বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
মিস স্টোনার চলে যাওয়ার পর হোমস বললে, ‘ওয়াটসন, কী বুঝলে ?’
‘অকুল রহস্য। দিশে পাচ্ছি না। জুলিয়া মারা যাওয়ার সময়ে ঘরে তো কেউ ছিল না। তাহলে ?’
‘তাহলে মরবার সময়ে ডোরাকাটা ফুটকি দাগওলা পটির কথা বলে গেল কেন? কেনই-বা শিসের শব্দ শোনা যেত রাতে ?
‘আমার মাথায় আসছে না।’
‘ভায়া, ঘটনাগুলো পর পর সাজিয়েই দেখ না। প্রথমেই ধরে নাও সৎমেয়ের বিয়ে আটকালে ডাক্তারের অর্থিক লাভ হয়েছে। তারপরেই দেখ ভদ্রলোকের সঙ্গে জিপসিদের দহরম-মহরম এবং রাত্রে শিসের আওয়াজ। ডোরাকাটা পটির কথা বলেই মিস স্টোনারের জ্ঞান লোপ এবং একটা ঝন ঝন ঝনাৎ শব্দ— যা কিনা খড়খড়ি বন্ধ করার জন্যে লোহার খিল ফেলার আওয়াজ হতে পারে। সবকটা ঘটনা এক সুতোয় গাঁথলে রহস্য-সূত্র পাওয়া যাবেই। আরে! আরে! এ আবার কোন আপদ ?
দড়াম করে দরজা খুলে মূর্তিমান উৎপাতের মতো ঘরে ঢুকল দানবাকৃতি এক বৃদ্ধ। মাথার টুপি প্রায় দরজায় ঠেকেছে, এত লম্বা। নিশ্বাস ফেলছে ফোঁস ফোঁস করে। বলিরেখা আঁকা মুখটা হলুদ হয়ে এসেছে রোদে পুড়ে। মুখের পরতে পরতে অনেক দুষ্কর্ম প্রকট হয়ে রয়েছে। চোখ তো নয়— যেন আগুনের ভাটা— রাগে জ্বলছে। বাজপাখির মতো সরু খাড়া নাকের পাটা ফুলে ফুলে উঠেছে। সব মিলিয়ে যেন একটা প্রেতচ্ছায়া।
হাতের চাবুকটা নাড়তে নাড়তে ক্রুদ্ধ হুংকার ছেড়ে বললে আগন্তুক, শার্লক হোমস কোন জন?’
‘আমি, শান্তস্বরে বললে বন্ধুবর, আপনি?’
‘স্টোকমোরানের ডাক্তার গ্রাইমসবি রয়লট।’
‘বসুন।’
‘বসতে আসিনি। আমার সৎ-মেয়ে এখানে এসেছিল। কেন?’
‘বড়ো ঠান্ডা পড়েছে বাইরে।’
‘কী বলছিল?’ হিংস্র চিৎকার ছাড়ল বৃদ্ধ।
‘তাহলে ক্রুকাস ভালোই ফুটবে, নিরুত্তাপ স্বরে বলে গেল হোমস।
‘আচ্ছা! এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে? স্কাউন্ডেল কোথাকার! তোমাকে আমি চিনি, এগিয়ে এসে নাকের ডগায় চাবুক নাড়তে নাড়তে দাঁত কিড়মিড় করে উঠল বৃদ্ধ। পরের ব্যাপারে কাঠি দেওয়া তোমার স্বভাব?’
হাসল হোমস।
‘পরচর্চায় বড় আনন্দ, না?’
হোমসের হাসি সারামুখে ছড়িয়ে পড়ল।
‘স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের লক্কা পায়রা কোথাকার!’
প্রাণ খুলে খুক খুক করে হেসে হোমস বললে, “আপনার কথায় বেশ মজা আছে। যাওয়ার সময়ে দরজাটা বন্ধ করে যাবেন— ঠান্ডা ঝাপটা আসছে।’
‘যা বলতে এসেছি, সেটা বলব, তারপর যাব। আমার ব্যাপারে নাক গলাতে এস না শার্লক হোমস। মিস স্টোনারের পেছন পেছন আমি এসেছি— আমি জানি এখানে সে এসেছিল! আমি কিন্তু লোক খুব খারাপ— ঘেটিয়ো না। দেখ তবে— বলেই আগুন খোঁচানোর লোহার ডান্ডাটা বিশাল বাদামি হাতে তুলে বেঁকিয়ে ফেলে দিল ফায়ারপ্লেসে।
‘আমার মুঠোয় পড়লে এই দশাই হবে বলে দিলাম। দংষ্ট্রাসহ জিঘাংসাকে প্রকট করে তুলে হনহন করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল অসুর আকৃতি।
ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে গেলে দেখিয়ে দিতাম কবজির জোরে আমিও কম যাই না,’ বলে ইস্পাতের ডান্ডাটা তুলে এক ঝটকায় ফের সিধে করে দিল আগের মতো।
‘লোকটার স্পর্ধা দেখ! আমাকে কিনা সরকারি ডিটেকটিভ বলে গাল পাড়ে! যাকগে, ভালোই হল। তদন্ত করার উৎসাহটা আরও বেড়ে গেল। মেয়েটার ওপর এখন অত্যাচার না-হলেই হয়। ওয়াটসন, প্রাতরাশ খেয়ে নেওয়া যাক। তারপর আমি বেরোব একটু খোঁজখবর নিতে ’
দুপুর একটা নাগাদ বাড়ি ফিরল হোমস। হাতে একতাড়া কাগজ। তাতে অনেক কিছু লিখে এনেছে।
বললে, ‘মিস স্টোনারের মা যে উইল করে গেছেন, তা দেখে এলাম। আগে এক বছরের আয় ছিল ১১০০ পাউন্ড। এখন ৭৫০ পাউন্ড। ১ বিয়ে হলে প্রত্যেক মেয়ে বছরে পাবে ২৫০ পাউন্ড। অর্থাৎ দুই মেয়েই পাত্রস্থ হলে ভদ্রলোকের ভাড়ে থাকে মা ভবানী। নাও হে ওয়াটসন, এবার ওঠো। সকালের কাজটা বৃথা যায়নি— এবার শুরু হোক বিকেলের কাজ। সঙ্গে রিভলভারটা নিয়ো। যে-লোক কথায় কথায় লোহার ডান্ডা বাঁকায়, তার সঙ্গে রিভলভার নিয়ে কথা বলাই ভালো।’ স্টোকমোরানে পৌছে দেখলাম মিস স্টোনার আমাদের জন্যেই বাড়ির বাইরে পায়চারি করছেন।
হোমসকে দেখেই সাগ্রহে বললে, ‘ডক্টর রয়লট লন্ডন গেছেন— ফিরতে সেই সন্ধে।”
‘জানি। দেখা হয়েছে আমাদের সঙ্গে,’ বলে ঘটনাটা বলল হোমস।
ফ্যাকাশে হয়ে গেলেন মিস স্টোনার, ‘সাংঘাতিক ধড়িবাজ তো! পেছন নিয়েছিলেন ?’
অভয় দিয়ে হোমস বললে, ‘ঘাবড়াবেন না। ওঁর চাইতেও ধড়িবাজ লোক ওঁরই পেছনে এবার লেগেছে। বেশি বাড়াবাড়ি করলে আপনাকে মাসির কাছে রেখে আসব। চলুন, ঘরটা দেখে আসি।
সুপ্রাচীন প্রাসাদের প্রায় সবটাই পড়ো-পড়ো অবস্থায় পৌছেছে। একদিকে বাসোপযোগী একটা অংশে রাজমিস্ত্রির কাজ চলছে। ভারা বাঁধা। কিন্তু মিস্ত্রি নেই। একটা বারান্দার ওপর পাশাপাশি তিনটে ঘর। শেষের ঘরটায় দেওয়াল ভাঙা । হোমস সে-ঘরে গেলই না। যে-ঘরে মিস স্টোনার রাত কাটিয়েছেন, সেই ঘরের দিকটায় জানলার লেন্স দিয়ে পরীক্ষা করল অনেকক্ষণ। ভেতর থেকে হুড়কো দিয়ে খড়খড়ি আটকানোর পর বাইরে থেকে অনেক চেষ্টা করেও খুলতে পারল না। হোমস বললে, ‘মিস স্টোনার, আপনার শোবার ঘরটা মেরামত না-করলেই কি চলছিল না?’
‘কোনো দরকারই ছিল না। আমার তো মনে হয় ওই অছিলায় উনি আমাকে মাঝের ঘরে সরিয়েছেন।’
ঘরটা সাদাসিদে, বহু পুরোনো দেওয়াল, আসবাবপত্র মামুলি। দেওয়াল-ঘেঁষা একটা সরু খাট, সিন্দুক, ড্রেসিং টেবিল, চেয়ার। এক কোণে বসে তীক্ষ্ণ চোখে সব কিছুই যেন মনের পর্দায় একে নিতে লাগল হোমস।
বিছানার পাশে একটা দড়ি ঝুলছিল কড়িকাঠের কাছ থেকে। ঝুমকো প্রান্ত লুটিয়ে বালিশে।
হোমস বললে, দড়িটা কীসের ?’
‘ঘণ্টার। হাউসকিপারের ঘর পর্যন্ত গিয়েছে।’
‘এ-ঘরের সব কিছুই তো দেখছি পোকায় খাওয়া। দড়িটা সে তুলনায় অনেক নতুন মনে হচ্ছে।’
‘এই তো বছর দুই হল লাগানো হয়েছে।’
‘বোন বলেছিল বলে?’
‘না, না। জুলিয়া চায়নি। ঘণ্টা টেনে ফরমাশ করা আমাদের ধাতে নেই। কাজকর্ম নিজেরাই করি।’
‘দাঁড়ান, মেঝেটা দেখি, বলে আতশকাচ হাতে মেঝের ওপর উপুড় হয়ে পড়ল হোমস। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মেঝে পর্যবেক্ষণ করল নিমগ্ন চিত্তে। মেঝের প্রত্যেকটা ফাটা, দেওয়ালের তক্তা তন্নতন্ন করে দেখার পর গেল খাটের কাছে। স্থির চোখে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপর চোখ বুলালো দেওয়ালের ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত। সবশেষে ঘণ্টার দড়ি ধরে মারল টান।
টেনেই বললে, ‘আরে! এ তো দেখছি মেকি ব্যাপার!’
‘বাজছে না বুঝি?
‘বাজবে কী করে ? তারের সঙ্গে বাধা থাকলে তো! ইন্টারেস্টিং ব্যাপার দেখছি। নিজেই দেখুন না হাওয়া যাতায়াতের ঘুলঘুলির ঠিক ওপরে হুকের সঙ্গে বাধা রয়েছে দড়িটা।
এ কী অদ্ভুত ব্যাপার। লক্ষই করিনি এতোদিন।
অদ্ভুত বলে অদ্ভুত। আশ্চর্য ব্যাপার আরও আছে এ-ঘরে। যেমন ধরুন এমন বোকা রাজমিস্ত্রি কখনো দেখেছেন যে হাওয়া যাতায়াতের জন্যে পাশের ঘরের দেওয়ালে ঘুলঘুলি বানায়? একই মেহনতে খোলা বাতাস আনা যেত যদি ঘুলঘুলিটা বানানো হত বাইরের দেওয়ালে!’
‘ওটাও সম্প্রতি তৈরি।’
‘ঘণ্টার দড়ি যখন এসেছে, সেই সময়ে তো ?’
‘হ্যা। কিছু রদবদল করা হয়েছিল তখন।’
‘খুবই ইন্টারেস্টিং রদবদল, মিস স্টোনার। এক নম্বর, ডামিঘন্টার দড়ি— ধোঁকা দেওয়ার জন্যে। দু-নম্বর— এমন একটা ভেন্টিলেটর যা ভেন্টিলেটরের কাজ করে না।– এবার পাশের ঘর নিয়ে রিসার্চ করা যাক।’ ডা, গ্রাইমসবি রয়লটের ঘরখানা একটু বড়ো— কিন্তু আসবাবপত্র একইরকম সাদাসিদে। ক্যাম্পখাট, কাঠের তাকভরতি বই— বেশির ভাগই যন্ত্রশিল্প সম্পর্কিত, বিছানার পাশে একটা আর্মচেয়ার, দেওয়ালের পাশে একটা কাঠের মামুলি চেয়ার, একটা গোল টেবিল, একটা বড়ো লোহার সিন্দুক। চুলচেরা চোখে তন্ময় হয়ে প্রতিটি বস্তু দেখল হোমস।
সিন্দুকে আঙুল ঠুকে বলল, ‘কী আছে এতে?
‘সৎ-বাবার ব্যাবসার কাগজপত্র।”
‘ভেতর দেখেছেন ??
‘অনেক বছর আগে একবারই দেখেছি— কাগজ ঠাসা ছিল।’
‘ভারি অদ্ভুত কথা বলেন তো!’
ডালার ওপর এক ডিশ দুধ দেখিয়ে হোমস বললে, “এইজন্যে বললাম!'
বেড়াল নেই, তবে চিতা আর বেবুন আছে।
‘তা বটে। চিতা আছে– বেড়ালেরই জাত— কিন্তু দুধে তার রুচি নেই, বলতে বলতে কাঠের চেয়ারটার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে চেয়ার পর্যবেক্ষণ মন প্রাণ ঢেলে দিলে হোমস।
উঠে দাঁড়িয়ে লেন্স পকেটে পুরে বললে, ‘থ্যাংকিউ! সব বোঝা গেছে। আরে! আরে! আবার একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার!”
যা দেখে তাজ্জব হল শার্লক হোমস তা একটা কুকুর-মারার ছোট্ট চাবুক। ঝুলছে বিছানার কোণে। ডগাটায় কিন্তু একটা ফাঁস।
ওয়াটসন, ‘কী বুঝলে?’
‘মামুলি চাবুক। কিন্তু ফাঁস বাধা কেন বুঝছি না।
ওইখানটায় কেবল মামুলি ঠেকছে না, কেমন? দুনিয়াটা বদমাশ লোকে বোঝাই হে, তার ওপর যদি চালাক লোক পাপ কাজে নামে তার মতো কুচক্রী আর হয় না। মিস স্টোনার, চলুন এবার, লনে যাওয়া যাক।’
মুখখানা অন্ধকার করে অনেকক্ষণ লনে পায়চারি করল বন্ধুবর। তারপর বললে, ‘মিস স্টোনার, আমি যা বলব, আপনাকে তাই করতে হবে।’
‘আপনার হাতেই তো ছেড়ে দিয়েছি নিজেকে।
‘তাহলে আজকে আপনি রাত কাটাবেন আপনার পুরোনো ঘরে। আর আমরা রাত কাটাবো আপনার ঘরে?
মিস স্টোনার আর আমি দুজনেই যুগপৎ অবাক হয়ে গেলাম।
হোমস বললে, ‘শিসের শব্দটা কী, আমি জানতে চাই।— ওইটা নিশ্চয় গায়ের সরাইখানা?
‘হ্যা।’
‘ওখান থেকে আপনার ঘরের জানলা দেখা যায়?”
‘যায়?’
‘তাহলে ডাক্তার ফিরে আসার পর মাথা ধরার অছিলায় আপনার ঘরে ঢুকে পড়বেন। যখন বুঝবেন উনি শুয়ে পড়েছেন, জানলা খুলে বাতিটা পাশে রাখবেন— যাতে সংকেত আলো দেখতে পাই। তারপর দরকারি জিনিসপত্র নিয়ে আপনার পুরোনো ঘরে চলে যাবেন।
মিস স্টোনার হোমসের বাহু স্পর্শ করে বললে, “আমার বোন মারা গিয়েছে কেন, আপনি তা আঁচ করেছেন মনে হচ্ছে?”
‘করেছি।’
‘ভয় ?’
‘না। আরও স্পষ্ট হোক কারণটা, তারপর বলব।’
চলে এলাম সরাইখানায়। ওপরতলায় এমন একটা ঘর বেছে নিলাম যেখান থেকে জীর্ণ প্রাসাদে মিস স্টোনারের ঘর দেখা যায়। বৈঠকখানা ঘরে আলো জ্বলে উঠল ডাক্তার রয়লট ফিরে আসার পরেই। ভদ্রলোক যে ভয়ঙ্কর রেগে আছে তা দূর থেকেই বোঝা গেল। গেট খুলতে একটু দেরি করছিল গাড়োয়ান— তাতেই এই মারে কি সেই মারে ভাব দেখা গেল। সেইসঙ্গে বাজখাই চিৎকার।
অন্ধকারে ঘরের জানলায় বসে এইসব দেখছি, এমন সময়ে হোমস বললে, ‘ওয়াটসন, আজকের অভিযানে বিপদ আছে। তোমাকে নিয়ে যেতে মন চাইছে না।’
‘কীসের বিপদ? আমি যা দেখছি, তুমিও তা দেখেছ? তবে?
‘ভেন্টিলেটরটা দেখলে তো ?’
‘দুর! অত ছোটো ফুটাে দিয়ে ইদুর পর্যন্ত গলতে পারবে না।’
'ভায়া, এখানে আসার আগেই জানতাম ও-রকম একটা ফুটো আছে।’
‘মাই ডিয়ার হোমস !’
আরে, এটা বুঝছ না কেন, ফুটো না-থাকলে নিজের ঘরে বসে জুলিয়া পাশের ঘরে চুরুট খাওয়ার গন্ধ পেতেন কী করে?
‘কিন্তু তাতে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেল?’
‘ভেন্টিলেটর তৈরি হল, দড়ি ঝোলানো হল, বিছানায় শুয়ে একটি মেয়ে মারা গেল। তিনটে ঘটনার যোগসূত্র কি বিচিত্র নয়?
‘তিনটে ঘটনার মধ্যে আদৌ কোনো যোগসূত্র আছে বলেই মনে হয় না আমার। বিছানাটার বৈশিষ্ট্য দেখেছিলে?’
‘না তো।’
‘চারটে পায়াই মেঝেতে আঁটা। ইচ্ছে করলেও সরিয়ে শোয়া যায় না। ঘণ্টার মেকি দড়ির তলাতেই রাখতে হবে।’
‘হোমস! হোমস। সাংঘাতিক ক্রাইমের গন্ধ পাইছি। একটু একটু বুঝতে পারছি কী বলতে চাইছ।’
‘ভায়া ডাক্তারদের বিদ্যে থাকে, বুদ্ধি থাকে। তারা যদি ক্রাইমে নামে, তাদের জেয়ে বড়ো ক্রিমিন্যাল আর হয় না। এখন আর কথা নয়— তামাক খাওয়া যাক।’
রাত ন-টায় অন্ধকার গ্রাস করল জীর্ণ সৌধকে। এগারোটায় একটা উজ্জ্বল আলো দেখা গেল অন্ধকারে।
তড়াক করে লাফিয়ে উঠল হোমস। সংকেত এসে গেছে। ঠিক মাঝের ঘরেই আলো জ্বলছে। চলো।’
বাগানে পৌছে জুতো খুলে পা টিপে টিপে কিছুদূর যেতেই গাছের মধ্যে বিকলাঙ্গ শিশুর মতো কী-একটা সড়াৎ করে মাঠে নেমে গড়াগড়ি দিয়ে ফের সাৎ করে মিলিয়ে গেল গাছের আড়ালে। দারুণ চমকে উঠলাম আমি। সবলে আমার হাত খামচে ধরল হোমস।
তারপরেই নিঃশব্দে হেসে বললে, ‘বেবুনটা। বেবুন তো বুঝলাম, চিতাও তো আছে। ভাবতেই গা হিম হয়ে এল। ঘরের মধ্যে ঢুকে দরজা বন্ধ করে তবে নিশ্চিন্ত হলাম।
খড়খড়ি বন্ধ করল হোমস। নিজে বসল বিছানায়, পাশে মোমবাতি আর দেশলাই, হাতে একটা সরু বেত। আমি বসলাম চেয়ারে, হাতে রিভলভার। বাতি নিভিয়ে দিল হোমস।
অন্ধকার। কোথাও এতটুকু আলোকরশ্মি নেই। দুরের গির্জেয় পনেরো মিনিট অন্তর বাজছে ঘণ্টা। খড়খড়ির বাইরে একবার চাপা ঘর-ঘর আওয়াজ শুনলাম। অর্থাৎ চিতাবাঘটা সত্যিই টহল দিচ্ছে বাগানে।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now