বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

"অনুপমা"

"জীবনের গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান Oliver Queen(ShuvO) (০ পয়েন্ট)

X -ছেলেরা লম্বা চুলের মেয়ে পছন্দ করে কেন জানো? -কেন? -যে মেয়েদের সামান্য মাথার চুল কাটতে মায়া লাগে সে মেয়েগুলি নিশ্চয়ই খু্ব মায়াবতী হয়। তার কথা শুনে আমি না হেসে পারলাম না।অনুপমা, সে ছিল প্রথম মেয়ে যে আমার বয়সে চার বছরের ছোট হওয়া সত্ত্বেও তুমি করে বলার সাহস দেখিয়েছিল। লম্বা বেনী দু কাঁধে ঝুলিয়ে চোখে চোখ রেখে বলেছিল, - "তুমি আমার প্রেমিক হবে শুভ'দা?" কুড়ি বছর আগের কথা।সেসময় একজন প্রাপ্তবয়স্কা মেয়ে পর্যন্ত পু্রুষের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে ইতস্তবোধ করত আর অনুপমা ছিল তাদের চেয়ে অনেক অনেক এগিয়ে। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় এক দৌঁড়ে আমাদের বাড়ি আসত। হাতে থাকত ছোট্ট টিফিনবক্সে আচার বা গল্পের বই। সেই সব ছোট্ট উপহার দেবার ফাঁকে আমার হাতে চিরকুট গুঁজে দিত। তার লেখা ছিল এইরকম, "আজ থেকে শুভ'দা নয় শুভ বলে ডাকব।" " নদীর ধারে তোমার সাইকেল নিয়ে এসো কিন্তু আজ থেকে আমায় সাইকেল চড়া শেখাবে।" কলেজ পড়ুয়া আমার তখন নাকের নিচে সূক্ষ্ম গোঁফের রেখা। সেদিকে এক নজর তাকিয়ে অনুপমা পা নাচাতে নাচাতে বলেছিল, -তোমার দাঁড়িগোঁফ হলে আমায় একদিন কামাতে দিও তো। আমার খুব শখ ব্যাটা ছেলের দাঁড়ি কামাবো। -নাপিতের দোকান খুলিস। মহিলা নাপিত... এতটুকু শুনেই অনুপমা ওর ছোট ছোট হাতে কিল ঘুষি মারতে লাগল। একটু ধাতস্থ হয়ে আমি ওর দু'হাত মুঠি করে ধরে ফেললাম। হাতের মুঠোয় নরম হাত'দুটি একটু যেন কেঁপে উঠল তারপর ছাড়িয়ে নিয়ে ভো-দৌঁড়। অনুপমা, সে কী সহজে ধরা দেবার পাত্রী! একরাতে বাড়িতে কেউ নেই। জিওগ্রাফি বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছিলাম।ভেজানো দরজা খুলে গুটি গুটি পায়ে অনুপমা এসে হাজির। হাতে গণিত বই। ঝপ করে টেবিলের অন্য পাশে চেয়ারে বসে বসল, -তোমার কাছে অঙ্ক বুঝতে এলাম। -পরীক্ষার আগের রাত ছাড়া তোর তো বইয়ের সাথে সম্পর্ক থাকে না।আজ হঠাৎ অঙ্ক কষার ইচ্ছা হলো? হাতের নখ খুঁটতে খুঁটতে উত্তর দিল, -তোমায় ভীষল দেখতে ইচ্ছা হচ্ছিল। আজকের পর আর হয়ত দেখা হবে না। শেষের কথাটা শুনে বুকটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠল। অনুপমার বাবা ছিল সরকারী কর্মকর্তা।তারপর দিন ওরা বদলি হয়ে চিটাগাং হয়ে যায়। অনুপমার সাথে আর দেখা হয় নি।কখনও না। ; ; আমি আমার স্ত্রীর মাঝে কখনও অনুপমাকে খুঁজে পাই নি অথবা খোঁজার চেষ্টা করি নি। অনুপমা আমার কাছে তখন শুধুই অতীত। কিন্তু ১৪-১৫ বছরের সেই দূরন্ত কিশোরীর অবস্থান আমার মনের ভিতর কতটা সুদৃঢ় তা বুঝতে পারলাম আমার প্রথম কন্যা জন্ম নেবার পর।জুঁইয়ের চঞ্চলতা, হেয়ালিপনা, ছোট্ট কোনো কারনে ভীষণ রাগের মাঝে আমি অনুপমাকে দেখতে পাই। মায়ের প্রবল শাসন সত্ত্বেও জুঁই রাত করে বাড়ি ফেরে,  ধুপধাপ শব্দ করে সিঁড়ি ভাঙে। কোন এক ফুটবল টীমে নাম লিখিয়েছে।সেদিন পা মচকে লেংচাতে লেংচাতে বাড়ি ফিরল। তার টীম দুই গোলে জিতেছে। মায়ের বকাঝকা উপেক্ষা করে তার মুখে রাজ্য জয়ের হাসি। জু্ঁইয়ের জন্মদিনে আমার দায়িত্ব পরল ওর সব বান্ধবীদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়া। সবার শেষে যে মেয়েটির বাড়ি গেলাম সে মেয়েটি অত্যন্ত শান্তশিষ্ট। সারা রাস্তা টেনশনে অাধমরা মা না জানি কি পরিমাণ বকাঝকা করবে। আমি সস্নেহে মাথায় হাত দিয়ে বললাম, -মাকে ভয় পাও? -ভীষণ।মা যা রাগী।একদম স্বাধীনতা দেয় না। ; ; একতলা ছিমছাম বাড়ি।সদর দরজা খুলে আমরা ঢুকলাম।প্রথমে মেয়েটি তারপর আমি। দরজার ওপাশ থেকে কড়া গলায় চিৎকার ভেসে এলো, -কোন চুলোয় গিয়েছিলি? ফিরতে এত দেরি হলো? ভদ্রমহিলার নাতিদীর্ঘ শরীর। হালকা সবুজ রঙের শাড়ির আড়ালে এক সময়ের অতি পরিচিত মুখাবয়ব।কোনো ভুল নেই এটা অনুপমা। আমায় দেখে একটু যেন থমকে গেল।তারপর মেয়ের দিকে কড়া চোখে দৃষ্টি হেনে বলল, -যাও গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে ফ্রেশ হও। এরপর এক চিলতে হাসি দিয়ে বলল, -তুমি বসো শুভ'দা। চা করে আনি। অনুপমা হয়ত কি বলে কথা শুরু করবে বুঝতে পারছিল না।আমিও এদিক সেদিক তাকিয়ে ওর সুন্দর সাজানো ঘর দেখতে লাগলাম।অনেকক্ষন পর বলল, -কেমন আছ? -ভালো আছি । তোর কি খবর? দুজনের কথা হলো শুধুই বর্তমান নিয়ে।ছেলে-মেয়ে, চাকরি আর সাজানো সংসার নিয়ে কথা বলতে বলতে। দু'জনের অতীত একরকম আড়ালে রইল। ফেরার সময় হলো। সদর দরজা পর্যন্ত সে এগিয়ে দিতে এল। এক পলক শেষবারের মত তাকিয়ে বললাম, -মেয়েকে এত শাসন করিস, তুই নিজেও একসময় খুব দূরন্ত ছিলি। উত্তরে অনুপমার হাস্যোজ্জ্বল মুখে যেন আঁধার নেমে এল।উত্তর দিল, -মা হলে সব ভুলে যেতে হয়।তখন তার একটাই পরিচয়,সে একজন মা। আমি সেদিন অনুপমাকে আর কিছু জিগ্যেস করিনি, হয়তো অনুপমার আমাকে অনেক কিছু বলার ছিলো, কিন্তু বলতে পারিনি, হয়তো এই "মা" শব্দের বন্ধনটাই অনুপমাকে আটকে দিয়েছে। লেখক:- অলিভার কুইন (শুভ)।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৬৫৯ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • Rehnuma Ahmed
    Golpobuzz ৪ বছর, ৫ মাস পুর্বে
    Nice Story... gj

  • Asma ul husna
    User ৪ বছর, ৮ মাস পুর্বে
    Nice story????

  • Justin Hafiz
    User ৪ বছর, ৮ মাস পুর্বে
    একটা মুগ্ধকর গল্প পড়লাম। Keep It Up

  • বকুল রায়
    Golpobuzz ৪ বছর, ৮ মাস পুর্বে
    Nice,