বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
আমি মিঠু।আজ এক সপ্তাহ হয়ে গেল আমি শাহাবাগ থানায় বন্দি।বিনা দোষে আজ অপরাধী হয়ে জেল খাটছি।অনেক মেরেছে আমায়।অনেক বলেছি স্যার আমি কিছু করি নি আমাকে আর মাইরেন না তাও শোনে নি আমার কথা।অনেক মেরেছে সাড়া শরীরের মারের চিহ্ন আর পুরো শরীর ব্যাথা।আসল ঘটনা বলি তাহলে আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটির ওখানে ঝালমুড়ি,ফুচকা বিক্রি করি।সাতদিন আগে ভার্সিটিতে কারা যেন ককটেল বোমা মাড়ে।আর পুলিশ আমায় সন্দেহ করে থানায় ধরে নিয়ে আসে।কিন্তু বিশ্বাস করেন আমি এমন কাজ করি নি।আমার মা আমাকে এমন শিক্ষা দেয় নি।আমার মা হয়তো অনেক দু:শ্চিন্তা করছে আমার জন্য।আমার গ্রামের বাসা মানিকগজ্ঞে এক প্রত্যন্ত গ্রামে।পেটের দায়ে ঢাকায় এসে কাজ করি।জেলে বসে মায়ের সাথে কাটনো দিনগুলো আজ খুব মনে পড়ছে।
আমি আজ একজন যুবক তাও মা এর হাতে না খাইলে আমার পেটের ভাত হজমই হতো না।আমার গ্রামের সব ছেলেরই বিয়ে হয়ে গেছে।মা আমাক শুধু বিয়ে করার কথা বলতো কিন্তু আমি রাজি হতাম না।একদিন আমার মা একটা মেয়ের ছবি নিয়ে এসে বললো মিঠু বাপ আমার দেখ মেয়েটা কত সুন্দর।দেখ কত্তো বড় চুল তোর সাথে খুব ভালো মানাবে।বাপ এবারটি বিয়ে করে নে।তুই ঢাকায় চলে যাবি কামে আমি একা কি করে থাকবো।বয়স হয়েছে আমার।চোঁখে ভালো দেখি না।এই বয়সে কত কাজ করি তোর বউ থাকলে তার সাথে বসে গল্প করতাম,সে আমার রান্নার কাজে সাহায্য করত সময়টা একভাবে কেটে যেত।আমি বললাম মা তুমি যাই বলো আমি বিয়ে করবো না।তোমার আমার মাঝে যেই সম্পর্ক আছে মা ছেলের অন্যের ঘরের মেয়ে আসলে সেই সম্পর্ক থাকবে না আর মা।আমার কথা শুনে মা অনেক হতাশ হলো আর অভিমান করলো।তারপর যেদিন ঢাকায় যাওয়ার দিন ছিল মা আমার সাথে রাস্তা পর্যন্ত আসলো।অনেক কান্না করছিল মা। মা বললো মিঠু বাপ আমার তোর ব্যাগে মুড়ি গুর দিয়েছি রাস্তা পথে খেয়ে নিস আর সাবধানে থাকিস বাবা।তারপর আমি বিদায় নিলাম মায়ের থেকে।যতদূর আমাক দেখা যায় মা আমার দিকে তাকিয়ে ছিল।আমার মায়ের যে আমি ছাড়া কেউ নেই।মা কি করে থাকবে ভাবলাম ছুট্টে চলে যাই মায়ের কোলে কিন্তু বাস্তবতার কথা চিন্তা করে হেরে গেলাম।
আজ জেলে বসে এই কথাগুলোই মনে পড়ছে অনেক।মা যে আসলে কি জিনিষ বুঝলাম তারপর।আমার জেলে জাওয়ার খবর শুনে আমার মা সেই অস্থির হয়ে গেল।আমার মা বাসে করে ঢাকায় আসলো।হাটতে কষ্ট হয় চোখে কম দেখে তাও লোকজন কে জিজ্ঞেশ করে শাহাবাগ থানায় আসলো।এসে পুলিশ কে বললো বাবা আমার ছেলে নির্দোষ ওহ এমন কাজ করে নি ওরেহ ছেড়ে দাও।তুমিও তো আমার ছেলের মত মায়ের কোলে তার সন্তান কে ফিরিয়ে দাও বাবা।পুলিশ বললো দেখেন বুড়ি এভাবে তো ছেড়ে দেওয়া যায় না।আমাদের কিছু নিয়ম আছে আগে কোর্টে চালান করে দেই ওরে তারপর ছাড়ানোর চেষ্টা কইরেন।আমার মা অনেক মিনতি করলো পুলিশ আমার মায়ের আর কোনো কথাই শুনলো না।আমার মা মন খারাপ করে পুলিশ স্টেশনের বাইরেই বসে থাকলো।
হঠাৎ একটা লোক এসে আমার মাকে বললো আপনার কি হয়েছে এভাবে বসে আছেন কেন মা।মা সব খুলে বললো লোকটাকে।আরো বললো বাপ তুমি তো আমার ছেলের বয়সি তুমি আমার ছেলেকে ছাড়ানোর ব্যাবস্থা করে দিত পারবে বাবা।লোকটি বললো আমি আপনাকে সাহায্য করব।আমার চেনাজানা একজন উকিল আছে আপনি আসেন আমার সাথে।
লোকটি আমার মাকে নিয়ে একটা উকিল এর কাছে গেল।লোকটি উকিলকে সব খুলে বললো আমার বিষয়ে।মাও বললো লোকটাকে বাবা আমার ছেলে নির্দোষ ওহ কোনো দোষ করে নি ওরেহ ছাড়ানোর ব্যাবস্থা করে দাও বাবা।উকিলটি বললো আপনি চিন্তা কইরেন না।আমি তো আপনার ছেলের মতো আমি আপনার ছেলের জামিন করে দিব।এবার ওই লোকটি বললো চিন্তা কইরেন না উকিল সাহেব সব ব্যাবস্থা করে দিবে কিন্তু তার জন্য কিছু টাকা লাগবে।উকিল সাহেব এর ফিসটা দেওয়া লাগবে।আমার মা বললো কত টাকা লাগবে বাবা।উকিল বললো আপনি মা বয়সি আপনার থেকে বেশি নিব না আপনি পাঁচ হাজার টাকা দেন তাইলেই হবে।আমার মা বললো আমার কাছে এত টাকা নাই বাবা।দয়াকরে ফ্রিতে করে দাও বাবা।এবার ওই লোকটি বললো দেখেন সবকিছুর তো একটা নিয়ম আছে আপনার কাছে কত আছে এখন তাই দেন।আমার মা বললো তিন হাজার টাকা আছে।লোকটি বললো তাই দেন চলবে।এবার উকিলটি বললো মা আপনি এবার যান।চিন্তা কইরেন না আপনার ছেলের জামিন আমি করে দিবই।
তারপর আমার মা সেখান থেকে চলে গেল।কিন্তু আমার সহজ সরল মা এসব প্রতারক দের চিনতে পারে নি।আমার মা চলে যাওয়ার পর তারা দুজন সেই তিনহাজার টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়।আমার মা আবার পুলিশ স্টেশনে গিয়ে পুলিশ কে বলে বাবা আমার ছেলেকে ছেড়ে দাও।পুলিশ বলে আপনাকে বলছি না এভাবে সম্ভব না ছাড়া আমাদের কিছু নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।আমার মা তখন বললো বাবা কোনো উকিল আসে নি আমি যে ঠিক করলাম।পুলিশ বললো কই কেউ আসে নি তো।আপনি কোথাকার উকিল ঠিক করছেন।আমার মা সব খুলে বললো পুলিশকে।পুলিশ বললো ওটা উকিল না আপনারে ঠকাই আপনার টাকা নিয়ে ওরা পালাইছে।এখন আপনি যান তো আমাদের আর বিরক্ত করবেন না।
আমার মা পুলিশ স্টশন থেকে বেড়িয়ে আসে।তারপর রাস্তায় সেই লোকের সাথে দেখা হয় যে মাকে সেই ভণ্ড উকিলের কাছে নিয়ে যায়।সে মাকে দেখা মাত্র দৌড় দিয়ে পালিয়ে যায়।মা পিছন থেকে লোকটাকে চিৎকার করে ডাকে আর বলে চলে যাও কেন বাবা আমার ছেলেকে না তুমি বলেছিলে বাড় করবে জেল থেকে।কি হলো এখন চলে যাও কেন।লোকটি আমার মায়ের ডাক পাত্তা না দিয়ে চলে যায়।আমার মা অনেক কষ্ট পেয়ে রাস্তার এক কোনে বসে থাকে।
হঠাৎ একটি মেয়ে সেই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় আমার মা কে দেখে বলে আপনার কি হয়েছে এভাবে বসে আছেন কেন।সে আমার মায়ের কাছে বসে গায়ে হাত দিয়ে দেখে আমার মায়ের গায়ে অনেক জ্বর।সে বলে কি হয়েছে আপনার সব বলেন আমায়।আমার মা মেয়েটাকে সব খুলে বলে।মা বলে আমার ছেলের কোনো দোষ নাই।পুলিশ ওরে বিনা দোষে আটক করেছে।মেয়েটি বলে আপনি চিন্তা করবেন না আমই আপনার ছেলেকে বের করে আনবে।তারপর মেয়েটি মাকে সাথে নিয়ে তার হোস্টেলে নিয়ে যায়।
অনেক খারাপের মাঝেও যে একটা ভালো মানুষ আছে আমার মা তাকেই পেয়ে গেছে।মেয়েটি হোস্টলে নিয়ে গিয়ে আমার মাকে বলে আপনি কি খাবেন?মা বলে কিছু খাব না আমি আমার ছেলেকে পেলেই আমার সকল কষ্ট আমার মনের সকল তৃষ্ণা দূর হবে।মেয়েটি বললো এভাবে বললে তো হবে না আপনি অসুস্থ আপনাকে কিছু খেতে হবে।তারপর সে তার বান্ধবি কে বলে খাবার আনতে।পরেরদিন মেয়েটি মাকে নিয়ে পুলিশ স্টেশনে যায় আর সেই পুলিশকে বলে উনার ছেলে কোনো দোষ করে নি তাও ওরেহ গ্রেফতার করছেন কেন।আপনি ছেড়ে দিন উনার ছেলেকে।পুলিশ বলে এভাবে কিভাবে ছাড়বো আমাদের একটা নিয়ম আছে।আর এই যে বুড়ি আপনাকে বলছি তো এই কথা তাও আপনি অন্য একজন কে সাথে করে নিয়ে আসছেন।হঠাৎ আমার মা অজ্ঞান হয়ে যায়।শরীর দুর্বল জ্বর আমার জন্য এত ছুটাছুটি আমার মাকে ক্লান্ত করে দিয়েছে।তারপর মেয়েটি আমার মাকে নিয়ে তার হোস্টেলে নিয়ে গেল।মায়ের অনেক সেবা করলো।
মেয়েটি এবার তার বন্ধুদের জড় করে মাকে বসিয়ে মোবাইলে ভিডিও চালু করে আমার মাকে বলে সব খুলে বলতে বললো মায়ের সমস্যার কথা।মা বললো যারা আমাকে দেখছেন সবাইকে বলি আমার ছেলে দোষি নয়।সে ভার্সিটিটে ঝালমুড়ি,ফুচকা বিক্রি করতো।সেখানা কারা ককটেল বোমা মারে আর পুলিশ আমার ছেলেকে সন্দেহ করে ধরে নিয়ে যায়।আমার ছেলে যদি দোষ করে তাইলে তার শাস্তি হোক আমি চাই কিন্তু আমার ছেলে যে কোনো দোষ করে নি।আমি আমার ছেলেকে ভাল শিক্ষা দিয়েছি ওই কখনো এমন কাজ করবে না।আমার মা কান্না করতে করতে কথা গুলো বললো আর ভিডিও টি অনলাইনের কল্যাণে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লো সারাদেশের মানুষ তাহ দেখলো।
এবার মেয়েটি একটি ভাল উকিলের সাথে কথা বললো।মেয়েটি বললো এখন বলে ওনার ছেলেকে বাড় করা যাবে না।পুলিশ বলছিল কোর্টে চালান করে দিবে।উকিলটি বললো এখনতো জেলেই আছে বাহির করা যাবে আমি ওনার ছেলের জামিনের ব্যাবস্থা করে দিব।আজ এক মাস পর ছাড়া পেলাম।এই এক মাস যেন আমার কাছে এক বছর মনে হয়েছে।অনেকদিন পর মায়ের সাথে দেখা হবে আমার মাকে দেখবো যে আমার জন্য কত কষ্ট করেছে।
জেলের সেল থেকে বাহিরে এলাম তাকিয়ে দেখি জেলের একটা কাঠের বেঞ্চিতে বসে ঝিমুচ্ছে আমার মা।মাকে দেখে চোঁখের কোণে জমে থাকা পানি এবার অঝোর ধারায় ঝরে পড়তে লাগলো।মাকে ডাক দিয়ে বললাম মাগো তাকিয়ে দেখো তোমার মিঠু দাঁড়িয়ে আছে তোমার সামনে।মা চোখ খুললো আমাকে দেখে মা কান্না শুরু করে দিল আমাকে জড়িয়ে ধরলো।আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করতে লাগলো আমিও কান্না করছি।যে মেয়েটা আমাকে সাহায্য করলো বেড় হতে সে ও তার বন্ধুরা,উকিল,এমনকি যেই পুলিশ মাকে বাড়বাড় তাড়িয়ে দিয়েছে সেও কান্না করতে লাগলো।মা সেই মেয়েটিকে ও জড়িয়ে ধরলো।সেই পুলিশটি কেও মা মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।তারপর সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমি আর মা আমাদের গ্রামের দিকে রওনা দিলাম।
মা একটি ছোট্ট শব্দ কিন্তু এর গভিরতা যে কত বড় তাহ আজ আমি আমার মাকে দেখে বুঝলাম।শুধু আমার মা নয় প্রথিবীর সব মা তার সন্তানদের জন্য সবকিছু করতে পারে।তাই সকল মায়ের প্রতি আমার রইলো অনেক অনেক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
দুপাশে কাশফুল, মাঝখানে মেঠো পথ,বিকেল হয়ে গেছে হালকা বাতাসে কাশফুল গুলো দোলা খাচ্ছে,সূর্য আস্তে আস্তে পশ্চিম দিগন্তে হেলে যাচ্ছে তার মাঝে আমি আর আমার মা আমাদের বাসার দিকে হেটে যাচ্ছি।????
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
Farhan Hossain
User ৩ বছর, ১১ মাস পুর্বেSHUVO SUTRADHAR
Golpobuzz ৩ বছর, ১১ মাস পুর্বেSIAM The Deadman
User ৩ বছর, ১১ মাস পুর্বে