বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

প্রতিবিম্ব

"রোম্যান্টিক" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়েন সরকার (০ পয়েন্ট)

X প্রতিবিম্ব। ============= জানিনা আপনারা এই লেখাটা পড়তে পারবেন কিনা! পড়তে নিশ্চয়ই খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না? খুব সম্ভবত আমার মাথায় বড় রকমের কোন সমস্যা দেখা দিয়েছিল। সমস্যাটার ধরন এমন যে, সারারাত ভয়ানক আতঙ্কে কাটানোর পর ভোরে ঘুম ভাঙলেই সব কিছু হাস্যকর মনে হত। ধুর! এভাবে মাঝখান থেকে শুরু করলে আপনারা কিছুই বুঝতে পারবেন না। শুরু থেকেই বলা যাক তাহলে। আমাদের বাড়িটা ছিল একটু পুরনো। আশে পাশে অন্য কোন বাড়ি নেই। চারপাশে ফলের বাগান। এর দুইটা অংশ, একটা সামনের অংশ আরেকটা পেছনের। পেছনের অংশে একটাই মাত্র ঘর। ঘর না বলে গুদাম ঘর বলাটাই ঠিক হবে। বাবা বলতেন এটা তার দাদার আমলে তৈরি করা। আর সামনের নতুন আধাপাকা ঘরটা আমার বাবা তুলেছিলেন। আমার বাবা একমাত্র সন্তান ছিলেন তার কোন ভাই বোন নেই। বাবার আম্মা, মানে আমার দাদী খুব অল্প বয়সে মারা গিয়েছিলেন। কিভাবে মারা গিয়েছিলেন এই ব্যাপারে আমি বিস্তারিত কিছু জানিনা। বাবাকে জিজ্ঞেস করলে বলত, হায়াত মউত একমাত্র আল্লাহর হাতে বাজান, সেই মাবুদের হুকুমেই মারা গিয়েছেন তোমার দাদীজান। লোকমুখে শুনেছিলাম আমার দাদীর মাথায় দোষ ছিল। সত্য-মিথ্যা যাচাই করার সময় হয় নাই কখনো। ছোট বেলা থেকেই দেখতাম গুদাম ঘরটা লোহার খিড়কী দিয়ে আটকানো থাকত। খুব বেশী দরকার না হলে কেউ সেটা খুলত না। তবে আমার কোনই অসুবিধা হত না সেখানে আসা যাওয়া করতে। ঠিক দুপুরবেলা যখন সবাই ঘুমিয়ে থাকত, আমি পাশের আম গাছে চড়ে ঘুলঘুলি দিয়ে সোজা ঢুকে যেতাম ওই ঘরে। ছেলেবেলার বেশ মজার একটা খেলা ছিল এটা। দিনের বেলাতেও ঘরটা প্রায় অন্ধকার হয়ে থাকত। টিনের ফুটো দিয়ে এক দুই ছটাক আলো এসে ঢুকত, এই যা! ঘরের ভেতর তেমন কিছুই ছিল না। একটা ভাঙ্গা চৌকি যেটা আমার মাথা থেকেও উঁচু ছিল। সেই চৌকির উপরে একটা ধানের গোলা আর নিচে আলু বিছানো থাকত। ঘরটার এক কোনায় একটা পুরানো আমলের ড্রেসিং টেবিল ছিল। যার একটা পায়া ভাঙা, আয়না যে নেই সেটা আমি বলার আগেই নিশ্চয়ই আপনারা আন্দাজ করতে পেরেছেন। এই ঘরটাতেই ছিল আমার ছেলেবেলার রাজত্য। আমি আমার আমার বন্ধু সুজন প্রায়ই এই ঘরে ঢুকে খুটখাট করতাম। আমাদের এই নিষিদ্ধ রাজ্যে অন্য কারো প্রবেশাধিকার ছিলনা। আস্তে আস্তে আমরাও বড় হতে লাগলাম, সেইসাথে ওই ঘুলঘুলি দিয়ে চলাফেরা করা ভীষণ কষ্টদায়ক হয়ে পড়ছিল। প্রায় সময়ই হাত-পা ছিলে যেত। এর মাঝে সুজনের বাবা খুলনা ট্রান্সফার হয়ে গেল। আমিও ভুলে গেলাম নিষিদ্ধ রাজ্যের কথা। বাবা মারা যাওয়ার অনেক পর যখন নতুন করে বাড়ি করব ঠিক করলাম তখন গুদাম ঘরটা খুলে সেই ড্রেসিং টেবিলটা আবিষ্কার করেছিলাম। দিনের আলোয় সেটা দেখে আমার মাথা ঘুরে যাওয়ার মত অবস্থা হয়েছিল। কি অপূর্ব কারুকাজ! ড্রেসিং টেবিলটাকে ঠিকঠাক করে, পরিপাটি করে সাজিয়ে আমি আমার শোয়ার ঘরে স্থান দিলাম। আমার স্ত্রী ডালিয়ার খুব পছন্দ হল টেবিলটা। বাড়িতে এত কাজের মানুষ থাকার পরও সে খুব যত্ন করে সেটা মুছত প্রতিদিন। একটা সময় আমি অবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম ডালিয়া রাতের বেশীরভাগ সময় টেবিলটার সামনে বসে থাকে। রাতের ঘুমানোর সময় আমি খুব কম পাওয়ারের একটা বাতি জ্বালিয়ে রাখতাম। ঘন অন্ধকার আমার অস্বস্তি লাগত। সেই মৃদু আলোতে সে একা একা কথা বলত নিজের দিকে তাকিয়ে, সাঁজুগুজু করত। মাঝরাতে ঘুম ভাঙিয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করত, এই আমাকে কেমন লাগছে বলত! হি হি! আমার বেশ মেজাজ খারাপ হত। সারাদিন কাজ করে এসে কোথায় একটু শান্তিমত ঘুমাব! যত্তসব আদিখ্যেতা। বুঝতে পেরে ডালিয়া আর আমাকে জাগাত না। আমিও বিরক্ত হয়ে ওর এইসব কর্মকাণ্ড আমলে নিতাম না। আসলে আমি জানতামই না সে কখন ঘুমায় আর কখন জাগে। ভাবতাম সারাদিন সে শুধু ঘুমায় আর রাতে জেগে থাকে। একদিন ঘুম ভাঙল কারো ফিসফিস কথার শব্দে। আমি চমকে উঠলাম। ঘর অন্ধকার। দ্রুত লাইট অন করলাম। ডালিয়া সটান মূর্তির মত আয়নার সামনে বসে আছে। ফিসফিস শব্দ আর শোনা যাচ্ছে না। আমি ধমকে উঠলামঃ ডালিয়া! ‘চুপ! আস্তে! ও চলে যাবে তাহলে।’ আমি রাগে অস্থির হয়ে গেলাম, “ফাজলামোর একটা সীমা আছে, কে চলে যাবে?” সে আয়নার দিকে ইশারা করল। জানতাম নিজেদেরকে ছাড়া আর কিছুই দেখবনা তবুও তাকালাম। ডালিয়াকে বুকে জড়িয়ে ধরে আমি ঘুম পাড়িয়ে দিলাম। রাতে না ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ওর চোখের চারপাশে কালি পড়ে গিয়েছিল। ডালিয়ার জন্য আমার মনটা হু হু করে উঠল। ব্যবসার কারনে সারাদিন বাইরে বাইরে থাকি। বউটা আমার একা একা থাকতে থাকতে পাগল হয়ে যাচ্ছে সম্ভবত। ঠিক করলাম ওকে একটা ডাক্তার দেখাতে হবে। কিন্তু সেই সপ্তাহে অনেক কাজ ছিল, পরের সপ্তাহেও। সময়ই করে উঠতে পারছি না। সে কটা রাত আমার কাটল ভয়ানক আতঙ্কে, এই বুঝি ও আলো নিভিয়ে চুপিচুপি আয়নার সামনে বসে কথা বলা শুরু করেছে। আমি জেগে থাকার চেষ্টা করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে যেতাম। সকালে উঠে ডালিয়ার স্বাভাবিক আচরন দেখে, রাতের আতঙ্ককে হাস্যকর মনে হত আমার। আবারো একই অবস্থা ফিরে আসত রাতে। প্রায় দেড় মাস পর ওকে নিয়ে শহরে গেলাম ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার সাহেব খুব মনোযোগ দিয়ে ওর কথা শুনে, মিষ্টি হেসে একটা ভিটামিন আর ঘুমের ট্যাবলেট লিখে দিলেন। সেই সাথে উপদেশ দিলেন বউকে আরও বেশী সময় দেয়ার জন্য। ওষুধ গুলো সম্ভবত কাজ করছিল। ভালো ঘুম হওয়াতে ডালিয়া উচ্ছল হয়ে উঠল আগের চেয়ে। তবে আয়নার সামনে বসা ছাড়লনা। আমার সাথেও প্রাণখুলে কথা বলা শুরু করল। এর মাঝে ওর মুখ থেকে এক অদ্ভুত কথা শুনে আমি বুঝতে পারলাম আসলে ওষুধ খেয়ে ওর পাগলামি আরও বাড়ছে। ও বলত, আয়নার ওই পারে নাকি আর একটা দুনিয়া আছে। সেটা এই পৃথিবীর মতই, শুধু সেই দুনিয়ায় মৃত মানুষের আত্মারা বসবাস করে। তাদের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যমই হল আয়না। মৃত ব্যক্তিরা সবসময় আমাদেরকে এই আয়নাগুলো দিয়ে দেখে। আমরা কি করি না করি সব! তবে যোগাযোগ করে না। বাবু ৫ বছর বয়সে পানিতে ডুবে মারা গিয়েছিল। তার কথা মনে পড়লে ডালিয়া আয়নার সামনে বসে কাঁদত, তাই বাবু ডালিয়ার সাথে কথা বলে ফেলেছে। এই জন্য বড়রা বাবুকে খুব বকা দিয়েছে। তবে ডালিয়া যেহেতু এই তথ্যটা জেনেই ফেলেছে তাই তারা ওকে যোগাযোগ করতে আর নিষেধ করছে না। সেখানে নাকি আমার দাদাজান ও আছেন। ড্রেসিং টেবিলটা বের করে এই ঘরে নিয়ে আসায় তিনি আমার উপর খুবই অসন্তুষ্ট। ডালিয়া আমাকে চাপাচাপি শুরু করল। সে ওপাশের দুনিয়ার যেতে চায়। সাথে আমাকেও নিয়ে যেতে চায়। সেখানে বাবু, আমি আর ও তিনজন অনন্তকাল একসাথে থাকতে পারব। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে, বুকে জড়িয়ে ধরে আমি জানতে চেয়েছিলাম কিভাবে যাওয়া যাবে সেখানে? সে আনন্দে লাফিয়ে উঠে, আমার গলা জড়িয়ে ধরে বলেছিলঃ মৃত্যু! আমি চমকে উঠলাম। ডালিয়া অবিশ্বাসে আমার দিয়ে তাকিয়ে চিৎকার করে কেঁদে বলেছিলঃ স্বার্থপর! ছি! এতটা স্বার্থপর তুমি! আমাদের বাবুটা একা একা ওখানে কিভাবে থাকে তুমি কল্পনা করতে পার? ডালিয়া আত্নহত্যা করেছিল একটা নার্সিং হোমে। আমার জন্য সে একটা চিরকুট লিখে গিয়েছিল। ‘নীচ! স্বার্থপর! তুমি আমার বাবুর বাবা হওয়ার যোগ্য নও’। এত সুন্দর টানা হাতের লেখা দেখে কেউ বিশ্বাসই করবে না। এটা সম্পূর্ণ অপ্রকৃতস্থ একজন মানুষের লেখা। ডালিয়াকে কবর দিয়ে আমি যখন ঘরে ফিরেছিলাম তখন সবে মাগরিবের আজান দিল । ক্লান্ত, বিধ্বস্ত, শোকার্ত আমি বিছানায় পড়তেই অতল ঘুমে তলিয়ে গিয়েছিলাম। ঘুম যখন ভাঙল তখন গভীর রাত। নীরব নিস্তব্ধ আঁধার চারদিকে। বাবু আর ডালিয়ার জন্য আমার বুকের মাঝে হাহাকার করছিল। চোখ বেয়ে রুধির ধারায় অশ্রু ঝরে পড়ছিল। আমি কি নিয়ে বেঁচে থাকব সারাজীবন! এমন সময় কে যেন ফিসফিস করে কথা বলে উঠল। ‘এই বাবুর বাবা! শুনছ? এই!’ ডালিয়া! হ্যাঁ ডালিয়ার কণ্ঠই তো! আমি আয়নার দিকে তাকালাম। ডালিয়া হাসিমুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, তার আঁচলে মুখ গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে আমার বাবু, ছোট্ট বাবু। আমি উঠে আয়নার সামনে যেয়ে দাঁড়ালাম। আদর করে হাত বুলাতে চাইলাম আমার বাবুর মাথায়, ডালিয়াকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে ইচ্ছে হল ভীষণ। আমার আর ওদের মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়াল আয়নাটা। আমি অস্থির আক্রোশে আয়নাটা ভেঙ্গে ফেললাম, সাথে সাথে বাবু আর ডালিয়া হারিয়ে গেল। আমি আয়নার পেছনে ওদেরকে অনেক খুঁজলাম। নেই! কেউ নেই! বাবুর কণ্ঠ, ডালিয়ার স্মৃতি যেন আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলছিল। ভাঙা আয়নার টুকরো দিয়ে একটানে বাম হাতের রগ কেটে ফেললাম। আমার রক্ত কাচের টুকরো গুলোকে ভিজিয়ে দিচ্ছিল। চোখের পাতা ভারী হয়ে আসছিল। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে যাওয়ার সময় মনে হল আমি তলিয়ে যাচ্ছি উষ্ণ রক্তে ভেজা খন্ড বিখন্ড কাচের টুকরো গুলোর ভেতরে । ***** আমি ডালিয়া আর আমার বাবুকে নিয়ে খুব ভালোই আছি এখন। শুধু একটা খটকা! আচ্ছা খটকাটা কি নিয়ে সেটা নাহয় পরেই শুনবেন। তার আগে বলুন তো আপনি এই উল্টো হরফের লেখাটা পড়তে পেরেছেন কিনা! পড়তে নিশ্চয়ই খুব কষ্ট হয়েছিল তাই না? বেশী অসুবিধা হলে একটা আয়নার সাহায্য নিয়ে পড়তে পারেন। অসুবিধা হয়নি!? ও! তাহলে আপনি আর আমি হয়ত একই জগতের মানুষ। খটকাটা কি? ডালিয়া এখনো আয়নার সামনে বসে থাকে। ফিসফিস করে কার সাথে যেন কথা বলে! যেন সে তার অনেক দিনের চেনা। আসলে আমি ভুলে গিয়েছিলাম আয়নাতে অসীম সংখ্যক প্রতিফলন হতে পারে। সেই হিসেবে অসীম সংখ্যক আপনি আর আমি বসবাস করছি। কোথাও জীবিত কোথাও মৃত। কি বলছেন? আপনার একদমই কষ্ট হয়নি অক্ষরগুলো পড়তে! তাহলে হয়ত আপনি সেই জগত হতে এই লেখা পড়েছেন যেটা আমার জগতের প্রতিবিম্ব। -------------------- লেখকঃ সাচৌ।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৫৬৪ জন


এ জাতীয় গল্প

→ ♦প্রতিবিম্ব টিচিং হোমের এক অস্থির ছাত্র♦
→ প্রতিবিম্ব
→ প্রতিবিম্ব part 3
→ প্রতিবিম্ব part 2
→ প্রতিবিম্ব
→ প্রতিবিম্ব
→ দর্পণ_প্রতিবিম্ব ২য় পর্ব
→ দর্পণ_প্রতিবিম্ব ১ম পর্ব

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now