বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

খালিদ বিন ওলীদ - রাঃ পর্ব-৪

"ইসলামিক" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান MD Shohidul Islam Sahid (০ পয়েন্ট)

X এতে সবাই বুঝতে পারে, আগন্তুক সুসংবাদ বয়ে আনেননি। কারণ তৎকালীন আরবের নিয়ম ছিল, কেউ কোন দুঃসংবাদ নিয়ে এলে সে গায়ের বস্ত্র ছিড়ে ফেলত এবং কেন্দে কেন্দে আগমন করত। এটাই ছিল তখনকার বিপদ সংকেত । আগম্ভক জনতার মাঝে এসে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এই মর্মে সংবাদ প্ৰদান করে যে, কুরাইশ বাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করেছে। যাদের আত্মীয়-স্বজনরা যুদ্ধে গিয়েছিল তারা একে অপরকে ডিঙ্গিয়ে আগন্তকের কাছে এসে নাম ধরে ধরে তাদের জীবিত মৃত কিংবা আহত হওয়া সম্পর্কে আশ্বস্ত হতে চায়। রণাঙ্গন থেকে পলায়নপর কুরাইশরাও এর কিছুক্ষণ পর ম্লান মুখে এক এক করে মক্কায় চলে আসে । রণাঙ্গনে নিহত ১৭ ব্যক্তি ছিল বনু মাখিযুম গোত্রের। তাদের সকলের সাথে খালিদের রক্তের সম্পর্ক ছিল। আবু জেহেল ছিল খালিদের চাচাত ভাই এবং কুরাইশ বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। সেও নিহত হয়। ওলীদ নামে খালিদের আরেক ভাই হয় যুদ্ধবন্দি। জনতার উপচে পড়া ভীড়ের মধ্যে অন্যতম কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান ও তার স্ত্রী হিন্দাও হাজির ছিল। “এই দূত আমার পিতা ও চাচা সম্পর্কে কিছু বলতে পারে?” জিজ্ঞেস করে হিন্দা। “আলী এবং হামযার হাতে আপনার পিতা নিহত হয়েছেন।” জবাবে দূত বলে। “আর আপনার চাচা শায়বাকে হামযা হত্যা করেছে। আপনার পুত্ৰ হানজালা নিহত হয়েছে আলীর হাতে।” হিন্দা প্ৰথমে হযরত আলী ও হযরত হামযা (রা)-কে অশ্ৰাব্য ভাষায় গালমন্দ করে। অতঃপর শপথ করে বলে- “আল্লাহর শপথ। পিতা, চাচা এবং পুত্ৰ হত্যার প্রতিশোধ আমি নেবই।” আবু সুফিয়ান ছিল একদম নীরব। চুপ করে শোনা ছাড়া তার আর কোন উপায় ছিল না। এদিকে দূত কথা যতই বলছিল খালিদের রক্ত ততই টগবগ করছিল। পরাজয়ের খবরে তিনি ছিলেন অত্যন্ত মর্মাহত। বদরের রণাঙ্গনে কুরাইশদের বড় বড় নেতাসহ ৭০ জন মারা যায়। বন্দীিও হয় সমসংখ্যক । খালিদ গাত্ৰোখান করেন। শয্যার কার্পেটটি মুড়িয়ে ঘোড়ার জিনের সাথে বেঁধে ঘোড়ায় চড়ে মদীনাপানে যাত্রা করেন। তিনি স্মৃতির মণিকোঠা থেকে সব স্মৃতি বের করে দিতে চান। কিন্তু মন তার উড়ে উড়ে মদীনায় পৌঁছে যেতে থাকে যা বর্তমানে মুসলমানদের প্রধান কাৰ্যালয় এবং যেথায় নবী করীম (স) অবস্থান করছেন। রাসূল (স)-এর কথা স্মরণ হতেই স্মৃতি আবার তাঁকে পিছনে নিয়ে যায়। স্মৃতিতে ভেসে ওঠে নবী করীম (স) পরিচালিত বদর রণাঙ্গনের ছবি। তাঁর আরো মনে পড়ে হিন্দার বলিষ্ঠ ঘোষণার কথা, যা সে স্বামী আবু সুফিয়ানকে শুনিয়ে বলছিলঃ পিতা-চাচাকে ভুলতে পারি। কিন্তু তাই বলে কি কলিজার টুকরা পুত্রকে ভুলে যাব? এ কথা মা কিভাবে ভুলতে পারে? আল্লাহর কসম । পুত্রের খুনের প্রতিশোধ নিতে আমি মুহাম্মাদকে কিছুতেই মাফ করব না। এ যুদ্ধ সেই করিয়েছে। হামযা এবং আলীকেও মাফ করব না। তারাই আমার পিতা, চাচা এবং পুত্রের হত্যাকারী। “পুত্র হত্যার অসহ্য যন্ত্রনা আমার রক্তে আগুন জ্বলিয়ে দিচ্ছে।” আবু সুফিয়ান বলছিল- “পুত্র হত্যার বদলা নেয়া আমার উপর ফরজ হয়ে গেছে। আমার এখন প্ৰধান কাজ হল, মুহাম্মাদের বিরুদ্ধে বিশাল বাহিনী গড়ে তোলা এবং তাকে এমন শিক্ষা দেয়া, যাতে সে আর কোন দিন অন্ত্র ধরার সাহস না করে ।” বিখ্যাত ঐতিহাসিক এবং জীবনীকার ওকিদী লিখেন, আবু সুফিয়ান পরের দিনই সকল সর্দারকে ডেকে পাঠান। তাদের অধিকাংশই ছিল এমন, যারা বিশেষ কারণে বদর যুদ্ধে অংশ গ্ৰহণ করতে পারেনি। কিন্তু প্ৰত্যেকেরই কোন না কোন নিকট আত্মীয় যুদ্ধে অংশগ্ৰহণ করে নিহত হয়েছে। প্রতিশোধ স্পহায় সকলের একসুর। “আমার কিছু কথা বলার দরকার আছে?” আবু সুফিয়ান উপস্থিত নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে- “আমার ছেলে নিহত। তার হত্যার প্রতিশোধ না নিলে তাকে জন্ম দেয়ার অধিকার আমার থাকে না।” একযোগে সকলেই তার কথায় সায় দেয়। এ বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে প্ৰস্তাব পাশ হয় যে, মুসলমানদের কাছ থেকে বদরের প্রতিশোধ অবশ্যই নিতে হবে। “কিন্তু আপনাদের কেউ ঘরে বসে থাকতে পারবেন না। সবাইকে যুদ্ধে যেতে হবে।” খালিদ উপস্থিত কুরাইশ সর্দারদের লক্ষ্য করে বলেন- “বদরে আমরা শুধু এ কারণেই লাঞ্চনার সম্মুখীন হয়েছি যে, নেতৃবৃন্দের অনেকেই যুদ্ধে না গিয়ে ঘরে বসে থাকেন। আর যুদ্ধের ময়দানে প্রেরণ করা হয় তাদেরকে, যাদের মধ্যে কুরাইশী মৰ্যাদাবোধ ছিল না।” “তবে কি আমার পিতার মধ্যেও কুরাইশী মৰ্যাদাবোধ ছিল না?” আবু জেহেলের পুত্র এবং খালিদের চাচাত ভাই ইকরামা উত্তেজিত কষ্ঠে বলে“সফওয়ান বিন উমাইয়ার পিতারও কি বংশ মর্যাদাবোধ ছিল না?... এত মর্যাদাবোধের অধিকারী হয়ে তুমি কোথায় ছিলে ওলীদের পুত্র?” “পরস্পর যুদ্ধ করতে আমরা এখানে হাজির হইনি।” আবু সুফিয়ান বলে “খালিদ কারো আত্মমর্যাদাবোধে আঘাত করে এমন কথা বলা তোমার সঠিক হয়নি।” “আমাদের কারো আত্মমর্যাদাবোধ আর বাকী নেই।” খালিদ বলেন“মুহাম্মাদ ও তাঁর সঙ্গীদের যতদিন শেষ করতে না পারব ততদিন আমরা আত্মমর্যাদাশালী জাতি হিসেবে গণ্য হব না। ঘোড়ার বাগের শপথ করে বলছি, রক্তের উত্তাপ আমার চক্ষুকে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বানিয়ে ছেড়েছে মুসলমানদের তাজা রক্তই শুধু এ স্ফুলিঙ্গ নিভাতে পারে।... আমি আবারও বলছি যে, এবার আমাদের নেতাদের প্রথম কাতারে থাকতে হবে। আর আমার জানা আছে যে, রণাঙ্গনে আমি কোথায় থাকব। তবে অবশ্যই নেতার অনুগত থাকব। কিন্তু নেতা যদি আমাদের জন্য ক্ষতিকর কোন আদেশ চাপিয়ে দেন। তবে সে নির্দেশ আমি মানব না।” অবশেষে আবু সুফিয়ানকে সর্বসম্মতিক্রমে সর্বাধিনায়ক ঘোষনা দিয়ে বৈঠক সেদিনের মত মুলতবি করা হয়। খালিদের মনে পড়ে বদর যুদ্ধের কিছুদিন পূর্বে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার কথা। মক্কাবাসীদের একটি কাফেলা ফিলিস্তিন থেকে মক্কা আসছিল। এটা ছিল। একটি বাণিজ্যিক কাফেলা। মক্কাবাসী বিশেষত কুরাইশদের প্রত্যেকেই এই বাণিজ্যে অংশগ্রহণ করে। কম-বেশি সকলের মূলধন এতে ছিল। কাফেলাটির উটের সংখ্যা প্ৰায় এক হাজার এবং বাণিজ্যিক মালামাল ছিল প্ৰায় ৫০ হাজার দীনার সমমূল্যের। এ বাণিজ্য কাফেলার নেতা ছিল আবু সুফিয়ান। ৫০ হাজার দীনারে ৫০ হাজার দীনার মুনাফা করে বাণিজ্যিক সফলতার পূর্ণ স্বাক্ষর রাখে। আবু সুফিয়ান। কাফেলার প্রত্যাবর্তন রাস্তাটি মদীনার নিকটবতী রাস্তার সাথে সংযুক্ত ছিল। মুসলমানরা তাদের প্রত্যাবর্তনের কথা জেনে যায়। পুরো কাফেলাটি গ্রেফতার করতে তাদেরকে এক জায়গায় ঘিরে ফেলা হয়। কিন্তু স্থানটি অসমতল থাকায় আবু সুফিয়ান অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে একটি-দুটি করে সবগুলো উট তাদের ঘেরাও থেকে নিরাপদে বের করে দিতে পেরেছিল। খালিদের অশ্বটি ধীর গতিতে মদীনাপানে চললেও তার স্মৃতির ফিতা পেছন দিকে ঘুরছিল দ্রুতবেগে। কুরাইশরা একত্রিত হয়ে প্রতিশোধের ছক তৈরির সময় যে সমস্ত শব্দ উচ্চারণ করেছিল প্রতিটি শব্দ তার কানে এখন গুঞ্জরিত হতে থাকে । “আমাকে নেতা হিসেবে মেনে থাকলে আমার প্রতিটি সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া তোমাদের জন্য অপরিহার্য।” আবু সুফিয়ান বলল- “আমার প্রথম সিদ্ধান্ত হল, (চলবে)


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৫১৩ জন


এ জাতীয় গল্প

→ খালিদ বিন ওলীদ - রাঃ পর্ব-৩
→ খালিদ বিন ওলীদ - রাঃ পর্ব-২
→ খালিদ বিন ওলীদ - রাঃ পর্ব-১

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • মোঃরনি হোসেন
    Golpobuzz ৪ বছর, ৫ মাস পুর্বে
    খালিদ বিন ওয়ালিদ নিঃসন্দেহে প্রকৃত একজন বীর ছিলেন