বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন'র মৌলিক থ্রিলার, “১৯৫২: নিছক কোন সংখ্যা নয়।”

"বুক রিভিউ " বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান শাহরিয়ার আলম (০ পয়েন্ট)

X ছোটবেলা থেকেই আপনার ধ্যান ধারণা ছিল নিজের একটা দামি গাড়ি। বড় হয়ে টাকা পয়সা জমিয়ে কিনেও ফেললেন। কিন্তু, নিজের গাড়ি প্রথমদিন ড্রাইভ করার সময়েই যদি গাড়িচাপা দিয়ে একজনকে মেরে ফেলেন তবে কেমন লাগবে? স্বাগতম, আপনি ফেঁসে গেছেন। সায়েম মোহাইমেন দৈনিক মহাকালের সিনিয়র রিপোর্টার। দেশের বড় কয়েকটা দৈনিকের মধ্যে মহাকাল একটি। গাড়ির প্রতি ছিল তার প্যাশন। মানুষের বিভিন্ন রকম সখ থাকে, ইচ্ছা থাকে, কিন্তু ছোটবেলা থেকে সায়েমের একটাই ইচ্ছা ছিল। বড় হয়ে নিজের একটা দামি গাড়ি হবে। অটোমোবাইল সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রাখে। এক নজর দেখেই বলে দিতে পারে গাড়ির মডেল আর স্পেসিফিকেশন। কোন গাড়িতে কী কী সুবিধা আছে তা বলতে পারতো শোরুমের সেলসম্যানের থেকেও দ্রুত। বুঝতেই পারছেন গাড়ির প্রতি তার প্যাশনটা কেমন। এমনকি নিজের ক্লোজ বন্ধু বান্ধব ও এলাকার লোকজনদের নিকনেমও রাখতো গাড়ির সাথে মিলিয়ে। ডজ, বেডফোর্ড, মাজদা, মিটশুবিশি ইত্যাদি ইত্যাদি। যাইহোক, একসময় টাকা পয়সা জমিয়ে নিজের স্বপ্নটা বাস্তব রূপ দেয়। কিন্তু..... স্বপ্নটা ধূলিসাৎ হতেও সময় লাগে না। আপনার আমার সকলেরই এমন কিছু বন্ধু আছে না যারা কোনোকিছু কিনলেই ট্রিট চাই ট্রিট চাই বলে গলা ফাটিয়ে ফেলে? সায়েমেরও ছিল। ওদের চাপাচাপিতে গাড়ি কেনার ট্রিট দেয়ার জন্য ওদের নিয়ে বার এ যায়। নিজে যদিও পান করে না, তবে বাসায় গিয়ে খাওয়ার জন্য পাঁচটা বিয়ার নিয়ে যায়। বাসায় যাওয়ার পথে ফোনে গার্লফ্রেন্ডের সাথে একটু কথাও হয়। ফাঁকা রাস্তা পেয়ে একটা বিয়ারের ক্যানও খালি করে দেয়। গাড়ি তখন এয়ারপোর্ট রোড ধরে মাঝারি গতিতেই চলছিল। কালবৈশাখী ঝড়ের পর বৃষ্টি হওয়াতে রাস্তায় গাড়িও ছিল কম। গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলে যেই-না ফোনটা রাখতে যাবে অমনিই গাড়িটা একটু বাম্প করে, ফোনটা হাত থেকে পড়ে যায়। কী হয়েছে দেখার জন্য বৃষ্টির মধ্যেও নেমে পড়ে সায়েম। একটু পেছনে আসতেই দেখতে পায় একটা মানুষকে চাপা দিয়েছে ও। আর ঠিক তখনই উত্তরা থানার টহল গাড়ির হেডলাইট এসে ওর চোখে পড়ে! গোলাম মওলা দিনাজপুর থেকে মাত্রই ঢাকা এসে পৌঁছেছে। দিনাজপুর থেকে বদলি করে ওকে গুলশান বনানী জোনের এসি করা কয়েছে। ডিউটিতে জয়েন করার আগেই তার ফোনে একটা কল আসে। উত্তরা থানার ওসি তার পরিচয় জানতে চায়। ঘটনাচক্রে জানতে পারে মওলার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সায়েমকে মাতাল অবস্থায় গাড়ি চাপা দিয়ে খুনের দায়ে গ্রেফতার করেছে উত্তরা থানার পুলিশ। আদেল সুফি ছিলেন একজন ভাষাসৈনিক। খুব নামকরা ব্যক্তি। তার ছেলে আরেফ সুফি একবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিল। পরবর্তীতে নিজের জায়গায় আহকামউল্লাহকে সাপোর্ট করে, আহকামউল্লাহ এমপিও হয়। রাজনীতি ছাড়ার পর আরেফ সুফি ব্যবসা বানিজ্যে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, এবং দেশের নামকরা ব্যাবসায়ী হয়ে যায়। সুফি পরিবারের সাথে প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্কও খুব ভালো। সংখ্যার ব্যাপারে আদেল সুফি ছিলেন দুর্বল। নিজের মোবাইল নাম্বারের লাস্ট ৮ ডিজিট ছিল 19251952। ১৯২৫ সালে জন্ম, আর ৫২ তে কী সেটা সবাই জানেন। নিজের জন্মদিনে ছেলে তাকে একটা দামি গাড়ি উপহার দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীকে বলে সে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করানো হয় একটা ইউনিক নাম্বারে। ১৯৫২! আগে পিছে কিছু নেই, এমনি ঢাকা মেট্রো এটাও নেই, শুধুই ১৯৫২। নিজে গাড়ি চালাতে জানতেন না, তাই প্রাণপ্রিয় নাতি আদনান সুফিই চালাতো গাড়িটা। আদেল সুফির মৃত্যুর পর গাড়িটা আদনানের ব্যক্তিগত হয়ে যায়। এখন ঘটনা হলো আদনান সুফির এই ইউনিক নাম্বারের গাড়িটা নিখোঁজ। সায়েমের গাড়ির নিচে পড়েছিল এই আদনান সুফিই। কিন্তু কথা হলো এত রাতে এয়ারপোর্ট রোডের মত ব্যস্ত রাস্তায় আদনান কী করছিল? আর ওর গাড়িটাই বা কোথায়? কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ না বের হয়ে যায়!! কিন্তু কথা হলো খুঁড়বে কে? সায়েমের যদি জামিন হয় তবে পুলিশ বিন্ধু মওলার সাহায্য নিয়ে সেও খুঁড়তে পারে। এত বড় রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে খুন হয়েছে, জামিন এত সহজ? এখন পর্যন্ত মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের যে কয়টা বই পড়েছি তার মধ্যে ১৯৫২ প্রথম দিকেই থাকবে। গল্পটা ভালো ছিল। সাজানো এবং পরিবেশনও ভালো। তবে কিছু জায়গায় কিছু ব্যাপার একদমই ভালো লাগেনি। একদম প্রথম থেকেই টানটান উত্তেজনা ছিল। আদনান সুফি সায়েমের গাড়ির নিচে পড়ার পর থেকেই ঘটনার মোড় ঘুরে যায়। তারপর নাটকীয়ভাবে একের পর এক মোড় ঘুরতেই থাকে, ঘুরতেই থাকে। গোলাম মওলা পুলিশের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হওয়ার পরেও তাকে কিছুটা ছোট করেই দেখানো হয়েছে। আসলে সায়েমকে হাইলাইট করতে গিয়ে মওলাকে ছোট করে ফেলেছে যেটা আমার একদমই ভালো লাগেনি। যোগ্যতা না থাকলে এমনি এমনিই নিশ্চয় তাকে গুলশান বনানী জোনের এসি বানানো হয়নি। অথচ মওলার মাথা থেকে কোনো ভাইটাল পয়েন্ট বের হতে দেখলাম না। সায়েমকে দেখানো হয়েছে একজন সফল প্যাশনেট জার্নালিস্ট হিসেবে, গাড়ির প্রতি যার আবার দুর্বলতা রয়েছে। যে কিনা গাড়ির আওয়াজ শুনেও বলে দিতে পারে কোন গাড়ি যাচ্ছে, অথচ এত কষ্ট করে টাকা পয়সা জমিয়ে সে যে গাড়িটা কেনে তার কোনো উল্লেখ নেই। ব্র‍্যান্ডের নামই উল্লেখ নেই, মডেল তো পরের কথা। এই বইয়ের প্রধান তিনটা নারী চরিত্র হলো নিম্মি, তাহিতী এবং আমরিন। আশ্চর্যজনকভাবে তিনজনকেই নিজেদের রিলেশনের ব্যাপারে ওভার পজেসিভ দেখানো হয়েছে। এছাড়াও অপ্রধান যে কয়টা নারী চরিত্র ছিল তাদেরকেও। এটা ইচ্ছাকৃত না কাকতালীয় আমার জানা নেই। এই কয়েকটা ব্যাপার বাদে আর তেমন কোনো অসংগতি চোখে পড়েনি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক চিত্রও সুন্দরভাবেই ফোটানো হয়েছে। ক্ষমতার লোভ যে কী জিনিস, সেটাও ক্লিয়ার বোঝানো হয়েছে। পড়তে গেলে কোনো জায়গায় একটুও বোর হওয়ার চান্স নেই। তাছাড়া বইটা এমনভাবে লেখা হয়েছে যে আপনি মাঝখানে হুট করে বিরতিও দিতে পারবেন না। পড়তে পড়তে রাত হয়ে যাওয়ায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আজ থাক, সকালে আবার পড়ব, অফিসও আছে। ভাবছিলাম এই অধ্যায়টা শেষ হোক। কিন্তু ঘটনা এমনভাবে মোড় নিয়েছে যে পরে কী হয় না জানা পর্যন্ত স্বস্তি হচ্ছিল না। পরের অধ্যায়েও তথৈবচ। মজার ব্যাপার হলো বাতিঘরের বই নিয়ে আমার এবং সবার যে কমন অভিযোগ থাকে সেটা হলো ভুল বানান, এই বইয়ে সেটা প্রায় অনুপস্থিত। এই ব্যাপারটা স্বস্তিদায়ক ছিল। বইয়ের আরেকটা মজার দিক হলো, আপনি জাস্ট কষ্ট করে প্রথম অধ্যায় পড়বেন, বাকিগুলো বই নিজেই আপনাকে দিয়ে পড়িয়ে নেবে। সুতরাং, দেখেন সায়েমকে জামিন করিয়ে দিতে পারেন কিনা। হ্যাপি জার্নি... বইঃ ১৯৫২ : নিছক কোনো সংখ্যা নয় লেখকঃ মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন প্রকাশকঃ বাতিঘর প্রকাশনী প্রকাশকালঃ বইমেলা ২০১৪ প্রচ্ছদঃ সিরাজুল ইসলাম নিউটন পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৪১৬ মূল্যঃ ৪০০ টাকা মাত্র


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৫০৫ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • শাহরিয়ার আলম
    User ৪ বছর, ১০ মাস পুর্বে
    অবশ্যই পড়া উচিত!

  • মুহাম্মদ মাজেদ
    Golpobuzz ৪ বছর, ১০ মাস পুর্বে
    বইটা কিনার খুব ইচ্ছা ছিল।এবারের বই মেলা থেকে। বাতিঘর প্রকাশনী থেকে ঘুরেও আসছি কিন্তু শেষ মুহূর্তে কেনার কথা ভুলে গেছি।