বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
আমাদের নৌকাটি হঠাৎ করে ঢুলে উঠল।নৌকায় আমি আর আমার সহকারী আলেয়া।যাচ্ছিলাম চর গজারিয়া।উদ্দেশ্য জলদস্যুদের উপর একটা রিপোর্ট তৈরি।
শুনেছি,জলদস্যুরা এই এলাকায় খুব উৎপাত চালায়।
নৌকার পাটাতনে শুয়ে ঝিমুচ্ছিলাম।হঠাৎ,এই ঝাঁকুনি।
'আলেয়া...আলেয়া....'
কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে চোখখুলে বসতেই.... অবাক হয়ে গেলাম।আমাদের নৌকাটিকে ঘিরে তিনটে নৌকা।
আমি উঠেছি দেখে আলেয়া ধড়ফড় করে এসে জোরে চিল্লিয়ে বলল-"স্যার।"
আমি আলেয়ার দিকে মুখ ফেরাতেই গম্ভীর কন্ঠে হাতের বাঁ দিক হতে শব্দ উঠল-"চুপ শালী।খুলি উড়ায় দিমু।"
বোঝার বাকি রইল না।আমরা জলদস্যুর কবলে পড়েছি।
ভয়ে,আতঙ্কে গলা শুকাচ্ছে আর আমি সাত-পাঁচ ভাবছি।হঠাৎ আলেয়া ফিসফিস করে বলল-'স্যার।আপনাকে জড়িয়ে ধরি।ভয় লাগছে।'
মনে মনে বললাম-হায়।চ্যানেল কর্তৃপক্ষ এ কি জিনিস দিল আমার সাথে।
আলেয়া অনুমতি দেয়ার আগেই আমার গলা ধরে বসে রইল।
এরকম চিত্র দেখে সারেং বাবাজি ফিক করে হেসে উঠলেন।যেন সিনেমার মিলন দৃশ্য।
সাথে সাথে শূন্যে গুলির আওয়াজ।তারপরই শোনা গেল-"শুয়োরের পুতেরা।মজায় আছস নাকি?হাসে কেডা?"
সারেং মহোদয়ের খুব মাইন্ডে লাগল।তিনি উঁচু গলায় বললেন,"অই গালি দিবি না।গালি দিলে কিন্তু ভাল অইব না...
"কি কইছস শুয়োরের পুত....অই কে আছস...."
সারেংকে ধরে নিয়ে গেল এবং মিনিট পাঁচেক পর তাকে ফিরিয়ে দেয়া হল।সারেং দু হাতে গাল ধরে বসে আছেন।
আলেয়া আমাকে আরও শক্ত করে চাপ দিল।
আমি খোদার কাছে এহেন চাপ হতে আশু মুক্তির আবেদন করছি।কোন শব্দ নেই।ডাকাতরাও কিছু বলছে না।কেবল নদীর পানি নৌকার সাথে ধাক্কা মারছে।আলেয়া ঘুমিয়ে পড়েছে।তার মৃদু শব্দে নাক ডাকার আওয়াজ কানে আসছে।
*
আলেয়ার ধাক্কাধাক্কিতে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার সামনে মোটা সোটা এক লোক বসে আছেন।সূর্য উঠেছে।
আমি আধশোয়া অবস্থা হতে উঠে বসতেই মোটা সোটা লোকটি বলে ওঠল-
"চরে কি?সাংবাদিক না পর্যটক?"
লোকটার কথা বার্তা পুরো শুনে বুঝলাম,শিক্ষিত।
বললাম-"পর্যটক।"
"হু।তাই ভাল।তো ক্যামেরা কেন লগে?"
"এই টুকটাক ছবি তুলি।"
এরপর হাতের ইশারায় কি যেন বললেন।সাথে সাথে আমাদের টাকা-পয়সা-জিনিসপত্র সব দু মিনিটের মধ্যে একত্রিত করা হল।
ডাকাত সর্দার আমার দিকে তাকিয়ে বলল-"তোমার বাবার নাম কি?"
মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল।আরে ব্যাটা, ডাকাতি করতে এসেছিস ডাকাতি কর।ফ্যামিলি ড্রামা কেন?
বললাম-"আলী বাবা।"
"কি বললে?আলী বাবা?"
"জ্বি।আমার নাম আলাদীন।"
ডাকাত সর্দার কোঁকানো শুরু করলেন।তারদেখা দেখি সকল সাগরেদও কাঁদতে লাগল।
আলেয়া কানে কানে ফিসফিস করে বলল-আপনার নাম তো স্যার আলাদীন না।
ডাকাত সর্দার কান্না ভেজা কন্ঠে আমাদের দিকে তাকাল।আলেয়া সরে বসল।
বলল-"জান,আমার নাম কি?"
উত্তরের অপেক্ষা না করেই বলল-"আলীবাবা।তোমার বাবার নামে নাম।"
তারপর আবার কান্না।আলেয়া আবার কানের কাছে এসে ফিসফিস করছে।
"সত্যি কি আপনার বাবার নাম আলীবাবা?"
"হুম।সত্যি।তোমার কোন সমস্যা?"
"না।স্যার।"
ডাকাত সর্দার উঠে দাঁড়ালেন।নিজের নৌকায় আমাদের নিয়ে যেতে সাগরেদ দের হুকুম দিলেন।
আলেয়া আমার হাত চেপে ধরল।আমি তার দিকে রাগ রাগ চোখে তাকালাম।
আলেয়া সে দৃষ্টি উপেক্ষা করে বলল-"স্যার।ভয় লাগছে।"
নৌকার পাটাতনে মাদুর পাতা হল।সদ্য রাঁধা ভাত থেকে ধোঁয়া উড়ছে।ইলেশের অকৃত্রিম গন্ধ পাচ্ছি।
ক্ষুধা বেড়ে গেল।
ডাকাত সর্দার বসার ইঙ্গিত দিলেন।আমি সর্দারের ঠিক পাশেই বসলাম।আমার পাশে এক ডাকাত।
আলেয়া দাঁড়িয়ে আছে দেখে ডাকাত সর্দার বললেন,"বৌমা।এসো। আলাদীনের পাশে বস।"
আলেয়া প্রায় উড়ে এসে আমার পাশে বসল।
খুব ক্ষুধার্ত থাকায় ধুপধাপ গিলছি।ডাকাত সর্দার তার গল্প বলছে।কিছু কানে ডুকছে,কিছু কানে ডুকে বের হয়ে যাচ্ছে।
হঠাৎ একটা কথা শুনে আমার কান খাড়া হয়ে গেল-"...বছর কয়েক আগে পুলিশের সাথে গোলাগুলির সময় আমার ছেলে মারা যায়।তার নামও ছিল আলাদীন..."
*
সেই ডাকাতদের আতিথেয়তায় তিনদিন ট্যুর করে এবার ফেরার পালা।ফেরার সময় আমায় অবাক করে দিয়ে,ডাকাত সর্দার আলীবাবা আমার মাথায় হাত বোলালেন।আবার যেন আসি সে অনুরোধ করলেন।আলেয়াকে ও মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।আলেয়া ডাকাত সর্দারকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল।
ফেরার সময় বাসে আলেয়া দেখি ফোঁস ফোঁস করে কাঁদছে।আমি তাকাতেই আমাকে জড়িয়ে ধরল।
এই প্রথম আলেয়াকে আমারও জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করল।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
ফরহাদ নানা
User ৪ বছর পুর্বেআহনাফ জাহিন
Golpobuzz ৪ বছর পুর্বে