বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
জিমনাসিয়ামে স্কুলের বাক্ষেটবল টিম প্র্যাকটিস করছে। দুই পাশেরগ্যালারীতে কোনো দর্শক নেই, শুধু ডান দিকের গ্যালারীতে ঠিক মাঝখানেতিষা আর জন বসে আছে । দুদিন আগে একটা ভয়ংকর একসিডেন্টে মারাযেতে যেতে কোনোভাবে তারা বেচে গেছে, বিষয়টা সেভাবে কেউ জানেনা। জন কিংবা তিষা দুজনের কেউই সেটা তাদের বাসাতে সেভাবেবলেনি ।
জন এখন নিশ্চিতভাবে জানে যে তার গাড়ীটিতে কিছু একটা করাহয়েছিল | সে যেহেতু কানে শুনতে পায় না তাই গাড়ী চালানোর সময় প্রতিসেকেন্ডে কয়েকবার রিয়ারভিউ মিররে তাকায় । দুর্ঘটনার ঠিক আগে আগেসে রিয়ারভিউ মিররে একটা সিলভার রংয়ের ফোর্ড এস.ইউ.ভি দেখেছে,তাকে ওভারটেক করার সুযোগ পেয়েও সেটা ওভারটেক করেনি তার পিছনেরয়ে গেছে। ঠিক যখন তার ব্রেক ফেল করেছে তার আগে সে একটা ঝাঁকুনীঅনুভব করেছে । এখন তার মনে হচ্ছে রিমোট কক্ট্রোলে বিস্ফোরণ ঘটিয়েতার ব্রেক ফেল করিয়েছে । শুধু তাই না, সে দেখেছে তার পিছনের গাড়ীরড্রাইভার হাতে কিছু একটা ধরে সেখানে চাপ দিচ্ছে আর তার গাড়ীর গতিবেড়ে গেছে । যখন সে গাড়ী থামিয়েছে তখন সে দেখেছে এই এস. ইউ.-টি তার গাড়ীর পাশে থামিয়েছে । তখন অনেক মানুষের ভীড়, সেই ভীড়েরমাঝে মানুষটি জনের গাড়ীর হুড খুলে কিছু একটা খুলে নিয়েছে। গাড়ীরফুয়েল ইনজেকশানে কিছু একটা লাগিয়েছিল, তার একটা ছেঁড়া তার পরেওসেখানে লাগানো ছিল, জন পরে দেখেছে । সে কাউকে কিছু বলেনি । বলেওলাভ নেই, পুলিশ তার এই আজগুবি কথা বিশ্বাস করবে না । তিষাকেওবলেনি, বললে মেয়েটি শুধু শুধু ভয় পাবে।
গ্যালারিতে বসে জন হাত নেড়ে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে তিষাকে বলল, “তিষা । তুমি খুব সাবধানে থেকো ।”
তিষা একটু অবাক হয়ে বলল, “কেন আমাকে সাবধানে থাকতে হবেকেন?”
“বিপদ যখন আসে একা আসে না । তিনবার আসে । তোমার দুইবারহয়েছে, একবার সাসকুয়ান লেক, দুইদিন আগে আমার গাড়ীতে | এখনতিন নাম্বারটা বাকী আছে । খুব সাবধান |”
তিষা কোনো কথা বলল না । জন একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল “আরআমার কী মনে হয় জান?”
“কী?”
“তুমি যে ভেবেছিলে এনিম্যানের হাসিটা তার সত্যিকারের হাসি নয়,এটা কৃত্রিম, সেটা হয়তো সত্যি | এনিম্যান আসলে হাসি খুশী প্রাণী না, খুবদুঃঘী একটা প্রাণী সেটাও হয়তো সত্যি।”
তিষা অবাক হয়ে বলল, “কেন? হঠাৎ করে তোমার এই কথা মনেহল কেন?”
“হঠাৎ করে না, আমি কয়েকদিন থেকেই এটা ভাবছি । আমার কেনজানি মনে হচ্ছে এটা সত্যি।”
জনের খুব ইচ্ছে করল সে তিষাকে তার আসল সন্দেহের কথাটা বলেচেয়েছিল । তার গাড়ীটি শুধু ব্যবহার করেছে । জন সেটা বলতে পারল না,এই সহজ সরল মেয়েটাকে সে ভয় দেখাতে চায় না, শুধু সাবধান করতেচায়।
জন বলল, “তিষা।”
“বল”
“এনিম্যান নিয়ে তৃমি যদি নতুন কিছু পাও সেটা কিন্ত ব্লগে লিখ না।”
“ব্লগে লিখব না?”
“না
“কেন?”
“এনিম্যান কোম্পানী খুব বড় কোম্পানী, যদি তাদের ব্যবসার ক্ষতিহয় তখন রেগে মেগে তোমার ক্ষতি করতে পারে।”
“আমার ক্ষতি? আমার আবার কী ক্ষতি করবে?”
জনের একবার ইচ্ছে হল বলে, তোমাকে মেরে ফেলতে পারে ।দুইদিন আগে যেরকম আমাকে সহ মেরে ফেলতে চেয়েছিল । কিন্তু সে বললনা। শুধু হাসার ভঙ্গি করে বলল, “কী ক্ষতি করতে পারে আমি সেটা জানিনা, কিন্তু বড় কর্পোরেশানকে কোনো বিশ্বাস নেই । দরকার কী ওদেরচটিয়ে |”
“ঠিক আছে ।”
“কী?”
“ব্লগে তোমার যে লেখাটা আছে আপাতত তুমি সেটাও সরিয়েফেল ।”
“সরিয়ে ফেলব?”
“হ্যাঁ।”
“ঠিক আছে ।”
তিষা সেই রাতে ব্লগ থেকে তার লেখাটি সরিয়ে ফেলল।
তবে তিষা যতক্ষণ বাসায় থাকে ততক্ষণ সে তার এনিম্যান মিশকাকেলক্ষ্য করে। তার দিকে তাকিয়ে থাকে, মিশকাকে বোঝার চেষ্টা করে।আশে পাশে যখন কেউ নেই তখন একবার সে মিশকাকে তার কোলে নিয়েবসল, যাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, “বল তো মিশকা, তুমি কী আমারকথা বুঝতে পারছ?”
মিশকা মাথা নাড়ল, তারপর ফিক করে হেসে ফেলল । তিষা বলল,“তুমি যদি আমার কথা বুঝে থাকো তাহলে বল দেখি আমার নাম কী?”
মিশকা আবার একটু হেসে ফেলল | তিষা বলল, “ বল দেখি তোমার নামকী?”
মিশকা একটু মাথা নাড়ল তারপর আবার হাসল । তিষা বলল, “বলমিশকা | মিশ-কা | মি-শ-কা।”
মিশকা কিছু না বলে খিলখিল করে হাসল । ঠিক তখন বাইরে একটা গাড়ির শব্দ শুনে তিশা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে জন তাদের বাসার সামনে তার গাড়ি পার্ক করছে। তিষা নিচে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।
জন তাকে দেখে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল, “তুমি ঠিক আছ?”
তিষা বলল, “এখন পর্যন্ত ।”
“কী করছিলে?”
“মিশকার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছিলাম ।”
“কথা বলতে পেরেছ?”
“শুধু এক দিক দিয়ে, আমি বলি আর সে শুনে । শুনে
আর হাসে ।”
“তোমার কথা কী বুঝতে পারে?”
“জানি না ।” তিষা দরজা বন্ধ করে বলল, “চল তুমি নিজেই দেখ |”
কাছে ছুটে এসে তার হাত ধরল । জন মিশকাকে কোলে তুলে নিয়ে তারমাথার চুল এলোমেলো করে দিল | মিশকা মনে হয় এই ব্যাপারটাতে খুবমজা পায়, সে খিলখিল করে হাসতে থাকে । জন আবার তাকে নিচে নামিয়েদেয়, তিষা তখন মিশকাকে তার নিজের কোলে বসিয়ে তার সাথে কথাবলার চেষ্টা করতে থাকে, “মিশকা, তুমি খুবই সুইট একটা এনিম্যান। তোমার মাথায় অনেক বুদ্ধি, তোমার একটাই সমস্যা তুমি শুধু হাসো, কথাবলার চেষ্টা কর না । এখন আমি তোমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করব । তুমিখুব মন দিয়ে শোনো আমি কী বলছি । মিশকা, তুমি বল তুমি কী আমারকথা বুঝতে পেরেছ?”
মিশকা মাথা নাড়ল, তারপর খিলখিল করে হাসতে থাকল | তিষাহতাশ ভাবে মাথা নেড়ে বলল, “না, না হাসলে হবে না। হাসি বন্ধ কর।
কথা বলার চেষ্টা কর । বল, তোমার নাম কী? বল ।”
মিশকা আবার খিল খিল করে হাসল ৷ তিষা জনের দিকে তাকিয়েবলল, “এটা হচ্ছে সমস্যা । কোনো কথার উত্তর দেয় না । শুধু হাসে ।”
জন তার হাত নেড়ে সাইন ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করে বলল,“এনিম্যানদের কথা বলার ক্ষমতা নেই । মিশকা কী করবে? কেমন করেকথা বলবে?”
“আমি ভাবছিলাম যদি চেষ্টা করে তাহলে হয়তো একটু পারবে ।”
জন বলল, “আমার কথা চিন্তা কর ৷ আমি কী চেষ্টা করলে তোমারমত মুখ দিয়ে কথা বলতে পারব? পারব না । আমাকে হাত দিয়েই কথাবলতে হবে । সাইন ল্যাংগুয়েজে!”
মিশকা খুব মনোযোগ দিয়ে একবার তিষার মুখের দিকে আরেকবারজনের দিকে তাকাচ্ছিল | হঠাৎ তার কী মনে হল কে জানে, সে হাত দিয়েসাইন ল্যাংগুয়েজের মত একটা ভঙ্গী করল । জন চমকে উঠে মিশকার দিকেতাকাল তারপর তিষার দিকে তাকাল, উত্তেজিত ভঙ্গীতে বলল, “তুমি
দেখলে তিষা, মিশকা কী করল?"
“কী করল?”
“সাইন ল্যাংগুয়েজে কিছু একটা বলার চেষ্টা করল।”
“সত্যি?”
“হ্যা । তার মানে বুঝতে পারছ?”
তিষা উত্তেজিত গলায় বলল, “তার মানে মিশকা যদি মুখ দিয়ে কথানাও বলতে পারে সে সাইন ল্যাংগুয়েজে কথা বলতে পারবে?”
“হ্যা । আমি স্পষ্ট দেখলাম সে এই মাত্র চেষ্টা করল ।”
খিল খিল করে হেসে উঠল । জন মিশকাকে নিজের কাছে টেনে এনে হাতদিয়ে নিজেকে দেখিয়ে সাইন ল্যাংগুয়েজে বলল, “আমি জন |”
মিশকা মনোযোগ দিয়ে তাকে দেখল তারপর সেও সাইন ল্যাংগুয়েজদিয়ে বলল, “আমি জন ।”
তিষা চিৎকার করে উঠে, “দেখেছ? দেখেছ জন? মিশকা কথা বলছে!
মিশকা কথা বলছে!”
জন মাথা নাড়ল, “এখনো নিজে কথা বলছে না । আমি যেটা বলেছিসেটা অনুকরণ করছে ।”
“কিন্তু শিখিয়ে দিলে নিশ্চয়ই নিজে কথা বলবে।নিশ্চয়ই বলবে ।”
জন মাথা নাড়ল, বলল, “চেষ্টা করে দেখি।”
তারপর বেশ খানিকক্ষণ সময় নিয়ে সে মিশকাকে সাইন ল্যাংগুয়েজদিয়ে তাদের তিনজনের নাম বুঝিয়ে দিল । তার নিজের নাম হচ্ছেমিশকা । আর তারা দুজনের একজন জন অন্যজন তিষা | যতবার তাকে শেখানো হল প্রত্যেকবারই মিশকা খুব মনোযোগ দিয়ে সেটা দেখলতারপর মাথা নাড়ল । যখন জন আর তিষার মনে হল মিশকাকে বেশভালোভাবে শেখানো গেছে তখন জন সাইন ল্যাংগুয়েজ দিয়ে তাকে
মিশকা এক মুহূর্ত জনের দিকে তাকিয়ে রইল তারপর হাত দিয়েবলল, “জন ।”
জন তিষাকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল, “এটি কে?”
মিশকা জানাল, “তিষা ।”
জন মিশকার দিকে আঙ্গুল দিয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুমি কে?”
মিশকা জানাল, “আমি মিশকা |”
তিষা আনন্দে চিৎকার করে ওঠে । জনও জোরে জোরে মাথা নাড়ল,তারপর বলল, “আমার মনে হয় মিশকাকে আমরা সাইন ল্যাংগুয়েজশেখাতে পারব।”
তিষা উত্তেজিত গলায় বলল, “তার মানে বুঝতে পেরেছ? তার মানেআমরা মিশকার কাছ থেকে তার ভেতরের সব কথা জেনে যাব।”
জন বলল, “কিন্ত মনে আছে তো, এই কথাটা কাউকে বলতে পারবেনা?”
“মনে অছে।”
“তোমার বাবা মা'কেও না।”
তিষা মাথা নাড়ল, “ঠিক আছে, বলব না ।”
“ব্লগে লিখতে পারবে না”
“ঠিক আছে, লিখব না ।”
“সারা পৃথিবীতে এটা এখন শুধু তিনজন এটা জানবে । তুমি আমিআর মিশকা।”
তিষা গন্ভীর মুখে বলল, “ঠিক আছে । সারা পৃথিবীতে শুধু আমরাতিনজন এটা জানব।”
জনের সাথে থাকতে থাকতে তিষাদের ক্লাশের সব ছেলে মেয়েই কম বেশী সাইন ল্যাংগুয়েজ শিখে গেছে। জনের সাথে একটু বেশী সময় কাটিয়েছেবলে তিষা অন্যদের থেকে সেটা অনেক ভালো জানে । তিষা তাই পরেরকয়েকদিন মিশকাকে তার নিজের মতো করে সাইন ল্যাংগুয়েজ শেখাতেলাগল। যখনই সময় পেতো তখনই জনও চলে আসতো। খাতা কলমটেলিভিশন চেয়ার টেবিল এগুলো শেখানো গেল খুব সহজেই । ব্যথা, দুঃখভয় কষ্ট আনন্দ এগুলো শেখানো হল সবচেয়ে কঠিন । তারপরও মিশকাদ্রুত শিখতে লাগল, কতো তাড়াতাড়ি মিশকা কতো সুন্দর করে কথা বলতেশিখে গেল দেখে তিষা নিজেই আবাক হয়ে যায়।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now