বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
সাইকো
আশির গোড়ার দিকের কথা।
আমার মত একা মানুষ সারা বাংলাদেশে ছিল না। একটা বাড়ির সিঁড়িঘরে ত্রিশ টাকা ভাড়া দিয়ে থাকতাম। একটা সামান্য কোম্পানিতে টাইপিস্টের কাজ করতাম। তিন বছর আগেই বাবা-মাকে হারিয়েছিলাম। ভাই বোনছিল না। তেমন একটা বন্ধু বান্ধবওনা। যা বেতন পেতাম তা দিয়েই চলত। মাসে একবার ভালো-মন্দ খেতাম আর প্রতি দুই সপ্তাহ পর সিনেমা হলে যেতাম। একেবারে খারাপ না।
এরই মধ্যে একদিন একটা পত্র পেলাম। প্রথমে একটু অবাক হয়েছিলাম। পুরো বাংলাদেশে আমাকে পত্র লেখার কেউ আছে বলে মনে পড়ছিলনা। আমেনা নামে আমার দূর সম্পর্কের এক খালা লিখেছেন,
'' বাবা। দোয়া নিও। দিনকাল কেমন যাইতেছে? গতকাল এক পরিচিতের
নিকট তোমার সম্পর্কে জানিতে পারিলাম। মন অত্যাধিক খারাপ হইল।
তোমার মা নিশ্চয় আমার গল্প করেছেন। তোমার জন্য কিছু একটা করবার
ইচ্ছা হইল। আশা করিব পত্রপাঠ আমার এখানে চলে আসিবে। খালার কাছে
ভালোই থাকিবে- এ আশ্বাস দিতে পারি...।''
আমেনা নামে কোন খালার নাম মনে করতে পারছিলাম না। তবুও একদিন আমার যাবতীয় সম্বল একটা ব্যাগে ভরে সিলেটের ট্রেনে উঠে পড়লাম।
খালা এবং তাঁর বাড়ি বেশ লাগল। খালার কেউ নেই। বিশাল বাড়ি। একটুএগোলেই 'সুরমা' নদীর ঢেউ চোখে পড়ে। খালার আদর আপ্যায়ন দেখে চোখে জল আসে- এমন অবস্থা। নারীদের মমতা'র কোন বিকল্প এখনো বোধহয় পৃথিবীতে আসে নি। ঘুরলাম-ফিরলাম-খেলাম। একেবারে খানদানি দিনকাল চলছিল।
এরই মধ্যে আবিস্কার করলাম খালার ছবি আঁকার বেশ একতা বাতিক আছে।
একদিন বিকেলে একটু হাঁটতে বের হলাম। দেখি খালা বাগানে বসে একটিআমড়া গাছের ছবি আঁকছেন। আর নিজে নিজেই কাকে উদ্দেশ্য করে চেঁচাচ্ছেন। আমি খালার কাছে গেলাম।
- কি হয়েছে? খালা।
- আর বলো না। গাছটা বাতাসে এমন নড়াচড়া করছে। শান্তিমত ছবিটাও আঁকতে পারছি না।
- হুঁ। বাতাসকে তো আর কন্ট্রোল করা যাবে না।
- সেটাই। আচ্ছা, বাজারের দিকে যাবে?
- কেন খালা? কিছু আনতে হবে।
- দেখ তো। মোটামুটি বড় সাইজের প্লাস্টিকের গাছ পাওয়া যায় কিনা।
- জ্বী আচ্ছা।
খালার জন্য দুই ফুটের মত লম্বা একটা প্লাস্টিকের মরিচ গাছ আনলাম। রাতে দেখলাম খালা গাছটিকে সামনে রেখে মনোযোগের সাথে আঁকছেন। আমার কেন জানি খুব বিরক্ত লাগল।
খালার ছবি আঁকা রোগ বাড়তেই লাগল। একদিন দেখি বাজার থেকে আনা কাঁচা মাছের ছবি আঁকার চেষ্টা করছেন।
এরই মধ্যে একটা মেয়ের সঙ্গে আমার কিছুটা ভাব হল। থিয়েটারে নাটক দেখতে গিয়েছি। পাশ থেকে একটা মেয়ে বলল।
- ভাইয়া। আমেনা খালার বাড়িতে থাকেন না?
আমি বেশ অবাক হলাম। একটা মেয়েকে আমার সাথে নিজে থেকে কথা বলতে দেখে। আমি বললাম।
- হ্যাঁ।
- উনি খুব ভালো মানুষ।
- হ্যাঁ।
- আপনি কি প্রায় নাটক দেখতে আসেন?
- মাঝে মধ্যে।
- আমিও।
আরেকদিন থিয়েটারে গেলাম। দেখি মেয়েটা আমাকে দেখে মাথা নীচু করেফেলল। মুচকি মুচকি হাসতে লাগল। থিয়েটার থেকে ফেরার সময় আমার হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিল। বাড়িতে এসে কাগজটা খুললাম। গুটি গুটি অক্ষরে লেখা। ''আপনাকে আমার অনেক ভালো লাগে। এখন থেকে আপনাকে তুমি করে বলব। ঠিক আছে? তোমাকে আমার খুব ভালো লাগে।''
খালা কোত্থেকে একটা কুকুরের বাচ্চা নিয়ে আসলেন। প্রাণীদের প্রতি খালার এত মমতা আগে বুঝতে পারিনি। কুকুরটার জন্য এটা কিনেন- ওটা কিনেন। মানুষ নিজের বাচ্চার জন্যে এত কিছু কিনে না। নিজে কুকুরটাকে খাইয়ে দেন। কুকুরটার জন্য কাপড় বোনেন। আমাকে বলেন।
- বাচ্চাটা খুব আদুরে না? -বাচ্চাটাকে একটু ঘুরিয়ে নিয়ে আস। কিংবা - দেখলেই মায়া লাগে। এই জাতীয় কথা।
সেদিন সকালে বাড়ির পিছনে গিয়েছি। দেখি কুকুরের বাচ্চাটা মরে পড়ে আছে। আমার বুকটা কেঁপে উঠল। খালা জানতে পারলে খুব কষ্ট পাবেন।
খবরটা শুনে খালা পাগলের মত কাঁদতে লাগলেন। আমি কি করব বুঝতেপারছিলাম না। খালা কিছুটা শান্ত হওয়ার পর বললাম।
- খালা। পিছনের উঠোনে কবর দিয়ে দিই?
খালা কেঁদে উঠলেন।
- না , না।
দেখলাম খালা একটা প্লাস্টিকের কেসে কুকুরটাকে শুইয়ে রাখলেন। একদিন দেখলাম- মরা কুকরের বাচ্চাটা উপরে দড়ি থেকে ঝুলানো। খালা মনোযোগ দিয়ে ছবি আঁকার চেষ্টা করছেন। দৃশ্যটা আমার ভয়ানক লাগল।
কয়েকদিন পর আমি আর খালা নাস্তা করছিলাম। কথা প্রসঙ্গে খালা বললেন।
- রিনুর সঙ্গে তোমার খুব ভাব।
আমি লজ্জা পেলাম। একে অন্যের বাড়িতে থাকি- তার ওপর আবার প্রেমকরছি। খালাই বলল।
- মেয়েটা বেশ ভালো। তোমার সঙ্গে খুব মানাবে।
খালার কথা শুনে আমার চোখে পানি এসে গেল। মা বেঁচে থাকলে নিশ্চয় এমন করে কথা বলতেন।
- বেশিদিন তো আর বাঁচবনা। ছেলের বউ দেখে যেতে ইচ্ছে করছে। তুমিই তো আমার ছেলে। আমি ঠিক করেছি- রিনুকে তোমার বউ করে আমার সবকিছুতোমাকে দিয়ে দিব। এরপর তুমি রাখতে চাইলে- থাকব।
আমি কি বলব বুঝতে পারছিলাম না। মানুষ এত মায়া-ময়ী হয়!
সেদিন রাতে বিছানায় শুয়ে আছি। হঠাৎ একটা কথা মনে হওয়াতে আমার বুক কেঁপে উঠল। খালা নিজেই কুকুরের বাচ্চাটাকে মেরেছেন- ছবি আঁকার জন্য। কুকুরটাকে কেন এত যত্ন করেছিলেন- বুঝতে পারলাম। বুঝতে পারলাম- আমাকে কেন এত আদর-যত্ন করেন।
খালা আমার ছবি আঁকবেন। প্রাণ আছে এমন কোন বস্তু তো আর স্থির থাকতে পারেনা- ভালো করে ছবি আঁকা যায়না- তাই আমাকে প্রাণহীন করবেন।
আমি দরদর করে ঘামতে লাগলাম। হঠাৎ আমার ঘরের দরজা খোলার আওয়াজ শুনলাম। খালা আসছেন- আমাকে খুন করার জন্য।
আমার এই ঘটনা পরবর্তীতে অনেককে বলেছি। কেউ বিশ্বাস করেনা। এমনকি আমার স্ত্রী, যে আমার সব কথা বিশ্বাস করে- সেও না। শুধু 'মিয়াও' বিশ্বাস করে । মিয়াও হলো আমার মেয়ে অপ্সরা। ওকে আদর করে আমি 'মিয়াও' বলে ডাকি। আমি যতবার গল্পটা বলি মিয়াও আমার বুকে মাথা লুকিয়ে বলে,,
- আব্বু। আমি কখনো ছবি আঁকব না।
copy
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
fariamumpy
User ৪ বছর, ১০ মাস পুর্বে