বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

অন্ধকারের গ্রহ পার্ট---5

"সাইন্স ফিকশন" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান Takiyan (০ পয়েন্ট)

X By জাফর ইকবাল ঠিক আছে তাহলে, বিদায়। য়ুহা চলে যেতে গিয়ে হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল। বলল, কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ক। তোমাকে আরেকটা প্রশ্ন করতে পারি। কর। তুমি কী কখনো মিথ্যা কথা বলেছ? মিথ্যা কথা? হ্যাঁ। না। আমি কেন মিথ্যা কথা বলব। আমাদের কখনো মিথ্যা কথা বলার প্রয়োজন হয় না। এটা তোমাদের ব্যাপার। মানুষকে প্রয়োজনে এবং কখনো কখলো অপ্রয়োজনে মিথ্যা কথা বলতে হয়। শুধু মানুষকে। আমাদের নয়। কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ক, বিদায়। বিদায়। য়ুহা তার ঘরে ঘুমানোর আগে টেবিলের পাশে এসে দাঁড়ায়। বড় টেবিলের ঠিক মাঝখানে স্বচ্ছ কোয়ার্টজের গোলকটি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এক চুল নড়েনি। কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ক অবিশ্বাস্য নিখুঁত গতিতে এই মহাকাশযানটিকে মহাকাশে উড়িয়ে নিতে পারে কিন্তু একটা সহজ কবিতা। লাইন তৈরি করতে পারে না! য়ুহার ঘুম হলো ছাড়া ছাড়া। ঘুম থেকে উঠে সে কিছুক্ষণ তার বিছানায় বসে রইল। ঠিক কী কারণ জানা নেই সে নিজের ভেতরে এক ধরনের বিষণতা অনুভব করে। সে বিছানা থেকে নেমে টেবিলটার দিকে তাকালোসাথে সাথে তার চোখ বিস্ফারিত হয়ে যায়, স্বচ্ছ কোয়ার্টজের গোলকটি খুব ধীরে ধীরে বাম দিকে গড়িয়ে যাচ্ছে। পুরো এক মাস মহাকাশযানটির এক দিকে যাবার কথা। কিন্তু মহাকাশযানটি দিক পরিবর্তন করছে। কেন? য়ুহা যখন তার হাতে কোয়ার্টজের গোলকটা নিয়ে ছুটে এসেছে তখন খাবার টেবিলে ক্যাপ্টেন ক্ৰবের সাথে তার কমান্ডের আরো চারজন বসে আছে। য়ুহাকে দেখে ক্যাপ্টেন ত্রুব একটু অবাক হয়ে বলল, কী ব্যাপার হা? তুমি এভাবে ছুটে আসছ কেন? তোমরা বলেছ এই মহাকাশযান সোজা সামনের দিকে। দি পরিবর্তন করবে না। ঠিক কী না? হ্যাঁ ঠিক। বলেছি। কিন্তু মহাকাশযানটি দিক পরিবর্তন করছে। ক্যাপ্টেন ক্ৰবের মুখে একটা হাসি ফুটে উঠল, হাসি হাসি মুখেই বলল, তুমি কেমন করে জান? য়ুহা তার হাতের কোয়ার্টজ গোলকটা দেখিয়ে বলল, এই গোলকটা আমার টেবিলে রাখা ছিল, এটা বাম দিকে গড়িয়ে যেতে শুরু করেছে। হয়তো তোমার হাতে টোকা লেগে গড়িয়ে গেছে। না। য়ুহা মাথা নেড়ে বলল, আমি অনেকবার পরীক্ষা করে দেখেছি। হাতের কোয়ার্টজ গোলকটা ক্যাপ্টেন ক্ৰবের দিকে এগিয়ে দিও বলল, আমার কথা বিশ্বাস না করলে তুমি নিজে পরীক্ষা করে দেখ। ক্যাপ্টেন ক্রব কোয়ার্টজ গোলকটা নেয়ার চেষ্টা করল না, হাত ও বলল, য়ুহা তুমি বস। হ্যাঁ, বসব। কিন্তু তুমি আমাকে আগে বোঝাও। আসলে মহাকাশযানটার সোজা সামনের দিকে যাবার কথা, কিন্তু এটা কি পরিবর্তন করছে। কেন করছে? তুমি এত উত্তেজিত হয়ো না। তুমি আগে মাথা ঠান্ডা করে বস। কিন্তু তুমি আগে বোঝাও। কেন এটা তোমাদের কিছু না জানিয়ে দিক পরিবর্তন করছে? কোথায় চলে যাচ্ছে মহাকাশযানটা? ক্যাপ্টেন ত্রুব নরম গলায় বলল, তুমি শুধু শুধু উত্তেজিত হচ্ছ য়ুহা। এই মহাকাশযানটা কোথাও চলে যাচ্ছে না। যেখানে যাবার কথা ঠিক সেখানেই যাচ্ছে। কিন্তু তাহলে এটা দিক পরিবর্তন করছে কেন? এটা দিক পরিবর্তন করছে না। ওপরে তাকিয়ে দেখ–এখানে একটা মনিটর আছে। এই মনিটরে এটা দেখাচ্ছে যে এটা তার কো-অর্ডিনেট একেবারেই পরিবর্তন করেনি। মহাকাশযানটার যেদিকে যাবার কথা এটা সেদিকেই যাচ্ছে। কিন্তু কিন্তু এই কোয়ার্টজ গোলক? আমি ঠিক জানি না তোমার কোয়ার্টজ গোলকটা কী করেছে। আমি যতবার টেবিলে রেখেছি ততবার বাম দিকে গড়িয়ে গেছে। ক্যাপ্টেন ত্রুব বলল, তুমি নিশ্চয়ই ঠিক করে রাখনি। আমার কথা বিশ্বাস না করলে তুমি রাখ টেবিলের ওপর। ক্যাপ্টেন ক্রব হা হা করে হেসে বলল, তুমি আমাকে বলছ আমি যেন কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ককে বিশ্বাস না করে তোমাকে বিশ্বাস করি। কিন্তু আসলে আমি কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ককেই বেশি বিশ্বাস করি। কাজেই কোয়ার্টজ গোলকটা টেবিলের ওপর রাখার কোনো প্রয়োজন দেখি না? য়ুহা মুখ শক্ত করে বলল, ঠিক আছে আমি নিজেই রাখছি। এই দেখ। য়ুহা কোয়ার্টজের গোলকটা টেবিলের মাঝখানে রাখল এবং সেটা একটুও না নড়ে স্থির হয়ে রইল। ক্যাপ্টেন ক্ৰব কৌতুকের ভঙ্গিতে বলল, কবি য়ুহা, তোমার গোলক তত মোটেও গড়িয়ে যাচ্ছে না। য়ুহা বিব্রত মুখে বলল, কী আশ্চর্য! এখন নড়ছে না। কিন্তু বিশ্বাস কর আমার ঘরের টেবিলের ওপর যতবার রেখেছি ততবার বাম দিকে গড়িয়ে গেছে! সম্ভবত তোমার টেবিলে কোনো সমস্যা আছে! টেবিলে বসে থাকা মধ্যবয়স্ক একজন মানুষ বলল, কোয়ান্টাম নেটওয়ার্কে একটা সমস্যা হওয়া থেকে তোমার টেবিলে সমস্যা হওয়া অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য! বসে থাকা সবাই শব্দ করে হেসে উঠল। য়ুহা তার ঘরে চুপচাপ বসে আছে। পাশে বড় টেবিলের ঠিক মাঝখানে সে তার স্বচ্ছ কোয়ার্টজের গোলকটা রেখেছে, সেটা সেখানে স্থির হয়ে আছে। তার টেবিলে কোনো সমস্যা নেই, তাহলে গোলকটা সেখানে এভাবে স্থির হয়ে থাকত না। এই মহাকাশযালে কিছু একটা ঘটছে যেটা সে বুঝতে পারছে না। সে মহাকাশযানের দায়িত্বে নেই—তার এটা নিয়ে মাথা ঘামানোর কথা নয় কিন্তু ভেতরে কিছু একটা খচখচ করছে। কেউ যদি তাকে পুরো বিষয়টা ঠিক করে বুঝিয়ে দিত তাহলে ভেতরের অস্থিরতাটা একটু কমত। বিষয়টা হয়তো খুবই সহজ-খুবই ছেলেমানুষী, সে যেটা বুঝতে পারছে না। যুহ অনেকটা অন্যমনস্কভাবে কোয়ার্টজের গোলকটার দিকে তাকিয়ে থাকে, হঠাৎ সে আবার চমকে উঠল, গোলকট। আবার ধীরে ধীরে বামদিকে গড়িয়ে যেতে শুরু করেছে। য়ুহা গোলকটির দিকে তাকিয়ে থাকেসেটা গড়িয়ে গড়িয়ে টেবিলের কিনারায় পৌঁছানোর পর সে সেটাকে আবার টেবিলের মাঝখানে বসিয়ে দেয়, গোলকটি আবার গড়াতে শুরু করে। এর অর্থ কী? মহাকাশযানটা কি আবার দিক পরিবর্তন করতে শুরু করেছে? য়ুহা উঠে দাঁড়াল, তাকে ব্যাপারটা বুঝতেই হবে। গোলকটা হাতে নিয়ে ঘর থেকে বের হতেই সে দেখে মিটিয়া হেঁটে যাচ্ছে–য়ুহা গলা উঁচিয়ে তাকে ডাকল, মিটিয়া। কী ব্যাপার য়ুহা। তুমি এক সেকেন্ডের জন্যে আমার ঘরে আসতে পারবে? অবশ্যই। কী হয়েছে? সে রকম কিছু না। আমি তোমাকে একটা জিনিস দেখাতে চাই। কী জিনিস? এই যে এই গোলকটা, দেখ। য়ুহা গোলকটাকে টেবিলের ওপর রাখল এবং সেটা স্থির হয়ে রইল। মিটিয়া জিজ্ঞেস করল, কী দেখব? য়ুহা ব্ৰিতভাবে বলল, না, একটু আগেই এটা বাম দিকে গড়িয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু এখন যাচ্ছে না। মিটিয়া হেসে বলল, তুমি এই গোলকের কথা ভুলে যাও য়ুহা। এটা মনে হয় তোমাকে খুব চিন্তার মাঝে ফেলে দিচ্ছে। না, চিন্তার মাঝে ফেলেনি। আমি শুধু এটা বুঝতে চাইছি। এত কিছু বুঝে কী হবে? আমাদের কাছে মহাকাশ ভ্রমণের কিছু মজার অভিজ্ঞতার হলোগ্রাফিক ক্লিপ আছে। বসে বসে দেখ- য়ুহা বলল, হ্যাঁ। ঠিক আছে। দেখব। মিটিয়া ঘর থেকে বের হয়ে যাবার সাথে সাথে গোলকটা আবার গড়িয়ে যেতে শুরু করে। য়ুহা ছুটে গিয়ে মিটিয়াকে ডাকতে গিয়ে থেমে গেল, হঠাৎ করে সে বুঝতে পারে মিটিয়াকে ঘরে আনা মাত্রই গোলকটা আবার থেমে যাবে, কেউ একজন তাকে নিয়ে খেলছে। কেন খেলছে? য়ুহা চিন্তিত মুখে ঘর থেকে বের হয়ে এলো। কন্ট্রোল প্যানেলে হিসান একটা ভিডিও মডিউল খুলে কিছু একটা দেখছিল। য়ুহা তার কাছে গিয়ে বলল, তোমাকে একটা জিনিস জিজ্ঞেস করতে পারি? কী জিনিস? যদি মনে কর এই মহাকাশযানের কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ক ঠিক করে আমাদের সবাইকে যেখানে নেয়ার কথা সেখানে না নিয়ে অন্য কোথাও নিয়ে যাবে তাহলে কি তোমরা সেটা কোনোভাবে বুঝতে পারবে? হিসান হেসে ফেলল, কোয়ান্টাম কম্পিউটার কেন সেটা করবে? য়ুহা বলল, যদি করে? করবে না। মনে কর এটা কাল্পনিক একটা প্রশ্ন। যদি করে— হিসান এক মুহূর্ত চিন্তা করে বলল, না আমরা সেটা বুঝতে পারব। এই মহাকাশযানে আমরা যেটা দেখি, যেটা শুনি তার সবকিছু আসে কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ক থেকে। কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ক আমাদের হাত-পা, আমাদের চোখ-কান, আমরা আমাদের নিজেদের চোখ-কানকে অবিশ্বাস করব কেমন করে? তবে– তবে কী? আমরা যদি জানালা দিয়ে বাইরে তাকাই, নিজের চোখে দেখার চেষ্টা করি তাহলে সেটা দেখব। য়ুহা বলল, আমি জানি, ব্যাপারটা এক ধরনের ছেলেমা কৌতূহল। তবুও আমি একবার নিজের চোখে দেখে নিশ্চিত হতে চাই। হিসান হাসল, বলল, যাও। দেখে আস। য়ুহা হেঁটে হেঁটে ট্রান্সপোর্ট ঘরের পাশে সিকিউরিটি চ্যানেলের কাছে এসে দেখে দরজাটি বন্ধ। সে দরজাটি খোলার চেষ্টা করল, খুলতে পারল না। কয়েকবার চেষ্টা করে সে হাল ছেড়ে দেয়। কোনো একটা অজ্ঞাত কারণে দরজাটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। য়ুহা কী করবে বুঝতে না পেরে আবার নিজের ঘরে ফিরে আসে। বিছানায় পা তুলে বসে সে খানিকক্ষণ চিন্তা করল। ব্যাপারটা সে বুঝতে পারছে না, বোঝার চেষ্টা করেছে, লাভ হয়নি। সে আর সময় নষ্ট করবে না, সবকিছু ভুলে গিয়ে সে মহাকাশভ্রমণ উপভোগ করতে শুরু করবে। সে শুনেছিল মহাকাশ ভ্রমণে নাকি ভরশূন্য পরিবেশ হতে পারে, সে ক্যাপ্টেন ক্রবকে অনুরোধ করবে ভরশূন্য পরিবেশ তৈরি করতে। মিটিয়া। হলোগ্রাফিক ক্লিপগুলোর কথা বলেছিল সেগুলো দেখাবে। কোয়ও গোলকটা সে ছুড়ে ফেলে দেবে কোথাও! বিছানা থেকে নামতেই হঠাৎ করে য়ুহার মাথাটা একটু ঘুরে গেল, আরেকটু হলে সে পড়েই যাচ্ছিল, কোনোভাবে বিছানাটা ধরে নিজেকে সামলে নেয়। কী আশ্চর্য! কী হয়েছে তার? টলতে টলতে একটু এগিয়ে গিয়ে দরজাটা খুলতে গিয়ে আবিষ্কার করল দরজাটা বন্ধ। য়ুহা কয়েকবার জোরে ধাক্কা দেয় দরজাটাকে, সেটা পাথরের মতো শক্ত হয়ে আটকে আছে। য়ুহা অবাক হয়ে বন্ধ দরজাটার দিকে তাকিয়ে থাকে। তার ঘরে খুব সূক্ষ্ম মিষ্টি এক ধরনের গন্ধ, মাথাটা ঝিমঝিম করছে। কিছু একটা হয়েছে এই ঘরে। কী হয়েছে? য়ুহা। কেউ একজন তাকে ডাকছে, য়ুহা চমকে উঠে মাথা ঘুরিয়ে তাকালো। কেউ নেই, কে কথা বলে? য়ুহা। কে? আমি কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ক। তুমি কী চাও? তোমার বিছানার মাথার কাছে তোমার অস্ত্রটা রাখা আছে। সেটা হাতে নাও। কেন? তুমি এখন আত্মহত্যা করবে। য়ুহা চমকে উঠে বলল, কেন আমি আত্মহত্যা করব? আমি তোমাকে নির্দেশ দিচ্ছি তাই। না। য়ুহা চিৎকার করে বলল, কিছুতেই না। কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ক হাসির মতো শব্দ করল, বলল, তোমার ঘরে আমি নিহিনক্স গ্যাস পাঠাচ্ছি। একটু পরেই তোমার নিজের ইচ্ছাশক্তি বলে কিছু থাকবে না। আমি যেটা বলব সেটাই হবে তোমার। য়ুহা বিস্ফারিত চোখে মাথা ঘুরিয়ে তাকালো। সত্যি সত্যি তার কাছে মনে হচ্ছে কিছুতেই আর কিছু আসে-যায় না। তার কাছে মনে হতে থাকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটা মাথায় ঠেকিয়ে ট্রিগার টেনে দেয়া চমৎকার একটা ব্যাপার। মহাকাশযানের সবাই জানে কিছু একটা নিয়ে তুমি খুব বিক্ষিপ্ত। কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ক ফিস ফিস করে বলল, কেউ যদি তোমার যোগাযোগ মডিউল দেখে, দেখাবে সেখানে তুমি অনেক বিভ্রান্ত কথা লিখেছ। আমি লিখিনি। কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ক নরম গলায় বলল, আমি লিখেছি। তোমার হয়ে আমি লিখেছি। নিঃসঙ্গ মহাকাশযানে বিভ্রান্ত একজন কবি এক ধরনের মানসিক চাপের মাঝে থেকে হঠাৎ করে আত্মহত্যা করেছে। এটা খুবই বিশ্বাসযোগ্য একটা ঘটনা। য়ুহা মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ। বিশ্বাসযোগ্য। তুমি এসো, অস্ত্রটি হাতে নাও। য়ুহা টলতে টলতে এগিয়ে যায়। অস্ত্রটা হাতে নেয়। কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ক ফিসফিস করে বলে, অস্ত্রটা তোমার মাথায় ধর য়ুহা। ট্রিগার টেনে ধর। য়ুহা অস্ত্রটা মাথায় ধরে, ট্রিগার টানতে গিয়ে থেমে গিয়ে বলল, কিন্তু কেন? তুমি আমার কাজকর্মে অসুবিধে করছ। কিন্তু—কিন্তু– ট্রিগারটা টানো য়ুহা। ট্রিগার টানতে গিয়ে য়ুহা আবার থেমে গেল। বড় বড় কয়েকটা নিঃশ্বাস নিয়ে বলল, আমাকে শুধু একটা কথা বল। কী কথা? তুমি সবাইকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছ? আমি জানি না। আমাকে যে নির্দেশ দিয়েছে সে জানে। কে তোমাকে নির্দেশ দিয়েছে? অত্যন্ত বুদ্ধিমান কোনো প্রাণী। যারা আমার নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে আমার নির্দেশকে পাল্টে দিতে পারে। আমার এখন তার নির্দেশ মানতে হবে। আমি এখন তার নির্দেশ মানছি। কিন্তু—কিন্তু– ট্রিগারটা টানো য়ুহা। ট্রিগারটা টানতে গিয়ে য়ুহা আবার থেমে গেল। তার ভেতরের কোনো একটা সত্তা তাকে বলছে, না, কিছুতেই না। কিছুতেই না। টানো। না। হা দাঁতে দাঁত ঘষে বলল, না। টানব না। কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ক হাসির মতো শব্দ করল, বলল, তুমি টানবে য়ুহা! অবশ্যই ট্রিগারটা টানবে। নিহিনক্স গ্যাস তোমার চেতনাকে যখন আরেকটু দুর্বল করবে তখন তুমি ট্রিগারটা টানবে। য়ুহা অস্ত্রটা শক্ত করে ধরে রাখে। তার মাথার মাঝে একটা কবিতার লাইন এসেছে, রক্তের মাঝে মৃত্যুর খেলা মৃত্যুর মাঝে রক্ত- টানো। য়ুহা ট্রিগার টানল, কিন্তু টানার ঠিক আগের মুহূর্তে অস্ত্রটা দরজার দিকে ঘুরিয়ে নিল। প্রচণ্ড একটা শব্দে তার কানে তালা লেগে যায়, ধোঁয়ায় ঘরটা ভরে যায়। খক খক করে কাশতে কাশতে য়ুহা দেখল একটু আগে যেখানে দরজাটা ছিল সেখানে একটা বিশাল গর্ত। য়ুহা হামাগুড়ি দিয়ে গর্তটা দিয়ে বের হতে চেষ্টা করে। কে যেন পেছন থেকে ডাকছে, য়ুহা। য়ুহা। শোন য়ুহা। কোনোমতে ঘর থেকে বের হয়ে য়ুহা উঠে দাঁড়ায়, কোনো কিছু সে পরিষ্কার করে চিন্তা করতে পারছে না। মনে হচ্ছে সে বুঝি একটা দুঃস্বপ্ন দেখছে। চারপাশে যা ঘটছে সেগুলো যেন অতিকৃতিক ঘটনা। সবকিছু যেন পরাবাস্তব। টলতে টলতে সে দুই পা এগিয়ে যায়। গুলির শব্দ শুনে কমান্ডের সবাই ছুটে আসছে, তারস্বরে একটা এলার্ম বাজতে শুরু করেছে কোথাও। য়ুহা টলতে টলতে ছুটে যেতে থাকে ট্রান্সপোর্ট ঘরের পাশে সিকিউরিটি চ্যানেলের দিকে। বন্ধ দরজাটা সে গুলি করে ভেঙে ভেতরে ঢুকবে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখবে য়ুহা। কী করছ তুমি? কেউ একজন পেছন থেকে ডাকছে কিন্তু য়ুহা পেছন ফিরে তাকালো না—এখন তার আর নষ্ট করার মতো সময় নেই। সে ছুটে যেতে থাকে। য়ুহা। রক্তের মাঝে মৃত্যুর খেলা মৃত্যুর মাঝে রক্ত য়ুহা বিড়বিড় করে বলল, রক্তের মাঝে মৃত্যুর খেলা… ট্রান্সপোর্ট ঘরের পাশে সিকিউরিটি চ্যানেলের সামনে দাঁড়িয়ে সে তার অস্ত্রটা তুলে ধরে ট্রিগার টেনে ধরল। প্রচণ্ড একটা বিস্ফোরণের শব্দ হলো, ধোয়ায় অন্ধকার হয়ে যায় চারদিকে। ধোয়াটা সরে গেলে য়ুহা দেখল যেখানে দরজাটা ছিল সেখানে বিশাল একটা বৃত্তাকার গর্ত হয়ে গেছে। য়ুহা গর্তের ভেতরে দিয়ে ঘরটাতে ঢুকে জানালায় মুখ লাগিয়ে বাইরে তাকালো। কালো মহাকাশে অসংখ্য নক্ষত্র জ্বলজ্বল করছে কিন্তু এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিটা দেখা যাচ্ছে না। ঠিক সামনেই এটা থাকার কথা ছিল, এটি নেই। মহাকাশযানটা ঘুরে গেছে বলে এখন আর দেখা যাচ্ছে না। য়ুহা জানালা থেকে মুখ সরিয়ে তাকালো, কমান্ডের লোকজন অস্ত্র উদ্যত করে তাকে ঘিরে রেখেছে। য়ুহা একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আমার কথা তোমরা বিশ্বাস করনি। এখন তাহলে নিজের চোখেই দেখ। য়ুহা জানালা থেকে সরে গিয়ে বলল, এই মহাকাশযানটা আমাদের অন্য কোথাও নিয়ে যাচ্ছে। তাকিয়ে দেখ। অবশ্যি তখন আর তাকিয়ে দেখার প্রয়োজন ছিল না। পুরো মহাকাশযানটি হঠাৎ একবার ঝাঁকুনি দিয়ে কেঁপে উঠল। এতক্ষণ কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ক পুরো বিষয়টা সবার কাছে গোপন রেখেছিল, এখন আর গোপন রাখার প্রয়োজন নেই। কিছু বোঝার আগেই য়ুহা মহাকাশযানের এক মাথা থেকে অন্য মাথায় গড়িয়ে গেল, হাত দিয়ে নিজেকে থামানোর চেষ্টা করল, পারল না, মহাকাশযানের দেয়ালে গিয়ে সে সজোরে একটা ধাক্কা খেল। পুরো মহাকাশযানটা থরথর করে কাঁপছে, মনে হচ্ছে এটা বুঝি যে কোনো মুহূর্তে টুকরো টুকরো হয়ে উড়ে যাবে। য়ুহা ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে থাকে, তীচ স্বরে 0একটা এলার্ম বাজছে। এলার্মের তীব্র শব্দটি শুনলেই মনে হয় বুৰিা ভয়ঙ্কর একটা বিপদ নেমে আসছে। একটা লাল আলো থেকে থেকে জ্বলে উঠছে, সেটা বুকের মাঝে একটা কাঁপুনির জন্ম দেয়। য়ুহা উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল, পারল না। তার মনে হলো অদৃশ্য একটা শক্তি বুঝি তাকে দেয়ালে চেপে ধরে রেখেছে। সে মাথা ঘুরিয়ে চারদিকে তাকানোর চেষ্টা করল, মহাকাশযানের ভেতরে সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। কমান্ডের ক্রুরা চারদিকে ছিটকে পড়ছে। কেউ আর উঠে দাঁড়াতে পারছে না। ভেতরে কর্কশ এক ধরনের ভয় জাগানো শব্দ, সেই শব্দ ছাপিয়ে ইঞ্জিনের চাপা গুম গুম শব্দ ভেসে আসছে। য়ুহা মহাকাশযানের দেয়াল ধরে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল। হঠাৎ পুরো মহাকাশযানটি একটা জীবন্ত প্রাণীর মতো ঝটকা দিয়ে ওঠে, য়ুহা কিছু বোঝার আগেই দেখে সে শূন্যে ছিটকে উঠেছে—নিচে পড়ার আগেই সে অন্য পাশে ছুটে গেল—নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করল, পারল না। মুহূর্তেই তার চারপাশের জগৎটা অন্ধকার হয়ে যায়। অন্ধকারে ড়ুবে যাবার আগে য়ুহার মনে হলো, তাহলে এটাই কি মৃত্যু? ভয়ঙ্কর এক ধরনের দুঃস্বপ্ন দেখছিল য়ুহা, পাহাড়ের খাড়া ঢাল বেয়ে সে গড়িয়ে যাচ্ছে, নিজেকে থামানোর চেষ্টা করছে, পারছে না। নিচে লকলক আগুন, সেই আগুনের প্রচণ্ড তাপে তার শরীরের চামড়া গলে গলে পড়ে যাচ্ছে, ভয়ঙ্কর কিছু প্রাণী তাকে ঘিরে ফেলেছে, শরীরটাকে ছিঁড়ে ছিড়ে খাচ্ছে আর সে প্রচণ্ড যন্ত্রণায় চিৎকার করছে। এর মাঝে ভাসা ভাসাভাবে তার জ্ঞান ফিরে এসেছে। তীব্র আলোর ঝলকানি, মানুষের আর্তচিৎকার আর ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণের শব্দ শুনে সে আবার জ্ঞান হারিয়েছে। অচেতন অবস্থায় সে টের পেয়েছে তার দেহটা মহাকাশযানের এক মাথা থেকে অন্য মাথায় ছিটকে গেছে, আঘাতে আঘাতে তার সারা শরীর ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে। য়ুহার জ্ঞান ফিরে পাবার পরও সে বুঝতে পারল না কোথায় আছে। চারপাশে অসংখ্য জঞ্জাল ভেসে বেড়াচ্ছে, তার মাঝে সে নিজেও ভাসছে। য়ুহা হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, তার মাঝে এক ধরনের আতঙ্ক এসে ভর করে, সে কি হঠাৎ করে নিচে পড়বে, শরীরের সবগুলো হাড় গুঁড়ো হয়ে যাবে? কিন্তু য়ুহা পড়ল না, সে মহাকাশযানের ভেতরে ভাসতে লাগল।য়ুহা মাথা ঘুরিয়ে চারদিকে তাকালো, একটা লাল আলো একটু পরে পরে ঝলকানি দিচ্ছে কিন্তু সেই কর্কশ এলার্মের শব্দটি নেই। চারপাশে এক ধরনের নীরবতা, সেই ভয়ঙ্কর নৈঃশব্দ বুকের মাঝে এক ধরনের ভয়ের কাপুনি ছড়িয়ে দেয়। য়ুহা নিজের অজান্তেই সোজা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল, পারল না কিন্তু হঠাৎ করে তার সারা শরীরটা বিচিত্রভাবে ওলটপালট খেতে থাকে। শরীরের কোথাও কোথাও ভয়ঙ্কর এক ধরনের বেদনা–কে জানে হাড়গোড় কিছু ভেঙেছে কি না। য়ুহা দাঁতে দাঁত কামড়ে ব্যথাটুকু সহ্য করল। নিজেকে থামানোর জন্যে সে হাত বাড়িয়ে কিছু একটা ধরার চেষ্টা করল, হঠাৎ করে যেটা ধরল সেটা হাত থেকে ছুটে বেরিয়ে যায়–একজন মানুষের শীতল দেহ! রুহা ভয় পাওয়া গলায় চিৎকার করে উঠে চারদিকে তাকায়, সবাই কি মারা গেছে?


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৩৯৭ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now