বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

এ গুড বিজনেস ডিল

"রোম্যান্টিক" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান Opu Ahasan (০ পয়েন্ট)

X টিউশনীর যাওয়ার জন্য আমার মাঝের একটু রাস্তা হাটতে হয় । আগে রিক্সায় করে যাওয়া যেত কিন্তু মগবাজার ফ্লাইওভার চালু হওয়ার কারনে মাঝের রাস্তাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । এখন পুরোটুকু পথ আর একবারে রিক্সা করে যাওয়ার উপাই নেই । লঞ্চ পারাপারের মত এপারে এসে নেমে রাস্তা পায়ে হেটে পার হয়ে আবার এপাশে এসে রিক্সা নিতে হয় । তাই এখন আর রিক্সা নেই না । এই টুকু পথ হেটেই যাই । অবশ্য হাটতে আমার খারাপও লাগে না । আরও একটা কথা হচ্ছে সারা দিনের ভেতরে কেবল এই টুকুই আমার শারীরিক পরিশ্রম হয় । বেকার মানুষের জীবনে কেবল সুখ আর সুখ । শুয়ে বসে থাকার পর এই টুকু কষ্ট করাই যায় । আজকেও টিউশনী থেকে বাসায় যাচ্ছিলাম । গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে তবে শরীর ভিজিয়ে দেওয়ার মত কিছু না । ছাতা আনি নি । আপন মনেই হাটতেছি । বৃষ্টির কারনে রাস্তাঘাট একদম ফাঁকা । কেবল মাত্র সরকারী অফিসার্স কোয়াটারটা পার হয়েছি তখনই গাড়িটা চোখে পড়লো । আমাকে ক্রস করে গেল এবং সামনে গিয়ে থামলো । সাথে সাথেই দরজা খুলে গেল । একজন মাঝ বয়সী লোক বের হয়ে এসে একেবারে আমার মুখোমুখি হয়ে দাড়ালো । আমি একটু ভয় পেলাম । ছিনতাইকারী না তো ? তখনই গাড়ির দিকে তাকালাম । বেশ দামী গাড়ি মনে হল । এতো দামী গাড়িতে করে এই ভদ্রলোক নিশ্চয়ই ছিনতাই করতে আসবে না । আমি পাশ কাটিয়ে যেতে যাবো তখনই লোকটা বলে উঠলো -অপু ! খাইছে ! এই লোক দেখি আমার নাম জানে ! তার মানে আমার কাছেই এসেছে । কোপ দিবে না তো ? ইদানিং অনলাইনে কিছু লিখলেই মাঝে মাঝে কিছু মানুষকে কোপ খেতে হয় । আমি একটু থমমত খেয়ে গেলাম । বললাম -জি ? -তোমার সাথে কয়েকটা কথা ছিল ! -আমার সাথে ? আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না আসলে কি বলবো ? এই ভদ্রলোকের আমার সাথে কি কাজ থাকতে পারে কে জানে ! ভদ্রলোক বলল -গাড়ির ভেতরে বসে বলি ? এখানে বৃষ্টি পড়ছে । আমার তখনই কেমন জানি সন্দেহ হল । আমাকে গাড়ির ভেতরে নিয়ে গিয়ে কিডন্যাপ করবে না তো ? কিন্তু আমাকে কিডন্যাপ করে কি লাভ ! আমার নাম জানে তার মানে আমার ব্যাপারে খোজ খবর নিয়েই এসেছে । তবে যদি আরও ভাল করে খোজ নিয়ে থাকে তাহলে খুব ভাল করেই জানার কথা যে আমাকে কিডন্যাপ করে খুব একটা লাভও হবে না । আর ভদ্রলোকের চেহারা দেখে আর যাই হোক কিডন্যাপারের মত কিংবা কোপ মারার মত মনে হচ্ছে না । আমি তবুও একটু ইতস্তত করে গাড়ির ভেতরে গিয়ে বসলাম । ভদ্রলোকে এবার ভাল করে দেখতে পেলাম । সম্ভ্রান্ত চেহারা । অনেক টাকা পয়সার মালিক দেখলেই বোঝা যায় । এই লোক আমার কাছে কি চায় ! আমি খানিকটা সংকুচিত কন্ঠে বললাম -জি বলুন ! -আমি নুশরাতের বাবা ! -কোন নুশরাত...... আমি কয়টা নুশরাতকে চিনি ? চিন্তা করার চেষ্টা করলাম । সবার আগে সেই নুশরাতের কথাই মনে পড়লো । আমার সাথে পড়তো । কিন্তু কেবলই পড়তো । মেয়েটার সাথে আমি কোন দিন কথাও বলতে পারি নি । অবশ্য সে আমাদের ক্যাটাগরির ছিল না । গাড়িতে করে আসা যাওয়া করতো । ক্লাসের আরও কয়েকজন বড় লোকের ছেলে মেয়েদের সাথেই তার উঠা বসা ছিল । সেই নুশরাত ? কিন্তু ওর বাবা আমার কাছে কি চায় ? আমি বললাম -আচ্ছা । কেমন আছে ও ? -আছে ! তুমি জানো ও কেমন থাকে ! হু ! মেয়েটার ব্যাপারে আমি জানি । মেয়েটার একটা রোগ ছিল নাকি শুনেছিলাম । পড়া লেখা চলা কালিন সময়েও বেশ কয়েকবার ও দেশের বাইরে গেছিলো বলেও শুনেছিলাম । -ও আচ্ছা । বলুন আমার কাছে কি দরকার ? -আসলে কিভাবে যে তোমাকে বলি ! তারপর আমার সামনে একটা বই মত কিছু একটা ধরিয়ে দিল । হাতে নিয়ে দেখলাম আসলে সেটা কোন বই না । প্রিন্ট করা পেপার একসাথে বাঁধাই করা হয়েছে । বইয়ের মত করে । আমি খুলে কয়েক লাইন পড়তেই খানিকটা অবাক হয়ে গেলাম । -আরে এটা তো....। আমাকে কথা শেষ না করতে দিয়ে নুশরাতের বাবা বলল -হ্যা তোমার লেখা গল্প । বেশ কয়েকটা আছে এখানে । -আচ্ছা । আসলে আমি এসবের কিছু বুঝতে উঠতে পারছি না । -বলছি । এই বলে ভদ্রলোক বেশ কিছু সময় দম নিল । তারপর বললেন -আসলে আমার মেয়ে তোমার লেখা এই গল্প গুলো বেশ পছন্দ করে । বিশেষ করে ঐ ৪৭ পৃষ্ঠায় যেটা আছে ওটা । আমি বেশ কয়েকবারই ওকে এই একই গল্প পড়তে দেখেছি । ওখন ও মুখে এমন একটা আনন্দ দেখেছি যেন ও ও নিজেই ওটার ভেতরে আছে । -আচ্ছা ! -আমি চাই আমার মেয়েটা আসলেই ওমন কিছু ফিল করুক ! -আমি ঠিক বুঝলাম না ! -মানে আমি চাই যে আমার মেয়েটা যেন অন্তত কিছু দিন এমন একটা স্বপ্নের দুনিয়াতে বসবাস করুক, কারো সাথে সময় কাটাক ! আমি ততক্ষনে পৃষ্ঠা উল্টে ৪৭ পেইজে চলে গেছি । কয়েক লাইণ পড়েই গল্পটার কথা মনে পড়লো আমার । একজন এমপ্লোয়ী তার বসের মেয়ের সাথে প্রেম করে । মেয়েটার শরীর খারাপ থাকে । কদিন পরেই মারা যাবে কিন্তু শেষ কটা দিন ওর চমৎকার কাটে ছেলেটার জন্য । আমি নুশরাতের বাবার দিকে তাকালাম । উনি ওনার মেয়ের জন্যও এমন একটা কিছু তৈরি করতে চাইছেন । এই লোকের মাথা ঠিক আছে তো ? আমি বললাম -স্যার এটা বাবানো গল্প । বাস্তবে এমন হয় না । -এই জন্যই আমি এটা তৈরি করতে চাই । -তার মানে আপনি চান আমি এমন কিছু করি ? -হ্যা । চাইলে আমি আরও অনেকের কাছেই যেতে পারতাম কিন্তু গল্পটা যেহেতু তুমি লিখেছো তার উপরে তোমাকে ও চেনেও তোমার জন্য সহজ হবে ওর কাছাকাছি যাওয়া । যদি মানা করে দাও তাতে অবশ্য সমস্যা নেই । আমি অন্য কাউকে ঠিকই খুজে নেব । তবে তোমার লেখা গল্প তুমি হয়তো ভাল বুঝবে চরিত্রটা । তাই তোমার কাছে আসা । এবং .... -এবং ? -সাথে আরও ভাল কিছু অফারও আছে । -যেমন .. -আমি যতদুর জানি তুমি এখনও কোন চাকরী পাও নি, চাকরি খুজছো, রাইট ? -হ্যা । প্রস্তুতি চলছে । -হ্যা । নুশরাতের সাথে সম্পর্ক তৈরি করাটা মোটামুটি এক বছরের একটা কন্ট্রাক্ট । তোমাকে একটা বছর এই কাজটা করে যেতে হবে । মাস শেষে তুমি এর জন্য বেতন পাবে । বেতনটা তোমার এক্সপেক্টটেশন থেকে অনেক বেশি হবে এটা আমি নিশ্চিত করেই বলতে পারি । এবং এর এই ক্যারেক্টরটা পালন করার জন্য তোমাকে আমার কোম্পানিতে চাকরী করতে হবে । ঠিক যেমন করে গল্পে নায়ক চাকরী করে । -আচ্ছা । -এক বছর শেষে চাকরিটা তোমার পার্মানেন্ট হয়ে যাবে । তোমাকে আর জব খুজতে হবে না । আমি আর কিছু ভাবতে পারলাম না । মেয়ের বাবা তার মেয়ের জন্য একজন প্রেমিক ঠিক করছেন যাতে মেয়েটার সাথে প্রেমের অভিনয় করতে পারে । অদ্ভুদ ! অবশ্য মেয়ের বাবারা মেয়ের সুখ কিংবা আনন্দের জন্য অনেক কিছুই করতে পারে । আমার জন্য ভাল একটা সুযোগ । নিশির বিয়ে হয়ে গেছে এইতো কদিন আগে । চাকরি ম্যানেজ হয় নি বলেই বিয়ে করা হয় নি । আর বেকার ছেলের হাত ধরে ঘর থেকে বের হয়ে আসবে এমন বোকা মেয়ে সে কোনদিনই ছিল না । সেদিক দিয়ে আমার আসলে এই অফারটা নেওয়াতে কোন বাঁধা নেই । আমি বললাম -কিন্তু আমি কি পারবো ? আসলে এই জিনিস আমি কোন দিন করি নি তো । গল্পই কেবল লিখেছি বাস্তবে আসলে এগুলো এতো সহজ নয় । -তুমি যদি না বল তাহলে আমাকে অন্য কাউকে..... -না মানে আমি না বলছি না । আমি রাজি ! -গুড । এটা তোমার জন্য একটা ভাল ডিল হবে আশা করি । বাবা মেয়ের জন্য ডিল করছে । আমার জন্য অবশ্য ভাল বিজনেস ডিলই বলা চলে । এখন দেখার বিষয় আমি কতটা ভাল ভাবে কাজটা করতে পারি । নুশরাতের বাবা তারপর নিজের স্যুটের ভেতর থেকে একটা খাম বের করে আমার হাতে দিল । বলল -আগামী সপ্তাহ থেকে তোমার কাজ শুরু । এখানে তোমার এপয়েন্টমেন্ট লেটার আছে । গাড়ি থেকে বের হয়ে যখন আবারও হাটতে শুরু করলাম তখনও আমার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না আসলে কি হল । আসলেই কি হল ? এমন কি হয় নাকি আবার ! তবে হাতের খাম টা কোন ভাবেই তো আর মিথ্যা কথা বলতে পারে না ।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৩৫৯ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now