বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
আমার দুর্বল স্বাস্থ্যের পক্ষে সকালবেলাটা তাই খুবই শ্রমটা একটু বেশীই হয়েছিল। বিকেলবেলাটা তাই খুবই ক্লান্ত লাগছিল। হোমস কনসার্টে চলে গেল, আমি সোফায় শুয়ে কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়ে নিতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু বৃথা চেষ্টা। সকালবেলাকার ঘটনাবলীতে আমার মন খুবই সেখানে ঢুঁ মেরে চলেছে। যতবার চোখ বুজি, চোখের সামনে ভেসে ওঠে নিহত লোকটির বিকৃত বেবুনের মত মুখ। ঐ মুখটা আমার মনের উপর এমন একটা অশুভ প্রভাব বিস্তার করেছিল যার ফলে ঐ মুখের মালিককে যে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা ছাড়া আর কিছু অনুভব করা আমার পক্ষে কষ্টকর হয়ে পড়েছিল। মানুষের মুখে যদি জঘন্যতম কোন পাপের প্রকাশ হয়ে থাকে তবে সে মুখ ক্লিভল্যান্ডের এনক জে, ড্রেবারের। তথাপি আমি স্বীকার করি, ন্যায় বিচার অবশ্য হওয়া উচিত; মৃতের দুশ্চরিত্রতার জন্য আইনের চোখে অপরাধীর কোন ক্ষমা থাকতে পারে না।
যতই ভেবেছি ততই মানে হয়েছে, লোকটিকে বিষ-প্রয়োগ করা হয়েছে বলে আমার সঙ্গী যে মত প্রকাশ করেছে সেটা অসাধারণ। মনে পড়ছে, সে মৃতের ঠোঁট দুটো শুঁকেছিল: নিশ্চয় এমন কিছু সে পেয়েছে যার ফলে তার মনে এই ধারণা জন্মেছে। তাছাড়া, বিষপ্রয়োগ না হলে আর কিভাবে লোকটির মৃত্যু হতে পারে? মৃত-দেহে আঘাতের বা শ্বারোধের কোন চিহ্ন নেই। আবার ভেবে দেখতে হবে, তাহলে কার রক্ত মেঝের উপর পুরু হয়ে ছড়িয়ে ছিল? ধৃস্তাধৃস্তির কোন চিহ্ন পাওয়া যায় নি, বা নিহতের কাছে এমন কোন অস্ত্র ছিল না যা দিয়ে সে প্রতিপক্ষকে আঘাত করতে পারে। এসব প্রশ্নের মীমাংসা যতক্ষণ না হচ্ছে ততক্ষণ হোমস বা আমি কারও পক্ষেই ঘুমানো সহজ নয়। তার শান্ত আত্মবিশ্বাসের ভাব দেখে মনে হচ্ছে এমন একটা সিদ্ধান্ত যে কি এক পলকের জন্যও আমি তা ভাবতে পারছি না। তার ফিরতে বেশ দেরী হয়েছিল—এত দেরী যে আমি জানতাম ঐ কনসার্ট তাকে এতক্ষণ আটকে রাখতে পারে না। তার আসার আগেই টেবিলে রাতের খাবার দেওয়া হয়েছিল।
আসন গ্রহণ করতে করতে সে বলল, অপূর্ব! সঙ্গীত সম্পর্কে ডারুইন কি বলেছেন তোমার মনে পড়ে? তিনি বলেছেন, কথা বলতে শেখার আগেই মানুষ গান গাইতে ও গান ভালবাসতে শিখেছিল। সেইজন্যই বোধ হয় গানের দ্বারা আমরা এতটা প্রভাবিত হই। যে কুয়াসাচ্ছন্ন শতাব্দীতে পৃথিবী তার শৈশব অবস্থায় ছিল তার অস্পষ্ট স্মৃতি এখনও আমাদের বাসা বেঁধে আছে।’
‘ওটা তো খুব বড় কথা,’ আমি মন্তব্য করলাম।
সে বলল, ‘প্রকৃতিকে জানতে হলে আমাদের ধারণাকেও প্রকৃতির মত বড় হতে হবে। ব্যাপার কি বল তো? তোমাকে যেন কেমন দেখাচ্ছে। ব্রিক্সটন রোডের ব্যাপারটা দেখছি তোমাকে খুবই বিচলিত করেছে।’
আমি বললামি, ‘সত্যি তাই: আফগানিস্থানের অভিজ্ঞতার পরে আমার মনটা আরও শক্ত হওয়া উচিত ছিল। মাইওয়ান্দে নিজের চোখে আমার সঙ্গীদের কুচকাটা হতে দেখেছি। তাতে তো এমন বিচলিত হই নি।’
‘বুঝতে পারছি। এখানে এমন একটা রহস্য রয়েছে যা কল্পনাকে উদ্দীপ্ত করে। যেখানে কল্পনা নেই, সেখানে ভয়ও নেই। সন্ধ্যার কাগজটা পড়েছ কি?’
‘না।’
‘তাতে এ বিষয়ে একটা মোটামুটি ভাল বিবরণ দিয়েছে। তবে লোকটিকে তুলবার সময় একটি বিয়ের আংটি যে মেঝেতে পড়েছিল, সেকথা লেখে নি। না লিখে ভালই হয়েছে।’
‘কেন?’
‘এই বিজ্ঞাপনটা দেখ। ঘটনার ঠিক পরে সকালেই এটি সব কাগজে পাঠাবার ব্যবস্থা করেছিলাম।’
কাগজটা সে আমার দিকে ছুঁড়ে দিল। তার নির্দেশ মত জায়গাটা পড়লাম। ‘প্রাপ্তি’ স্তম্ভে সেটি প্রথম ঘোষণা। তাতে লেখা, ‘ব্রিকসটন রোডে আজ সকালে হোয়াইট হার্ট ট্যাভার্ন ও হল্যান্ড গ্রোভের মধ্যবর্তী রাস্তায় একটি নিরেট সোনার বিয়ের আংটি পাওয়া গিয়াছে। আজ সন্ধ্যা আটটা থেকে ন’টার মধ্যে ২২১ বি, বেকার স্ট্রীটে ডঃ ওয়াটসনের নিকট আবেদন করুন।’
‘তোমরা নামটা ব্যবহার করেছি বলে ক্ষমা করো। আমার নাম ব্যবহার করলে ওই সব আহাম্মকদের কেউ কেউ হয় তো চিনে ফেলত আর অকারণে নাক গলাত।’
‘ঠিক আছে।’ আমি বললাম, ‘কিন্তু ধরো যদি কেউ আসে, আমার কাছে তো আংটি নেই।’
আমার হাতে একটি আংটি দিয়ে সে বলল, ‘আলবৎ আছে। এতেই কাজ চলবে। এটা অবিকল একই রকম।’
‘এই বিজ্ঞাপনের ফলে কে আসবে তুমি আশা কর?’
‘কেন? বাদামী কোট পরা লোকটি—চৌকো ডগা-ওয়ালা জুতোপরা আমাদের সেই লালমুখ বন্ধু। স্বয়ং না এলে কোন স্যাঙাৎকে পাঠাবে।’
‘একজটাকে সে কি খুব বিপজ্জনক বলে মনে করবে না?’
‘মোটেই না। এই কেস সম্পর্কে আমার অভিমত যদি সত্য হয়,–অবশ্য এবিষয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই—কোন ঝুঁকি নেবেই। আমার মতে ড্রেবারের মৃতদেহের উপর ঝুঁকে পড়বার সময় সে আংটি হারানোর পরিবর্তে যে কোন ঝুঁকে পড়বার সময় সে আংটিটি ফেলে দেয়, কিন্তু তখন বুঝতে পারে না। বাড়ি থেকে চলে যাবার পর সেটা বুঝতে পেরেই আবার ফিরে আসে। কিন্তু নিজের নিবুদ্ধিতায় মোমবাতিটা জ্বেলে রেখে যাওয়ায় ততক্ষণে সেটা পুলিশের হাতে চলে গেছে। গেটের কাছে তার উপস্থিতিতে পাছে কোনরকম সন্দেহ হয়, তাই সে মাতা-লের ভান করে। এইবার ওই লোকটার জায়গায় নিজেকে, বসাও। দ্বিতীয় চিন্তায় নিশ্চয় তার মনে হয়েছিল যে, হয় তো ঐ বাড়িটা থেকে চলে যাবার পরে পথেই কোথাও আংটিটা হারিয়ে গেছে। সে তখন কি করবে? হারানো জিনিস প্রাপ্তির কলমে ওটার খবর দেখবার আশায় সে নিশ্চয় সান্ধ্য সংবাদপত্রগুলি আগ্রহসহকারে পড়বে। ফলে এই বিজ্ঞাপনের উপর তার চোখ পড়বেই। আনন্দে সে উল্লসিত হয়ে উঠবে। ফাঁদের কথা তার মনে পড়বে কেন? আংটি হারানোর সঙ্গে খুনের কোন সর্ম্পক থাকতে পারে না। আসতেই সে চাইবে। সে নিশ্চয়ই আসবে। এক ঘন্টার মধ্যে তাকে আমরা দেখতে পাব।’
‘তারপর?’ আমি প্রশ্ন করলাম।
‘তাকে মোকাবিলা করার ব্যাপারটা আমার উপরই ছেড়ে দাও। তোমার সঙ্গে কোন অস্ত্র আছে কি?’
‘পুরনো একটা সামরিক রিভলবার ও কয়েকটি কার্তুজ সঙ্গে আছে।’
‘সেটাকে পরিষ্কার করে গুলি ভরে রাখ। লোকটা বেপরোয়া হয়ে উঠবে। যদিও তাকে আমি অতর্কিতে আক্রমণ করব, তবু যে-কোন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকা ভাল।’
শোবার ঘরে গিয়ে তার কথামত কাজ করলাম। পিস্তল নিয়ে ফিরে গিয়ে দেখি টেবিল পরিষ্কার করা হয়ে গেছে এবং হোমস যথারীতি বেহালায় ছড় টেনে চলেছে।
আমি ঘরে ঢুকতেই সে বলল, ‘ষড়যন্ত্র ক্রমেই ঘণী-ভূত হচ্ছে। আমেরিকায় যে টেলিগ্রাম করেছিলাম এইমাত্র তার জবাব এল। এ কেসের ব্যাপারে আমার সিদ্ধান্ত নির্ভুল।’
‘সেটা কি?’ আমি সাগ্রহে প্রুশ্ন করলাম।
সে শুধু বলল, ‘নতুন তার লাগালেই বেহালাটা ভাল বাজবে। পিস্তলটা পকেটে রাখ। লোকটা এলে খুব সহজভাবে কথা বলো। বাকিটা আমি বুঝব। কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে যেন ভয় পাইয়ে দিও না।’
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘এখন আটটা বাজে।’
‘হ্যাঁ। সম্ভবত কয়েক মিনিটের মধ্যেই সে হাজির হবে। আস্তে দরজাটা খুলে দাও। ঠিক আছে। চাবিটা ভিতরে লাগিয়ে রাখ। ধন্যবাদ। এটা একটা অদ্ভুত পুরনো বই—“ডি জুরে ইন্টার জেস্টেস।” কাল একটা স্টলে খুঁজে পেয়েছি। ১৬৪২ সালে লোল্যা-ডসের অন্তর্গত লীজ থেকে ল্যাটিন ভাষায় প্রকাশিত। চার্লসের মাথা তখনও তাঁর ঘাড়ের উপরে খাড়া ছিল। সেই সময়েই এই বাদামী মলাটের ছোট বইটাকে বাতিল করা হয়েছিল।’
‘‘মুদ্রাকর কে?’
‘কে এক ফিলিস্পি ডি ক্রয়। প্রথম পাতায় খুব অস্পষ্ট কালিতে লেখা“Ex Libris Guliemi Whyte” জানি না কে এই উ্ইলিয়াম হোয়াইট। হয়তো সপ্তদশ শতাব্দীর কোন ধুরন্ধর আইনজীবী। তার লেখায় একটা আইনগত প্যাঁচ আছে। মনে হচ্ছে, লোকটি আসছে।’
কথার সঙ্গে সঙ্গেই ঘণ্টাটা জোরে বেজে উঠল আস্তে উঠে হোমস চেয়ারটাকে দরজার দিকে ঠেলে দিল। শুনতে পেলাম, পরিচাব্রিকা হলের ভিতর হলের ভিতর দিয়ে এগিয়ে গিয়ে হুট করে তালা খুলে দরজা খুলে দিল।
‘ডঃ ওয়াটসন কি এখানে থাকেন?’ একটি স্পষ্ট কর্কশ কণ্ঠের প্রশ্ন কানে এল। পরিচারিকার জবাব শুনতে পেলাম না। কিন্তু দরজা বন্ধ হয়ে গেল এবং একজন কেউ সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে এল। পায়ের শব্দ অনিশ্চিত এবং এলোমেলো। কান পেতে শুনে আমার সঙ্গীর চোখেমুখে একটা বিস্ময়ের আভা খেলে গেল। পায়ের শব্দ ধীরে ধীরে প্যাসেজ পার হয়ে এল। আস্তে দরজায় একটা টোকা পড়ল।
‘ভিতরে আসুন,’ আমি জোরে বললাম।
আমার ডাকে প্রত্যাশিত একটি দুর্ধর্ষ লোকের বদলে একটি কুঞ্চিতমুখ বৃদ্ধা ঘরে ঢুকল। ঘরের আকস্মিক কড়া আলোয় তার চোখ যেন ঝলসে গেল।
অভিবাদন জানিয়ে সে আমাদের দিকে মিটমিট করে তাকাতে লাগল। হাতের আঙুলগুলো বুঝি বা পকেটের মধ্যেই কাঁপছে। সঙ্গীর দিকে তাকালাম। তার মুখে নিরাশার ছায়া।
সান্ধ্য দৈনিকখানা বের করে বুড়ি আমাদের বিজ্ঞাপনটা দেখাল। তারপর আর একবার মাথা নুইয়ে বলল, ‘মশায়রা, এইটে দেখেই এখানে এসেছি। ব্রিকসটন রোডে একটা সোনার বিয়ের আংটি। এই বারো মাস হল তার বিয়ে হয়েছে। সোয়ামি রাজকীয় নৌবহরের সরকার। ফিরে এসে সে যখন দেখবে বৌ-এর হাতে আংটি নেই, তখন কি যে হবে আমি ভাবতেই পারছি না। ভাল সময়েই তার টানাটানি চলে, যখন মদে চুর হয় তখন তো কথাই নেই। কাল রাতে সে সার্কাস দেখতে—’
‘এটা তার আংটি কি?’ আমি জিজ্ঞাসা করলাম।
বুড়ি চেঁচিয়ে উঠল, ‘যীশুকে ধন্যবাদ! আজ রাতে শাবী স্বস্তি পাবে। ঐ আংটিটাই।’
একটা পেন্সিল হাতে নিয়ে বললাম, ‘তোমার ঠিকানা কি?’
’১৩-ডানকান স্ট্রীট, হাউন্ডসডিচ। এখান থেকে অনেকটা পথ।’
সঙ্গে সঙ্গে শালক হোমস বলে উঠল, ‘কেন সার্কাস অন্য হাউন্ডসডিচের মধ্যে তো ব্রিকসটন রোড পড়ে না।’
বাড়ি ঘুরে দাঁড়িয়ে লাল চোখ মেলে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল। বলল, ‘ভদ্রলোক আমার ঠিকানা জানতে চেয়েছেন। স্যালী থাকে ০,. মেফিল্ড প্লেস, শেষহাম-এ।’
‘আর তোমার নাম?’
‘আমার নাম সয়ার—মেয়ের নাম ডেনিস, কারণ টম ডেনিস তাকে বিয়ে করেছে। যতদিন সমুদ্রে থাকে ছোকরা খুব চালাক-চতুর। কোম্পানির আর কোন সরকারের ওর মত সুনাম নেই। কিন্তু মাটিতে পা দিলেই মেয়েমানুষ আর মদের দোকানে মিলে—’
সঙ্গীর ইঙ্গিতে আমি বাধা দিয়ে বললাম, ‘মিসেস সয়ার, এই তোমার আংটি। নিশ্চয় এটা তোমার মেয়ের। প্রকৃত মালিককে এটা ফিরিয়ে দিতে পারায় আমি খুশি।’
অনেক আশীর্বাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বুড়ি আংটিটা পকেটে ফেলে সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেল। সঙ্গে সঙ্গে শালক হোমস লাফ দিয়ে উঠে তার ঘরে ছুটে চলে গেল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই অলেস্টার আর গলাবন্ধ পরে ফিরে এসে খুব তাড়াতাড়ি বলল, ‘আমি ওর পিছু নেব। ও নিশ্চয়ই দলের লোক। ওর সঙ্গে গেলেই তার হদিস মিলবে। আমার জন্য জেগে থেক।’ নীচে হলঘরের দরজা বন্ধ হবার সঙ্গে সঙ্গেই নীচে নেমে গেল। জানালা দিয়ে আমি দেখতে পেলাম, রাস্তার ওপার দিয়ে বুড়ি দুর্বল পায়ে এগিয়ে চলেছে, আর তার অনুসরণকারী কিছুটা দুরে থেকে তার পিছু নিয়েছে। মনে মনে ভাবলাম, হয় তার সমস্ত সিদ্ধান্তটাই ভুল আর না হয় তো এবার সে রহস্যের একেবারে মাঝখানে গিয়ে পড়বে। আমাকে জেগে থাকতে বলার কোন দরকারই ছিল না, কারণ তার এই অভিযানের ফলাফল না জানা পর্যন্ত ঘুমানো আমার পক্ষে অসম্ভব।
প্রায় ন’টা নাগাদ সে বেরিয়ে গেল। কখন ফিরবে জানি না। তাই বোকার মত বসে পাইপ টানতে টানতে হেনরি মার্জারের “ভাই ডি বোহেম” এর পাতা ওল্টাতে লাগলাম। দশটা বাজল। পরিচারিকার পায়ের শব্দ তার শোবার ঘরের দিকে মিলিয়ে গেল। এগারোটা, এবার গৃহকত্রীর পায়ের শব্দও ঐ একই লক্ষ্যপথে আমার দরজার পাশ দিয়ে চলে গেল। প্রায় বারোটা নাগাদ তার সিটকিনির চাবির শব্দ শুনতে পেলাম। ঘরে ঢোকামাত্রই তার মুখ দেখে বুঝলাম, কোন কাজ হয় নি। ফূর্তি ও বিরক্তি পাঞ্জা লড়তে লড়তে একসময়ে ফূর্তিরই জয় হল,–সে হো হো করে হেসে উঠল।
চেয়ারে বসে পড়ে সে চেঁচিয়ে বলে উঠল ‘স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের লোকদের এ খবর কিছুতেই জানতে দেব না। তাদের আমি এত ঠাট্টা-বিদ্রুপ করেছি, যে তারা কিছুতেই এর শেষটা আমাকে শুনতে দেবে না। আমি এখন হাসছি, কারণ আমি জানি অচিরেই আমি তাদের দলেই ভিড়ে যাব।’
‘ব্যাপার কি?’ আমি জানতে চাইলাম।
‘ওঃ, ইচ্ছার বিরুদ্ধেও গল্পটা বলতে বাধা নেই। কিছুদুর গিয়েই ওই জীবটি খোঁড়াতে আরম্ভ করল, আর পায়ে ঘা হবার সব লক্ষণ দেখাতে শুরু করল। একটু পরেই সে থামল এবং একটা চার চাকার গাড়িকে ডাকল। পরেই সে থামল এবং একটা চার চাকার গাড়িকে ডাকল। ঠিকানাটা শুনবার জন্য আমি এগিয়ে কাছে গেলাম। কিন্তু তার কোন দরকার ছিল না, কারণ সে এত জোরে ঠিকানাটা ঘোষণা করল যে রাস্তার ওপাশ থেকে শোনা যেত। চীৎকার করে বলল, “১৩, ডানকান স্ট্রীট,হাউন্ডসডিচ-এ চালাও।” ভাবলাম তাহলে তো সবই ঠিক। যাহোক, তাকে গাড়ির ভেতরে উঠতে দেখেই আমি পিছন উঠে বসলাম। গোয়েন্দামাত্রকেই একাজে খুব দক্ষ হতে হয়। গাড়ি ছুটে চলল। পূর্বকথিত রাস্তায় পৌঁছে তবে রাস টানল। বাড়ির দরজায় পৌঁছেই আমি লাফ দিয়ে নেমে পড়লাম এবং হাওয়া খাবার ভঙ্গিতে রাস্তা ধরে হাঁটতে লাগলাম। রাশ টানতে গাড়িটা থামল। গাড়োয়ান লাফ দিয়ে নীচে নেমে দরজা খুলে দাঁড়াল। কিন্তু কেউ গাড়ি থেকে নামল না। এগিয়ে গিয়ে দেখি, সে পাগলের মত গাড়ির ভিতরটা খুঁজছে আর নানা রকম অশ্রাব্য গালিগালাজ উচ্চারণ করেছে।গাড়ির আরোহীর কোন পাত্তাই পাওয়া গেল না।বেচারি তার ভাড়াটাও পাবে কিনা সন্দেহ। ১৩ নম্বরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ঐ বাড়ির মালিক কেসুইক নামে এক সম্ভ্রান্ত ভদ্রলোক এবং ও অঞ্চলে কেউ সয়ার বা ডেনিসের নামও কখনও শোনে নি।’
আমি সবিস্ময়ে বলে উঠলাম, ‘তুমি কি বলতে চাও যে ওই দুর্বল থুথুড়ে বুড়ি তোমায় বা গাড়োয়ানের অজ্ঞাতেই চলন্ত গাড়ি থেকে পালিয়েছে?’
শালক হোমস তীক্ষ্মকণ্ঠে বলে উঠল, ‘বুড়ি জাহান্নামে যাক। আমরাই যে বুড়ি বনে গিয়েছি। সে একটি কর্মঠ যুবক। অতুলনীয় অভিনেতা তো বটেই। তার রুপ-সজ্জা অননুকরণীয়। আমি যে তার পিছু নিয়েছি সেটা বুঝতে পেরেই সে কেটে পড়বার এই পথ বেছে নিয়েছিল। বোঝা যাচ্ছে, লোকটা একা নয়, তার এমন সব সাকরেদ আছে যারা তার জন্য যেকোন ঝুঁকি নিতে রাজী। আরে ডাক্তার, তোমাকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে। আমার কথা শোন, শুয়ে পড়গে।’
সত্যি আমি খুব ক্লান্ত বোধ করছিলাম। তার কথাই শুনলাম। জ্বলন্ত অগ্নি-কুন্ডের পাশে হোমসকে বসিয়ে রেখে আমি চলে গেলাম। অনেক রাত পর্যন্ত তাঁর বেহলার নীচু করুণ আর্তনাদ আমার কানে এলো। বুঝতে পারলাম, যে বিস্ময়কর রহস্যের সমাধানে সে আত্মনিয়োগ করেছে তখনও সে তার কথাই ভেবে চলেছে।(সংগ্রীহিত)
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
Rakibul Hasib
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেEshrat Jahan
Golpobuzz ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেEshrat Jahan
Golpobuzz ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেEra
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেMd: Atiqur Rahman Atik
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেEshrat Jahan
Golpobuzz ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেEshrat Jahan
Golpobuzz ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেEra
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেMd: Atiqur Rahman Atik
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেEshrat Jahan
Golpobuzz ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেEra
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেEshrat Jahan
Golpobuzz ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেEshrat Jahan
Golpobuzz ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেRakibul Hasib
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেTamim
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেEshrat Jahan
Golpobuzz ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেRakibul Hasib
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেEshrat Jahan
Golpobuzz ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেRakibul Hasib
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেRakibul Hasib
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেEshrat Jahan
Golpobuzz ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেRakibul Hasib
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেEshrat Jahan
Golpobuzz ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেRehnuma Ahmed
Golpobuzz ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেRakibul Hasib
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেRehnuma Ahmed
Golpobuzz ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বে☣KM SAJU AHMED ROKIB☣
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেRakibul Hasib
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেFarzana Borsha
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেNahida Afrin Jany
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেFarzana Borsha
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেNahida Afrin Jany
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেFarzana Borsha
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেNahida Afrin Jany
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেNahida Afrin Jany
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেFarzana Borsha
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেNahida Afrin Jany
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেSirajam Munira(Era)
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেFarzana Borsha
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেIshika Ishu
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেIshika Ishu
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেRakibul Hasib
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেIshika Ishu
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেNahida Afrin Jany
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেIshika Ishu
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেNahida Afrin Jany
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেRakibul Hasib
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেSirajam Munira(Era)
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেRakibul Hasib
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেমেহেরাজ হাসনাইন
Golpobuzz ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেRakibul Hasib
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেIshika Ishu
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেNahida Afrin Jany
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেমেহেরাজ হাসনাইন
Golpobuzz ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেRakibul Hasib
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বে