বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

অন্ধকারের গ্রহ পার্ট--7

"সাইন্স ফিকশন" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান Takiyan (০ পয়েন্ট)

X By, জাফর ইকবাল ক্যাপ্টেন ক্রল ক্রুদ্ধ গলায় বলল, আমি আমার সিদ্ধান্তটি নিয়ে তোমার সাথে কথা বলতে আগ্রহী নই। তুমি অন্তত রায়ীনার সাথে কথা বল। মহাজাগতিক প্রাণীর বুদ্ধিমত্তার ব্যাপারে সে একজন বিশেষজ্ঞ। সে তোমাকে সাহায্য করতে পারে। ক্যাপ্টেন ক্ৰব কোনো কথা না বলে য়ুহার দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে রইল। য়ুহা আবার বলল, সে যেহেতু জেগেই গেছে তখন তার সাথে কথা বলার মাঝে কোনো সমস্যা নেই। আমি নিশ্চিত রায়ীনা তোমাকে সাহায্য করতে পারবে। ক্যাপ্টেন ক্রব এবারে রায়ীনার দিকে তাকায়, জিব দিয়ে নিচের ঠোঁটটা ভিজিয়ে শুকনো গলায় বলে, য়ুহার কথা কি সত্যি? তুমি কি এ ব্যাপারে আমাদের সাহায্য করতে পারবে? রায়ীনা বলল, সবকিছু না জানলে আমি কিছু বলতে পারব না। তবে এ কথাটি সত্যি আমি বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণা করি। একটা প্রাণীর বুদ্ধিমত্তা কীভাবে বিকশিত হয়, সেই বুদ্ধিমত্তার কারণে একটা প্রাণী তার চারপাশের জগতের কাছে কী আশা করে সে সম্পর্কে আমার মৌলিক কিছু গবেষণা আছে। ক্যাপ্টেন ক্রব কয়েক মুহূর্ত চিন্তা করে বলল, আমি যদি তোমাকে সব তথ্য দিই তাহলে তুমি কি আমাকে এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারবে? মহাজাগতিক প্রাণীটি কী চায় কেন চায় কীভাবে চায় সেটি ব্যাখ্যা করতে পারবে? রায়ীনা কয়েক মুহূর্ত কিছু একটা চিন্তা করে বলল, খুব নিখুঁতভাবে পারব সেটা দাবি করি না। তবে সম্ভবত তোমাদের অনেকের চাইতে ভালো পারব। ঠিক আছে। ক্যাপ্টেন ত্রুব মাথা নেড়ে বলল, আমি তোমাকে সব তথ্য দিচ্ছি, দেখি তুমি আমাদের কী দিতে পার। রায়ীলা হঠাৎ খিলখিল করে হেসে উঠল। ক্যাপ্টেন ক্ৰব ভুরু কুঁচকে বলল, তুমি হাসছ কেন? রায়ীনা হাসি থামিয়ে বলল, খানিকক্ষণ আগে আমি যখন জেগে উঠতে শুরু করি আমার নিজের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। আমি অবান্তর কথা বলেছি, অসংলগ্ন ব্যবহার করেছি, অকারণে হেসেছি। সেগুলোর কোনো গুরুত্ব ছিল না, কিন্তু এখন আমার হাসিটুকু একেবারেই আমার নিজস্ব! আমি হাসছি তার সুনির্দিষ্ট একটা কারণ আছে। ক্যাপ্টেন ক্রব ভুরু কুঁচকে বলল, কী কারণ? তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি তোমার কমান্ডের একজন অনুগত সদস্য! তুমি আমাকে একটা আদেশ দেবে আর আমি, হুঁকুম শিরোধার্য বলে তোমার আদেশ মেনে চলব! তুমি নিশ্চয়ই লক্ষ করেছ আমাদের বিন্দুমাত্র সম্মান না দেখিয়ে মহাকাশযানের দেয়ালে বেঁধে রাখা হয়েছে? ক্যাপ্টেন ত্রুবকে এক মুহূর্তের জন্যে একটু বিচলিত মনে হলো, সে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, তুমি বিদ্রোহী দলের একজন সদস্য। আমাদের এই মহাকাশযানের নিরাপত্তার একটা বিষয় আছে। আমি তোমাকে ছেড়ে রাখতে পারি না। রায়ীনা মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল, কিন্তু তুমি যদি আমার সাহায্য নিতে চাও তাহলে আগে আমার কিছু কথাবার্তা শুনতে হবে। তোমার কথাবার্তাগুলো কী? প্রথমেই আমাকে যেভাবে বেঁধে রেখেছ সেটা খুলে দিতে হবে। মানুষ যখন একটা পশুকে বাধে তখনও চেষ্টা করে রক্ত সঞ্চালনের বিষয়টা নিশ্চিত করতে, তোমরা সেটা করনি। আমাকে যদি খুলে দাও তাহলে আমার পাশে বসে থাকা য়ুহা নামের এই বিচিত্র মানুষটির বাঁধনও খুলে দিতে হবে। আমি এর সম্পর্কে কিছুই জানি না। কিন্তু এর কথাগুলো এবং এর খাপছাড়া কাজগুলো আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। সত্যি জীবন সম্পর্কে এর বিন্দুমাত্র ধারণা নেই, সে কারণে তার জন্যে একটু মায়াও হয়েছে। রায়ীনা একটু নিঃশ্বাস নিয়ে বলল, তারপর আমার দলের বাকি এগারোজনকে জাগিয়ে তুলতে হবে। আমাকে যেভাবে অসম্ভব বিপদের ঝুঁকি নিয়ে জাগানো হয়েছে—সেভাবে নয়। স্বাভাবিকভাবে জাগাতে হবে যেন জেগে ওঠার সাথে সাথে তারা পুরোপুরি কার্যক্ষম থাকে। আমার মতো অপ্রকৃতস্থ না থাকে। য়ুহা কৈফিয়ত দেয়ার ভঙ্গিতে বলল, আসলে দোষটা আমার– রায়ীনা য়ুহার দিকে তাকিয়ে একটু হাসার ভঙ্গি করে বলল, তোমার কোনো দোষ নেই, তুমি যেটা করেছ সেটা অসাধারণ। তোমার কারণে আমি এই মহাকাশযানের ক্যাপ্টেনের কাছে আমার দাবিগুলোর কথা বলতে পারছি। ক্যাপ্টেন ক্ৰব শক্ত মুখ করে বলল, তোমার কথা শেষ হয়েছে। না। শেষ হয়নি। রায়ীনা বলল, আমার দলের সবাইকে জাগিয়ে তুললেই হবে না। তাদের নিরাপত্তার জন্য তাদের সবার হাতে একটা করে অস্ত্র দিতে হবে যেন ইচ্ছে করলেই তোমরা তাদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে না পার। শুধুমাত্র তাহলেই আমি তোমার সাথে কথা বলতে পারি। ক্যাপ্টেন ক্ৰব শীতল চোখে রায়ীনার দিকে তাকিয়ে রইল। সে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। কয়েকবার চেষ্টা করে বলল, তুমি নিশ্চয়ই একবারও বিশ্বাস করনি যে তোমার এই দাবিগুলো আমরা মেনে নেব। স্বাভাবিক অবস্থা হলে বিশ্বাস করতাম না, কিন্তু এখন অবস্থাটা খুব জটিল। হয়তো তোমার একটা সঠিক সিদ্ধান্তে এতগুলো মানুষের প্রাণ বেঁচে যাবে। আমি দুঃখিত রায়ীনা। তোমার রক্তসঞ্চালনের জন্যে হাতের বাঁধনটা একটু ঢিলে করে দেয়া ছাড়া আমার পক্ষে তোমার আর কোনো দাবিই মেনে নেয়া সম্ভব না। রায়ীনা আবার শব্দ করে হাসল। ক্যাপ্টেন ক্ৰব ভুরু কুঁচকে বলল, তুমি কেন হাসছ। তোমার কথা শুনে। তোমার আশেপাশে তোমার কমান্ডের এত জন। মানুষ দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু সিদ্ধান্ত দেবার জন্যে একবারও তাদের সাথে কথা বললে না! আমি তোমার জায়গায় হলে তাদের সাথে একবার কথা বলতাম। ক্যাপ্টেন জব ক্রুদ্ধ গলায় বলল, আমি কীভাবে সিদ্ধান্ত নেব সেটি আমার ব্যাপার। আমি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি বলেই আমি এই মহাকাশযানের ক্যাপ্টেন।। য়ুহা মাথা নাড়ল, বলল, তোমার সিদ্ধান্ত দেখে সেটা মনে হচ্ছে না ক্যাপ্টেন ক্ৰব। আমার সিদ্ধান্তটি কী সেটা তোমরা এখনো জান না। আমি এখনো সেটা বলিনি। সবাই এবার উৎসুক দৃষ্টিতে ক্যাপ্টেন ক্ৰবের দিকে তাকাল। ক্যাপ্টেন ক্রব তার মুখে একটা বিচিত্র হাসি ফুটিয়ে বলল, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি একটা স্কাউটশিপে করে তোমাদের দুজনকে এই কালো কুৎসিত গ্রহটাতে পাঠাব। এই গ্রহতে মহাজাগতিক প্রাণীগুলো আছে, দেখা যাক তারা তোমাদের কীভাবে গ্রহণ করে! য়ুহা চমকে উঠে বলল, কী বলছ তুমি? আমি ঠিকই বলছি। দেখি তোমরা এই মহাজাগতিক প্রাণীকে পরাস্ত করে ফিরে আসতে পার কী না। য়ুহা কী বলবে বুঝতে না পেরে বলল, পরাস্ত করতে হবে? আমাদের? সেটা তোমাদের ইচ্ছে। য়ুহা ভয়ার্ত চোখে রায়ীনার দিকে তাকালো। রায়ীনার চোখে-মুখে ভয়ের কোনো চিহ্ন নেই। সে য়ুহার দিকে তাকিয়ে চোখ মটকে বলল, আশা করি সঙ্গী হিসেবে তুমি ভালো হবে–তোমার সাথে অনেক সময় কাটাতে হবে আমার। আসলে সঙ্গী হিসেবে আমি যাচ্ছেতাই! য়ুহা মাথা নেড়ে বলল, এত বয়স হয়েছে এখনো আমার কোনো ভালো বন্ধু নেই! রায়ীনা বলল, আমি স্কাউটশিপে ওঠার আগে আমার বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিতে চাই। ক্যাপ্টেন ত্রুব বলল, তুমি অর্থহীন কথা বলো না। তোমার বন্ধুরা সবাই একটি করে জড় পদার্থ হয়ে আছে। একটা স্ক্রু ড্রাইভারের কাছ থেকে বিদায় নেয়া আর তোমার বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। রায়ীনা বলল, কে আমার বন্ধু কে ক্রু ড্রাইভার আমি সেটা নিয়ে তর্ক করতে চাই না। আমি বলছি যে আমি আমার এই বন্ধুদের সাথে আমার জীবনকে এক সুতায় বেঁধেছি। আমার কাছে আমি যেটুকু গুরুত্বপূর্ণ আমার এই বন্ধুরাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমি চলে যাবার আগে তাদের কাছ থেকে বিদায় নিতে চাই। ক্যাপ্টেন ত্রুব বলল, এটি অত্যন্ত ছেলেমানুষী, অর্থহীন একটা প্রক্রিয়া। রায়ীনা বলল, আমি ছেলেমানুষ এবং এই মুহূর্তে আমার জীবনের কোনো অর্থ নেই। তবে তুমি নিশ্চিত থাক আমি পালিয়ে যাবার চেষ্টা করব না। শুধু তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসব। ক্যাপ্টেন ত্রুব বলল, তারা সেটি জানতেও পারবে না। রায়ীনা বলল, যদি কখনো তাদেরকে জাগিয়ে তোলা হয় তখন তারা জানতে পারবে। হিসান ক্যাপ্টেন বের কাছে গিয়ে গলা নামিয়ে বলল, ক্যাপ্টেন ক্রব, মেয়েটি যখন চাইছে তাকে অনুমতি দেয়া যেতে পারে। আমরা কয়েকজন তাকে শীতল ঘরে নিয়ে যাব তারপর ফিরিয়ে আনব। প্রতিমুহূর্ত তাকে চোখে চোখে রাখব। ক্যাপ্টেন ত্রুব হিসানের দিকে তাকিয়ে বলল, ঠিক আছে। আমি তোমাকে দায়িত্ব দিচ্ছি তুমি এই মেয়েটিকে শেষবারের মতো শীতলঘর থেকে ঘুরিয়ে আনে। সে তার বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসুক। ক্যাপ্টেন ক্রব এক মুহূর্ত থেমে যোগ করল, মনে রেখো সে যদি অন্য কিছু করতে চায় তুমি তাকে সাথে সাথে গুলি করে হত্যা করতে পার। স্কাউটশিপটা ছোট, দুজন পাশাপাশি বসতে পারে। নানারকম যন্ত্রপাতিতে বোঝাই, যার কোনটা কী কাজ করে সে সম্পর্কে য়ুহার বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। য়ুহাকে প্রথমবারের মতো বায়ু-নিরোধক একটা পোশাক পরিয়ে দিচ্ছিল মিটিয়া। সে নিঃশব্দে কাজ করছে, য়ুহা জিজ্ঞেস করল, তুমি এবারে কিন্তু গুন গুন করে গান গাইছ না। না। গাইছি না। মিটিয়া একটু হাসার চেষ্টা করে বলল, আসলে সব ।সময় গান গাইতে ইচ্ছে করে না। সেটা আমি বুঝতে পারছি। যাই হোক, তুমি এই পোশাকটি কখনো ব্যবহার করনি। য়ুহা বাধা দিয়ে বলল, করেছি। আমাকে যখন প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছিল তখন তারা এই পোশাকটা পরিয়েছিল। সেটা ছিল খুবই কৃত্রিম একটা পরিবেশ—এখন পরিবেশটা খুব ভিন্ন। মিটিয়া গম্ভীর গলায় বলল, সব সময় মনে রাখতে হবে তোমার চলাফেরা হবে খুব সীমিত। এমনিতে তুমি যা যা করতে পার এই বিদঘুটে পোশাক পরে তুমি কিন্তু তার বিশেষ কিছুই করতে পারবে না। য়ুহা জিজ্ঞেস করল, তাহলে আমাদের এই পোশাক পরাচ্ছ কেন? তোমরা গ্রহটিতে যাচ্ছ সে জন্যে– আমরা মোটেও গ্রহটিতে যাচ্ছি না-আমাদের জোর করে এই অন্ধকার গ্রহটাতে পাঠানো হচ্ছে। মিটিয়া একটু থতমত খেয়ে বলল, আমি দুঃখিত য়ুহা। তোমার দুঃখিত হবার কিছু নেই মিটিয়া। যাই হোক, আমি যেটা বলছিলাম, এই পোশাকটা যদিও অত্যন্ত বিদঘুটে কিন্তু এটি একটি অসাধারণ পোশাক। একজন মানুষকে বেঁচে থাকতে হলে যা যা দরকার তার সবকিছু এর ভেতরে আছে। একবার চার্জ করিয়ে নিলে এটা একজন মানুষকে পুরো আটচল্লিশ ঘণ্টা বাঁচিয়ে রাখতে পারে! এর ভেতরে যোগাযোগের ব্যবস্থা আছে, অস্ত্র আছে অস্ত্র আছে? য়ুহা চমকে উঠে বলল, আমাদের হাতে তোমরা অস্ত্র তুলে দিচ্ছ? হ্যাঁ, দিচ্ছি তার কারণ তোমরা এখন সেটা ব্যবহার করতে পারবে। নিচের অন্ধকার গ্রহটাতে পৌঁছানোর পর সেটাকে চালু করা হবে। নিচের গ্রহ সম্পর্কে তুমি কিছু জান মিটিয়া? না। আমি বিশেষ কিছু জানি না। তোমাকে এই মুহূর্তে বলা হয়তো ঠিক হবে না কিন্তু গ্রহটি অত্যন্ত কুৎসিত। এর মাঝে এক ধরনের অশুভ ব্যাপার লুকিয়ে আছে। য়ুহা কোনো কথা না বলে চুপ করে বসে রইল। মহাকাশযান থেকে স্কাউটশিপটা উড়ে গেল কোনোরকম আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই। য়ুহা মাথা ঘুরিয়ে একবার পেছন দিকে তাকিয়ে মহাকাশযানটিকে দেখার চেষ্টা করল, ঠিক কী কারণ জানা নেই সেটিকে একটা বিধ্বস্ত জাহাজের মতো দেখাচ্ছে। সে আর কখনো এখানে ফিরে আসতে পারবে কী জানে না। য়ুহা মাথা ঘুরিয়ে রায়ীনার দিকে তাকালো, রায়ীনা। বল। তোমার কী মনে হয়? এই গ্রহটার প্রাণীগুলো কী রকম? আমার এখনো কোনো ধারণা নেই। তবে প্রাণীগুলো বুদ্ধিমান সে ব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহ নেই। তারা কী আমাদের থেকে বুদ্ধিমান? রায়ীনা শব্দ করে হেসে বলল, আমরা বুদ্ধিমান তোমাকে কে বলেছে? আমরা যদি বুদ্ধিমান হতাম তাহলে কি নিজেরা নিজেরা যুদ্ধ করি? নিজেদের গ্রহটাকে ধ্বংস করে মহাজগতের এখানে-সেখানে বেঁচে থাকার চেষ্টা করি? মানুষ হয়ে অন্য মানুষকে হত্যা করি? জোর করে অপছন্দের মানুষদের কালো কুৎসিত অন্ধকার একটা গ্রহে ঠেলে পাঠিয়ে দিই? তার পরও আমরা তো একটা সভ্যতা গড়ে তুলেছি তুলিনি— এটাকে সভ্যতা বলে না। য়ুহা সভ্যতার সংজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন করতে গিয়ে থেমে গেল। হঠাৎ করে তার মাথাটা একটু ঘুরে উঠেছে, হালকা এক ধরনের মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসছে কোথা থেকে। সে রায়ীনার দিকে তাকিয়ে ভয় পাওয়া গলায় ডাকল, রায়ীলা— হ্যাঁ। রায়ীনা মাথা নাড়ে, আমাদের অচেতন করে দিচ্ছে। কে অচেতন করছে? কেন করছে? ক্যাপ্টেন জব নিশ্চিত করতে চাইছে যেন আমরা এই স্কাউটশিপটা ব্যবহার করে অন্য কিছু করতে না পারি। রায়ীনা ঘুমঘুম গলায় বলল, য়ুহা, আমি জানি না এই স্কাউটশিপটা আমাদের ঠিকভাবে গ্রহটাতে পৌঁছাতে পারবে কী না। যদি না পারে তাহলে বিদায়! তোমার সাথে পরিচয় হওয়াটা আমার জন্যে চমৎকার একটা অভিজ্ঞতা ছিল। য়ুহা কিছু একটা বলতে চাইছিল, কিন্তু কিছু বলার আগেই সে গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে পড়ল। য়ুহা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিল সে একটি গহিন বনে হারিয়ে গেছে, যেদিকেই যায় সে দেখতে পায় শুধু গাছ আর গাছ। কৃত্রিম গাছ নয়, সত্যিকারের গাছ। সেই গাছের ডাল, গাছের পাতায় তার শরীর আটকে যাচ্ছে, লতাগুলোতে সে জড়িয়ে যাচ্ছে, তখন শুনতে পেল বহুদূর থেকে কেউ যেন তাকে ডাকছে, য়ুহা। য়ুহা এদিকে সেদিকে তাকালো, কাউকে দেখতে পেল না। শুধু মনে হলো কণ্ঠস্বরটি বুঝি আরো কাছে এগিয়ে এসেছে—আবার ডাকছে, য়ুহা। এ রকম সময় সে ধড়মড় করে ঘুম থেকে জেগে উঠল, তার ওপর ঝুঁকে পড়ে আছে রায়ীনা, তাকে ধাক্কা দিতে দিতে সে ডাকছে। য়ুহা এসে বসে এদিক-সেদিক তাকিয়ে বলল, আমরা কোথায়? আমরা গ্ৰহটাতে নেমে এসেছি। আমরা তো বেঁচে আছি তাই না? মনে হচ্ছে বেঁচে আছি। তবে এটাকে তুমি যদি বেঁচে থাকা না বলতে চাও তাহলে অন্য ব্যাপার। য়ুহা স্কাউটশিপের গোল জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বলল, সর্বনাশ, কী বিদঘুটে গ্রহ! রায়ীনা মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ এটা খুব বিদঘুটে একটা গ্রহ। য়ুহা একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আমি কখনো চিন্তা করিনি, আমার জীবনের শেষ সময়টা কাটাব এ রকম একটা বিদঘুটে অন্ধকার গ্রহে। তোমার জীবনের শেষ সময়টা কোথায় কাটানোর কথা ছিল? আমি ভেবেছিলাম আমার নিজের পরিচিত মানুষের সাথে। সাধারণ মানুষ। সাদামাটা মানুষ। রায়ীনা মাথা ঘুরিয়ে য়ুহার দিকে তাকিয়ে বলল, বিষয়টা নিয়ে আমারও এক ধরনের কৌতূহল! তুমি তো সামরিক কমান্ডের কেউ নও-তুমি কেমন করে এই মহাকাশযানে আছ? আমি একজন কবি! আমি একাডেমির কাছে আবেদন করেছিলাম যে আমি মহাকাশ ভ্রমণে যেতে চাই। একাডেমি এদের সাথে আমাকে যেতে দিয়েছে। রায়ীনা হাসার চেষ্টা করে বলল, তুমি এখন নিশ্চয়ই খুব আফসোস করছ যে কেন এসেছিলে? না, আসলে করছি না। সবকিছুই তো অভিজ্ঞতা, এটাও এক ধরনের অভিজ্ঞতা। একটা জীবন তো নানারকম অভিজ্ঞতা ছাড়া আর কিছু না। রায়ী অন্যমনস্কভাবে বলল, তা ঠিক। য়ুহা বলল, এখান থেকে বের হয়ে যদি আবার নিজের পরিচিত মানুষদের কাছে ফিরে যেতে পারতাম, তাহলে অভিজ্ঞতার গুরুত্বটুকু আরো অনেক বাড়ত। রায়ীনা আবার অন্যমনস্কভাবে বলল, তা ঠিক। য়ুহ্য জিজ্ঞেস করল, আমরা এখন কী করব? রায়ীনা বলল, আমি প্রথম ছত্রিশ ঘণ্টা বিশেষ কিছু করতে চাই না। য়ুহা একটু অবাক হয়ে বলল, প্রথম ছত্রিশ ঘণ্টা? হ্যাঁ। ছত্রিশ ঘণ্টার পর আমি মহাকাশযান থেকে আরো কয়েকটি স্কাউটশিপ আশা করছি। আমাদের সাহায্য করার জন্যে তখন আরো কিছু মানুষ আসবে। যন্ত্রপাতি আসবে! অস্ত্র আসবে! তখন যদি কিছু করা যায় করব। য়ুহা হতচকিত হয়ে বলল, আমি কিছু বুঝতে পারছি না। ছত্রিশ ঘণ্টা পর মহাকাশযান থেকে স্কাউটশিপ কেন আসবে? তার কারণ ছত্রিশ ঘণ্টা পর আমার দলের লোকজন মহাকাশযানটা দখল করে নেবে। চব্বিশ ঘণ্টার মাঝেই সেটা ঘটে যাবার কথা, আমি নিশ্চিত হওয়ার জন্যে আরো বারো ঘণ্টা হাতে রাখছি। আর তারা মহাকাশযানটা দখল করার পর আমাকে সাহায্য করার জন্যে ছুটে আসবে। য়ুহা বিস্ফারিত চোখে রায়ীনার দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার দলের লোকেরা কেমন করে মহাকাশযানটা দখল করবে? তোমার মনে আছে এই স্কাউটশিপ রওনা দেবার আগে আমি আমাদের দলের লোকদের কাছ থেকে বিদায় নিতে গিয়েছিলাম? হ্যাঁ। মনে আছে। আসলে আমি মোটেও বিদায় নিতে যাইনি। ক্যাপ্টেন ক্ৰব ঠিকই বলেছিল, কাউকে যখন হিমঘরে শীতল করে রাখা হয় তখন তার ভেতরে আর একটা ক্রু ড্রাইভারের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। আমি গিয়েছিলাম আমাদের একজনের লিকুইড হিলিয়াম সরবরাহে ঘোট একটু ফুটো করতে-খুব ছোট, খালি চোখে কিছুতেই ধরা পড়বে না কিন্তু সময় দেয়া হলে লিকুইড হিলিয়ামটা বের হয়ে যাবে! সবাই যখন ভেবেছে আমি গভীর আবেগে বিদায় নিয়ে আসছি, আসলে তখন আমার জুতোর গোড়ালিতে লাগানো টাইটেনিয়ামের সূক্ষ্ম পিনটি দিয়ে টিউবে একটা ছোট ফুটো করেছি। ঘণ্টা তিনেক পর যখন শরীরটাকে ঠান্ডা রাখতে পারবে না তখন তাকে জাগিয়ে তোলা হবে! তুমি আমাকে যেভাবে জাগিয়েছিলে। কী আশ্চর্য! না, মোটেও আশ্চর্য নয়। এটা হচ্ছে খুব বাস্তব একটা কাজ! যাই হোক আমি যার ক্যাপসুলে এই ঘটনা ঘটিয়ে রেখে এসেছি তার নাম হচ্ছে রিহি। রিহি হচ্ছে আমাদের মাঝে সবচেয়ে বুদ্ধিমান। আমাদের ধারণা, তার নিউরনের সিনালের সংখ্যা আমাদের থেকে দশ গুণ বেশি! সে নিশ্চয়ই জানবে তখন কী করতে হবে। অন্য সবাইকে তখন জাগিয়ে তুলবে। পরের অংশ সহজ–মহাকাশযানটা দখল করে নেয়া! ছোটখাটো যুদ্ধ হতে পারে কিন্তু সেই যুদ্ধে কেউ তাদের হারাতে পারবে না। তাদেরকে হারানোর মতো সামরিক বাহিনী এখনো জন্মায়নি। তুমি সত্যি বলছ? হ্যাঁ। আমি সত্যি বলছি। তাই আমি পরের ছত্রিশ ঘণ্টা বিশেষ কোনো অ্যাডভেঞ্চার না করে বসে থাকতে চাই। যতটুকু সম্ভব তথ্য সংগ্রহ করতে চাই। যখন সময় হবে তখন যেন সেটা ব্যবহার করতে পারি। মুহ বিস্ফারিত চোখে বলল, রায়ীন, আমি যতই তোমাকে দেখছি ততই মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি। রায়ীনা হেসে বলল, তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে তুমি তোমার জীবনে খুব বেশি মানুষ দেখনি। তাই অল্পতেই মুগ্ধ হয়ে যাও! না, আমি অল্পতে মুগ্ধ হই না। তুমি আসলেই অসাধারণ। ঠিক আছে, আমি অসাধারণ! সেটা নিয়ে পরে আলোচনা করব। এখন ঠিক করা যাক ছত্রিশ ঘণ্টা সময় কীভাবে কাটানো যায়। য়ুহা এবং রায়ীনা কিছুক্ষণের মাঝেই আবিষ্কার করল বিশেষ কিছু না করে ছত্রিশ ঘণ্টা সময় কাটিয়ে দেয়া খুব সহজ নয়। স্কাউটশিপে যে যন্ত্রপাতিগুলো আছে সেগুলো ব্যবহার করে তারা গ্রহটা সম্পর্কে তথ্য বের করার চেষ্টা করছিল কিন্তু কিছুক্ষণের মাঝেই সেই কাজটা শেষ হয়ে গেল। তারা আবিষ্কার করল গ্রহটা মোটামুটি বিচিত্র, বায়ুমণ্ডল বলতে গেলে নেই, তাপমাত্রা শূন্যের কাছাকাছি। গ্রহটার পৃষ্ঠে আলো বিকিরণকারী এক ধরনের যৌগ আছে, সেখান থেকে নিস্প্রভ এক ধরনের আলো বের হয়, পুরো গ্রহটা সেজন্যে কখনো পুরোপুরি অন্ধকার নয় কিন্তু কখনোই পরিষ্কার করে কিছু দেখা যায় না। চারপাশে কেমন যেন মন খারাপ করা বিষঃ এক ধরনের পরিবেশ। এটা মূলত সিলিকনের গ্রহ, গ্ৰহটার ভর খুব কম, তাই বায়ুমণ্ডল আটকে রাখতে পারেনি। ছোট গ্রহ বলে পৃষ্ঠদেশ একেবারে অসম। জৈবিক প্রাণীর রুটিন বাঁধা পরীক্ষাগুলোতে কিছু ধরা পড়েনি কিন্তু এই গ্রহে বুদ্ধিমান প্রাণীর অস্তিত্ব আছে তার একটি প্রমাণ পাওয়া গেছে। গ্রহটির পৃষ্ঠ থেকে নির্দিষ্ট সময় পরপর একটা সিগন্যাল মহাকাশে পাঠানো হয়। এ ধরনের একটা সিগন্যাল পাঠাতে হলে তার জন্যে জ্ঞান বিজ্ঞান প্রযুক্তির একটা নির্দিষ্ট ধরনের উন্নতি হতে হয় মানুষের সভ্যতার সমকক্ষ সভ্যতা ছাড়া এটি সম্ভব নয়। সিগন্যালটি নির্দিষ্ট একটা সময় পরপর পাঠানো হয়, মোটামুটি সহজেই কোথা থেকে সিগন্যালটা পাঠানো হচ্ছে জায়গাটুকু নির্দিষ্ট করা গেছে। এই গ্রহে বুদ্ধিমান প্রাণীর অস্তিত্ব খুঁজে বের করতে হলে মনে হয় এই জায়গাটা দিয়েই শুরু করতে হবে। তবে নিজে থেকে সেখানে হাজির হওয়াটা খুব বিপজ্জনক একটি কাজ হয়ে যেতে পারে। প্রথম কয়েক ঘণ্টার ভেতরেই য়ুহা এবং রায়ীনার ভেতরে এক ধরনের। ক্লান্তি এসে ভর করল, কোনো কিছু না করার এক ধরনের ক্লান্তি আছে, সেই ক্লান্তি খুব সহজেই একজনকে কাবু করে ফেলে। য়ুহা বলল, এই ছোট স্কাউটশিপে বসে থাকতে অসহ্য লাগছে! আমি কি স্কাউটশিপের বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসতে পারি? অপরিচিত একটা গ্রহে পা দিতে কেমন লাগে সেটা একটু দেখতে চাই! কখনো এ রকম একটা অভিজ্ঞতা হবে আমি ভাবিনি। রায়ীনা বলল, আমারও অসহ্য লাগছে, কিন্তু এক সাথে দুজন বের হওয়া ঠিক হবে না। তুমি বের হও আমি তোমার ওপর চোখ রাখি, তারপর আমি বের হব, তখন তুমি আমার ওপর চোখ রাখবে। য়ুহা তখন খুব সাবধানে স্কাউটশিপ থেকে বের হয়ে এলো। তার শরীরে তাপ নিরোধক পোশাক, তারপরও বাইরের শীতল গ্রহটিতে তার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। য়ুহা উপরের দিকে তাকালো, সেখানে কুচকুচে কালো আকাশে অসংখ্য নক্ষত্র জ্বলজ্বল করছে। চারদিকে এবড়ো থেবড়ো পাথর, শুষ্ক এবং বিবর্ণ। য়ুহা স্কাউটশিপটি ছেড়ে কয়েক পা এগিয়ে গেল এবং হঠাৎ তার ভেতরে এক ধরনের বিচিত্র অনুভূতি হতে থাকে, তার মনে হয় কেউ যেন তার দিকে তাকিয়ে আছে। য়ুহা মাথা ঘুরিয়ে চারদিকে তাকালো, আবছা অন্ধকারে উঁচু-নিচু পাথর, তার ভেতর থেকে সত্যিই কি কেউ তার দিকে তাকিয়ে আছে? য়ুহা। বল। আমার মনে হচ্ছে তোমার হৃৎস্পন্দন হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। কিছু কী হয়েছে? না। কিছু হয়নি। তুমি কী কোনো কারণে ভয় পেয়েছ? না ভয় পাইনি। তবে— তবে কী?


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৩৮৫ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now