বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

নন্দিত নরকে

"উপন্যাস" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান Nowshin (০ পয়েন্ট)

X হুমায়ূন আহমেদ তৃতীয় পর্ব বাবা নামলেন রিকশা থেকে। রাবেয়া ধীরে সুস্থে নামল। মুখ কালো করে বলল, মা, ডাক্তার আমাকে বেশি পরিশ্রম করতে নিষেধ করেছেন। এখন শুধু বিশ্রাম। তাই না বাবা? বাবা মা’র দিকে তাকিয়ে কাপা গলায় বললেন, এখন কী করবে ? ব্যাপারটা আমি জানলাম, রুনু জানল, মন্টু ফুটবল খেলতে বাইরে গেছে, শুধু সে-ই জানল না। রাবেয়ার নির্বিকার ঘুরে বেড়ানোর ফল ফলেছে। ডাক্তার তাকে পরিশ্রম করতে নিষেধ করেছেন। এখন রাবেয়ার প্রয়োজন শুধু বিশ্রাম। রাবেয়ার মাথার ঠিক নেই। ছোটবেলা থেকেই সে ঘুরে বেড়ােত চারদিকে। সব বাড়িঘরই তার চেনা। চাচা খালু দাদা বলে ডাকে আশেপাশের মানুষদের। তাদের ভিতর থেকেই কেউ তাকে ডেকে নিয়েছে। এমন একটি মেয়েকে প্রলুব্ধ করতে কী লাগে ? মা’র রাত্রে ঘুম হয় না। তার চোখের নিচে গাঢ় হয়ে কালি পড়েছে। রুনু আর শীলুদের বাসায় গান শুনতে যায় না। নাহার ভাবি বেড়াতে এসে বললেন, কী ব্যাপার, তোমরা কেউ দেখি আমাদের ওখানে যাও না, রাবেয়া পর্যন্ত না। রুনু কথা বলে না। মা নিচু গলায় বলেন, রাবেয়ার অসুখ করেছে মা । কী অসুখ, কই জানি না তো ? এমনি শরীর খারাপ । বলতে গিয়ে মায়ের কথা বেঁধে যায়। অসহায়ের মতো তাকান। ব্যাপারটার উৎস রাবেয়ার কাছ থেকে জানতে চেষ্টা করলাম। আমি । সন্ধ্যায় যখন রুনু মাস্টার কাকার কাছে পড়তে যায়, ঘরে থাকি আমি আর রাবেয়া, তখনই আমি কথা শুরু করি । রাবেয়া! কী ? কোথায় কোথায় বেড়াতে যাস তুই ? কত জায়গায়। চেনা বাড়িতে। খুব ভালো লাগে ? হু। কাকে কাকে ভালো লাগে ? সবাইকে । ছেলেদের ভালো লাগে ? হু। নাম বল তাদের । একটানা নাম বলে চলে সে। তাদের কাউকেই সন্দেহভাজন মনে হয় না। আমার। সবাই বাচ্চা বাচ্চা ছেলে। রাবেয়াকে বড় আপা ডাকে। তারা তোকে আদর করে রাবেয়া ? হু। কী করে আদর করে ? আমার সঙ্গে খেলে, আর. আর কী ? গল্প করে । কিসের গল্প ? ভূতের। ইতস্তত করে বলি, তোকে কেউ চুমু খেয়েছে রাবেয়া ? যাহ! তাই বুঝি খায় ? মা'র কথাগুলি হয় আরো স্পষ্ট, আরো খোলামেলা। আমার লজ্জা করে। মা আদুরে গলায় বলেন, রাবেয়া, কে তোর শাড়ি খুলেছিল ? বল তো নাম ? যাও মা, তুমি তো ভারি. মা রেগে যান। হাঁপাতে হাঁপাতে বলেন, তাহলে এমন হলো কেন ? বল তুই হারামজাদি ? রাবেয়া বলে না কিছু, মা ফুপিয়ে-ফুপিয়ে কদেন। রাবেয়া বড় বড় চােখে তাকায়। বলে, কাদো কেন মা ? বল, কার সঙ্গে তুই শুয়েছিলি ? রাবেয়া চুপ করে থাকে। কথাই হয়তো বুঝতে পারে না। বাবা পাগলের মতো হয়ে উঠেছেন। মেজাজ হয়েছে খিটখিটে, অল্পতেই রেগে বাড়ি মাথায় তোলেন। রুনু স্কুল থেকে ফিরতে দেরি করেছে বলে মার খেল সেদিন। একদিন দেখি বাবা গণক নিয়ে এসেছেন, পাড়ার যুবকদের নাম লিখে কী সব মন্ত্র পড়ছে সে। রাবেয়ার অসুখের প্রত্যক্ষ চিহ্ন ধরা পড়ল একদিন ভোরে। চা খেয়েই ওয়াক ওয়াক করে বমি করল সে। যদিও তার শারীরিক অস্বাভাবিকতা নজরে আসার সময় এখনো হয়নি তবু তার শরীরে আলগা শ্ৰী আসছিল। একটু চাপা গাল ভরাট হয়ে উঠছে, ভুরু মনে হচ্ছে আরো কালো, চোখ হয়েছে উজ্জ্বল, চলাফেরায় এসেছে এক স্বাভাবিক মন্থরতা। স্কুলের হেডমাস্টারের বউ একদিন বেড়াতে এসে বললেন, দেখা ও বউ, তোমার মেয়ে কেমন হাঁটছে ঠিক যেন পোয়াতি । কথাগুলি আমার বুকে ধক করে বিধেছে। কিছু একটা করতে হবে এবং খুব শিগগিরই। সবার জািনবার ও বুঝবার আগে। একটি করে দিন যাচ্ছে, অনিশ্চয়তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি সবাই। কিন্তু কী করা যায় ? বাবা নিশ্চয়ই কিছু একটা ভেবেছেন। একবার ইচ্ছা হয় তাঁকে জিজ্ঞেস করি, কিন্তু সাহসে কুলোয় না। বাবাকে বড় ভয় করি আমরা। সেদিন রাতে শুনলাম। বাবা চাপা কণ্ঠে বলছেন, বিষ খাইয়ে মেরে ফেল মেয়েকে। মা বললেন, ছিঃ ছিঃ, বাপ হয়ে এই বললে ? বাবা বিড়বিড় করে বললেন, আমার মাথার ঠিক নেই শানু, তুমি কিছু মনে করো না। পাগল মেয়ে আমার। বাবার দীর্ঘ নিঃশ্বাস শুনলাম। অনেক রাত অবধি ঘুম হলো না আমার। এক সময় রাবেয়া ঘুম ভেঙে জেগে উঠল। কাতর গলায় বলল, খোকা! কী ? বাথরুমে যাবি ? উঁহু। কী হয়েছে ? খারাপ লাগছে ? হ্যাঁ। বমি করবি ? না। স্বপ্ন দেখেছিস ? হু। কী স্বপ্ন ? মনে নেই। ঘুমিয়ে পড়, ভালো লাগবে। আচ্ছা । রাবেয়া শুয়ে পড়ল আবার। মুহুর্তেই উঠে বসে বলল, খোকা! কী ? পলা এসেছে। কে এসেছে ? পলা, দোর খুলে দ্যাখ। বারান্দায় বসে আছে। আমি ডাক শুনলাম। দরজা খুলে বেরিয়ে আসলাম দু’জনেই। কোথায় কী ? খ খ করছে চারদিক। রাবেয়া ডাকল, পলা, পলা! মা বললেন, কে কথা বলে ? আমি আর রাবেয়া, মা। বাবা ধমকে উঠলেন, যাও যাও, ঘুমোতে যাও। কী কর এত রাত্ৰে ? শব্দ শুনে মাস্টার কাকা বাইরে আসেন। কী হয়েছে খোকা ? রাবেয়া বলে, পলাকে ডাকছিলাম কাকা । যাও শুয়ে পড়, পলা কোথেকে আসবে। এত রাত্তিরে ? শুতে শুতে রাবেয়া বলল, খোকা পলাকে একটা চামড়ার বেল্ট কিনে দেবে ? গলায় বেঁধে দেব। আচ্ছা। আর একটা লম্বা শিকল কিনে দেবে ? দেব । আচ্ছ। আর একটা জিনিস দেবে ? কী জিনিস ? নাম মনে নেই। আমার, দেবে তো ? আচ্ছা দেব । কবে ? কাল ? না, চাকরি হোক আগে । বাবা বলে উঠলেন, কী ভ্যাজর ভ্যাজর করছিস তোরা। ঘুমো। সারাদিন খেটে এসে শুই, তাও যদি শান্তি পাওয়া যায়। বহু আকাঙ্গিক্ষত চিঠিটি আসল। সরকারি সিল থাকা সত্ত্বেও কিছুই বুঝতে পারিনি। আর দশটা খাম যেমন খুলি তেমনি আড়াআড়ি খুলে ফেললাম। আমাকে তারা ডেকেছেন। রসায়ন শাস্ত্রের লেকচারারশিপ পেয়েছি। একটি কলেজে। প্ৰাথমিক বেতন সাড়ে চারশ’ টাকা, ইয়ারলি পাঁচশ টাকা ইনক্রিমেন্ট। লেখাগুলি কেমন অপরিচিতি মনে হচ্ছিল। খুব খুশি হয়েছি। এমন একটা অনুভূতি আসছিল না। অথচ আমি সত্যি খুশি হয়েছি এবং সবাইকে খুশি করতে চাই। সীতাকুণ্ডের চাই, রোল নাম্বার থারটিন-এর গায়ে যেমন দেখেছি। এখন হয়তো সমস্তই আমার মুঠোয়, তবু সেই অগাধ সুখ, সমস্ত শরীর জুড়ে উন্মাদ আনন্দ কই ? আমরা বহু কষ্ট পেয়ে মানুষ হয়েছি। আমাদের ছেলেমানুষি কোনো সাধ কোনো বাসনা আমার বাবা-মা মেটাতে পারেন নি। আমাদের বাসনা তাদের দুঃখই দিয়েছে। আজ আমি সমস্ত বেদনায় সমস্ত দুঃখে শান্তির প্রলেপ জুড়োব। আলাদীনের প্রদীপ হাতে পেয়েছি, শক্তিমান দৈত্যটা হাতের মুঠোয়। মা, আমার চাকরি হয়েছে। মা দৌড়ে এলেন। বহুদিন পর তার চোখ আনন্দে ছলছল করে উঠল। বললেন, দেখি। আমি চিঠিটা তার হাতে দিলাম। মা পড়তে জানেন না, তবু উল্টে পাল্টে দেখলেন সেটি। এমনভাবে নাড়াচাড়া করছিলেন যেন খুব একটা দামি জিনিস হাতে। মা বললেন, বেতন কত রে ? সাড়ে চারশ । বলিস কী, এত ? আমি তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে বললাম, বেশি আর কোথায় ? বলেই আমি লজ্জা পেলাম। ভালো করেই জানি টাকাটা আমার কাছে অনেক বেশি। মা বললেন, এবার বিয়ে করাব তোকে । কী যে বলেন! বেশ একটি লক্ষ্মীমন্ত মেয়ে আনতে হবে। রূপবতী কিন্তু সাধাসিধা, নাহার মেয়েটির মতো । মা কল্পনায় সুখের সাগরে ডুব দিলেন। শহরে তুই বাসা করবি ? তা তো করতেই হবে। বেশ হবে, মাঝে মাঝে তোর কাছে গিয়ে থাকব। মাঝে মাঝে কেন, সব সময়ে থাকবেন। না রে বাপু, সংসার ফেলে যাব না। মা ছেলেমানুষের মতো হাসলেন। আমি বললাম, প্রথম বেতনের টাকায় আপনাকে কী দেব মা ? তোর বাবাকে একটা কোট কিনে দিস, আগেরটা পোকায় নষ্ট করেছে। বাবারটা তো বাবাকেই দেব, আপনাকে কী ? মা রহস্য করে বললেন, আমায় একটা টুকটুকে বউ এনে দে। মাস্টার কাকাও খবর শুনে খুশি হলেন। তাঁর খুশি সব সময়ই মৌন। এবার আনলেন। অনেক মিষ্টি। যার যত ইচ্ছে খাও। কাকা বললেন, সুখ আসতে শুরু করলে সুখের বান ডেকে যায়, দেখো খোকা, কত সুখ হবে তোমার। রুনু স্কুল থেকে এসে বলল, দাদা তোমার নাকি বিয়ে ? কে বলেছে রে ? মা, হি হি। খুব হি হি, না ? তোকে বিয়ে দি যদি ? যাও খালি ঠাট্টী। কাকে তুমি বিয়ে করবে। দাদা ? দেখি ভেবে। আমি জানি কার কথা ভাবছ। কার কথা ? শীলার কথা নয় ? পাগল তুই! অবহেলায় উড়িয়ে দিলেও বুঝতে পারছি আমার কান লাল হয়ে উঠছে। অস্বস্তি বোধ করছি। শীলুকে কেন যে হঠাৎ ভালো লাগল। যতবার তাকে দেখি ততবার বুক ধক করে ওঠে। একটা আশ্চর্য সুখের মতো ব্যথা অনুভব করি। সমস্ত শরীর জুড়ে শীলু শীলু করে কারা বুঝি চোঁচায়। আমি একটু হেসে বলি, কে ভাবে তোর শীলুর কথা ? না, এমনি বলছিলাম। বড় ভালো মেয়ে শীলু। হঁ। তুই কাকে বিয়ে করবি রুনু ? যাও দাদা, ভালো হবে না বলছি। দাদা, আমি কিন্তু কেঁদে ফেলব। এবার। আনন্দ অনুষ্ঠান থেকে মন্টু বাদ পড়ল। বড় নানার বাড়িতে গিয়েছে সে, আগামীকাল আসবে। বাবা আসলেন রাত ন’টার দিকে। মা খবরটা না দিয়ে মিষ্টি খেতে দিলেন বাবাকে । মিষ্টি কিসের ? আছে একটা ব্যাপার। বাবা আধখানা মিষ্টি খেলেন, ব্যাপার জানার জন্যে উৎসাহ দেখালেন না। মা নিজের থেকেই বললেন, খোকার চাকরি হয়েছে। সাড়ে চারশ’ টাকা মাইনে। বাবা খুশি হলেন। থেমে থেমে বললেন, ভালো হয়েছে। আমি চাকরি ছেড়ে দেব। এবার। বয়স হয়েছে, আর পারি না। রাবেয়া, রাবেয়া কোথায় ? ঘুমিয়েছে, শরীর খারাপ। ভাত খায়নি তো ? না, একটা মিষ্টি খেয়েছে শুধু। আহ! বললাম খালিপেটে রাখতে, মিষ্টিই বা দিলে কেন ? সকাল সকাল ঘুমিয়ে পড়লাম সেদিন। রাত একটার দিকে মা পাগলের মতো ডাকলেন, খোকা ও খোকা! শিগগির ওঠ। ও খোকা, খোকা । খুব ছোটবেলায় গভীর রাতে একবার মা এমন ব্যাকুল হয়ে ডেকেছিলেন। ভূমিকম্প হচ্ছিল তখন। আমাদের বাসা থেকে চল্লিশ গজের ভিতর নদী রাতে মায়ের আতঙ্কিত ডাক আমাকে ভূমিকম্পের কথা মনে করিয়ে দিল। দরজা খুলে বাইরে এসে দাঁড়াতেই মা বললেন, আয় আমার ঘরে, আয় তাড়াতাড়ি। কী হয়েছে ? মা অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছিলেন। তিনি আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে চললেন। বাবা গরুর মতো চোখে তাকিয়ে আছেন। রক্তে মেঝে ভেসে যাচ্ছে। আমি থমকে দাঁড়ালাম। এবরশান নাকি ? কাকে দিয়ে কী করালেন ? নাকি নিজে নিজেই কিছু খাইয়ে দিয়েছেন ? একজন বড় ডাক্তার নিয়ে আসি। রক্ত বন্ধ হচ্ছে না। ডাক্তার আসলেন একজন। গম্ভীর হয়ে ইনজেকশন করলেন। আপনার মেয়েকে আমি চিনি । বাবা ডাক্তারের হাত চেপে ধরলেন, বড় দুঃখী মেয়ে, মেয়েটিকে আপনি বাঁচান। ডাক্তার। ডাক্তার সেন্টিমেন্টের ধার দিয়েও গেলেন না। একগাদা ওষুধ দিয়ে গেলেন। সকালে আরো দুটাে ইনজেকশন করতে ঘললেন। দশটার দিকে তিনি আসবেন। বাবা হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, কেউ জানবে না তো ডাক্তার ? ডাক্তার বললেন, মান ইজ্জত পরের ব্যাপার, আগে মেয়ে বাচুক । রাবেয়া চি চি করে বলল, মা আমার কী হয়েছে ? কিছু হয়নি, সেরে যাবে। চুপ করে শুয়ে থাক। বুকটা খালি খালি লাগছে কেন ? সেরে যাবে মা, দুধ খাবে একটু ? না। আমি আচ্ছন্নের মতো দাঁড়িয়ে ছিলাম। ঘরে লম্বালম্বি একটা ছায়া পড়ল। তাকিয়ে দেখি মাস্টার কাকা দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে। একটু কাশলেন তিনি। বাবা মাস্টার কাকা মৃদু গলায় বললেন, শহর থেকে খুব বড় ডাক্তার আনব আমি। খোকা, তোর সাইকেলটা বের করে দে। আমি বললাম, আমি যাই কাকা ? না, তুমি গুছিয়ে বলতে পারবে না। তুমি থাক । বাবা ধমকে উঠলেন, ওর কথা শুনো না। ও একটা পাগল ছাগল। তুমি যাও। নিজেই যাও । রুনু কখন বা এসেছে। আমার গা ঘেসে দাঁড়িয়ে থারথার করে কাঁপছে সে। ঘরময় নষ্ট রক্তের একটা দিম আটকানো অস্বস্তিকর গন্ধ। রাবেয়া চোখ বুজে শুয়ে। তার মুখটা কী ফরসাই না দেখাচ্ছে। বাবা বললেন, মা রাবু, একটু দুধ খাও। না। মাথায় পানি দেব মা ? না বাবা। রাবেয়া চোখ মেলে বাবার দিকে তাকাল। বলল, বাবা। কী মা ? আমার বুকটা খালি খালি লাগছে কেন ? সেরে যাবে মা । তুমি আমার বুকে হাত রাখবে একটু ? এইখানে ? এমনি করেই ভোর হলো। মন্টু এল ছাঁটায়। সে হতভম্ব হয়ে গেল। বাবা মন্টু, আমার অসুখ করেছে। মন্টু বিস্মিত হয়ে চারদিকে তাকাচ্ছিল। রাবেয়া আবার বলল, মন্টু আমার বুকটা খালি খালি লাগছে। মন্টু রাবেয়ার মাথায় হাত রাখল। মা নিঃশব্দে কাঁদছেন। রুনু আমার গা ঘেসে দাঁড়িয়ে থারথার করে কপিছে। সকালের রোদ এসে পড়েছে জমাট বাধা কালো রক্তে। রাবেয়া আমাকে ডাকল, খোকা, ও খোকা! আমি তার কাছেই দাঁড়িয়ে আছি। নীল রঙের চাদরে ঢাকা রাবেয়ার শরীর নিম্পন্দ পড়ে আছে। একটা মাছি রাবেয়ার নাকের কাছে ভনভন্ন করছে। রাবেয়া হঠাৎ করেই বলে উঠল, পলাকে তো দেখছি না। ও খোকা, পলা কোথায় রে ? আমাদের চারদিকে উদ্বিগ্ন হয়ে পলাকে খুঁজল সে। আর কী আশ্চৰ্য, বেলা ন’টায় চুপচাপ মরে গেল রাবেয়া! তখন চারদিকে শীতের ভোরের কী ঝকঝকে আলো । গত বৎসর আমরা বড় খালার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। বড় খালার মেয়ে নিনাও এসেছিল মায়ের কাছে। প্রথম পোয়াতি মেয়ে । মা নিয়ে এসেছেন নিজের কাছে। নিনা। আপা কী প্ৰসন্ন মনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন চারদিকে। প্রথম সন্তান জন্মাবে, তার কী প্রগাঢ় আনন্দ চোখেমুখে। যদি ছেলে হয় তবে তার নাম দেব কিংশুক, মেয়ে হলে রাখী । হেসে হেসে বলে উঠেছিলেন নিনা। আপা। আর তাতেই উৎসাহিত হয়ে রাবেয়া বলেছিল, আমিও আমার ছেলের নাম কিংশুক রাখব। আমরা সবাই হেসে উঠলাম। রাবেয়া, নীল রঙের চাদর গায়ে জড়িয়ে তুই শুয়ে আছিস! হলুদ রোদ এসে পড়েছে তোর মুখে। কিংশুক নামের সেই ছেলেটি তোর বুকের সঙ্গে মিশে গেছে। যে বুক একটু আগেই খালি খালি লাগছিল। বারোটার দিকে ফিরে এলেন মাস্টার কাকা। সঙ্গে শহর থেকে আনা বড় ডাক্তার। আর মন্টু, দিনেদুপুরে অনেক লোকজনের মধ্যে ফালাফালা করে ফেলল মাস্টার কাকাকে একটা মাছকটা বটি দিয়ে। পানের দোকান থেকে দৌড়ে এল দুতিন জন। একজন রিকশাওয়ালা রিকশা ফেলে ছুটে এল। ওভারশিয়ার কাকুর বড় ছেলে জসীম দৌড়ে এল। ডাক্তার সাহেব চোঁচাতে লাগলেন, হেল্প! হেল্প! চিৎকার শুনে বাইরে এসে দাঁড়াতেই আমি দেখলাম, বটি হাতে মন্টু দাঁড়িয়ে আছে । পিছন থেকে তাকে জাপটে ধরে আছে কজন মিলে। রক্তের একটা মোটা ধারা গড়িয়ে চলেছে নালায়। মন্টু আমার দিকে তাকিয়ে বলল, দাদা, ওকে আমি মেরে ফেলেছি। আমার মনে পড়ল। হামুহেনা গাছের নিচে মন্টু একদিন পিটিয়ে একটা মস্ত সাপ মেরেছিল । রাবেয়াকে ঘিরে সবাই বসেছিল। আমি ঢুকতেই নাহার ভাবি বললেন, বাইরে এত গোলমাল কিসের ? আমি মায়ের দিকে তােকালাম। মা, এইমাত্র মন্টু মাস্টার কাকাকে খুন করেছে। আপনি বাইরে আসেন। মন্টুকে থানায় নিয়ে যাচ্ছে সবাই। (চলবে)


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৫১৩ জন


এ জাতীয় গল্প

→ নন্দিত নরকে
→ নন্দিত নরকে
→ নন্দিত নরকে
→ নন্দিত নরকে

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • Nowshin
    User ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বে
    tnx u #Rehnuma api gj

  • Rehnuma Ahmed
    Golpobuzz ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বে
    Nice.... gj #Nowshin Api

  • বকুল রায়
    Golpobuzz ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বে
    ধন্যবাদ

  • Nowshin
    User ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বে
    Tnq #Bokul gj gj

  • বকুল রায়
    Golpobuzz ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বে
    Good