বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
"বুয়া! বাবুকে নিচ থেকে ডেকে নিয়ে আসো। বল যে হুজুর এসেছে।"
"আইচ্ছা আপা!" বলে আকবরের মা ছোট সাহেবকে আনতে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে গেল।
বড়লোকের বাড়িঘর। আট তলা দালান। লিফট আছে। কিন্তু সেই লিফটে আবার কাজের লোকদের উঠা নামা নিষেধ। তাই সে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে লাগলো। ছোট সাহেব নিচের খেলাধুলার ঘরে বন্ধুদের সাথে খেলছে। বড়লোকদের বাচ্চাদের জন্য আকবরের মা'র মায়াই লাগে। বেচারারা খেলাধুলার আসল মজা থেকেই বঞ্চিত! শৈশবতো কেঁটেছে তাদের; গ্রামের দিগন্ত ছোঁয়া ময়দানে ছোটাছুটি করে, নদীর পানিতে মাছের মত দাপাদাপি করে। গ্রামের কোন গাছ বাকি ছিল যেখানে তারা চড়েনি? আকাশও তাদের স্পর্শ পেত! তাদের স্বপ্ন নিয়ে রঙীন ঘুড়ি আকাশের বুকে চড়ে বেড়াতো।
আর শহরের বাচ্চারা? সকাল ভাল ভাবে শুরু হবার আগেই স্কুলে ছোটা। দুপুরে যুদ্ধফেরত সেপাইর মত ঘরে ফেরা। বিকালে বন্ধ দরজার একটা খালি ঘরের ভিতরে কিছু বিদেশী খেলা খেলা। অদ্ভুত অদ্ভুত সব খেলা! একটা টেবিল মাঝে রেখে একটা মুরগির ডিমের মত বলকে অনেকক্ষণ ধরে পেটানো। বা একটা টেবিলে কয়েকটা বল সাজিয়ে লাঠি দিয়ে বল কে গুঁতিয়ে গর্তে ফেলা! কি মজা পায় এইসবে? ডাংগুলি, কাবাডি বা দারিয়াবান্ধা খেলার মজার সাথে এসবের কোন তুলনা হয়? আর এর মাঝেই কখনও হুজুর, তো কখনও গানের ওস্তাদ। রাতে একজন স্যার আসেন পড়াতে। স্যার যাবার পরে আরও কিছুক্ষণ পড়াশোনা, তারপর ভাত খেতে খেতে টিভি দেখা। সব শেষে ঘুম। জীবনের মজা থেকে তারা বঞ্চিত!
অবশ্য এটাও ঠিক যে ওরা এখন জীবনের মজা নেয় না বলেই পরে টাকা পয়সার মালিক হয়ে জীবন উপভোগ করতে পারে। আর তারা শৈশবেই মজাটা নিয়ে ফেলে, তাই যৌবনে এসে ওদের কাজের বুয়ার চাকরি করতে হয়!
খেলার ঘরে প্রচুর ভিড়। সবাই খেলছে। তুমুল হৈচৈ! আকবরের মা ছোট সাহেবকে খুঁজে বের করে কাছে গিয়ে ডাকলো। ছোট সাহেব খেলায় চড়ম ব্যস্ত। ঘাম ছুটছে তার শরীর বেয়ে। সে বুয়ার দিকে না ফিরে বলল, "পাঁচ মিনিট! আসছি।"
আকবরের মা বলল, "আপা বলছেন এখুনি যাইতে। হুজুর আইসা পরছেন। দিরং হইলে আপা রাগ হইবেন।"
ছোট সাহেবের মেজাজ খারাপ হলো। তাকে খেলা ছেড়ে উঠে আসতে হলো। মা রাগ করলে খবর আছে। হুজুর যে কেন বিকাল বেলা আসেন!
ছোট সাহেবের নাম তাশফিন। বয়স নয় বছর। ফর্সা গোলগাল চেহারা। মা বাবার একমাত্র সন্তান বলে যত্নের অভাব নেই, সেটা তার চেহারা দেখে বুঝা যায়। আবার একমাত্র ছেলে বলেই মা বাবা চোখে চোখে রাখেন, এবং খুব শাসনের উপর রাখেন। উল্টা পাল্টা কিছু করলে মায়ের বকুনির হাত থেকে তাকে রক্ষা করে তাদের বুয়া, আকবরের মা, যে গত তিন বছর ধরে তাদের বাসায় কাজ করে।
তাশফিন এসে লিফটের বোতামে চাপ দিল। লিফট এসে থামলে তাশফিন লিফটের ভিতর ঢুকে পড়লো। আকবরের মা ঢুকছে না দেখে তাশফিন দরজা খোলা রাখার বোতাম চেপে বলল, "বুয়া, তুমিও ভিতরে এসো।"
আকবরের মা বলল, "আপনিই জান লিপটে। আমি সিঁড়ি ভাইঙ্গা আইতাছি।"
তাশফিন বলল, "তুমি কষ্ট করবে কেন?"
আকবরের মা বলল, "কষ্ট আবার কিয়ের? কোনই কষ্ট নাই। আপনে যান, আমি আইতাছি।"
লিফটে যে কাজের লোকদের উঠা নিষেধ এটাতো আগেই বলেছি। এক দুপুরে তার শরীর দূর্বল লাগছিল বলে সে লিফটে উঠে পড়েছিল। তিন তলার ভাড়াটে সেটা দেখে ফেলেছিল এবং সে অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের অফিসে গিয়ে কমপ্লেন করে এসেছিল। অফিস থেকে তাশফিনদের বাসায় চিঠি পাঠানো হয়েছিল। অ্যাপার্টমেন্ট অফিসের মাসিক সভায় এই প্রস্তাবও পাশ হয়েছিল যে অন্যান্য কাজের লোকদের শিক্ষার জন্য আকবরের মাকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হোক। আকবরের মা হাতে পায়ে ধরে সে যাত্রা রক্ষা পেয়েছিল। এ চাকরি সে কিছুতেই হারাতে চায় না। সে চায়না একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক। এরচে পায়ে হেঁটে ছয় তলায় যাওয়া অনেক ভাল।
তাশফিন লিফট থেকে বেরিয়ে এসে বলল, "আমিও লিফটে উঠবো না। তোমার সাথে সিঁড়ি দিয়ে উঠবো।"
আকবরের মা বলল, "আপনে খামোখা ক্যান কষ্ট করবেন? আপনে লিপটে যান। আমি আইতেছি।"
তাশফিন বলল, "আমি সিঁড়ি দিয়েই যাবো।"
বলে সে আর অপেক্ষা করলো না। দৌড়ে উঠতে লাগলো। আকবরের মা তার পিছু ছুটতে লাগলো। নয় বছরের দুরন্ত ছেলের সাথে মধ্য বয়ষ্কা আকবরের মা কতটুকুই বা পেরে উঠবে?
তিন তলার সিঁড়িতে গিয়েই দুর্ঘটনা ঘটলো। কেউ সিঁড়ির একদম গোড়ায় পানি ফেলেছিল, ঠিক মত মোছেনি। তাশফিন দৌড়ে উঠার সময় পানিতে পা পিছলে যায় এবং সে সিঁড়ি গড়িয়ে নিচে পড়তে থাকে। আকবরের মা তাকে ধরতে ধরতে সে গড়িয়ে নিচে পড়ে গেছে। আকবরের মা দিশেহারার মত তাশফিনকে বুকের সাথে জাপটে ধরলো। তার মাথা ফেটে গেছে। গলগল করে রক্ত পড়ছে। এত রক্ত দেখে আকবরের মায়ের মাথা ঘুরে উঠলো! সে বুকের ভিতর থেকে আর্তনাদ করে উঠলো। "আল্লাহ্! আল্লাহ্ গো!!" সে নিজেও প্রায় অজ্ঞান হতে যাচ্ছিল। এই সময়ে তার চিৎকারে আশেপাশের ফ্ল্যাটের মানুষেরা বেরিয়ে এসেছেন।
তাশফিনের মা নীলুফারও খবর পেয়ে উপর থেকে ছুটে এসেছেন। গাড়ী করে দ্রুত তাশফিনকে ক্লিনিকে নেয়া হয়েছে। এখন তার জরুরী চিকিৎসা চলছে। ক্লিনিকের বারান্দায় অনেক ভীর। তাশফিনের বাবা জামান সাহেব অস্থির পায়চারী করছেন। নীলুফার স্তম্ভিত হয়ে বেঞ্চে বসা। তার পায়ের কাছেই আকবরের মা পাথরের মুর্তি হয়ে বসে আছে। তাদের ঘিরে তাশফিনদের আত্মীয় স্বজন, আর কিছু চেনা মুখ। সবার চেহারাই বিষন্ন।
ডাক্তার সাহেব যখন বারান্দায় এলেন, তখন জামান সাহেবের পাশাপাশি আরও কয়েকজন ছুটে গেলেন কি অবস্থা জানার জন্য। ডাক্তার বললেন যে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে রক্ত লাগবে। কিন্তু রক্তের গ্রূপ ও-নেগেটিভ, যা পাওয়া দুর্লভ। এখুনি সংগ্রহ করতে হবে! যারা যারা রক্ত দিতে চান, তারা যেন অতিসত্বর রক্ত পরীক্ষা শুরু করেন।
ভীরের অর্ধেকের বেশি মানুষই জানে যে তাদের রক্ত ও-নেগেটিভ নয়। যারা জানেনা, তাদের কারও না কারও কোন না কোন সমস্যা। বড়লোকদের বিভিন্ন বাজে অভ্যাস থেকে, যেটার ফল তাদের রক্ত বহন করে। আকবরের মা উঠে দাঁড়ালো। থমথমে গলায় বলল, "আমার শইলের সব রক্ত নিয়া লন। বাবুরে আমি কোথাও যাইতে দিমু না।"
জামান সাহেব দিধা করলেন না। সাথে সাথে আকবরের মাকে পাঠালেন রক্ত পরীক্ষা করতে।
আকবরের মায়ের আসল নাম রোকেয়া বেগম। তার বিয়ে হয়েছিল তাদের পাশের গ্রামের হালিম মিয়ার সাথে। হালিম মিয়া ঢাকা শহরে থাকে, নিজের রিকশা আছে। আয় রোজগার ভালই। শক্ত সমর্থ্য যুবা। বিয়ের পর নতুন স্ত্রীকে নিয়ে চলে এসেছিল ঢাকা শহরে। উঠেছিল কাওরান বাজার বস্তিতে। টোনাটুনির সংসার। হালিম প্রায়ই রাতে স্ত্রীকে রিকশার সিটে বসিয়ে ঢাকা শহর ঘুরাতে বেরোতো। রাতের বেলা ঢাকা নগরী এক অসম্ভব সুন্দর স্থান। ভিড় নেই রাস্তায়, নিরব চারপাশ। মাঝে মাঝে ঢেউ তোলা ঠান্ডা হাওয়ায় বিষাক্ত সীসা নেই। পুরো শহরই অন্ধকারে ডুব দিয়েছে। এমন রাতে এক নব দম্পতি চোখে স্বপ্ন এঁকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নগরীর সৌন্দর্য্য নিজেদের চোখ দিয়ে উপভোগ করছে!
মধুর সংসার আরও মিষ্টি করতেই যেন সৃষ্টিকর্তা তাঁদের উপহার হিসেবে এক ফুটফুটে দেবশিশুকে পাঠালেন। কি সুন্দর রূপ! যেন কোন গাড়ীওয়ালা সাহেবের ঘরের ছেলে! রোকেয়া বেগম গায়ের রং একসময় ভালই পরিষ্কার ছিল, বিয়ের পর শহরে এসে ধীরে ধীরে ময়লা হয়েছে। ছেলে মায়ের আগের রং পেয়েছে।
বাবা হালিম মিয়া সন্তানের স্নেহে কথায় কথায় বাড়িতে ফিরে আসে। তার বিশ্বাস এই ছেলে একদিন অনেক বড়লোক হবে। রাজা বাদশাহর মত বড়। টাকা পয়সার কোন অভাব থাকবে না। গাড়ি চড়ে বেরাবে। সে স্বপ্নে এমনই দেখেছে। সে দেখেছে একটা ফুটফুটে ছেলে গাড়ির পিছনের সীটে বসে পত্রিকা পড়ছে। সে স্বপ্নেই চিনেছে, ঐ ছেলের বাবা সে। সে তাই ছেলের নাম রেখেছে আকবর। অনেক সময় নামের কারণেই মানুষ বড় হয়। ইনশাল্লাহ্, একদিন তার ছেলেও বড় হবে। নিশ্চয়ই হবে।
আকবরের জন্মের পরপরই রোকেয়া বেগমের মৃত্যু হয়, এবং জন্ম হয় আকবরের মা'র। এই নারী আগের রোকেয়া বেগম থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ অনেক বেশি পরিণত। কারণ সে একজন মা।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
★*অনয়*★
User ৫ বছর, ৩ মাস পুর্বে♦কষ্ট নামের বাঁগিচা♦ [Rupchan]
Golpobuzz ৫ বছর, ৩ মাস পুর্বে★*অনয়*★
User ৫ বছর, ৩ মাস পুর্বে♦কষ্ট নামের বাঁগিচা♦ [Rupchan]
Golpobuzz ৫ বছর, ৩ মাস পুর্বেSAIMA
User ৫ বছর, ৩ মাস পুর্বেSAIMA
User ৫ বছর, ৩ মাস পুর্বেSAIMA
User ৫ বছর, ৩ মাস পুর্বে♦কষ্ট নামের বাঁগিচা♦ [Rupchan]
Golpobuzz ৫ বছর, ৩ মাস পুর্বেRehnuma Ahmed
Golpobuzz ৫ বছর, ৩ মাস পুর্বে♦কষ্ট নামের বাঁগিচা♦ [Rupchan]
Golpobuzz ৫ বছর, ৩ মাস পুর্বেRehnuma Ahmed
Golpobuzz ৫ বছর, ৩ মাস পুর্বে