বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

দিদৃক্ষা -পার্ট- ৩

"রোম্যান্টিক" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান Hossain (০ পয়েন্ট)

X ঝড়োহাওয়ার গতি আরো বেড়ে যেতে লাগলো। মেয়েটি অন্ধকারে হাটতে হাটতে ছাদের মাঝখানে চলে এসেছে। সাধারণত ঝোড়ো আবহাওয়ায় মেয়েরা ভয় পায়। ভয় পায় মেঘের গর্জন কিংবা বিদ্যুৎের চমকানি দেখে। কিন্তু এই মেয়েটি, ভয় পাওয়া তো দূরের কথা, দুইহাত মেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে ঝড় বিলাস শুরু করেছে। অনেকটা "লাইফ অফ পাই" ছবির নায়কের মতো। হাওয়ার গতি আরো বেড়ে গেল। আমি আর চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। মেয়েটির সামনে গিয়ে চিৎকার করে বললাম, - এইযে ম্যাডাম? প্রচন্ড ঝড় হচ্ছে, গাছের ডালপালা উড়ে এসে গায়ে লাগতে পারে। বিপদ হতে পারে। আপনি নিচে চলে যান। এছাড়াও ভয়ানক ভাবে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে । প্লিজ চলে যান এখান থেকে । মেয়েটি আমার কথা শুনে একগাল হেসে নিয়ে বলল, - আই লাভ স্ট্রম। আমার ঝড় খুব ভাল লাগে। আমাকে নিয়ে আপনার টেনশন করতে হবে না। আপনার যদি খুব বেশি ভয় করে, তাহলে আপনি আপনার চিলেকোঠায় চলে যান। - কি আশ্চর্য! আমার ভয় করবে কেন? আমি তো এখানেই থাকি। আর আমি আপনাকে এভাবে রেখে যেতে পারবো না। প্লিজ আপনি নিচে চলে যান। ঝড় কমে গেলে নাহয় আবার আসবেন। - আমি ঝড় না দেখে যাবোই না। আপনি আপনার কাজ করেন। আমাকে নিয়ে ভাবতে হবেনা। মেয়েটি নাছোড়বান্দার মতো আমার কথাগুলো বাতাসে উড়িয়ে দিচ্ছে। এদিকে আমি পরে গেছি বিপদে। একটা দূর্ঘটনা ঘটে গেলে আমি কি জবাব দেবো কাউছার আংকেলকে। কিন্তু কাউছার আংকেলও কেমন দায়িত্বহীন মানুষ! এই ঝড়ের রাতে নিজের একমাত্র মেয়ের খোঁজ নিচ্ছে না। নাহ, এই মেয়েটিকে বাসায় না পাঠালে চিন্তামুক্ত হতে পারছিনা। - এই যে ম্যাডাম, আপনার বাবা-মা হয়তো টেনশন করছেন। এবার চলে যান। - আমি কোথাও যাচ্ছিনা। আচ্ছা ঠিকাছে, আপনি ঝড় দেখবেন এটাই আপনার শেষ কথা? - হ্যা। তাহলে আমার চিলেকোঠার ঐ ঘরটাতে গিয়ে দরজা জানালা বন্ধ করে ঝড় দেখেন। - দরজা জানালা বন্ধ করলে দেখবো কি করে? - একটা জানালা সামান্য খোলা রাখবেন। - আপনি এতো জোর করছেন কেন বলুন তো? আপনার মতলব কিন্তু ভাল ঠেকছে না। - এই যে ম্যাডাম, আমি আমার বাবার কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বিপরীত লিঙ্গের কোন মানুষের দিকে আমরা দ্বিতীয়বার তাকাইনা। মেঘের ঝলকে শুধু দেখেছিলাম একটি মেয়ে ছাদে উঠে আসছে। তারপর আপনার দিকে এখনো তাকাইনি। যদিও অন্ধকার। তবুও তাকাইনি। কথাও বলতাম না। কিন্তু আপনি বাধ্য করেছেন। যাই হোক, আপনি এই মূহুর্তে এখান থেকে চলে গেলে খুব খুশি হবো। এতো কথার পরও মেয়েটি নিচে গেল না বরং দৌরে গিয়ে আমার চিলেকোঠার ঘরটাতে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। এদিকে প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়ার সাথে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আমি গাঁ বাঁচাতে সিঁড়ির গোরায় এসে দাঁড়িয়ে রইলাম। সিঁড়ির সামনে থেকে দেখতে পাচ্ছি, ছাদের দিকে মুখ করা জানালার একটা পাল্লা খুলে দিয়েছে মেয়েটি। আমাকে এদিক ওদিক খুঁজে বেড়াচ্ছে ও। মেঘের বিদ্যুৎ চমকে ওঠার সাথেই রুপালী আলোতে খুঁজে পেল আমাকে। একটু পর ঝড় আরো বেড়ে গেল। হাওয়ার গতি দেখে মনে হচ্ছে ঘন্টায় তিন কিলো হবেই। খোলা জানালাটা হাওয়ায় এপাশ ওপাশ বারি খেতে লাগলো। তারই মাঝে মেয়েটির চিৎকার শুনতে পেলাম। ঝড়ের গতি ভেদ করে ভিজতে ভিজতে ছুটে গেলাম জানালার কাছে। - কি ব্যাপার কি হয়েছে? চিৎকার করছেন কেন? ওদিক থেকে কোন সাড়া শব্দ নেই। এমন কি জানালার কাছে মেয়েটিও নেই। ভয় বাড়তে লাগলো। অজ্ঞান টজ্ঞান হয়ে গেল না তো? যদি এমন হয়, তবে তো কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে আমার। প্রায় দুমিনিট ডাকাডাকির পর দরজাটা বাতাসের ধাক্কায় ধপাস করে খুলে গেল। ঘরের ভেতর ঢুকে চার্জার লাইট জ্বালিয়ে দিলাম। দরজা জানালা বন্ধ করে দিয়ে বললাম, " সরি দরজাটা লাগাতে হবে নইলে আমার চিলেকোঠার সংসার পানিতে ভেসে যাবে।" মেয়েটি জানালার পাশে দাঁড়িয়ে কিল কিল করে হাসছে, এবার একটু রাগ হল। ধমক দিয়ে বললাম, - সমস্যা কি আপনার? চিৎকার করছিলেন কেন? মেয়েটি আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে হাসতে হাসতে বলল, - আপনি তো এইটুক সময়েই ভিজে কাক হয়ে গেছেন। - শাট আপ। মজা করা হচ্ছে আমাকে নিয়ে? চিৎকার করছিলেন কেন? কিছুক্ষন আগেই তো বীরদের মতো সাহস দেখালেন। এখন আবার কি হল? আসলে লাইটনিং আর মেঘের গর্জন শুনে আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম। কথাটা বলেই ভঙ্গিমা করে কাঁদতে শুরু করলো মেয়েটি। - এই মেয়ে একদম কাঁদবেন না বলছি। এখন বাইরে যান, ঝড় বিলাস করেন যান। তখন তো খুব সাহস দেখিয়ে বললেন, আই লাভ স্টর্ম। - তখন পাশে আপনি দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাই ভয় হয়নি। - হুম বুঝতে পারছি, এখন আপনি বাইরে যান। আমার শারা শরির ভিজে চিপচিপে হয়ে আছে। আমাকে চেঞ্জ করতে হবে। কি হল, বাইরে যান, চেঞ্জ করবো। মেয়েটি এবার ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে কাঁদতে বলল, আপনি এভাবে আমাকে ঝড়ের মধ্যে বাইরে ছেরে দিবেন? আপনি এতো নিষ্ঠুর আগে জানতাম না। - এই আপনি কান্না থামাবেন নাকি থাপ্পড় খাবেন? কান্নার গতি আরো বাড়িয়ে দিয়ে বলল, - আপনি আমাকে একা পেয়ে এভাবে বকা দিচ্ছেন? - নাহ্ বকা দিচ্ছিনা, আপনাকে সোহাগ করছি। এখন চোখ বন্ধ করে উল্টো দিকে তাকিয়ে থাকেন। আমি চেঞ্জ করবো। - নাহ্ প্লিজ এখন চেঞ্জ করবেন না। - তাহলে কখন চেঞ্জ করবো? - একটুপর ঝড় থেমে যাবে। আমি চলে যাবো। তখন চেঞ্জ করে নিয়েন। আর ততক্ষন একটু কষ্ট করে এভাবে থাকেন। একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দরজার কোনায় নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইলাম। ভেজা জামাকাপড় থেকে টুপ টুপ করে পানি পরে ভিজে যাচ্ছে আমার চিলেকোঠার মেঝে। মেয়েটি জানালার একটি পাল্লা আবারও খুলে দিয়েছে। অল্প অল্প ফাকা দিয়ে দৃষ্টি ছুরেছে বাইরের আকাশের দিকে। চার্জার লাইটটাতে খুব বেশি চার্জ নেই। ওটার আলো দেওয়ার ক্ষমতা ধীরে ধীরে ফুরিয়ে আসছে। আজ যেন ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমাকাচ্ছে। সেই আলোতে মেয়েটির ঝলমলে মুখ দেখতে পাচ্ছি আমি। আজই মেঘের আলো নিভে যায়, আমি তারে চোখে হারাই, আকাশে বিদ্যুৎ চমকায়, ফের তারে খুঁজে পাই। বাবার দেওয়া উপদেশ গুলো আজ অন্যকান দিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে। ভেজা কাপড় গায়ে প্রচন্ড ঠান্ডা লাগছে আমার। রীতিমত ঠান্ডায় কাঁপছি। মেয়েটি সেই যে নির্বাক চোখে তাকিয়ে আছে বাইরের দিকে। এখনো ঘার ঘুরিয়ে দেখেনি পেছনে। এদিকে ঝড় থামার কোন নামই নিচ্ছে না। হঠাৎ শরিরের মধ্যে কেমন একটা অনুভূতি হল। মাথাটা ঝিম ঝিম করতে লাগলো। অনেক চেষ্টা করেও দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। ভাঙা খাটের পাশিটা ধরেও নিজেকে সামলে রাখতে পারলাম না। কখন যে মাটিতে লুটিয়ে পরলাম, বুঝতেই পারলাম না। . ঘুম ভাঙ্গলো ভোর ছয়টার দিকে। শরিরে একফোটা বল নেই। মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে। প্রচন্ড শীত করছে। মনে হচ্ছে যেন, আমি এন্টার্কটিকার কোনো বরফের দ্বীপের উপর খালি গায়ে দাঁড়িয়ে আছি। বিছানার চাদরটা গায়ের সাথে পেচিয়ে আস্তে আস্তে চিলেকোঠার বাইরে বেড়িয়ে আসলাম। গতরাতে কখন ঝড় থেমে গেছে জানিনা। মেয়েটি কখন চলে গেছে কিছুই জানিনা। কিন্তু গভীর রাতে ক্ষনে ক্ষনে কয়েকটা কথা বুঝতে পেরেছিলাম। মেয়েটি একবার বললো, আপনার গাঁয়ে তো প্রচন্ড জ্বর। এ আমি কি সর্বনাশ করলাম। ভেঙে ভেঙে আরো কয়েকটা কথা শুনতে পেয়েছিলাম। একবার বলছিলো, রাত প্রায় দুটো বাজে, ঝড় থেমে গেছে। তিনটে প্যারাসিটামল একসঙ্গে খাইয়ে দিয়েছি। আপনার জ্বর কমে যাবে। শেষ রাতের দিকে কিছু একটা বলেছিলো। কিন্তু এসব কথা ও নিজে থেকে কেন বলবে, নিশ্চই আমি ওকে ঘুমের ঘোরে একের পর এক প্রশ্ন করছিলাম। শেষ রাতের দিকে কিছু একটা বলতে বলতে মেয়েটি চলে গেল, কথাগুলো স্পষ্ট মনে নেই, "আমার বাবা নেই", "আমি নিজেই সব।" মা তো অসুস্থ। "তিনটা ছোট ভাই " তবে টাকার অভাব নেই।" . কিন্তু লিজা তো কাউছার আংকেলের একমাত্র মেয়ে। ওর তো কোনো ভাই নেই। তাহলে এই মেয়েটা কি লিজা নয়? আমি সারারাত কার সঙ্গে থাকলাম? নাহ্ মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে। কিছুই ভাবতে পাচ্ছি না। প্রচন্ড ক্ষিদেও পেয়েছে। মানুষের জ্বর হলে খাওয়ার রুচি কমে যায়। কিন্তু আমার জ্বর হলে, রুচি বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়। এই মুহূর্তে কেউ এককাপ কফি আনলে, তাকেই বিয়ে করতাম। নাহ্ শুধু কফি আনলে হবেনা। তার সঙ্গে অন্তত তিন প্রকারের খাবার আনতে হবে। কিন্তু কফিটাই আনবে কে? সবে ভোর ছয়টা বাজে। রুনা আমাকে সকালের নাস্তা দিয়ে যায় সকাল সারে সাতটা বাজে। সেও এখনো দের ঘন্টা বাকি। . মাথার যন্ত্রনা নিয়ে বেশিক্ষন ছাদে হাটতে পারলাম না। ঘরে গিয়ে দরজাটা খুলে দিয়ে আবার শুয়ে পরলাম। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই সিড়ি দিয়ে কেউ একজন উপরে উঠে এলো। ঘরের দরজা খোলা ছিল বলে সরাসরি ঘরে ঢুকে পরলো। হাতে মস্ত বড় একটা কফির গ্লাস। সাথে প্লেট ভর্তি ফলমূল। - একটু উঠে বসতে চাইলাম, কিন্তু মেয়েটি ঠেলে আধাশোয়া করে দিলো। কফির গ্লাসটা আমার হাতে দিয়ে বললো, কফিটা খেয়ে নিবেন, মাথাটা ক্লিয়ার হবে। ফলমূলের প্লেটটা বিছানার কোনায় রেখে মেয়েটি চলে যেতে লাগলো। . অসুস্থ গলায় পেছন থেকে ডাক দিলাম তাকে, - একটু শুনবেন? মেয়েটি পেছন ফিরে তাঁকালো। সহসাই জিজ্ঞেস করে বসলাম, - আপনি কে? সে শান্তনামূলক হাসি দিয়ে বলল, - আমার নাম মিস শায়লা। নিচতলায় ভাড়া থাকি। আপনাকে অনেক আগে থেকেই চিনি। কিন্তু আপনি আমাকে চেনেন না। আমি এখন যাই, একটু পর রুপা চলে আসবে। কিছু খেয়ে ওষুধটা খেয়ে নিবেন, কেমন? . চলবে.....?


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৫৭৭ জন


এ জাতীয় গল্প

→ দিদৃক্ষা-পার্ট-২
→ দিদৃক্ষা -পার্ট-১

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now