বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

বুড়ো ১

"গোয়েন্দা কাহিনি" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান মো রাকিবুল হাসিব (০ পয়েন্ট)

X প্রখ্যাত গোয়েন্দা আহমেদ শরীফ রাতের খাবার খেতে এসেছিলেন তাঁর বন্ধু বদরুদোজ্জা সাহেবের সাথে, রাজেন্দ্রপুর শহরের অভিজাত রেস্তোঁরা, 'ক্যাফে পাতিসেরি'-তে। সুস্বাদু বিদেশী খাবারের জন্যে এই ক্যাফের সুনাম আছে উচ্চবিত্তদের মাঝে। বদরুদোজ্জা সাহেব ক্যাফে পাতিসেরির বেশ ভক্ত। তিনি এখানকার শীতল, ধীর পরিবেশটা বড় পছন্দ করেন। আরো পছন্দ করেন এখানকার পশ্চিমা খাবারগুলো। সেই মুহুর্তে বদরুদোজ্জা সাহেব আহমেদ শরীফকে দেখাচ্ছিলেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক শিমুল দস্তিদার এই ক্যাফেতে খেতে এসে তার সাথে ঠিক কোন টেবিলে বসেছিলেন। বদরুদোজ্জা সাহেব নিজে ঠিক সংস্কৃতিমনা মানুষ নন, তবে যারা শিল্পের চর্চা করেন, তাদের প্রতি তার এক রকমের দূর্বলতা রয়েছে। ক্যাফের ওয়েইট্রেস মিস ইশিতা এগিয়ে এসে পরিচিত খদ্দের বদরুদোজ্জা সাহেবকে আমন্ত্রণ জানাল বসবার। নিয়মিত খদ্দেরেরা কে কী খায়, এটা মনে রেখে মিস ইশিতা নিজের মনে বেশ প্রচ্ছন্ন গর্ব অনুভব করে। - "শুভ সন্ধ্যা স্যার !! আপনি ভাগ্যবান। এমন দিনে এলেন- স্টাফ করা টার্কি আছে আজ মেন্যুতে। আপনার সবচেয়ে প্রিয় ওটা, তাই না ?? ... বলুন স্যার। কী দেবো আগে, স্যুপ না কোন মাছভাজা ??" বদরুদোজ্জা সাহেব বন্ধু আহমেদ শরীফের দিকে ইঙ্গিত করলেন। " কী, শুনলে তো ?? তোমার পছন্দের ফ্রেঞ্চ কিছু নেই। কেবল ইংরেজ খাবার। " আহমেদ শরীফ হাত নাড়লেন সহাস্যে। " আজ আমি নিজেকে তোমার মর্জির উপরেই ছেড়ে দিলাম দোস্তো। তোমার ইচ্ছে অনুযায়ী খানা খাওয়াও।" -"বেশ।", বদরুদোজ্জা সাহেব খাবার আর পানীয় আনতে বললেন। গমনরত মিস ইশিতার দিকে তাকিয়ে ন্যাপকিন বিছাতে বিছাতে বললেন, " এখানকার সার্ভিস বেশ ভালো, বুঝলে। এই ইশিতা মেয়েটার কথাই ধরো। স্বাদু খাবার সম্পর্কে ভালোই জ্ঞান রাখে। নারী জাতি সাধারণতঃ খাদ্যরসিক হয় না হে। প্রচুর মহিলা দেখতে পাবে, যারা প্রাচুর্যের মাঝে থেকেও খাবারের বিষয়ে মাথা ঘামায় না। নিত্য হাল ফ্যাশনের আসবাব আর পোশাক কিনতে পেরেই তারা খুশি !! " আহমেদ শরীফ মাথা নাড়লেন, "তা বটে।" -"ভাগ্যিস, ব্যাটাছেলেরা ওরকম নয় ! " বদরুদোজ্জা সাহেব সন্তুষ্ট স্বরে বললেন। -"কখনোই না ?? " চোখ নাচালেন আহমেদ শরীফ। -"তা অল্প বয়সের ছোকরাগুলো করে থাকে বটে, " সায় দিলেন বদরুদোজ্জা সাহেব। "কিন্তু ওরা... হাহ !! এই যুগের ছোকরাগুলোকে দেখো আহমেদ। না আছে সাহস, না আছে সাধনা। ওদের জন্যে আমার দুই পয়সার সহানুভূতি নেই। এবং আমার ধারণা..." গলা নামালেন তিনি। " ওদেরও আমাদের জন্যে দুই পয়সার দরদ নেই। হয়তো ওরাই ঠিক করছে। তবুও, ওদের দেখলেই মনে হয় যেন দুনিয়ায় ষাট বছর বয়েস হয়ে গেলেই আর কারো বাঁচবার অধিকার নেই। এভাবে চললে আর কয়দিন পরে দুনিয়ায় বয়স্কদের সাথে শ্রদ্ধা ভালোবাসার সম্পর্কটাও লোপ পাবে। " -"এটা অবশ্য খুবই সম্ভব। " -" নাহ, তুমিও দেখি নিরাশায় ডুবে গেলে। বলতে বাধ্য হচ্ছি আহমেদ, ঐসব চোর-লুটেরা-খুনখারাবি'র পুলিশি জালে জড়িয়ে তুমিও শেষ হয়ে গেছো।" আহমেদ শরীফ হাসলেন। " চিন্তা করো তো, ষাট বছরের সবগুলো বুড়োকে যদি একের পর এক সরিয়ে দেয়া হতে থাকে, তাহলে পুলিশের কী দুর্দশাটাই না হবে !! ... হা হা হা !! বাদ দাও ওসব দোস্তো। বরং তোমার খবর বলো। দিনকাল চলছে কেমন ?? " -" গ্যাঞ্জাম !! এই দুনিয়ায় খালি গ্যাঞ্জামই অবশিষ্ট আছে মনে হয়। খালি ঝামেলা আর খালি মিষ্টি-মিষ্টি কথা। ভাবখানা এমন, যেন মিষ্টি কথার তোড়ে সকলে আসল ঝামেলাই ভুলে যাবে। এ অনেকটা ঐ শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতন ব্যাপার আর কী..." ঠিক সেই মুহুর্তেই খাবার পরিবেশন করতে মিস ইশিতার আগমন ঘটলো। বদরুদোজ্জা সাহেব সহাস্যে বললেন, " নাহ, এই সুন্দরী মহিলাটি সত্যিই জানেন আমার ঠিক কী চাই !! " -" এ কথা বলে আর লজ্জা দেবেন না, স্যার। আপনি তো এখানে নিয়মিতই খেতে আসেন। আপনি কী খেতে ভালোবাসেন, এ তো মনে রাখা আমাদের কর্তব্যের মাঝেই পড়ে। " আহমেদ শরীফ প্রশ্ন করলেন। "আচ্ছা, লোকেরা কি সবসময় একই খাবারের অর্ডার দেয় নাকি ?? কখনো স্বাদ বদলের জন্যেও মেন্যু বদলায় না ?? " -"পুরুষেরা সাধারণতঃ, না স্যার। তবে মহিলারা স্বাদ বদল করে- পুরুষেরা সবদিনই একই অর্ডার দেয়।" -" কী, বলেছিলাম না ?? " বিজয়ীর হাসি হেসে বললেন বদরুদোজ্জা সাহেব। চারপাশে চোখ বুলিয়ে তিনি বললেন, "কোণের ঐ দাঁড়িওয়ালা বুড়োটাকে দেখছো আহমেদ ??... মিস ইশিতা আমায় গতবার বলছিলো ঐ লোক প্রতি মঙ্গল আর বিষ্যুদবার রাতে এখানে খেতে আসে। গত দশবছর ধরে। এক হপ্তাও বাদ যায় নি। এই ক্যাফেতে সে একটা মাইলফলকের মত। অথচ, আজব ব্যাপার- এই লোকটা কে,কী করে, কোথায় থাকে- সেটা এই ক্যাফের কেউই জানে না ! ভাবলে আজব লাগে না !! " টার্কির বাদবাকি অংশ নিয়ে মিস ইশিতা ফিরে আসবার পরে বদরুদোজ্জা সাহেব তাকে বললেন। " ঐ যে, তোমাদের ঐ দাঁড়িওয়ালা খদ্দের আজও এসেছে দেখছি।" -"হ্যাঁ স্যার।" মিস ইশিতা জবাব দিলো। "প্রতি মঙ্গল আর বিষ্যুদ বার। জানেন স্যার, গত হপ্তায় কিন্তু লোকটা সোমবার রাতে এসেছিলো ! এমন চমকে উঠেছিলাম স্যার, ভেবেছিলাম আমিই বোধহয় দিন ভুল করেছি। অবশ্য পরেরদিন রাতেও তিনি খেতে এসেছিলেন। বোধহয় একদিন এমনিই নিজের রুটিন ভেঙ্গেছিলেন উনি।" -" অভ্যাসের এমন পরিবর্তন ?? ভারী অদ্ভূত ব্যাপার তো !! " বিড়বিড় করে বললেন আহমেদ শরীফ। "একটা মানুষ কেন নিজের অভ্যাস এমন বদলাবে , বলতে পারেন কেউ ?? " - "আমার মনে হয় স্যার, উনি কোন ধরণের দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন। " - " সে কী ! কেন বলুন তো, তার আচরণে ঐদিন কোন পরিবর্তন দেখেছিলেন না কি ?? " - "আচরণ নয় স্যার। ভদ্রলোক তো সর্বদা কথা কম বলেন, স্বভাবেও ভারী শান্ত। সেদিনও তেমনটাই করেছিলেন। আশ্চর্য ছিলো স্যার, তার মেন্যু বদলটা ... হাসবেন না স্যার। ভদ্রলোক গত দশ বছর ধরে এখানে খেতে আসেন। কিন্তু স্যার সেদিন রাত্রে উনি যা অর্ডার দিলেন- টমেটোর ঘন স্যুপ, গরুর মাংস, পুডিং আর ব্ল্যাকবেরি টার্ট - ভীষণ অবাক হয়েছিলাম স্যার। জীবনে উনি এই সব খেতে চাননি।..." -" বলতেই হয়, খুব খুব আশ্চর্য ঘটনা এটা !! " আহমেদ শরীফ বললেন। মিস ইশিতা শ্রাগ করে চলে গেলেন। -"তারপর, গোয়েন্দাপ্রবর, " মৃদু হেসে বললেন বদরুদোজ্জা সাহেব। " আপনি কিছু অনুমান করছেন নাকি ?? " -"আপাততঃ, ও কাজটা তুমিই করো।" অন্যমনস্ক স্বরে বললেন আহমেদ শরীফ। -"বুঝেছি, আমায় ওয়াটসন বানাতে চাও, না কি ?? ... শোনো, ব্যাখ্যা খুব সরল। বুড়োকে কোন ডাক্তার বিশেষ ডায়েট দিয়েছিলো- সোজা হিসাব।" -"টমেটোর ঘন স্যুপ, গরুর মাংস, পুডিং আর ব্ল্যাকবেরি টার্ট ?? ভেবে পাচ্ছি না কোন ডাক্তার এই রকমের ডায়েট দেবে..." -"তোমার জানা নেই দোস্তো, এই ডাক্তারেরা পারে না- এমন কোন কাজ নেই। ...কিংবা এমনও হতে পারে, ভদ্রলোক কোন কারণে মানসিক চাপে আছেন- এইজন্যে তিনি খেয়াল না করেই আজব একটা অর্ডার দিয়েছিলেন..." -" হুঁম। " -" কি, বিশ্বাস হচ্ছে না ??... আরে বাবা এতো গম্ভীর হয়ে গেলে কেনো ??... বাপরে, তোমায় ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে- এই বুড়ো এখনি কোথাও একটা খুন করতে যাচ্ছে... হা হা হা... নাও নাও, খাবার জুড়িয়ে গেলো এদিকে..." বদরুদোজ্জা সাহেব হাসতে হাসতে বললেন। অথচ আহমেদ শরীফ হাসছিলেন না। তাঁকে চিন্তিত দেখাচ্ছিলো। (please wait for next part)


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৪৪৯ জন


এ জাতীয় গল্প

→ খানদানি আইবুড়োর কীর্তিকাহিনি [দি অ্যাডভেঞ্চার অফ দ্য নোবল ব্যাচেলার]
→ বুড়ো ৫
→ বুড়ো ৪
→ বুড়ো ৩
→ বুড়ো ২
→ বুড়োর লম্বা দাঁড়ির কাহিনী,,,
→ ৩৭বছরের বুড়ো আর টুকটুকির মা
→ একটি অকর্মণ্য বুড়োর গল্প
→ বুড়ো

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now