বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

সাজানো গোছানো সংসার (পর্ব :১৪)

"রোম্যান্টিক" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান Sayemus Suhan (০ পয়েন্ট)

X “মাইশা তোমার খালাতো বোন ও এক্স গার্লফ্রেন্ড এটা আমি তোমাদের রিলেশনের শুরু থেকেই জানি। কারণ মাইশা ছিল আমার বাল্যকালের বান্ধবী। একসাথেই আমরা বড় হয়েছি। জীবনের গুটি কয়েক দিন ব্যতীত আমরা কখনও একজন আরেকজনের থেকে আলাদা থাকিনি! ওকে একা রেখে আমি আদৌ কিছু খেয়েছি কিনা আমার মনে নেই। আমাদের সম্পর্কটা এতই গভীর ছিল যা ভাবা একজন সাধারণ মানুষের দ্বারা সম্ভব নয়। দুইবোন যেইরকম বেড়ে ওঠে আমরাও সেইরকমই ভাবেই বেড়ে ওঠেছি। একসাথে খেলতাম, গাইতাম, ঘুরতাম সহ অনেক ভালো কিছু সময় কাটিয়েছি। যা কখনও ভুলার নয়। আমার জীবনের অন্যতম একজন মানুষ হলো সে, যার কাছ কখনও ভুল সিদ্ধান্ত আমি পাইনি। যখনই কোনো বিপদে পড়েছি তখনই ওর দ্বারা আমি মুক্ত হতে পেরেছি। এই যে, আজ তোমাকে পেলাম সেটাও ওর কারণে! ওকে জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসি বলেই তোমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি। কারণ ওর সিদ্ধান্ত কখনও ভুল ছিল না।”(তুহি) “মানে কি? তুমি কি বুঝাতে চাইছো?” “আচ্ছা বলোতো, 'একটা মেয়ে কখনও প্রথম দেখাতেই অপরিচিত ছেলেদের সাথে এতোটা ঘনিষ্ঠ হতে পারে? যতটা আমি হয়েছিলাম।' কখনই এটা পসিবল নয়, কিন্তু আমাকে হতে হয়েছিল! এর কারণটাও ছিল মাইশা! যার কথামত কাজ তোমার সাথে আমারঅভিনয় করতে হয়েছিল। সেইদিন, আমার চোখে তুমি পানি দেখে বলছিলে, আমি কাঁদছি কেনো? জানো, সেই কারণটিও মাইশা! আমরা যেইখানে দাঁড়িয়েছিলাম তার ঠিক বিপরীত পাশে সে দাঁড়িয়েছিল! তার চোখ থেকে অবিরাম পানি পড়ছিল, অথচ আমাকে হাসিমুখে ইশারায় দেখাচ্ছিল, তোমাকে আর আমাকে সুন্দর লাগছে! বিশ্বাস করো, আমার বান্ধবীর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝেছি, ভালোবাসার মানুষ হারানোর বেদনায় সে ধুঁকে ধুঁকে মরছে। এই কারনেই সেই সময় আমার চোখের পানি অঝোরেই জড়েছিল। সেটা আসলে আনন্দের কান্না ছিলোনা। মনে আছে, আমরা যেদিন দেখা করছিলাম সেইদিন রাতে পাগল মেয়েটি আপনার বুকে সারারাত ঘুমিয়েছিল! আমি কিন্তু সেটাও জানি। ওর এই চাওয়াটা পুরণ করতে তোমার মা-বাবাও অনেক সাহায্য করেছেন। তারা জানতেন তোমরা দুজন দুজনকে অনেক ভালোবাসতে, এবং সেটা সফল হবেনা। অথচ তারা খুব করে চেয়েছিলেন, তোমরা দুজনকে বিয়ে দিতে! আজকে আমি যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি সেখানে মাইশাকে চেয়েছিলেন! আমিও সেটাই চেয়েছিলাম! কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আমি আছি এখানে!”(তুহি) “আমি বুঝলাম না! আমাকে নিয়ে এতো নাটক করার কারণ কি?” “কারণ মাইশা তোমাকে সুখি দেখতে চায়। তার ভালোবাসার মানুষ কষ্ট পাক সেটা সে চায় না।” (তুহি) “মানলাম, সে আমাকে সুখি দেখতে চায়। তাই বলে কি আমার সাথে নাটক করতে হবে? আর সে আমাকে বিয়ে না করে অন্যকে দিয়ে কেমনে সুখি করাবে? এটা কি পাগলামি নয়?” “সে তো তোমাকেই বিয়ে করতে চেয়েছিল! ভাগ্যের পরিহাসে এটা সম্ভব হয়নি!”(তুহি) “কোনো ভাগ্যের পরিহাস নয়! সে জেনে শুনেই আমাকে কষ্ট দিয়েছে! আমার সাথে ইচ্ছাকৃত ভাবেই ব্রেকআপ করেছে। যদি, বিন্দুমাত্র বিয়ে করার কোনো ইচ্ছা তার থাকতো তাহলে আমার সাথে সেইদিন অযথা ব্রেকাপ করতো না।” “কিছু কিছু বিষয় আমাদের কাছে লুকায়িত থাকে, যা সামনে না আসলে আমরা বিশ্বাস করি না। তোমার ক্ষেত্রেও সেটি ঘটেছে।”(তুহি) “এমন কি আছে? যা আমি জানি না।” “তুমি কি জানো? মাইশা এখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে!”(তুহি) “কিহহহহহহ!” তুহির মুখে কথাটি শুনে আমি কোনো ভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিনা। আমার চারদিক অন্ধকার হয়ে আসলো। চোখ থেকে অনড়গল পানি পড়ছে! তুহি আমাকে শান্তনা দিতে দিতে একটি ডায়েরি হাতে দিল। চোখ মুছে ডায়েরিটা খুললাম। মাইশার হাতের লেখা আমি স্পষ্ট চিনতে পারছি। পড়তে লাগলাম, “প্রিয় রাজ, জানি তুমি এখন বাসর ঘরে থেকে আমার ডায়েরিটা পড়ছো। কারণ আমি তুহিকে এই সময়েই ডায়েরিটা তোমার কাছে দেয়ারকথা বলেছিলাম। আমি সিউর, সে আমার কথা রাখবে। জীবনে কখনও আমার কোনো কথার বরখেলাপ করেনি। এমনকি যখন তোমাকে বিয়ে করতে বলেছিলাম, সেটাও রেখেছে। তাইতো ওর সাথে তোমার বাসর ঘর করার সৌভাগ্য হয়েছে। কিন্তু আমার হয়নি! হয়নি বললে ভুল হবে, আসলে বিধাতা আমার বাসর ঘর হোক সেটা চাননি। তাইতো আমাকে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে আমার কোনো আক্ষেপ নেই। শুধু একটা কষ্ট রয়ে গেল। তোমাকে সুখি করে যেতে পারলাম না। সারাক্ষণ অনেক জ্বালাইছি, অনেক কষ্ট দিয়েছি একটুও সুখ দিয়েছি বলে মনে হয়না। জানো, আমি যদিও অনেক অবুঝ ছিলাম তারপরও তোমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম। আমার স্বপ্নে ছিলে শুধু তুমি আর তোমার পরিবার। তোমাকে নিয়ে অনেক সুন্দর একটা সাজানো সংসারের স্বপ্ন ছিল আমার। যেখানে আমরা থাকবো, আমাদেরই স্বপ্ন থাকবে, আমাদের ছোট ছোট বেবি হবে, সবকিছু থাকবে গোছানো। কিন্তু স্বপ্ন তো স্বপ্নই! যা কখনো সত্যি হয়না। আমার ক্ষেত্রে সেটিই হলো। এতে অবশ্য আমি আফসোস করছিনা, শুধু তোমার জন্য দোয়াই করছি! যাতে তুমি অনেক ভালো থাকো। আর আরেকটি কথা আমি মরে গেলে কখনও আমার জন্য আফসোসে করোনা,তাহলে আমি অনেক কষ্ট পাবো। মনে রেখো, আমি উপর থেকে তোমাকে সবসময় দেখবো। আর লিখতে পারছিনা, যদিও অনেক লেখার ইচ্ছা ছিল। চোখের পানিতে বারবার ডায়েরির পাতা ছিড়ে যাচ্ছে। ভালো থেকো তুমি আর এই অভাগীকে ক্ষমা করে দিও।” ডায়েরির লেখাটা আমার বুকের মধ্যেখান ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে। সহ্য করতে না পেরে চিৎকার দিয়ে উঠি। বাসার সবাই চলে আসে। আমাকে নানাভাবে বুঝাচ্ছে সবাই। কিন্তু আমার মন স্থির হচ্ছিল না। মাইশাকে দেখার জন্য মন ছটফট করছে। শুনতে পেলাম, কেউ একজন বলল, মাইশা ঢাকা মেডিকেলে ক্যান্সার বিভাগে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। সোজা রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম। গেরেজ থেকে গাড়ী বের করে আমি চললাম ঢাকা মেডিকেল কলেজে! রাত ৩টা বাজে। আমার মনে একটু স্বস্থি নেই। কিভাবে গাড়ি চালাচ্ছি সেটাও বলতে পারবোনা। প্রায় ২ ঘন্টা পর আমি ঢাকা মেডিকেল পৌছে যাই। গাড়ী থেকে নেমে মাইশাকে দেখতে ক্যান্সার বিভাগে যাচ্ছি। পা যেন সামনের দিকে অগ্রসরই হচ্ছেনা। এদিকে ক্যান্সার বিভাগটাও আমি চিনিনা। অনেক ঘোরাঘুরি করতেছি, অনেক মানুষকে জিজ্ঞাসা করতেছি কেউ সঠিক তথ্য দিতে পারেনা। হঠাৎ করে খালুকে চোখে পড়ে যায়। ওষুধ নিয়ে সিড়িতে উঠছেন। ডাক দিয়ে আটকালাম। একসাথে চলে গেলাম, যেখানে মাইশাকে রাখা সেখানে! খালামনি পাশে বসা,আর সে, কি সুন্দরভাবে শুয়ে আছে। নাকে অক্সিজেন লাগানো! হয়তো শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে তাই। এতোটা শান্ত কখনও ছিল না। আজ কত আরাম করে শুয়ে আছে। কতটা নিষ্পাপ লাগছে। দেয়ালের পাশে বসে গেলাম। চোখে থেকে অনর্গল পানি পড়ছে। দেয়ালে হেলান দিয়ে আছি। খালু পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন। নিজের একমাত্র আদরের মেয়েটা আজ তাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছে! নিশ্চয় আমার মতো তাদের বুকটাও কষ্টে ফেটে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে সকাল হয়ে আসলো। মা-বাবা,শিমু আর তুহিও চলে আসলেন। মাইশাকে দেখে তুহি হুহু করে কেঁদে ওঠে আর সাথে সাথে মাইশার ঘুম ভেঙ্গে যায়। জেগে ওঠে আমাদের দিকে একমনে চেয়ে থাকে। খালামনিকে ডাক দিয়ে কানে কানে কি যেন বলেছে দেখলাম। এরপর খালামনি আমাকে মাইশার কাছে যেতে বললেন আর বাকিদের নিয়ে তিনি চলে গেলেন বাহিরে। ধীরে ধীরে মাইশার কাছে গেলাম, আমার ভেতরটা ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছিল। হাঁটু গেড়ে ওর পাশে বসে আছি। ওর চোখ থেকে একফুটো পানি পড়তে দেখলাম। (চলবে)


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ১১১৩ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • Eshrat Jahan
    Golpobuzz ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বে
    Nice

  • Rehnuma Ahmed
    Golpobuzz ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বে
    Waiting for next part.

  • বকুল রায়
    Golpobuzz ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বে
    নাইস এন্ড নেক্সট

  • Jobayer
    User ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বে
    খুব কষ্টের ছিলো এই পর্বটা।