বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

ABCD অথবা বাংলা শক – ১

"শিক্ষণীয় গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান Rocky (০ পয়েন্ট)

X বিঃ দ্রঃ ঘটনা গুলো সব সত্য, কিছুটা পরিমার্জিত (নাম, পরিচয়, স্থান উহ্য রেখে)। কাউকে অসম্মান অথবা আঘাত করার উদ্দেশ্যে নয়, বরং নিজের চিন্তার শুদ্ধতার লক্ষেই এই অসলগ্ন চিন্তাকে লেখায় রূপান্তর। অন্যকারো অভিজ্ঞতার সাথে মিনিয়ে বিচিত্র মানুষের ততধিক বিচিত্র কর্মকান্ডের ব্যাখা খোঁজার অপচেষ্টা। কালচারাল শক !!! দেশের বাইরে প্রথম যে বিষয়টি ফেস করেতে হয় তা হল, নিজেকে অন্য একটি দেশের/জাতির সংস্কৃতির সাথে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা। এই মানিয়ে নেয়ার চেষ্টার মাঝে নিজের ধ্যান-ধারনার সাথে মিলিয়ে যেন আঁতকে না উঠি তার জন্যই এই ব্যবস্থা। কেতাবি ভাষায় যার নাম কালচারাল শক। কিন্তু আমার বেলায় হয়েছে প্রায় উল্টো ঘটনা। আমেরিকা নিবাসি কিছু বাংলাদেশীদের আচরনে আমি শোকাহত হয়েছি বহুবার। সেইসব অভিজ্ঞতা নিয়ে আর তার কার্যকারন নির্ধারণে আমার আবোল-তাবোল চিন্তা নিয়েই আজকের গল্প, সময়ক্রম অনুসারে ভবিষ্যতেও চালিয়ে যাবার ইচ্ছে আছে। কালচারাল শক ১ আমার সুপারভাইসর মার্টিন উচ্চ শিক্ষার্থে আমেরিকা যাওয়ার প্রধান চাবিকাঠি হল রিসার্চ সুপারভাইসর। রাত জেগে অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিজের রিসার্চ এর সাথে ম্যাচ হয় এবং ফান্ডিং আছে এমন প্রফেসর খুঁজে বের করা, তারপর তাদেরকে নিজের গুন-কাহিনি বৃত্তান্ত করে ই-মেইল করা, সবশেষে চাতক পাখির মত তার মেইলের অপেক্ষা করা যে কি অমানুষিক কষ্ট এবং যন্ত্রণা তা বলে বোঝান যাবে না। তবে সব কষ্ট এক নিমিষে দূর হয়ে যায় যখন প্রফেসর তার রিসার্চ গ্রুপে নিতে রাজি হয়। আপ্লিকেশন প্রসেসের সেই সব বাধা-বিপত্তি আজকের বিষয় নয়। এই শকের প্রধান চরিত্র হল, আমার সুপারভাইসর মার্টিন রবারেজ ওরফে মার্টি। আগষ্ট, ২০১২। ইমিগ্রেশন কাষ্টমস পেড়িয়ে জে এফ কে এর ষ্টারবাকসের সামনে বসে আছি। মনের ভিতর একটু ভয় আর কিছুটা অশান্তি। প্রায় ৮৫০০ মাইল পাড়ি দিয়ে উচ্চশিক্ষার্থে আমেরিকা আগমন, একটু ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু প্রায় ৪০০ টাকা দিয়ে কফি খাওয়াটা আমার মত কার্জনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে ৫ টাকার চা খাওয়া মানুষের কাছে বেমানান। তখন সবকিছুকে ৮০ দিয়ে গুণ করে তুলনা করার একটা চেষ্টা ছিল। যাইহোক, কানেক্টিং ফ্লাইটের আরও ঘন্টা দুয়েক সময় আছে। ডেল্টা এয়ার এর গেইটের দিকে হাটতে হাটতে ভাবলাম মার্টিকে একটা কল দেই, কারন আমাকে নিতে এয়ারপোর্টে ওরই আসার কথা। পেফোন থেকে জানালাম আমার আসার সময়, কোথায় ও আমার জন্য অপেক্ষা করবে। এরপর, বাসায় ও জানালাম যে ঠিকঠাক মত পৌঁছেছি, আর একটুখানি বাকি। কাল সকালে বিস্তারিত জানাব। এরপর অপেক্ষার পালা, সেই পালা আরো দীর্ঘহয় যখন শুনি ফ্লাইট ডিলে হবে ৩ ঘন্টা। সময় কাটানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে শেষে বসে বসে অনাগত চ্যালেঞ্জ এর কথা ভাবতে শুরু করি। হটাৎ, চড়ুই পাখির আওয়াজে ধ্যান ভাঙ্গে। বড় আপন মনে হয় ওই চড়ুইটাকে, মনে হয় এতে আমার চেনা, ঢাকার বাসিন্দা। সেই ভালোলাগাটুকু আজো অবচেতন মনে কেমন যেন আবেশায়ীত করে, মায়া বাড়ায়। যাইহোক সবকিছু শেষে আমার গন্তব্য বাল্টিমোরে এসে পৌঁছালাম। কোনরকম ঝামেলা ছাড়াই ব্যাগেজ ক্লেইমের সামনে অপেক্ষামান মার্টির সাথে দেখাও হয়ে গেল। তারপর দুজনে ল্যাগেজ টেনে গাড়িতে যেয়ে উঠলাম। দীর্ঘ ২৪ ঘন্টার যাত্রায় আমি ক্লান্ত, খাওয়াও হয়নি সুবিধামত। অপরদিকে, মার্টি বিশাল উৎসাহী। এর আগে চাইনিজ ষ্টুডেন্ট থাকলেও , আমিই ওর প্রথম বাংলাদেশি ছাত্র। আমরা ততক্ষনে এয়ারপোর্ট ছাড়িয়ে বাল্টিমোর ডাউনটাউনের কাছাকাছি। ইনার হারবার, লিটল ইটালি, মাউন্ট ভারনন সহ আমাকে নানা দর্শনীয় স্থানের বর্নণা দিতে লাগল। একটুপর ওর খেয়াল হল, আমারতো কিছু খাওয়া উচিত। আমার কি পছন্দ অথবা নির্দিষ্ট কোথাও যেতে চাই কিনা প্রশ্ন করে, আমি তখন আধো ঘুমে তন্দ্রালু। চোখ খুলে তাকিয়ে উত্তর দেয়ার আগেই শুনি, মার্টি আমাকে স্যরি বলছে। আমিতো মনে মনে চিন্তা করি আসলাম ১ ঘন্টাও হুয়নি এর মাঝে এমনকি করলাম যে প্রফেসর উলটা আমাকে স্যরি বলে। আমি কারন জানতে চাইলে বলে, “আমি ভুলে গিয়েছিলাম যে তোমার এখন রোজা, তুমিও মনে হয় রোজা পালন করছ। এই সময় তোমাকে খেতে বলাটা অন্যায় হয়েছ, আমি তোমাকে অসম্মান করতে চাইনি”। আমি খুব অবাক হয়ে উত্তর দেই, তোমার চিন্তা ও উদারতার জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু আমি এই ২৪ ঘন্টা যাত্রায় রোজা পালন করছিনা, তবে কিছু খাবও না। আমি ক্লান্ত, তুমি আমাকে বাসায় নিয়ে চল। এরপর ও আমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে , স্কুলে যাবার রাস্তা দিনক্ষণ বলে দিয়ে বিদায় নেয়। বাংলা শক ১ আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি, তা মাঝারি মানের। ১৫০ বছরে পুরনো, ৩২৮ একরের শহুরে ক্যাম্পাস এ প্রায় ২২,০০০ শিক্ষার্থী। এখানে আগত বিদেশি শিক্ষার্থীর বেশিরভাগ চাইনিজ অথাবা ভারতীয়। গুনেপিতে বাংলাদেশি আমরা ৭/৮ জন, যার মাঝে এফ ১ (স্টুডেন্ট ভিসা) ২ জন। আমি আসার আগে অনেক কষ্টে এক বাংলাদেশির সাথে যোগাযোগ করে, এক শেয়ারিং আপার্টপেন্ট ঠিক করলাম। যার সাথে যোগাযোগ করেছিলাম তিনি বাংলাদেশি, বাবার সবুজপত্রের সুবাদে উনারা প্রায় ০৫ বছর হয় এখানে এসেছেন। এই শহরেই হাইস্কুল শেষ করে বর্তমানে উনি আমার স্কুলেই আন্ডারগ্র্যাড, একাউন্টিং এ। তার ছোট দুই ভাই ও এখানে মিডল স্কুল শেষ করে তখন হাইস্কুলে। আর যাদের সাথে থাকার কথা হয়েছে তারা আমার মতই এফ ১ এ পড়তে এসেছেন, তবে তারা শহরের আরেকটা স্কুলে। যাই হোক, মার্টি আমাকে একটু আগেই এই বাংলাদেশি পরিবারের বাসায় নামিয়ে দিয়ে গেছে। পরিচয় পর্ব শেষে আমি একটা ঘুম দিলাম। ক্লান্ত ছিলাম তারপড়েও এই দূর পরবাসের অনিশ্চয়তা ঠিক ভাবে ঘুমাতে দিচ্ছিলনা। এর মাঝে শুনি বাড়ির ছোট দুই ছেলে স্কুল থেকে ফিরেছে। ফৌজদারহাট – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় – বুয়েট পেড়িয়ে ফান্ডিং সহ মাষ্টার্স করতে এসেছি, নিজেকে কিছুটা হলেও স্মার্টতো ভাবতেই পারি। যদিও কলেজ লাইফে ইশশ্মার্ট বা ওভারস্মার্ট হিসেবে কম মার খেতে হয়নি। সেসব গল্প না হয়ে আরেকদিন। আসার আগে ফেসবুকের কল্যানে এই দুই ভাইয়ের সম্পর্কে রেকি করেছিলাম। মিথ্যে বলবনা, নিজের মাঝে কিছুটা ইনফিরিওটি ভাব হয়েছিল। এরা নিশ্চয় ফট ফট ইংরেজি বলে, ইয়ো ম্যান – ওসসাপ ডুড ছাড়া কথা বলতে পারে না। এছাড়া টিনএজ আমেরিকানরা নানা হবি নিয়ে থাকে – কেউ নার্ড হয়, কেউ স্পোর্টস, কেউ নানা ক্লাব চ্যারেটি। যেহেতু অন্য কোন বাংলাদেশীকে চিনি না অতএব এদের সাথেই সখ্যতা গড়তে হবে। আসার আগে কথা হয়েছিল এদের বড় বোনের সাথে যে কিনা আমার স্কুলেই আন্ডারগ্র্যাড করছে। বোনটিকে তা যাও সাধারণ মনে হয়েছিল তবে এই ভাত্রিদ্বয়কে নিজের লেভেলের বাইরে মনে হয়েছিল। যাইহোক, এদের সাথে পরিচয় শেষে, সন্ধ্যা পেড়িয়ে যখন রাত নামছে, মানে দেশে কেবল ভোর। বড় ভাইটিকে বললাম, তোমার ল্যাপটপ তা একটু ব্যাবহার করতে পারি। কিছুটা অবাক হলেও ব্যাবহার করতে দেয়। আমি তখন ব্যাকপ্যাক থেকে ফ্ল্যাশ ড্রাইভটা বের করে, ল্যাপটপে লাগিয়ে ফেসবুকে লগ ইন করেছি। গুরুত্বপূর্ণ সব কন্টাক্টস, ইনফো ওই ফ্ল্যাশ ড্রাইভ এ। ঠিক ঠাক মত পৌঁছেছি এই টাইপ একটা স্টেটাস দিয়ে বাসায় স্কাইপে কল দিব। প্রফেসরকেও একটা মেইল করার নিয়ত আছে। তা আমি কাজ করছি, এর মাঝে দুই ভাই এসে উঁকি ঝুঁকি মাড়ছে। তারা আমার ফেসবুক আর ফ্ল্যাশ ড্রাইভ দেখে যারপরনাই বিস্মিত। আমাকে প্রশ্ন করে (ইংরেজিতে, বাংলা বলতে কষ্ট হয় তাদের), আপনার ফেসবুক আছে ? আপনি ফ্ল্যাশ ড্রাইভ ইউস করেন ? আমি ততধিক অবাক হয়ে, কেন থাকবে না ? আর এটা এমন বড় কিছু ? তারা আবার বলে, বাংলাদেশে ফেসবুক চলে ? মানুষ ব্যাবহার করে এসব ? এরপর এদের সাথে কথায় কথায় জানতে পাড়ি, এদের কাছে বাংলাদেশ মানে নোংরা – সভ্যতা বিবর্জিত – ইলেক্ট্রিসিটি যেখানে মাঝে মাঝে আসে আর ইন্টারনেট বলে কিছু সেখানে নেই বা ছিল ও না। এই পরিবার, দেশের এর গ্রামাঞ্চল থেকে সোজা আমেরিকা চলে এসেছে। এমনকি ঢাকা কিংবা বিভাগীয় শহরগুলোও এদের কাছে ছিল অচেনা। গ্রামের ধুলো মাখা পথে দৌড়াতে থাকা এই কিশোর গুলো এখন সাবওয়ে – মেট্রো চড়ে। এদের বাবা-মার কাছেও বাংলাদেশ মানে ওয়াইল্ড ওয়েষ্ট, আইন নেই, নাগরিক সুযোগ সুবিধা নেই, শিক্ষিত/যোগ্য কোন লোক নেই। নিজেদের শিক্ষাগত যোগ্যতা যাই হোক না কেন, নীল পাসপোর্ট আর ডলারে আয়ের সুবাদে যেকারো চেয়েই নিজেদের ভাল-যোগ্য মনে করে। এই পরিবারটিও তার ব্যতিক্রম নয়। রাতে ঘুমানোর আগে ভাবি, প্রথমদিনের সকাল আর রাতের অভিজ্ঞতার মাঝে কত পার্থক্য। এক বিদেশি কিভাবে আমাকে আপন করে নিল, আমার সুবিধা-অসুবিধা আগে থেকে চিন্তা করে সেই অনুযায়ী সব করেছে। আর আমারই স্বদেশি যারা হয়তো চোস্ত ইংরেজি বলে, ফার্স্ট ওয়ার্ল্ডের বাসিন্দা কিন্তু মনের দিক থেকে কতটা সংকীর্ণ। একটা কাগজ (গ্রীন কার্ড) মানুষকে কতটাই না বদলে দিতে পারে। লেখক: ইসতিয়াক আহমেদ (৯৮-০৪)


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৭৩৪ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • ¤-ইশিকা-¤
    User ৫ বছর, ৩ মাস পুর্বে
    hm