বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
....কাঁদছিস?
কথাটি বলতেই একটু চমকে উঠল স্বাভাব।ও আরও চমকে উঠল যখন বললাম
.....কাঁদ,বেশি করে কাঁদ।আয় আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদ।
চমকাবারই কথা।যে ছেলেটা কারও কাঁদা সহ্য করতে পারে না সেই যদি বলে এমন কথা তাহলে তো অবাক হওয়ারই কথা।ও অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল আমার দিকে।একটু হেঁসে আমি আবার বললাম
.....আরে পাগল কাঁদছিস কাঁদ কিন্তু দুঃখ মনে নিয়ে কাঁদিস নে, খুশি মনে কাঁদ।
বুঝতে পারলাম ও কিছুই বুঝেনি,কারণ আজ ওর জীবনের একটা অংশ অন্যের হয়ে গেছে,ও অধিকারহীন হয়ে পড়েছে।আজ শ্রেয়ার বিয়ে হয়ে গেছে।আর সেই বিয়েটা আমিই দিয়ে আসলাম।শ্রেয়া হল ওর ধরনীর সবচেয়ে গুরুত্ববহ বস্তু।কোথায় আমার উচিৎ ওকে সান্ত্বনা দেওয়া আর সেখানে যদি ওকে আরও কাঁদতে বলি তাও আবার খুশি মনে তাহলে না বোঝারই কথা।অবশ্য আমার কথাগুলো বলার যথেষ্ট কারণ আছে।এবার বিষয়টা খোলসা করছি তাহলে আপনারাও বুঝতে পারবেন।তার আগে পরিচয়টা দেওয়া যাক।ওর নাম স্বাভাব।আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু।আর মেয়েটির নাম শ্রেয়া।আমি ওর সবচেয়ে ভাল বন্ধু।সত্যি বলতে আমাদের একটা পাঁচজনের বন্ধু প্যানেল রয়েছে।আমরা এই তিনজন ছাড়াও রাজ আর জয় নামে আরও দুজন আদম আমাদের এই প্যানেলের আজন্ম সদস্য।আমরা একসাথে ওয়ান থেকে আজ পর্যন্ত আছি।আর আমার পরিচয় দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছি না কারণ আমি কেবল একজন তুচ্ছ মানবসন্তান ছাড়া আর কিছুই না।যাক,এবার আসল ঘটনায় আসি।আজ আমাদের প্যানেল থেকে একটা শাখা আলাদা হয়ে গেল।অবশ্য আলাদা না বলে বিচ্ছিন্ন বলা-ই শ্রেয়।শ্রেয়ার আজ বিয়ে হয়ে গেল।বোধহয় একঘন্টা মতো হবে।বন্ধুদের ভেতর কেবল আমিই গিয়েছিলাম ওর বিয়েতে,আর কেউ যায় নি।অবশ্য আমারও যাওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না,ওর কাছে যাওয়া পর্যন্ত।তার প্রধান কারণ হলো ও স্বাভাবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে,ঠকিয়েছে।শুধু স্বাভাব নয় আমাদের সকলকেই ঠকিয়েছে।তাই একমাস হলো ওর থেকে আমরা বিচ্ছিন্ন।তাহলে এই বিষয়টায় প্রথমে ঝেড়ে কাশি,তাহলে সুবিধা হবে।ওদের রিলেশনটা বেশি দিনের না।এক বছরের কাছাকাছি।কিন্তু ওরা দুজন দুজনকে নাকি অনেক আগে থেকেই ভালবাসতো।কিন্তু কেউ নাকি কাওকে বলতে পারছিল না।যেদিন স্বাভাব প্রথম আমাকে বলেছিল ও শ্রেয়াকে ভালবাসে,সেদিন ছিল আমাদের এসএসসি পরীক্ষার শেষ দিন।আমরা ওকে অনেকটা জোর করেই শ্রেয়ার কাছে পাঠালাম।বললাম তুই শুধু ওকে তোর মনের কথাটা জানা,বাকিটা আমরা দেখছি।ও শুধু শ্রেয়ার সামনে বলেছিল-I love u.ব্যাস।ওকে আর কিছুই করতে হয়নি সেদিন,আমরাই বাকিটা করেছিলাম।তারপর ভালই চলছিল ওদের ভালবাসা।কিন্তু একমাস আগে হটাৎ শ্রেয়াকে একটা ছেলের সাথে দেখল স্বাভাব।ছেলেটির কাঁধে মাথা রেখে মনের মাধুর্যতা মিশিয়ে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে।আর আলিঙ্গন করে রেখেছে বাহুডোরে।স্বাভাব চলে আসল এটা দেখে,আর আমাকে বলল সবকিছু।অনেকটা শক্তমুখেই ও বলেছিল কথাগুলি।কিন্তু ওর মুখের অবয়ব দেখেই অনুমান করা যাচ্ছিল যে কোনোসময়ই ও কেঁদে দিতে পারে।তাই বিলম্ব না করে ফোন করলাম শ্রেয়াকে।
>হ্যা দোস্ত বল।
....ছেলেটা কে ছিল রে?
>কার কথা বলছিস?
....বিকালে যার কাঁধে মাথা রেখে কথা বললি!
>ও,অয়নের কথা বলছিস?ও আমার ফুফাতো ভাই।
....আমি যতটুকু জানি তোর কোনো ফুফু নেই!তাহলে ফুফাতো ভাই আসল কিভাবে??দ্যাখ,তুই কখনোই আমার কাছে কিছু লুকাস নি কিন্তু আজ লুকাচ্ছিস হটাৎ।
>আসলে আমি ওকে ভালবাসি।(একটু ইতঃস্থত করে)
.....তাহলে স্বাভাব??(অবাক হয়ে)
>দ্যাখ,আমি ওকে কোনোদিনই ভালবাসিনি।ওকে আমি শুধু বন্ধুই ভাবি।
.....তাহলে কি সবকিছু মিথ্যা ছিল?সব কিছু নাটক ছিল?
>হ্যা,আমি শুধু ওর কথায় রাজি হয়ে ছিলাম এই ভেবে যে,আমি না করলে ও কষ্ট পাবে।আর বিশেষ করে তোদের কথা ভেবে,তোরা বললি তাই না করতে পারিনি।
.....স্বাভাব কি এখন তখনকার চেয়ে বেশি কষ্ট পাবে না এখন?
>ক্ষমা করে দিতে বলিস ওরে,প্লিজ।আমি জানি ও তোর পাশেই আছে।
.....সব কাজের কি ক্ষমা হয়?(অবাক হয়ে)তুই যদি কাওকে খুন করিস আর তারপর বলিস সরি ভুল হয়ে গেছে তাহলে কি তা মানাবে?আর তুই তো খুনের চেয়ে বড় অপরাধ করেছিস,তুই তো মন নিয়ে খেলেছিস,বিশ্বাস নিয়ে খেলেছিস।আমার ভাবতেই অবাক লাগছে যে একজন বিশ্বাসঘাতক,তোর মতো একজন নিচু মনের মানুষ আমার বন্ধু।তোকে তো খুব ভালো জানতাম,কিন্তু ছিঃ,আমি ভাবতেই পারছিনা কিছু।সত্যিই তুই একজন অনেক বড় খেলোয়াড়।আর কখনোই ফোন দিবি না আমাদের কাওকে।আর হ্যা,ক্ষমা চাইছিস না,স্বাভাব তোকে ক্ষমা করে দিছে।ভাল থাকিস।বাই।
ও কিছু বলার আগে ফোনটা রেখে দিলাম।স্বাভাব শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল কিছুই বলল না।বুঝলাম ও সব শুনেছে।তারপর থেকে আর শ্রেয়ার সাথে কোনো যোগাযোগ হয়নি।কাল রাতে শ্রেয়া হটাৎ ফোন করল।একটানা সাত বার রিং হওয়ার পর অনেকটা বিরক্তি নিয়েই ফোনটা পিক করলাম।ভেবেছিলাম অনেক কথা শুনিয়ে রেখে দিব,কিন্তু ওপাশ থেকে কেবল কান্নার আওয়াজ পাওয়ায় কিছু বলতে পারলাম না।কারণ হাজার হলেও বন্ধু তো।জিজ্ঞাস করলাম
....কাঁদছিস কেন?
>........(কোনো উত্তর নেই,কেবল ফুঁফিয়ে কাঁদার শব্দ)
....কিছু বলার থাকলে বল,না হলে রাখলাম(বিরক্তি নিয়ে)
>কাল আমার বিয়ে।আর কখনোই তোদের সাথে কথা বলা হবে না,শুধু কাল একবার আমাদের বাড়িতে আয় তোর সাথে কিছু কথা ছিল।আর কখনোই কিছু বলব না।শেষবারের মতো আয়,প্লিজ।(অনুযোগের সুরে)
....দেখি কী করা যায়।
যাওয়ার কোনো ইচ্ছাই ছিল না কিন্তু স্বাভাবের বলার পর না গিয়ে আর পারলাম না।তখন আমি একটু মুচকি হাসলাম এই ভেবে,হায়রে ভালোবাসা!যে তোরে দুঃখ দিল, সে কষ্ট পাবে বলে তুই এতো করছিস।শ্রেয়ার ঘরে যাওয়া মাত্রই বুকের উপর একটা আঘাত অনুুভব করলাম।কিন্তু তাকিয়ে দেখি শ্রেয়া আমাকে জড়িয়ে ধরেছে,আর ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদছে।আমার কী করা উচিৎ কিছুই ভেবে পাচ্ছি না।একটু অপ্রস্তুতভাবেই বললাম
....কী হয়েছে আমাকে বল?
এবার কান্নার জোর আরও একধাপ বেড়ে গেল।কোনোমতে চোখটা মুছে
>তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড,তোকে ছাড়া আর কাওকে তাই বলার মতো পেলাম না।কারণ আর কেউ বিশ্বাস করবে না আমার কথা।তাই তোকেই আসতে বললাম।স্বাভাবকে আমি সত্যিই ভালবাসি।সেদিনের সবই সাজানো ছিল। ও গুলো কেন বলেছিলাম জানিস?কারণ আমি জানতাম কয়েকদিন পর আমার বিয়ে হয়ে যাবে।আমি চেয়েছিলাম ও আমাকে ভুল বুঝুক,আমাকে ঘৃণা করুক।তাহলে আমাকে ভুলতে ওর কম কষ্ট হবে।
কিছুটা না অনেকখানিই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে।বুঝতে পারছি নে ওর কোন কথা বিশ্বাস করব,আজকের টা নাকি সেদিনের টা।বললাম
...আমাদের তো বলতে পারতি?আমারা কি তোদের মিলন করাতে পারতাম না সেদিনের মতো?তাহলে এ গল্পটারও একটা শেষ থাকতো,আরও একটা জুটি সফল হতো।
>দ্যাখ,ও ভালো ছাত্র।ওকে নিয়ে ওর মা-বাবার অনেক স্বপ্ন।আমি চাইনা যে আমার কারণে সে স্বপ্নজাল ছিন্ন হোক।আমি চাই ও ভালো থাকুক।আর লেখক যেহেতু তুই, তাই চাইলেই হয়তো গল্পের মোড় ঘুরাতে পারিস।কিন্তু এটা না করলেই বোধ হয় ভাল হবে।
....তোকে ছাড়া কি ও ভালো থাকবে?আর তুইও ভালো থাকবি?
>প্রথম প্রথম হয়তো একটু কষ্ট হবে।একসময় হয়তো বাস্তবতার তাগিদে ভুলে যাব,সংসারের কাজে ব্যস্ত হয়ে যাব।স্বাভাবও আমাকে ভুলে যাবে,সব স্মৃতি মুছে ফেলে সামনে অগ্রসর হবে।হয়তো ওর জীবনে কোনো এক নতুন শ্রেয়ার উদয় হবে।শুরু হবে নতুন পথচলা।
ও আবার জড়িয়ে ধরল আমাকে।ও কাঁদছে।আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম...কাঁদিস নে পাগলি।আর কিছুই বললাম না।কেবল মুচকি হাসলাম।এটাই হয়তো ভালবাসা।ওকে রেখে বেরিয়ে পড়লাম।কেননা ওকে সান্ত্বনা দেওয়ার কোনো ভাষা আমার জানা নেই।কেননা ক্ষত হয়তো সসারিয়ে তোলা যায়,কিন্তু তার দাগ থেকেই যায়।ওর বিয়ে হয়ে গেল।স্বাভাব আমার কাঁধে মাথা রেখে কাঁদছে।আমি ওর মাথায় বিলি কাটছি।আজ আর কাঁদতে মানা করছি নে ওকে।কাঁদুক ও,যত পারে কাঁদুক,তাতে মন একটু হলেও হালকা হবে হয়তো!এভাবেই বাস্তবতার কাছে হেরে যায় ভালোবাসা।ভেঙে যায় হাজারো স্বপ্ন।ছিন্ন হয় দুটি মন।এটা কি সত্যিই ভালোবাসার পরাজয়?না,এটা পরাজয় না,এটাও একধরনের জয়,যার স্বাদ সবাই পায় না।কেননা মিলনই ভালোবাসার একমাত্র উদ্দেশ্য নয়।ভালোবাসা শুধু মিলনেই নয়,বিচ্ছেদের মাধ্যমেও জয়ী হয়।সত্যিই কি ভালবাসার পরাজয় হয় কখনো?নাকি এটা একটা অমিমাংসিত রহস্য?♠ধন্যবাদ।♠
Written By_"MIS"
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now