বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
!
!
খুব সম্ভবত পরির সাথে আজ আমার শেষ দেখা৷ খানিক বাদেই পরি গম্ভীর মুখ নিয়ে হাজির হবে আমার সামনে৷
আমার হাতে দু'টো তাজা গোলাপ৷ ফ্রি তে পেয়েছি৷ ইচ্ছে ছিল, শেষ দেখায় পরির জন্য স্পেশাল কিছু আনবো৷
মেসে মিলের টাকা আর বোনের কলেজ ফি দিয়ে পকেটটা ফাঁকা পড়ে আছে৷
!
একটা ৫০টাকা নোট আছে পকেটের কোণে৷ তা দিয়ে গোলাপ কিনবো ভেবেছিলাম৷ তা আর খরচ করতে হয়নি৷"
"আজ অদ্ভূত কান্ড ঘটেছে পার্কে ঢুকতেই৷
লাল রঙের গাড়ি চড়ে আসা ভদ্রলোক সবাইকে ফুল দিয়ে বেড়াচ্ছে৷ ফ্রি তে৷"
কেউ অতীব ভদ্রতা দেখিয়ে টাকা দিতে চাচ্ছে৷ জবাবে ভদ্রলোকের মুখে মিষ্টি হাসি৷"
মানুষটার গাড়ির পাশে দাঁড়ানো দু'জন মহিলা৷ একজনের চুল একটু সাদা হচ্ছে৷ আরেকজন একটু কমবয়সী৷ উনারা মানুষটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে৷"
!
পরির কথা মনে পড়তেই আমার মনটা খারাপ হল একটু৷ পরির সাথে আমার এক পৃথিবী এক সাথে থাকা আর হচ্ছেনা সেটা একরকম নিশ্চিত হয়েছে সপ্তাহখানেক আগে৷
দিনকয়েক আগে পরি বলল,
চল পালায়!"
আমি পরির বলেছিলাম,
মাথা খারাপ হয়েছে তোমার?"
পরি মুখ অন্ধকার করে বলল,
পালাবে না তাইলে?"
আমি নির্লিপ্ত মুখে সামনে তাকিয়ে বললাম,
নাহ৷"
তারপর দু'জনই চুপ করে থাকি৷ কোনো কথা হয় না আর৷ শুধু শ্বাস নেয়ার শব্দ শুনি৷ ঘন হচ্ছে শ্বাসের শব্দগুলো সময়ের সাথে৷"
!
পরি নিরষ গলায় বলল,
আসেন আমাকে এগিয়ে যান৷"(অভিমানী কন্ঠে)
আমি শুনলাম পরির কথা৷"
পরির সাথে আমার হুট করে প্রেম হয়নি৷ ধীরে সুস্থে হয়েছে৷ পরি মোটামুটি স্বচ্ছল পরিবারের মেয়ে৷ সুখী পরিবারের মেয়ে৷
আমিও অস্বচ্ছল কিংবা অসুখী পরিবারের ছেলে নয়৷ বাবা না থাকাতে মাসের শেষে একটু আধটু টানাটানি হয়৷
মাসের শেষের দিকে একবেলা না খেয়ে থাকি৷ আর বোনের কলেজের বেতনটা একটু আধটু টানাটানি হয়৷ এই আরকি৷"
পরির সাথে প্রথমে আমার সাজেসন্স দেয়া-নেয়ার বন্ধুত্ব৷ তারপর ঠুকঠাক কথা বলার বন্ধুত্ব৷
তারপর অনুভূতিগুলো ভাগাভাগির বন্ধুত্ব৷ তবুও বন্ধুত্ব পর্যন্ত থাকে৷ প্রেমে আর ঘড়ায় না৷"
আমার হুটহাট মনে হয়,
আমার একটা প্রেমিকা থাকুক৷ আবার ভাবি, না থাক৷"
মাঝেমধ্যে পরিকে বলতাম,
রবি-সোম এই দু'দিন তুই আমার প্রেমিকা৷
কখনো তুই আমার শুক্রবারের প্রেমিকা৷ কখনো শেষ বিকেলে আমার গম্ভীর মনের প্রেমিকা৷"
পরি ভ্রু কুচকে বলতো,
লাথি দিবো ফুটবলের মতো৷ শখ কত হুহ৷"
তবুও পরি আমার প্রেমিকা হতো৷ তুই এর বদলে তুমি করে বলতো৷ শাড়ি পরে আসতো৷ আমার হাত ধরে হাঁটতো৷"
আরেকদিন পরিকে হুট করে শাড়ি উপহার দিয়ে বললাম,
তুই কাল আমার প্রেমিকা৷"
পরি মুখ বাঁকা করে বলল,
পারবোনা৷ এই শাড়ি তুই রেখে দে৷"
পরি শাড়ি নেয়নি৷"
আমার মেজাজ খারাপ হল৷ তবুও সামলেছিলাম৷ শেষে পরির বান্ধবী নিরুপমার কাছে শাড়িটা বিক্রি করে দিয়েছিলাম৷"
নয়তো দূ'বেলা উপোস থাকতে হতো৷"
!
তার দিনকয়েক পরে একদিন আমি বেরোলাম না৷ ঘরে বন্দি রাখলাম৷ শরীরটা সেদিন ম্যাচম্যাচ করছিল৷"
একটু বেলা করে পরির ফোন আসে৷ জরুরী তলব৷ আমি ও হুড়মুড়িয়ে চলে গেলাম পরির কাছে৷"
!
পরির সামনে যেতেই খপ করে ধরলো শার্টের কলার৷ আমি ভড়কালাম একটু৷
আমি পরির দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকালাম৷ চোখে মুখে রাগ আর অভিমান৷"
কাষ্ঠ কন্ঠে বলল,
নিরুপমাকে শাড়ি দিলি কেন? পার্মানেন্ট প্রেমিকা বানাচ্ছিস?"
যা এখনই বলে আয়, কাল শাড়িটা ঠিকঠাক আমাকে দিতে৷ তোর পার্মানেন্ট প্রেমিকাকে দিতে!"
-পার্মানেন্ট প্রেমিকা কে?"
জিজ্ঞেস করলাম আমি৷
পরি দু'হাত কোমড়ে দিয়ে রাগি মুখে বলল,
-কে আবার? আমি আমি৷"
!
দু'দিন পরে পরি শাড়ি পরে হাজির হয়৷ আমি নিরুপমাকে টাকা ফিরিয়ে দিতে গেলাম৷ নিরুপমা আমার চুল টেনে বলেছিল,
এটা তোর ট্রিট বন্ধু৷"
আমি কৃতজ্ঞতা জানালাম চোখে মুখে৷"
তারপর থেকে পরি আমার প্রেমিকা৷৷ এখন তুমি করে বলে৷
অামরা প্রেম করি৷ আমাদের প্রেমালাপগুলো এখনো বইয়ের পাতায় পড়ে আছে৷
আমি মাঝেমধ্যে বলতাম,
তুমি একটু রোমান্টিক হতে পারো না৷"
!
পরি চোখ বড় করে বলতো,
চাকরি পেয়ে আমার বাবার সামনে যাবে৷ তারপর রোমান্টিক হবো৷"
পরি প্রেমময়ী হতো৷ প্রায়ই হয়৷ আমাদের সবকিছু হয় নিয়ম করে৷ সব শেষ হলো নিয়ম করে৷
চাকরির বাজারে আমার চাকরি মেলেনা৷ টিউশন করে চলে আমার৷
পরির মুখ প্রায়ই গম্ভীর থাকে৷ আমার চাকরির প্রস্তাবের চেয়ে কয়েক শ গুণ তার বিয়ের প্রস্তাব৷ পরি শক্ত চেহাহায় না করে৷"
মাঝেমধ্যে মুখে ক্লান্তি এনে বলে,
আর কত শাকিল?"
আমি পরির নরম হাতে হাত রেখে বলি,
এইতো আর কিছুদিন৷"
!
আর কিছুদিন আর হয়ে উঠে না৷ গত সপ্তাহে পরি বলল, ভালোর চেয়ে ভালো একটা প্রস্তাব এসেছে৷ মা এবার না করতে চাচ্ছে না৷"
!
পরির বাবাকে আমি একটু আধটু চিনি৷ মানুষটা মেয়ের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দেয়৷ আমাকেও টুকটাক পছন্দ৷"
আমার সাথে দেখা হয় মাঝেমধ্যে৷ আমার মুখ অন্ধকার থাকলে মানুষটা আমার কাঁধ চাপড়ে বলে,
চাপ নিওনা ছেলে৷ সময় হলে উড়াল দিও৷"
আমার সেই উড়াল দেয়ার সাহস হয়ে উঠে না৷"
পরির মা পুরো উল্টো৷ মেয়েকে বড় ঘরে দিবে৷ আয়েশে থাকবে মেয়ে৷ আয়েশে থাকলে সুখ পায়ে এসে লুটোপুটো খাবে৷ সেটা উনার ধারনা৷"
"আমি এখনো বসে আছি৷ পরি আসছেনা এখনো৷ সম্ভবত আমার জন্য ঘড়ি কিনে আনবে৷
!
সেদিন বলল, তোমার সময় জ্ঞান নেই৷ তাই যাওয়ার আগে ঘড়ি দিয়ে যাবো তোমাকে৷
আমারে নিয়েতো উড়াল দিতে পারবে না৷ সময়মতো বিয়েটা করে নিও৷ দেবদাস হয়ে যেও না যেন৷"
আমি কিছু বলতে পারিনি৷
কাঁধে অপরিচিত হাতের ছোঁয়ায় আমার ভ্রম ভাঙে৷ ফ্রিতে ফুল দেয়া মানুষটা আমার পাশে বসা৷ মুখে মুচকি হাসি লেগে আছে৷
আমার মনটা একটু ভালো হয় সুখী মানুষকে দেখে৷"
-কার জন্য অপেক্ষা করো ছেলে?"
আমি লজ্জা পেলাম একটু৷
-মনের মানুষ নিশ্চই?"
আবার বলল উনি৷
জবাবে আমি মাথা নেড়ে বুঝালাম,
হ্যা৷"
-তা কতদিনের?"
আমি সময়টা জানালাম৷
-বিয়ে কবে করছো?"
আমার মনটা খারাপ হল হুট করে৷ আমি চুপ থাকি আবার৷"
" আমার অসহায় মুখ দেখে মানুষটা কী বুঝলো জানি না৷
আবার আমার কাঁধে হাত রেখে সামনের দু'জন মহিলাকে দেখিয়ে বলল,
ঐ যে দু'জন দেখছো? যার চুলে পাক ধরেছে৷ উনি আমার বড় দিদি৷ পাশেরজন আমার প্রিয়তমা৷ বড় ঘরের মেয়ে৷ তার বড় ঘরের বদলে আমার কীছুই ছিল না৷ তবুও আমার হাত ধরে ঘর ছেড়েছে৷
আমার মা-বাবা নেই৷ আমার পৃথিবী বলতেই ছিল সেই৷ আমার এক পৃথিবী ভালোবাসার ভরসায় যখন সে ঘর ছাড়লো৷ আমি তখন ২০টাকার মালিক মাত্র৷
২০টাকায় এই শহরে দু'টো বন রুটি পেতে হিমসিম খেতে হয়৷ সেখানে ২০টাকায় আমি সংসার চালাবো!
আমার অন্ধকার দেখার কথা৷ তবুও আমার মন ফুরফুরে৷ আমার ভালোবাসা নিয়ে উড়ছি আমি তখন৷
চাচার বাসায় থাকতাম৷ আর গেলাম না ঐ নিষ্ঠুর বাড়িতে৷
ঐ যে দেখছো, আমার দিদি৷ এই পার্কেই ফুল বিক্রি করতেন৷ মানুষটার সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক না৷ এর চেয়ে বেশি কিছু৷"
!
চাচীর বকা খেয়ে আমি ঠিক এখানটায় এসে বসে থাকতাম৷ দিদিকে দেখতাম ফুল বেছতে৷
আমার নিঃস্বঙ্গ লাগতো৷ একদিন এগিয়ে দিদিকে সাহায্য করা শুরু করলাম৷ আমি দিদির পিছু পিছু হাঁটতাম৷ আমি দিদির বডিগার্ড৷
দিদি একটু নিশ্চিন্ত হল৷ এই শহরে মানুষরুপি অল্পসংখ্যক জানোয়ারের আনাগোনায় মাঝেমধ্যে দিদির আত্মায় কাঁপন ধরাতো৷
আমি তার পাশে দাঁড়াতে একটু নিশ্চিন্ত হল৷
তারপর থেকেই আমি প্রতি বিকেলে হাজির হতাম৷ এ বেলা ঐ বেলায় সময় পেরোলো৷ দিদি ফুল বেছা ছেড়ে কাপড় সেলাই শুরু করলো৷ কিন্তু সেদিনের পুচকে আমাকে ভুলেনি৷"
আমার প্রিয়তমার হাত ধরে দিদির কাছেই গেলাম৷ আমাকে ফেরাইনি৷ ছাড়েওনি আর৷ দিদির হাত ধরে প্রিয়তমাকে সাথে নিয়ে হারিয়ে গেলাম৷"
দিদির বিয়ে দিয়েছি৷ কিন্তু সে তার পুচকে ভাইকে ছাড়বেনা৷ শেষমেষ দুলাভাইকে একরকম ঘরজামাই বানিয়ে ফেললাম হা হা৷
আজ দিদির জন্মদিন৷ তাই আবার ফিরে আসা"
পাশে ফিরতেই দেখলাম পরি এসেছে৷ মুখটা মলিন৷ ভদ্রলোক আমার পাশ থেকে উঠে দাঁড়ালেন৷ পরি চুপচাপ আমার পাশে বসে৷"
আমি ভদ্রলোকের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম৷ মানুষটা থেমে পেছন ফিরে তাকালো৷ আমাকে হাতের ইশারায় ডাকছে৷
আমি ছুটে যায়৷ পকেট থেকে ১০০টাকার ১নোট দিয়ে বলল,
এই টাকাটা রাখো৷ ফুল বেছে পেলাম৷
আমি মৃদ্যু হেসে কৃতক্ষতা জানাই৷ পেছন ফিরতেই ভদ্রলোক আরেকবার ডেকে বললেন,
টাকার পেছনে আবার নাম্বারটা দেয়া৷ চাকরির বাজারে মন্দা৷ ড্রাইভারের পদটা খালি আছে৷"
চাকরি পেলে ছেড়ে দিও৷ তোমার জন্য ডিসকাউন্ট৷"
আমি পরির কাছে ফিরে আসি৷ পরি যত্ন করে আমার হাতে ঘড়িয়ে পরিয়ে দেয়৷ নাক টানছে৷ আমি গোলাপ দু'টো তার হাতে দিলাম৷
পরি পরম যত্নে হাত ছোয়ায় ফুলে৷
আমি পরির হাত ধরে বললাম,
-চল!
পরি অবাক হয়ে বলে,
-কই?
-উড়াল দিবো৷
-সত্যি?
-হু৷"
পরির নির্লিপ্ত মুখটা প্রাণবন্ত হয়৷ একবার জড়িয়ে ধরে শক্ত করে৷ আমিও ধরি৷
পকেট থেকে ফোনটা বের করে "সুইচ অফ" করার আগ মূহূর্তে ফোন বেজে উঠে৷
ছোটবোনের ফোন৷ ফোন ধরতেই ফোনের ওপাশ থেকে ছোটবোনের উত্তেজনায় ভরপুর গলার আওয়াজ শুনি৷"
এলোমেলো গলায় বলল,
ভাইয়া টিউশন পেয়েছি৷ তোর আর চিন্তা নেই৷ চাকরি পেয়ে নে৷
রাজমহল বানাবো৷
ভাবীকেও নিয়ে আসিস সাথে৷"
আমি অবাক মুখে পরির দিকে তাকিয়ে বললাম,
ও জানলো কিভাবে?"
পরি মুখ মুচড়ে বলল,
সব তোমার মতো অকর্মা না বুঝলে৷ তুমি না চাইলেও তোমাকে নিয়ে উড়াল দিতাম আমি৷"
!
আমি সুখী মানুষটার দিকে তাকালাম৷ আমিও মানুষটার সমান৷ আমি সুখী মানুষ৷"
!
!
-------- গল্পঃ সুখ...
!
-----লেখাঃ অভিমানী শাকিল
!
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
Adhora islam nishi
User ৪ বছর, ২ মাস পুর্বেAdhora islam nishi
User ৪ বছর, ২ মাস পুর্বেতাবাসসুম ধ্রুবা
User ৪ বছর, ২ মাস পুর্বেMofizul{Tea Master} ☕☕☕
Golpobuzz ৪ বছর, ২ মাস পুর্বে¤-বকুল রায়-¤
Golpobuzz ৪ বছর, ২ মাস পুর্বে