বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

Rajkonna o bunohas

"রূপকথা " বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান Roman Islam(guest) (০ পয়েন্ট)

X অনেক অনেক দিন আগের কথা। এক দেশে ছিল এক রাজা, আর ছিল এক রানি। সাগরের তীর হতে দেশটি ছিল অনেক দূরে। রাজার ছিল এগারোটি ছেলে আর একটি মেয়ে। মেয়েটিকে রাজা অনেক আদর করত। রাজা আদর করে তার নাম রাখল এলিজা। রানি আর ছেলেমেয়ে নিয়ে রাজার ছিল খুব সুখের সংসার। রাজ্যজুড়ে তার ছিল অনেক সুনাম। প্রজারা রাজাকে খুব ভালোবাসে। একদিন রাজার সংসারে দুঃখ নেমে এল। হঠাৎ করে রানি মারা গেল। রাজ্যজুড়ে দুঃখের বন্যা বয়ে গেল। কিন্তু রানি ছাড়া তো রাজ্য চলে না। তাই মনে অনেক দুঃখ নিয়ে রাজা আবার বিয়ে করলেন। কিন্তু নতুন রানি ছিল খুব দুষ্ট। সে রাজার বারো ছেলেমেয়েকে একদম আদর করত না। সে সবসময় তাদের বিরুদ্ধে রাজার কাছে নানা কথা বলত। এভাবে বলতে বলতে রাজার মন একসময় বিষিয়ে গেল। রাজা রানির কথায় এলিজাকে গ্রামে পাঠিয়ে দিল। সেখানে এলিজা চাষিদের সঙ্গে কাজ করবে, তাদের সঙ্গেই জীবন কাটাবে। রানি ছেলেদের সম্পর্কে আরও অনেক খারাপ কথা বলল রাজার কাছে। এক সময় রাজা তার এগারো ছেলেকে ত্যাগ করল। এতেও রানির মন খুশি হল না। ছেলেদের দূরে কোথাও পাঠিয়ে দিতে হবে। ওরা যাতে এ রাজ্যে আর কখনও আসতে না পারে। নতুন রানি ভেতরে ভেতরে অনেক জাদু জানত। একদিন সে জাদু করে ছেলেদের উদ্দেশ্যে বলল, “ইচিং বিচিং ফুড়ুৎ! এ মুহূর্তে তোমরা বন্য পাখি হয়ে যাবে এবং আর কখনও কথা বলতে পারবে না।” একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে রাজপুত্ররা এগারোটি চমৎকার বুনোহাঁসে পরিণত হল; আর উড়ে চলে গেল বহুদূরে। দিন যায়, মাস যায়। এলিজা এখন অনেক বড় হয়েছে। তার বয়স এখন ১৫। একদিন এলিজাকে দেখার জন্য রাজার মন খুব ছটফট করছিল। তখন সে দূতকে পাঠিয়ে দিল এলিজার কাছে। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে এলিজা রওনা হয়ে গেল। কিন্তু দুষ্ট রানি ছদ্মবেশে পথে লুকিয়ে রইল। এলিজা এ রাস্তা দিয়েই আসছিল। রানি তাকে পেয়ে তার মুখে কাঠবাদামের কালচে রস ঢেলে দিল। তারপর এলিজার চুলগুলো ভালোভাবে এলোমেলো করে দিল। এলিজা প্রাসাদে ঢুকে রাজাকে কুর্ণিশ করল। কিন্তু কোনোভাবেই রাজা এলিজাকে চিনতে পারল না। এ ঘটনায় এলিজা খুব দুঃখ পেল। সে রাজপ্রাসাদ থেকে বের হয়ে কাঁদতে কাঁদতে মেঠোপথ ধরে এগোল। আকাশে যখন সূর্য ডুবে ডুবে, এলিজা তখন একটা বড় বনের পাশে এল। সারাদিনের ক্লান্তি তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। সে বনের পাশে ঘাসে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। যখন তার ঘুম ভাঙল তখন সে দেখতে পেল তার পাশ দিয়ে একটা নদী বইছে। এ নদীর পানি খুব স্বচ্ছ, ঝকঝক করছে। এলিজা ঝটপট পানিতে নেমে গেল এবং ডুব দিয়ে গোসল করল। নদীর স্বচ্ছ পানি এলিজার মুখের কালি ধুয়ে নিল। সঙ্গে সঙ্গে এলিজা আবার আগের মতো রূপসী হয়ে গেল। রাজকুমারী এলিজা আবার বনের ভেতর দিয়ে হাঁটা শুরু করল। কিছুদূর যেতেই তার সঙ্গে দেখা হল এক বুড়ির। এলিজা বুড়িকে সালাম দিয়ে তার ভাইদের কথা জিজ্ঞেস করল। বুড়ি বলল, “আমি এপথে কোনো রাজপুত্রকে যেতে দেখিনি। তবে আমি সাগর সৈকতে সোনার মুকুট পরা এগারোটি বুনোহাঁস দেখেছি।” এলিজা নদীর স্রোতের সঙ্গে পা মিলিয়ে চলতে শুরু করল। এক সময় নদী এসে সাগরে পড়ল। এলিজার পথচলা শেষ হল। সৈকতে ঘুরতে ঘুরতে সে বুনোহাঁসের এগারোটি সাদা পালক পেল। আর সন্ধের সময় সে আকাশের দিকে তাকিয়ে হাঁসগুলোকে দেখতে পেল। মাথায় সোনার মুকুট পরা এগারোটি বুনোহাঁস লাইন ধরে উড়ে যাচ্ছে; দেখলে মনে হয় যেন একটি সাদা ফিতে উড়ছে। হাঁসগুলো ধীরে ধীরে নিচে নেমে এলে এলিজা পাশে এসে দাঁড়াল। সূর্য যখন পশ্চিম আকাশে অস্ত গেল তখন পাখিগুলোর শরীর থেকে সব পালক ঝরে গেল এবং এলিজা তার এগারো ভাইকে ফেরত পেল। বড় ভাই এলিজাকে জানাল যে সূর্য ডুবে গেলে তারা মানুষ হয়ে যায়। কিন্তু সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ওরা আবার পাখি হয়ে যাবে। সে আরও জানাল, ওরা সাত সমুদ্দুর তেরো নদীর ওপাড়ে থাকে। তবে বছরে ওরা মাত্র আটদিনের জন্য প্রিয় মাতৃভূমিতে আসতে পারে। পরদিন ভোরে ভাইয়ের একটা চাদরে এলিজাকে বসাল। এরপর চাদরের কোণগুলোতে কামড় দিয়ে ধরে এলিজাকে নিয়ে উড়ে চলল সাত সমুদ্দুর তেরো নদীর ওপাড়ে। এলিজাকে নিয়ে ওরা সারাদিন ধরে ওড়ে চলল। ঠিক সন্ধের আগে ওরা নেমে এল একটা সবুজ দ্বীপে। দ্বীপটি খুব সুন্দর। চারদিকে সারাদিন সারারাত সাগরের ঢেউ খেলা করে। সারাদিন পরিশ্রমের পর ভাইয়েরা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ সাগরের দিকে তাকিয়ে থেকে এক সময় এলিজাও ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুমের মাঝে এলিজা এক পরিকে স্বপ্নে দেখল। পরির নাম মরগান-লি-ফি। পরি এলিজাকে বলল, “তুমি ইচ্ছে করলে তোমার ভাইদের বাঁচাতে পার। তুমি যদি তাদের প্রত্যেকের জন্য একটা করে জামা বুনে দিতে পার তাহলে তারা আবার মানুষ হয়ে যাবে। তবে এ জন্য কাঁটাওয়ালা পাতা থেকে সুতা তুলতে হবে এবং সেই সুতা দিয়ে জামা বুনতে হবে।” পরির কথা শুনে এলিজা খুব খুশি হল। সে বলল, “আমি আজই জামা বুনার কাজ শুরু করতে চাই।” পরি বলল, ‘এখানে আরও একটি কঠিন শর্ত আছে। সবগুলো জামা বানানো শেষ হবার আগে মুখে কোনো কথা বলা যাবে না। যদি তুমি একটা কথাও বল, তাহলে তোমার ভাইয়েরা মারা যাবে।” পরির কাছে একথা শুনে এলিজা ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠে পড়ল। সে জঙ্গল থেকে বিভিন্ন রংয়ের কাঁটাওয়ালা পাতা জোগাড় করে আনল। তারপর সেগুলো থেকে অনেক কষ্টে সুতা বের করতে শুরু করল। তার হাতে কাঁটা বিঁধে বিঁধে রক্ত গড়িয়ে পড়তে লাগল। তবু সে থামল না। সেদিন বনে এক রাজা এসেছিলেন শিকার করতে। তিনি এই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি দেখতে পেলেন এলিজাকে। অপূর্ব সুন্দরী একটি মেয়ে এই গহীন অরণ্যে বসে কী করছে? রাজার খুব কৌতূহল হল। তিনি এলিজার কাছে গিয়ে সে কী করছে তা জানতে চাইলেন। কিন্তু এলিজা কোনো উত্তর দিল না। কারণ সে জানে, যদি সে একটি কথাও বলে, তাহলে তার ভাইয়েরা মারা যাবে। অসহায় ও বোবা ভেবে মেয়েটির প্রতি রাজার অনেক দয়া হল। তিনি এলিজাকে ঘোড়ায় উঠিয়ে রাজপ্রাসাদে নিয়ে এলেন। কিছুদিন পর রাজা এলিজা রূপেগুণে মুগ্ধ হয়ে তাকে বিয়ে করলেন। রানি হয়েও এলিজার মন ভালো হল না। সে সবসময় কাঁদে। এলিজার কান্না থামাবার জন্য রাজা জঙ্গল থেকে এলিজার বানানো জামা, রেখে আসা সুতা ও কাঁটাওয়ালা পাতাগুলো আনিয়ে দিলেন। এলিজার এসব কীর্তি দেখে রাজার এক মন্ত্রী তাকে সন্দেহের চোখে দেখে। মন্ত্রী ভাবছে, এলিজা একজন জাদুকর। সে এলিজাকে সবসময় চোখে চোখে রাখে। কথাটি সে রাজার কানেও তুলেছে। কিন্তু রাজা সে কথা বিশ্বাস করেননি। এলিজা রাতভর জেগে জেগে ভাইদের জন্য জামা বোনে। একদিন গভীর রাতে তার সুতা ফুরিয়ে গেল। সে দৌড়ে প্রাসাদের বাইরে এল কাঁটাওয়ালা পাতা সংগ্রহ করার জন্য। এলিজা দ্রুতপায়ে গোরস্থানের দিকে গেল। সেখান থেকে সে অনেক পাতা সংগ্রহ করে নিয়ে এল। মন্ত্রী এলিজাকে রাতে গোরস্থানে যেতে দেখে রাজাকে তা জানাল। পরদিন এলিজা যখন আবার গোরস্থানে গেল তখন রাজা নিজের চোখে তা দেখলেন। এখানে সাধারণত রাতের বেলা জাদুকররা ব্যাঙ ধরতে আসে নানারকম জাদু করার জন্য। নিজের চোখে এলিজাকে এখানে দেখে রাজা তাঁর মন্ত্রীর কথা বিশ্বাস করলেন। এলিজা অবশ্যই একজন জাদুকর। নইলে সে এত রাতে একা একা গোরস্থানে যেত না। রাজা এলিজার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করলেন। এলিজাকে জেলখানায় বন্দি করা হল। তবে সে যে কদিন বেঁচে থাকবে, ততদিন জামা বুনে সময় কাটাতে পারবে। সে জন্য জামা, সুতা ও পাতাগুলো তার সঙ্গে দেওয়া হল। এলিজা ভাবল, হয়ত এ জীবনে আর ভাইদের সঙ্গে তার দেখা হবে না। তবু সে মনোযোগ দিয়ে জামা বুনতে থাকল। ধীরে ধীরে এলিজার জীবনের শেষদিন ঘনিয়ে এল। তাকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হল। রাজ্যের মানুষের ভিড় পড়ে গেল চারদিকে। এলিজার চেহারা আলুথালু। চুল এলোমেলো হয়ে আছে। এলিজার কোনোদিকে খেয়াল নেই। সে দ্রুতহাতে জামা বুনে যাচ্ছে। মরার আগে জামা বুনে শেষ করতে হবে। কোনোদিন যদি ওর ভাইয়েরা এগুলো পায় তাহলে তারা আবার রাজকুমার হবে। চারদিকে দেখতে আসা দুষ্ট লোকেরা বলতে শুরু করল, “দেখো, দেখো, জাদুকর মেয়ের অবস্থা। চল আমরা ওর জাদুর জামাগুলো টেনে ছিঁড়ে ফেলি।” এই বলে দুষ্ট লোকেরা সত্যি সত্যি এলিজার দিকে আসতে শুরু করল। এলিজা ভয় পেয়ে গেল। সত্যি সত্যি কি ওরা জামা ছিঁড়ে ফেলবে? ঠিক সে সময় আকাশ থেকে এগারটি বুনোহাঁস নেমে এল এবং এলিজার চারপাশ ঘিরে দাঁড়াল। এলিজার তখন আর সময় নেই। শেষবারের মতো ভাইদের দেখে সে খুব খুশি হল। সে তাড়াতাড়ি করে তার বুনা এগারটি জামা এগারো ভাইয়ের দিকে ছুড়ে দিল। আর অমনি বুনোহাঁসগুলো সুদর্শন রাজপুত্র হয়ে গেল। এখন এলিজা কথা বলতে পারবে। সে হাসিমুখে চিৎকার দিয়ে রাজাকে বলল, “এখন আর আমার কোনো অসুবিধা নেই। আমি এখন কথা বলতে পারব। আমার কোনো দোষ নেই।” বোনের সঙ্গে সঙ্গে এগারো ভাই একসুরে বলল, “আমাদের বোন নির্দোষ।” বড় ভাই এগিয়ে এসে রাজাকে সব ঘটনা বলল। বড় ভাইয়ের কথা শুনে রাজা খুব খুশি হলেন। তিনি এলিজাকে আবার আপন করে নিলেন। তিনি এলিজাকে খুশি হয়ে একটা সোনার পালক উপহার দিলেন। রাজা এবং এলিজা তার এগারো ভাইকে সঙ্গে নিয়ে প্রাসাদে ফিরে এল। রাজ্যের মানুষ এ খবর শুনে খুব খুশি হল। রাজ্যজুড়ে বয়ে গেল আনন্দের ঢেউ। রাজার বাড়িতে এগারো ভাইকে নিয়ে এগারো দিন ও এগারো রাত উৎসব চলল। ___Roman___


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৭৩৮ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • Roman Islam
    Guest ৫ বছর, ১০ মাস পুর্বে
    sobai ke onek thanks......

  • Sweet Jerry
    User ৫ বছর, ১০ মাস পুর্বে
    Nice golpo

  • Suvo
    User ৫ বছর, ১০ মাস পুর্বে
    Golpota onak valo hoecha boss.......

  • Md.Motiur Rahman.
    Guest ৫ বছর, ১০ মাস পুর্বে
    Anek Valo.Thank You.