বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

অনীশ -পর্ব ১০ (শেষ পর্ব)

"উপন্যাস" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়েন সরকার (০ পয়েন্ট)

X অনীশ -পর্ব ১০ (শেষ পর্ব) রূপা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। মিসির আলি বললেন, এমন করে তাকাচ্ছ কেন? চিনতে পারছ না? ‘পারছি।’ ‘তোমার খাতা ফেরত দিতে এসেছি। সবটা পড়িনি। অর্ধেকের মতো পড়েছি।’ ‘সবটা পড়েননি কেন?’ ‘সবটা পড়ার প্রয়োজন বোধ করিনি। আমার যা জানার তা জেনেছি। তুমি শান্ত হয়ে আমার সামনে বসো। আমার যা বলার বলব। আমি যখন কথা বলব তখন আমাকে থামাবে না। চুপ করে শুনে যাবে।’ রূপা কিছু বলল না। তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। মিসির আলি বললেন – ‘তোমার খাতা পড়ে প্রথম যে-ব্যাপারটায় আমার খটকা লেগেছে তা হচ্ছে – তোমার ছেলের কবর গোরস্থানে কেন হল না? কেন তোমার বাড়িতে হল? তোমার মা এই কাজটি কেন করলেন? যে-মহিলা স্বামীর স্মৃতিচিহ্ন রাখেন না সেই মহিলা তাঁর নাতির স্মৃতিচিহ্ন ধরে রাখার চেষ্টা কেন করবেন? রহস্যটা কি? দ্বিতীয় খটকা – তোমার মা ধর্মপ্রাণ মহিলা। তিনি তোমার ছেলের কবরের কাছে দাঁড়িয়ে কখনো দোয়া-দরুদ পড়েন না। আর মানে কী? এটা কি তা হলে কবর না? মেয়েকে ভোলানোর চেষ্টা? গোরস্থানে কবর দিতে হলে ডেথ সার্টিফিকেট লাগে। তাঁর কাছে ডেথ সার্টিফিকেট ছিল না। কারণ বাচ্চাটি মরেনি। তুমি নিজেও তোমার মৃত শিশু দেখনি। ব্যাপারটা কি এরকম হতে পারে যে তোমার মা দেখলেন – তোমাদের বিয়ে টিকিয়ে রাখতে হলে বাচ্চাটিকে মৃত ঘোষণা করাই সবচে’ ভাল বুদ্ধি? বাচ্চাটি দূরে সরিয়ে দিতে তার খারাপ লাগল না, কারণ তিনিও খুব সম্ভব তোমার স্বামীর মতই বিশ্বাস করছেন – এই শিশুর বাবা তোমার স্বামী নন। তোমার মা মানসিকভাবে অসুস্থ একজন মহিলা। তাঁর পক্ষে এরকম মনে করাই স্বাভাবিক। এখন আসছি তুমি যে শিশুর কথা শুনতে পাচ্ছ সে- ব্যাপারটিতে। শিশুর সঙ্গে মায়ের টেলিপ্যাথিক যোগাযোগ মোটামুটিভাবে স্বীকৃত। তুমি তারিখ দিয়ে দিয়ে সব লিখেছ বলে আমার খুব সুবিধা হয়েছে। আমি লক্ষ করলাম শুরুতে তুমি শুধু কান্না শুনতে। প্রথম যখন মা মা ডাক শুনলে, হিসেব করে দেখলাম শিশুটির বয়স তখন এক বছর। এক বছর বয়েসি শিশুরা মা ডাকতে শেখে। তোমার লেখা থেকে তারিখ দেখে হিসেব করে বের করলাম তোমার ছেলে পুরো বাক্য যখন বলছে তখন তাঁর বয়স তিন। এই বয়সে বাচ্চারা ছোট ছোট বাক্য তৈরি করে। আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে তোমার সঙ্গে তোমার ছেলের একধরণের যোগাযোগ হয়েছে। পুরো ব্যাপারটা প্যারানরমাল সাইকোলজির বিষয়। এবং রহস্যময় জগতের আসাধারণ একটি উদাহরণ। আমার ধারণা, একটু চেষ্টা করলেই তুমি তোমার ছেলেকে খুঁজে পাবে। এত বড় একটা কাজ তোমার মা একা করতে পারেন না। তাঁকে কারও-না- কারওর সাহায্য নিতে হয়েছে। তোমাদের বাড়ির দারয়ান,কাজের মেয়ে। এদের কাছ থেকে সাহায্য পেতে পার। পুলিশকে খবর দিতে পার। বাংলাদেশের পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ইচ্ছা করলে অসাধ্য সাধন করতে পারে। তার পরেও যদি কাজ না হয় তুমি তোমার টেলিপ্যাথিক ক্ষমতা ব্যবহার করো। ছেলের কাছ থেকেই জেনে নাও সে কোথায় আছে।’ রূপা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মিসির আলি বললেন, কিছু বলবে? রূপা না-সূচক মাথা নাড়ল। মিসির আলি বললেন, আজ উঠি। ধাক্কা সামলাতে তোমার সময় লাগবে। সাহস হারিও না। মন শক্ত রাখো। যাই। রূপা কোনো উত্তর দিল না। মূর্তির মতো বসে রইল। এক মাস পরের কথা। মিসির আলির শরীর খুব খারাপ করেছে। তিনি তাঁর ঘরেই দিনরাত শুয়ে থাকেন। হোটেলের একটি ছেলে তাঁকে হোটেল থেকে খাবার দিয়ে যায়, বেশির ভাগ দিন সেইসব খাবার মুখে দিতে পারেন না। প্রায় সময়ই অসহ্য মাথার যন্ত্রণায় ছটফট করেন। এরকম সময়ে তিনি একটি চিঠি পেলেন। হাতের লেখা দেখেই চিনলেন রূপার চিঠি। রূপা লিখেছে – শ্রদ্ধাষ্পদেষু, আমি আমার ছেলেকে খুঁজে পেয়েচি।সে এখন আমার সঙ্গেই আছে। আপনার সামনে আসার সাহস আমার নেই। আমি জানি আপনাকে দেখে চিৎকার করে কেঁদেকেটে একটা কাণ্ড করব। আপনাকে বিব্রত করব। আমি কোনোদিনই আপনার সামনে যাব না। শুধু একদিন আমার ছেলেটাকে পাঠাব। আপনি তার একটি নাম দিয়ে দেবেন এবং তার মাথায় হাত দিয়ে একটু আদর করবেন। আপনার পুণ্য স্পর্শে তার জীবন হবে মঙ্গলময়। আমি শুনেছি আপনার শরীর ভাল না। কঠিন অসুখ বাঁধিয়েছেন। আপনি চিন্তা করবেন না। একজন দুখি মা’র হৃদয় আপনি আনন্দে পূর্ণ করেছেন। তার প্রতিদান আল্লাহ্কে দিতেই হবে। আমি আল্লাহ্র কাছে আপনার আয়ু কামনা করছি। তিনি আমার প্রার্থনা শুনেছেন।’ মাথার তীব্র যন্ত্রণা নিয়েও তিনি হাসলেন। মনেমনে বললেন – বোকা মেয়ে, প্রকৃতি প্রার্থনার বশ নয়। প্রকৃতি প্রার্থনার বশ হলে পৃথিবীর চেহারাই পালটে যেত। পৃথিবীর জন্যে প্রার্থনা তো কম করা হয়নি! মিসির আলি টিয়াপাখির বিষয়টি নিয়ে ভাবতে বসলেন। উড়ন্ত টিয়াপাখি কালো দেখায় কেন? কিছু একটা নিয়ে ব্যস্ত থাকা। মাথার তীব্র যন্ত্রণা ভুলে থাকার ছেলেমানুষি এক চেষ্টা। (সমাপ্ত)


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৭৪০ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • Himadri
    Guest ৭ বছর, ৩ মাস পুর্বে
    its true the story is too good!!

  • Fakir Monir
    Guest ৭ বছর, ৩ মাস পুর্বে
    গল্পটি পড়ে খুব ভাল লাগল।