বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
সকালে টুকটাক কিছু জিনিষ পত্তর নিয়ে কাউকে কিছু না বলেই কমল অফিসে চলে গেলো । কান্ট্রি ম্যানেজারের সাথে দেখা হল লাঞ্চের আগে। তিনি বললেন, ভাবীর সাথে কথা হয়েছে?
– হ্যা, ওর দিক থেকে কোন সমস্যা নেই, আমি রেডি হয়েই এসেছি। আপনি বললে লাস্ট ফ্লাইটেই চলে যেতে পারি।
হক সাহেবকে খুব আন্তরিক মনে হল। ‘বড় একটা দুশ্চিন্তা থেকে বাঁচালেন। ভাবীকে বলবেন যে কোন প্রয়োজনে কোন সংকোচ না করে যেন আমাকে ফোন করেন।নেদারল্যান্ডের টিমটার সাথে আমিও চলে আসবো, পরের সপ্তায়’।
সিলেট এয়ারপোর্টে নেমে মন ভালো হয়ে গেলো কমলের। তখনও সন্ধ্যা নামেনি। ভিড়ভাট্টা কম। সিগারেটের দোকান সামনে পড়তেই এক প্যাকেট গোল্ডলিফ কিনে ফেললো সে। এত দিন একটা দুইটা করে সিগারেট কিনতে কিনতে মনটাই ছোট হয়ে যাচ্ছিল । আজ থেকে তার স্বাধীনতা শুরু। কোম্পানীর রেস্ট হাউসটা লাক্কাতুরা টি এস্টেটের পাশে ছোট্ট একটা টিলার উপর। ব্যল্কনিতে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ হয়ে গেল কমল। চা বাগানের উপর শেষ বিকেলের রোদ অদ্ভুত একরকম আলো বিছিয়ে দিয়েছে। কচি চায়ের পাতায় মাঝে মধ্যে ঝিকমিকিয়ে উঠছে আলো।
পারুলের কথা মনে পড়ে গেল। বউটা তার বেড়াতে পছন্দ করে। এই বিশ বছরে পারুলকে নিজের সাধ্যমত ঘুরিয়েছেও কমল। চা বাগানে রাত কাটানোর অনেক দিনের ইচ্ছে পারুলের। হঠাত করেই মন খারাপ হয়ে গেলো কমলের। ব্যালকনিতে বসে বসেই সন্ধ্যা নামিয়ে ফেললো। কেয়ারটেকার একবার চা দিয়ে গিয়েছে। রাতে কী খাবে জানার জন্যে এসে দেখলো চায়ের কাপটা সেরকমই পড়ে আছে। বলল, স্যার চা তো ঠান্ডা হয়ে গেছে। আর এক কাপ বানিয়ে দেই? কমল বলল, টেবিলের উপর সিগারেটের প্যাকেটটা আছে দিয়ে যেও তো।
সিগারেটের চকচকে প্যাকেটটা হাত বাড়িয়ে নিতে নিতে বলল, ‘এখানে কফি হবে না? কফি খাওয়াতে পারবা?’
প্যাকেটটা খুলতে খুলতে ফোন বেজে উঠলো।
পারুলের ফোন। অভ্যস বসত সিগারেটের প্যাকেটটা নামিয়ে রেখে ফোন ধরল কমল। সিগারেট খেতে খেতে কখনও পারুলের ফোন ধরেনা সে। অদ্ভুত মহিলা। মোবাইলের ওপার থেকে নিশ্বাসের নামা ওঠা থেকেই পারুল বুঝে ফেলে। পারুল নয় তার ফোন থেকে ডায়াল করেছে রুপা।‘বাবা তুমি কোথায়?
– সিলেটে
– সত্যিই তুমি সিলেটে?
– হ্যা, কালকে বললাম না!
– তুমি পচা
– কেন বাবা?
– – আমার এমসিকিঊ কে ধরে দেবে?
– কেন মামমামকে বল
– মামমাম কী ধরে! তুমি জানোনা আমি সিক্সে ওঠার পর থেকে মামমাম আমাকে পড়ায় না?
– না জানিনা তো
– জানবে কেন তুমি পচা বাবা, আমার পরীক্ষা কবে তুমি জানো? সত্যিই একটু চিন্তায় পড়ে গেল কমল। কত তারিখ থেকে মনে করতে পারলো না। এসব খবর তো পারুলই রাখে।
– বাবা, তুমি আসবা না? এবার রুপার গলাটা একতু ধরে এলো। কমলের বুকের মধ্যে হু হু করে উঠলো। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, ‘তোর মা কোথায়?’
– মামমাম শুয়ে আছে। আজ মামমাম তোমার জন্যে রোজা রেখেছিলো জানো?
– ফোনটা তোর মাকে দে।
– মামমাম কথা বলবে না। ডাকতে মানা করেছে।জারাহ কথা বলবে।
এরপর রুপার ফুঁপানোর শব্দ শুনতে পেল কমল। মনটা আরও খারাপ হয়ে গেল তার।
জারাহ ফোন ধরেই বলল, ‘হ্যালো বাবা ! তুমি খেয়েছো? জারাহ’র এই প্রশ্নটা তার জানা। সব সময়ই সে ফোন ধরে প্রথমে এই কথাটা বলে। এর পরে বলে, কী করছো ? আজ সে প্রশ্ন না করে জারাহ বলল, ‘বাবা তুমি একটু ধর আমি বারান্দায় গিয়ে কথা বলব।
– বাবা তুমি শুনতে পাচ্ছো?
– হ্যা
– কবে আসবা।
– এই তো, কাজ শেষ হলে।
এবার ফিসফিসিয়ে উঠলো জারাহ’র গলা। বলল, ‘তুমি এলে সিগারেট খেতে দেবো, প্রতিদিন একটা কিন্তু। আচ্ছা আপ্পি চলে এসেছে রাখি?’
হঠাত করেই ফোনটা কেটে গেলো।
কমলের ভেতরটা এলোমেলো হয়ে গেলো। এতদিন পারুলের অত বারণেও কমল সিগারেটকে পুরোপুরি ছেড়ে দেবার কথা ভাবেনি।পারুলের সামনে যা ই বলুক, একেবারে গোল্ডলিফ শূণ্য জীবনের কথা একবারও মনে হয়নি । ঝগড়াঝাটি বেশি হলে দু’একবার ছেড়েদেবার কথা ভেবেছে মাত্র। কয়েকদিনের মধ্যেই সেই ভাবনা চিন্তাকে জলাঞ্জলি দেবার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অথবা সে নিজেই নতুন একটি সিগারেট জ্বালানোর ছুঁতো খুঁজে বের করেছে । জারাহ’র টেলিফোনটা কেটে যাবার পর, আজ সব কিছু গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। ‘তুমি এলে সিগারেট খেতে দেবো’, কথাটা ঠিক কোথায় বিধলো, কমল বলতে পারেনা। তবে এই একটি বাক্য তার দিনকাল বদলে দিল।মনের অজান্তেই কান্না চলে এলো কমলের।
কেয়ারটেকার কফি নিয়ে এসে দেখলো, মন খারাপ করে বসে আছে প্রোজেক্ট স্যার। তার চোখের কোনা চিকচিক করছে পানিতে।‘স্যার কফি’। কেয়ারটেকারকে দেখে স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করলো কমল। বলল লাইট টা নিবিয়ে দাও
।
লাইট নিবিয়ে দ্রুত চলে যাচ্ছিল সে। কমলের প্রশ্ন শুনে থামল।
– তোমার নাম কী?
– আব্দুল বারেক সার।
– তুমি সিগারেট খাও?
উত্তর দিলোনা বারেক। কমল বলল, ‘বুঝেছি, পরিবার কিছু বলে না?’
– স্যার এখনও বিয়া করি নাই।
– আচ্ছা এই সিগারেটের প্যাকেট টা নিয়ে যাও।
– স্যার আমি সিগারেট খাই না।
– ঠিকাছে, কাউকে দিয়ে দিও। আর আমার রুমে কোন এস্ট্রে যেন না থাকে বুঝেছো?
কফির কাপ রেখে চলে গেলো বারেক।
কমল তাতে ঠোঁটও ছোঁয়ালোনা । রাতে খেতেও ইচ্ছে করলো না। বিছানায় গিয়ে ঘুমোতে পারলো না সে।
ফিরে যাবার জন্যে কান্ট্রি ম্যানেজারকে কী বলা যায় ভাবতে লাগলো।
লেখক: সাইদুল (৭৬-৮২)
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now