বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

অন্ধকার গলির সেই বাড়িটি ২

"গোয়েন্দা কাহিনি" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান মো রাকিবুল হাসিব (০ পয়েন্ট)

X ‘আপনি তাহলে পাশের ৯ এ‚ বাড়িটায় থাকেন!’ একটু যেন অবাক হলেন উনি। ‘আমি তো ভেবেছিলাম বাড়িটা খালি। কেউ থাকে না।’ ‘আসলে একা মানুষ তো। দিনের অনেকটা সময় বাইরেই কাটে। ‘কিছু মনে করবেন না মি. বাসু। আমি কিন্তু কারও বাড়িতে বড়ো একটা যাই…।’ বলতে বলতে হঠাৎই থেমে গেলেন উনি। হাঁ করে আমার মুখের দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে রইলেন। সামান্য কুঁচকে উঠল ভুরু। ‘আপনার‚ আপনার বাঁ দিকের দাঁতটা নেই দেখছি!’ সবে পরিচয়। হঠাৎ এমন কথায় বিব্রত হওয়া স্বাভাবিক। বাঁ দিকের ক্যানাইন দাঁতটা অনেক দিন আগে এক দুর্ঘটনায় পড়ে গেছে। বাঁধিয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু তাতে সুবিধার থেকে অসুবিধাই বেশি। তাই আর ব্যবহার করা হয় না। সেই কথাই বললাম। মহিলা কিন্তু বিশেষ খুশি হলেন বলে মনে হল না। ঠোঁট বাঁকিয়ে সামান্য ঘাড় নাড়লেন শুধু। তারপর মুখ তুলে সন্তর্পণে চারপাশে চোখ ঘোরাতে গিয়ে হঠাৎ থেমে গেলেন। স্থির চোখে তাকিয়ে রইলেন দূরে রাস্তার দিকে। উপদ্রুত অঞ্চল। দিনভর পথে প্যারামিলিটারিদের টহল চলে। উর্দ্দিপরা তাদের কয়েকজন এদিকেই আসছে। কাঁধে রাইফেল। তাকিয়ে আছি‚ রেস্তরাঁর মালিক সন্ত্রস্থ হয়ে টেবিলের পাশে এসে হাত কচলে বললেন‚ ‘রেস্তোরাঁ এবার বন্ধ করতে হবে স্যার।’ ‘কেন? সন্ধে হতে তো দেরি আছে এখনও।’ একটু অবাক হয়েই বললাম। ‘আর বলবেন না স্যার।’ হাত কচলে ভদ্রলোক বললেন‚ ‘ইদানীং সন্ধের পরে শহর থেকে কয়েকজন নাকি উধাও হয়ে গেছে। কোনও খোঁজ নেই তাদের। তাই দিন কয়েক হল সন্ধের আগেই রেস্তোরাঁ বন্ধ করার হুকুম হয়েছে। ওরা ওই জন্যই আসছে। আর দেরি করা যাবে না।’ ইতিমধ্যে দ্রুত গোটা কয়েক চুমুক দিয়ে মহিলা আধখাওয়া চায়ের কাপ নামিয়ে রেখেছেন। আমি কিছু বলার আগেই উঠে দাঁড়ালেন। ‘আজ এমনিতেও হাতে একদম সময় নেই মি. বাসু। উঠি বরং।’ আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই উনি হনহন করে বের হয়ে গেলেন। অল্প দূরে পথের উপর বড় এক হাউসিং। পাশাপাশি গোটা কয়েক বাড়ি। হারিয়ে গেলেন তার ওধারে। দাম মিটিয়ে উঠে দাঁড়ালাম আমিও। সেদিন কাজটা যে বোকার মতো হয়ে গিয়েছিল‚ পরে বুঝতে বাকি থাকেনি। মহিলা‚ অর্থাৎ মিসেস নিশা রাও সেদিন রাত গোটা সাতেকের আগেই ফিরে এসেছিলেন। সঙ্গে নতুন একজন পুরুষ। দেখে হাত–পা কামড়াতে বাকি রেখেছি। ওভাবে চলে না এসে মহিলার সঙ্গে থাকলে সুযোগটা আজই নেওয়া যেত। আহাম্মক মতো কাজ হয়ে গেছে। আগেই বলেছি‚ মহিলার ৯ নম্বর বাড়ির জানলার সোজা আমার ঘরেও একটা জানলা আছে। দুটো জানলাই সাধারণত বন্ধ থাকে। পরের দিন কী কারণে আমার জানলাটা খুলেছি‚ দেখি ওদিকের জানলাও হাট করে খোলা। ঝোলানো হালকা পর্দার ফাঁক দিয়ে ঘরের ভিতরটা বেশ দেখা যাচ্ছে। মহিলা ঘরে নেই অবশ্য। জানলাটা ফের ভেজিয়ে দিলেও কৌশলে সামান্য ফাঁক রেখে দিয়েছিলাম। কান দুটো তাই সতর্ক ছিল। দুপুরে ওদিক থেকে দরজা খোলার হালকা আওয়াজে জানলার ফাঁক দিয়ে তাকাতে যা নজরে পড়ল‚ তাতে ভিতরে প্রায় আগুন ধরিয়ে দিয়ে গেল। অনেক দিন শরীরের ভিতর এমন উত্তেজনা টের পাইনি। স্নান সেরে মিসেস রাও অ্যাটাচ বাথ থেকে বের হয়েছেন। সিক্ত উন্মুক্ত শরীর বেয়ে অল্প জল গড়াচ্ছে। উন্মুক্ত জঘন‚ বক্ষদেশ। একটা তোয়ালে নিয়ে মহিলা এরপর অনেকটা সময় ধরে শিক্ত দেহ মুছলেন। ওয়ারড্রব থেকে একটা নাইটি বের করে পরতে গিয়েও হঠাৎ ছুঁড়ে দিলেন মেঝেতে। তারপর সিলিং ফ্যানটা ফুল স্পীডে চালিয়ে দিয়ে ঘরের মাঝে মস্ত আরাম কেদারায় শরীর এলিয়ে শুয়ে পড়লেন। তারপর কতক্ষণ ওইভাবে তাকিয়ে ছিলাম‚ হুঁশ নেই। যখন সাড় ফিরে পেলাম‚ সারা শরীর দরদর করে ঘামছে। কপালের দু’পাশের শিরা দুটো সমানে দপদপ করে লাফিয়ে চলেছে। সেদিন বিকেলে মহিলা যখন বাড়ি থেকে বের হলেন না। সামান্য অন্ধকার নামতেই হানা দিয়েছিলাম। কিন্তু হতাশ হতে হয়েছে। মহিলা দরজা খোলেননি। এ ঘটনা দু’দিন আগের। মহিলা এর মধ্যে আর বের হয়নি। সুতরাং অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় ছিল না। আর তারপরে আজ প্রায় অযাচিত ভাবে এই সুযোগ। উপদ্রুত সীমান্ত শহর। সন্ধের পরেই একেবারেই নিরাপদ নয়। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ বড়ো একটা বের হয় না। তার উপর সাম্প্রতিক কিছু অনভিপ্রেত ঘটনার কথা তো আগেই বলেছি। রাতে চোরের উপদ্রব ইদানীং তাই প্রায় শোনা যায় না। গলির অন্ধকারে মানুষটিকে তাই গোড়ায় সন্দেহ হয়নি। কিন্তু সামান্য লক্ষ্য করতেই ভুল ভাঙল। পা টিপে টিপে লোকটি যেভাবে সন্তর্পণে এগিয়ে আসছে‚ তা সাধারণ মানুষের মতো নয়। নিশিকুটুম। হাতে ছোট এক থলি। সন্দেহ নেই‚ ভিতরে তালা খোলা‚ দেয়াল বেয়ে ওঠার সরঞ্জাম। গলির দিকের জানালার ফাঁক দিয়ে সন্তর্পণে তাকিয়ে ছিলাম। যা ভেবেছি তাই। ঘর ভরতি অত মালপত্র নিয়ে মহিলা একলা থাকে‚ সেটা শহরের চৌর্য মহলে চাউর হতে সময় লাগেনি। তাদেরই কেউ রাতের অন্ধকারে হানা দিয়েছে। লোকটা পা টিপে সন্তর্পণে একসময় ৯ নং বাড়ির সদর দরজায় এসে দাঁড়াল। থলি থেকে কী একটা যন্ত্র বের করে সামান্য চেষ্টায় খুলে ফেলল দরজা। আমিও তৈরি হয়ে নিলাম। ছোট দু’তলা বাড়ি। উপর তলায় দুটি মাত্র ঘর। মহিলা আজও সেই আরাম কেদারায় শুয়ে রয়েছেন। শরীরে জড়ানো হালকা নাইটি। ভেবেছিলাম ঘুমচ্ছেন। কিন্তু ঘরে ঢুকতেই নড়ে উঠলেন উনি। ‘আসুন‚ আসুন মি. বাসু। আমি কিন্তু আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।’ একরাশ খুশি ঝরে পড়ল মহিলার কণ্ঠস্বরে। ‘আমি‚ আমি কিন্তু একদিন এসেছিলাম। অনেকক্ষণ দরজায় নক করে ফিরে যেতে হল!’ সামান্য হলেও উষ্মা আমার গলায়। ‘আমি‚ আমি দরজা খুলে দেব কী করে ভাবলে? একেই তো দাঁতটা ভেঙেছ। বাবুর দৌড় কত দূর‚ দেখব না!’ খিলখিল করে হেসে উঠলেন নিশা রাও। অর্ধ উন্মুক্ত নাইটির ফাঁকে বুকে ঢেউ খেলে গেল। উন্মুক্ত হাত দুটো বাড়িয়ে দিলেন। ‘তুমি‚ তুমি কিন্তু পাশ হয়ে গেছ।’ উন্মুক্ত বাহুমূলে মদির আহ্বান। তবু সাড়া দিতে গিয়েও থমকে গেলাম। মুক্তোর মতো দু’সার দাঁতে রিনরিন করে হাসছে নিশা রাও। দু’পাশের তীক্ষ্ণ ক্যানাইন দাঁত দুটো ঠিকরে বের হয়ে এসেছে। লম্বা হচ্ছে ক্রমশ। ‘আহা রে পুরুষ আমার! দেখি একবার।’ বলতে বলতে নিশা রাও উন্মুক্ত দুই হাতে বুকের মাঝে টেনে নিল আমাকে। কয়েক মুহূর্ত মাত্র। তারপর আবেগঘন কণ্ঠ‚ ‘বাহ্‌‚ শুধু হ্যান্ডসামই নয়‚ ম্যান‚ তোমার শরীর তো দেখছি সাংঘাতিক! নিশা রাওয়ের খিদে মিটবে বোধ হয়। অনেক দিন উপোষী কিন্তু।’ এসময় অযথা সময় নষ্টর অর্থ হয় না। পাশেই বেডরুম। কিন্তু বাধা দিয়ে নিশা রাও উঠে দাঁড়াল হঠাৎ‚ ‘দাঁড়াও বাপু। আমার রাতের খাওয়া হয়নি এখনও। আগে পেটে কিছু দিয়ে নিই। তারপর সারা রাত তো পড়েই রয়েছে। তোমার খিদে পায়নি?’ ‘এ হে! আমি যে একটু আগেই খেয়ে এসেছি ডার্লিং!’ জিব কেটে বললাম‚ ‘তোমার কথা একেবারেই খেয়াল হয়নি। মাই গড‚এখন বের হবে আবার!’ ‘সে কী আর জানি না!’ নিশা রাওয়ের কণ্ঠে একরাশ অভিমান। অধর ফুলে উঠল সামান্য। তবে সামলাতেও সময় লাগল না। অল্প হেসে মুখ খুলল আবার‚ ‘ভেব না বাপু। রাতের খাবার ঘরেই মজুত রাখি আমি। চট করে সেরে আসছি।’ পরের দিন ভয়ানক এক খবরে ছোট রালডিং শহর প্রায় তোলপাড় হয়ে গেল। সকালে গলির ৯ নং বাড়ির দরজা খোলা‚ ভিতরে কোনও সাড়াশব্দ নেই দেখে স্থানীয় মানুষ থানায় খবর দিয়েছিল। পুলিশ ভিতরে ঢুকে যা দেখতে পায়‚ তা ভয়ানক বললেও কম বলা হয়। ঘর যিনি ভাড়া নিয়েছিলেন‚ সেই মিসেস নিশা রাও নিরুদ্দেশ। তবে জিনিসপত্র তেমনই আছে। ডালা খোলা অবস্থায় পড়ে আছে বড় চারটে ট্রাঙ্ক। প্রতিটি ট্রাঙ্কে একটি করে মৃত মানুষ। দেহ শুকিয়ে প্রায় মমি হয়ে রয়েছে। গলায় তীক্ষ্ণ ফলার একাধিক ক্ষতচিহ্ন। তার কতক প্রায় শুকিয়ে গেলেও দুটি বেশ টাটকা। গত কয়েক দিন শহর থেকে যারা নিরুদ্দেশ হয়েছে‚ দেহগুলি তাদের। একটি আবার একজন প্যারামিলিটারি অফিসারের। নিরুদ্দেশ মাত্র দিন কয়েক আগে। এরপর পোস্ট মর্টেমে জানা গিয়েছিল‚ প্রতিটি মৃত্যুই মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে। গলার ক্ষত দিয়ে রক্ত আগেও বের করে নেওয়া হয়েছে। তবে তারা বেঁচেই ছিল তখন। শেষ রক্তবিন্দু টেনে নিয়ে মাত্র গতকালই তাদের মৃত্যু ঘটানো হয়েছে। এছাড়া বাড়ির একতলায় সিঁড়ির পাশে পড়েছিল আরও একটি দেহ। সেটিও শুকিয়ে কাঠ হয়ে রয়েছে। তবে তার গলায় ক্ষতচিহ্ন মাত্র একটি। এই দেহটিকেও সনাক্ত করা হয়েছে। এই শহরেই বাস। চুরির দায়ে বার কয়েক জেল খেটেছে। লোকটা যে বাড়িতে চুরি করতে ঢুকেছিল‚ বোঝা যায় তার যন্ত্রপাতি বোঝাই থলে পাশে পড়ে থাকতে দেখে। রালডিং ছোট শহর। ভয়ানক ব্যাপারটা যথেষ্ট আলোড়ন ফেললেও শহরের বাইরে তেমন প্রচার হয়নি। যাতে আতঙ্ক না ছড়ায়‚ সেজন্য স্থানীয় প্রশাসনের চেষ্টাও একটা কারণ। তাই রালডিংয়ের বাইরে তেমন জানতে পারেনি কেউ। নিরুদ্দেশ নিশা রাওয়ের খোঁজে এরপর শহর জুড়ে চিরুনি তল্লাশি হয়েছিল। তাতে নিশা রাওয়ের খোঁজ মেলেনি। কিন্তু জানা গেছে অন্য এক অদ্ভুত ব্যাপার। নিশা রাওয়ের ৯ নং বাসার লাগোয়া ৯ এ‚ বাড়ি মাস ছয়েক আগে ভাড়া নিয়েছিলেন মি. রমাকান্ত বাসু নামে এক ভদ্রলোক। দিনের বেশিরভাগ সময় ঘরেই থাকতেন। নিরুদ্দেশ তিনিও। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার‚ যে বাড়িতে তিনি থাকতেন‚ তার কোনও ঘরেই বসবাসের চিহ্ন নেই। চারদিকে ঝুল আর পুরু ধুলো ময়লা। মাস কয়েকের মধ্যে সেখানে কেউ বাস করেছে‚ এমন চিহ্ন নেই। অথচ দিন কয়েক আগেও তাঁকে গলির পথে দেখা গেছে। শুধু পুলিশ নয় ব্যাপারটার তদন্ত হয়েছিল প্যারামিলিটারি ফোর্সের দপ্তর থেকেও। কোনও সমাধান হয়নি।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৪৩০ জন


এ জাতীয় গল্প

→ অন্ধকার গলির সেই বাড়িটি
→ অন্ধকার গলির সেই বাড়িটি ১

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • Hafsa
    User ৫ বছর, ৪ মাস পুর্বে
    Ore Baba Re.... Golpo Ta Shokale Porle Valo Hoto.... Kano J Akhon Porte Gelam.....

  • ¤-ইশিকা-¤
    User ৫ বছর, ৪ মাস পুর্বে
    খুবি ভয়ানক গল্প॥॥ তবে ভাল লাগছে পড়ে॥