বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

বিড়ম্বনা

"মজার অভিজ্ঞতা" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান অন্তরা (০ পয়েন্ট)

X বিড়ম্বনা টুকিটাকি লেখার সুবাদে আমাকে বিভিন্ন সময় বিচিত্র পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। একবার বাসে করে মানিকগঞ্জ থেকে ফিরছিলাম। একজন কবি ফোনে তার কবিতার এডিট চাচ্ছিলেন। এ বিষয়ে কথা বলছিলাম। কথা শেষ হলে পাশের ভদ্র লোক জিজ্ঞেস করলেন, “ভাই আপনি কি লেখক ? “আমি বললাম না , মানে বলতে পারেন ফেইস বুক লেখক। এমন লেখক তো বর্তমানে সবাই। আপনিও কি লেখক ? : না ভাই। আমি পাঠক। আপনি কি নামে লিখেন ? : আবু জিয়াদ। : বলেন কি ? দেখুন তো এই আইডি কি আপনার ? “ এই বলে ভদ্র লোক তার মোবাইলে আমার প্রোফাইল দেখালেন। : জ্বী ভাই। : বলেন কি ? তাহলে আপনিই আবু জিয়াদ !! ভদ্র লোকের যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না। একবার এক ভদ্র মহিলা আমাকে ইনবক্স করলেন। : এই যে লেখক সাহেব ? : জ্বী বলুন। : আপনি কি আমাকে চিনেন ? : না তো ? কেন ? : মিথ্যা বলেন কেন ? : আরে ভাই মিথ্যা বলতে যাব কেন ? কি হয়েছে বলুন ? : কি হয়েছে আপনি জানেন না ? : না। জানি না। : আমাকে নিয়ে কবিতা লিখেন কেন ? আবার বলেন চিনেন না ? : আপনি আমাকে চিনেন ? : না। তবে সেটা জানি যে আপনাদের মত ছিঁচকে লেখকরা সুন্দরী মেয়ে দেখলেই কবিতা লেখা শুরু করে। : তাই ! : চরিত্র ভালো করুন। লেখা দিয়ে জীবনে কি হবে যদি চরিত্র ভালো না থাকে ? : আচ্ছা চরিত্র ভালো করবো। : আপনার লেখা ভালো লাগে তাই সি ফার্স্ট দিয়ে রেখেছিলাম।এখন দেখি আপনিও সবার মত। পিক দেখেই কবিতা লেখা শুরু করেন। আর লিখবেন না। পারলে অন্য কোনো মেয়েকে নিয়ে লিখুন। : তাই হবে। লিখব না। তবে আপনিও প্রোফাইল থেকে আপনার ছবি সরিয়ে ফেলুন। না হয় এমনটা ঘটতেই থাকবে। গন্দম বলে কথা। মানুষ নিষেধের প্রতি জোঁকে বেশি। আমারও হলো তাই। মহিলার প্রোফাইলে যেয়ে আমি তো অবাক ! এতো সুন্দর মানুষও তাহলে হয় ? ঘন কালো জোড়া ব্রু , টানা টানা ডাগর চোখ, উন্নত নাসিকা, কমলা কোয়া ঠোঁট, পরিপাটি দাঁত, আপেল রাঙ্গা গাল , আর ছিমছাম দেহের লম্বা চৌড়া অষ্টাদশী। এবার মাথায় চেপে বসল আস্ত বড় ভূত। আগে কবিতা লিখতাম অদৃশ্য নারী কল্পনা করে এখন সাক্ষাত নারীকে নিয়ে কবিতা লেখা শুরু করলাম। একটি করে কবিতা লিখি আর পোস্ট করি, অমনি তিনি নতুন করে ঝগড়া বাঁধান। আমার কাছে তখন ঝগড়াও মধুর লাগে। বুঝতে পারি কেন পাশের বাড়ির আংকেলরা রোজ রোজ। নিয়ম করে ঝগড়া করেন। এভাবে বেশি দিন যায়নি । ভদ্র মহিলা মানে পাঠিকা কেঁদে কেটে একাকার। তার মান সম্মান সব আমি জলে মিশিয়ে দিচ্ছি, তাকে হেয় করছি। এমন কি তিনি হাতে পায়ে পর্যন্ত ধরার অবস্থা, তবু আমি যেন অন্তত তাকে নিয়ে না লিখি। আমি পড়ে গেলাম মহাবিপদে। কোন ভাবেই বুঝাতে সক্ষম হলাম না যে আমি তার জন্য লিখছি না। তিনি নাছোড় বান্দা বারবার রাগারাগী অপমান আর অনুরোধ তাকে নিয়ে যেন আর না লিখি। অগত্যা লিখা লিখি ছেড়েই দিলাম। কিছু দিন যেতে না যেতেই আমাকে অবসাদে পেয়ে বসলো। লিখে যে আনন্দ পেতাম তা আর পাচ্ছিলাম না। অথচ বেঁচে থাকার জন্য আমার লিখে যাওয়ার আনন্দ খুব প্রয়োজন ছিল। তাই আবার নতুন করে লেখা শুরু করলাম , তবে এবার টাইমে পোস্ট দেই না। বিভিন্ন গ্রুপে দেই। ভাবছিলাম পাঠিকা টের পাবে না, কিন্তু সে ঠিকই টের পেয়ে গেল। এবং ভীষন অপমান করে আমাকে ইনবক্স করল। আমি বললাম “আপনি আমাকে ব্লক করে দিলেই তো পারেন ।” : না , ব্লক করব না। ব্লক করলে আপনি ঠিকই আমাকে নিয়ে লিখবেন। অথচ আমি টের পাবনা। আমাকে জানতে হবে আপনি কি লিখেন। যদি আমাকে নিয়েই লিখতে থাকেন তবে সেটা আমি কোন ভাবেই হতে দিবনা। এবার সন্দেহে পতিত হলাম। কারও মাথায় গন্ডগোল না থাকলে কি কেউ এমন আচরন করতে পারে ? আমি তার ইতিবৃত্ত জানতে খোঁজ খবর নিতে থাকলাম। পাঠিকা আসলেও মানসিক বিপর্যস্ত একজন মানুষ। কয়েক মাস আগে দুর্ঘটনায় তার বাবা ও ভাইকে হারিয়ে এমন অবস্থায় পতিত হয়েছে সে। পরিবারের সদস্য বলতে এখন পাঠিকা আর তার মা। শহরের তিন তলা বাড়ি, বাবার রেখে যাওয়া ব্যাংক ব্যালান্স আর রূপ তার জন্য বিভীষিকাময়। আশপাশের আত্মীয় সজন সহ পরিচিত অপরিচিত অসংখ্য মানুষের লোলুপ দৃষ্টি এখন পাঠিকা আর তার সম্পদের প্রতি। একারণে যেমন বিয়ের প্রস্তাবের অভাব নেই তেমনি নেই রোমিওর অভাব। ফলে পাঠিকার দৃষ্টিতে পৃথিবীর তাবৎ পুরুষই লোভী। ফলে সে আমাকে নিয়ে আতঙ্কিত। ভেবেছে তাকে আমি চিনি। আর প্রেমের প্রলোভন দেখিয়ে সম্পদ হাতিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে সুন্দর সুন্দর কবিতা লিখে পটাতে চাচ্ছি। যাই হোক ঘটনার বিষয়ে পুর্ণ অবহিত হয়ে আমার মাঝে ভীষন জিদ চেপে বসল। সে কেন ভাববে যে সকল পুরুষ খারাপ ? একজন নির্লোভ পুরুষও কেনো পাওয়া যাবেনা ? অবশেষে পাঠিকার মুখোমুখি হলাম। সে খুব অপমান করল। আমি গায়েই মাখলাম না। লেগে থাকলাম। অল্প কদিনেই বুঝতে পারলাম তার হেল্পের প্রয়োজন। আশপাশের কিছু খারাপ লোক তাদের বাড়ি দখলের চিন্তা করছিল। পর পর কয়েকটি মামলাও ঠুকে দেয়। পঠিকারা চরম সংকটে পরে যায়। ক্রমান্বয়ে আমি তাদের সহযোগীতা করতে থাকলাম। পাঠিকা সুদৃষ্টিতে নিলোনা। আমার প্রতি তার চরম সন্দেহ আর অবিশ্বাস দিন দিন বেড়েই চলল। তার মা মানে খালাম্মা অবশ্য আসতে আসতে স্বাভাবিক হতে থাকলেন। আমাকে বিশ্বাস করে বিভিন্ন প্রয়োজনে পাশে পাশে রাখলেন। আমার যে টুকু মেধা ছিল, আয় রোজগার ছিল যথাসাধ্য তাদের পিছনে ব্যয় করতে থাকলাম। তারা অবশ্য আমাকে অর্থ ব্যয় করতে দিতেন না। চেষ্টা করতেন যেন আমার হাত থেকে কোন খরচ না হয়। রাত যেমন দীর্ঘ হলেও স্থায়ী হয় না তেমনি বিপদও স্থায়ী হয়না। সময়ের সাথে সাথে তাদের সমস্যারও একে একে সমাধান হচ্ছিল। কিন্তু পাঠিকা ছিল আগের মতই। কথায় কথায় আমাকে সন্দেহ করা, অপছন্দ বা রাগ করা, সব ছিল। বিশেষ করে কিছু লিখতেই দিতে চাইত না। অথচ না লিখলে যে আমি ভালো থাকি না সে কথা তাকে কত বার বলেছি ! এক সময় সে লেখার অনুমেতি প্রদান করল, তবে এক শর্তে ; তাহলো লেখার প্লট সে বলে দিবে আর সে অনুযায়ী আমাকে লিখতে হবে। কদিন চেষ্টা করলাম সেভাবে গল্প কবিতা লিখতে কিন্তু কোন ভাবেই পারছিলাম না। গল্প হয় কিন্তু আবেগ থাকে না। নাটকীয়তা থাকেনা। এক সময় তাকে বললাম,” লিখতে হলে লেখককে প্রেমে পড়তে হয়। “ : তাহলে লিখার প্রয়োজন নেই। সব পুরুষ এক রকম । প্রেম ছাড়া কোন কথা নাই। : ঠিক আছে তবে জন্ম মৃত্যু নিয়ে লিখি ? : যা মন চায় করেন, তবে আমাকে নিয়ে লিখতে যাবেন না। পাঠিকা তার কথা রেখেছিল। প্রোফাইল থেকে তার সুন্দর সুন্দর পিক সরিয়ে ফেলেছিল। কথা রক্ষা করতে পারিনি আমি । আমাকে লিখতে হয় । নাহয় বিমর্ষ হয়ে পড়ি। ও, পাঠিকার নামই তো বলা হয়নি। তার ডাক নাম সুহি। আমি অবশ্য সুহি না বলে সুখী বলি। কারণ যে মানুষ নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে আশপাশের মানুষের হৃদয়ে সুখের বীজ বুনে জীবনকে করে, বর্ণময় তাকে সুখী না বলে কি সুহি বলা ঠিক হয় ? তিন মাস হল সুহির কোল আলোকিত করে পৃথিবীতে এসেছে আমাদের প্রথম কন্যা সন্তান। আমরা উভয়ে মিলে নাম রেখেছি প্রাপ্তি। কারণ জীবনে যা পেয়েছি তা কখনই পাওয়ার কথা ছিল না। তবে হ্যা, এখন অবশ্য পাঠিকা সুহি আমাকে আর অপছন্দ করে না। বরং একটু বেশিই পছন্দ করে, ভালোবাসে, আস্থা রাখে। তাকে যে একটু বেশিই করতে হয় ! কারণ বিগত সময়ে যে সে একটু বেশিই লোভী, সন্দেহজনক আর অবিশ্বাসী হিসাবে আমাকে হৃদয়ে পোষন করতো ! আবু জিয়াদ


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৪৬৭ জন


এ জাতীয় গল্প

→ মধ্যবিত্ত বিড়ম্বনা
→ কবিতা বিড়ম্বনা
→ "ক্ষীর খাওয়ার বিড়ম্বনা"
→ টিটুর ভাষা বিড়ম্বনা

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • নীলাদ্রির নীল (রসিক-প্রিয়)
    User ৪ বছর, ১ মাস পুর্বে
    দারুণ সারাংশ

  • তাবাসসুম ধ্রুবা
    User ৪ বছর, ১ মাস পুর্বে
    হা হা হা...খুব সুন্দর গল্পটা। একদম অন্যরকম

  • Nazmun Nahar
    User ৪ বছর, ৩ মাস পুর্বে
    অনেক সুন্দর গল্প।