বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

রহস্য শেষ

"গোয়েন্দা কাহিনি" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান Fahim (০ পয়েন্ট)

X দশ রহস্যময় হাসিটা এখনো ফুটে আছে জাহিদের মুখে।এখন হাসিটা আর রহস্যময় লাগছে না।হাসিটা হচ্ছে বিজয়ের হাসি,আনন্দের হাসি।শিকারকে শিকার করার আনন্দের হাসি।অবশেষে ও সফল হয়েছে রিনক নামের ছেলেটার নাম পৃথিবী থেকে মুছে দিতে।ধীরে ধীরে জাহিদের লোমগুলো ছোট হয়ে আসলো।দাত দুটো অদৃশ্য হয়ে গেল।মুখ থেকে হিংস্র ভাবটাও চলে গেল।পাহাড়ের চূড়োয় সবুজ ঘাসের উপর নেতিয়ে পরল তার দেহটা।দুবার কেপে উঠে নিস্তেজ হয়ে গেল ও।ভ্যাম্পায়ার থেকে মানুষে পরিণত হয়েছে।হঠাৎ করেই তার রিনকের কথা মনে হল।মনে হল তার বন্ধুকে যে সে নিজের হাতে হত্যা করেছে সে কথা।সাথে সাথে উঠে বসার চেষ্টা করল।কিন্তু পারল না।শরীরে আর একটুও শক্তি নেই।সমস্ত শক্তি যেন অদৃশ্য কোনো দানব শুষে নিয়েছে।তারপক্ষে এখন আর কিছু করা সম্ভব না। ড.গ্রিফানোর ঔষদের ক্রিয়া শেষ হয়ে গিয়েছে।জাহিদ সম্পূর্ণ বোধ শক্তি ফিরে পেয়েছে।বন্ধুর কথা মনে পড়তেই দুচোখ বেয়ে অঝরে কান্নার ধারা বয়ে চলল।এখন চিৎকার করে তার কাঁদতে ইচ্ছে করছে।চেষ্টাও করল।কিন্তু গলা দিয়ে কোনো স্বর বের হল না।নিজেকে খুব অপরাধী মনে হল।পারলে সে এখন নিজেই নিজেকে শেষ করে দিত।তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু রিনকের সাথে কাটানো সৃতিগুলো মনে পড়ল।আইসল্যান্ডে বারে বারে যখন সে বিপদে পড়েছিল তখন নিজের জীবন বাজি রেখে রিনক ঝাপিয়ে পরেছিল তাকে বাঁচাতে।ঘোড়ার পিঠ থেকে যখন খাদে পরে গিয়েছিল তখন রিনকিই তাকে বাঁচিয়েছিল।আর আজ কিনা সে নিজের হাতে রিনককে হত্যা করেছে! এ পৃথিবীটা তার কাছে নিরর্থক মনে হল।আর থাকতে চায়না নিষ্ঠুর এ পৃথিবীতে।তবে মনে মনে শপথ নিল, যার কারণে আজ রিনককে মরতে হয়েছে সে ড.গ্রিফানোকে সে শেষ করে ছাড়বে।শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে চেষ্টা করে কোনো মতে উঠে বসল।হাত দিয়ে চোখের পানি মুছল।এখন তার ভেঙে পরলে চলবে না।তাকে এখন প্রতিশোধ নিতে হবে,কঠোর প্রতিশোধ।দূর্বল শরীরটাকে টেনে উঠে দাড়াল।টেনে টেনে চলতে লাগল সামনে।যেদিক দিয়ে পাহাড়ে উঠেছিল সেখানে গিয়ে দাড়াল।দুটো দড়ি নিজ অব্দি চলে গিয়েছে।এগুলো ব্যবহার করেই সে আর রিনক এ পাহাড়ে চড়ে ছিল।দড়ি ধরে পাহাড় থেকে নামা শুরু করল জাহিদ।শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে দড়িটাকে আকড়ে ধরে রেখেছে।কচ্ছোপের গতিতে নিচের দিকে নেমে চলছে।কিন্তু বেশিক্ষণ চলল না তার এ যাত্রা।পাহাড়ের মধ্যখানে আসতেই হাত ছুটে গেল তার।শরীরের ভার বহন করতে পারেনি হাতদুটো।প্রায় ২০ মিটার খাড়াই থেকে সোজা নিচে আছরে পরল গোয়েন্দা প্রধান। মুখে ঠান্ডা পানির আবাশ পেয়ে জ্ঞান ফিরল জাহিদের।ধীরে ধীরে দূর্বল ভঙ্গিতে চোখ মেলে তাকাল।একটা আবছা ছায়ামূর্তি তার মুখের উপর ঝুকে রয়েছে।মাথার পেছনটা ভেজা লাগায় হাত দিয়ে তা বোঝার চেষ্টা করল সে।কিন্তু সেটা রক্ত নাকি পানি তা বুঝতে পারল না।উঠার চেষ্টা করল কিন্তু পারল না।চোখেও অন্ধকার দেখছে।ছায়ামূর্তিটা সে আগের মতই তার উপর ঝুকে রয়েছে।আস্তে আস্তে জাহিদের চোখের সামনে সবকিছু স্পষ্ট হতে লাগল।কিছুক্ষণ বাদে পুরোপুরি স্পষ্ট হয়ে উঠল ছায়ামূর্তির চেহারা।সাথে সাথে ছায়ামূর্তিটাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরল ও। 'রি-রি-রিনক তুমি বেঁচে আছ!', কেঁদে ফেলল জাহিদ।'আমিতো মনে করেছিলাম তুমি....', কান্নায় গলার স্বর আটকে গেল তার। রিনকও জাহিদকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। 'আল্লার রহমতে একটুর জন্য বেঁচে গিয়েছি জাহিদ।', চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝড়তে লাগল রিনকের।একে অপরকে ধরে কাঁদতে লাগল দুই বন্ধু। 'আমাকে ক্ষমা করে দিও', জাহিদ বলল। 'ড.গ্রিফানো আমার রক্তে ভ্যাম্পায়ারের ডিএনএ ইঞ্জেক্ট করেছিল।আর তাই আমি তোমাকে মেরে......' জাহিদের মুখ চেপে ধরল রিনক। 'তোমাকে আর কিছু বলতে হবে না', এখনো কাঁদছে রিনক। 'আমি সব বুঝতে পারছি।' একে অপরকে জড়িয়ে ধরে এখনো কাঁদছে ওরা।এ কাঁদা দুঃখের নয়, এ কাঁদা হচ্ছে আনন্দের।রিনক বেঁচে আছে এর থেকে বড় আনন্দ আর কি হতে পারে।ঝর্ণার পাশে শুয়ে রয়েছে দুকিশোর একে অপরকে ঝড়িয়ে ধরে আর কাঁদছে।বন্ধুত্বে এক অসামান্য দৃষ্টান্ত যেন এটা।আশেপাশের পাখিগুলো অবাক হয়ে দেখতে লাগল বিচিত্র এ দৃশ্য।কিন্তু দুইবন্ধুর সুখের এ কান্না বেশিক্ষণ স্থায়ি হল না।কাল হয়ে এসে দাড়াল ড.গ্রিফানো।ছেলেদের উপর নিজের আবিষ্কারের এক্সপেরিমেন্ট করে বেশ খুশি তিনি।জাহিদের উপর থেকে ড.গ্রিফানো রিনককে টেনে তুলল।পাথর দিয়ে বাড়ি মেরে অজ্ঞান করে ফেলল রিনককে। 'কি খোকা কেমন লেগেছে ভ্যাম্পায়ার হয়ে?', বিশ্রি একটা হাসি দিয়ে জিজ্ঞাসা করল ড.। জাহিদকে কোনো কথার সুযোগ না দিয়ে তিনি আবার বললেন,'এবার পালা তোমার এ বন্ধুটার।আমি ওর রক্তে এখন গিরগিটির ডিএনএ প্রবেশ করাব।' পকেট থেকে একটা ইঞ্জেকশান বের করল খেপা বিজ্ঞানী।অজ্ঞান হয়ে একটা পাথরের উপর পরে রয়েছে রিনক।সেদিকেই সিরিঞ্জ উচিয়ে এগোতে লাগল ড.গ্রিফানো।এ মুহূর্তে অসহায়ভাবে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করার নেই গোয়েন্দা প্রধান জাহিদের।রিনকের রক্তে ঐ ডিএনএটা প্রবেশ করালে কি ঘটবে সেটা ভেবেই শিউরে উঠল সে।রিনকের হাতটা চেপে ধরল বিজ্ঞানী।ইঞ্জেকশানটা দেওয়ার জন্য রেডি হল।ঠিক এমন সময় গাছের আড়াল থেকে ড.এর উপর লাফিয়ে পরল একটা মূর্তি।বিজ্ঞানীর হাত থেকে ছিটকে পরে গেল সরিঞ্জটা। শুরু হল দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি।কেউ কারও থেকে কম নয়।তবে শেষমেষ জুডোর একটা প্যাচ মেরে বিজ্ঞানীকে ঘায়েল করে ফেলল মূর্তিটা।দড়ি দিয়ে তাকে বেধে জাহিদের দিকে এগিয়ে এল মূর্তিটা।একটা ইঞ্জেকশান ঢুকিয়ে দিল তার শরীরে।কিছুক্ষণের মধ্যে ওর শরীরের সমস্ত শক্তি ফিরে আসলো।উঠে বসল সে। 'আরে জনি ভাই আপনি?', অবাক হয়ে গেল জাহিদ। 'আপনি না দানব হয়ে গিয়েছিলেন?' 'তা অবশ্য ঠিক', মাথা নেড়ে বলল জনি। 'তবে ঔষধের ক্রিয়া শেষ হয়ে গিয়েছে।সে থেকেই বিজ্ঞানীকে চোখে চোখে রেখেছি যাতে আর কোনো অঘটন না ঘটায়।কিন্তু তুমি আমাকে চিন কিরে?' 'আমরা আসলে গোয়েন্দা।একটা কেস নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আপনার সম্পর্কে জানতে পেরেছি।আপনি.....' তাকে থামিয়ে দিল জনি। 'এখন আর কিছু বলতে হবে না', জনি বলল। 'তোমাকে আগে হসপিটালে নিতে হবে।তোমার মাথা থেকে রক্ত বেরুচ্ছে।' ইতিমধ্যে রিনকের জ্ঞান ফিরে এসেছে।তবে বেশ দূর্বল হয়ে পড়েছে।জাহিদ আর জনি মিলে তুলল রিনককে।এরপর ওদের দুজনের কাধে ভর দিয়ে দাড়াল রিনক।ড.এর দিকে তাকিয়ে দূর্বল কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করল,'এ খেপা বিজ্ঞানীর কি ব্যবস্থা করবেন জনি ভাই?' 'থাকুক এখানে বেটা', নাক ছিটকাল জনি। 'পুলিশকে খবর দিয়েছি, এসে নিয়ে যাবে।' এগার এর কয়েক সপ্তাহের পর দুইগোয়েন্দা তাদের কেস ফাইল জমা দিতে চীফ সাইফুলের থানায় আসল।হাত বাড়ীয়ে ফাইলটা নিয়ে চোখ বুলিয়েই আতকে উঠল। "'বিদায় রিনক' নাম দিলে কেন কেসটার?" 'ফাইলটা পড়ুন', বলল জাহিদ। 'তাহলেই বুঝতে পারবেন।' ফাইল পড়ায় মন দিল চীফ।পড়া শেষ করে ছেলেদের দিকে তাকাল। 'হু', মাথা দোলালেন তিনি। 'বেশ মর্মান্তিক একটা ঘটনা।তবে রিনক এটা বুঝতে পারছি না এত উপর থেকে পড়ার পরও তুমি অক্ষত রইলে কিভাবে?' 'আসলে আঙ্কেল', রিনক বলল। 'আমি ঝর্ণার নিচে পড়েছিলাম।সেখানটায় পানি গভির থাকায় বেঁচে গেছি।' 'আর জাহিদ তুমি?', 'আমিও স্যার', জবাব দিল জাহিদ। 'ঝর্ণাতেই পড়েছি।তবে একটা পাথরে ঠুকে গিয়েছিল মাথাটা।উঠার সময় তা খেয়াল করিনি।তখনতো আমি রিনকের রক্ত.......' চুপ হয়ে গেল গোয়েন্দা প্রধান।চোখ দিয়ে পানি ঝড়তে লাগল।এগিয়ে আসল রিনক।জাহিদের চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বলল,'থাক জাহিদ যা হওয়ার হয়েছে, সেটা ভেবে লাভ নেই।এখন চল কিছু খাওয়া যাক।আসলে গত কয়েকদিন ধরে ভালো করে কিছু খেতেই পারিনি।' রিনকের কথায় হেসে উঠল চীফ এবং জাহিদ। সমাপ্ত


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৩০৬ জন


এ জাতীয় গল্প

→ রহস্যময় শয়তানি বিদ্যা : ভয়ঙ্কর ব্ল্যাক ম্যাজিক (শেষ পর্ব)
→ অদ্ভূত : এক রহস্যময় জীব (শেষ পর্ব)
→ রহস্যময় বই (শেষ পর্ব)
→ রহস্যেভরা অভিযান শেষ পর্ব
→ রহস্যেময় অভিযান শেষ পর্ব
→ প্রতিযোগিতার রহস্য (part 3 শেষ পর্ব)
→ রহস্যময় পুতুল ৫ম ও শেষ পর্ব
→ জমিদার বাড়ি রহস্য ৯ম এবং শেষ পর্ব
→ রহস্যময় পুতুল পর্ব (5)শেষ পর্ব
→ মিত্তির বাড়ির রহস্য—(২ ও শেষ পর্ব )
→ "পানি রহস্য"(শেষ পর্ব)
→ রহস্যভেদী (পন্ঞ্চম/শেষ পর্ব)
→ রহস্যময় সেই বাড়িটা-০৭ (শেষ)
→ ঢাকা রহস্য উন্মোচিত – পরিচ্ছেদ ৫ (শেষ)

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • ¤-ইশিকা-¤
    User ৫ বছর, ৪ মাস পুর্বে
    অসাধারন,,,অনেক ভাল লাগল গল্পটা ,এরকম সুন্দর একটা গল্প দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ

  • ¤-ইশিকা-¤
    User ৫ বছর, ৪ মাস পুর্বে
    অসাধারন,,,অনেক ভাল লাগল গল্পটা ,ক

  • ¤-ইশিকা-¤
    User ৫ বছর, ৪ মাস পুর্বে
    অসানারন,,,অনেক ভাল লাগল গল্পটা ,ক