বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

ধাপ্পাবাজ(৪)

"উপন্যাস" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান জাহিন আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (০ পয়েন্ট)

X ধাপ্পাবাজঃ ক্রমিক-৪ গতদুই বছর যাবত আমার কাছে ইশারা আসছিল, যদি এই বাহিনী তাদের পাপ কাজ বন্ধ না করে, তবে শীঘ্রই তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। অদৃশহ থেকে এই খবর বার বার আমার কানে আসছিল, কিন্তু আফসোস, যার জন্য এই বাণী, তিনি তার ঘরের দরজা বন্ধ করে রেখেছিলেন, অনেক চেষ্টা করেও আমি তার সাথে দেখা করতে পারিনি। ফলে আল্রাহর অনিবার্য গজব ঘিরে ফেলল তাকে এবং তার বাহিনীকে। যে সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী আল্লাহর রহমতের বদৌলতে সকল যুদ্ধক্ষেত্রেই ছিলেন অপরাজেয়, খৃস্টানরা যাকে যুদ্ধের দেবতা বলতো, তিনি জ্ঞান-বুদ্ধি এমন ভাবে হারালেন যে, তিনি যুদ্ধের সকল চাল ভুলে গেলেন। আর তারই রণকৌশল শত্রুরা গ্রহণ করে তাকে চরমভাবে পারজিত কলো। পরাজয়ের কলঙ্ক নিয়ে তিনি একাকী মিশরে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হলেন।’ ‘আমরা এই পরাজয়ের প্রতিশোধ নেবো।’ একজন আবেগপ্রবণ গাম্য লোক বললো, ‘খৃস্টানদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে। বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আমরা লাড়াই করতেই থাকবো। দরকার হলে আমি আমার সন্তানকেও আল্লাহর পথে কোরবান করে দেবো।’ ‘জয় ও পরাজয় সবই আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়?’ হুজুর বললেন, ‘যারা এ কথা বিশ্বাস করে না, তারা মুসলমান থাকতে পারে না। যদি তোমরা মুসলমান হও তবে তোমাদের বিশ্বাস করতে হবে, আল্লাহর হুকুম ছাড়া গাছের একটি পাতাও নড়ে না। সেই আল্লাহই আইয়ুবী ও তার বাহিনীর ভাগ্যে পরাজয় লিখে রেখেছেন। সারা দুনিয়া এক হয়ে চেষ্টা করলেও আল্লাহর ফয়সালা কেউ পরিবর্তন করতে পারবে না। আমি এ কথা বলতেই তোমাদের কাছে এসেছি, মিশরের প্রতিটি শিশুও যেন প্রতিশোধ নিতে প্রস্তুত হয়। কিন্তু আইয়ুবীর বাহিনীতে শামিল হয়ে এ প্রতিশোধ নেয়া যাবে না। কারণ তাদের শাস্তির মেয়াদ এখনও শেষ হয়নি। তোমরা যদি এখন তোমাদের সন্তানদের সেনাদলে ভর্তি করে সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধের ময়দানে পাঠিয়ে দাও, তবে তারা অকাতরে মারা পড়বে। তারা সকল ময়দানেই পরাজয়ের পর পরাজয় বরণ করবে। সব কাজের জন্যই একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারিত আছে। সে সময় না এলে যতই চেষ্টা করো সে কাজটি তুমি সমাধা করতে পারবে না। তুমি ইচ্ছে করলেই যখন তখন খেজুর গাছে খেজুর ফলাতে পারবে না। আজ বিয়ে করে কালই তুমি সন্তানের বাপ হতে পারবে না। তেমনি খৃস্টানদের পরাজিত করার জন্যও আমাদেরকে উপযুক্ত সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এখনও সে সময় আসতে অনেক দেরী। আল্লাহ বার বার মুমিনদের ধৈর্য ধরার তাগিদ দিয়েছেন। তোমরা যদি সেই ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারো তবেই তোমরা পরাজয়কে বিজয়ে রূপান্তরিত করতে পারবে। এখন সবার আগে তোমরা আল্লাহকে স্মরণ করো। তার কাছে তোমাদের পাপের জন্য ক্ষমা চাও। ক্ষমা চাও তোমাদের সেই সব সন্তানদের জন্য, যারা আল্লাহর ক্রোধের শিকার হয়ে গেছে। যতক্ষণ আইয়ুবী ও তার বাহিনীর পরিবর্তে নতুন কোন শক্তি ময়দানে না আসবে, ততক্ষণ তোমাদের দুর্ভাগ্যের রজনী কোনদিন শেষ হবে না।’ ০ ‘পরাজয়ের যাবতীয় দায়িত্ব তোমরা আমার উপর অর্পণ করো! সুলতান আইয়ুবী বললেন। তিনি তাঁর সেনাপতি, সহ-সেনাপতি, কমাণ্ডার ও প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন। তিনি বললেন, ‘পরাজয়ের কারণগুলো খুবই স্পষ্ট। আমার সবচেয়ে বড় ভুল, আমি নতুন ভর্তি করা অনাড়ি সৈন্যদের নিয়ে যুদ্ধ করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু যদি আমি বেশী দেরী করতাম বা মিশরে বসে অপেক্ষা করতাম, তবে শুত্রুরা একের পর এক আমাদের সব কেল্লা ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে তা দখল করে নিতো। আমি সৈন্যদের যে ঘাটতি নতুন ভর্তি সৈন্য দিয়ে পূরণ করেছিলাম, তোমরা ভাল করেই জানো, সে জন্য দায়ী কারা। কিন্তু আমি এখন কোন ভুলের দায়িত্ব কার উপর বার্তায় এ নিয়ে বিতর্ক করে সময় নষ্ট করতে চাই না। যদি ভুলের অপরাধ চাপাতে চাও, তবে আমার উপরে চাপাও। কারণ সৈন্যদের কমাণ্ড আমি করেছি। যদি চালে ভুল থাকে তবে সে ভুলও আমার। সে ভুলের কাফফারা আমাকেই দিতে হবে এবং আমিই সেটা পুরণ করবো। জয় ও পরাজয় প্রত্যেক যুদ্ধেরই একটা অনিবার্য পরিণতি। এখন আমি সেই পরিণতির শিকার হয়েছি, যা আমাদের কাঙ্খিত ছিল না। এমন পরিণতির জন্য তোমরাও মানসিক দিক থেকে প্রস্তুত ছিলে না। তাই তোমাদের চেহারায় হতাশার ছাপ। যদি তোমরা আমাকে পরাজয়ের জন্য শাস্তি দিতে চাও, সে শাস্তি মাথা পেতে নেয়ার জন্য আমি প্রস্তুত। আমার কানে এ কথাও এসেছে, আমার সৈন্যরা নারীদের সম্ভ্রম নষ্ট, লুটপাট ও মদপানে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। কেউ কেউ এ কথাও বলেছে, বাগদাদের খলিফার উপর বিভীষিকা আরোপের জন্য আমি স্বেচ্ছায় পরাজয় বরণ করেছি। কেউ আবার আমাকে অহংকারী ফেরাউন বলে অভিহিত করেছে। আমি এসব অভিযোগের কোন উত্তর দেবো না। এসব দোষারোপের জবাব দেবে আমার তলোয়ার। এবং শীঘ্রই তা দেবে। আমি কথায় নয়, কাজে প্রমাণ করবো, এ পাপ কে করেছিল, যার শাস্তি আমাকে ও আমার সেনাবাহিনীকে নিতে হচ্ছে।’ আইয়ুবীর বক্তব্য তখনো শেষ হীয়নি, প্রহরী ভেতরে ঢুকে এক অফিসারের কানে কানে কিছু বললো। অফিসার উঠে আউয়ুবীর কাছে গিয়ে আস্তে করে বললো, ‘হিম্মত থেকে কাসেদ এসেছে।’ সুলতান আইয়ুবী কথা থামিয়ে জলদি তাকে ভেতরে নিয়ে আসতে বললেন। ধূলোবালীতে একাকার ও পথযাত্রায় ক্লান্ত শ্রান্ত কাসেদ সুলতান আইয়ুবীর সামনে এসে তকিউদ্দিনের চিঠি হস্তান্তর করলো। সুলতান আইয়ুবী চিঠিটি খুলে পড়তে শুরু করলেন। উপস্থিত সকলে তাকিয়েছিল সুলতান আইয়ুবীর চেহারার দিকে। তার চেহারা ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তিত হচ্ছিল। কখনো উদ্ভাসিত হয়ে উঠছিল আনন্দে, কখনো বিমর্ষতা গ্রাস করছিল সেই মুখ। তিনি চিঢিটি পড়ে শেষ করলেন। তার চোখে তখন অশ্রু টলমল করছে। এ অশ্রু আনন্দ না বেদনার উপস্থিত কেউ তা জানে না। তারা অভিভূত হয়ে দেখছিল সুলতানকে। তিনি পত্রটি এক সেনাপতির হাতে দিয়ে বললেন, ‘এ চিঠি সকলকে পড়ে শোনাও।’ সেনাপতি পত্র পাঠ করতে শুরু করলো। যতই সে এগুচ্ছিল ততই আবেগ এসে চেপে ধরছিল তার কণ্ঠ। তার সে আবেগ সংক্রমিত হচ্ছিল ভর জলসায়। উপস্থিত সকলের চোখই অশ্রুসজল হয়ে উঠলো। চিঠি পড়া শেষ হলো সেনাপতির। দেখা গেল প্রায় সবার চোখ থেকেই গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু। সেই কান্নাকাতর কম্পিত কণ্ঠে কেউ একজন কোনরকমে উচ্চারণ করলো, ‘জিন্দাবাদ।’ সঙ্গে সঙ্গে আরো অনেকের সম্মিলিত আওয়াজ শোনা গেল, ‘জিন্দাবাদ! জিন্দাবাদ!’ ‘এওতো অপরাধী ও পাপীদের কৃতিত্ব!’ সুলতান আইয়ুবী বললেন, ‘তোমরা যারা কায়রো আছো, তারা জানো না তকিউদ্দিনের কাছে কি পরিমাণ সৈন্য ছিল। তোমরা এটাও জানো না, বিলডনের বাহিনী ছিল দশ গুণেরও বেশী। তার অশ্বারোহী ও পদাতিক উভয় বাহিনীই ছিল বর্মাচ্ছাদিত। তকিউদ্দিনের সৈন্যরা কি প্রমাণ করে দিল না, আমরা পরাজয়কে বিজয়ে রূপান্তরিত করতে পারি? এখনও কি তোমরা মনে করো, মাথায় হাত দিয়ে আমাদের বসে থাকতে হবে?’ সমস্বরে সবাই বলে উঠল, ‘না।’ ‘তাহলে এবার তোমরা যুদ্ধের প্রস্তুতিতে লেগে যাও। প্রবল উৎসাহে নতুন সৈন্য ভর্তি করো। মুসলমানদের প্রথম কেবলা তোমাদের ডাকছে। আমি শত্রুদের সাথে কোন আপোষ-মীমাংসা বা চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে রাজি নই।’ তকিউদ্দিনের সামান্য একটি পত্রই সুলতান আইয়ুবী ও তার সৈন্যদের মনোবল বাড়িয়ে দিল। তাঁর সেনাপতি ও কমাণ্ডারদের আহত মনোবল তরতাজা করে দিল। যুদ্ধে পরাজয় এবং বেশুমার গুজবের ফলে অনেকের মনে সুলতান আইয়ুবী ও তাঁর সেনাবাহীনির বিরুদ্ধে সন্দেহ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল। এই পত্র সেই ক্ষোভ ও দুঃখ ধীরে ধীরে ধুয়ে মুছে সাফ করে দিল। তকিউদ্দিন বসে ছিলেন না। তিনি তার বাহিনীকে ত্রিশ-চল্লিশ জনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত করে দিলেন। এসব খণ্ড দলগুলোকে আলাদা আলাদা ভাবে পাঠিয়ে দিলেন বিলডনের বাহিনী যেখানে গিয়ে ক্যাম্প করেছে সেখানে। এইসব বাহিনীকে তিনি বললেন, ‘কখনোই শক্তি ক্ষয় করবে না। ঝটিকা কমাণ্ড আক্রমণ চালাবে এবং চকিতে পালিয়ে আসবে। শত্রুকে সব সময় সন্ত্রস্ত রাখবে, যাতে তারা অভিযান চালাতে না পারে, আবার শান্তিতেও বসে থাকতে না পারে।’ এরই মধ্যে বিলডনের বাহিনীর অনেক ক্ষতি হয়েছিল। তিনি এই আশা নিয়ে বিশাল বাহিনীসহ অভিযানে বেরিয়েছিলেন যে, তিনি দামেশক পর্যন্ত সমগ্র এলাকা তার অধিকারে নিয়ে নেবেন। কিন্তু তার সে আশা কল্পনা হয়ে উঠে গেল আকাশে। এখন তার অবস্থা এমন হলো, প্রত্যেক রাতেই কোন না কোন ক্যাম্পে তকিউদ্দিনের সৈন্যরা কমাণ্ডো আক্রমণ চালাতে লাগলো। এতে দিনদিনই তার ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে চলল। বিলডন তার সৈন্য দলকে রাতে পাহারা জোরদার করার হুকুম দিল। তকিউদ্দিনের কমাণ্ডো বাহিনীকে ধরার জন্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল ছড়িয়ে দিল বিভিন্ন দিকে। কিন্তু তাতে খুব লাভ হল না। প্রতি দিনই সকালে বিলডনকে শুনতে হয়, আজ রাতে অমুক ক্যাম্পে আক্রমণ হয়েছিল, অমুক ক্যাম্প আজ রাতে লুট হয়ে গেছে। বিলডন পালিয়ে গিয়ে যেখানে আশ্রয় নিয়েছিল, সে এলাকাটা ছিল পাহাড়ী পার্বত্য অঞ্চল। এতে বিলডনের চাইতে তকিউদ্দিনের কমাণ্ডো বাহিনীরই সুবিধা হলো বেশী। কিন্তু যুদ্ধ যুদ্ধই। কমাণ্ডো আক্রমণের জন্য তকিউদ্দিনকেও কম মূল্য দিতে হচ্ছে না। এমনিতেই তার বাহিনী ছোট। তার ওপর প্রতি রাতেই কমাণ্ডো আক্রমণ চালাতে গিয়ে দিন দিন তার সৈন্য সংখ্যাও অল্প অল্প করে কমে যাচ্ছিল। কমাণ্ডো আক্রমণ চালিয়ে তারা যখন শত্রু ক্যাম্পের ভেতর চলে যেত, তখন ফেরার পথে দেখা যেতো তাদের কোন না কোন সৈনিক শহীদ হয়ে গেছে। তকিউদ্দিনের হাতে এমন সংখ্যাক সৈন্য ছিল না যে, তিনি কোন এলাকা দখল করে নিজের করায়ত্বে রাখতে পারেন। আবার এমন অবস্থাও ছিল না, শত্রুকে তার অবস্থান থেকে বিতাড়িত করতে পারেন। তাই এ কমাণ্ডো হামলা করা ছাড়া তার আর কিছুই করার ছিল না। এই কমাণ্ডো হামলার উপকার মোটেই তুচ্ছ ছিল না। কমাণ্ডোদের ভয়েই বিলডন কোন দিকে অভিযান চালাতে পারছে না। যদি বিলডন অগ্রাভিযান চালাতো তবে তকিউদ্দিনের এউ ক্ষূদ্র বাহিনী তাদের সামনে বেশী সময় টিকতে পারতো না। কিন্তু বিলডন জানতো না , তকিউদ্দিনের হাতে কি পরিমাণ শক্তি অবশিষ্ট আছে। তকিউদ্দিন আরো একটি কাজ করলেন। বিলডনের রসদপত্র সবই তিনি দখল করে নিলেন। বিলডন বাধ্য হয়ে খাদ্য ও অন্যান্য সামগ্রী ক্রয়ের জন্য স্থানীয় লোকদের দ্বারস্থ হলেন। এই সব সামগ্রী সরবরাহকারীদের মধ্যে তকিউদ্দিন গোয়েন্দা ঢুকিয়ে দিলেন। তারা শত্রুদের সর্বশেষ অবস্থাও প্রতিদিনই তকিউদ্দিনকে জানিয়ে দিতে লাগল। একদিন এই গোয়েন্দারের একজন শত্রুদের বিরাট খড়ের গাদায় আগুন ধরিয়ে দিল। এই খড় তারা সংগ্রহ করেছিল তাদের ঘোড়া ও উটের জন্য। এভাবেই চলছিল তকিউদ্দিনের অপারেশন। একদিন তকিউদ্দিন সংবাদ পেলেন, দামেশক থেকে সামান্য সৈন্য ও কিছু রসদ আসছে। হলব থেকে কোন সাহায্য পাওয়অর আশা তাকে ত্যাগ করতে হলো। আল মালেকুস সালেহ পত্রের উত্তরে লিখলো, ‘সম্রাট ফ্রাঙ্ক হারান দুর্ঘ অবরোধ করতে চান। যদি তিনি তাই করেন, তবে বাধ্য হয়ে হলবের সৈন্যদেরকে তার মোকাবেলা করতে হবে। এই অবস্থায় আপনার সাহায্যে এখন কোন সৈন্য পাঠাতে অপারগ আমি।’ ০ কমান্ডো বা গেরিলা অপারেশনে তকিউদ্দিনকে অনেক বেশী মূল্য দিতে হচ্ছিল। কিন্তু তার বাহিনীর মনোবল ও জোশ এমন ছিল, কোন বিপদকেই তারা পরোয়া করতো না। ডিউটির ব্যাপারে তার সৈন্যরা ছিল সজাগ ও সতর্ক। এক মুহূর্তের জন্যও তারা ময়দান থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখতে প্রস্তুত ছিল না। অধীকাংশ সৈন্য ক্রমাগত জঙ্গল, পাহাড় ও প্রান্তরে ঘুরে ঘুরে খুঁজে বেড়াতো দুশমন এবং তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার একটু সুযোগ। এমনকি তারা জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ক্যাম্পেও ফিরে আসতে চাইতো না। তারা চিতাবাঘের মতই শিকারের অন্বেষণে ব্যস্ত থাকতো। আর হাতের কাছে শিকার পেলে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তো চিতাবাঘের মতই ক্ষীপ্র ও বেপরোয়া। এতে তাদের জীবনের নিরাপত্তা আদৌ আছে কিনা সে কথা কেউ চিন্তা করতো না। তারা এতটাই বেপরোয়া ছিল যে, বিপদের ঝুঁকি নিয়ে তাদের মনে কোন দুঃখ বা চিন্তা ছিল না। তাদের মাত্র একটাই লক্ষ্য, কেমন করে শত্রুর অধিক থেকে অধিকতর ক্ষতি সাধন করা যায়। দুশমনের মোকাবেলা করতে গিয়ে যদি তাদের জীবন যায় কিংবা গুরুতর আহত হতে হয়, তাহলে তাকে তারা বিপদ মনে না করে নিজের ওপর আল্লাহর রহমত মনে করতো। ভাবতো, আল্লাহ তাকে তার দ্বীনের জন্য কবুল করে নিয়েছেন। এভাবেই তাদের রাতগুলো ময়দানে ও নির্জন পাহাড়ে, অরণ্যে অতিবাহিত হতো। ক্রুসেড বাহিনীর বিরুদ্ধে তারা এতটাই মারমুখী হয়ে উঠেছিল যে, সময় মত নাওয়া খাওয়ার কথাও তারা প্রায়ই ভুলে যেতো। ওদিকে কায়রোর অবস্থা ছিল ভিন্নরূপ। কায়রো ও তার আশপাশে এলাকাগুলোতে গুজবের তুফান বইছিল। কে যে এই গুজব ছড়াচ্ছিল তা সনাক্ত করা যাচ্ছিল না। কারণ কম-বেশী সবাই গুজব ছড়াচ্ছিল। কেউ ছড়াচ্ছিল বুঝেশুনে আবার কেউ ছড়াচ্ছিল না বুঝে। কেউ কেউ এমনও ছিল, গুজব থামাতে গিয়ে সে আরো বেশী করে ছড়িয়ে দিচ্ছিল গুজব। যেমন, কারো সাথে দেখা হলো, আর সে লোকটিকে বলে দিল, ‘আর যাই বলো, আইয়ুবীর সৈন্যরা নারীদের ওপর হাত তুলেছে, এ কথা আমি বিশ্বাস করি না।’ যে লোকটি এই কথা শুনলো, হয়তো আইয়ুবীর সৈন্যরা নারীদের ওপর হাত তুলেছে এ অভিযোগটিই সে উতিপূর্বে শোনেনি। অভিযোগটি বক্তার মত সএো বিশ্বাস করেনি, তাই ক্ষিপ্ত হয়ে সে তার পরিচিত কাউকে গিয়ে বললো, ‘আচ্ছা, মানুষের আক্কেলটা কি বলো দেখি! একটা যুদ্ধে না হয় হেরেই গেছে, তাই বরে তারা নারী নির্যাতন করেছে ্মন মিথ্যা অভিযোগ কিভাবে মানুষ া্ইয়ুবীর ওপর আরোপ করে, বলো দেখী?’ এভাবে তৃতীয় ব্যক্তিটিও জেনে গেল আইয়ুবীর ওপর আরোপিত একটি মথ্যা অভিযোগ। এভাবে আইয়ুবীর বিরুদ্ধে গুজব ও অপ্রপ্রচার খুব জোরেশোরেই চলছিল। যে গুজবটি খুব তোড়েজোড়ে চলছিল তাহলো, মুসলিম মুজাহিদরা এখন পাপিষ্ট ও বিলাসপ্রিয় হয়ে গেছে। রমলার পরাজয় তাদের সে পাপের শাস্তি। কায়রো ইন্টেলিজেন্স এসব গুজবের উৎপ্তিস্থল আবিষ্কারের জন্য হন্যে হয়ে ছুটাছুটি শুরু করল। এই গুজব কোথা থেকে উদয় হয় জানা নেই কারো। গোয়েন্দারা অনেক ভেবে দেখল, নতুন সৈন্যদের অসাবধান কথাবার্তা থেকে এসব গুজব জন্ম নিতে পারে। আর পারে শত্রুদের সুরপরিকল্পিত তৎপতরার মাধ্যমে। দুশমনদের এজেন্টরা কোথায় ঘাপটি মেরে আছে জানা নেই আমাদের। এই গুজবের উৎস খুঁজে বের করার জন্য অন্তত একজন এজেন্ট এখন হাতে পাওয়া দরকার। আইয়ুবীর পক্ষ থেক নতুন সৈন্য ভর্তি করার ঘোষণা প্রচার করা হলো। আশা করা গিয়েছিল, পরাজয়ে প্রতিশোধ নিতে জেহাদের জযবা নিয়ে অনেকেই নতুন করে সেনাবহিনীতে ভর্তি হওয়ার জন্য ছুটে আসবে। কিন্তু দেখা গেল, জনতার মধ্যে জেহাদের সেই প্রেরণা নেই। সেনাবাহিনীতে ভর্তি হওয়ার জন্য দলে দলে লোক ছুটে আসার পরিবর্তে জনতার মধ্যে বিরাজ করছে এক ধরনের অনাগ্রহ ও অনীহা। কিন্তু পরাজয়ের আগে মিশরের জনমনে এমন ভাব ছিল না। আইয়ুবী বুঝলেন, জনগণের এ অনাগ্রহের পেছনে কাজ করছে গুজবের ঘুনপোকা। এই পোকা সবার অলক্ষ্যে সমাজদেহকে ভেতর থেকে খেয়ে নিঃশেষ করে ফেলছে। যদি অচিরেই এ পোকা নিধন করা না যায় তবে যে কোন সময় তাসের ঘরের মতই এ সমাজ তছনছ হয়ে যাবে। গাজী সালাহউদ্দিন আইয়ুবী পরিস্থিতির নাজুকতা উপলব্ধি করে শিউরে উঠলেন। তিনি আবার তলব করলেন গোয়েন্দা প্রধান আলী বিন সুফিয়ান ও পুলিশ প্রধান গিয়াস বিলকিসকে। তাদের সামনে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে বললেন, ‘যে কোন মূল্যে এই গুজবের তুফান ঠেকাও, নইলে কোন কাজই সুষ্ঠুভাবে আঞ্জাম দেয়া সম্ভব হবে না।’ চিন্তিত মনে কামরা থেকে বেরিয়ে এলেন আলী বিন সুফিযান। তাঁর চৌকস গোয়েন্দা কমাণ্ডারদের ডেকে বললেন, ‘শহর নয়, শহরের আশপাশের গ্রামগুলোতে তীক্ষ্ণ নজর ফেলো। এটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। কেউ বা কোন সংঘবদ্ধ চক্র এ গুজব ছড়াচ্ছে। কেন ছড়াচ্ছে তা আমরা জানি, কিন্তু কারা ছড়াচ্ছে তা জানি না। এ অবস্থা চলতে দেয়া যায় না। অবশ্যই এই দুষ্কৃতকারীদের খুঁজে বের করতে হবে। আজ, এখন, এই মুহূর্ত থেকে এর হদিস না পাওয়া পর্যন্ত কারো ঘরে ফরা হারাম। গ্রুপ হবে মাত্র দু’জনের পালা করে চব্বিশ ঘন্টা ডিউটি অব্যাহত রাখতে হবে। তোমরা গ্রুপ ঠিক করে নাও এবং এলাকা নির্দিষ্ট করে কাজে নেমে পড়ো।’ তিনি বললেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, তোমরা যদি পরিপূর্ণ একাগ্রতার সাথে কাজে লাগতে পারো নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করবেন। সুলতান বড় অস্থির অবস্থায় আছেন। তোমরা সফল হরেই কেবল তার অস্থিরতা কমতে পারে।’ এক কমাণ্ডার বললোন, ‘আপনি দোয়া করুন, আল্লাহ সহায় হলে আগামী চব্বিশ ঘন্টার ভেতরই আমরা সুলতানের পেরেশানী দূর করার দাওয়াই নিয়ে আপনার কাছে হাজির হয়ে যাবো। চৌকস গোয়েন্দারা এবার চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো। আলী শহল এবং শহরের আশপাশের গ্রামগুলোতে জালের মত বিছিয়ে দিলেন তার গোয়েন্দাদের। দিন চলে গেল, কিন্তু একজন গোয়েন্দাও নতুন কোন সংবাদ নিয়ে ছুটে এলো না তার কাছে। সুলতান আইয়ুবী এবং তার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে দুর্ণাম ছড়ানোও বন্ধ হল না। (চলবে)


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৩৫৫ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now