বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
‘আংটি— আমার স্বামীর।’
‘চিঠির লেখা আপনার স্বামীর তো ?’
‘হ্যা। খুব তাড়াতাড়ি লিখলে এইভাবে লেখে।
চিঠিখানা পড়ল হোমস, ‘সুপ্রিয়া, ভয় পেয়ো না। সব ঠিক হয়ে যাবে। বিরাট একটা ভুল হয়েছে। শুধরোতে সময় লাগবে। ধৈর্য ধরো।— নেভিল। পেনসিল দিয়ে লেখা হয়েছে অক্টেভো সাইজের বইয়ের পুস্তনিতে— কাগজে জলছাপও দেখছি না। হুম! ডাকে ফেলেছে আজকে— যে ফেলেছে তার বুড়ো আঙুলটা রীতিমতো নোংরা। বাঃ! খামের মুখ যে সেঁটেছে, তার আবার তামাক চিবোনোর অভ্যেসও আছে। লেখাটা তাহলে আপনার স্বামীর ?”
‘নিশ্চয় ?
‘চিঠি যখন আজকে ডাকে ফেলা হয়েছে, তখন অন্ধকারে আলো দেখা যাচ্ছে— তবে পুরোপুরি বিপদমুক্ত হয়েছেন— এ-কথা বলা যায় না।’
‘বেঁচে তো আছে।’
‘সেটা বলাও মুশকিল। হাতের লেখা নকল হতে পারে। আঙুল থেকে আংটিও খুলে নেওয়া যেতে পারে।’
‘কিন্তু আমি বলব হাতের লেখা ওরই।’
‘হয়তো চিঠি লিখেছিলেন আগে, ডাকে ফেলা হয়েছে আজকে। এর মাঝে অনেক কিছুই ঘটতে পারে।’
‘আপনি বড়ো ভয় দেখান, মি. হোমস। এত বড়ো সর্বনাশ হলে আমি টের পেতাম না বলতে চান? জানেন, যাওয়ার দিন পাশের ঘরে হাত কেটে ফেলেছিল, খাবার ঘরে বসে ঠিক টের পেয়েছিলাম, মনে হল, নিশ্চয় কিছু একটা হয়েছে ওর। দৌড়ে গিয়ে দেখি সত্যিই আঙুল কেটে বসে আছে। মারা গেলে তো বুঝতে পারবই।’
‘ঠিক কথা। অনেক সময়ে দেখা গেছে মেয়েদের মন যুক্তিকেও টেক্কা দেয়। কিন্তু বেঁচেই যদি আছেন তো চিঠি লিখতে গেলেন কেন? আসতে কী হয়েছে?
‘সেইখানেই তো ধোঁকা লাগছে।’
‘আচ্ছা, দোতলার সেই বাড়িটায় আপনি ওঁকে খোলা জানলা দিয়ে দেখেছিলেন, তাই না?
‘হ্যা।’ জানলা খোলা থাকা সত্ত্বেও আপনাকে নাম ধরে না-ডেকে শুধু চেঁচিয়ে উঠলেন কেন? চেঁচনিটা কী ধরনের? বিপদে পড়ে সাহায্য চাওয়ার মতো কি?
‘হাত নাড়াটা সেই ধরনের।’
‘এমনও তো হতে পারে আপনাকে দেখে তাজ্জব হয়ে গিয়ে দু-হাত শূন্যে উঠিয়েছিলেন?
'অসম্ভব কিছু নয়।’
‘তারপরেই কেউ যেন পেছন থেকে হ্যাচক টান মেরে সরিয়ে নিল?’
‘যেভাবে দুম করে সরে গেল জানলা থেকে, মনে হল পেছনে কেউ ছিল— টেনে নিল।’
‘নিজেই লাফ মেরে পেছিয়ে গেছেন কি না জানছেন কী করে? ঘরে ঢুকেও তো আর কাউকে দেখেননি?’
বিকট চেহারার সেই লোকটা ছিল— নিজে কবুল করেছে।
‘ওই অঞ্চলে বা ওখানকার আফিংয়ের আড্ডায় উনি আগে কখনো যেতেন?’
‘না?’
আর কথা হল না। খাওয়ার পর ঢুকলাম শোবার ঘরে। খাটের ওপর বালিশ আর কুশন সাজিয়ে তার ওপর আয়েশ করে বসল হোমস— সামনে রাখল অনেকখানি তামাক। বুঝলাম সারারাত তামাক খাবে আর ধ্যান করবে কূট-সমস্যা নিয়ে। চোখে ঘুম নামার সময়েও দেখলাম শিবনেত্র হয়ে ঠায় বসে— গল গল করে নীলচে ধোঁয়া উঠছে কড়িকাঠের দিকে।
ভোরবেলা চোখ মেলে দেখলাম, ঠিক এইভাবেই বসে আছে সে— শুধু যা সামনের তামাকস্তুপ উধাও হয়েছে।
‘চলো ওয়াটসন, একটু বেরোনো যাক, প্রসন্ন কণ্ঠ হোমসের– কাল রাতের সমস্যাপীড়িত মুখচ্ছবিও আর নেই।
তখন ভোর চারটে। বাড়ির কেউ ওঠেনি। সহিসকে গাড়ি প্রস্তুত করতে বলে এল হোমস। জামা-জুতো পরতে পরতে বললে, ‘ওয়াটসন, ইউরোপের সবচেয়ে হাদারাম লোকটা এখন তোমার সামনে। সমস্যার সমাধান করে এনেছি বললেই চলে— চাবির সন্ধান পাওয়া গেছে।’
‘চাবিটি এখন কোথায়?’
‘কলতলায়। সেখান থেকে নিয়ে আমার ব্যাগে রেখেছি। দেখি এবার সমস্যার তালা খুলতে পারি কি না!’
গাড়ি ছুটল লন্ডন অভিমুখে। যেতে যেতে হোমস শুধু বললে, ‘কেসটা খুবই বিচিত্র। প্রথমটা খুবই ধাঁধায় ফেলেছিল।’
থানায় পৌছে ইনস্পেকটর ব্র্যাডস্ট্রিটের ঘরে ঢুকল হোমস। বলল, ‘হিউ বুন এখন হাজতে তো? ‘হ্যাঁ। খুব শাস্ত ধরনের আসামি– কিন্তু এত নোংরা যে কহতব্য নয়।’
‘কেন বলুন তো?
'আরে মশাই কিছুতেই মুখের তেলকালি ধোয়াতে পারলাম না! কোনোমতে কেবল হাতজোড়া ধোয়ানো গেছে।’
‘এখন একবার দেখা যাবে?
'আসুন।
ব্যাগ হাতে ইনস্পেকটরের পেছন পেছন চলল হোমস— এল হাজতখানায়। আমি আছি সঙ্গে। সরু করিডর— দু-পাশে সারি সারি বন্ধ দরজা। একটা দরজার ওপর থেকে তক্তা সরিয়ে ইনস্পেকটর বললে— ঘুমোচ্ছে এখনও। আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে ঘুমোচ্ছে ভিখিরি হিউ বুন। সে কী মুখ! দুনিয়ার কদর্যতা জড়ো হয়েছে বক্র ওষ্ঠ আর বিরাট ক্ষতচিহ্নটার মধ্যে। চোখ থেকে থুতনি পর্যন্ত কেটে গিয়েছিল— ক্ষতস্থান শুকিয়ে যেতে চামড়া টেনে ধরেছে। ওপরের ঠোঁট উলটে গেছে। তিনটে দাঁত বেরিয়ে পড়েছে। ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও যেন দাঁত খিচিয়ে রয়েছে। দারুণ জ্বলজ্বলে এক মাথা লালচে চুল কপাল আর চোখ ঢেকে রেখেছে। গায়ে রঙিন শার্ট আর ছেড়া কোট। নোংরামি দিয়েও কুৎসিত মুখ ঢাকা যায়নি।
‘বিউটিফুল, তাই না? বলে ইনস্পেকটর।
‘সেইজন্যেই তো তৈরি হয়ে এসেছি— রূপটাকে ফুটিয়ে তোলা দরকার।’ বলে ব্যাগ খুলে একটা বিরাট স্পঞ্জ বার করল হোমস।
’এ আবার কী!” হেসে ফেলে ইনস্পেকটর। আস্তে খুলুন দরজাটা— শব্দ না হয়।’ প্রায় নিঃশব্দে চাবি ঘুরিয়ে দরজা খুলে দিল ইনস্পেকটর। ঘরের কোণে জলপাত্রে স্পঞ্জ ডুবোল হোমস এবং আচমকা গায়ের জোরে ঘষতে লাগল ঘুমন্ত বন্দির মুখখানা।
সেইসঙ্গে সে কী চিৎকার, আলাপ করিয়ে দিই আসুন, ইনিই নিখোঁজ মি. নেভিল সিনক্লেয়ার।’
যেন ম্যাজিক দেখলাম চোখের সামনে। স্পঞ্জের জোরালো ঘর্ষণে দেখতে দেখতে যেন একটা খোসা উঠে গেল ভিখিরিটার মুখ থেকে— ভোজবাজির মতো মিলিয়ে গেল তেলকালি আর দগদগে কাটার দাগটা। হ্যাচক টানে অন্তহিত হল লাল টকটকে পরচুলা।
লজ্জায় অধোবদনে বিছানায় উঠে বসল খাটি ভদ্রলোকের চেহারা নিয়ে এক ব্যক্তি। পরমুহুর্তেই বুঝল— খেল খতম। আর্ত চিৎকার করে আছড়ে পড়ল বিছানায়।
ইনস্পেকটর হতবাক হয়ে গেছিল। এখন যেন সম্বিৎ ফিরে পেল, ‘আরে সর্বনাশ! ইনিই তো নেভিল সিনক্লেয়ার— ছবিতে এই চেহারাই তো দেখেছি।’
বিছানা ছেড়ে তড়াক করে লাফিয়ে উঠ মরিয়া সুরে লেভিল সিনক্লেয়ার বললেন,‘বেশ করেছি। আমার বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে তো বলুন।
‘অভিযোগ ?’ মুচকি হেসে ইনস্পেকটর বলল, সেটা তো প্রায় আত্মহত্যার অভিযোগ হয়ে দাঁড়ায়— নিজেই নিজেকে গুমখুন করেছেন।
হোমস বললে, “না তা নয়। অভিযোগটা স্ত্রীকে ঠকানোর। তাকে সব বলা উচিত ছিল।’
‘কী করে বলি বলুন, যদি ছেলে-মেয়েরা জেনে ফেলে? মাথা কাটা যাবে যে।
‘এখন কি আর কিছু চাপা থাকবে। কেলেঙ্কারি যদি এড়াতে চান তো থানায় এজাহার দিয়ে যান— ইনস্পেকটর মনে করলে আদালত পর্যন্ত ব্যাপারটা গড়াতে দেবেন না। আপনিও ছাড়া পাবেন।”
ককিয়ে উঠলেন সিনক্লেয়ার, বলল, বলব, সব বলব। এ-কথা ছেলে-মেয়েদের কানে উঠলে বাড়িতে আর মুখ দেখাতে পারব না। তার চাইতে ফাসিতে মরা ভালো।
‘শুনুন কী হয়েছিল ব্যাপারটা! এক সময়ে আমি খুব দেশ বেড়িয়েছি, অভিনয় করেছি, সাংবাদিকতাও করেছি। লেখাপড়াও করেছিলাম ভালোভাবে। একদিন ভিখিরিদের নিয়ে প্রবন্ধ লেখার ফরমাশ হল আমার ওপর। ভেবে দেখলাম, ভিখিরিদের নাড়িনক্ষত্র জানতে হলে ভিখিরি সাজাই ভালো। অভিনয় করতে জানতাম বলে ভিখিরির ছদ্মবেশটা ধরলাম ভালোই, ভিক্ষেও করলাম সারাদিন, খুচরো পয়সা গুনতে গিয়ে চোখ কপালে উঠল! মাত্র সাত ঘণ্টায় ছাব্বিশ শিলিং চার পেনি!
যাই হোক, অভিজ্ঞতাটা হঠাৎ একদিন কাজে লেগে গেল। দেনার দায়ে রাতের ঘুম উড়ে গেছিল। পঁচিশ পাউন্ড দেনা মিটিয়ে দিলাম দশ দিনের ভিক্ষের টাকায় !’
এরপর থেকেই পুরোপুরি ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করলাম। প্রথমটা একটু দোটানায় পড়েছিলাম। অন্তর্দ্বন্দ্বে লেগেছিল টাকার লোভ আর আত্মসম্মানে। শেষ পর্যন্ত সহজে টাকা রোজগারের লোভ আর ছাড়তে পারলাম না। সাংবাদিকতা করেও এত টাকা কখনো পাব না। রোজ বাড়ি থেকে বেরোতাম ভদ্রলোক সেজে, আফিংয়ের আড্ডার দোতলায় ভিখিরি সাজতাম, বিকেল হলে ওখান থেকেই ফের ভদ্রলোক সেজে বাড়ি ফিরতাম। লস্করটার মুখ বন্ধ রেখেছিলাম পয়সা খাইয়ে |
‘এইভাবেই একদিন বাড়ি কিনলাম, বিয়ে করলাম, বাবা হলাম। আমার রোজগার এখন বছরে সাতশো পাউন্ড। আমার চেহারা আর কথার জন্যেই এত রোজগার সম্ভব হয়েছে।’
‘গত সোমবার ভিখিরির সাজপোশাক ছেড়ে ভদ্রলোক সাজছি, এমন সময়ে জানলা দিয়ে রাস্তায় স্ত্রীকে দেখলাম। এদিক-ওদিক কাকে খুঁজছে দেখে ভড়কে গিয়ে চেঁচিয়ে উঠি। সঙ্গেসঙ্গে জানলা থেকে সরে এসে লস্করকে বলি স্ত্রীকে যেন ওপরে উঠতে না-দেয়। নীচে যখন চেঁচামেচি চলছে, আমি তখন নতুন করে ভিখিরি সাজছি— এ এমনই ছদ্মবেশ যে বউ পর্যন্ত ঠকে যাবে জানতাম। কিন্তু পাছে পুলিশের হাঙ্গামা হয়, তাই খুচরো পয়সা দিয়ে কোটটা ভারী করে ফেলে দিলাম নদীতে। অন্য জামাকাপড়গুলো ফেলবার আগেই এসে হাজির হল পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়ার আগেই লস্করটাকে একটা চিঠি লিখে দিই স্ত্রী-র নামে— সেইসঙ্গে খুলে দিয়েছিলাম হাতের আংটিটা— যাতে উব্দেগে না-থাকে।
‘চিঠি তো পেয়েছেন কালকে।
‘কালকে। সে কী! তাহলে এই সাতটা দিন তো ভীষণ উদ্বেগে কেটেছে বেচারির।
‘লস্করের পেছনে পুলিশ ঘুরছিল যে— চিঠিখানা তাই কাউকে দিয়ে কালকে পোস্ট করেছে, বললে ইনস্পেকটর। যাই হোক, ব্যাপারটা আমি ধামাচাপা দিতে পারি যদি এ-কাজ জন্মের মতো ছেড়ে দেন। হিউ বুন হওয়া আর চলবে না। ‘কথা দিচ্ছি।’
মি. হোমস, এতবড়ো ধাঁধাটা সমাধান করলেন কী করে বলুন তো?
‘বালিশের পাহাড়ে বসে এক আউন্স তামাককে ধোঁয়া বানিয়ে, বলে হাসতে হাসতে আমাকে নিয়ে থানা থেকে বেরিয়ে এল র্শালক হোমস।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
মো রাকিবুল হাসিব
User ৫ বছর, ৩ মাস পুর্বেমো রাকিবুল হাসিব
User ৫ বছর, ৩ মাস পুর্বেRehnuma Ahmed
Golpobuzz ৫ বছর, ৩ মাস পুর্বেমো রাকিবুল হাসিব
User ৫ বছর, ৩ মাস পুর্বেRehnuma Ahmed
Golpobuzz ৫ বছর, ৩ মাস পুর্বেমো রাকিবুল হাসিব
User ৫ বছর, ৩ মাস পুর্বেRehnuma Ahmed
Golpobuzz ৫ বছর, ৩ মাস পুর্বে