বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
আমি কিছু বললাম না চুপচাপ বসে রইলাম নাবার পাশের চেয়ারটায়। আমার কেনো জানি খুব হাসি পাচ্ছিলো, কিন্তু হাসতে ইচ্ছা করছিলো না, তাই হাসি আঁটকে বসেছিলাম। হাসি আটকে রাখতে একটু কষ্ট হচ্ছিল বটে কিন্তু তাও কেনো জানি আটকে রাখছিলাম।সৃজন ভাইয়াকে এই প্রথম নাবার সাথে এতক্ষণ বকবক করতে দেখলাম। কিন্তু ওদের বকবকানিতে আমি যুক্ত হলাম না। কিছুক্ষণ আনমনে বসে থেকে কি যেনো ভাবলাম,কি ভাবছিলাম ঠিক তাও জানি তবে হুট করেই মনে হলো প্রিয়মের তো ঠান্ডা লেগেছে! ওকে এখন কল দিয়ে দেখি তো কি করছে।রুমে গিয়ে মোবাইল টা হাতে নিয়ে প্রিয়মের নাম্বারটা ডায়াল করতে যাবো ঠিক তখনি প্রিয়মের ফোন আমি তাড়াতাড়ি রিসিভ করে বললাম,
-- তোমার ঠান্ডা ভালো হয়ে গেছে!
প্রিয়ম কাকে যেনো কি বলে আমার কথার উত্তর না দিয়ে ও উল্টো জিজ্ঞাস করলো,
-- আচ্ছা আদা চা খেলে নাকি ঠান্ডা ভালো হয়ে যায়!
-- হু, শুনেছি তো এরকম।
-- ওহ, তোমার কোনো অভিজ্ঞতা নেই আদা চায়ের!
-- নাহ্।
-- আমার আছে, আদা চা মারাত্মক ঝাল হয়! আচ্ছা রাখি, জ্বর উঠতেছে।
--এই তোমার জ্বরও উঠছে নাকি!
-- হু। ৩৬০ ডিগ্রী জ্বর!
--কিহ্
-- হু। রাখলাম পরে কথা বলবো।
প্রিয়ম ফোন রেখে দিলেও আমার মাথা ৩৬০ ডিগ্রি পজিশনে ঘুরতে লাগলো। ওর জ্বর নাকি ৩৬০ ডিগ্রী! মানুষ তো একশ চার পাঁচ জ্বর হলেই মারা যায়। আমাকে পাগল পেয়েছে নাকি!
তারপরও চিন্তা হচ্ছে খুব! বিকেল পর্যন্ত প্রিয়মকে নিয়ে আমার চিন্তা ছিলো আকাশ ছোঁয়া, কিন্তু বিকেলের পর যেই নাবা শুনলো ওর জ্বর হয়েছে সেই ও হেসে গড়িয়ে পড়লো বিছানায়। নাবার মতে, প্রিয়ম অসুস্থ হওয়ার আগেই ট্রিটমেন্ট শুরু করে দেয়, আর সামান্য অসুস্থ হতে পারলে সেটাকে তিল তাল বানিয়ে ইয়া বড়ো করে ফেলে, এমনভাবে বলবে যেনো সে মারাত্মক অসুস্থ কিন্তু গিয়ে দেখবে সে দিব্যি সুস্থ আছে,তার অসুস্থ হওয়ার মেয়াদ একদিন, একদিন পরেই সে ভালো হয়ে যাবে তবে এই একদিনেই সে বাসার সবাইকে কাজ করিয়ে করিয়ে আধমরা বানিয়ে ফেলবে।
নাবার কথা শুনে আমার চিন্তা কিছুটা কমলেও রয়ে গেছে অনেকাংশেই। যাই হোক অসুস্থ তো হয়েছে। আমি প্রিয়মকে যতোবার না ফোন করেছি তার থেকেও বেশি ফোন দিয়েছে প্রিয়ম। ফোন করেই, মা ও মা. আল্লাহ গো আরও অনেক ডাক। মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে কেটে দিয়েছি, আবার মাঝে মাঝে বলেছি ভালো ট্রিটমেন্ট করাও। আবার কখনও বলেছি চুপচাপ শুয়ে থাকো। প্রিয়মের কথা শুনে মনে হচ্ছিলো পৃথিবীতে একমাত্র প্রিয়মেরই জ্বর হয়েছে। যাইহোক একটা দিন কোনোমতে কেটে গেলো, প্রিয়মও সুস্থ হয়ে গেলো। সে দিব্যি সুস্থ হয়ে ঘুরাঘুরি করছে। নাবা প্রিয়মকে দেখে বললো,
-- আমি আগেই বলেছিলাম, খাজনার থেকে বাজনা বড়ো!
আমি হাসলাম, প্রিয়ম নাবাকে তাড়া করতেই নাবা ছুটে পালালো।আমিও সুযোগ খুঁজছিলাম নাবা চলে যাওয়ার কারণ নাবা চলে গেলেই আমি প্রিয়মের বুকে মাথা রেখে বসতে পারবো। প্রিয়মের বুকে মাথা রাখতেই আমার ঘুম চলে আসে। আজও চলে আসছিলো, হঠাৎ করেই প্রিয়ম বললো,
-- এই বুচি! তুমি কোথায় ভর্তি হবে! ঢাকাতে নাকি নেত্রকোণাতেই?
--কি জানি, আব্বু বলছিলো নেত্রকোণাতে ভর্তি হতে।কিন্তু আমি চাইছি এইখানেই কোথাও একটা ভর্তি হয়ে যাবো।
কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে বললো,
-- তুমি নেত্রকোণাতেই ভর্তি হও।
আমি মাথা তুলতে চাইছিলাম কিন্তু প্রিয়ম মাথাটা ওর বুকের সাথে চেপে ধরে বললো,
-- তুমি কবে বাড়ি যাবে!
-- জানি না।
-- তুমি যতোদিন এখানে থাকবে ততোদিনের মধ্যে আমি যেদিন এখানে আসবো সেদিনগুলোতেও তুমি এভাবেই আমার বুকে মাথা রেখে বসে থাকবে, আর আমি তোমার চুলে বিলি কাটবো।
প্রিয়মের কথাতে যেনো একটা আকুলতা ছিলো। কেনো প্রিয়ম এভাবে বলেছিলো আমি জানি না। ওর কথাটা আমি ফেলতে পারি নি, শুধু নিশব্দে গাল বেয়ে একফোঁটা পানিতে প্রিয়মের শার্ট ভিজে গেলো। আমি ঢাকায় থাকাকালীন প্রিয়ম দুইবার এসেছিলো। সেই দুইবার প্রিয়ম আমার সাথে কোনো কথায় বলে নি, শুধু বুকে টেনে নিতো, প্রিয়ম আমার চুলে হাত বুলাতো, আর আমি নিরব শ্রোতার মতো প্রিয়মের প্রত্যেকটা হৃদস্পন্দনের আওয়াজ শুনতাম। কখনও যেনো হাহাকার খুঁজে পেতাম আওয়াজগুলোতে, আবার কখনও পেতাম ভালোবাসা। শেষ যেদিন আমি চলে যাবো তার আগের দিন প্রিয়ম এসে বললো,
-- তুমি ঢাকাতেই ভর্তি হয়ে যাও।
আমি যথা সাধ্য চেষ্টা করলাম ঢাকাতে ভর্তি হওয়ার কিন্তু আব্বু রাজি ছিলো না, তিনি আমাকে নেত্রকোণাতেই ভর্তি করবেন।আব্বু যখন জেদ করে তখন পুরো পৃথিবী এক পাশে থেকে চিৎকার করে আর তিনি আরেক পাশে তার সিদ্ধান্তেই অটল থাকে। তাই ব্যর্থ হয়ে যখন প্রিয়মের কাছে গেলাম, প্রিয়ম তখন এক ঝটকায় আমাকে তার বুকে টেনে নিলো, কিছুক্ষণ পর বললো,
-- হয়তো তুমি এখন ব্যস্ত হয়ে পড়বে, হয়তো আমিও এখন ব্যস্ত হয়ে পড়বো। ব্যস্ততার মাঝে হয়তো আমাদের দেখা করার সুযোগ হবে না,মাঝে মাঝে কথাও না হতে পারে। কিন্তু আমাদের মাঝে দুরত্ব আসতে দিও না কিন্তু।
আমার কাছে এই প্রথম মনে হলো প্রিয়ম বাচ্চাদের মতো বিহেভ করছে।সে আমাকে এমনভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে ছিলো যেনো আমি এই মুহূর্তেই হারিয়ে যাবো। যেনো আমাদের আর কোনোদিন দেখা হবে না। আমাকে প্রিয়মের কাছ থেকে বিদায় নিতে হয়েছিলো। আমি যখন প্রিয়মের কাছ থেকে বিদায় নিলাম ওর চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারছিলাম না। কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না, তারপরও বললাম,
--প্রতিদিন আমার জন্য চিঠি লিখবে কিন্তু...তারপর সপ্তাহ শেষে চিঠিগুলো পাঠিয়ে দিবে।
প্রিয়ম হেসে ফেলেলো আমার কথা শুনে। প্রিয়মের বুকে মুখ লুকিয়ে ওর থেকে চোখের পানি লুকানোর কায়দা বেশ রপ্ত করে ফেললাম। কোনোমতে চোখের পানি মুছে আমি সেদিন বাড়িতে চলে এসেছিলাম।
বাসায় আসার পর আমার সময়গুলো কাটতো না।
প্রিয়মের সাথে আমার সময়গুলো যেনো খুব তাড়াতাড়ি কেটে যেতো। আমি সবসময় প্রিয়মকে আমার কাছে চাইতাম। তারপর নতুনকে ভর্তি পড়ালেখা আরও কতো ঝামেলা, কিন্তু সব ঝামেলার মধ্যেও যখন কানে "আমাদের মধ্যে দুরত্ব আসতে দিও না কিন্তু" কথা বাজতো তখনি আমি প্রিয়মকে কল দিতাম,সেটা হোক রাত দুটো কিংবা তিনটে, কলেজ টাইম কিংবা প্রিয়মের কাজের টাইম। আর প্রিয়মের চিঠি তো আছেই। ইদানীং আমিও চিঠি লিখা শিখে গেছি, অনেক বড় বড় চিঠি লিখে ফেলি, সবটাই প্রিয়মকে নিয়ে। প্রিয়ম ছাড়া কিছুই থাকে না চিঠিগুলোতে। পোষ্ট অফিসের লোকটা আমাকে চিনে গেছে বললে ভুল হবে,খুব ভালোভাবে চিনে গেছে কারন প্রিয়মের চিঠিগুলোতে কখনো আমার নাম থাকতো না, সব সময় লিখতো ঐ একটা লাইনই লিখতো
"প্রিয়তমার প্রিয়তম চিঠিটা তার প্রিয়তমাকে পাঠিয়েছে।"
প্রত্যেক বুধবারে আমি প্রিয়মের চিঠি আনতে যেতাম আর ওকে চিঠি পাঠাতে যেতাম।এখন আর পোষ্ট অফিসের কাকাকে খামের উপরের লাইনটা বলতে হয় না। আমাকে দেখেই চিঠিটা দিয়ে দিতো। মাঝে মাঝে খুব অসস্তি হতো তার হাত থেকে চিঠি থেকে,একজন বয়স্ক লোক আমাদের ভালোবাসার সাক্ষী।তবে ভালোও লাগতো, লোকটা আমাকে তার মেয়ের মতো আদর করতো।মাঝে মাঝে তার প্রেম কাহিনীও বলতো।খুব মনোযোগ দিয়ে তার কাহিনী শুনতাম।আমাদের সম্পর্কটা একটা অদ্ভুত গতিতে চলছিলো।সম্পর্কের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের মধ্যে কোনো রাগারাগি হয় নি। দুজনের কারো মধ্যেই দেখা করার সময় মিলতো না। প্রিয়ম কখনো আমাদের এলাকায় আসে নি, দেখা করার জন্য সব সময় আমাকেই ঢাকা যেতে হতো। তাও সেটা মাস ছয়েক পর পর অথবা একবছর।এভাবে কোনো সম্পর্ক ঠিকে কিনা আমি জানি না, তবে আমাদের সম্পর্কটা ঠিকেছিলো, বোধহয় সেটা দুজনের চেষ্টার ফল ছিলো।
সবার আগে গল্প পড়তে আমাদের, নীল ক্যাফের ভালোবাসা, অ্যান্ড, নীল ক্যাফের ডায়েরী,পেজের সাথেই থাকুন,ধন্যবাদ
দেখতে দেখতে চার বছর কেটে গেলো।আমরা এতোগুলো দিন একসাথে কাটিয়ে ফেলেছি, কিন্তু পরিবারের কেউ জানেই না। বাড়ির লোকেরা বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলো। একদিন শুনলাম আম্মু আব্বুকে বলছে,
-- মেয়ের বিয়ের কথাটাতো ভাবো। মেয়েতো বুড়ি হয়ে যাচ্ছে।
আব্বু রসিকতা করে বললো,
-- মেয়ের মা তো এখনো বুড়ো হয় নি, তাহলে মেয়ে বুড়ো হয়ে গেলো কিভাবে!
আমার কোনো চিন্তায় ছিলো না। প্রিয়ম চাকরি করছে অনেকদিন, সে মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত।তাই এখন তাকে বিয়ের কথা বলায় যায়। কিন্তু আমি যা ভাবলাম তার কিছুই হলো না, আমাদের আচরণ হঠাৎ করেই পাল্টে গেলো, আমার না প্রিয়মের আচরণ পাল্টে গিয়েছিলো, হঠাৎ করেই চিঠি দেওয়ার সময় পাল্টে গেলো সপ্তাহ থেকে মাসে গিয়ে ঠিকলো সময়টা, ফোনালাপ ও কমে গিয়েছিলো, আর দেখা তো আগেও হতো না। আস্তে আস্তে আমাদের সম্পর্কটা একেবারে শেষপ্রান্তে ঠেকে গিয়েছিলো, প্রিয়ম কেমন যেনো একটা দায়সারা গোছের উত্তর দিয়ে আবার হারিয়ে যেতো। যদি থাকে জিজ্ঞাস করতাম,
-- তুমি এখন আর চিঠি লিখো না কেনো?
সে উত্তরে বলতো,
-- সময় পাই না।কাজের চাপ বেড়ে গেছে।
-- তুমি আগের মতো কথা বলো না কেনো?
-- কাজের চাপ
সবকিছুতেই কাজের চাপের অজুহাতে এড়িয়ে দিতো, একটা সময় প্রিয়ম আমার সাথে সব ধরণের যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো, আমি ভাবলাম হয়তো কাজের চাপেই যোগাযোগ করতে পারে না। কিন্তু সময়টা আস্তে আস্তে বাড়তে লাগলো, এক দু সপ্তাহ করে প্রায় চার মাস কেটে গেলো।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now