গতিশীল জীবন

X পৃথিবী ছুটছে, আমরাও ছুটছি। পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ছুটছে আর আমরা যে দিকে তাকায় সে দিকেই ছুটছি। কেউ অর্থের পিছে, কেউ চাকরির পিছে, কেউ সুখের পিছে, কেউ সম্মানের পিছে, কেউবা সুন্দরী নারীর পিছে। পৃথিবী যেমন নিজ অক্ষের উপর ছুটছে তেমনি আমরাও ছুটছি। আমরা লোভী, স্বার্থপর হয়ে গেছি। তা না হলে কেউ কি আজ, টাকার পিছে ছুটে? টাকা হবে, সুখে থাকবো। আরাম আয়েশে থাকবো। ভাবনাগুলো খারাপ না। কিন্তু, সামান্য আরাম আয়েশের জন্য আমরা নিজেদের সত্তাকে বিক্রি করে দিচ্ছি তা নয় কি? ঘুষ নিচ্ছি। আরও কত কি। কেউবা ছুটছি চাকরির পিছে। ভালো একটা চাকরি পেলে বাবা-মায়ের মুখে দুটো ভাত তুলে দিতে পারবো। বাবা-মায়ের কষ্টটা একটু কমাতে পারবো। এইটা কি খারাপ? না। খারাপ না। কিন্তু,আমরা কি এমনটা করছি নে যে, চাকরির পিছে ছুটতে ছুটতে আমরা সব ভুলেই যাচ্ছি। আমরা মানুষ। মানুষের শুধু চাকরি করলেই হবে না। আখিরাত নিয়েও ভাবতে হবে। কয় জন ভাবছি বলেন? কেউবা ছুটছি সুন্দরী নারী পাবার জন্য। একটা ভালো চাকরি পেলে একটা সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করতে পারব। এখন এমন কয়টা বাবা-মা পাওয়া যাবে যারা বেকার যুবকের হাতে মেয়ে দিতে রাজি। তাহলে? বউ পেতে হলেও এখন চাকরি লাগে। এটা কি-বাবা মায়ের ভুল হচ্ছে নাহ? বাবা-মা তো চাইছে আমার মেয়ে সুখে থাকুক। এটা কি খারাপ? নাহ। খারাপ না। কিন্তু, এখন কেমন হচ্ছে? একটা ধনী পরিবারের ছেলের সাথে একটা ধনী পরিবারের মেয়ের বিয়ে। তার মানে কি? যে পেলো সে সব পেলো আর যে পেলো না সে কিছুই পেলো না। এবার আসি সম্মানে।চাকরি পেলে সম্মান বাড়বে। উচ্চপদে পদোন্নতি হলে , সবাই সম্মান করবে। ইত্যাদি ইত্যাদি............ । এখনকার আধুনিক যুগের কথা বলি, প্রেম ভালোবাসা ছাড়া জীবন অচল হয়ে গেছে। এমন কয়টা ভালোবাসা আছে যে, সারা জীবন হাতে হাত রেখে চলার সপ্ন দেখে? এমন কয়টা ভালোবাসা আছে যে যারা একটা ভালোবাসার মানুষ নিয়েই খুশি। এখনও আছে কিন্তু খুবই নগণ্য। আজ যে মানুষটা আপনাকে খুব ভালোবাসে , হইতো সেই কিছুক্ষন পর বলবে, আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি বা বাসা থেকে অন্য কারোর সাথে বিয়ে ঠিক করেছে আমি অন্য কেউকে বিয়ে করবো। বাবা-মায়ের কথা ভাবে এমন মানুষ কখনো খারাপ হতে পারে না। এজন্য সেই মানুষটাকে ফেলে চলে যাবে তাও কিন্তু নাহ। চেষ্টা তো করতে পারে যতটুকু সম্ভব। তাই না? আপনি যার সাথে প্রেম করছেন তার হইতো টাকা নেই। যখনই অন্য একটা মানুষ এসে আপনাকে ভালোবাসার প্রস্তাব দেবে। তখন আপনার চিন্তা আসবে, আমি যাকে ভালোবাসি তার সাথে না, যে আমাকে ভালোবাসে আমি তার সাথে সুখী থাকবো। দুই জনই তো আমাকে ভালোবাসে, কিন্তু ঐ ছেলের কিছু নাই। আর অন্য ছেলেটার আছে। যার আছে তাকে বাবা-মা মেনেও নেবে। তাহলে এই ছেলেটাই বেটার। এটা কি ঠিক? বেটার অপরচুনিটির জন্য যে আপনাকে ছেড়ে দিল, সে কি আপনাকে কখনো মন থেকে ভালোবেসেছিলো? না, ভালোবাসা ছিলো না ছিলো আবেগ। বাস্তবতার কাছে আবেগ হার মেনে নিল। যে ছেলেটা আজ অসহায়, যার পাশে আজ আপনার দাড়ানো উচিৎ ছিল , কিন্তু আপনি দাড়িয়েছেন অন্য করার পাশে। হইতবা অসহায় ছেলেটাও একদিন বৃত্ববান হবে। কিন্তু, সে কি আপনাকে কোনোদিন মেনে নিতে পারবে? বলেন? এবার আসি সেই ছেলেদের কথাই, যারা জব পেয়েও বলে, এইতো জব পেলাম। কিছুটা সময় লাগবে, গুছাতে। ভেবে দেখেন তো, যার কাছে আপনিই সব , সে আপনার এই কথাটাই কতটুকু কষ্ট পাবে। আপনি এখন সুখে আছেন, যে মানুষটা আপনার দুঃসময়ে পাশে ছিল, এখন সে পাশে থাকলে আপনার জীবন তো সেই গুছিয়ে দেবে। তাই নাই কি?? আসলে আমরা দিন দিন লোভী আর স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছি, সব সময় নিজের কথায় ভাবছি। সুখ, চাকরি, সম্মান, মেয়ে যেটিই চায়না কেনো অর্থ প্রয়োজন। আর আমরা সেই অর্থের পিছে ছুটছি। আমিও ছুটছি, এই মুহূর্তে কিসের পিছে আমি ছুটছি জানা নেই। কিন্তু ছুটতে হবে কিছু একটার পিছে তাই নয় কি?? আমাদের যার যতটুকু আছে যদি আমরা তাতেইখুশি থাকার চেষ্টা করি, হইতো আমরা তাতে বেশি ভালো থাকবো। উপদেশ না ভাই। যা বাস্তবে ঘটছে তাই উপস্থাপন করলাম। আর উপদেশ দেবার মত আমি এখনও হয় নাই। আমি সিনিয়ার না, জুনিয়ার। এইটাই প্রথম লেখা আমার। ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা চাচ্ছি। আসলে, নিউটনের প্রথম সূত্রের দ্বিতীয় অংশের সাথে মিল পাওয়া যায়। "বাহ্যিক কোন বল প্রয়োগ না করলে স্থির বস্তু স্থির থাকবে এবং গতিশীল বস্তু সুষম দ্রুতিতে (গতি) সরল পথে চলতে থাকবে।" আমরা ২য় অংশে আছি। ছুটতে শুরু করে দিয়েছি, গতিশীল হয়েছি , হইতো কেয়ামতের আগ পর্যন্ত এইভাবে চলতেই থাকবো।