বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
জুতা আর একটা মাঝারি সাইজের ঝাড়ু কিনে এনে জানালার গ্রিলে বেঁধে রাখলাম। বেচারা জানালা খুলতেই দেখতে পাবে।
হলো ও তাই, এরপর থেকে বেচারা প্রায় সময়েই জানালা খুলে দেখতো, ঝাড়ু আর জুতা সরিয়ে ফেলেছি কিনা। জুতা ঝাড়ু খুলে নেই নি দেখে মন খারাপ করে জানালা বন্ধ করে দিতো। একদিন বিকেলে আসার পথে পুন্য নাবাকে ডেকে বললো,
-- তোমরা জানালায় জুতা ঝাড়ু বেঁধেছো কেনো? কেমন বাজে দেখায় জানো? অন্যরা দেখলে কি বলবে?
-- আরে, অন্যরা কিভাবে দেখবে বলোতো! আপু ঐগুলা শুধু কাউয়্যার জন্য বেধে রাখছে। কাউয়্যা টা মারাত্মক জ্বালায় কিনা।
নাবা কথাটা বলে আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো। গনেশ মারাত্মক অপমানিত হলো।এরপর আর আমাদের সাথে কথা বলতো না।
শুক্রবার বিকালে রুম বসে আমি আর নাবা গান গাইছিলাম৷ ফুপি মার্কেটে গেছে আর সৃজন ভাইয়া রুমে বসে কি যেনো করছে। কলিংবেল বাজতেই নাবা কাথা মুড়িয়ে শুয়ে পড়লো। আর সৃজন ভাইয়া কখনোই উঠে গিয়ে দরজা খুলবে না। এই বাসায় আসার পর থেকে যেনো দরজার চাকরিটা আমিই পেয়েছি। আমি উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। একটা ইয়া লম্বা ছেলে দাড়িয়ে আছে, মনে হয় পাঁচ ফুট নয় হবে। মাথার চুলগুলো বেশ বড় চোখের উপর পড়ে আছে। তবে অনেক সিল্কি, ছেলেদের মাথার চুল যে এতোটা সিল্কি হয় তা জানতাম না। গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো, তার দাঁতগুলো বেশ সুন্দর, একদম সমান,বাকা ট্যারা নেই। ছেলেটা ভ্রু কুচকে বললো,
-- ইউ বুচি, সামনে থেকে সরো।
আমাকে যদি কেউ বুচি বলে তাহলে আমার প্রচন্ড রাগ উঠে।যদি কারো উপর রাগটা ঝাড়তে না পারি তাহলে কান্না করে রাগ কমাতে হয়। ছোট্টবেলা থেকেই আমার নাক নিয়ে সবাই চুল ছেড়া বিশ্লেষণ করতো। এই যেমন, "কিরে তোর নাকে হাতি পা দিছিলো নাকি! নাক এমন বুচা কেন!" "প্রত্যেকদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে নাক দুই আঙুলে ধরে টানবি, তাইলেই ঠিক হয়ে যাবে" ইত্যাদি ইত্যাদি আরো অনেক কিছু। সবাই আমার নাক ধরে টানতো, তারা নাকি নাক ঠিক করবে, কাজের কাজ কিচ্ছু হতো না, উল্টো আমার নাক লাল হয়ে যেতো। অপরিচিত কারো উপর তো আর রাগটা ঝাড়তে পারবো না, তাই ভদ্র ভাবে বললাম,
-- আপনি কে?
লোকটা কিছু না বলে রুমে ঢুকলো, তারপর আমার নাক টেনে বললো,
-- দরজা খুলার আগে দেখে নিতে পারলে না, দরজার ওপাশে যে আছে তাকে চিনো নাকি চিনো না।
আমি একটু গিয়ে নাকে হাত রেখে বললাম,
-- আপনি আমার নাক ধরলেন কেনো?
-- বেশ করেছি, বুচা নাক ঠিক করছি।আচ্ছা শুনো, আমার জন্য একগ্লাস ঠান্ডা ঠান্ডা খুব ঠান্ডা পানি নিয়ে এসো। আমি সৃজনের রুমে যাচ্ছি। মিস বুচি!
ছেলেটা সৃজন ভাইয়ার রুমে চলে গেলো। আমি দরজার সামনে দাড়িয়ে থেকে নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করলাম। একবার ভাবলাম পানি নিয়ে যাবো না, তারপর আবার ভাবলাম, পানি খাওয়ানো সওয়াবের কাজ। তাই একগ্লাস ঠান্ডা পানি নিয়ে গেলাম। আমাকে দেখেই ছেলেটা বললো,
-- এই তো, মিস বুচি পানি নিয়ে এসে গেছে। থ্যাংক ইউ।
সৃজন ভাইয়া ল্যাপটপ থেকে মাথা ভাসিয়ে বললো,
-- প্রিয়তমা তুমি আবার কবে থেকে বুচি হয়ে গেলে! তা বুচি নামটা কিন্তু তোমার সাথে মানিয়েছে। ও হচ্ছে প্রিয়ম, তোমাকে ইংলিশটা দেখিয়ে দিবে।
প্রিয়ম বললো,
-- প্রিয়তমা! এটা কি তোমার আসল নাম, মিস বুচি!
-- আমার নাম তমা।
বেশ ভদ্রভাবেই বললাম, কারণ ওনি তো স্যার! যাই হোক আমি আর নাবা তার কাছে পড়তে থাকলাম। কিছুদিন পর জানতে পারলাম, ওনি আসলে সৃজন ভাইয়ার কাজিন। ওরা দুজন সমবয়সী বলে এক সাথেই পড়ালেখা করেছে, তাদের মধ্যে বেশ ভালো একটা সম্পর্কও আছে। কিন্তু আমার তাদের সাথে কোনো ভালো সম্পর্ক তৈরি হলো না। একজন আমাকে সারাদিন চা কফি বানানোর অর্ডার দেয়, আরেকজন যখনি আসবে, তখনি মিস বুচি, চাকমা, বুড়ি, বলে ক্ষেপাবে, যখন তখন নাকে ধরে টানবে আর বলবে নাকটা ঠিক হবে। এমন ভাবে ধরবে যে নাক লাল হয়ে যায়।
আমি প্রিয়মের নাম দিলাম, মিঃ লম্বু। একদিন আমি আর নাবা মিঃ লম্বুর কাছে পড়তে বসলাম,
লম্বু পড়া বুঝাচ্ছে নাবাকে, আমি কিছুতেই পড়াতে মনোযোগ দিতে পারছি না, কারণ আমার সামনের চুলগুলো বারবার এসে কপালে পড়ছে, চোখ ঢেকে যাচ্ছে। আমি বার বার হাত দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছি।
প্রিয়ম হঠাৎ করেই বললো,
-- এই মানসিক রোগীর মতো তখন থেকে কি করে যাচ্ছো এগুলো! বার বার চুল ঠিক করার কি আছে! যেটা লিখতে দিছিলাম ঐটা লিখা শেষ হইছে!
আমি থমথমে গলায় বললাম
--না
-- তাহলে তাড়াতাড়ি লিখো, আরেকবার যদি চুলে হাত দিতে দেখি হাত চুল কেটে দিবো।
আমি কোনো কথা না বলে লিখতে লাগলাম, কারণ এই কদিনে আমি বেশ বুঝেছি মিঃ লম্বু চাইলে অনেক কিছুই করতে পারতে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবার চুল সামনে চলে আসলো। আমি না লিখতে পারছিলাম আর না চুলগুলো সরাতে পারছিলাম, শুধু মাথা ডানে বামে নাড়াতে লাগলাম। হঠাৎ মনে হলো কেউ যেনো আমার কপাল থেকে আস্তে চুল গুলো সরিয়ে নিচ্ছে। তার স্পর্শে যেনো আমার পুরো শরীর কেঁপে উঠলো। আমি মাথা তুলে দেখলাম প্রিয়ম নাবার কাছ থেকে ক্লিপ নিয়ে আমার চুলগুলো আঁটকে দিয়ে বললো,
-- এখন আর পরবে না। লিখো,
আমি মাথা নিচু করে লিখতে চেষ্টা করলাম, কিন্তু কি লিখলাম কিছুই জানি না, কোনোমতে তাড়াতাড়ি করে লিখে মিঃ লম্বুকে খাতাটা ধরিয়ে দিয়ে রুমে চলে আসলাম। আয়নার সামনে দাড়িয়ে শুধু চুলগুলো বাধার স্টাইলটা দেখছিলাম, এরকম করে আমি প্রায়ই চুল আটকাতাম, কিন্তু আজকে কেনো জানি অন্যরকম লাগছিলো, মনের ভিতর কেমন যেনো একটা অনুভূতি, যেটা জীবনের প্রথম হচ্ছিলো। এমন অনুভূতি এর আগে কখনো হয় নি।
প্রিয়মের স্পর্শের রেশ আমার ততক্ষনাৎ কেটে গেলো, আমার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথাটা মনে করলাম। একমুহূর্তের জন্য আমার মনে পৃথিবীর সব পুরুষেই আমার দুলাভাইয়ের মতো।
প্রিয়মের স্পর্শের রেশ কেটে গেলেও, প্রিয়মের বলা মানসিক রোগী কথাটার রেশ কাটে নি। সবাই এখন বুচি, চাকমা, বুড়ি ছেড়ে আমাকে মানসিক রোগী ডাকতে ব্যস্ত। একমাত্র সৃজন ভাইয়া আর ফুপা আমাকে প্রিয়তমা ডাকে। তমা নামে কেউ ডাকেই না। এই এক,দেড় মাসেই আমি আমার নাম ভুলে যেতে লাগলাম, আমার নিজের কতো বিচিত্র বিচিত্র নাম ভাবতেই ভালো লাগতো।
সব মিলিয়ে আমি সুখেই ছিলাম, দুলাভাইয়ের ঘটনা তখন প্রায় ভুলতে বসেছি। একদিন বাড়িতে কল দিলাম, ফোন ধরলো আপা। আমি কন্ঠ না বুঝতে পেরে বললাম,
-- আম্মু, কেমন আছো?
ওপাশ থেকে আপা বললো,
-- না, আমি তোর আপা
-- ও, আপা তুমি কবে এলে!
-- এইতো কাল,
আপার এই কথাটা আমার কেমন যেনো লাগলো, একটু একটু সন্দেহ হতে লাগলো। আমি যখনই বাড়িতে কল দেই তখনেই আপা আমাদের বাড়িতে, তাহলে সে ঐ বাড়িতে কবে যায়! আর ঐ বাড়ি থেকেও আপাকে ঘন ঘন আমাদের বাড়িতে আসতে দিচ্ছে! আগে তো আসতে দিতো না!
আমি আপাকে বললাম,
-- কি ব্যাপার, আপা! তুমি দেখছি ঘন ঘন আমাদের বাড়িতে আসছো! আমার আদরটা তুমি একলাই খাচ্ছো!
আপা কিছু না বলে ফোনটা আম্মুর কাছে দিয়ে দিলো। এর কোনো মানে আমি বুঝতে পারলাম না। যাই এই বিষয়টা নিয়ে আমি ভাবার মতো সময় পেলাম না। তার আগেই আমার কাছে একটা চিঠি এলো, বিকেলবেলায় প্রাইভেট থেকে আসার পথে একটা বাচ্চা ছেলে চিঠি আমার হাতে দিয়ে চলে গেলো। হালকা সবুজ রঙের একটা খাম, খামের উপরে লিখা,
"প্রিয়তমার প্রিয়তম চিঠি টা তার প্রিয়তমাকে পাঠিয়েছে"
সবুজ খামে নীল রঙের কালি দিয়ে লিখা।
খামের ভিতর একটা গোলাপী রঙের একটা ছোট্ট কাগজ। চিরকুঠ!
চিরকুঠটা খুললাম
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now