বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

কেপলার টুটুবি {6}

"সাইন্স ফিকশন" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান ☠Sajib Babu⚠ (০ পয়েন্ট)

X 》》মুহম্মদ জাফর ইকবাল《《 টুরান চোখ খুলে তাকাল। তার ঘুম ভেঙে গেছে–ঠিক করে বলতে হলে বলতে হবে তার ঘুম ভাঙিয়ে তাকে জাগিয়ে তোলা হয়েছে। যার অর্থ তারা হয়তো কেপলার টুটুবি গ্রহে পৌঁছে গেছে। মাঝখানে কতোটুকু সময় পার হয়েছে কে জানে? এক বছর? একশ বছর? এক লক্ষ বছর? কী আশ্চর্য! টুরান নিজের হাত নাড়ানোর চেষ্টা করল, পারল না। সেটি এখনো শিথিল হয়ে আছে। সে জানে ঘুম ভাঙার পর বেশ কিছুক্ষণ তার শরীর শিথিল হয়ে থাকবে, সেখানে জোর পাবে না। ধীরে ধীরে তার শরীরে শক্তি ফিরে পাবে। টুরান ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করে থাকে। ক্যাপসুলের ভেতর মিষ্টি গন্ধের একটি শীতল বাতাস ছড়িয়ে পড়ছে–এটি নিশ্চয়ই তার শরীরকে সতেজ করে তুলবে। খুব হালকা একটি সঙ্গীতের শব্দ ভেসে আসছে। মিষ্টি একটা সঙ্গীত, মনে হয় বহুদূরে কোনো একটা নদীর তীরে সে দাঁড়িয়ে আছে আর দূরে কোথাও কোনো একজন নিঃসঙ্গ শিল্পী নদীতীরে একটা গাছে হেলান দিয়ে বাঁশি বাজাচ্ছে। টুরান তার চোখ বন্ধ করল। বুক ভরে কয়েকবার নিঃশ্বাস নিল, ভেতরে ভেতরে সে এক ধরনের উত্তেজনা অনুভব করছে। ক্যাপসুলের ভেতর টুক করে একটা শব্দ হল, সঙ্গীতটি বন্ধ হয়ে গেছে। ভেতরে একটা সবুজ আলো জ্বলে উঠেছে। টুরান তার হাতটি চোখের সামনে নিয়ে এল, তার শরীরে শক্তি ফিরে এসেছে। সে হাত দিয়ে ক্যাপসুলের ঢাকনাটি স্পর্শ করতেই সেটা নিঃশব্দে খুলে গেল। টুরান সাবধানে ক্যাপসুল থেকে বের হয়ে এসে ক্যাপসুলের পাশে দাঁড়াল। সে দাঁড়াতে পারছে, ভেসে যাচ্ছে না যার অর্থ মহাকাশযানটি তার অক্ষের উপর ঘুরছে, মহাকাশযানের মাঝে কৃত্রিম একটা মাধ্যাকর্ষণ তৈরি করে রাখা আছে। টুরান মাথা ঘুরিয়ে ডানদিকে তাকাতেই সে চমকে ওঠে। মহাকাশযানের দেয়ালে হেলান দিয়ে মেঝেতে ইহিতা বসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। বসার ভঙ্গিটি দুঃখি মানুষের মতো, দেখে মনে হয় কিছু একটা নিয়ে ইহিতা গভীর বিষাদে ড়ুবে আছে। টুরান জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে? কিছু হয় নি। তুমি এমন করে বসে আছ কেন? আমি তো এমন করেই বসি। টুরান বলল, আমরা কেপলার টুটুবিতে পৌঁছে গেছি, মানুষের নতুন সভ্যতা শুরু করব, তোমার মাঝে তার উত্তেজনা দেখছি না। আমরা কেপলার টুটুবিতে পৌঁছাই নি। আমাদের যাত্রা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। টুরান চমকে ওঠে বলল, কী বলছ তুমি? আমরা সৌরজগতের ভেতরেই আছি। টুরান উৎকণ্ঠিত গলায় বলল, কেন? আমাদের যাত্রা কেন বন্ধ করে দেয়া হল? ইহিতা একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আমি জানি না। ট্রিনিটি কিছু বলতে রাজি হচ্ছে না। যখন সবাই জেগে উঠবে তখন বলবে তার আগে বলবে না। অন্যদের কখন জাগাবে? তোমাকে কেন আগে জাগিয়েছে? আমাকে আগে জাগায় নি, সবাইকে একই সাথে জাগানো শুরু করেছে। একেকজনের শরীর একেকভাবে কাজ করে তাই একেকজন একেক সময়ে জেগে উঠছে। টুরান হেঁটে হেঁটে অন্য ক্যাপসুলগুলোর কাছে যায়, ভেতরে কী হচ্ছে বোঝার চেষ্টা করে আবার ইহিতার কাছে ফিরে এসে বলল, আমার কাছে পুরো ব্যাপারটি খুব দুর্বোধ্য মনে হচ্ছে। ইহিতা কথাটার কোনো উত্তর দিল না। টুরান তখন বলল, আমার কাছে মনে হচ্ছে খুব খারাপ কিছু ঘটেছে। খুব খারাপ এবং ভয়ংকর। সেটি কী হতে পারে? আমি জানি না। সবাই ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর ট্রিনিটি সবাইকে একটা ছোট হলঘরে নিয়ে এলো। ঘরটিতে বসার জন্যে কার্যকর চেয়ার, চেয়ারের সামনে ডেস্ক এবং ডেস্কে ধূমায়িত খাবার। ক্লদ ছাড়া আর কেউ সেই খাবারে উৎসাহ দেখাল না। টুরান বলল, ট্রিনিটি, তুমি ভূমিকা ছেড়ে দিয়ে সোজাসুজি কাজের কথায় চলে এসো। ট্রিনিটি বলল, আমি আসলে ভূমিকা করছি না। সোজাসুজি কাজের কথায় চলে এসেছি। আমি তোমাদেরকে একটি দুঃসংবাদ দেবার জন্যে ডেকে তুলেছি। কেউ কোনো কথা না বলে দুঃসংবাদটি শোনার জন্যে অপেক্ষা করতে থাকে। ট্রিনিটি ভাবলেশহীন গলায় বলল, পৃথিবীটি রবোমানবেরা দখল করে নেবে সেই আশংকায় এই মহাকাশযানে করে তোমাদের সাতজনের নেতৃত্বে বিশালসংখ্যক মানুষ, মানুষের দ্রুণ, জিনোম, পশুপাখি, গাছপালা পাঠানো হচ্ছিল। এর উদ্দেশ্য মানুষ দূর মহাকাশের কোনো একটি উপযুক্ত গ্রহে বসতি স্থাপন করবে। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের কথা কিছুক্ষণ আগে পৃথিবী থেকে আমাকে জানানো হয়েছে তোমাদের সাতজনের মাঝে দুইজন রবোমানব। ক্লদ ছাড়া অন্য সবাই ভয়ানক চমকে উঠল। ক্লদ ঠিক সেই মুহূর্তে তার খাবারের মাঝে একটা লাল চেরি আবিষ্কার করেছে। সে এটা খাবে না কি এটা দিয়ে খেলবে সেটি নিয়ে মনস্থির করতে পারছিল না। টুরান কাঁপা গলায় বলল, কোন দুইজন? আমি জানি না। পৃথিবীর মানুষও জানে না। এটি জানলে পুরো ব্যাপারটা খুব সহজ হয়ে যেতো। সবাই সবার দিকে তাকাল, চোখে চোখ পড়তেই আবার তারা নিজেদের দৃষ্টি সরিয়ে নিল। ইহিতা জিজ্ঞেস করল, আমাদের ভেতর যারা রবোমানব তারা নিজেরা কী জানে যে তারা রবোমানব? রবোমানবের মস্তিষ্কের থ্যালামাসে একটা অত্যন্ত ক্ষুদ্র ইমপ্ল্যান্ট বসানো হয় যেটা মস্তিষ্ককে পরিবর্তন করে, ওভার ড্রাইভ করে। তোমাদের দুজনের সেই ইমপ্লান্ট কার্যকর করা হয়ে থাকলে তোমরা ইতোমধ্যে জান যে তোমরা রবোমানব। ইহিতা জানতে চাইল, সেটা কী কার্যকর করা হয়েছে? আমি জানি না। এই মহাকাশযানে সেটা পরীক্ষা করার উপায় নেই। নীহা জিজ্ঞেস করল, এখন কী করা হবে? আমরা কী আবার পৃথিবীতে ফিরে যাব? না। ট্রিনিটি কয়েক মুহূর্ত অপেক্ষা করে বলল, তোমাদের সাতজনকে এই মহাকাশযান ছেড়ে চলে যেতে হবে। সবাই চমকে উঠল, সুহা আর্তচিৎকার করে বলল, কী বলছো! আমি কী বলেছি তোমরা সেটি শুনতে পেয়েছ, তারপরেও আমি আবার বলি। তোমাদের এই সাতজনকে মহাকাশযান ছেড়ে চলে যেতে হবে। আমার এই মহাকাশযানের নিরাপত্তার জন্যে এখানে কোনো রবোমানবকে স্থান দেয়া যাবে না। সুহা হাহাকারের মতো শব্দ করে বলল, আমরা কোথায় যাব? আমি আমার এই শিশু বাচ্চাকে নিয়ে কোথায় যাব? ক্লদ এই ছোট হলঘরের ভেতরের উত্তেজনাটুকু টের পেতে শুরু করেছে। সে তার খাওয়ার প্যাকেটটি থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সবার মুখের দিকে তাকিয়ে কী হচ্ছে বোঝার চেষ্টা করতে লাগল। ট্রিনিটি বলল, আমরা পৃথিবী থেকে খুব বেশিদূর যাই নি। গ্রহাণু বেল্ট পার হয়েছি মাত্র। গতিপথ পরিবর্তন করে আমি মহাকাশযানটিকে মঙ্গলগ্রহ ঘিরে একটি কক্ষপথে নিয়ে এসেছি। তোমাদের একটা স্কাউটশিপে করে আমি মঙ্গলগ্রহে পাঠিয়ে দিচ্ছি। টুকন চিৎকার করে বলল, মঙ্গলগ্রহে? হ্যাঁ মঙ্গলগ্রহে। তুমি কী জান মঙ্গলগ্রহ হচ্ছে পৃথিবীর ভাগাড়। মানুষ যখন পুরোপুরি সভ্য হয় নি তখন ভয়ংকর পরীক্ষাগুলো করেছে মঙ্গলগ্রহে? এখানে রয়েছে তেজস্ক্রিয়তা, রয়েছে বিষাক্ত কেমিক্যাল। শুধু তাই না এখানে জৈবিক পরীক্ষা হয়েছে। নতুন প্রাণ সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে। এরকম ভয়ংকর একটা জায়গায় আমাদের পাঠাবে? হ্যাঁ। ট্রিনিটি শান্ত গলায় বলল, আমার কোনো উপায় নেই। আমি যখন জেনেছি তোমাদের দুজন রবোমানব এবং কোন দুজন রবোমানব আমার জানা নেই তখন এছাড়া আমার কিছু করার নেই। একটি কম্পিউটার হিসেবে আমাকে কোনো মানুষকে হত্যার ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। যদি দেয়া হতো তাহলে শীতলঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় সাতজনকেই হত্যা করে আমি নিশ্চিত হয়ে যেতাম। টর বিড়বিড় করে বলল, ভাগ্যিস ক্ষমতা দেয়া হয় নি। ক্ষমতা ছাড়াই তুমি যা ইচ্ছে তাই করতে পার। ইহিতা বলল, ট্রিনিটি, তুমি কী বলছ সেটা চিন্তা করেছ? চিন্তা প্রক্রিয়াটি মানুষের। আমি মানুষ নই, তাই চিন্তা করতে পারি না। তবে যে কোনো বিষয় আমি আমার মতো বিশ্লেষণ করতে পারি। কাজেই আমি যেটা বলেছি সেটা অনেক ভাবে বিশ্লেষণ করে বলেছি। না। ইহিতা মাথা নাড়ল, তুমি পুরোপুরি বিশ্লেষণ কর নি। তুমি বলেছ মানুষকে হত্যা করার ক্ষমতা তোমাকে দেয়া হয় নি। কিন্তু যদি আমাদের ভয়ংকর বাস-অযোগ্য মঙ্গলগ্রহে পাঠিয়ে দাও আমরা কিন্তু সবাই মারা যাব। রবোমানব আর সাধারণ মানুষ সবাই মারা যাব। কাজেই তুমি আসলে আমাদের হত্যাই করছ। ট্রিনিটি গমগমে গলায় বলল, তোমার বক্তব্য সঠিক নয়। মঙ্গলগ্রহে অনেকবার মানুষ এসেছে গেছে। এখানে তারা অনেক এক্সপেরিমেন্ট করেছে। এখানে অনেক জায়গায় মানুষের পরিত্যক্ত আবাসস্থল আছে, সেখানে খাবার আছে, রসদ আছে। তোমরা ইচ্ছে করলেই একরম একটি দুটি আবাসস্থল খুঁজে বের করে সেখানে আশ্রয় নিতে পার। সেখানে তোমরা মানুষেরা এবং রবোমানবেরা নিজেদের মাঝে বোঝাপাড়া করে নিতে পারবে। টুরান বলল, আমরা সেই বোঝাঁপড়া এখানে বসে করতে পারি। ট্রিনিটি বলল, না। ইহিতা বলল, এটি সরাসরি আমাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া। ট্রিনিটি বলল, আমার কিছু করার নেই। সুহা হাহাকার করে বলল, আমার সাথে একটি ছোট শিশু। একটা নিরাপদ জীবনের জন্যে আমি ছোট শিশুকে নিয়ে বের হয়েছি। আমাদের এই বিপদের মাঝে ঠেলে দিয়ো না। ট্রিনিটি বলল, স্কাউটশিপটা প্রস্তুত করে রাখা আছে। তোমরা সেখানে ওঠো। নীহা অবাক হয়ে বলল, এখনই? হ্যাঁ। এখনই। আমরা যদি রাজি না হই। ট্রিনিটি বলল, অবশ্যই রাজি হবে। টরকে জিজ্ঞেস করে দেখো আমার প্রস্তাবে রাজি না হয়ে থাকা সম্ভব কী না! ইহিতা বলল, আমাদের পুরো ব্যাপারটি ভেবে দেখার সময় দিতে হবে। আমরা মানুষ, এই মহাকাশযানটির নেতৃত্ব আমাদের দেয়া হয়েছে। তুমি একটা কম্পিউটার, তোমায় আমাদের সাহায্য করার কথা। আমাদের আদেশ নির্দেশ মেনে চলার কথা। আমাদের পুরো ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করতে দাও, ভাবনা-চিন্তা করতে দাও। তোমরা মানুষ—এবং রবোমানব, শুধুমাত্র এই কারণে আমি তোমাদের ভাবনা-চিন্তা করতে দেব না। তার কারণ তোমরা এমন কোনো একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি করে ফেলতে পারবে যার কারণে আমি তোমাদের রেখে দিতে বাধ্য হব। আমি সেরকম পরিস্থিতিতে যেতে রাজি নই। তোমরা স্কাউটশিপে উঠে যাও। ঘরের ভেতরে যারা আছে তারা সবাই একে অপরের দিকে তাকাল। সুহা কাতর গলায় বলল, তোমাদের ভেতর যে রবোমানব সে নিজের পরিচয় দিয়ে দাও। দোহাই তোমাদের। আমাদের সবাইকে মেরে ফেলো না? নীহা বলল, রবোমানবদের বুকের ভেতর কোনো ভালোবাসা থাকে না। তারা তোমার কথাকে কোনো গুরুত্ব দেবে না। তারা একটা উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে এসেছে। সেই উদ্দেশ্য সফল না হওয়া পর্যন্ত তারা এখান থেকে যাবে না। ট্রিনিটি গমগমে গলায় বলল, তোমরা স্কাউটশিপে উঠে যাও। এক মিনিটের মাঝে স্কাউটশিপে উঠে না গেলে আমি জোর করতে বাধ্য হব। ক্লদ জিজ্ঞেস করল, মা, আমরা স্কাউটশিপে করে কোথায় যাব? মঙ্গলগ্রহে। ক্লদের মুখে হাসি ফুটে উঠল, বলল, কী মজা হবে। তাই না মা? সুহা অসহায়ভাবে একবার ক্লদের মুখে আরেকবার সবার মুখের দিকে তাকাল। ট্রিনিটি আবার বলল, দশ সেকেন্ড পার হয়ে গেছে। আর পঞ্চাশ সেকেন্ড বাকি আছে। সবাই পাথরের মূর্তির মতো বসে রইল। ট্রিনিটি বলল, আর চল্লিশ সেকেন্ড। সবার আগে ইহিতা ওঠে দাঁড়াল। তার দেখাদেখি অন্য সবাই। ইহিতা ফিসফিস করে বলল, ট্রিনিটি, তুমি মানুষ হলে আমি তোমাকে অভিশাপ দিতাম। কিন্তু তুমি একটি নির্বোধ কম্পিউটার, তোমাকে অভিশাপ দেয়া অর্থহীন। তবু আমি অভিশাপ দিচ্ছি। তুমি যেন মানুষের হাতে ধ্বংস হও। ট্রিনিটি বলল, পঁয়ত্রিশ সেকেন্ড। স্কাউটশিপটি গর্জন করতে করতে নিচে নামতে থাকে। যতদূর দেখা যায় বিস্তৃত লালাভ একটি গ্রহ, লালচে মেঘ, নিচে প্রবলবেগে ধূলিঝড় বয়ে যাচ্ছে। স্কাউটশিপটির তীব্র ঝাকুনি সহ্য করতে করতে নীহা বলল, মঙ্গল গ্রহ সৌরজগতের চতুর্থ গ্রহ এর ভর পৃথিবীর দশভাগের এক ভাগ, ব্যাসার্ধ পৃথিবীর অর্ধেক। তাই এখানে আমাদের ওজন হবে সত্যিকার ওজনের মাত্র তিনভাগের এক ভাগ। টুরান বলল, যতক্ষণ মঙ্গলগ্রহে থাকব সারাক্ষণ আমাদের বায়ুনিরোধক পোশাক পরে থাকতে হবে। সেটি অত্যন্ত বিশেষ ধরনের পোশাক, তার ওজন দিয়ে আমাদের ওজন একটু বাড়ানো হবে, তারপরেও আমাদের সবসময়ই নিজেদের হালকা মনে হবে। নীহা মনিটরে কিছু তথ্য দেখে বলল, মঙ্গলগ্রহের বায়ুমণ্ডল খুবই হালকা, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মাত্র একশ ভাগের এক ভাগ। বাতাসের পঁচানব্বই ভাগই কার্বনডাই অক্সাইড! তিন ভাগ নাইট্রোজেন। সুহা জানতে চাইল, অক্সিজেন? অক্সিজেন নেই? খুবই কম। এক হাজার ভাগের এক ভাগের মতো। টুরান বলল, আমাদের পোশাকে সেই অক্সিজেন আর নাইট্রোজেন আলাদা করে নিঃশ্বাস নেবার জন্যে দেয়া হবে। টর জিজ্ঞেস করল, পানি আছে? প্রচুর পানি, কিন্তু সেগুলো দুই মেরুতে জমা আছে। বরফ হিসেবে। ইহিতা বলল, কিছু মাথা খারাপ বিজ্ঞানী মেরু অঞ্চলের বরফ গলিয়ে পানির প্রবাহ তৈরি করে এখানে প্রাণের বিকাশ ঘটাতে চেয়েছিল। সুহা জানতে চাইল, প্রাণের বিকাশ হয়েছিল? ইহিতা মাথা নেড়ে বলল, পরিষ্কার করে কেউ বলতে পারে না। এটা হচ্ছে পৃথিবীর অন্ধকার জগতের সময়ের ঘটনা। সারা পৃথিবী তখন নানারকম দেশে ভাগ হয়েছিল। কেউ গরিব কেউ বড়লোক। শক্তি বলতে তেল গ্যাস-এক দেশ তেল গ্যাসের জন্যে আরেক দেশ দখল করে ফেলত। সেই সময় পৃথিবীতে কোনো নিয়ম নীতি ছিল না, যার জোর সে পৃথিবী শাসন করত। সেই সময়ে উন্নত দেশের কিছু মাথাখারাপ বিজ্ঞানী মঙ্গলগ্রহের উপযোগী প্রাণ তৈরি করার চেষ্টা করেছিল। কেউ বলে পেরেছিল, কেউ বলে পারে নি। নীহা জানতে চাইল, তুমি এতো কিছু কেমন করে জান? কৌতূহল। স্কাউটশিপটা একটা ঝড়ো হাওয়ার মাঝে আটকা পড়ে যায়, ভয়ানক ঝাকুনি হতে থাকে। ভেতরের সবাই সিটের সামনে ব্র্যাকেটগুলো ধরে তাল সামলানোর চেষ্টা করে। টর একটা কুৎসিত গালি দিয়ে বলল, মঙ্গলগ্রহ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারলে হয়। শুধু ক্লদ আনন্দে চিৎকার করে ওঠে, তার কাছে মনে হচ্ছে পুরো ব্যাপারটাই হচ্ছে একটা খেলা। স্কাউটশিপটা পাথরে ধাক্কা খেতে খেতে শেষ পর্যন্ত থেমে গেল। টুরান বুকের ভেতর আটকে থাকা একটা নিঃশ্বাস বের করে দিয়ে বলল, সবাই ঠিক আছ? সেটা নির্ভর করে ঠিক থাকা বলতে কী বোঝায় তার ওপর। নীহা বলল, বেঁচে আছি। আপাতত বেঁচে থাকা মানেই হচ্ছে ঠিক থাকা। ইহিতা বলল, কেউ একজন স্কাউটশিপের লগটা পড়ে বলবে আমরা এখন কোথায়। কী করব? পঁচিশ ডিগ্রি অক্ষাংশ যেটা এখন গ্রীষ্মকাল। তাপমাত্রা শূন্যের নিচে পাঁচ ডিগ্রি, যেটা এখানকার হিসেবে বেশ গরম। টুরান বলল, খুব কাছাকাছি মানুষের একটা আশ্রয়স্থল থাকার কথা, যে জন্যে স্কাউটশিপটা এখানে থেমেছে। হ্যাঁ। মনিটরে সেটা দেখতে পাচ্ছি। এখানে কেউ নেই, আমরা মনে হয় আশ্রয় নিতে পারব। নীহা বাইরে তাকিয়ে বলল, আমাদের স্কাউটশিপটা রীতিমতো একটা ধুলার ঝড় তৈরি করেছে। ধুলাটুকু সরে গেলে মনে হয় সূর্যটাকে দেখতে পাব। আকারে ছোট দেখাবে। ইহিতা বলল, আকার নিয়ে আমি মাথা ঘামাচ্ছি না, সূর্যটাকে দেখলে অন্তত মনে হবে পরিচিত কিছু একটা দেখছি! স্কাউটশিপের জানালা দিয়ে সবাই বাইরে তাকিয়েছিল, ধুলো সরে গেলে তারা বিস্তীর্ণ প্রান্তর দেখতে পেল। যতদূর চোখ যায় লাল পাথরে ঢাকা, ঘোলাটে লাল আকাশে একটি লালচে সূর্য। রুক্ষ পাথুরে প্রান্তর দেখে মন খারাপ হয়ে যায়। রুহান বলল, আমরা এই ছোট স্কাউটশিপে বেশিক্ষণ থাকতে পারব না। মানুষের ক্যাম্পে আশ্রয় নিতে হবে। নীহা বলল, তাহলে দেরি না করে চল রওনা দিই। রওনা দেয়ার আগে অনেক প্রস্তুতি নিতে হবে। আমাদের সবার দীর্ঘ সময়ের জন্যে স্পেসস্যুট পরে নিতে হবে। ইহিতা বলল, অন্তত স্কাউটশিপে স্পেসস্যুটগুলো দেয়ার জন্যে ট্রিনিটিকে একটা ধন্যবাদ দিতে হয়। টর বলল, ট্রিনিটির নাম কেউ মুখে আনবে না। আমি নিজের হাতে একদিন ট্রিনিটিকে খুন করব। ট্রিনিটি নিয়ে আরো আলাপ শুরু হয়ে যাবার উপক্রম হতে চলছিল কিন্তু তখন ক্লদ চিৎকার করে বলল, আমি স্কাউটশিপে থাকতে চাই না। আমি বের হতে চাই। রুহান বলল, শুধু তুমি নও। ক্লদ আমরা সবাই বের হতে চাই। তাহলে আমরা কেন বের হচ্ছি না? টুরান নরম গলায় বলল, স্পেসস্যুটটা পরেই আমরা বের হব। একটু সময় দাও। দেখা গেল একটু সময় দিয়ে হল না। সাতজন মানুষের স্পেসস্যুট পরতে বেশ খানিকক্ষণ সময় লেগে গেল। সবচেয়ে ঝামেলা হলো ক্লদকে স্পেসস্যুট পরাতে। নুট এমনিতে কোনো কথা বলে না কিন্তু ক্লদকে স্পেসস্যুটে পরানোর সময় সে তাকে সাহায্য করল। স্পেসস্যুট পরার পর স্বচ্ছ নিওপলিমারের একটা আবরণ তাদের শরীরটাকে পুরোপুরি ঢেকে ফেলল। মাথায় একটা হেলমেট, সেই হেলমেটের সাথে যোগাযোগ মডিউলে একে অন্যের সাথে কথা বলার ব্যবস্থা। পিঠে অক্সিজেন সিলিন্ডার। বায়ুমণ্ডল থেকে যেটুকু অক্সিজেন পাওয়া সম্ভব সেটাকেই সংগ্রহ করে ক্রমাগত সিলিন্ডারে ভরে দেয়ার একটা পাম্প কাজ করে যাচ্ছে। স্কাউটশিপ থেকে বের হওয়ার মুহূর্তটি ছিল সবচেয়ে অনিশ্চিত মুহূর্ত। নিরাপত্তার জন্যে সবাইকে হাতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বের হতে হবে। কেউ মুখ ফুটে বলছে না কিন্তু সবাই জানে তাদের ভেতর যে দুজন রবোমানব তারা হাতে আগ্নেয়াস্ত্রটি নিয়েই সেটা ঘুরিয়ে অন্য সবাইকে শেষ করে দিতে পারে। যারা মানুষ তারা জানে না এখানে কোন দুজন রবোমানব, কিন্তু যারা রবোমানব তারা খুব ভালো করে জানে এখানে কারা মানুষ। সবাই নিঃশ্বাস বন্ধ করে হাতে নিয়ে নামছে, কেউ কাউকে বিশ্বাস করছে না। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে একে অন্যের দিকে তাকিয়ে আছে। তীব্র উত্তেজনাটুকু কমিয়ে দিল ক্লদ, সে বলল, আমাকে? আমাকে অস্ত্র দেবে না? সুহা বলল, বাবা, এটা খেলনা না। এটা সত্যিকারের অস্ত্র। আমি জানি এটা খেলনা না। আমি খুব সাবধানে ধরে রাখব। উঁহু। বড় না হওয়া পর্যন্ত হাতে অস্ত্র নেয়া নিষেধ। টুরান তার দিকে একটা ডিটেক্টর এগিয়ে দিয়ে বলল, তুমি বরং এটা নিতে পার। এটা কী? এটা তেজস্ক্রিয়তা মাপার একটা ডিটেক্টর। মঙ্গল গ্রহে পৃথিবী থেকে অনেক তেজস্ক্রিয়তা ফেলা হয়েছে। আমরা যেন ভুল করে কোনো তেজস্ক্রিয় জায়গায় চলে না যাই সেজন্যে এটা আমাদের সাথে রাখতে হবে। আশপাশে তেজস্ক্রিয় কিছু থাকলেই এটা কট কট শব্দ করবে। হাতে সত্যিকারের একটা অস্ত্র নিতে না পারার দুঃখটা ক্লদের খানিকটা হলেও ঘুচে গেল। সে ডিটেক্টরটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চারদিকে দেখতে থাকে কোথাও কোনো তেজস্ক্রিয় পদার্থ পাওয়া যায় কি না। স্কাউটশিপের গোল দরজা বন্ধ করে সাতজনের দলটা হাঁটতে শুরু করে। স্পেসস্যুটের ভেতর বাতাসের তাপ, চাপ, জলীয় বাষ্পের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে রাখার পরও তারা বাইরের হিমশীতল পরিবেশটুকু অনুভব করে। একধরনের ঝড়ো বাতাস বইছে, মাঝে মাঝেই চারদিকে ধূলায় ধূসর হয়ে যাচ্ছিল তার মাঝে তারা সারি বেঁধে সামনে এগিয়ে যেতে থাকে। স্পেসস্যুটের পোশাকে নানা ধরনের ভারী যন্ত্রপাতি তারপরেও তাদের নিজেদের অনেক হালকা মনে হয়, প্রতিটি পদক্ষেপ দেবার সময় তারা খানিকটা উপরে ওঠে যায়। যদিও তারা হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে কিন্তু দেখে মনে হয় লাফিয়ে লাফিয়ে যাচ্ছে। কতোক্ষণ গিয়েছে জানে না তখন হঠাৎ করে ক্লদের আনন্দধ্বনি শোনা গেল, পেয়েছি! পেয়েছি! ইহিতা জানতে চাইল, কী পেয়েছ? তেজস্ক্রিয়তা। টুরান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, তুমি কোথায় তেজস্ক্রিয়তা পেয়েছ? এই তো আমার ডিটেক্টরে। এই দেখ কট কট শব্দ করছে। সবাই অবাক হয়ে শুনল সত্যিই ডিটেক্টরটা কট কট শব্দ করছে। নীহা ভয় পাওয়া গলায় বলল, আমরা কি ভুল করে কোনো তেজস্ক্রিয় এলাকায় চলে এসেছি? টুরান মাথা নাড়ল, বলল, না। আমি নিশ্চিতভাবে পরীক্ষা করে দেখেছি। আশপাশে কোনো তেজস্ক্রিয়তা নেই। তাহলে এখন কোথা থেকে আসছে? ইহিতা উপরের দিকে তাকাল, বলল, হয়তো বাতাসে ভেসে আসছে? টুরান ডিটেক্টরের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, না এটা উপর থেকে আসছে। এটা নিচে থেকে আসছে। হঠাৎ করে ডিটেক্টরের শব্দ বেড়ে যেতে শুরু করে। সাথে সাথে তারা পায়ের নিচে একটা কম্পন অনুভব করে। মাটির নিচে দিয়ে কিছু একটা তাদের দিকে আসছে। সবাই তাদের অস্ত্র হাতে তুলে নিল। কম্পনের সাথে সাথে এবার তারা সামনে পাথরের মাঝে কিছু একটা নড়ে যেতে দেখল। মাটির নিচে দিয়ে কিছু একটা তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। সবাই নিঃশ্বাস বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে, তাদের মনে হতে থাকে যে কোনো মুহূর্তে পাথর ভেদ করে কিছু একটা ভয়ংকর চিৎকার করে বের হয়ে আসবে, কিন্তু কিছু বের হলো না। তাদের পায়ের নিচে দিয়ে সেটা ধীরে ধীরে দূরে সরে গেল। ডিটেক্টরে তেজস্ক্রিয়তার শব্দটা কমতে কমতে এক সময় মিলিয়ে গেল। সুহা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল, এটা কী? ইহিতা বলল, কোনো একটা প্রাণী। মঙ্গলগ্রহে প্রাণী আছে? আগে ছিল না। মনে হচ্ছে এখন আছে। কাছে এলে তেজস্ক্রিয়তা বেড়ে যায় কেন? নিশ্চয়ই শক্তি পায় তেজস্ক্রিয়তা থেকে। এটা যেহেতু তেজস্ক্রিয় পদার্থের ভাগাড়, শক্তিটাও এখান থেকে পাবে সেটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু সেটা কীভাবে সম্ভব? তেজস্ক্রিয়তার শক্তি অনুপরমাণুকে ছিন্নভিন্ন। করে দিতে পারে। এই প্রাণীর দেহ তাহলে কী দিয়ে তৈরি? এটা নিশ্চয়ই আমাদের পরিচিত প্রাণীর মতো না। অন্যরকম। কীভাবে অন্যরকম? জানি না। হয়তো প্রাণী আর যন্ত্রের একটা হাইব্রিড। টুরান বলল, এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে চল অগ্রসর হই। চার দেওয়াল আর ছাদের নিচে থাকলে মনে হয় একটু ভরসা পাব। হ্যাঁ চল। সবাই আবার অগ্রসর হতে থাকে। ক্লদ জিজ্ঞেস করল, মঙ্গল গ্রহের প্রাণীটা দেখতে কেমন হবে? সুহা বলল, আমি জানি না। জানতেও চাই না। সেটা যেন আমরা কোনোদিন জানতে না পারি। ক্লদ বলল, আমি কিন্তু জানতে চাই। কেউ তার কথার উত্তর দিল না। সবার জীবনই যদি একটা শিশুর জীবনের মতো সহজ সরল হত তাহলে মন্দ হত না! (চলবে) [দয়া করে একই মন্তব্য বার বার করবেন না]


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৫৪৪ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • ♪♪♪ধ্রুব পৃথিবী♪♪♪
    User ৫ বছর, ৯ মাস পুর্বে
    hmmm

  • ☠Sajib Babu⚠
    Golpobuzz ৫ বছর, ৯ মাস পুর্বে
    Mmm .. gj

  • ♪♪♪ধ্রুব পৃথিবী♪♪♪
    User ৫ বছর, ৯ মাস পুর্বে
    okk..dost korish

  • ☠Sajib Babu⚠
    Golpobuzz ৫ বছর, ৯ মাস পুর্বে
    Ascha porer gulo mellllaaaaa boro korbane

  • ♪♪♪ধ্রুব পৃথিবী♪♪♪
    User ৫ বছর, ৯ মাস পুর্বে
    etutuk kore pora hoy bujhi.. aktate ato somoy..... dite hobena......sobgulate basi kore somoy diye aro.....besi...onek basi kore lekh....gjgjgjgj

  • ☠Sajib Babu⚠
    Golpobuzz ৫ বছর, ৯ মাস পুর্বে
    Etto boro kore dei taw hosche na?? R o boro korte hobe?? Ekrai jodi eto somoy dei tahole onno gulo ki korbane?? @Shilty

  • ♪♪♪ধ্রুব পৃথিবী♪♪♪
    User ৫ বছর, ৯ মাস পুর্বে
    Very nice & next.....aktu besi kore likhbi...sobji bandor...