মহামান্য ক্যাপ্টেন? আমার কাছে কিছু একটা অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। সেটা কী মহামান্য বর্কেন? আমি এখনো জানি না। আমরা কি অপেক্ষা করব? আহত নীলমানবটির কিন্তু অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে, তা ছাড়া নিথিলিয়াম খুব তাড়াতাড়ি অক্সিডাইজড হয়ে যায় আমাদের হাতে সময় বেশি নেই। আমি জানি। ক্যাপ্টেন বৰ্কেন বললেন, তবুও একটু অপেক্ষা কর। ক্রুশের মুখে একটু হাসি ফুটে উঠল, তিনি মাথা নেড়ে বললেন, আপনি শুধু শুধু আশঙ্কা করছেন মহামান্য ক্যাপ্টেন। আপনি আমাদের ওপর ভরসা করতে পারেন। আমার দলটি অত্যন্ত সুগঠিত এবং দায়িত্বশীল। ভেতরে কোনো ধরনের অঘটন ঘটা সম্ভব নয়। তা ছাড়া নীলমানবেরা সবাই অচেতন হয়ে আছে। নিথিলিয়াম গ্যাসটি অত্যন্ত কার্যকর গ্যাস। ক্যাপ্টেন বৰ্কেন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, বেশ। তোমরা ঢোকো। রিরা ফিসফিস করে বলল, মহামান্য ক্যাপ্টেন, আপনি অনুমতি না দিলেই পারতেন। আপনার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সাধারণত ভুল করে না। ক্যাপ্টেন বৰ্কেন রিরার কথায় উত্তর না দিয়ে ভুরু কুঁচকে তীক্ষ্ণ চোখে মনিটরের দিকে তাকিয়ে রইলেন, ঘরের ভেতর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে নীলমানবেরা পড়ে আছে দৃশ্যটি দেখে মনে হয় কোনো পরাবাস্তব জগতের দৃশ্য। নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান শক্তিশালী আরগন লেজার দিয়ে বন্ধ ঘরের দরজা কেটে আলাদা করতে শুরু করতেই ক্যাপ্টেন বৰ্কেন লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালেন, চিৎকার করে বললেন, সর্বনাশ! রিরা ভয় পাওয়া গলায় বলল, কী হয়েছে? কী হয়েছে মহামান্য ক্যাপ্টেন? ক্যাপ্টেন বৰ্কেন চিৎকার করে বললেন, থামো। থামো তোমরা– কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে, বিশাল দরজা হাট করে খুলে ভেতরে ঢুকে গিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন। ভেতরের নিথিলিয়াম থেকে রক্ষা পাবার জন্য তাদের শরীরে বায়ুরোধক পোশাক, সেই পোশাকে তাদেরকে দেখাচ্ছে অতিকায় পতঙ্গের মতো। তাদের হতের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রগুলো দেখাচ্ছে খেলনার মতো। রিরা ভয় পাওয়া মুখে বলল, কী হয়েছে মহামান্য ক্যাপ্টেন? কী হয়েছে? ক্যাপ্টেন বৰ্কেন খুব ধীরে ধীরে তার চেয়ারে বসে ফিসফিস করে বললেন, আমরা সবাই শেষ হয়ে গেলাম। কী বললেন? আর্তচিৎকার করে রিরা বলল, কী বললেন আপনি? আমরা শেষ হয়ে গেলাম। কেউ আর আমাদের রক্ষা করতে পারবে না। কেন? নীলমানবেরা নিথিলিয়াম গ্যাস দিয়ে আক্রান্ত হয় নি। তারা ভান করেছে আক্রান্ত হয়েছে। আপনি কেমন করে জানেন? সবাই অচেতন হয়েছে একইভাবে একই ভঙ্গিতে মাথা নিচু করে উপুড় হয়ে কারো মুখ দেখা যাচ্ছে না—সবাই মুখ ঢেকে রেখেছে। এখন কী হবে? ওরা উঠে দাঁড়াবে। ক্যাপ্টেন বর্কেনের কথা শেষ হবার আগেই ঘরের একেবারে অন্যপ্রান্তে পড়ে থাকা নীলমানবটি উঠে দাঁড়াল–হঠাৎ করে লাফিয়ে নয়, খুব সহজ ভঙ্গিতে। যেন কিছুই হয় নি কোনো একজন পুরাতন বন্ধুকে দেখে একজন মানুষ যেভাবে উঠে দাঁড়ায় সেভাবে। তারপর টলতে টলতে সে এগিয়ে আসতে থাকে নিরাপত্তা বাহিনীর দলটির দিকে। নিরাপত্তা বাহিনীর দলটি হতচকিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে—কী করবে বুঝতে পারে না। রিরা চাপা গলায় বলল, এখন কী হবে? গুলি করবে। গুলি করে মারবে নীলমানবটিকে। কেন মারবে? কথা শেষ হবার আগেই প্রচণ্ড শব্দে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র গর্জন করে উঠল—নীলমানবটির শরীর ঝরা হয়ে যায় মুহর্তে ঝনঝন করে কাচ ভেঙে পড়ল ঘরের ভেতর! ঘরের ভেতর বিশুদ্ধ বাতাস আনার ব্যবস্থা করল আর ভয় নেই নীলমানদের। নিথিলিয়ামে অচেতন থাকবে না কেউ। ক্যাপ্টেন বৰ্কেনের কথা শেষ হবার আগেই ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকা নীলমানবেরা উঠে দাঁড়ায়, টলতে টলতে তারা ঝাঁপিয়ে পড়ল নিরাপত্তা বাহিনীর মানুষগুলোর ওপর। প্রচণ্ড গুলির শব্দে কানে তালা লেগে গেল, ধোয়ায় অন্ধকার হয়ে গেল চারদিক। তুমি কিছু বোঝার আগে নলিমানবেরা ছুটে আসবে—একজন একজন করে সবাইকে হত্যা করবে ওরা। ক্যাপ্টেন বর্কেনের গলার স্বর হঠাৎ আশ্চর্যরকম শান্ত হয়ে গেল, তিনি মাথা নেড়ে বললেন, কী আশ্চর্য! আমি এই সহজ জিনিসটা বুঝতে পারি নি। রিরা রক্তশূন্য মুখে মনিটরটির দিকে তাকিয়ে রইল। মনিটরে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, নীলমানবেরা অস্ত্র কেড়ে নিয়েছে প্রতিরক্ষা বাহিনীর দলটির থেকে বায়ু নিরোধক পোশাক পরে থাকায় তারা ঠিকভাবে নড়তে পারছিল না, ক্ষীপ্র নীলমানবেরা অবলীলায় তাদের কাবু করেছে। প্রচণ্ড গোলাগুলিতে বেশ কয়জন নীলমানবের শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে কিন্তু সেজন্য কারো ভেতর এতটুক ভয়ভীতি বা দুর্বলতা এসেছে বলে মনে হল না। নীলমানবেরা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে বেপরোয়াভাবে গুলি করতে করতে ছুটে আসছে। তাদের ভাবলেশহীন মুখে এই প্রথমবার হিংস্র প্রতিহিংসার একটা চিহ্ন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দুর্বোধ্য ভাষায় চিৎকার করতে করতে তারা মহাকাশযানের চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। পুরো মহাকাশযানটাকে একটা ধ্বংসস্তুপে পরিণত না করে তারা থামবে না। রিরা ক্যাপ্টেন বর্কেনের দিকে তাকিয়ে বলল, আমরা এখন কী করব মহামান্য ক্যাপ্টেন? ক্যাপ্টেন বৰ্কেন অন্যমনস্কভাবে মাথা নেড়ে বললেন, আমাদের করার কিছু নেই। এই মহাকাশযানে যারা আছে, তারা সাধারণ মহাকাশচারী। এই নীলমানবেরা যোদ্ধা ওদের হাতে এখন অস্ত্র। আমাদের আর কিছু করার নেই। কিন্তু– ক্যাপ্টেন বৰ্কেন এক ধরনের স্নেহ নিয়ে রিরার দিকে তাকিয়ে শোনা যায় না এরকম গলায় বললেন, আমরা যদি নীলমানবদের ভেতরে এই ভয়ানক প্রতিহিংসার জন্ম না দিতাম, তা হলে হয়তো এই অবস্থা হত না। নীলমানদের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত ছিল। কিন্তু এখন কিছুই কি করতে পারব না? ক্যাপ্টেন বৰ্কেন উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, কিছু একটা চেষ্টা অবশ্যই করতে হবে। কার্গো বে থেকে মূল মহাকাশযানের করিডরটাতে যদি এদের কিছুক্ষণ আটকে রাখা যায়, তা হলে মহাকাশযানের অন্য ক্রুরা হয়তো খানিকটা সময় পাবে। তারা হয়তো কিছু ভারী অস্ত্র বের করে এনে সত্যিকারের একটা প্রতিরোধ দিতে পারে। ক্যাপ্টেন বৰ্কেন দেয়ালের একটা সুইচ স্পর্শ করে বেশ বড় একটা অংশকে নামিয়ে আনলেন। ভেতরে বড় বড় কিছু স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র সাজানো। তিনি একটা বহুঁ ব্যবহৃত অস্ত্র টেনে নামিয়ে দক্ষ হাতে লোভ করে বললেন, কখনো ভাবি নি এটা আবার ব্যবহার করতে হবে। ভেবেছিলাম খুনোখুনির পর্যায় পার হয়ে এসেছি। রিরা দেয়াল থেকে অন্য একটি স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নামিয়ে নিল, ক্যাপ্টেন বৰ্কেন তাকে বাধা দিলেন না। এই অস্ত্র কে কখন কীভাবে ব্যবহার করতে পারবে—সেটি নিয়ে নানারকম নিয়মকানুন আছে, কিন্তু সেসব এখন পুরোপুরি অর্থহীন। ক্যাপ্টেন বৰ্কেন বললেন, তুমি ডান দিক দিয়ে যাও, আমি বাম দিকে আছি, মিনিট পাচেক আটকে রাখতে পারলেই অনেক। মাথা ঠাণ্ডা রেখ–খুব কাছে না আসা পর্যন্ত গুলি করো না। নিশানা ঠিক রেখ–হত্যা খুব ভয়ংকর একটা ব্যাপার—কিন্তু তারপরেও আমাদের করতে হয়। বেঁচে থাকার জন্য ফুড চেইন নামে একটা প্রক্রিয়ায় একজন প্রাণী অন্য প্রাণীকে বহুদিন থেকে হত্যা করে আসছে। মনে রেখ যত বেশিজন নীলমানবকে হত্যা করতে পারবে, আমাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা তত বেশি। রিরা মাথা নাড়ল, ক্যাপ্টেন বৰ্কেন তার হাত স্পর্শ করে বললেন, আমি খুব দুঃখিত রিরা। খুব দুঃখিত। আপনার সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আমি অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি। ক্যাপ্টেন বৰ্কেন শব্দ করে হাসলেন, বললেন, যদিও সেই সুযোগটা হচ্ছে খুব অল্পবয়সে নীলমানবের হাতে খুন হয়ে যাওয়ার সুযোগ। কার্গো বে-র করিভরে বড় ধাতব দরজার নিচু অংশে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটি বসিয়ে রিরা। অপেক্ষা করতে থাকে। দূরে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। নীলমানবেরা গুলি করতে করতে ছুটে আসছে। নৃশংস নীলমান নিয়ে তার খুব কৌতূহল ছিল, একটু পরেই তাদেরকে সে দেখবে। প্রথমবার তাদেরকে সামনাসামনি দেখবে। হয়তো শেষবার। রিরা খুব ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। মহাকাশযানটিতে এক বিস্ময়কর নীরবতা। কিছুক্ষণ আগেই ভয়ংকর শব্দে পুরো মহাকাশযানটি কেঁপে কেঁপে উঠছিলএখন হঠাৎ করে এই নৈঃশব্দ্যকে অসহনীয় আতঙ্কের মতো মনে হতে থাকে। রিরা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটি হাতে নিয়ে চারদিকে তাকাল। পুরো মহাকাশযানটি একটি ধ্বংসস্তুপের মতো, দেয়ালে বড় বড় গর্ত, ধাতব বিম ভেঙে পড়েছে, এদিকে সেদিকে আগুন ধিকিধিকি করে জ্বলছে, চারদিকে কালো। ধোয়া এবং পোড়া গন্ধ। রিরা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে পুরো মহাকাশযানে কোথাও কোনো জীবিত প্রাণীর শব্দ নেই। কারো কথা, কাবো নিশ্বাস, এমনকি যন্ত্রণার একটু কাতরধ্বনিও নেই। নীলমানব আর এই মহাকাশযানের মহাকাশচারীরা কি তা হলে পরস্পর পরস্পরকে একেবারে পরিপূর্ণভাবে নিঃশেষ করে দিয়েছে? হঠাৎ করে রিয়ার ভেতরে এক অচিন্তনীয় আতঙ্ক এসে ভর করে—সে কি তা হলে এই মহাকাশযানে একমাত্র জীবিত প্রাণী? রিরা ফিসফিস করে নিজেকে বলল, না না—এটা হতে পারে না। কেউ না কেউ নিশ্চয়ই বেঁচে আছে। নিশ্চয়ই বেঁচে আছে। রিরা খুব সতর্ক পায়ে হাঁটতে শুরু করে, তীক্ষ্ণ চোখে সে তাকায়—কোথাও কি কেউআছে? করিডরের গোড়ায় সে ক্যাপ্টেন বর্কেনের মৃতদেহটি দেখতে পেল ভয়ংকর গোলাগুলির মাঝে থেকেও তার মৃতদেহটি আশ্চর্যরকম অক্ষত। মুখে এক ধরনের প্রশান্তির চিহ্ন, দেখে মনে হয় কোনো একটা কিছু দেখে কৌতুক বোধ করছেন। রিরা কিছুক্ষণ মৃতদেহটির কাছে দাঁড়িয়ে রইল, তার ভেতরে দুঃখ, ক্রোধ বা হতাশা কোনো ধরনের অনুভূতিই নেই, সে ভেতরে এক ধরনের আশ্চর্য শূন্যতা অনুভব করে। রিরা অনেকটা যন্ত্রের মতো মৃতদেহটি ডিঙিয়ে এগিয়ে যেতে শুরু করে। দুজন নীলমানবের মৃতদেহ পাওয়া গেল কন্ট্রোলরুমের দরজায়। শক্তিশালী কোনো বিস্ফোরকের আঘাতে একজনের মস্তিষ্কের বড় অংশ উড়ে গেছে। গুলির আঘাতে দ্বিতীয়জনের বুকের একটা অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে আছে। কালচে এক ধরনের রক্তে পুরো জায়গাটা ভিজে আছে। মহাকাশযানের অভিযাত্রীদের মৃতদেহের বেশিরভাগ তাদের কেবিনের কাছাকাছি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। তাদের বেশিরভাগই ছিল নিরস্ত্র, প্রতিবোধ দূরে থাকুক নিজেদের রক্ষা করার সুযোগও কেউ পায় নি। ইঞ্জিনঘরের কাছাকাছি মনে হয় একটা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়েছে, সেখানে ইতস্তত অনেকগুলো মৃতদেহ পড়ে আছে। নীলমানবদের মৃতদেহের বেশিরভাগই কুরু ইঞ্জিনের আশপাশে মনে হয় তারা ইঞ্জিনটা ধ্বংস করতে চেষ্টা করেছিল। উপরে নিরাপত্তাকর্মীরা থাকায় শেষপর্যন্ত ধ্বংস করতে পারে নি। ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ারের মৃতদেহটি পাওয়া গেল কন্ট্রোল প্যানেলের উপর তার পায়ের কাছেই একজন নীলমানবের মৃতদেহ পড়ে আছে। আশপাশে চারদিকে ধস্তাধস্তির চিহ্ন একপর্যায়ে মনে হয় অস্ত্র হাতে এরা হাতাহাতি যুদ্ধ করেছে, কিন্তু শেষরক্ষা হয় নি, একটি মানুষ কিংবা নীলমানবও বেঁচে নেই। পুরো ইঞ্জিনঘরটির ভেতরে মনে হয় একটা প্রলয়কাণ্ড ঘটে গেছে তার ভেতরে ধক ধক শব্দ করে এখনো ইঞ্জিনটি চলছে, সেটাই একটি রহস্য। রিরা ইঞ্জিনঘর থেকে বের হয়ে কমিউনিকেশনস ঘরে গেল, সেখান থেকে মূল প্রসেসর ঘরে। প্রসেসর ঘর থেকে শীতলঘর, সেখান থেকে কার্গোঘরে—কোথাও একজন জীবিত প্রাণী নেই। একজন মানুষ কিংবা একজন নীলমানব কেউ বেঁচে নেই। এই পুরো মহাকাশযানে সে একা অসংখ্য মানুষ এবং নীলমানবের মৃতদেহ নিয়ে মহাকাশ পাড়ি দেবে-রিরা হঠাৎ করে অসহনীয় আতঙ্কে থরথর করে কাপতে শুরু করে। ঠিক তখন সে একটা শব্দ শুনতে পেল, কোনো একজনের পদশব্দ কিংবা কোনো কিছু সরে যাবার শব্দ। নিজের অজান্তেই সে চিৎকার করে উঠল, কে? নিঃশব্দে মহাকাশযানে তার চিঙ্কার প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসে কিন্তু কেউ তার প্রশ্নের উত্তর দেয় না। রিরা তার স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটি হাতে নিয়ে তীক্ষ্ণ চোখে চারদিকে তাকায়। কোনো মহাকাশচারী হলে নিশ্চয়ই তার প্রশ্নের উত্তর দিত—এটি হয়তো কোনো নীলমান। ভয়ংকর দুর্ধর্ষ নৃশংস একজন নীলমানব। রিরা নিশ্বাস বন্ধ করে তার অস্ত্রটি ধরে রাখে, কোনো একটা কিছুকে নড়তে দেখলেই সে গুলি করবে। আবার কিছু একটা নড়ে যাবার শব্দ হল—মনের ভুল নয়, নিশ্চিত শব্দ, কোনো জীবন্ত প্রাণীর সরে যাবার শব্দ। রিরা শক্ত হাতে তার স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে এগুতে থাকে, করিডরের পাশেই একটা ছোট ঘর, তার ভেতর থেকে শব্দটা এসেছে। দরজার সামনে কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থেকে হঠাৎ করে লাথি দিয়ে দরজাটা খুলে অস্ত্র উদ্যত করে ভেতরে ঢুকে গেল সে—একমুহূর্ত সে নিশ্বাস নিতে পারে না আতঙ্কে। দেয়ালে হেলান দিয়ে স্থির চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে একজন নীলমানব। কী ভয়ংকর ক্রুর সে দৃষ্টি! রিরার সমস্ত শরীর থরথর করে কেঁপে উঠল আতঙ্কে। রিরা নীলমানবটির মাথার দিকে অস্ত্রটি উদ্যত করে রেখে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থাকে এবং হঠাৎ করে বুঝতে পারল নীলমানবটি নিরস্ত্র ও আহত। পায়ের কাছাকাছি কোথাও গুলি লেগেছে। নীল রক্ত চুইয়ে চুইয়ে পড়ে পুরো জায়গাটা কালচে হয়ে আছে। নীলমানবটি ইচ্ছে করলেই তাকে হত্যা করতে পারবে না বুঝতে পেরে হঠাৎ সে তার শরীরে শক্তি ফিরে পায়, অস্ত্র হাতে দুই পা পিছিয়ে গিয়ে সে অস্ত্রটি নীলমানবের মাথার দিকে তাক করে। হত্যা খুব ভয়ংকর ব্যাপার, তারপরেও আমাদের হত্যা করতে হয়। ক্যাপ্টেন বর্কেন বলেছিলেন, নিজেকে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনে অন্যকে হত্যা করতে হয়। রিরা এই মুহূর্তে নীলমানবটিকে হত্যা করবে। সে অস্ত্রটি নীলমানবের মাথার দিকে তাক করে ট্রিগার টেনে ধরল। কান ফাটানো বিস্ফোরণের শব্দে পুরো ঘর প্রকম্পিত হওয়ার কথা ছিল কিন্তু কোনো শব্দ হল না; খট করে একটা শব্দ করে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটি মৃদু ঝাকুনি দিয়ে কেঁপে উঠল মাত্র। রিরা অস্ত্রটির দিকে তাকায় গুলি শেষ হয়ে গেছে। কোমর থেকে নতুন ম্যাগজিন বের করে অস্ত্রতে লোড করে আবার সেটি উদ্যত করল নীলমানবের মাথার দিকে। নীলমানবটি স্থির দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে কী ভয়ংকর ক্রুর তার দৃষ্টি, মুখমণ্ডলে কী ভয়ংকর নিষ্ঠুরতা! একটু আগে কী নৃশংসভাবেই না তারা এই মহাকাশের সবাইকে হত্যা করেছে। রিরা ট্রিগারে চাপ দিতে গিয়ে থেমে গেল, দৃষ্টিতে কি শুধু অমানবিক নিষ্ঠুরতা? তার সাথে কি একটু ভয়, একটু আতঙ্ক এবং শূন্যতা নেই তাকে হত্যা না করার জন্য কাতর প্রার্থনা নেই? বেঁচে থাকার জন্য আকুলতা নেই? রিরা অস্ত্রটি নামিয়ে রাখল, পায়ে গুলি লেগে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, নীলমানবটি এমনিতেই মারা যাবে তার মাথায় গুলি করে তাকে আলাদাভাবে হত্যা করার প্রয়োজন নেই। সে ঘরটির চারদিকে তাকাল, এখান থেকে বের হয়ে যাবার কোনো উপায় নেই। বাইরে থেকে তালা দিয়ে রাখলে নীলমানবটি এই ঘর থেকে বের হতে পারবে না—আপাতত আটকে থাকুক এই ঘরে। রিরা ঘরটি বন্ধ করে বের হয়ে এল। কন্ট্রোলরুমের দরজায় ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে থাকা নীলমানবটির মৃতদেহ ডিঙিয়ে রিরা কন্ট্রোলরুমের ভেতরে এসে ঢোকে। ক্যাপ্টেন বর্কেন যে চেয়ারটিতে বসতেন, তার পাশে দাঁড়িয়ে সে সুইচ স্পর্শ করল। মহাকাশযানের ক্যাপ্টেন ছাড়া আর কেউ এই কন্ট্রোল প্যানেল ব্যবহার করার কথা নয়। কিন্তু এখন পুরোপুরি ভিন্ন একটা অবস্থা, জরুরি অবস্থায় যে-কেউ মূল প্রসেসরের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। শিক্ষানবিশ মহাকাশচারী হিসেবে তাদেরকে অনেকবার এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। রিরা তার রেটিনা স্ক্যান করিয়ে গোপন পাসওয়ার্ডটি প্রবেশ করাল। সাথে সাথেই উত্তর আসার কথা কিন্তু কোনো উত্তর না এসে মনিটরটি নিরুত্তর হয়ে রইল। রিরা এক ধরনের আতঙ্ক অনুভব করে, সে দ্বিতীয়বার চেষ্টা করল। দুই চোখের রেটিনা স্ক্যান করিয়ে সে আবার গোপন পাসওয়ার্ডটি প্রবেশ করাল। কয়েক মুহূর্ত পরে মনিটরে কিছু আলোর বিচ্ছুরণ দেখা যায় এবং শুষ্ক কণ্ঠস্বরে মূল প্রসেসর যোগাযোগ করার চেষ্টা করল, জরুরি পর্যায় আট, আমি আবার বলছি মহাকাশযানে জরুরি পর্যায় আট। রিরা এক ধরনের আতঙ্ক অনুভব করে। মহাকাশযান অভ্যন্তরীণ বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবার পূর্বমুহূর্তে জরুরি পর্যায় দশ ঘোষণা করা হয় এই মহাকাশযানটি সেই পর্যায় থেকে মাত্র দুই পর্যায় উপরে রয়েছে। নীলমানবেরা যখন মহাকাশযানে আক্রমণ করেছিল, তখন মহাকাশযানটিকে নিশ্চয়ই পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে। জরুরি পর্যায় পাঁচ পর্যন্ত মহাকাশযান সহ্য করতে পারে। জরুরি পর্যায় আট পৌঁছে গেলে সেটা পরিত্যাগ করে সরে যাবার কথা—যে কোনো মুহূর্তে সেটা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। রিরা কাপা গলায় বলল, আমি মহাকাশ্যানচারী রিরা। মহাকাশযানে একমাত্র জীবিত মানুষ আমার সাহায্যের প্রয়োজন। শুষ্ক কণ্ঠস্বরে মহাকাশযানের প্রসেসর উত্তর করল, এই মহাকাশযান খুব শিগগিরই ধ্বংস হয়ে যাবে। মহাকাশযানের বায়ুর পরিশীলন সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বাতাসের চাপ কমে আসছে। কুরু ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জ্বালানি টিউবে ফুটো হওয়ার কারণে জ্বালানি ছড়িয়ে পড়ছে। রিরা নিশ্বাস বন্ধ করে বলল, কেন্দ্রীয় মহাকাশ কেন্দ্রে খবর পাঠানো প্রয়োজন। জরুরি সাহায্য না পেলে– বিস্ফোরণের কারণে যোগাযোগ কেন্দ্র নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের পক্ষে বাইরে যোগাযোগ করা সম্ভব নয়। রিরা আর্তচিৎকার করে বলল, বাইরে যোগাযোগ করা সম্ভব নয়? না। এই মহাকাশযানটা কয়েকদিনের মাঝে ধ্বংস হয়ে যাবে? হ্যাঁ। মহাকাশযানে বাতাসের চাপ কমে আসছে। ইঞ্জিনঘরে যে জ্বালানি ছড়িয়ে পড়েছে, যে কোনো মুহর্তে সেটা দিয়ে বিস্ফোরণ হতে পারে। এবং সাহায্য পাবার কোনো আশা নেই? মহাকাশযানের মূল প্রসেসর শুষ্ক কণ্ঠে বলল, সাহায্য পাবার সম্ভাবনা দশমিক শূন্য তিন। চমৎকার! রিরা হঠাৎ আবিষ্কার করল পুরো ব্যাপারটি নিয়ে তার যেরকম অস্থির হয়ে যাবার কথা ছিল, সে মোটেও সেরকম অস্থির হয়ে উঠছে না। বরং পুরো ব্যাপারটা সে বেশ সহজভাবেই মেনে নিয়েছে। একটা নিশ্বাস ফেলে সে বেশ শান্ত গলায় বলল, যদি তা-ই সত্যি হয় যে, এই মহাকাশযানে আগামী কয়েকদিনই আমার জীবনের শেষ কয়েকদিন, তা হলে সময়টা আমি ভালোভাবে কাটাতে চাই। মূল প্রসেসর শুষ্ক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, তুমি কী করতে চাও রিরা? প্রথমত মহাকাশযানে যে অসংখ্য মৃতদেহ পড়ে আছে, সেগুলো যথাযযাগ্য মর্যাদা দিয়ে সমাহিত করতে চাই। সেটা সম্ভব না হলে সেগুলোকে অন্তত হিমঘরে সংরক্ষণ করতে চাই। কাজটা একটু কঠিন হবে। মহাকাশযানের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ অনেক জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কঠিন হলেও করতে হবে। রিরা একটু থেমে যোগ করল, আমি এতগুলো মৃতদেহের মাঝে একদিনও থাকতে পারব না। রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে যদি দুএকটি নিচু শ্রেণীর রোবট অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়, তা হলে তাদেরকে ব্যবহার করা যেতে পারে। ঠিক আছে। মৃতদেহগুলো সরিয়ে নেবার পর মহাকাশযানটিকে পরিষ্কার করতে হবে। সব জায়গা রক্ত এবং ক্লেদে মাখামাখি হয়ে আছে। ভ্যাকুয়াম সিস্টেম ব্যবহার করে সেটা সহজেই পরিষ্কার করা যাবে। আমার থাকার জন্য খানিকটা জায়গা পরিষ্কার করে দিলেই আপাতত কাজ চলে। যাবে। সেটি কোনো সমস্যা নয়, ক্যাপ্টেনের নিজস্ব অতিরিক্ত কেবিনটি তুমি ব্যবহার করতে পারবে। সেখানে আরামদায়ক বিছানা, ব্যক্তিগত আনন্দের জন্য বিনোদন কেন্দ্র, বিশেষ স্নায়ু-উত্তেজক পানীয় এই সবকিছু আছে।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৪১৯ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • Tuba Rubaiyat
    User ৩ বছর, ১১ মাস পুর্বে
    উনার মনে হয় এই টাইপ নাম পছন্দ gj,,,,কায়রা আরো বিদঘুটে নাম আছে,ঠিক মনে পড়ছেনা এখন,,,gj

  • Md.SaiM ArAFaT
    User ৩ বছর, ১১ মাস পুর্বে
    আমি বুঝি না জাফর ইকবাল তার সাইন্স ফিকশনগুলোতে "রিরা,লিলিয়ান,ববেকন এরকম টাইপ নাম দেয় কেন? হুমায়ূন আহমেদের সাইন্স ফিকশনগুলোতে কত সুন্দর সুন্দর নাম দেয়।হুমায়ূন আহমদের চরিত্রগুলোকে খুব কাছের মনে হয় কিন্তু জাফর ইকবালের গুলো এতটাও কাছের মনে হয় না।gj

  • SHUVO SUTRADHAR
    Golpobuzz ৩ বছর, ১১ মাস পুর্বে
    অসাধারণ।

  • Md.SaiM ArAFaT
    User ৩ বছর, ১১ মাস পুর্বে
    ভালো হয়েছে।gj