বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
#জানি_দেখা_হবে
Imran khan
#Part_17
..
ধ্রুবদের বাসার ড্রয়িংরুমে বসে আছে তুরিনের বাবা। তুরিনের বাবা বেশ নিচু ভাবেই বসে আছে। এই বাড়িতে তিনি এ নিয়ে দুইবার এসেছেন। কিন্তু ভালোভাবে একবারও আসেন নি। দুইবারই তুরিনের অসৎ কার্যকলাপের কারনের উনাকে ডাকা হয়েছে। একপাশে দাড়িয়ে আছে তুরিন । তুরিনের বাবার পাশে বসে পান চিবুচ্ছেন তুরিনের মা। এতো কিছু শুনার পরেও উনার কাছে মনে হচ্ছে এটা কোনো বিষয়ই না, শুধুমাত্র ছেলেমানুষি।
..
ধ্রুবর বাবা হালকা কেশে বললেন..
- এক ঘরের দুটো মেয়ে, প্রথমটা হয়েছে লক্ষি.. আর দ্বিতীয়টা,,, সেটাকে কোনো বিশেষন দেওয়ার ভাষা আমার নেই। তুরিনের বাবা বললেন..
- দেখুন, আমি কি বলবো.. বলার মতো কোনো ভাষা আমার নেই। আসলে সবই আমার কপাল। আমি চেয়েছিলাম.. আমার দুইমেয়ে যেনো মানুষের মতো মানুষ হয়। কিন্তু আমি ব্যর্থ বাবা। আমি আমার মনের মতো করে ওদেরকে মানুষ করতে পারিনি।
ধ্রুবর বাবা বললো..
- কেন, আপনার বড় মেয়েতো অনেক ভালো। ওকে নিয়ে কথাটা বলা আপনার উচিত হয়নি।
- হ্যাঁ, বড় মেয়েটা মানে আমার তারা মা। খুব ভালো একটা মেয়ে। কিন্তু ওকে তো আমি মানুষ করিনি। ওর মা মারা যাওয়ার পর ওর মায়ের অভাব পুরন করার জন্য দ্বিতীয় বিয়ে করি। কিন্তু, মায়ের অভাব পুরন করাতো অনেক দুরের বিষয় , দুবেলা দুমুঠো ভাত পর্যন্ত ও ঠিকমতো পেতো না। তুরিন হবার পর, ওর অত্যাচার আরো বেড়ে গেলো। মেয়েটা নিরবে মামাকে খবর দিয়ে মামার সাথে চলে গেলো সেখানে। কোনো প্রতিবাদ পর্যন্ত করেনি। সেই যে গেলো.. মাঝে মাঝে আসতো আমাদের দেখতে, কিন্তু বাসায় আসলে ওরা মা মেয়ের জন্য একটু শান্তি পেতোনা। একটা দিনও থাকতে পারতোনা নিজের বাসায়। সোজা চলে যেতো যেখান থেকে এসেছে সেখানে। ছলছল কন্ঠে বললেন উনি।
.
তুরিনের বাবার কথায় রেগে গেলো তুরিনের মা। পানের পিকটা একটা পাত্রে ফেলে বললো..
- কি বলতে চাইছো তুমি? আমি তারাকে অত্যাচার করতাম? ওই তারা একটা জঘন্য মেয়ে। ওই আমাদের অত্যাচার করতো। আমরা নেহাত ভালো মানুষ ছিলাম, তাই কিছু বলিনি ওকে। কিছু করিওনি। নইলে ছোট থাকতেই গলা টিপে মেরে ফেলতাম।
- মারার আর বাকিটা রেখেছো কি? সেই ছোটবেলায় বাড়িছাড়া করেছো মেয়েটা। এখন বিয়ে হয়েছে, তাও তোমরা একটু শান্তিতে থাকতে দিলে না ওকে। কি ক্ষতি করেছে ও তোমাদের? কেন পরে আছো ওর পিছে? বেশ রেগে গিয়ে বললেন তুরিনের বাবা।
..
ধ্রুব এক কর্নারে দাড়িয়ে থেকে সবকিছু শুনছে। ইচ্ছে করছে এখনই ওদের মা মেয়ের মাথা ফাটিয়ে দিতে। কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে সেটা করলো না ও।
তুরিনের করা খারাপ কাজগুলোর কথা শুনে রেগে ফেটে পরছে। অন্যদিকে তারার সাথে করা সমস্ত অন্যায়গুলোর কথা মনে হলে গা শিউরে উঠছে ওর। অনুশোচনায় ভেঙ্গে পরছে। আর দুরে থাকবেনা ও। কিছুক্ষন পরই গিয়ে নিয়ে আসবে তারাকে। দরকার হলে মাফ চাইবে। নিশ্চয়ই ফিরিয়ে দিবেনা নিজের স্বামীকে।
.
ওদের স্বামী স্ত্রীর কান্ডগুলো এতোক্ষন আড় চোখে দেখছিলেন ধ্রুবর বাবা। গম্ভীর কন্ঠে বললেন..
- আপনাদের তামাশা করার জন্য এখানে ডাকিনি। ঝগড়া করার ইচ্ছা হলে নিজের বাড়িতে গিয়ে করবেন।
- শুনুন বিয়াই সাহেব, আজকালের ছেলেমেয়েরা এইসব করেই। এটা কোনো অন্যায় না। ছেলেমানুষি। আপনি কোনো বাড়াবাড়ি না করে ওদের নিয়েই থাকুন। পান চিবুতে চিবুতে বললেন তুরিনের মা।
ধ্রুবর মা বললেন..
- বাড়াবাড়ি আমরা না, আপনি আর আপনার মেয়ে করেছেন আর এখনো করেই যাচ্ছেন। আপনারা আমার ছেলের জীবন নিয়ে এভাবে খেলা করবেন আর আমরা বারবারই মেনে নিবো? এইসব ভেবে থাকলে ভুল করছেন। মেনে তো নিবোই না, দরকার হলে পুলিশ এনে আপনাদের তিনজনকেই ধরিয়ে দিবো। ভদ্রমহিলাটি জমে গেলেন ধ্রুবর মায়ের কথায়। কিছু বললেন না।
..
তুরিনের বাবা অপরাধী গলায় বললেন..
- আমাদের এখন কি করতে হবে?
- আপনাদের মেয়েকে আপনারা নিয়ে যান, আমি খুব তারাতাড়িই ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিবো। পাশ থেকে ধ্রুব বলে উঠলো। তুরিনের মা চমকে গেলো। সাথে তুরিন ও। তুরিন বললো..
- এইসব কি বলছো তুমি? তুমি আমাকে ডিভোর্স দিবে? তুমি না আমাকে ভালোবাসো? আর আমরা তো দুজন দুজনকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি তাইনা??
ধ্রুব মুখে কিছু বললো। সামনে এগিয়ে তুরিনের দুটো গালে ঠাসঠাস করে দুটো বসিয়ে দিলো সবার সামনে। তুরিন কেদে কেদে বললো..
- তুমি আবারও আমাকে মারলে?
- হ্যাঁ মেরেছি। কারণ তুই আমার জীবনটাকে নরক করে দিয়েছিস। আর ভালোবাসা? সেটার মানে তুই বুঝিস? তোর ওই পাপ মুখে এইসব কথা ভুলেও উচ্চারণ করবিনা তুই।
ধ্রুবর মা বললো..
- বাবা শান্ত হো তুই, কুকুরের সাথে সাথে তোকেও যে কুকুর হতে হবে এমন কোনো কথা নেই।
..
সবাই যখন তুরিনকে নিয়ে চলে যাচ্ছিলো তখন ধ্রুবর মনের মধ্যে কেমন যেন অস্থিরতা কাজ করছিলো। কিছু একটা বলতে যাবে তখনই তুরিনের বাবা এসে বললো..
- বাবা, চলেই তো যাচ্ছি, একবার যদি তারা মাকে ডেকে দিতে, একটু চোখের দেখা দেখতাম। ডেকে দাওনা একটু মেয়েটাকে..
তারার বাবার কথায় অবাক হওয়ার চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গেলো ধ্রুব সহ ওর বাবা মা। ধ্রুব কিছু বলার আগেই ধ্রুবর মা এগিয়ে এসে বললো..
- তারা আপনাদের বাসায় নেই?
- নাতো, কেন কি হয়েছে?? কোথায় তারা?
- আপনাদের বাসায় যায়নি মেয়েটা? কোথায় গিয়েছে ও? ধ্রুবর বাবা উৎকন্ঠা বললো।
তারার বাবা কিছু বলতে পারছেনা। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। ধ্রুব বললো..
- মামার বাসায় যায়নি তো?
- না না, ওখানে থাকলে ওর মামা আমাকে ফোন করে জানাতো নিশ্চয়ই। কিন্তু হয়েছে কি আমার মেয়েটার?
.
ধ্রুব আকস্মিক রেগে গিয়ে তুরিনের সামনে গিয়ে দাড়ালো। বললো..
- তারাকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস?
তুরিন ভয় পেয়ে বললো..
- কিক কি বলছো? আমি কেন ওকে লুকাতে যাবো?
তুরিনের বাবা বেশ রেগে গিয়ে বললো..
- আবার কি করেছে ও আমার তারার সাথে?
- ওর কথায় তারাকে আমি বাসা থেকে বের করে দিয়েছি। পাশ থেকে ধ্রুব বললো।
ধ্রুবর বাবা মা সহ তারার বাবাও অবাক হয়ে গেলো। তুরিন আর তুরিনের মা অবাক হলোনা শুধু। কারণ ওরা তো সবটা জানে।
- তুই বের করে দিয়েছিস তারাকে? অবাক হয়ে বললো ধ্রুবর মা।
- হ্যাঁ, আমিই বের করেছি। শুধুমাত্র তুরিনের কথায়। ও জেদ করছিলো, ওকে না তাড়ালে ও নিজেই চলে যাবে বাসা থেকে। তাই।
- তাই এমন একটা অকর্ম করতে পারলি তুই?
- ভুল করেছি মা, খুব ভুল করেছি। ভাঙ্গা কন্ঠে বললো ধ্রুব।
- বাচ্চা হবে মেয়েটার। না জানি কোথায় কিভাবে আছে। এ কি করলি তুই? কিভাবে পারলি এটা করতে?
- আমি ওকে খুজেঁ বের করবো মা। যেভাবেই হোক, যেখান থেকেই হোক. ওকে আমি খোজে বের করবোই মা। ওর সাথে আমার দেখা হবে। কোথাও না কোথাও দেখা হবেই।
..
দেখতে দেখতে দুটো মাস পেরিয়ে গেলো। এই দুইমাসে ধ্রুব অনেক খোজেছে তারাকে। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে বারবারই। তবুও হাল ছাড়েনি ও। এখনো খোজেই যাচ্ছে।
আশার সাথে বসে গল্প করছিলো তারা। কিছুদিন হলো আশা এসেছে। কলেজ বন্ধ তাই এখনো বাসাতেই রয়েছে। আশার হটাৎ ফোন আসাতে ও চলে গেলো বেলকোনিতে। কথা বলছিলো নাকি ঝগড়া করছিলো বুঝতে পারছিলোনা তারা।। কথা শেষ করে এসে আবারও তারার পাশে বসলো ও। তারা হেসে বললো
- বয়ফ্রেন্ড?
- নাহ, বয়ফ্রেন্ড নাহ.. প্যারা।
- প্যারা???
- তা নয়তো কি? শুধু প্যারা দেয় সারাক্ষণ। শান্তি নাই একটুও।
- এতোই যখন প্যারা তাহলে প্রেম করতে গিয়েছিলে কেন? হাসতে হাসতে বললো তারা।
- গিয়েছিলাম কি আর সাধে, সারাক্ষণ পিছু পড়ে থাকতো। আর তখন তো জানতাম না এটার আরেক নাম যে প্যারা।
তারা কিছু বললো না। আশা বললো..
- আচ্ছা তারাপু, তোমাদের কি লাভ ম্যারেজ হয়েছিলো?
- তুমি জানো না?
- নাহ, তোমার ব্যাপারে শুধু আংশিক জানি। সবটা জানিনা। বলোনা লাভ ম্যারেজ হয়েছিলো কিনা?
- নাহ। মুচকি হেসে বললো তারা।
- ও তাহলে তোমাদের এরেঞ্জ ম্যারেজ।
- তাও না।
আশা এবার বেশ অবাক হয়ে গেলো । বললো
- লাভ ম্যারেজ ও না, এরেঞ্জ ম্যারেজ ও না। তাহলে কি?
তারার মুখটা এবার কালো মেঘে ঢেকে গেলো। বললো..
- আমার বিয়েটা শুধুমাত্র একটা দুর্ঘটনা ছিলো। তাই তো টিকেনি। একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো তারা। আশা আস্তে করে বললো..
- ভেঙ্গে পরোনা আপু, সব ঠিক হয়ে যাবে।
তারা কিছু বললোনা।
..
সীমা কিচেনে রান্না করছিলো। তারা আস্তে করে সেখানে গিয়ে দাড়ালো ওর পাশে। সীমা বলল..
- তোমাকে কতো করে মানা করেছি তারা, এখানে আসবেনা। তাও কেন আসো। তুমি অসুস্থ জানোনা।
তারা হাসলো। বললো..
- কিচ্ছু হবেনা আমার, ভাবী।
- তুমি কিভাবে জানো কিছু হবেনা? আর তাছাড়া বার আর সিঁড়ি দিয়ে নামা উঠাটাও তোমার জন্য এখন বিপদের। কিছুদিন কিচেনে আসাটা স্কিপ করো তারা। রান্নাবান্না করার জন্য পুরো জীবনটাই পরে আছে তোমার। শাসনের সুরে বললো সীমা।
তারা বললো..
- এর পর থেকে এমন আর করবোনা ভাবী।
- Ok..
..
তারা উপরে যাচ্ছিলো। ধাপে ধাপে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে। আর দুটো ধাপ পেরোলেই উপরে পৌঁছে যাবে, এমন সময় আচমকাই পিছন থেকে ডাকলো আকাশ। আকাশের ডাকে সাড়া দিতে পিছনে ঘুরতেই পা পিছলে পরে গেলো তারা। উপর থেকে ছিটকে পরলো তারা। আকাশ একটা চিৎকার দিয়ে দৌড়ে এলো তারার কাছে। ততোক্ষনে সবাই চলে এলো। আকাশ কাঁদতে কাদতে অস্থির হয়ে যাচ্ছে আর বলছে..
- আমার কারণে এমন হয়েছে। আমি কেন ডাকতে গেলাম ওকে। তারা, এই তারা উঠো প্লিজ।
রক্তে গড়াগড়ি খাচ্ছে ফ্লোর। সীমা চেচিয়ে বললো..
- আকাশ ওকে এখনই হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে। তারাতাড়ি গাড়ি বের করো। আকাশ দৌড়ে চলে গেলো গাড়ি বের করতে। সীমা গিয়ে তৎক্ষণাৎ আহাদকে ফোন করলো। আশা আর মা তারাকে পাজাকোল করে রক্তের কাছ থেকে সরালো। সবার চোখে পানি।
আকাশ এসে দুহাত দিয়ে তারাকে কোলে নিয়ে গাড়ির দিকে ছুটলো। সবাই পিছু পিছু যাচ্ছে।
..
রাত ১০:০০
প্রায় দেড় ঘন্টা হয়েছে তারাকে OT তে নেওয়া হয়েছে। এখনো ডাক্তার বের হবার কোনো নাম নেই। OT এর সামনে সবাই ঘুরাঘুরি করছে। সবার চোখেমুখে চিন্তার ছাপ। আকাশের চোখ দুটো ছলছল করছে পানিতে। আশা এসে ভাইয়ের পাশে দাড়ালো। বললো..
- কাদিস না ছোটভাই। সব ঠিক হয়ে যাবে।
- আমার জন্য, শুধু আমার জন্যই ওর আজ এ অবস্থা। কেদে কেদে বললো আকাশ।
আশা কিছু বললোনা। কি বলবে বুঝতে পারছেনা।
কিছুক্ষন পর OT থেকে ডক্টর বের হলো। আকাশ সহ বাকিরা ডাক্তারকে ঘিরে ধরলো। আকাশ বললো..
- ওর এখন কি অবস্থা? ও ঠিক আছে তো?
- মেয়েটার অভিভাবক কে? (ডাক্তার)
আহাদ আর ওর মা এগিয়ে গিয়ে বললো..
- আমরাই ওর অভিভাবক। বলুন কি হয়েছে?
- দেখুন, কিভাবে যে বলি, উনি বেশ বড়সড় আঘাত পেয়েছেন । যদিও আঘাতে উনার কোনো ক্ষতি হয়নি। কিন্তু ...
- কিন্তু কি? উৎকন্ঠা হয়ে বললো আকাশ।
- উনার গর্ভে যে সন্তান ছিলো সেটি নষ্ট হয়ে গেছে। তবে উনি এখন ভালো আছেন। কিছুক্ষনের মধ্যেই আশাকরি জ্ঞান ফিরবে উনার। ডাক্তার নিজের চেম্বারে চলে গেলো। তবে থমকে গেলো আকাশ। কি বলে গেলো ডাক্তার? ওর বাচ্চাটা নেই? ওকে এখন কি জবাব দিবো আমি?
.
To be Continued .....
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now